বেশ কয়েকদিন ধরেই কানে আসছিলো যে মালদা মেডিক্যাল কলেজেও কিছু একটা চলছে। কানে আসছিলো বলার চেয়ে চোখে পড়ছিলো বলা ভালো বরং, সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-একটা মন্তব্য দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু বিশদে বোঝা যাচ্ছিলো না কিছুই। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, মেডিক্যাল নয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কিন্তু কলেজ কি বলা যায়? নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? নাকি শুধুই কয়েকটি বিল্ডিং যার কোথাও কোনোদিন সঠিকভাবে নিবন্ধীকরণই হয়নি। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো পাওয়া যেতে পারতো প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের থেকে, কিন্তু মজার বা ভয়ের ব্যাপার হলো, তাঁরা নিজেরাও এ বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখেন না। ২০১৬ থেকে ধরলে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা এই নিয়ে তৃতীয় দফায় আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সদুত্তর তারা পায়নি কর্তৃপক্ষের থেকে। ... ...
কোথা দিয়ে কেটে গেছে দুটি বছর, টেরও পাইনি। সাক্ষাৎ পরিচয় হয়েছে এক অনবদ্য পরিবারের সাথে। আমার জানা নেই, এমন পরিবার কোলকাতা শহরে আর দ্বিতীয় আছে কি না। সাহিলের বাবা মারিয়ো পিটার পেরিওয়াল ধার্মিক খ্রিস্টান। ভালোবেসে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছেন শেহনাজকে। শেহনাজ ধর্মে মুসলিম। পিটারের মা বাবাও পরস্পরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। এবং পিটারের মা কিন্তু খ্রিস্টান নন, মাড়োয়াড়ি। পিটারের শ্যালক, মানে সাহিলের মামা আবার যাঁকে বিয়ে করেছেন, তিনি ধর্মে হিন্দু এবং বাঙালি। দু'বছরে ঈদ, ক্রিসমাস, বিজয়া দশমী, তিনটি উৎসবের নেমন্তন্ন পেয়েছি ওদের বাড়িতে। এমন নয় যে পরিবারে কেউ ধর্মের ধার ধারেনা। একই ছাদের তলায় নামাজ পড়া এবং রবিবারে চার্চে যাওয়া নিত্যকারের কাজ হিসাবেই দেখতাম আর অবাক বিস্ময়ে ভাবতাম, এও সম্ভব!! ... ...
“বাঁ দিকে একবার ঘুরে তাকান। ওখানে ওরা শুয়ে আছে। এই কদিনে আপনারা ওদের চিনে নিয়েছেন ফেসবুকে। এই কদিনে আপনারা ওদের দেখেছেন নানা ভাবে। এদের মধ্যে বেশ কিছুজন এখন আই সি ইউ তে। ওই যে কোনের ছেলেটি শুয়ে আছে ও কিন্তু...। হ্যাঁ ঠিক বলেছেন ওর নাম। আস্তে আস্তে ওর অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ওর স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখছি। কিন্তু...।” থেমে গেলেন এক তরুন ডাক্তার। সবার হাতে মোবাইল। সবার হাতে ক্যামেরার ঝলকানি। কেমন যেন কনসেনট্রেশান ক্যাম্প ঘুরে দেখার কথা মনে হল। মনে হল এইবার আহুতি দেওয়ার জন্য যোগ্য সব ছাত্রদের পাওয়া গেছে। আমরা নিশ্চিন্ত। যাবতীয় দায়িত্ত্ব ঝেড়ে ফেলে। আপাতত ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিল্পবে ফিরে যেতে পারবো। কিন্তু কি চেয়েছিল ওরা? ওরা চেয়েছিল ওদের ন্যায্য অধিকার। আপাত অর্থে খুবই সামান্য। কিন্তু অত্যন্ত জরুরী। না আমি ওদের ছবি তুলতে পারিনি। ... ...
বিখ্যাত মানুষজন এসেছিলেন অনেকে, যাদের মিডিয়া বিদ্বজ্জন বলে টলে। বললেনও তাদের মধ্যে অনেকে, ভালই বললেন, তাদের অনেকেই সুবক্তা। বললেন কমলেশ্বর ভট্টাচার্য, অনীক দত্ত, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কোশিক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, পল্লব কীর্তনীয়ারা। ছাত্র রাজনীতিকে "অরাজনৈতিক" করে দেওয়ার কথা উঠে এল বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্যে, কৌশিক সেন অবশ্য বললেন ছাত্রদের তোলাবাজির রাজনীতি দেওয়ার কথা। পরিচালক অনীক দত্ত বললেন নিজের হারিয়ে ফেলা শহর কলকাতাকে ফিরে পেতেই তিনি এ আন্দোলনের পাশে, এই কলকাতা তাকে বিশ্বাস যোগায় এ শহরে থাকতে চেয়ে ভুল করেননি তিনি। কিন্তু যে বয়স্ক মানুষটি বললেন আমরা অনশন করব তোমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনিই বোধহয় গোটা সভাগৃহটাকে এক্সুরে বেঁধে দিলেন , কিংবা যে অভিভাবক বললেন আমরা আছি তোমাদের পাশে, থাকব এ লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত। অন্যান্য কলেজ থেকে আসা পড়ুয়ার দল যারা স্লোগান তুলল গলা মেলাল স্লোগানে, তারাই আজকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠল ক্রমশ। ব্যাকগ্রাউন্ডে পল্লব গাইলেন 'হোক লড়াই'। মৌসুমী গাইলেন তাঁর ক্লাসিক বহুস্বরের গান 'তুমি কোথায় ছিলে অনন্য'। গান আর স্লোগান, ভিড়ে ঠাসা সভাগৃহে ছাত্রছাত্রীদের অঙ্গীকার, এর পরে কনভেনশনই পরিণত হল মিছিলে। না হয়ে আর উপায় ছিলনা। ... ...
গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকারের ভূমিকা জনমানসে বিরূপতার জন্ম দিয়েছে। ছাত্র, চিকিৎসক এবং রোগীসাধারণ, তিনটি গোষ্ঠীর মধ্যেই ক্ষোভ ও উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ এটুকু বলে থেমে গেলে বস্তুত অর্ধসত্য বলা হয় এবং সরকারের প্রতি অন্যায় করা হয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ আদর্শ না হলেও প্রশংসনীয়। স্বাস্থ্যখাতে ভারতের গড় সরকারি ব্যয়ের তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি। বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু হাসপাতাল বিল্ডিং খাড়া করে বেশ কয়েক হাজার বেড বাড়িয়েছেন এই সরকার। সরকারি উদ্যোগে বা পিপিপি মডেলে ডয়ালাইসিস থেকে শুরু করে ইন্টেনসিভ কেয়ার জাতীয় বিভিন্ন পরিষেবা আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে দেবার মতো পরিকাঠামো তৈরি করার ক্ষেত্রে খানিক এগিয়েছেন। এগুলো অস্বীকার করে কেবলমাত্র সরকারকে দোষারোপ করার রাজনীতি করতে চাই না। সমস্যা হল ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে এবং পরিকাঠামোতে নজর দিয়েও স্বাস্থ্যবব্যস্থার প্রকৃত উন্নতি সম্ভব হল না পরিকল্পনার অভাবে। ... ...
কোলকাতা মেডিকেল কলেজে পুরনো হস্টেলের কিছু ছবি ... ...
অনিকেত এই চিকিৎসকদের সন্তান। অয়ন, সুমন, হিল্লোল এই চিকিৎসকদের উত্তরাধিকার। সুযোগ্য উত্তরাধিকার। অনিকেতরা সেই ডাক্তারিছাত্রদের প্রতিনিধি যারা ১৯৮০-র দশকে স্বাস্থ্য আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা এক্স-রে, ই সি জি ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা চালু করার জন্যে। অয়নরা সেই ডাক্তারিছাত্রদের উত্তরসূরি যারা নব্বই এর দশকে কলকাতার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে গেছেন, বস্তিবাসী মানুষদের স্বাস্থ্যের হাল হকিকতের খোঁজ তাঁদের মধ্যে গিয়ে নিয়ে এসেছেন। আর তাই শুধু বর্তমান নয়, যে কোন শাসক দলের কাছেই এই উত্তরাধিকার একটা বড় দু:স্বপ্ন। আসন্ন স্বাস্থ্য আন্দোলনের একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি। এইটা মেনে নিতে চাইছেনা রাষ্ট্র। এইটা মানতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। তাই চাইছে একদম ফার্স্ট ইয়ার থেকে, একদম 'তৃনমূল' স্তর থেকে এই সম্ভাবনা সমূলে বিনাশ করতে। অনিকেতদের এই আন্দোলন এই মূহুর্তে তাই এতখানি গুরুত্বপূর্ণ, এতখানি সময়োচিত, এতখানি জরুরি। ... ...
আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়াতে নয়। সশরীরে। গণ ডেপুটেশন দিন, অথরিটি কে, হেলথ সেক্রেটারিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। সমস্ত রাজনৈতিক রঙ ফেলে রেখে আসুন। এটা স্বাধীন ছাত্রছাত্রী আন্দোলন। কনভেনশন করুন, নাটক করুন, গান করুন, কবিতা লিখুন। সবাইকে জানান। আসতে বলুন মেডিকেলে। ... ...
এসব শুনতে বলছি কেন? কোন মেডিক্যাল কলেজের ঝামেলা বা কে মার খেল বা কে হোস্টেল না পেল তাতে আপনার আমার দিন গুজরানে সরাসরি কিছু যায় আসে না তো ঠিকই, কিন্তু আসতেও তো পারে কখোনো। হঠাৎ করে আপনার নিজের বা কাছের কারোর শরীর খারাপ তো হতেই পারে। এমনই অবস্থা, যে মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এ (CCU) তে ভর্তি করতে হল। জানেন এই CCU এর ডেপুটি ইনচার্জ কে? এমন একজন ডাক্তার, যিনি ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। CCU এর কাজ, অর্থাৎ ক্রিটিকাল কেয়ারে কাজের জন্য প্রথামত কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ডিগ্রী তার নেই। উপরন্তু তিনি পাশ করার পর বড়জোর দুবছর রোগী দেখেছেন (যদিও এই দুবছরে কতদিন ডিউটি দিয়েছেন তার খবর যদি আপনি সঠিক ভাবে নেন তাহলে আপনি বাকরুদ্ধ হবেন এ নিশ্চিত) । ... ...
মাসের পর মাস পেপার মিলের কর্মীরা মাইনে পায়না। অন্নচিন্তা চমৎকারা। কপর্দক শূণ্যতা সহস্রাধিক সংসারকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জনপদ ধ্বস্ত। রাঙা অধর নয়ন কালো, ভরা পেটেই লাগে ভালো। এত দিনের স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরচূর। এক্সোডাস শুরু হয়ে গেছে। এই অশনি সংকেত সূদূর কল্পনাতেও ছিল না কাগজকল ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদের। উজাড় করে তারা ভোট দিয়েছে, ক্ষমতায় এনেছে বিজেপিকে। তারপরই বন্ধ হয়ে গেল পাঁচগ্রামের মিল কর্মীদের মাসমাইনে। প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি, তারপর আশার ছলনে ভুলি....। শুধু কর্মহীন স্টাফদের হিসেব নিলে চলবে? ক্যাজুয়াল কর্মী রয়েছে আরও সহস্রাধিক। তাদের উপার্জন বন্ধ ষোল মাস। তাদের ঘিরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য দোকানী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এক্সোডাস, এক্সোডাস। ... ...
বেবী সাউ-এর কবিতা ... ...
বাংলাদেশে নারীদের পথ খুব একটা সোজা না। নারী কে প্রতি পদে পদে প্রমাণ করে তারপর তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হয়। একজন নারী এগিয়ে যাবে আর তার সামনে কোন প্রতিবন্ধকতা আসবে না এমন তো শুধু বাংলাদেশে না, পুরো দুনিয়া জুড়েই হয় না। কম আর বেশি, নারীর অবস্থা করুণ। যেখানে সোজা রাস্তায় হেঁটে গেলে কথা শুনতে হয় সেখানে একজন নারী খেলবে ক্রিকেট? এশিয়া কাপ জেতার পরে এখনো অকল্পনীয় মনে হয় ব্যাপারটাকে। যারা ওই সব প্রবল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে তারা জয়ী হবে না তো কে হবে? ... ...
খুব হিসেব কষে, ছক কেটে ছড়ানো হচ্ছে গুজবটা। মান্দাসৌরের অত্যাচারিতা মেয়েটি নাকি মারা গেছে। এই মিথ্যের পরিবেশনাও খুব নিখুঁত। মেয়েটির মৃত্যুকালীন কাতরোক্তি দিয়ে শুরু করে শেষ হচ্ছে মোমবাতি জ্বললো না কেন এই হাহাকারে।তারপরই তীব্র বর্শামুখ বাম এবং প্রগতিবাদীদের প্রতি। এই শালারাই সব নষ্টের গোড়া। অমুকের বেলায় প্রতিবাদ, এব্বেলা চুউউপ। এদের মুখোশ টেনে খুলে ফেলা হোক। এই করতে গিয়ে স্বঘোষিত নিরপেক্ষদের খেয়াল থাকছে না যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অত্যাচারিতাদের নাম নেওয়া বারণ। দিব্যি কাঠুয়ার শিশু আর মান্দাসোরের শিশুকে নাম ধরে ধরে ডাকছেন তারা। ... ...
রামু দীপালি রেখা রহিম তৌফিক বুদ্ধুরাম সবাই জানে অন্ধকার থাকতে খেয়ে নিয়ে সারাদিন উপোস থাকতে হয়। সারাদিন উপোসটা অবশ্য এদের অনেকের জন্য আলাদা কিছু না। সন্ধ্যার সময় পেট ভরে খেতে হয় তারপর একদিন আসে চাঁদের দিন, সেদিন ঈদ। নামাজ পড়তে হয়। আকাশে একফালি চাঁদের ওপর সুন্দর তারাটি জাগে সেদিন ঈদ। কোলাকুলি করতে হয়।বন্ধুদের কিছু দিতে হয়। মনিপুরী বস্তির গোরাচাঁদ আর ললিতা জানে চাঁদের রাতেই রাসপূর্নিমা নাচের উৎসব কিন্তু সেই চাঁদ বড় আর গোল । সে উপোস হলো কি হলো না, কিন্তু সন্ধ্যায় ইফতার হোলো। একদিন ঘরঘর থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে আনা মুড়ি, কজন এনেছিলো জমানো পয়সায় কেনা তেলেভাজা। একদিন খাওয়া দাওয়া হোলো কলা আর জাম। আর একদিন মিষ্টি আলু পুড়িয়ে খুব ভালো ইফতার হোলো। আজ চাঁদের উৎসব। ... ...
গভীরে ক্ষতটা আমরা দেখি, যারা দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্দরমহলের বাইরে থেকে গেছি। পূজা ও ঈদের মাঝে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি নিজেদের।যে একফালি চাঁদ এত আনন্দের তাকে ছুঁতে পারিনি আবার বিসর্জনের সময় দুর্গামাকেও সাথ দেওয়া হয়নি একবার।উৎসবে অবগাহন অধরা থেকে গেছে।মানুষ হওয়ার বোধহয় এটাই ট্রাজেডি।তাকে হিন্দু নয় মুসলিম হতেই হয়।মুসলিম জন্মায় না।মুসলিম হয় বিশ্বাসে।সে বিশ্বাসের আবার ৫ স্তম্ভ।তা চর্চার বাইরে আমি।তাই চাঁদ রাত আমার কাছে এক গল্পমাত্র ।আর আমি যদি বলি সিন্ধুর তীরের হিন্দু আমি, কে দেবে আমায় দুর্গা ঠাকুর পছন্দ করে মণ্ডপে আনতে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সেই সরস্বতীদেবীকে তো হোষ্টেল সুপার আনতে দিতে বাদ সেধেছিলেন।জানিয়ে দিয়েছিলেন এক অহিন্দুর কখনো ঠাকুর চয়েস করার কাজ করতে পারে না!আমার মত অনেকের উৎসবের চেনা পথ তাই নির্জন,ব্যতিক্রমী।তবু আনন্দ জাগে………… ... ...
কালের নিয়মে একদিন বিয়ে করলাম। নতুন বৌকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। রাস্তায় দেখা লালি পিসির সঙ্গে। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। দেখলাম কাল্টুদের বেড়ার ঘর পাকা হয়েছে, ছাদ হয়েছে। আমাদের দুজনকে বসিয়ে প্লেটে করে দুটি সন্দেশ আর জল দিলেন। তাকের ওপরের কৌটো থেকে একটা দোমড়ানো ময়লা কুড়ি টাকার নোট বার করে দিলেন আমায় বৌয়ের হাতে। বললেন, "বৌমা, কিছু কিনে খেও"। বৌকে নিয়ে গেলাম একদিন ইমাম সাহেবের ডেরায়। আমার স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। হাতে তুলে দিলেন একটি দশ টাকার নোট। চলে আসবার সময়ে বৃদ্ধ মানুষটার চোখের কোনাটা কি চিকচিক করছিল। ... ...
সময় হলে মৌলানাসায়েব নামাজ শুরু করবেন।নামাজে আমরা সবার জন্যে মঙ্গলকামনা করবো। আমাদের চলে যাওয়া সবার ভালো চাইবো। যে বৃদ্ধ মানুষটি ভয় পাচ্ছেন যে আগামী ঈদের নামাজে তিনি হয়ত থাকতে পারবেন না তিনি সবার কাছে কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা চাইবেন। আমরা তার দীর্ঘ জীবন চাইবো।মৌলানা প্রতিটি মানুষের মঙ্গল চাইবেন খোদাতলার কাছে।আপনি দেখবেন এইসময় আমাদের প্রবীণ মৌলানা মানুষটি কেঁদে ফেলেন।আমার মতন উদাসীন লোকেরও বুকের বাম দিকে কোথাও হাল্কা ব্যথা শুরু হয়। নামাজ শেষ। আসুন, এবার আমরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে। সমস্ত বৈরিতা দূর হোক। আমার-আপনার সবার কুশল হোক। এবার চলুন বাড়ির দিকে হাঁটি।আব্বার জন্য দাঁড়াতে হবেনা। উনি সবার শেষে ঈদগাহ থেকে বের হবেন। প্রত্যেকটি মানুষের সাথে আলিঙ্গন ক'রে। ... ...
কটা একটা করে বছর আব্বুলিশ বলতে যখন ব্যস্ত, আড়ম্বরের কাছে সরলতা কোটোয় বন্দী বোকা-জীবন তখন রকমফেরের পরখ পেতেই ঈদ সে যাপনমুখী। এখানে হলে সলমন থাকে, গুজরাটে - কেরালায় কাজ করা আজিজুল- মোক্তার এরা থাকে সপ্তাহ খানেকের ছুটির আনন্দে। এখানে মাঠে সার্কাস বসে, বিকেলে চপ-রোল-চাউমিন-জিলিপি-বাদামের মেলা থাকে। ঈদগাহ সাজানোর রঙিন কাগজী বেলাভূমিতে মিতায়ু সুর্মা উদ্বেল থাকে আনন্দে - তিতিক্ষায়। এখানে লালবাগে প্রেম থাকে ফুরফুরে, ইতিহাস মেখে উথালপাতাল অধুনা থাকে বেমিশাল....। আদতে তো একটাই দিন। সমস্ত কুশল সংবাদ, ভালবাসা, খুশি, মুহূর্ত সময় আগলে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়ার দিন...এমন গচ্ছিত মায়াদিন - ... ...
কাকদ্বীপ থেকে হাওড়ার গ্রামের বাড়িতে ঈদ কাটাতে এসে ঈদের দিন আব্বার কাছ থেকে আমি আর মেজো দশটাকা করে পেতাম। নামাজ শেষে ঈমাম সাহেবের সাথে হাত মেলানোর সময় তা দিয়ে দিতে হতো। কিছু টাকাপয়সা মানে দু চারটাকা জমিয়ে রাখতাম আলমগির-বাসুনদের জন্য। আলমগির-বাসুন সাড়ে আটটার জামাতে নামাজ পড়ে নিতো ভাঙা মসজিদতলায়। আমাদের মসজিদে জামাত শুরু হতো নটায়। নামাজ শেষ করে বড়দের সালাম করে, বন্ধুদের সাথে কোলাকুলির পর দেখতাম আলমগির-বাসুন ঘুগনির পশরা নিয়ে বসে থাকতো মসজিদের গেটের সামনে। ছোট কলাপাতায় একটাকার ঘুগনি। তালপাতার পাতা কেটে বানানো চামচে তুলে খেতে হতো। ক্ষীর, লাচ্ছা-সিমুইয়ের জয়জয়কারের মাঝে হাতে হাতে ঘুরতো আলমগির আর বাসুনের ঘুগনি। যেন আলুকুচির মধ্যে গলে যাওয়া মটরের চিত্রনাট্যে সেলিম-জাভেদের জুটি। অজ পাড়াগাঁয়ে ঘুগনিটুকুই যেন ঈদের উপরি পাওনা। ঘিরে ধরা বাচ্চাকাচ্চার ভিড়, হইচই। আধঘণ্টায় ফুরিয়ে যেতো সব। ... ...
এই বিকারগ্রস্ত সময়ে কলিম প্রায়ই বলতেন, ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে এই বাংলাকে রক্ষা করছে তিনটি শক্তি। কী সেই ত্রিশক্তি? বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, একটি সরোবর কত বড়ো ছিল, বোঝা যায় সেটি শুকিয়ে গেলে। আমরা সেই শুকনো সরোবরের তীরে দাঁড়িয়ে আছি এখন। ট্র্যাজেডি হল, এখনও বুঝতে পারছি না বা চাইছি না ক-ত জল ছিল একদা সেই সরোবরে। ভাষা ও সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার হারিয়ে আমরা আজ ভিখারি। সুযোগ পেয়ে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব তো চলবেই! রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'সভ্যতার সংকট'-এ লিখেছিলেন 'অতীতের সঙ্গে ভারতের নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ'। নৃশংস শব্দ ছাড়া এই আত্মবিচ্ছেদকে সত্যিই বর্ণনা করা যায় না। আমরা ঐশ্বর্যহীন হয়েছি স্বেচ্ছায়, ফলত প্রতি পদে পদে সহ্য করতে হবে 'মুর্খ ভক্ত'দের তাণ্ডব। কলিম-বর্ণিত ‘ত্রি’ফলা’র ফলাগুলো নষ্ট করেছি বা করে চলেছি অহরহ। ... ...