আমাদের কোন সর্বনাম হয় না। / সমাজ, সংসার, বিশ্ব চাপিয়ে দেয় / কিছু অচেনা বিশেষ্য, পঙ্কিল বিশেষণ / আর অবাঞ্ছিত কিছু সর্বনাম, / দয়ার দান রিক্ত ভিক্ষাপাত্রে।
গণেশ পাত্র বিড়ি বাঁধা বন্ধ করে দোকানে ঝাঁপ ফেলার তোড়জোড় করছিল। সাগর কোনরকমে নিজেকে এনে ফেলল সেখানে। গণেশ চমকে উঠলেও অভ্যস্ত চোখে নিমেষে বুঝে ফেলল সবকিছু। কোন সময় নষ্ট করল না। ডাকাডাকি করে পনেরটা ছেলে জড়ো করে ফেলল তিন মিনিটের মধ্যে। কানু, মাণিক আর শম্ভু যখন খবর পেল সাগর ততক্ষণে অপারেশন টেবিলে। চল্লিশটা ছেলে ... ...
১ লরিটা চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর অবধি ধূলোগুলো থাকলো। রোদ্দুর মাখল। তারপর আর থাকল না। সবাই কি মাটিতে ঝরে পড়ল? কিছু পড়ল ইন্দ্রনীলের কালো চশমার উপর। ইন্দ্রনীল মুছল না। ইন্দ্রনীল কোনদিন মুছবেও না। অরুপ যেখান থেকে বাইকের গতি বাড়াল ইন্দ্রনীল খুব কাছেই ছিল তার। কাদা ছিটকে পড়ল ইন্দ্রনীলের কালো চশমায়। আগের দিন বৃষ্টি পড়েছে। তিনদিন হয়ে গেল, ইন্দ্রনীল নড়েনি, পড়েই আছে ওখানে। অরুপ দেখতে ... ...
উল্লাস
জানলার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আছে। অঝোরধারায় বৃষ্টি চলছে গত রাত থেকে। সন্ধ্যার একটু পর থেকেই ঝিপঝিপিয়ে শুরু হয়েছিল। রাত বাড়তেই বৃষ্টিও বাড়তে থাকল, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। গরম ধোঁওয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসলাম রোজকার মতোই জানলার পাশের বেতের চেয়ারটায়। পৌষ মাসের শেষের দিক। ঠাণ্ডা ছিলই। বৃষ্টিতে আরোও জাঁকিয়ে বসেছে ঠাণ্ডা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকতে হয়েছে ঠাণ্ডায়। গরম চায়ে চুমুক দিতেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল যেন। ... ...
আমার ছোটবেলার সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে এই জানলার সামনে বসে। / একটা নিমগাছে ছেয়ে থাকতো টিয়াপাখিরা; / ওরা উড়ে গেলে গাছটায় যে বিশেষ পাতা নেই বোঝা যেত। / আর আমি অপেক্ষা করে থাকতাম টিয়াপাখি গুলোর আসা-যাওয়া দেখার।
দেখতে দেখতে পুজো এসে যায়। ষষ্ঠীর রাতে ধীরুকাকা এসে বলল বাড়ি খালি করে দিতে হবে। নতুন ভাড়াটে আসবে। মা অনেক কান্নাকাটি করল। মাঝরাতের দিকে একটা ঠেলা এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনে। বাড়ির পাশের কাশফুলের ঝোপ সেই প্রথম চাঁদের আলোয় দেখে সাবু। গেলবারের ঘোর বর্ষায় ধীরুকাকা পরপর ইট পেতেছিল বাঁধানো রাস্তা অব্ধি। ঝুরো ঝুরো নীলচে আলোয় সেগুলো মনে হয় কেউ আলপনা এঁকেছে বুঝি। ঠেলাওয়ালা বলে দুগগা বলে চলুন দিদি।ঠেলার উপর সংসার, তার উপরে সাবু। আকাশে আলগোছে চাঁদ। বাতাসে রাতজাগা শিউলির গন্ধ।সেইরাতে কোনওরকমে একটা বাড়ি জোগাড় হল। একচালা, আধভাঙ্গা। মাটির বাড়িতে আলো নেই। পুঁটুলি করা জামাকাপড় বাসনকোসনের উপরেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল সাবু। ঘুম ভাঙল ঢাকের শব্দে। নতুন ... ...
দু লাইন লেখা সহজ নয়তো, ত্রাস! / এই দু লাইনে কাটা পড়ে কত লাশ!
রাত্রি তখন ১২টা বাজে। / সবে ঘুমাবো চোখ বুজে। / হঠাৎ তুলে আমায় কান ধরে।
খুব সহজেই আমরা পক্ষ বিপক্ষ ঠিক করে ফেলি। তাই কথা বলা খুব মুশকিল। আর সহজেই দেগে দাও।অন্যদের লোক বলে। আমি ডিএ-র বিরুদ্ধে নই। বিশেষ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য এবং বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য খুব জরুরি।আমি তো প্রাথমিক শিক্ষক এবং ঝাড়ুদার ও কৃষকদের সর্বোচ্চ বেতনের পক্ষপাতী। নিজে নেবো, কিন্তু অন্যকে দেবো না--এই মনোভাবের আমি বিরোধী।ডিএ বিরোধী নই। আমার এক উজ্বল ছাত্র, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, সহমত। কিন্তু সেক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন পেলে তবেই এই ভাবনা সম্ভব। যা বেতন কাঠামো আর ব্যাঙ্কের সুদের হার, আমার মতো সাধারণ মধ্যবিত্তের বিশেষ করে পেনশনারদের তো সঞ্চয় ... ...
পাতা ৬২ : প্রতিদিন বিছানায় শরীরটা রাখলেই, অনিলবাবুকে গান শোনাতে মরিয়া হয়ে ওঠে সে। বার বার দেয় চুম্বন হাতে, গলায়, কপালে, এমনকি পায়েও। ছাড়ে না দেহের কোনো অংশ। দেহের যে অংশ উন্মুক্ত, সেখানেই চুম্বন। মাঝে মাঝে রক্ত বের করে দেয়। প্রতিরাতে খাওয়ার পর অনিলবাবুর নেশা একটু টিভি দেখার। টিভি দেখতে দেখতে যতই হাত দিয়ে তাকে সরাবার চেষ্টা করেন, ঠিক সময় সুযোগ বুঝে আবার বসায় তার ভালোবাসার দংশন। শান্তিদেবী এই এলেন বলে। বাইরের চোকরি’তে এঁটো বাসনপত্রের নামানোর আওয়াজ পেয়েছেন। নার্ভের ওষুধটা খেয়ে এবার ঘরে ঢুকবেন। শান্তিদেবীর আসার আগেই যা করার করতে হবে অনিলবাবুকে। ওনার কানে গানের গুনগুন আওয়াজ গেলেই তাকাবেন অনিলবাবুর ... ...
এবার বিশ্বকাপে আমি মেসির সমর্থক। জিতিয়েই ছাড়ব। ফাঁকা আওয়াজ ভাববেন না। এর আগে শচীনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস করে ফল পেয়েছি। শচীনকে আমি ছোটো থেকে চিনি। মানে টিভিতে দেখে আর কি। আমি, সৌরভ আর শচীন মোটামুটি একই ব্যাচ। ওরা ক্রিকেট খেলে আর আমি খেলিনা। তা, আমি যখন কলেজে পড়ি, তখন সৌরভও পড়ে। আমি চাকরি খুঁজছি, সৌরভও রঞ্জি খেলছে। সবই একসঙ্গে। কেবল শচীন ব্যতিক্রম। আমার জ্ঞান হবার আগে থেকেই সে ক্রিকেট খেলে চলেছে। কপিলদেবের সঙ্গে খেলেছে, আজহার-জাদেজার সঙ্গে খেলেছে, সৌরভ দ্রাবিড়ের সঙ্গে খেলেছে। সৌরভও অবসর নিয়ে নিল, তখনও খেলে চলেছে। বাংলা মিডিয়াম গাঁয়ের স্কুলে এরকম কিছু ছেলে থাকত, যারা বাবার সঙ্গেও পড়েছে, ছেলের সঙ্গেও। ... ...
১৯৭৪। দাদা তখন নবম শ্রেণি। হেঁটেই স্কুলে যায়, কারণ সাইকেল পুলিশ কেড়ে নিয়েছে। এস এফ আই করতো। তিনদিনের ছাত্র ধর্মঘট করতে গেছিল। সস্তায় খাতা আর কেরোসিনের দাবিতে। স্কুলে ধর্মঘট করার অপরাধে সাইকেল কেড়ে নিয়েছে। সেই সাইকেল পরে উদ্ধার হয়। ১৯৭৬-এ। বাবা বলতেন, থানায় যত সিগারেট খাওয়াতে হয়েছে, সাইকেলের দাম তার অর্ধেক।পুলিশকে নিয়ে নানা গল্প আছে। ওই সময় এক বড় দারোগা চাকরি করতে আসেন আমাদের থানায়। তিনি নাকি কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। তোতলামি থাকায় ছেলে মেয়েরা হাসাহাসি করত। চাকরি ছেড়ে দেন। দিয়ে পুলিশে ঢোকেন। দারোগা হন। তাঁকে নিয়ে প্রচুর মজার গল্প ছিল। একবার সিরাজ বলে এক লড়াকু সিপিএম নেতাকে জমির মাঝ ... ...
বাইরে এনকোয়্যারি কাউন্টারে একজন মাঝবয়সী ইন্সপেক্টর বসে আছেন । অশেষ কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ইন্সপেক্টর ভদ্রলোক অশেষকে আগের দিন দেখেছেন । আজ তার আসার ব্যাপারটা পুরোটাই জানেন ।তিনি ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন । তিনি' ঠিক আছে , ওই কথাই রইল ... ' বলে ফোন বন্ধ করে অশেষের ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন ,' ও ... এসে গেছেন .... দাঁড়ান ... ' বলে ইন্টারকমে ডায়াল করলেন ।ওদিক থেকে উত্তর পেয়ে অশেষকে বললেন ,' যান .... ভেতরে যান ... ' ।অশেষ ভিতরে ওসি-র ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। দরজার উল্টোদিকে বসা গৌতম রক্ষিতের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল অশেষের ।রক্ষিতবাবু বললেন , ' ... ...
প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপকরা অনুষ্ঠানটিকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে কোন ত্রুটি রাখেন নি। স্টেডিয়ামের চারদিকে গোল করে লাগান নানা রঙের পতাকা উড়ছে। স্টেডিয়ামের বাইরেও অ্যাথলেটিক্সের নানা কোলাজ সহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনী বোর্ড লাগান হয়েছে।
জাতপাত
আপনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন,স্কুল-কলেজ বাদে অফিস কাছারি, সিনেমাহল, প্রেক্ষাগৃহ সবই একে একে খুলে যাচ্ছে। সন্তানকে স্কুল-কলেজে পাঠানো নিয়ে সমাজ দ্বিধা বিভক্ত হয়েছে। যাঁদের সামর্থ্য আছে, যাঁরা কিঞ্চিৎ সুবিধাজনক অবস্থানে বিরাজ করেন, তাঁরা অনলাইন শিক্ষাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। যাঁদের সামর্থ্য নেই, নিষ্ফল আক্রোশে মাথা কুটে মরলেও শেষমেষ ধার করে হোক, জমি বিক্রি করে হোক, মোবাইলের বন্দোবস্ত করার পরেও, কেউ পাহাড়ের মাথায়, কেউ গাছের উপর চড়ে 'শিক্ষাব্যবস্থা' জারী রাখবার চেষ্টা করছেন। গত দু'দিন আগে বাঁকুড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবী জানানোর জন্য কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে নন-বেলেবল ধারায় আটক করা হয়েছে। মিজোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের অনলাইন সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে লুংলে ও মায়ানমার সীমান্তের সিয়াহায় ছাত্রছাত্রীদের খাতা পেন ... ...
চারিদিকে শুধু জল আর জল। দোতলা বাড়ি জলের তলায়। বাড়ি তেতলা হলে শুধু গলাটুকু বাইরে। দোতলা তেতলা এখানে আর কোথায়। যা দেখা যাচ্ছে তা অনেক দূরে দূরে। ও..ই দূর গঞ্জে। এ তো নিকষ্য গেরাম। কুঁড়েঘরে খড়ের ছাউনি। দু চারটে ইঁটের গাঁথনির কোঠা আছে। মাথায় টিনের বা টালির ছাউনি। সব ডুবে আছে। চারদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের বাঁধ ভেঙেছে। দুরন্ত বেগে উল্টে পাল্টে ... ...
যেসব অতন্দ্র মন্ত্রকূট পাহাড় ঢেকেছিল গোধূলিতে, / সেসব নিবিদ,নিবিড় আঁধার ভেদ করে এল ফুলটুলিতে। / কত মরুভূমি পার হয়ে পেখম মেলা নীল হাওয়ার স্রোত, / এসেছে লাল পাথরের গায়ে -জোছনা ভারি ওলটপালট।