এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা... বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার দিন

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২১ আগস্ট ২০১৯ | ১৯৮৬ বার পঠিত
  • বিএনপি এখন অস্তিত্ব সংকটে আছে। কিন্তু কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। ক্ষমতার তাপে মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল দলটার। ফলাফল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা। বিরোধীদলের নেত্রীকে হত্যার চেষ্টা করলেই সরকারের ঘাড়ে দোষ যাবে ব্যাপারটা এমন না। বিএনপি সরকার এই দায় নিজে ঘাড়ে নিজেরাই টেনে নিয়েছিল। প্রাথমিক নিন্দা জানানোর পরেই বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এত বড় একটা ঘটনাকে হাস্যকর করে ফেলেছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর সম্ভবত তখনই দিয়েছিলেন তার যুগান্তকারী ডায়লগ – “উই আর লুকিং ফোর শত্রুজ!” নিজেরা সরাসরি যুক্ত থেকে শত্রুজ আর খোঁজা হয়নি তার। সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া মানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শেখ হাসিনা নিজেই ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন! আওয়ামীলীগ থেকে আন্তর্জাতিক তদন্ত চাইলে বলা হয়েছে তদন্ত করা হবে, তদন্ত করে আওয়ামীলীগের নেতাদের ধরা হবে! সরকারি দল থেকে যখন এমন লাগাম ছাড়া প্রলাপ বকা হয় তখন তদন্ত কোন রাস্তায় চলছে।

    প্রলাপ বকা যখন হতে থাকে তখন তা অনুসরণ করে কাজও করতে থাকে পুলিশ। দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থাকে এই তদন্তে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সিআইডি সরকারের মনের মত করে তদন্ত করে গেছে পুরো সময়। সবাই বিচারবিভাগীয় তদন্ত চায়, সেই সময় তেমন একটা বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ফলাফল অশ্বডিম্ব। বিএনপি তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বলে যেতে থাকে নানা উদ্ভট কাল্পনিক গল্প। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এই আক্রমণ করেছে, এমন কী সাতক্ষীরা দিয়ে ঢুকে ঢাকায় এই আক্রমণ করেছে বলেও জানায়। বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদনে হুবহু একই রকমের গল্প প্রকাশ পায়।

    ভারতের সংশ্লিষ্টতা দাবী করার পড়ে দাবী করা হয় সুব্রত বাইন এই আক্রমণের মূল হোতা ছিলেন। সুব্রত বাইন ভারত থেকে গ্রেনেড এনে শেখ হাসিনাকে মেরেছে। এরপরে পরেই হাজির হয় জজ মিয়া। নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে গেরেফতার করা হয় জজ মিয়াকে। জজ মিয়া বায়তুল মোকাররমের পাশে বসে জীবনে গ্রেনেড দেখে নাই সেইদিন দেখছে আর কীভাবে মারা হয় তা শিখেছে এমন জবানবন্দিও দিয়েছিল বা নেওয়া হয়েছিল তখন। রাজসাক্ষী বানানোর পরিকল্পনাও করা হয় তখন। পরবর্তীতে প্রথম আলো খুঁজে বের করে যে জবানবন্দী দেওয়ার জন্য জজ মিয়ার পরিবারকে মাসে মাসে টাকাও দিয়া হয়েছে তখন।

    সেই সময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই কিনা কে জানে। এই পরিকল্পনার মূল হোতা হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নানকে গেরেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ওই গেরেফতার পর্যন্তই। মুফতি হান্নান যাদের কথা বলেছিল তার জবানবন্দীতে তাদের কাওকে পুলিশ ধরেনি। মুফতি হান্নানের সঙ্গী যারা ছিল তাদেরও ধরা বা ধরার চেষ্টা করা হয় নাই। মুফতি হান্নান নিজে এই হামলায় তার নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেও তাকে আসামি করা হয়নি। চার দলীয় জোটের শেষের দিকে আস্তে আস্তে প্রকাশ পেতে থাকে নানা অনিয়ম আর হঠকারী সিদ্ধান্তের কথা। হামলায় সরাসরি অংশ গ্রহণ করা অনেকেই তখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দুইজনের কথা জানায় যায়, যমজ ভাই, মুরসালিন আর মুত্তাকিন এখন দিল্লির জেলে আছে, অস্ত্র আর বোমা বহনে জন্য ধরা হয়েছে তাকে। ফরিদপুরে বাড়ি তাদের। আরেকজন দিল্লিতে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ২০০৫ সালে। এই ব্যক্তিও সরাসরি জড়িত ছিল ২১ আগস্ট বোমা হামলায়।

    পরবর্তীতে দেখা গেল না, গ্রেনেড ভারত থেকে আসেনি, এসেছিল পাকিস্তান থেকে। আর এতে সরাসরি অংশ নেয় আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া যোদ্ধারা। বাংলাদেশে এক সময় আফগান যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা কে সামাজিক ভাবে পুরস্কৃত করা হত। পুরো দেশ জুড়ে আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান ধরনের স্লোগান দেওয়া হত। আফগান যুদ্ধ ফেরত এরাই গঠন করে হরকাতুল জিহাদ। সরকারের নাকের ডগায় বসে এই কাজ করে গেলেও কেউ তখন পাত্তা দেয়নি। উল্টো তাদেরকে সাথে নিয়ে পরিকল্পনা করা হয় শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দেওয়ার। যতখানি সহনশীল হওয়া সম্ভব তা হয়েই, বিএনপিকে মেনে নিয়েই রাজনীতি করে আসছিল আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা। ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সকলকে আইন করে বাঁচিয়ে দিয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। খুনিদের সুযোগ করে দিয়েছিল নানা দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। এত সত্ত্বেও শেখ হাসিনা নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সাথে থেকে আন্দোলন করে ছিল। কিন্তু ২১ আগস্ট সমস্ত হিসেব নিকেশ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে এখন যখন আওয়ামীলীগ বিএনপি নামক দলকে প্রায় নিঃশেষ করে দিয়েছে, এবং এই জন্য তারা যে সব সময় সঠিক পথে ছিল তাও বলা যায় না তখন আমার মনে হয় আজকের এই দিনে আওয়ামীলীগ কে ঠেলে দিয়েছে বিএনপি নিজেই। শেখ হাসিনা এখন যা করছে তা হচ্ছে বাটার ফ্লাই থিউরি অনুযায়ী। পুকুরে একটা ঢিল ছুড়লে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় তেমন। ঢিল ছুড়ে বিএনপি তার কাজ করে ফেলেছে। এখন তার ফলে সৃষ্ট ঢেউ বয়ে চলছে। যত বড় ঢিল তত ঢেউ। সমস্যা হচ্ছে বিএনপি ঢিল না ছুড়ে বোম ছুড়ে মেরেছে। কাজেই এই ঢেউ কবে কিভাবে থামবে তা বলা অনিশ্চিত। আজকের প্রথম আলোয় মতিউর রহমান তার কলামে দারুণ একটা তথ্য দিয়েছেন। এই হামলার পরেই মানে ২৫ আগস্ট তিনি খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে মতিউর রহমান বলেন যে আপনারা আওয়ামীলীগকে কিছুই করতে দিচ্ছেন না, মামলা নিচ্ছেন না, লাশ নিতে দিচ্ছেন না, তারা কী শোকও প্রকাশ করতে পারবে না? উত্তরে খালেদা জিয়া তাকে বলেছিল আওয়ামীলীগকে কিছুই করতে দেওয়া হবে না, প্রয়োজনে শায়েস্তা করা হবে এবং কোন ভাবেই ৯৬ সালের মত পরিস্থিতি তৈরি করতে দেওয়া হবে না। ২৪ জন নিহত, আইভি রহমান সহ ২২ জন আওয়ামীলীগের কর্মী, আর তাদের কিছুই করতে দেওয়া হবে না? ঢেউ কত বড় তৈরি করেছিল তারা আশা করছি এখন তা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করছে তারা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২১ আগস্ট ২০১৯ | ১৯৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • alokprapto | 236712.158.566712.141 (*) | ২২ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৫১49304
  • বলছি যে যারা গ্রেনেড ছুঁড়েছিলো তাদের ভয়েস টা কি এসে গেছে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন