এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সড়া অন্ধ অছি

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩১ মে ২০১৬ | ৬৮৯ বার পঠিত
  • বেশ কিছু বছর আগে Dateline NBC কতৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদক যোস ম্যানকিউিজ ডেকে বলল, খুড়ো, একটা স্টোরী যে তোমাকে বানাতে হবে – এবং এমন ভাবে বানাতে হবে যাতে পাবলিক হালকা চমকে বলে ওঠে তাই তো, তাইতো এবং আলতো করে বলে কি দিলে গুরু! যোস খুড়ো ভাবছেন এবং ভাবছেন কি স্টোরী করা যায় – একদিন সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে টিভিতে সিনেমা দেখতে বসে ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠলেন। গিন্নী ‘ইউরেকা’ শব্দ শুনে ছুটে এসে প্রথমেই এসশিওর করে নিলেন যোসে দিগম্বর কিনা – তারপর বাতচিৎ করে বুঝতে পারলেন এই ইউরেকার কারণ তিনি টপিক খুঁজে পেয়েছেন স্টোরী করার! স্টোরীর বিষয় বস্তু তিনি ঠিক করলেন সিনেমায় ভুল বা যাকে সচরাচর আমরা ‘মুভি মিসটেক’ বা ‘ফিল্ম ফ্লাব’ বলে থাকি তার উপর। সে তো ঠিক আছে – সিনেমায় ভুল তো আছে এবং থাকতেই পারে, এবং প্রায় সবাই জানে সেই সব - তা সেই প্রচলিত জিনিস পাবলিককে খাওয়ানো যায় কি ভাবে?

    গিন্নী পরামর্শ দিলেন খাওয়ানো যেতে পারে যদি বিখ্যাত সিনেমা এবং বিখ্যাত নায়ক/পরিচালক নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বা আরো ভালো করে বলতে গেলে বিতর্ক তৈরী করা যায়। স্টোরীতে আলোচনা হবে ঠিক হল ‘সেক্সপিয়ার ইন লাভ’ এবং ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ মুভিদ্বয় নিয়ে যারা অস্কার তো জিতেছিলই এবং তার সাথে ওই সিনেমার এডিটিং হয়েছিল উচ্চ প্রসংশিত। বিশাল গবেষণা টাইপের কিছু একটা করে ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ সিনেমার একটি ভুল বার করে ফেললেন যোসে – সেই যে আটটি সৈনিক মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাছে বেশ কিছু দূর – কিন্তু আদপে ওই আটজনার মধ্যে একজন কিছু মিনিট আগে মারা গ্যাছে সিনেমায়! অর্থাৎ, ওই দৃশ্যে থাকার কথা আট সৈনিকের জায়গায় সাতজন! সাংবাদিক মশাই সিনেমা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না! এতো বড় ভুল? তাও আবার কার সিনেমায়, না স্পিলবার্গের! স্পিলবার্গ যিনি কিনা হলিউডের একজন এতো প্রখ্যাত এবং সচেতন পরিচালক – টেকনিক্যালি সঠিক সিনেমা বানানো নিয়ে যিনি ভাবনাচিন্তা করেন – তাঁর সিনেমায় এতো বড় ভুল? স্পিলবার্গ নিশ্চয় সিনেমা বানানোর পর নিজে অনেক বার দেখেছেন মুভি রিলিজ হবার আগে! তাহলে কেন এমন হেলাফেলা? সাংবাদিক মশাই প্রশ্ন করবেন ঠিক করলেন, কেস কি? স্পিলবার্গ এতো আলথালু কেন? এই যে পরিচালকেরা এতো যত্ন নিয়ে, এতো কষ্ট করে সিনেমাটি বানালেন, তাতে এতো চোখে পড়ার মত ভুল থাকে কি করে? এতো চোখে লাগার মত ভুল যে সাধারণ দর্শকও চট করে ধরে ফেলে? যোসের সেই স্টোরী কতটা পাবলিক খেয়েছিল তা আমার জানা নেই – তবে খাওয়ার উপাদান ছিল সন্দেহ নেই!

    কিন্তু এটা নতুন কিছু তো নয় – আজকাল যদি আপনি গুগুলে মুভি মিসটেক বা ফিল্ম ফ্লাব দিয়ে সার্চ করেন তা হলে দেখবেন অন্তত লাখ খানেক ওয়েব সাইটের সন্ধান দেবে – আর তা ছাড়া তো আছেই অগুনতি পত্রিকা, বই, আর্টিকেল। এতই যদি সোজা ব্যাপারটা ধরা, তা হলে দিনের পর দিন এই মিস্টেক গুলো হয়ে যাচ্ছে কেন? আর সাধারণ দর্শকই বা এতো অবসেসড কেন এই ভুল ধরার ব্যাপারে? সাইকলোজিষ্টরা বলছেন যে, এই ভুল ধরার পিছনে আম জনতার মধ্যে এক সুপিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। ভাব এমন যে – কেমন দিলাম! বা কেমন ধরলাম বা কেমন ছড়িয়ে ফেলা স্পট করলাম! স্পিলবার্গের কাছে কোটি কোটি ডলার থাকতে পারে – কিন্তু সে যেটা পারে নি স্পট করতে, সেটা আমি, আমি এই ঘোষের বাচ্ছা ঘরে বসে দুই একবার সিনেমাটা দেখেই ধরে ফেলি! তাহলে নিশ্চয়ই এই স্পিলবার্গেরা কাজে ফাঁকি দিয়েছে – বা গুরুত্ব দেয় নি বিষয়টায়। বা আমি এক আলাদা টাইপের হনু!

    আর একবার ভুল স্পট করে ফেলার পর – সত্যিই অবাক হয়ে যেতে হয় এতো সাধারণ জিনিস কিভাবে এরা ছড়ালো! এইভাবেই আমরা আমজনতা ধরে ফেলি ‘প্রিটি ওমেন’ সিনেমার সেই বিখ্যাত দৃশ্য যেখানে জুলিয়া রবার্টস্‌ রিচার্ড গেরের সাথে হোটেলে ব্রেকফাস্ট করছে – জুলিয়া একটা ক্রোসো খাবো বলে মুখে তুলল, কিন্তু আসলে মুখে ঢোকালো প্যানকেকের টুকরো! কিংবা সেই ‘গডফাদার’ সিনেমার দৃশ্য যেখানে সোনির গাড়ি বুলেটে খতবিক্ষত ভেঙ্গেচুরে একসা, কিন্তু পরের দৃশ্যে অলৌকিক ভাবে গাড়ির সামনের কাঁচ অক্ষত দেখা গেল! বা হ্যারি পটার সিনেমায় হ্যারি ঘুমাতে গেল এক টিশার্ট পরে, পর মুহুর্তেই উঠল অন্য টিশার্ট গায়ে দিয়ে - এমন আরো ভুরি ভুরি – আলাদা করে লেখার কিছু নেই, গুগুল সার্চ দিলেই মিলে যাবে উদাহরন।

    বহুকাল জানতাম না, কিন্তু এখন জেনেছি এই ধরনের ভুল গুলিকে বলে ‘কন্টিনিউটি এরর’। তবে যেটা জানতাম সেটা হল সিনেমা তো আর গল্পের সিকোয়েন্স মেনে শ্যুট করা হয় না! এদিক সেদিক দিয়ে, কোন অ্যাক্টরকে পাওয়া গ্যাছে সিডিউল মিলিয়ে, কোন লোকেশনে যেতে হবে, কোন ঋতুতে সিনেমার গল্প বাড়ছে তার উপর নির্ভর করে সিনেমার শ্যুটিং হয়। নানা অ্যাঙ্গেল থেকে, নানা ক্যামেরার মাধ্যমে – সে এক ভজকট ব্যাপার। সেই সব শেষকালে এসে মেলে এডিটিং টেবিলে – সেখানে কাট ছাঁট করে, সাজিয়ে গুজিয়ে, নাড়িয়ে চাড়িয়ে – দাঁড়ায় হল গিয়ে মূল সিনেমা। তাই ভাবতাম এই সব কাজের ফাঁকে তো ভুল-চুক কিছু হতেই পারে! প্রবলেম টা কি তাতে? হ্যারি কি টি শার্ট পরে ঘুম থেকে উঠল বা জুলিয়া প্যানকেক না ক্রশো কি খেল, তাতে করে মূল গল্পের কি ক্ষতি হল! কিন্তু সব দর্শক তো আর আমার মত উদার মনের নয়! অনেকে প্রবল খুঁত-খুঁতে – ভুল কেন হবে? সিনেমা বলে কি বাস্তবতা থাকবে না? আলেকজান্ডার বা রোমান সম্রাটেরা ইংরাজী ভাষায় কথা বলবে ঠিক আছে – কিন্তু তা বলে ‘স্পার্টাকাস’ সিনেমায় ক্রীতদাস হাতঘড়ি পরে ঘুরে বেড়াবে? মানা যায় এতোটা অনাচার?

    তাহলে সিনেমার পরিচালকেরা কি কিছু স্টেপ নিচ্ছেন না? আম-জনতা ধরতে পারছে মুভির ভুল গুলো, আর তেনারা পারছেন না! আম-জনতাকে সিনেমা বানানোর সময় ভুল ধরার জন্য রিক্রুট করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় – অন্তত এমনটাই ভাবতাম আমি। পরে দেখলাম ব্যাপার অত সোজা নয়! সিনেমায় অলরেডি স্পেশালাইজড পাবলিক আছে এই সব কন্টিনিউটি দেখার – ইন ফ্যাক্ট প্রায় সব বিভাগে। কষ্টিউম বিভাগে যিনি আছেন তিনি দেখছেন কে কি পরে আছে কি সীনে, লাইটিং বিভাগে যিনি আছেন তিনি দেখছেন লাইটের ব্যাপার স্যাপার – এক সীনে মুখের আলো আর অন্য সীনে পিছনে যেন না পড়ে। এবং তদোপরি আছেন এক্সপার্ট ওভার অল দেখাশুনায় যাঁকে বলা হয় ‘স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজর’। এনার কাজ হল সিনেমার একটি দৃশ্যের একটি শটের সাথে অন্য শটের সব কিছুর যেন ম্যাচ করে। এনাকে প্রায় অগুনতি জিনিস মনে রাখতে হয় – কে কি পড়ে আছে, কোথায় কে দাঁড়িয়ে আছে, কোন পা সামনে, কোমরে হাত আছে নাকি পকেটে, সিগারেট খাচ্ছে নাকি চুরুট, টিভিতে বেসবল হচ্ছে নাকি বাস্কেটবল ইত্যাদি ইত্যাদি। এ মাল যদি একবার ভুল করে, তাহলে প্রায়শই ফিরে গিয়ে ওই দৃশ্য শ্যুট করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সিনেমার এডিটর তখন এই সব ছোটখাট ভুল অনেক সময় উপেক্ষা করেই দেন, কারণ ওই দৃশ্যের অন্য ব্যাপারগুলোই প্রধান ছিল – টি-শার্টের রঙ নয়। এর ফলে কি হয় – সিনেমায় এমন কিছু প্রায় অবশ্যাম্ভাম্বী হয়ে পড়ে যেখানে ভুল থাকবেই। প্রশ্ন হল আপনি কি খুঁজতে চান? খুঁজবেন কিনা এবং সেখান থেকে আবিষ্কারের আনন্দ নেবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার – তবে স্পিলবার্গকে এতো সহজে টেক্কা দিচ্ছেন, সেটা মনে না করাটাই বেটার!

    প্রশ্ন হল এমনটা কেন হবে? আগের দৃশ্যে কি ছিল আর পরের দৃশ্যে কি – সেটা মনে রাখা কি এতই কঠিন? এইটা একটু নেড়েচেড়ে দেখার জন্য কর্নেল ইউনিভার্সিটির ড্যানিয়াল লিভিন এবং ড্যানিয়াল সিমনস্‌ (দুই ড্যান লিখব বাকি সময়) একটা টেষ্ট প্ল্যান করলেন – এঁরা একটি ছোট মুভি বানালেন, মাত্র একমিনিটের মত দৈর্ঘ্য। এই মুভিতে দুই বন্ধু সাবিনা এবং অ্যান্দেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে একটা সারপ্রাইজ পার্টির ব্যাপারে যেটা তারা আয়োজন করতে চাইছে তাদের অন্য বন্ধু জেরোমি-র জন্য। তা সেই মুভিতে সাবিনা টেবিলে বসেছিল যখন প্রবেশ ঘটল অ্যান্দেরা-র। তার দুজন যখন কথা বলছিল তখন ক্যামেরা একবার এর দিকে অন্যবার তার দিকে করছিল – ক্লোজ আপ শট – আবার দুইজন একসাথে এমন অনেক শট নেওয়া হল। এক মিনিট পর কথোপকথনের সমাপ্তি এবং ক্যামেরা ফেড।

    এবার দুই ড্যান ছেলে পুলে জোগাড় করলেন এক্সপেরিমেন্টের জন্য ল্যাবেতে – যারা ল্যাবেতে এল তাদের মন দিয়ে ছবিটা দেখতে বলা হ্ল এবং জানানো হল সেই সংক্ষিপ্ত সিনেমার শেষে তাদের কিছু ডিটেলড প্রশ্ন করা হবে। ছবি শেষে সবাইকে কাগজ পেন্সিল দিয়ে বলা হল – ভাই/বহিন লোগ, এই মুভিতে তোমাদের এক শট থেকে অন্য শটে কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে কি বিশেষ করে বডি পজিশন, জামাকাপড় বা জিনিসপত্রের স্থানান্তর এই সংক্রান্ত? কি উত্তর এসেছিল মনে হয়? আপনি যদি ওই এক্সপেরিমেন্টের বাকি সকলের মতন হন তাহলে আপনার উত্তর হবে ‘না’ এবং বাকিদের মতন আপনিও নয় (৯) -টি এডিটিং মিসটেক যা দুই ড্যান ইচ্ছে করে মুভিতে রেখেছিল সেটা মিস করবেন! এডিটিং মিসটেকের মধ্যে ছিল টেবিলের উপর প্লেটের রং বদলে যাওয়া, গলায় স্কার্ফ হাপিস হয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসা ইত্যাদি। আর এগুলি বলাই বাহুল্য আরো বেশী অবভিয়াস ছিল সাংবাদিক মশাই উল্লিখিত ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’-এর এডিটিং ভুলের থেকে! এমন কি এডিটিং-এ ভুল আছে বলে দেওয়ার পরও যারা ড্যান-দের মুভিটা দেখেছিল তারা গড়ে নয়-টার মধ্যে মাত্র দু-টি ভুল বার করতে পেরেছিল! আশ্চর্য হচ্ছেন কি? মনে হচ্ছে কিনা যে আপনি থাকলে সব-কয়টি ঠিকঠাক স্পট করতে পারতেন? মনে হলেও প্রবলেম নেই – কিন্তু সত্যি হচ্ছে আপনি আম-জনতা হলে পারতেন না!

    এই যে আমাদের ব্যর্থতা এক মুহুর্ত আগের থেকে পর মুহুর্তের হঠ করে পরিবর্তনকে নোটিশ করা, একে আজকাল বলা হয় ‘চেঞ্জ ব্লাইন্ডনেশ’, মানে হল গিয়ে ‘পরিবর্তন অন্ধতা’। আম-জনতা আদপেই অন্ধ আগের মুহুর্তের থেকে পরের মুহুর্তের দুম-করে পরিবর্তন নোটিশ করার থেকে। ‘অমনোযোগ অন্ধত্ব’ (ইন-ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেশ) থেকে এর ব্যাপারটা একটু আলাদা - ইন-ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেশ-এর বেলায় আমরা ব্যাপারটা ধরতে পারি না কারণ আমরা এমন কিছু দেখছি যা আমরা এক্সপেক্ট করি নি (সেই বিখ্যাত ‘গরিলা’ এক্সপেরিমেন্ট যেখানে বাস্কেটবল খেলার মাঝ দিয়ে এক আস্ত গরিলা চলে গেল, কিন্তু আমরা নোটিশ করি না!)। এই ‘চেঞ্জ ব্লাইন্ডনেশ’-এর বেলায় যদি আমরা মনে না রাখতে পারি যে জুলিয়া রবার্টস্‌ ক্রসো খাচ্ছিল, তাহলে এখন যে সে প্যানকেক খাচ্ছে, এটা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার বলে আমাদের কাছে পরিগণিত হবে না! এই জিনিসটা হয় যখন আমরা আগের মুহুর্তের জিনিসের সাথে এখনকার জিনিসের তুলনায় ব্যর্থ হই! আসলে আমাদের এই সীমাবদ্ধতার কারণ হল সেই অভিযোজন – বাস্তব জগতে এতো অস্বাভাবিক ভাবে দুম করে কিছু পালটে যায় না – তাই আমাদের ব্রেন তৈরী হয় নি সব সময় তুলনা করার জন্য। আমাদের ব্রেনকে যদি পরপর দুই মুহুর্তের তুলনা করে চলতে হত সর্বদা, তাহলে সে হত ব্রেন-পাওয়ারের এক বিশাল অপচয়।

    এই সব ভেবে দেখা যায় আমরা যে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে মিস করছি যেটা তেমন কোন অবাক করা ব্যাপার নয়, তার থেকেও যেটা অবাক করা ব্যাপার তা হল আমাদের প্রাগঢ বিশ্বাস যে ‘আমাদের ওটা লক্ষ্য করা উচিত ছিল’! ড্যানিয়াল লিভিন এই ব্যাপারটার নাম দিলেন ‘চেঞ্জ ব্লাইন্ডনেশ ব্লাইন্ডনেশ’! পরে ক্লাশ নেবার সময় ড্যানিয়াল লিভিন সেই সাবিনা এবং অ্যান্দেরা মুভির ফটোগ্রাফ অন্য এক ব্যাচের ছাত্রদের দেখালেন, সব কিছুই বললেন, কেবল ‘চেঞ্জ ব্লাইন্ডনেশ’ পরীক্ষার নাম না উল্লেখ করে। এরপার জানতে চাইলেন, বাছারা, তোমাদের কি মনে হয়? তোমাদের সিনিয়রদের জায়গায় তোমরা থাকলে স্পট করতে পারতে যেখানে প্লেটের রং লাল থেকে সাদা হয়ে গিয়েছিল দুই শটের মধ্যে আর গলার স্কার্ফ হাপিস হয়ে গিয়েছিল অন্য সময়? ছাত্ররা হইহই করে উঠল, কি যে বলেন স্যার – এ্যাতো সিম্পল ব্যাপার! শতকরা ৭০ ভাগ ছাত্র বলল যে প্লেটের রং বদল তারা বিলকুল ধরতে পারত, আর ৯০ ভাগ বলল যে মা কালীর দিব্বি, স্কার্ফ হাপিস নোটিশ করতামই করতাম! ড্যান মুচকি হাসলেন কারণ ব্যাপার হল প্রথম বার মূল পরীক্ষার সময় কেউই নোটিশ করে নি!
    দুই ড্যানকে এবার নেশায় পেয়ে বসল – তারা বুঝতে চাইল পাবলিকের এই ভাবে কনফিডেন্টলি ছড়াবার পিছনে কি ব্যখ্যা আছে? তারা আবার নতুন এক পরীক্ষা করল – এই পরীক্ষায় পাবলিকদের দেখানো হল একটি ছোট্ট নীরব মুভি। তাদের বলা হল যে এই মুভি খুব ছোট এবং সবাই যেন গভীর ভাবে মনোসংযোগ করে। সিনেমায় দেখানো হল – এক ব্যক্তি একটি ডেক্সে বসে থাকা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং ক্যামেরার দিকে এগুতে লাগল। এবার শটটা কাট – পরের শটে দেখালো ব্যক্তিটি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে দেওয়ালে লাগানো একটি ফোনে কথা বলতে লাগল। সে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে কানে ফোনটি লাগিয়ে এবং ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে প্রায় পাঁচ সেকেন্ড এবং তারপর আস্তে আস্তে মুভিটি ব্ল্যাক হয়ে গেল। মুভি শেষ হবার সাথে সাথে পাবলিককে বলা হল কি দেখেছে সেটা লিখে ফেলতে।

    আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এক্ষেত্রে মুভিটি কেবল এক ব্যক্তি ফোনে কথা বলছে এতো সিম্পল ছিল না – আসলে মাঝে যখন শটটি কাট হয়, মানে ব্যক্তি ক্যামেরার দিকে মুখ করে এগিয়ে আসা থেকে যখন পিছন ফিরে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় – এই দুই শটের মধ্যে মুভির অভিনেতাটিকে বদলে দেওয়া হয়েছিল! মানে এই ছোট্ট সিনেমায়, দুই জন অভিনেতাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। এবার আপনার কি মনে হয়? পারবেন না এই বদলটা ধরতে যে অভিনেতা পালটে গ্যাছে – সম্পূর্ণ অন্য পোশাক পড়া, চুলের সিঁথি অন্য দিকে, এবং অন্য চশমা পড়া! যদি মনে হয় আপনি পারতেন তা হলে আপনি এখনো ইল্যুশন অব্‌ মেমোরী তে ভুগছেন – হয়ত পারতেন, কিন্তু পারতেনই এমন কোন গ্যারান্টি নেই, ইনফ্যাক্ট না পারার সম্ভাবনাই বেশী রয়েছে! সেই ফিল্ম দেখার পর কি দেখেছ লিখতে বলাতে নানা মুনি নানা মত প্রদান করেছিলেন। যাদের জিঞ্জেস করা হয়েছিল তারা কেউই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে লেখে নি যে তারা ওই অভিনেতার পরিবর্তন নোটিশ করেছে বলে। এমনকি পাবলিককে যখন ক্লু দেওয়া হল এই বলে যে, তোমরা কি এই মুভিটার মধ্যে অস্বাভাবিক দেখেছ, তখনও কিন্তু কেউ বলে নি যে, দাদা অভিনেতা কে পালটে দিলেন? এর পরের পরীক্ষায় অন্য সেট অব্‌ জনতাকে এই মুভি দেখানো হল, এবং বলা হল অভিনেতা পরিবর্তনের কথা। তারপর জানতে চাওয়া হল আপনারা পারতেন কি এই পরিবর্তন ধরতে? ৭০ ভাগ পাবলিক জোরের সাথে জানালো অবশ্যই পারতাম যদিও মূল পরীক্ষায় একজনও পারে নি! এই ক্ষেত্রে হয়েছে পাবলিকে আগে থাকে বলে দেবার জন্য তারা সচেতন হয়ে গিয়েছিল এবং তাই জোরের সাথে বলেছিল যে তারা পারত ধরতে!

    দুই ড্যান মনের আনন্দে এই সব পরীক্ষা করে চলল – সেই সব কার্যকলাপ এবং পরীক্ষা দেখে ড্যান-দের অনুপ্রেরণা প্রোফেসর উলরিখচ নেইসের বললেন, বৎস সবই ঠিক আছে, কিন্তু একটা ব্যাপার তোমরা ধর্তব্যের মধ্যে আনো নি, যেটা কিন্তু পরীক্ষাগুলিকে প্রভাবিত করতে পারত। মানে একটা জিনিস তোমরা ভ্যারিয়েবল না করে কনস্ট্যান্ট করে রেখেছ। প্রতি ক্ষেত্রেই তোমরা পাবলিককে মুভি দেখাচ্ছ – মানে পাবলিক শুধু দেখছে, নিজে সশরীরে ইনভলভড থাকছে না। কে বলতে পারে যে নিজেরা সশরীরে ব্যাপারটাতে ঢুকে থাকলে সব নোটিশ করত না? মূল কথা – অ্যাক্টিভ বনাম প্যাসিভ কেস আর কি। সব শুনে দুই ড্যান ভাবলো প্রফেসরের কথায় নিদারুণ যুক্তি আছে, এমনকি মনে হচ্ছে উনিই ঠিক। তা একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক না পাবলিক নিজেরা অ্যাক্টিভ থেকে অংশগ্রহন করলে হঠ করে চেঞ্জ নোটিশ করে কিনা!

    সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল এক কলেজ ক্যাম্পাসে – মনে করুন যে আপনি এক বিশাল কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং হঠাৎ করে সামনে একজন উদয় হল যার হাতে একটা ম্যাপ। আপনাকে ম্যাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল, দাদা, লাইব্রেরীটা কোন দিকে একটু দেখিয়ে দেবেন। আপনি তার হাতের ম্যাপটা নিয়ে লাইব্রেরী খুঁজতে শুরু করবেন কি এমন সময় পিছন থেকে দুই ব্যক্তি দাদা সরে যান, দাদা সরে যান বলতে হাজির। তাদের হাতে এক বিশাল কাঠের দরজা টাইপের এবং খুবই রূঢ় ভাবে তারা আপনাদের মধ্যে দিয়ে দরজা নিয়ে চলে গিয়ে ম্যাপ দেখানো কাজে ছেদ ঘটালো। দরজা নিয়ে চলে যাবার পর আবার আপনি ম্যাপ পয়েন্টিং-এর বাকি কাজটা শেষ করলেন। আপনি কি লক্ষ্য করবেন যে আপনি যাকে লাইব্রেরী খুঁজে দিতে শুরু করেছিলেন ম্যাপেতে, আপনাদের মাঝ দিয়ে দরজা চলে যাবার পর সেই ব্যক্তি পালটে গিয়ে অন্য ব্যক্তিকে হাজির করা হয়েছিল? কি মনে হয় যদি ওই দুই ব্যক্তি আলাদা পোষাক পরে থাকে, উচ্চতা আলাদা, এমনকি গলার স্বর আলাদা হয়? এতো পরিবর্তন লক্ষ্য না করাটাই আশ্চর্যের না কি? যতই হোক, আপনি একজনের সাথে কথা বলছিলেন, তার দিকে তাকাবার সুযোগ পেয়েছিলেন, তার গলার স্বর শুনেছিলেন। নিশ্চয়ই তাদের পালটে যাওয়া নোটিশ করবেন! অন্ততঃ এমনটাই ভেবেছিলেন দুই ড্যান এবং প্রোফেসর! শুধু তেনারা নয় এমনটাই ভেবেছিল শতকরা ৯৫ ভাগ আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্ররাও যখন তাদের জিঞ্জেস করা হয়েছিল বাছারা নোটিশ করতে কিনা? এ এক পরিষ্কার কেস যেখানে আমজনতা, ছাত্র থেকে প্রোফেসর সবাই ভুল ভেবেছিল – মানে সবাই ইল্যুউশন অব্‌ মেমরীর খপ্পরে পড়ে নিজেদের ওভার এষ্টিমেট করেছিল। সবাই ভেবেছিল এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি পরিবর্তন নোটিশ না করা প্রায় এক না-মুমকিন ব্যাপার! কিন্তু বাস্তবে মূল পরীক্ষার সময় শতকরা ৫০ ভাগ পাবলিক সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করে নি।

    এর অনেক বছর পরে হাভার্ড ইউনিভারসিটিতে এর ফলো আপ এক্সপেরিমেন্ট ঘটানো হয়েছিল। প্রোফেসর স্টিফেন কোসলিন নীচের তলায় আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্রদের ক্লাস নিতে নিতে সেই দরজার এক্সপেরিমেন্ট যেখানে লাইব্রেরীর সন্ধান জানতে চাওয়া হয়েছিল ম্যাপেতে এবং জানতে চাওয়া ব্যক্তিকে বদলে দেওয়া হয়েছিল – সেই পরীক্ষার কথাটি প্রসঙ্গত উল্লেখ করলেন। ক্লাসের শেষে যথারীতি কিছু ছাত্র নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, অসম্ভব, আমি থাকলে এই ভুল করতামই না। সেই ক্লাসে নিযুক্ত ছিল নতুন পরীক্ষাটি করার জন্য রিক্রুটার। তারা সেই আলোচনা রত ছেলে/মেয়ে গুলিকে বলল তোমরা তো এই দাবী করছ, তা একটা পরীক্ষায় নিজেরা অংশ গ্রহন করবে নাকি? যারা রাজী হল তাদের উপরে তলায় যেতে বলা হল। উপর তলায় গেলে একটা কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ফর্ম ফিল-আপ করতে বলা হল – কাউন্টারের পিছনে একজন পরীক্ষক ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করছিল। কথা বলতে বলতে ওই পরীক্ষকের হাত থেকে কিছু পেপার পড়ে যাওয়ায় সে ঝুঁকে পড়ে মেঝে থেকে পেপারগুলি তুলতে লাগে। এবং পেপার তুলে যে কাউন্টারের সামনে এবার দাঁড়ায় সে কিন্তু অন্য ব্যক্তি। এবং বলাই বাহুল্য কোন ছাত্রই সেই ব্যক্তি পরিবর্তন নোটিশ করে নি!

    ১৯৯০ দশকে এই চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ নিয়ে বেশ কাজ হয়েছিল – এর ব্যপ্তি বিশাল এলাকা জুড়ে এবং সেই ইল্যুউশন এতই শক্তিশালী যে এমনকি পরীক্ষকেরাও সেই ভ্রমের স্বীকার হন মাঝে মাঝে। চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ কাজ করার এক মূল কারণ হল এই যে, আমাদের মধ্যে আদপে প্রায় কোন ফীডব্যাক মেকানিজম নেই যা আমাদের সতর্ক করে দেয় এই বলে যে, বস্‌, এই চেঞ্জটা কিন্তু তুমি নোটিশ করলে না! আমরা কেবল সেই চেঞ্জটা নিয়েই সচেতন থাকি যা আমরা ধরতে পেরে গেছি। যা ধরতে পারি নি, তা কিন্তু আমাদের ধরতে পারার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার সম্পর্কে কোনই ফীডব্যাক দেয় না। তাহলে কিছু পাবলিককে কি এমনভাবে ট্রেন করা যায় যাতে তারা চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ এর প্রভাবে না পড়ে? যদি সম্ভব হয়, তা হলে তাদের ধরে ধরে তো ‘স্ক্রীপ্ট-সুপারভাইজার’ বানিয়ে দিলেই হয়! ব্যাপারটা অত সহজ নয় – কিন্তু হ্যাঁ, প্রাক্টিসের ফলে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। প্রত্যেক ভুলের থেকে শিক্ষা আর সে থেকে পরের বার অনুমান। এই ভাবেই হলিউডে অনেক ‘স্ক্রীপ্ট-সুপারভাইজার’ কাজ করেন। তাঁদের সাক্ষাতকার নিয়ে দেখা গ্যাছে যে তাঁরা নিজেদের এই চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ নিয়ে বিলক্ষণ সচেতন। এঁরা এক্সটেন্সিভ নোট নেন মুভি বানানোর সময় – আর অভিজ্ঞতার ফলে এঁরা অনর্থক ইনফরমেশন রিফিউজ করতে শেখেন। অর্থাৎ, এঁরা অনুমান করতে শেখেন যে এই সীনের এই খানটা এমনিতেই এডিটিং টেবিলে বাদ যেতে পারে, তাই সেটা নিয়ে আর তাঁরা বেশী মাথা ঘামান না। চেষ্টা করেন সীনের গুরুত্ব পূর্ণ জিনিসটায় মনসংযোগ করতে। এদত সত্ত্বেও এঁরা বাজে রকমের কন্টটিনিউটি এরর স্পট করতে ভুল করেন। কথা হল - কন্টটিনিউটি এরর থাকা মানেই হেলাফেলা করে ফিল্ম বানানো হয়েছে এমন নয় – আমাদের চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ এর এক প্রধান কারণ।

    কিন্তু একটা ব্যাপারে অনেক ‘স্ক্রীপ্ট-সুপারভাইজার’ই এক মত – তা হল, আপনি ফিল্ম দেখার সময় যত গভীরে ঢুকে যাবেন সিনেমার, ততবেশী সম্ভবনা বাড়বে যে আপনি চেঞ্জ স্পট করতে পারবেন না! সিনেমার গল্প ও চরিত্র চিত্রণ মানুষের চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এটা মাথায় রেখে এবার ভাবুন যে, যারা এই কন্টটিনিউটি এরর নিয়ে কেবল মাথা ঘামান এবং গাদা গাদা লিঙ্ক, ওয়েব সাইট, প্রবন্ধ পয়দা করেন, তারা আসলে সিনেমাটা এনজয় করেছেন কি? আমি যদি ডাইরেক্টর হই, আর আমার সিনেমায় যদি একবার দেখার পরেই কেউ গুচ্ছের গুচ্ছের কন্টটিনিউটি এরর বের করে ফেলে, তা হলে আমার কাছে সেটা ভাবনার ব্যাপার! তার মানে আমার সিনেমা তাদের টেনে রাখতে পারে নি – তারা ভালোভাবে সিনেমায় ডুবে না যাবার জন্য সেই কন্টটিনিউটি এরর গুলি স্পট করতে পেরেছে! আর যদি কেবল কন্টটিনিউটি এরর বার করব বলেই সিনেমা দেখতে বসেন, তাহলে আপনাকে ‘গুড-লাক’ বলার দরকার নেই, কারণ এটা খুবই স্বাভাবিক যে সিনেমায় কিছু কিছু কন্টটিনিউটি এরর থাকতেই পারে!

    এর মানে কিন্তু এই নয় যে চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ জিনিসটার কোন সীমা-পরিসীমা নেই! সামনে দিতে হাতি গলা কি আর অতই সহজ! এটা পরীক্ষায় দেখা গ্যাছে যে, ছেলে থেকে যদি চেঞ্জ হয়ে মেয়ে হয়ে যায় হঠ্‌ করে সামনের কেউ, তাহলে আমরা নোটিশ করব, সাদা অভিনেতা চেঞ্জ হয়ে গিয়ে যদি কালো কেউ চলে আসে, বা এশিয়ান পালটে আমেরিকান, বা নিজেদের চেনা সার্কেলের মধ্যের কেউ দুই জন যদি প্রতিস্থাপিত হয় তাহলেও আমরা নোটিশ করব। কিন্তু এর বাইরের বেশীর ভাগ চেঞ্জ-ই আমরা নোটিশ করতে পারব না। এটা দেখা গ্যাছে যে আপনি যদি কোন অচেনা ব্যক্তির সাথে কথা বলেন, খুব কম জেনারেল ইনফরমেশন আপনার ব্রেন মনে রাখবে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে – সেই গুলো মূলত হল, সেক্স, রেস্‌ এবং সোস্যাল গ্রুপ (ছাত্র, বিজনেস মেন ইত্যাদি)। ঐ ব্যক্তির বাকি ইনফরমেশন আপনার ব্রেনের কাছে তত বেশী গুরুত্ব পূর্ণ মনে হবে না এবং ফলতঃ সিম্পলি ভুলে যাবেন। তবে মনে রাখবেন আমি এখানে আম-জনতার কথাই লিখছি, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন পাবলিকদের নয় – যেমন আমার বউ। তাঁর ব্রেন একটি জিনিস বছরের পর বছর মনে রাখে, তা হল সাজ পোশাক। তেনার আবার চেঞ্জ-ব্লাইন্ডনেশ সিলেকটিভ – সাজপোষাকের ব্যাপার ছাড়া অবশ্য তিনিও ওই আমজনতার মধ্যেই পড়েন!

    [Christopher Chabris and Daniel Simons, “The Invisible Gorilla”, HarperCollins Publishers, London, 2011].
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩১ মে ২০১৬ | ৬৮৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উপকণ্ঠ - Sarthak Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ekak | 53.224.129.58 (*) | ৩১ মে ২০১৬ ০৩:১৬53159
  • চেঞ্জ ব্লাইনডনেস কি অনেকটাই কে কোন দিকে আগ্রহী সেই ফোকাসের উপর নির্ভর করেনা , বা কী পারপাস নিয়ে আমরা কোনো জিনিস দেখছি ।

    যেমন ধরুন টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা পাঁচটা জিনিস । আলো নিভিয়ে সেগুলো এদিক ওদিক করে বা বড় সাইজের ফুলদানির জায়গায় ছোট ফুলদানি এরকম রেখে আপনাকে প্রশ্ন করা হলো । এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হান্দ্রেদ পার্সেন্ট ঠিক উত্তর দিতে পারবেন । এরকম পরীক্ষা আমরা অনেকেই অনেক ক্ষেত্রে দিয়েছি । ইস্কুলে ভর্তির সময়েও জিজ্ঞেস করে । এক্ষেত্রে যেহেতু আগে থেকে বলে দেওয়া হয় পারপাস টা তাই পুরো ব্রেইন ফোকাস হয়ে যায় ।

    আবার ধরুন পার্টিতে ভীরের মধ্যে পার্টিকুলার কোনো একজনকে লক্ষ্য করছেন কোনো কারণে । সে বাথরুমে ঢুকলো একটা সাদা শার্ট পরে । বেরিয়ে এলো পিঙ্ক শার্ট পরে । নেহাত ঘরের আলো থেকে ইলিউশন না হলে আপনার চোখে এটা ধরা পর্বেই যে লোকটা শার্ট বদলেছে ।

    আবার ,ওই লোকটিই ,যদি তাকে কাউন্ট না করেন এবং দুবার পাশ দিয়ে কাছাকাছি দু রঙের শার্ট পরে হেঁটে যায় কোনো চেঞ্জ আপনি বুঝবেন না অন্যের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ।

    ট্রেইন করলেও বা না করলেও , যে দিকে যার স্পেশাল ইন্টারেস্ট আছে তিনি সেই ক্ষেত্রে চেঞ্জ খেয়াল করেন । যেমন হাতের কাছে উদাহরণ আমার বাপ .....জুতো পালিশ করা কিনা , জুতোয় কাদা নিয়ে স্মার্টলি ঘরে ঢুকে গেলেন কিনা ,জুতো পাল্টেছেন কিনা , দুপায়ে বেমানান মোজা পরে ল্যালার মত ঘুরছেন কিনা এমনকি সেম রং আলাদা ডিসাইন হলেও ...মোটামুটি জুতোমোজা ফোকাস মানুষ যারে কয় :))

    আর সিনেমার -নাটকের বা যেকোনো পারফর্মিং আর্ট এর ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার থাকে । ম্যাজিসিয়ান এর যেমন এসিস্টেন্ট , যে কিনা নানান রকম ছলাকলায় দর্শক কে টেনে রাখে যাতে দর্শকের চোখে চেঞ্জ ধরা না পরে , পারফর্মিং এও সেরকম একটা আবহ তৈরী করা হয় .....কখনো ইমোশনাল ইন্টেন্সিটি কখনো মিউসিক -ডায়ালগ এসব দিয়ে। তারপরেও যদি সিনে ওয়াচার এর চোখে ধরা পরে বড়ভাবে তার মানে ওই এসিস্টেন্ট তার ছলাকলায় অক্ষম :)
  • সুকি | 129.160.188.55 (*) | ০১ জুন ২০১৬ ১১:১৮53160
  • একক,
    আপনি যা লিখেছেন মোটামুটি সেই জিনিসটাই অনেকাংশে লেখার চেষ্টা করেছি - আর সেটা গবেষকেরাও বলে গেছেন। ব্যাপার হল মোদ্দা কথায় - লক্ষ্য করব বলে পণ করে বসলে, অবশ্যই বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন (সবটা নাও পারতে পারেন)। কিন্তু আগে থেকে না বলে দিলে লক্ষ্য না করার সম্ভাবনা খুব বেশী -
  • de | 24.139.119.172 (*) | ০১ জুন ২০১৬ ১২:১৩53161
  • খুব ভালো লেখা!!
    চেঞ্জ ব্লাইন্ডনেসের উতুব ভিডো -

  • rivu | 140.203.154.17 (*) | ০২ জুন ২০১৬ ১২:০৮53162
  • খুব ইন্টারেস্টিং লেখা। আমি ভিডিওটাও দেখলাম। একচুয়ালি শুরুর দিকের কয়েকটা হ্যান্ড মুভমেন্ট এর পরে ট্র্যাক লুজ করে ফেললুম, তাই চেঞ্জটা লক্ষ্য করতে পেরেছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন