এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • তুষারঝড়

    ন্যাড়া লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৭০৬ বার পঠিত
  • নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে যখন নেবেছি তখন বেলা প্রায় দেড়টা। নাবার কথা ছিল সকাল নটায়। স্যান ফ্র্যান্সিসকো থেকে সোজা নিউ ইয়র্ক। বাজে আবহাওয়ার জন্যে প্লেন ঘুরে এল ডেনভার দিয়ে। ব্যস সাড়ে চার ঘন্টা মায়া। আমরা যাব নায়াগ্রা ফলস। এয়ারপোর্ট থেকে সময় লাগবে সাত ঘন্টা। নটায় নাবলে পথে থেমে-টেমেও ছটার মধ্যে হোটেলে ঢুকে যাবার কথা। হতচ্ছাড়া শীতকাল।

    অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল শীতের মাঝে একবার নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাব। চতুর্দিক সাদা, নায়াগ্রারও অনেক অংশ জমে গেছে, তারই মাঝে সে ঝিরঝিরি বয়ে আচমকা দেড়শো ফুট ঝাঁপ দিচ্ছে। এ জিনিস দেখার মজাই আলাদা। তাছাড়া শীতে টুরিস্টের হট্টগোলও কম থাকে। বউও এক কথায় রাজী।

    কিন্তু আমি জানি আমার কাছে নায়াগ্রাটাই আসল নয়। তার থেকেও বড় হল আপস্টেট নিউ ইয়র্কের ভেতর দিয়ে যাওয়া। আমি অ্যামেরিকার অনেক জায়গা দেখিনি। কিন্তু যা দেখেছি তার মধ্যে ন্যাশানাল বা স্টেট পার্কগুলো বাদ দিলে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের মতন সুন্দর জায়গা আর একটাও নেই। স্রেফ হাইওয়ে ধরে বিঙহ্যামটন, সিরাকিউজ, রচেস্টর, বাফেলো হয়ে যে পথে যেতে হবে সে পথই এত সুন্দর যে বার বার যেতে ইচ্ছে করে। একটু ঘুরে গেলে ইথাকাও পথে পড়ে যাবে। এই সব শহরগুলোতেই নামী বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া বিশেষ কিছু নেই। মাঝে মাঝে সমতল, মাঝে মাঝে পাহাড়ি রাস্তা, দুপাশে বিস্তীর্ণ জমি। একটা দুটো বাড়ি। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অতি অল্প। এখানে নির্জণতার রং এক এক ঋতুতে এক এক। এখন সাদা। রেড আই ফ্লাইট ধরার কারণও ছিল এই। যাতে সূর্যের আলোয় আপস্টেট নিউ ইয়র্কের সৌন্দর্য ড্রাইভ করতে করতে যতটা পারা যায় শুষে নেওয়া যায়। কিন্তু হতচ্ছাড়া শীতকাল।

    স্থির করলাম গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। পুরো রাস্তা যদি যেতে ইচ্ছে না হয় তবে বিঙহ্যামটন না সিরাকিউজে রাত্রিবাস করে নেব। একটা লাল ফোর্ড এস্কর্ট গাড়ি দিল গাড়িভাড়া কোম্পানি। "দোষ কারো নয় গো মা, আমি মরি স্বখাতসলিলে" গাইতে গাইতে গাড়িতে উঠে পড়লাম। শীতের হুলটি যথেষ্ট বেদনাদায়ক। নম্বরে বলতে গেলে পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট, মাইনাস পনেরো ডিগ্রি সেলসিয়াস। মানে মোক্ষম শীত। চালাও ফুল স্পিডে হিটার। একটু পরেই গাড়ির ভেতরে আরামের ওম জমল। বাইরে ঝকঝকে রোদ। কাল রাতে অল্প বরফ পড়েছিল। রাস্তার ধারে বরফের সাদায় সেই রোদ পড়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আলংকারিক আর আক্ষরিক - দুই অর্থেই। উষ্ণতার নিরাপত্তায় বসে সেই রোদ দেখলে বোঝার উপায় নেই বাইরে এত ঠান্ডা।

    পাঁচটার মধ্যে বিঙহ্যামটনে পৌঁছে গেলাম। যদিও শীতের দিন বলে অন্ধকার প্রায় ঘন হয়ে এসেছে, তাও স্থির করলাম একেবারে সিরাকিউজে গিয়ে রাত্রিবাস করব। বিঙহ্যামটন পেরোতেই হাল্কা বরফ পড়া শুরু হল, এখানে যাকে ফ্লারি বলে। গা করিনি। কিন্তু মাইল পাঁচেক যেতেই প্রবলবেগে স্নোফল শুরু হল। অন্ধকার ততক্ষণে ঘনিয়ে এসেছে। হেডলাইটের আলোর দুটো বিমে দেখছি পাগলের মতন বরফ ঝরছে। বরফের হাল্কা কুচি আমাদের দিকে ধেয়ে এসে গরম উইন্ডশিল্ডে ধাক্কা খেয়ে গলে পড়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে থাকলে নেশা ধরে যায়। গাড়ির ভেতরে আশা ভোঁসলে গাইছেন, "প্রদীপের শিখায় জ্বলে মরুক প্রজাপতি"।

    আর মাইল দুয়েক যাবার পরে যা অবস্থা হল, তাতে অন্তরাত্মা খাঁচাছাড়া। বরফের বেগ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সবচেয়ে জোরে ওইয়াপার চালিয়েও কিছু হচ্ছে না। ওইয়াপার যেই এক জায়গা থেকে সরছে, অমনি এক ঝাঁক বরফ এসে সেই জায়গা ঢেকে ফেলছে। আন্দাজে গাড়ি চালাচ্ছি। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি কিনা, সেও জানিনা কারণ রাস্তা, ধারের শোল্ডার, নয়ানজুলি - সব বরফে ঢেকে সমতল। সদ্য-পড়া বরফে গাড়ি স্কিড করার সম্ভাবনা কম, কিন্তু খানাখন্দে পড়ে যেতে পারি। আর সবচেয়ে বড় কথা চতুর্দিকে কোন বাড়ির চিহ্ন নেই। বা থাকলেও মুষলধার বরফের পর্দার পেছনে পড়েছে। ত্রিসীমানায় কোন গাড়ির যাতায়াতও নেই। গাড়িটাকে আন্দাজে যেখানটা রাস্তার ধার বলে মনে হচ্ছে, সেখানে দাঁড় করালাম। বরফ পড়াটা একটু কমুক।

    আধঘন্টা পরে বরফের বেগ অনেকটা কমল। কিন্তু ততক্ষণে যে পরিমাণ বরফ জমিতে পড়েছে, তাতে গাড়ি নিয়ে এগোন সম্ভব নয়। আন্দাজে যেটা রাস্তা বলে মনে হচ্ছে, তার একপাশে গাড়ি থামালাম। এ সেলফোনের যথেচ্ছ ব্যবহারের আগের কথা। কাজেই ফোন -টোন করে যে সাহায্য চাইব তার কোন উপায় নেই।

    কিছুক্ষণ গাড়িতে বসে থাকার পরে বউকে বললাম, এভাবে বসে থেকে লাভ নেই। বরফ পড়া বন্ধ হয়েছে, এবার বেরিয়ে হেঁটে দেখতে হবে কাছেপিঠে কিছু আছে কিনা। গাড়ি থেকে নাবতেই ঠান্ডা জেঁকে ধরলেও, যত ঠান্ডা ভেবেছিলাম, দেখলাম তত নয়। তবে পায়ের তলায় বরফ প্রায় হাঁটু অব্দি। অন্ধকার নেবে গেলেও আসমানের মেঘ আর জমিনের বরফে মিলে অন্ধকার জমাট বাঁধতে দেয়নি। একটা হাল্কা আভায় বেশ কিছুদূর অব্দি দৃষ্টি যাচ্ছে। কিন্তু চারিদিক নিস্তব্ধ। শুধু নিজদের পায়ের জুতোয় ভার্জিন আইস মাড়ানোর শব্দ। সবে অন্ধকার, ঠান্ডা, নৈঃশব্দর সঙ্গে ধাতস্ত হচ্ছি, হঠাৎ নজরে গেল একটু দূরে একটা চৌফালি আলো। জানলার আলো। আন্দাজে মনে হল আধা-মাইল বা তার কমই হবে। ভগবানে বিশ্বাস ফিরে আসার মতন ব্যাপার। জ্যাকেটের জিপার ভাল করে টেনে, গ্লাভস এঁটে, জ্যাকেটের হুড তুলে গাড়ির ট্রাঙ্ক থেকে কেবিন লাগেজ দুটো হাতে তুলে হাঁটা লাগালাম।

    হাইওয়ে থেকে একটা ফ্যাকড়া রাস্তা বেরিয়েছে। বোধহয় কাঁচা, বরফে ঢাকা পড়ে গেছে বলে বোঝার উপায় নেই। দুধারে ফেন্স। রাস্তা বেঁকে বাড়িটার বারন্দায় গিয়ে থেমেছে, এদেশে যাকে প্যাটিও বলে। আশ্চর্য বাড়ি! অন্ধকারে যদ্দুর চোখ গেল আর একটাও স্ট্রাকচার চোখে পড়ল না। ফার্মে সাধারণতঃ একাধিক স্ট্রাকচার থাকে। প্যাটিওতে উঠে দরজায় টোকা দিলাম। দরজা খুললেন বছর ষাটেকের হাসিখুশি চেহারার একজন সাদা মহিলা। আমরা আমাদের গর্দিশ ব্যক্ত করলাম। ভদ্রমহিলা খুব আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করে ভেতরে যেতে বললেন।

    ছোট বাড়ি, কিন্তু কী আরামের গরম ওম জমে আছে। চড়চড় করে আওয়াজ করে ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে। ছোট লিভিং-কাম-ফ্যামিলি রুমে বড় বড় সোয়েডের সোফা। সঙ্গে কিচেন আর ডাইনিঙের ছোট জায়গা। আমরা অনেক ক্ষমা চেয়ে আর তার থেকেও বেশি পরিমাণে ধন্যবাদ দিয়ে সোফায় গা এলালাম। কী আরাম, কী আরাম। ভদ্রমহিলা, নাম বললেন সুজান, কেটলিতে গরম জল চাপিয়ে বললেন, "তোমাদের হট চকলেট করে দিই।" হট চকলেট খেতে খেতে কথা জমল।

    সুজানের শ্বশুরের ফার্ম এটা। ছোট ফার্ম, কিন্তু লাভ দেয়। এখন চালায় সুজান আর সুজানের বর ফ্র্যাঙ্ক প্যাটারসন। ফ্র্যাঙ্ক আগে নিউ ইয়র্কে কাজ করত। তখন তারা নিউ ইয়র্কে থাকত। এখন রিটায়ার করে এখানে এখানে পাকাপাকি থাকে। কিন্তু সব বন্ধুবান্ধব শহরে। তাই এখনও মাসে একদিন ফ্র্যাঙ্ক শহরে তাস পেটাতে যায়। ফেরার সময় সওদা করে আনে সুজানের ফরমায়েসি ফ্যান্সি জিনিস যা শহরে সহজলভ্য কিন্তু এই গন্ডগাঁয়ে পাওয়া অসম্ভব। ফ্র্যাঙ্ক আজ সকালে শহরে গেছে। রাতে ফেরার কথা, কিন্তু ফোন করে জানিয়েছে বরফের জন্যে আজ না ফিরে কাল ফিরবে।

    তারপরে গতানুগতিক কথা। আমাদের কথা, ক্যালিফোর্নিয়ায় কী করি, ইন্ডিয়ার কোথায় বাড়ি, পারমিতার কানের দুলের প্রশংসা এসব কথা বলতে বলতেই হাতে হাতে সবজি, চিকেন-টিকেন কেটে তিনটে পট-পাই বেক করে ফেললেন। সেই গরম ও উমদা পট-পাই খেয়ে দুটো কামরার একটায় আমরা শুয়ে পড়লাম। নিঃসন্তান দম্পতি। সুজান বলল, ঘর ফাঁকাই পড়ে থাকে। অবরে-সবরে শহরের বন্ধুরা আসে, তবে রাত্রিবাস করে অল্পই। সবই ভাল, কিন্তু এদের সারাবাড়িতেই একটা পুরনো ধুলোর গন্ধ। আর আসবাব, অ্যাপ্লায়েন্স সবই অত্যন্ত পুরনো। পারমিতাও বলল লক্ষ্য করেছে।

    বিছানায় শুতে না শুতেই ঘুম। হঠাত ঘুম ভেঙে গেল টেলিফোনের শব্দে। চতুর্দিক ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। রেডিয়াম ঘড়ি বলল, রাত চারটে পঞ্চাশ। সুজান শুনলাম কথা বলছে ফোনে। একটু পরে বন্ধ দরজার তলায় আলো দেখে বুঝলাম সুজান লিভিং রুমে এসেছে। তারও মিনিট খানেক পরে দরজায় খটখট। সুজান খুব কুণ্ঠার সঙ্গে বলল, "খুব খারাপ লাগছে তোমাদের এই সময়ে বিরক্ত করতে, কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক খুব ভোরে বেরিয়ে বাড়ি আসতে গিয়ে বরফে এক জায়গায় গাড়ি খারাপ হয়ে আটকে গেছে। আমাকে আনতে যেতে হবে। একটু বাদেই আলো ফুটে যাবে। তাছাড়া আর মিনিট পনেরোর মধ্যেই বরফ সরাবার গাড়ি এসে রাস্তা পরিস্কার করে দেবে। তোমাদের কোন অসুবিধে হবে না। আমি কফি করে দিচ্ছি। আধঘন্টার মধ্যে বেরিয়ে পড়তে পারলে ভাল হয়। নইলে বেচারা ফ্র্যাঙ্ক ঠান্ডায় স্ট্র্যান্ডেড হয়ে থাকবে।"

    আমরা চোখের ঘুম তাড়িয়ে ঝটপট গুছিয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যে লিভিং রুমে এসে দেখলাম ওই সকালেও সুজান কফি আর কুকি সাজিয়ে দিয়েছে। আমরা ঝটপট কফি খেয়ে নিলাম। সঙ্গের দুটো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সুজানের সঙ্গে ঠিকানা-ফোননম্বর অদল-বদল করে প্রভূত কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। সুজান বলল, "আমি ফার্মের পেছনের ব্যাকরোড দিয়ে চলে যাব, হাইওয়ে ধরার দরকার হবেনা। ড্রাইভ কেয়ারফুলি।"

    গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন গরম করার জন্যে চালিয়ে কিছুক্ষণ বসে আছি। সেই ফাঁকে ম্যাপ-ট্যপগুলোও আরেকবার ঝালিয়ে নিচ্ছি, হঠাৎ নীল-কমলা আলোর ঝলক। পেছনে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। কী ব্যাপার রে বাবা! গাড়ির দুদিক থেকে দুজন পুলিশ নেবে আমার জানলায় এসে জিগেস করল, "এনি প্রবলেম?" আমি বললাম, "না, প্রবলেম কিছু নয়। গাড়ি গরম করছি।"
    - কেন? তোমরা কী এখানে অনেকক্ষণ থেমে আছ?
    - আমরা এখানে একজনের বাড়িতে রাত্রিবাস করছিলাম।
    - কার বাড়ি?
    - প্যাটারসনদের বাড়ি।
    পুলিস দুজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। তারপরে একজন বলল, "ক্যান ইউ প্লিজ স্টেপ আঊট? ভয়ের কিছু নেই।" আমি গাড়ি থেকে নাবলাম। পুলিশ বলল, "বাড়িটা কোথায় দেখাতে পারবে?" দিগন্ত তখন অল্প ফর্সা হতে শুরু করেছে। বাড়িটা সিল্যুয়েটে দেখা যাবার কথা। কিন্তু নেই। বাড়িটা জাস্ট নেই। কিচ্ছু নেই। সাদা বরফ ছড়ানো আদিগন্ত মাঠ। কোন বাড়ি নেই। কোন ফার্ম নেই। কিচ্ছু নেই। আমার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। আমি গাড়ির দরজা ধরে ফেললাম। আমার অবস্থা দেখে পারমিতা গাড়ি থেকে নেবে এসেছে। তারও একই অবস্থা। পুলিশ দুজন বলল, "আই থিংক আই ক্যান এক্সপ্লেন। প্লিজ ফল মি।"

    আমার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। পুলিশের গাড়িটার পেছন পেছন যাচ্ছি। কোথায় তা জানিনা। কত পথ গেছি তাও জানিনা। একটা স্ট্রিপ মলে পুলিশ ঢুকল। তার পেছন-পেছন আমরা। পুলিশ এসে আমাদের দরজা খুলে নিয়ে এল একটা ডোনাট শপে। টেবিলে বসলাম। কেউ একটাও কথা বলিনি। একজন পুলিশ গিয়ে চারটে কফি আর গরম গরম ডোনাট নিয়ে এসে টেবিলে রাখল। কোনরকম ভনিতা না করে বলতে শুরু করল, "এখান থেকে প্রায় বাইশ মাইল দূরে প্যাটারসনদের ফার্ম ছিল। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে। ফার্মটা এখনও আছে, তবে হাত বদল হয়েছে। নামও বদলেছে। তবু লোকাল লোকেরা সবাই ওটাকে প্যাটারসন ফার্ম বলেই জানে।"
    কফিতে চুমুক দিয়ে ডোনাট খেল। আমার আর পারমিতার দিকে ডোনাটের প্লেটটা ঠেলে দিল।
    "ফ্র্যাঙ্ক আর সুজান প্যাটারসন ফ্র্যাঙ্কের বাবা মারা যাবার পরে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে চলে এসেছিল। সেটা চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি। তারপরে, উনিশশো পঞ্চাশ সালে একদিন সিটি থেকে ফেরার সময়ে তুষারঝড়ে পথ হারিয়ে দুজনে স্ট্র্যান্ডেড হয়ে যায় জনমানবহীন জায়গায়। সে বছর সিভিয়ার উইন্টার হয়েছিল। পরপর পাঁচদিন ক্রমাগত বরফ পড়ে পুরো নিউ ইয়র্ক স্টেট অকেজো হয়ে যায়। দুদিন স্ট্র্যান্ডেড থেকে, কোন সাহায্য না পেয়ে, সেখান থেকে হেঁটে বেরোতে গিয়ে দুজনেই ঠান্ডায় হাইপোথার্মিয়া হয়ে মারা যায়। তিনদিন পরে গাড়ি থেকে প্রায় মাইল খানে দূরে জঙ্গলের মধ্যে দুজনের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের এই এলাকায় আজ অব্দি আর কোন ট্র্যাভেলার স্ট্র্যান্ডেড হয়নি। কখনও সুজান, কখনও ফ্র্যাঙ্ক, কখনও দুজনেই এসে কোন-না-কোনভাবে ট্র্যাভেলারদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। আজ তোমরা যেদিকে চলে গেছিলে সেটা হাইওয়ে থেকে অনেক পূবে। পথ না জানলে ওখান থেকে তোমাদের পক্ষে হাইওয়েতে ফেরা অসম্ভব ছিল।"

    নীরবতা। অন্য পুলিশটা মুখ খুলল, "ভোরবেলা রেডিওতে খবর এল একটা লাল গাড়ি ওই রাস্তায় স্ট্র্যান্ডেড হয়ে গেছে। নইলে আমাদের ওইদিকে যাবার কোন প্রয়োজন ছিল না।"

    - কে খবর দিল?

    পুলিশ দুজন কোন কথা না বলে টুপিটা অল্প তুলে দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৭০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 232312.174.567812.193 (*) | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৩49824
  • গল্পটা ভালো, তবে এক্কেবারে স্ট্রেটকাট ভুতের গল্প। মানে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ার সাথে সাথেই বুঝে গেছি রাস্তায় ভুত দেখা যাবে। লাস্টের দিকে একটা টুইস্ট আনলে হতো।
  • রিভু | 780112.0.892323.218 (*) | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:১৯49825
  • গল্পটা প্রেডিক্টেবল, কিন্তু সেটা মাঝপথে বুঝেও পুরোটা পড়ে ফেললাম। এত্ত মিষ্টি ভাষা। জাস্ট চুমু। রম্যরচনার বই বেরোচ্ছে কি?
  • . | 348912.82.3490012.237 (*) | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৬49826
  • ঐ রাস্তায় ২০১৫ তেও গাড়ী চালিয়ে একদিনে জার্সি থেকে বাফেলো হয়ে নায়েগ্রা গেছি। এখনো খুব সুন্দর।
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:২৩49827
  • হ্যাঁ, রাস্তাটা খুবই সুন্দর।
    ন্যাড়া-র লেখা আরও সুন্দর :-) । রম্য রচনা-র বই অতি অবিশ্যি বেরোনো উচিত
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:২৭49828
  • আমরা জানি ন্যাড়া ভূতের গপ্পো লেখে, তাই ডিসি শুরুতেই বুঝতে পারছে।

    'সবই ভাল, কিন্তু এদের সারাবাড়িতেই একটা পুরনো ধুলোর গন্ধ। ' - নতুন পাঠক এই লাইন-টার আগে গেস করতে পারবে না, যে এটা ভুতের গপ্প
  • dc | 232312.174.4589.125 (*) | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৬49829
  • অরণ্যদা, তা নয় ঃ)

    "নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে যখন নেবেছি তখন বেলা প্রায় দেড়টা। নাবার কথা ছিল সকাল নটায়"

    যেকোন গল্পে এই লাইনটা পড়ে যে কেউ আন্দাজ করবে হয় রাতের দিকে অ্যাডভেঞ্চার (মানে চেন স ম্যাসাকার টাইপের কিছু) নাতো ভুতের গল্প।
  • Biplob Rahman | 340112.231.236712.110 (*) | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫49830
  • মাঝারি মানের হইছে!
  • শঙ্খ | 2345.110.015612.174 (*) | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৫49831
  • বাহ দারুণ!!
  • | 453412.159.896712.72 (*) | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:৪৯49832
  • এটা বেশ। শুধু বরফ কাটা লোকেদের আসার কথা ছিল, আগের দিনও বরফের জন্য এগোন যায় নি, কিন্তু পুলিশের গাড়ি এলো এবং তার পিছনে বেমালুম গাড়ি চালিয়ে চলেও গেলেন -- এইটা একটু আলগামত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন