এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • তিব্বতে তথাগত (পর্ব - ১৪)

    সৈকত ভট্টাচার্য লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ১০ জুন ২০২০ | ১৬৬৪ বার পঠিত
  • “এতো একেবারে গুপ্তধন লাভ!”
    “একেবারেই সেরকম। একটা ধাঁধাঁ থাকলে আরো জমে যেত। আর এই গুপ্তধনকে তো অর্থমূল্য দিয়ে বিচার করা যায় না। হাজার বছরের প্রাচীন পুঁথি, কিছু ঘটনার রোজনামচা, বৌদ্ধদের ধর্মীয় বই - কত যে সম্পদ উদ্ধার হল, তা বলে বোঝানর নয়। আমার সবচেয়ে রোমাঞ্চ হয় কী ভাবলে জানিস? - একটা হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি তো শুধুমাত্র একটা কাগজের টুকরো নয় - সাদা কাগজের প্রাণ জাগে যখন তাতে কলমের আঁচড় পড়ে। আর সেই আঁচড় যারা কেটেছেন তারা আজ থেকে হাজার দেড় হাজার বছর আগে এই পৃথিবীতে জীবনযাপন করতেন। গাছের ডাল কেটে বানান কলম আর হাতে বানান কালি দিয়ে হয়ত একজন মানুষ প্রদীপের আলোয় বসে লিখেছেন সে কাহিনী - বাইরে তখন তুষারঝড়। সেই হাতে লেখা কাগজ হাজার বছর পরে একজন যখন স্পর্শ করে - আসলে সে সেই মানবজাতির খন্ড ইতিহাসকে হাত দিয়ে ধরে।”
    “সত্যি কী অদ্ভুত না?” মঞ্জুশ্রী বলল, “আমিও যখন অজন্তার গুহাচিত্রের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম - আমারও ঠিক এমনি মনে হয়েছিল। শুধু তোমার মত এমন গুছিয়ে ভাবতে পারিনা - এলোমেলো হয়ে যায়।”
    “ইতিহাস ব্যাপারটাই খুব রোম্যান্টিক। কখনো কেউ যদি টাইম মেশিনে চড়ে ভবিষ্যতের পথে হেঁটেও আসে - সে ভ্রমণ হবে থ্রিলিং। কিন্তু অতীতকে জানার মধ্যে একটা মায়াময়তা আছে। সেই জন্যই অবন ঠাকুর থেকে শরদিন্দু বারবার ঘুরে ফিরে পড়েও পুরনো হয়না। যাক সে কথা, যে কথায় এই এত শিবের গাজন গাইলাম - এই লাইব্রেরী কেভের মধ্যে একাদশ শতকে বন্দী হয়ে থাকা ইতিহাসের পরবর্তী যুগের ইতিহাসকে দ্বিতীয় পর্ব বলা যেতে পারে। এইসময় স্বাভাবিক ভাবেই তিব্বতে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে - অতীশ দীপঙ্করের যুগ শেষ হয়েছে - তিব্বতের শাসন আস্তে আস্তে চলে গেছে দলাই লামার হাতে - সেখান থেকে একেবারে সাম্প্রতিক কালের চীন-তিব্বত রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাস। আমরা এই দ্বিতীয় পর্বটি নিয়ে উৎসাহী নই। ‘টেস্টামেন্ট অফ বা’-এর অনেকগুলি সংস্করণ পাওয়া গেছে। আসল লেখাটি কোথায় বা তার কী হয়েছে কেউ জানে না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ এই ‘টেস্টামেন্ট অফ বা’ এর নানা সংস্করণ প্রকাশ করেন। সবেতেই একই গল্প ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লেখা হয়েছে। স্যাম যে কাগজের টুকরোদুটি অরেল স্টেইন সংগ্রহের মধ্যে খুঁজে পান - সে দুটিকে জোড়া লাগিয়ে তার কাহিনী বিচার করে বোঝা যাচ্ছে যে তার সাথে ‘টেস্টামেন্ট অফ বা’ এর লভ্য সংস্করণগুলির কাহিনীর মিল আছে। কিন্তু লভ্য সংস্করণগুলি সবই একবিংশ শতকের পরবর্তী সময়ের। এখন যেহেতু এটির প্রাপ্তিস্থল ডুনহুয়াং গুহা - সুতরাং এটি নবম-দশম শতাব্দীর হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তার পরে গুহা সিল করে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে হয় এটি ‘টেস্টামেন্ট অফ বা’এর প্রাচীনতম সংস্করণের অংশ, অথবা…” বলে একটা নাটকীয় পজ নিল জয়দা। ওর না শেষ করা কথাটি ধরে গল্পে বুঁদ হয়ে থাকা মঞ্জুশ্রী বলে উঠল, “বা সালনাং-এর নিজের লেখা সেই ওরিজিনাল পাণ্ডুলিপির অংশ! বাপরে! এ তো একেবারে গুপ্তধন!”
    “তবে আর বলছি কি! স্যাম নিজে ইমেল করে আমায় এই গল্পটা বলেছিলেন।”
    “কিন্তু ওই টুকরো দুটিতে লেখা কী আছে?” আমি জিজ্ঞেস করি।
    “সেই মহান বৌদ্ধ পণ্ডিত শান্তরক্ষিতের তিব্বত যাওয়ার কথা। শান্তরক্ষিতের সম্পর্কে যেটুকু জানা গেছে মূলতঃ বিভিন্ন তিব্বতি গ্রন্থ থেকেই। এদেশে তার সম্পর্কে কিছুই প্রায় পাওয়া যায় না। এমনকি ওর লেখা বইগুলির অবধি মূল পাণ্ডুলিপি উধাও। হয়ত ছিল - কিন্তু পরবর্তীকালে বখতিয়ার এসে যখন নালন্দা, বিক্রমশীল প্রভৃতি মহাবিহারকে ভস্মীভূত করে দিয়ে যায় - তখন সেইসব বইপত্রও পুড়ে ছাই হয়ে গেছিল। শোনা যায় নালন্দার গ্রন্থাগারে এত বই ছিল যে কয়েকমাস লেগেছিল সেসব পুড়ে খাক হয়ে যেতে। কিন্তু থ্যাংকস টু তোনমি সম্ভোট। লিপি আবিষ্কার করার পরে বহু ভারতীয় বৌদ্ধ এবং দার্শনিক বই সংস্কৃত থেকে তিব্বতি ভাষায় অনুবাদের কাজ চলেছে নিয়মিত। তিব্বতে তাঞ্জুর আর কাঞ্জুর নামে দুই ধরণের অনুবাদ গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুইয়ে মিলে প্রায় চারহাজারের উপর বই। তাই ভারতবর্ষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বৌদ্ধ-দর্শনের বইয়ের এক বিশাল অংশ তিব্বতি থেকে পুনরায় ভাষান্তর করে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। আচার্য শান্তরক্ষিতের লেখা ‘মাধ্যমক আলংকারকারিকা’, ‘তত্ত্বসংগ্রহ’ - এই সমস্ত বই তিব্বত থেকেই পুনরুদ্ধার করেন ঊনবিংশ, বিংশ শতকের ভারতীয় এবং ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা।”
    আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, “এই শান্তরক্ষিত ভদ্রলোক বাঙালি ছিলেন?”
    “তিব্বতিরা তো তাই বলে। তিব্বতি ঐতিহাসিকরা লিখে গেছেন যে বাংলাদেশেই কোথাও ‘জাহর’ বা ‘সাহর' নামে কোন এক জায়গায় ওর জন্ম। সাতশো পঁচিশ সালে। তাকে রাজপুত্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সঠিকভাবে কোন রাজার সন্তান সে কথা কেউ লিখে যাননি। পরবর্তীকালে অতীশ দীপঙ্কর যখন তিব্বত যান - তখন অতীশের শিষ্য নাগছো ছুলঠিম জলবা বা জয়শীল তার সাথে তিব্বত গেছিলেন। জয়শীলের থেকেই অতীশের পূর্ব জীবনের কথা জানা যায়। অতীশ অধুনা বাংলাদেশের বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর এক রাজবংশের সন্তান ছিলেন। বাংলায় শশাঙ্কদেবের মৃত্যুর পর থেকে পালেরা আসার পূর্বে যখন রীতিমত মাৎস্যন্যায় চলছে - অর্থাৎ কেউই বেশীদিন রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছে না, তখন এই বজ্রযোগিনী বাংলার রাজধানী হিসাবেও কিছুদিন স্বীকৃতি পায়। ওখানেই কোথাও ‘সাহর'এর অবস্থান। কারণ অতীশের জীবনিকারেরা প্রায় সকলেই লিখে গেছেন যে অতীশের পিতা ছিলেন ‘সাহরের' অধিপতি। তাহলে যদি সেটা সত্যি হয় - শান্তরক্ষিত এবং অতীশ দুজনেই বাংলার একই অঞ্চলের মানুষ - এমনকি একই বংশের মানুষ হওয়াও বিচিত্র নয়।”
    “তা এই ‘সাহর’ জায়গাটা কোথায়? মানে এখনকার ম্যাপ অনুযায়ী?” মঞ্জুশ্রী জিজ্ঞেস করল।
    “দ্যাখ, বিক্রমপুর ঢাকার কাছে একটি জায়গা। সেখানে বজ্রযোগিনী গ্রামে ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’র কথা অনেকেই লিখে গেছেন। সেটিই নাকি অতীশের বাড়ি ছিল। সেই হিসাবে দেখতে গেলে হয়ত ‘সাহরের' অবস্থান ওখানেই। কিন্তু ঐতিহাসিকদের বিস্তর দ্বিমত আছে এই নিয়ে। এমনকি একদল পণ্ডিত বলেছেন যে ‘সাহর’ নাকি এই বাংলারই জায়গা নয় - উত্তর পশ্চিম ভারতের যায়গা। কিন্তু শান্তরক্ষিতের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা না গেলেও অতীশের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়। শরৎচন্দ্র দাস লিখেছেন যে জয়শীল নাকি যখন ষাটোর্ধ অতীশকে নিয়ে তিব্বত যাচ্ছেন - তখন অতীশের মুখে ‘ভাল। অতি ভাল। অতি মঙ্গল। অতি ভাল হয়।’ - এমন বাংলা কথা বারবার শোনা গেছে। সুতরাং অতীশকে উত্তর-পশ্চিম ভারত বা অধুনা পাকিস্তানের মানুষ বলে মেনে নিতে আপত্তি আছে। তা ছাড়াও জয়শীল, সুমপা প্রভৃতি তিব্বতিরা পরিষ্কারভাবে লিখে গেছেন যে বিক্রমপুরের কোথাও জন্ম অতীশের। ঐতিহাসিক সুমপা ‘বিক্রমপুরের’ বদলে ‘বিক্রমণিপুর’ নাম ব্যবহার করেছেন। এবার কিছু ঐতিহাসিক যে ‘সাহোরের’ নাম লিখেছেন সেই ‘সাহোর’ আর ‘বিক্রমপুর’ একই জায়গা কি না তার পক্ষে বিপক্ষে নানা মত আছে।”
    “আচ্ছা, এই ‘সাহোর’ নামটা ‘শহর’ বা ‘নগর’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়নি তো?” মঞ্জুশ্রী একটু ভেবে বলল।
    “হতেই পারে। অন্ততঃ চোমা দ্য কোরো এবং শরৎচন্দ্র দাস তো তোর মতকেই সমর্থন করছেন। আসলে ‘শহর’ শব্দটি পার্সি শব্দ। সপ্তম শতাব্দীর গোড়া থেকে আমাদের বাংলাতে, যাকে তিব্বতিরা ‘ভংগল’ বা ‘ভগল’ বলে উল্লেখ করেছে, বিভিন্ন পার্সি শব্দ মিশ খেতে থাকে।” জয়দার কথার মাঝেই মঞ্জুশ্রী বলে উঠল, “আর সপ্তম শতাব্দীতে বাংলা ভাষার উৎস সিদ্ধমাতৃকা স্ক্রিপ্ট থেকে লিপি নির্মাণের জন্য তোনমি সম্ভোট এ দেশে এসেছেন।”
    “এক্সেলেন্ট! ভারতীয় এবং তিব্বতি শব্দের উচ্চরণের পার্থক্য অনুযায়ী তোনমি কয়েকটি নতুন বর্ণ যোগ করেন। তার মধ্যে Za অক্ষরটি অন্যতম। তাহলে যদি পুরো ব্যাপারটা এভাবে ভাবি যে পার্সিদের কাছ থেকে ‘শহর’ শব্দটি এখানকার মানুষের কথ্য ভাষায় প্রবেশ করল - তোনমির সাথে আরও অনেক ভারতীয় শব্দের সাথে সেটি তিব্বতে গেল - তিব্বতি উচ্চারণে ‘শহর’ হল ‘জাহর’। মানে পরিবর্তিত হল কি না, সেটা জানি না। তবে বুতোন, গে লোচবা, সুমপা প্রভৃতি তিব্বতি ঐতিহাসিকরা বলে গেছেন যে বাংলার জাহরের একই রাজবংশে জন্ম শান্তরক্ষিত এবং অতীশের - মধ্যে শুধু আড়াইশো বছরের পার্থক্য। আবার এদের সকলের থেকে প্রায় একশো আশি ডিগ্রী ঘুরে রাহুল সাংকৃত্যায়ন বলেছেন যে ‘সাহর’ নাকি ভাগলপুর অঞ্চলের প্রাচীন নাম। ওর মতে তিব্বতি ‘ভগল’ থেকে ‘ভাগলপুর’ নামের জন্ম। মজার ব্যাপার হল, এই অঞ্চলেও এক ‘বিক্রমপুর'এর সন্ধান পাওয়া যায় - যার থেকে ‘বিক্রমশীল’ মহাবিহারের নাম হয় বলে মনে করা হয়। তাই রাহুল সাংকৃত্যায়ন ঢাকার বিক্রমপুরের বদলে ভাগলপুরের কাছে এই বিক্রমপুরে এক সামন্তরাজার পরিবারে শান্তরক্ষিত এবং অতীশের জন্ম হয় বলে মনে করেছেন। যাই হোক, মোদ্দা কথা হল বাংলার ছেলে শান্তরক্ষিত তিব্বত করিল জয়। কিন্তু কী করে?”
    “কী করে?” আমরা সমস্বরে জিজ্ঞেস করি।
    “সেই কথা বলার জন্যই এত গৌরচন্দ্রিকা। রাজপুত্র শান্তরক্ষিত রাজপ্রাসাদ ছেড়ে নালন্দায় আসেন শিক্ষাগ্রহণের জন্য। তখন নালন্দার বিশ্বব্যাপী খ্যাতি। মাত্র ষাট-সত্তর বছর আগে হিউ-এন সাং সেখানে অধ্যয়ন করে গেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার ছাত্রের আনাগোনা। শান্তরক্ষিতও নালন্দায় গেলেন অধ্যয়নের জন্য।”
    “অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে হত না?” শুভ এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে চোখ পিট পিট করছিল। ঘুমচ্ছিল না শুনছিল জানিনা। এখন হঠাৎ প্রশ্ন করে বসায় বুঝলাম জেগেই আছে।
    “হত না আবার! সে কঠিন পরীক্ষা হত। ইন্টারভিউ পাস করলে তবেই ভর্তি। শান্তরক্ষিত সেই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তবেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাধিকার অর্জন করেন। সেখানে আচার্য জ্ঞানভদ্রের কাছে ত্রিপিটকের আদ্যোপান্ত পাঠ শেষ করার পর প্রব্রজ্যা এবং উপসম্পদা গ্রহণ করে তিনি ‘শান্তরক্ষিত’ নাম নেন। এরপর আচার্য বিনয় সেনের কাছে বিভিন্ন মহাযানিক পাঠ অধ্যয়ন করেন। মহাযান পন্থার অন্যতম প্রবর্তক তথা বিখ্যাত দার্শনিক নাগার্জ্জুনের প্রচারিত দর্শন মাধ্যমিক-সিদ্ধান্ত আয়ত্ত্বে আনেন। পরে এই বিষয়ে ‘মাধ্যমিককালঙ্কার’ এবং ‘মাধ্যমিককালঙ্কারবৃত্তি’ নামে দুটি বইও রচনা করেন। সেসব জটিল তাত্ত্বিক বিষয়ের মধ্যে গিয়ে লাভ নেই আমাদের।”
    “হ্যাঁ। নামই উচ্চারণ করতে পারব না। বিষয়ের কথা ছেড়েই দাও।” আমি বললাম।
    “শান্তরক্ষিত অধ্যয়ন শেষ করার পর নালন্দার উপাধ্যায় হিসাবে নিযুক্ত হন। অনেকে আবার বলেছেন যে নালন্দার উপাধ্যায় নয় - শান্তরক্ষিত বিক্রমশীল মহাবিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন। কিন্তু কালের হিসাবে সেটা ঠিক সঠিক মনে হয়না। বিক্রমশীল মহাবিহার তৈরী হয় রাজা ধর্মপালের সময়। অর্থাৎ সাতশো সত্তর সালের পরে। কিন্তু তদ্দিনে শান্তরক্ষিত তিব্বত চলে গেছেন। সুতরাং তার পক্ষে বিক্রমশীলের অধ্যক্ষ হওয়াটা একটু বাড়াবাড়ি। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে তিনি নালন্দাতেই পড়াচ্ছিলেন। সেই সময় তিব্বতরাজের দরবার থেকে তার ডাক পড়ল।”
    “বা সালনাং নালন্দায় এসেছিলেন?” মঞ্জুশ্রী জিজ্ঞেস করল।
    “হ্যাঁ। ঠিস্রোং দেচেনের কথা মত বা সালনাং এক সকালে এসে উপস্থিত হলেন বজ্রাসনে।”
    “বজ্রাসন আবার কোথায়?”
    “যাকে আমরা এখন বুদ্ধগয়া নামে জানি। তখন নাম ছিল ‘বজ্রাসন’। সেখানে মহাবোধির বেদিমূলে সম্রাটের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে নালন্দায় আসেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে খবর পেলেন যে আচার্য শান্তরক্ষিত তখন বিশেষ কাজে রয়েছেন নেপালে। মোবাইল ফোন, ইমেল থাকলে নাহয় আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে আসা যেত। কিন্তু নেই যখন অগত্যা বা সালনাং চললেন নেপালে। আচার্যকে রাজি করানোর জন্য সম্রাট প্রচুর সোনা উপহার হিসাবে পাঠিয়েছিলেন বলে জানা যায়। গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী অত সোনা নিয়ে কী করবেন সেটা অবিশ্যি একটা প্রশ্ন - হয়ত মহাবিহারের ফান্ডে জমা করে দিতেন। পরে অতীশকেও যখন আমন্ত্রণ জানাতে তিব্বতের রাজদূত এসেছিলেন, অতীশের জন্যও অমন প্রচুর সোনা নিয়ে এসেছিলেন বলে পড়েছি। সে যাই হোক, বা সালনাং-এর সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর আচার্য শান্তরক্ষিত স্থির করলেন যে তিনি তিব্বতে যাবেন। বা সালনাং-এর সাথে পা বাড়ালেন হিমালয়ের পথে। নেপাল থেকে পায়ে হেঁটে চললেন লাসা। কিন্তু দীর্ঘ পথশ্রমের পর লাসায় পৌঁছে রাজার আদেশ পৌঁছল তার কাছে। প্রাসাদে নয় - আচার্যকে গৃহ বন্দী থাকতে হবে ‘হেনখাং’ বা ‘জোখাং’ মন্দিরে।”
    “কোয়ারেন্টাইন? কেন? করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল নাকি?”

    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১০ জুন ২০২০ | ১৬৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.254.194.14 | ১০ জুন ২০২০ ০৩:২৪94183
  • বাঃ!
    একটা কথা, বৈএর জন্য সংস্করন যখন করবেন, তখন ত্রিপিটকের সৃষ্টির গপ্পোটিও বলে দেন তবে ভালো হবে। আপনি বৌদ্ধ মহাসম্মেলন গুলোর এবং হীন-মহা ইত্যাদি যানের কথা বলেছিলেন খুব গুছিয়ে একটি পর্বে। তেমনি ভাবে কোথাও যদি উৎস বইটির জন্মকথা জানলে বৈচিত্রের পরম্পরাটি বোঝার সুবিধাই হবে। ওটিও তো কোনও এক সম্মেলনেই তৈরী, বুদ্ধের সময়ের তো নয়!
  • সৈকত ভট্টাচার্য | 115.187.62.84 | ১০ জুন ২০২০ ০৮:০১94186
  • বেশ। বিষয়টি মাথায় থাকল। :)  

  • বিপ্লব রহমান | ১০ জুন ২০২০ ০৯:২৯94187
  • বুদ্ধ ধর্মে পণ্ডিত অতীশ দীপংকর ও শান্তরক্ষিতের অবদান আরো জানার আগ্রহ রইল।  ত্রিপিটকের ইতিহাসও জানতে চাই। 

    এই পর্বটি খুব ছোট হলো কী? তারপর?        

    এপারে বিক্রমপুরে অতীশের জন্মস্থানে জাদুঘর আছে, আর বেশ কয়েক বছর আগে সরকারি উদ্যোগে তার দেহভস্ম তিব্বত থেকে এনে ঢাকার কমলাপুরের  ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে রাখা হয়েছে, আগেও বলেছিলাম।                

  • b | 14.139.196.11 | ১০ জুন ২০২০ ১০:০৫94192
  • "অন্ততঃ চোমা দ্য কোরো ....."
    এলেন তো ঃ) ! (সূত্রঃ পর্ব ১৩)
  • Debanjan | 115.96.196.153 | ১১ জুন ২০২০ ২০:১৩94223
  • Khub bhalo likhchen aapni Saikat. ekta proshno royeche. Uponahadesher Uttar poschim angsho (bortomane Pakistan) ebong purbo angsho (bortomane Bangladesh) eei duti jaigai Muloto Muslim sonkhyagoristho. Ebong aitihasik bhabe eei sthanguli asole eksamaye Bouddhyo songodkritir utkorshota dekhechilo. Itihaser eei duti ghotonar modhye kono somporko aache ki naki sudhuy kaktaliyo? aapni ekjon expert aapni eei byapar ta ektu vishleshan kore bolben aapnar lekhay? 

  • সৈকত ভট্টাচার্য | 115.187.62.84 | ১২ জুন ২০২০ ১৮:০৬94243
  • প্রথম কথা আমি পন্ডিত নই একেবারেই। তিব্বতের বিষয়ে বিস্তর বইপত্র পড়ে এই লেখা। 

    বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে ইসলামের প্রসার অনেক পরে হয়েছে। বৌদ্ধধর্ম ধীরে ধীরে মূল পথ থেকে সরে গিয়ে তন্ত্রর দিয়ে সরে গিয়ে নিজের বিনাশ ডেকে আনে - এই ভারতবর্ষে। তারপর ক্রমশঃ ইসলাম শাসকদের চাপে ধর্ম পরিবর্তন হয়। তবে সেসব অনেক পরের ইতিহাস। আমার এই লেখার মধ্যে হয়ত আসবেনা। 

  • বিপ্লব রহমান | ১৩ জুন ২০২০ ০৮:০৪94254
  • সৈকত দা, 

    মূল লেখায় বিষয়ে থাকায়ই ভাল। বেশী ছড়িয়ে ফেলা ঠিক হবে না।

    তবে বই প্রকাশ করলে পাদটীকা বা পরিশেষে কিছু নোক্তা যোগ করে দিতে পারেন, ইতিহাস পরম্পরা সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে।

    চূড়ান্ত বিচারে  সবই লেখকের অভিরুচি। এই আমার মত।  

    লেখা এগিয়ে চলুক।                         

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন