এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পুজোর চিঠি/ পর্ব 4

    Atanu Sanpui লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ১৮৯১ বার পঠিত
  • ।।।নবমীর চিঠি।।।
    বিয়াস,
    তখন পুজোর সকাল হতো ঢাকের শব্দে নিয়মিত। ঢাকিরা ঘুরতো পাড়ায়। ওই ঢাকের শব্দেই আমি বা আমার মতো আরও অনেকের ঘুম ভাঙতো। আর ঘুম ভাঙলেই আমার প্রথম কাজ হতো ফোন করে তোমায় ঘুম থেকে তোলা। তোমার ঘুম জড়ানো গলা না শুনলে যে আমার সকাল হতো না। যদিও তার ঘণ্টা তিনেক আগেই হয়তো আমাদের ফোনালাপ বন্ধ হয়েছে। হ্যাঁ। তখন আমরা সবে মোবাইল ফোন পেয়েছি। তাই রাতভর ফোনে গল্প করতাম। কত কথা যে জমে থাকতো, সে সব হয়তো কোনওদিন বলাই হতো না, যদি না মোবাইল ফোন থাকতো। তখন পাড়ার ফোনবুথটা উঠে গিয়েছে। আর ল্যান্ডলাইনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে শিখেছি আমরা। যন্ত্রণাই বটে। বারান্দা দিয়ে দেখলাম হয়তো তোমার বাবা বাজারে বেরিয়েছেন। সোনার সুযোগ কাজে লাগাতে যেই না তোমাদের ল্যান্ডলাইনে ডায়াল করলাম, ফোন ধরলেন তোমার মা। কখনও কেটে দিতাম। কখনও আবার.. ..একবার তো কী বলবো বুঝতে না পেরে বলেছিলাম-"হ্যালো, এটা কি নিমতলা শ্মশান?" কিছুক্ষণ পরেই তুমি রিং ব্যাক করেছিলে। চরম ঝড়ঝাপটা সামলাতে সামলাতে ভেবেছিলাম, আমারই তো দোষ। প্রথমে নিমতলা শ্মশানই কেন মাথায় এল? আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় বা কর্পোরেশনের অফিসও তো বলতে পারতাম! আরেকবার তো তোমার বাবার গলা পেয়ে বলেই দিয়েছিলাম,- "টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে বলছি। আপনার লাইনটা চেক করছিলাম। এর পরেও দু একবার রিং হতে পারে। ধরবেন না।" পরে তুমি বলেছিলে, সে দিন সারাদিন যতবার রিং হয়েছে তোমার বাবা নিজে তো ফোন ধরেনইনি। তোমাকেও ধরতে দেননি। প্রথম মোবাইল এসেছিল তোমার হাতে। স্যামসাং আর টু টোয়েন্টি। দিল্লি থেকে এনে দিয়েছিলেন তোমার বাবা। তারও বেশ কিছুদিন পরে আমি কিনেছিলাম নোকিয়া এগারোশ। যদিও বেশিরভাগ ফোন তুমিই করতে। আমার তখন অত পয়সা কোথায়? তবে যখন তখন বা রাতভর কথা বলা ছাড়াও আরও অকটা সুবিধা হয়েছিল মোবাইল পেয়ে। পাশের পাড়ার মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়াটা কমেছিল। যে সময়ে দাঁড়াতে বলতে, তুমি তো কোনওদিনই সেই সময়ে আসতে না। মোবাইল পাওয়ার পর ঠিক হল, তুমি মোড়ের মাথায় পৌঁছে একটা মিস কল দেবে। আর আমি বেরোব। মিস কল। আমাদের প্রায় সব সময়ের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটা সময় ছিল আমরা মিস কল দিয়েই কত কথা বলতাম। একবার রিং। মানে কলেজে ঢুকলে। দুবার রিং মানে কলেজ থেকে বেরোলে। তিনবার রিং। মানে তুমি বারান্দায় দাঁড়াবে। চারবার রিং। মানে রাতের খাওয়া হয়ে গিয়েছে। পরপর দু বার মিস কল মানে খুব দরকার। দেখা করতে হবে। আরও কত যে ভাষা ছিল আমাদের মিস কলের। তখন ভাবতাম, আমরা মিস কল দিয়ে পয়সা বাঁচাতাম। পরে সেই পয়সা লেগে যেত রাত জেগে কথা বলতে। এখন ভাবি, না। পয়সা বাঁচাতাম না। আবেগ জমাতাম। ভালবাসাটা পুষে রাখতাম। যখন কথা বলার সুযোগ হবে, তখন উজাড় করে দেব বলে। এই যেমন .. পুজো মানেই রাতভর কথা বলা। হয়তো খুবই অদরকারি কথা। তবু ভালো লাগতো ঘুম জড়ানো গলায় শুনতে। ভালো লাগতো শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তে..
    মাঝে মাঝে রাতভর ঝগড়া হতো.. তাতেও সুখ। রাত জেগে ঝগড়া করার আমার কেউ তো আছে। সবার কি থাকে? আর ছিল মেসেজ। মনে আছে, সেই সেবার যখন তোমরা মুম্বই গেলে। মা বাবা সঙ্গে ছিলেন। বেশিরভাগ সময়েই কথা হতো এসএমএস-এ। মনে আছে এক বিকেল ঝগড়ার পর গভীর রাতে শুধু এক শব্দের মেসেজ। "ঘুমোলে?" অভিমানের কারাকোরাম গলে জল। তা সেই সদ্য পাওয়া 'মোবাইল-বেলা'র নবমীতে ঢাকি ভাঙালো আমার ঘুম। আর আমি তোমার। সারাদিনের প্ল্যানটা বলতে বলতেই এক সময় আর কোনও সাড়া শব্দ পেলাম না। বুঝলাম, ফোন কানে ঘুমিয়ে পড়েছো। তখন তুমি হামেশাই এ রকম করতে। কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়তে। আর কানে থাকতো ফোন।
    সেই নবমীর সকালটা মনে আছে তোমার? মনে আছে তারপর কী হয়েছিল? যখনই বুঝলাম ঘুমিয়ে পড়েছো, কোনওমতে গেঞ্জিটা গলিয়ে নেমে গেলাম নিচে। ঢাকের কাছে নিয়ে গেলাম মোবাইলটা। তারপর কানে নিয়ে শুনলাম,
    - "কী হচ্ছে টা কি সাত সকালে?"
    - "তোমার ঘুম ভাঙাচ্ছি।"
    - "এই ভাবে কেউ ঘুম ভাঙায়? হার্ট অ্যাটাক করে মরতাম তো আর একটু হলে.."
    - "সে রিস্ক নেই ম্যাডাম। তোমার হার্ট টা তো আমার হাতের মুঠোয়। কেউ অ্যাটাক করে সাধ্যি কী?"
    - "বাবাহ্! প্রেম তো উথলে উঠছে।"
    - "হবে না? আজ তো আমাদের নবমীর নিশিযাপন.. একসঙ্গে। বাবলু রা গাড়ি ঠিক করে ফেলেছে।"
    - "তোমাদের সঙ্গে আমি একা মেয়ে?"
    - "তা কেন? নবনীতা, পায়েল আর পিকলুর বোনকেও বলে দিও। সবাই মিলে যাব।"
    - "কিন্তু বাড়িতে.. ছাড়বে?"
    - "বলবে.. মোবাইল থাকবে সঙ্গে।"
    - "উফ্ তুমি পারো ও বাবা। দেখছি দাঁড়াও.. "
    - "দাঁড়িয়েই তো আছি ম্যাডাম।"
    - "মানে?"
    - "গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট পরে তোমার ব্যালকনির নিচেই দাঁড়িয়ে আছি। ঘুম যখন ভেঙেই গিয়েছে। ব্যালকনিতে একবারটি আসবে, প্লিজ?"
    - "উফফ্.. .. দাঁড়াও আসছি.."
    বিয়াস, আজও মাঝেমাঝে তোমাদের ব্যালকনির নিচে গিয়ে দাঁড়াই। আজও কি তুমি কথা বলতে বলতে কানে ফোন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো? তখন তোমার ঘুম ভাঙায় কে বিয়াস?
    #পুজোর_চিঠি
    -অতনু
    10 অক্টোবর, ২০১৬
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ১৮৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | 233.223.133.211 (*) | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৪১59107
  • "মিস কল। আমাদের প্রায় সব সময়ের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটা সময় ছিল আমরা মিস কল দিয়েই কত কথা বলতাম। একবার রিং। মানে কলেজে ঢুকলে। দুবার রিং মানে কলেজ থেকে বেরোলে। তিনবার রিং। মানে তুমি বারান্দায় দাঁড়াবে। চারবার রিং। মানে রাতের খাওয়া হয়ে গিয়েছে। পরপর দু বার মিস কল মানে খুব দরকার। দেখা করতে হবে। আরও কত যে ভাষা ছিল আমাদের মিস কলের।" - সত্যি। স্মৃতির মিস কল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন