এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • মেডিকেল কলেজে হোস্টেল নিয়ে ঠিক কী হয়েছে?

    সায়ন্তন মুখোটি লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ২০ জুলাই ২০১৮ | ১০৯৮ বার পঠিত
  • ১) কোলকাতা মেডিকেল কলেজে হোস্টেল নিয়ে ঠিক কি হয়েছে?
    ২০১০ সাল পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে এম বি বি এস এ আসন সংখ্যা ছিল ১৫৫. হোস্টেল ছিল চারটি। ২০১১ থেকে আসন বেড়ে হয় ২৫০. কিন্তু হোস্টেল বাড়েনি। মেইন বয়েস হোস্টেলের ছাদ এ একটি নতুন তল করে দেওয়া হয়, শুরু থেকেই বারবার যার ফলস সিলিং ভেঙে পড়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত হোস্টেলে বেডের জন্য সিনিয়রিটি আর দূরত্বের ভিত্তিতে অথরিটি থেকে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা হত। ২০১৬ থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। গত তিন বছরের তিনটি ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা এর ফলস্বরুপ কলেজের বাইরে মেস ও পিজি নিয়ে থাকতে শুরু করে। ২০১৮ সালে ১১ তলার একটি নতুন হোস্টেল বানানো হয়। তাতে ৩ টে ফ্লোরে এম ডি, এম এস পাঠরত মহিলা ডাক্তারদের (পিজিটি) থাকার ব্যবস্থা হয়, ৩ টে ফ্লোরে পুরুষ পিজিটি দের রাখার কথা হয়, ১ টি করে ফ্লোরে হাসপাতালের কিচেন, আর ক্যান্টিন চালু হয়। ১ টি ফ্লোর বেসমেন্টে পার্কিং জায়গা করা হয়, দু'টো ফ্লোরে গেস্ট দের জন্যে ২ বি এইচ কে ফ্ল্যাটের মত সুবন্দোবস্ত করা হয়। এটা ২০১৭ সালের জুন মাসের কথা। তারপরেই হঠাৎ যে তিনটে ফ্লোরে পুরুষ পিজিটি দের থাকার কথা, সেটা এম বি বি এস প্রথম বর্ষের জন্যে দেওয়ার কথা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়- ক) এম সি আই এর রুলে আছে ফার্স্ট ইয়ারদের সিনয়রদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। না হলে র‍্যাগিং হবে। খ).সিনিয়র দের থেকে গাঁজা, মদ খাওয়া শিখবে ফার্স্ট ইয়ার। গ). একই হোস্টেলে মহিলা ডাক্তারদের বয়েসে নিতান্তই ছোট ফার্স্ট ইয়ারদের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সিনিয়র দের রাখলে সেই সম্ভাবনা বেশি। দ্বিতীয় যুক্তি দু'টো আনওফিশিয়াল, কিন্তু বিবেচ্য।
    স্বাভাবিকভাবেই এতদিন হোস্টেল না পাওয়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা এটার প্রতিবাদ করে।

    ২. ছাত্রদের দাবিটা ঠিক কি?
    ঠিক আগে যেমন হত, সেই নিয়মে পুরোনো এবং নতুন হোস্টেলের কাউন্সেলিং করতে হবে, সিনিয়রিটি আর দূরত্বের ভিত্তিতে নতুন হোস্টেলে সবাই কে জায়গা দিতে হবে।
    যাকে হোস্টেল সুপার করা হয়েছে, তাকে সরিয়ে যোগ্য কোন শিক্ষক কে সুপার করতে হবে।
    র‍্যাগিং এর অযুহাতে সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্কে ফাটল ধরানো যাবে না। কারণ মেডিকেল কলেজে ১৮৬ বছরের ইতিহাসে সে নিদর্শন নেই।

    ৩. কে এই হোস্টেল সুপার?
    নাম পার্থ প্রতিম মন্ডল। ২০১৬ তে এম বি বি এস পাশ। এক বছর ফেল করার পর, এবং প্রায় সব বিষয়ে একবার করে সাপ্লি পাওয়ার পর। কোন উচ্চতর ডিগ্রী নেই। বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ। মেডিকেলের সি সি ইউ তে ডেপুটি ইনচার্জ। এন আর এস মেডিকেলে ক্লিনিক্যাল টিউটর, এনাসস্থেসিয়া তে, অথচ তাতে এম ডি করা নেই! আরো জানতে চাইলে ওনার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখে আসুন। কয়েকটা ছবি দেখাই যথেষ্ট।

    ৪. অথরিটি কি বলছে?
    প্রথমত অথরিটি নানা সময় নানা কথা বলেছে। কিন্তু যেটা বারবার বলেছে, ফার্স্ট ইয়ার ছাড়া ওই হোস্টেল আর কাউকে দেওয়া যাবেনা।
    বলেছে সিনিয়র যাদের হোস্টেল দরকার, তাদের জন্যে আরেকটা নতুন হোস্টেল বানানো হবে। কিন্তু এটা ফার্স্ট ইয়ারের।
    বলেছে মেইন হোস্টেলের ফলস সিলিং সারিয়ে দেওয়া হবে। বাট নতুন হোস্টেল ইজ নন নেগোশিয়েবেল।

    ৫. অথরিটি কি করেছে?
    প্রথম কয়েক দিন ছাত্ররা কথা বলতে গেলে, ডেপুটেশন দিতে গেলে, সরাসরি অবজ্ঞা করেছে। ছাত্রদের হোস্টেলের দাবিকে তুচ্ছ করেছে।
    ছাত্ররা প্রিন্সিপ্যাল কে অবস্থান ঘেরাও করলে সাদা, খাকি, গেঞ্জি পুলিশ ডেকে পিটিয়ে তুলে দিয়েছে। নতুন হোস্টেল এই আন্দোলনকারিরা দখল করে নিতে পারে, এই ভয়ে তড়িঘড়ি কোন রকম নোটিশ ছাড়াই তিন-তিন ছটা ফ্লোর ভর্তি করে দিয়েছে, মহিলা পিজিটি আর ফার্স্ট ইয়ার এম বি বি এস ছাত্রদের দিয়ে। কিভাবে শুনুন। মহিলা পিজিটিদের রাত ৮ টায় কেবল মাত্র মোবাইলে মেসেজ করে বলছে, এখুনি গিয়ে হোস্টেল দখল করো, চাদর, ব্যাগ, গামছা, যা হোক কিছু একটা রেখে এস, না হলে আর কোনদিন হোস্টেল পাবেনা।
    ১ লা আগস্ট থেকে ফার্স্ট ইয়ার এম বি বি এসের ক্লাস শুরু হবে, অথচ ৮ই জুলাই ওদের বাড়ি তে হুমকি দিয়ে ফোন করে ডেকে এনেছে, রাতারাতি। সেখানে প্রায় ১২০ জনকে বেড দিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু জনের বাড়ি কলকাতায়, যাদের হোস্টেল লাগবেই না।
    এরপর আন্দোলনকারিরা অনশনে বসলে প্রথম দুদিন কোন কথাই বলতে আসেনি। তারপর এসে বলেছে, যারা অনশন করছে, তাদের কোন একটা হোস্টেল এখনই দিয়ে দেবে, কিন্তু নতুন হোস্টেল নয়। তারপর একদিন অনশনকারিদের বাড়িতে ফোন করেছে, গার্জেনদের হুমকি দিয়েছে, আপনার ছেলের কেরিয়ার নষ্ট করে দেব অনশন না তুললে।
    গার্জেন, সিনিয়র ডাক্তারদের চাপে পড়ে দু'বার কলেজ কাউন্সিলের মিটিং ডেকেছে। প্রথম মিটিং এ বলেছে, নন নেগোশিয়েবেল-- এটা হল কলেজ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় মিটিং এ বলেছে, হোস্টেলের ব্যাপারে কাউন্সিল কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। (যে কাউন্সিল তৈরি হয়, প্রিন্সিপ্যাল, মেডিকেল সুপার, ডিন, আর সমস্ত ডিপার্টমেন্টএর হেড দের নিয়ে) আমাদের "হাইয়ার অথরিটির" সাথে কথা বলতে হবে।
    বৃহস্পতিবার বলেছে, ২১ শে জুলাইয়ের মিটিং এ বাইরে থেকে লোক এসে তোমাদের কিছু করে গেলে আমার দায়িত্ব নেই। সেদিনই রাতে পুলিশ পাঠিয়ে জোর করে অনশন তোলার পরিকল্পনা করেছে। আর গোটা ১০ দিনের অনশন জুড়ে বলে গেছে, তোমরা আর যাই কর, অনশন কোরো না। আমরা ১০-১৫ দিন পর তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।

    ৬. হোস্টেল কাউন্সেলিং এর মত একটা অতিসাধারণ দাবি আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?
    ৬ টা ছেলে অনশন করছিল, দুজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, আরো দুজন তারপর যোগ দিয়েছে।
    হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা একদিন ডেপুটেশন দিয়েছে।
    ৯ইই জুলাই একটা মিছিল করে ধর্মতলা অব্ধি গিয়ে হেলথ সেক্রেটারিকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজেই একটি কনভেনশন করা হয়েছে।
    গার্জেনরা এসে ১২ ঘন্টার প্রতিকী অনশন করে, প্রিন্সিপ্যাল কে ডেপুটেশন দিয়েছেন।
    ২০ জন সিনিয়র ডাক্তার এর পরের দিন ১২ ঘন্টার প্রতিকী অনশন করে প্রিন্সিপ্যাল কে ডেপুটেশন দিয়েছে ও কথা বলেছেন। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
    বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টার্ন ও হাউসস্টাফরা ককর্মবিরতি শুরু করেছেন।
    আরো ১৫ জন ছাত্রছাত্রী বুধবার রাত থেকে আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছেন।
    সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অসংখ্য শুভবুদ্ধি সম্পন্ন, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ জন পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন।
    ছোট (নাকি বড়!) করে বললে অথরিটির অবজ্ঞা আর দলদাসত্বের কারণে আজকের এই আন্দোলন একটা গণ আন্দোলন এর রুপ নিয়েছে।

    ৭. মেডিকেল কলেজের কি সব ছাত্রছাত্রী আছে এই আন্দোলন এর সাথে?
    না।
    ২০১১ থেকে স্টুডেন্টস ইউনিয়নে আছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগত কারণেই তারা নেই এই আন্দোলনের পাশে, তাদেরই সহপাঠী অনশন করে অসুস্থ হয়ে গেলেও নেই। তারা কোনো "ঝামেলায়" জড়াতে চায়না। তারা "পড়াশোনা" করতে চায়। তারা এই আন্দোলন এর সমর্থনে আসবেনা, কিন্তু তাকে সোশ্যাল মিডিয়ার যেন তেন প্রকারে কালিমালিপ্ত করতে চায়। কলেজে তৃণমূলী গুণ্ডারাজ তাদের চোখে পড়েনা, কিন্তু প্রেসি, যাদবপুর থেকে লোকজন সলিডারিটি তে এলে তাদের এলিটিজম এর গায়ে ছ্যাঁকা লাগে। জনৈক সার্জারির অধ্যাপক একটি অত্যন্ত দুখ:জনক মন্তব্য করলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে আন্দোলনকারিরা তার কৈফিয়ত চাইতে গেলে তাদের স্যার কে অপমান করা হয়েছে বলে ওই টি এম সি পি ছাত্রদের গাত্রদাহ হয়। এর বেশি আর এই পরিসরে বলতে চাইনা, বলা সম্ভব ও নয়। মহাভারত হয়ে যাবে। তারা এখনও বিশ্বাস করে আন্দোলনকারি রা নকশাল এবং মাওবাদী।

    ৮. অনিকেতরা কেমন আছে?
    ভালো নেই। দিনদিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আন্দোলনকারিদের পক্ষে অনেক চিকিৎসক ওদের ২৪ ঘন্টা দেখভাল করে যাচ্ছেন। রক্তপরীক্ষা করে যাচ্ছেন। খেয়াল রাখছেন।

    ৯. আপনি কি করতে পারেন?
    আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়াতে নয়। সশরীরে। গণ ডেপুটেশন দিন, অথরিটি কে, হেলথ সেক্রেটারিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। সমস্ত রাজনৈতিক রঙ ফেলে রেখে আসুন। এটা স্বাধীন ছাত্রছাত্রী আন্দোলন। কনভেনশন করুন, নাটক করুন, গান করুন, কবিতা লিখুন। সবাইকে জানান। আসতে বলুন মেডিকেলে।

    ১০. এই আন্দোলন অন্যন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে কি বার্তা দিতে চায়?
    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন রাজনৈতিক দলের দালালি নয়, ছাত্রস্বার্থে অথরিটির হাজারটা খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে স্বাধীন ছাত্রছাত্রী আন্দোলন গড়ে উঠুক। এই বাংলা জুড়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কল্লোলিত হোক একটাই ভাষা। স্বাধীন ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ভাষা। আর কারোর না।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ২০ জুলাই ২০১৮ | ১০৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.74 (*) | ২০ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৭85490
  • আদ্যোপান্ত লেখাটিতে শ্লোগানের চেয়ে তথ্য বেশী, অনেককিছু জানলাম।

    সব পথ মিশুক মেডিকেলে।

    ঢাকা থেকে সংহতি।
  • Sumit Roy | 340112.244.3412.59 (*) | ২০ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৬85491
  • "তারা এখনও বিশ্বাস করে আন্দোলনকারি রা নকশাল এবং মাওবাদী" - এই কথাটি ভাববার মত...

    ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মোটামুটিভাবে পৃথিবীর সব বিরাট আন্দোলই নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য অরাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবেই শুরু হয়েছিল। রাশিয়ার ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল পেত্রোগার্দে রুটির লাইনে দাঁড়ানো নারীদের (bread rioters) দ্বারা শুরু দাঙ্গা হাঙ্গামা থেকে। বাংলাদেশের চেতনাবাদী (ঘোষণা দিলেন আর ঝাপাইয়া পড়লাম) মার্কা ইতিহাসের জঞ্জাল দূরে সরিয়ে যদি র‍্যাশনালি চিন্তা করা যায় তাহলে দেখা যাবে ভাষা আন্দোলনও মূলত শুরু হয়েছিল উর্দুভাষীরা সরকারী চাকরিতে অতিরিক্ত সুবিধা পাবে এই প্যারানয়া থেকে। এমনকি যারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল তাদেরও বিশেষ স্বার্থবাদী যুক্তি ছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে- "পাকিস্তান আন্দোলন যারা করছে তাদের মুখের জবান হল উর্দু, অতএব উর্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হলেও রাষ্ট্রভাষা হবে..." এরকম কিছু রাজনীতিকের বিশেষ স্বার্থ।

    এই গোষ্ঠী-স্বার্থবাদী আন্দোলন থেকে যদি কোন জাতীয় স্বার্থকে বের করে এনে আন্দোলনকে কোনভাবে নতুন রূপ দেয়া যায় তাহলে সেটা রাজনৈতিক ও জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। পূর্ব পাকিস্তানে মুজিব, রাশিয়ায় লেনিন সেটাই করেছিলেন। এটার জন্য দরকার হয় আরও গভীরে গিয়ে মানুষের ভোগান্তিগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করা, এর সাথে কোন কোন ফ্যাক্টরগুলোর সম্পর্ক আছে বের করা, সর্বোপরি এই ভোগান্তিতে ক্ষমতাসীন, আধিপত্যবাদীদের স্বার্থ্যগুলোকে বের করা, আর সেটা করা হলে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনরা সামনে চলেই আসে। এরপর হয়তো মুজিব, লেনিনের মত কেউ এসে জাতীয় রাজনীতির জন্ম দেয়। যেটা বলতে চাচ্ছি, সেটা হল প্রত্যেকটি অরাজনৈতিক গোষ্ঠী-স্বার্থভিত্তিক আন্দোলনের একটি জাতীয়-রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেবার পোটেনশিয়াল থাকে, আর তাই রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনরা এরকম কোন আন্দোলন দেখলে তা এড়িয়ে থাকতে পারে না, তাদেরকে এখানে নাক গলাতেই হয়। যাতে এরকম কোন সম্ভাবনা তৈরির আগেই একে শেষ করে দেয়া যায়। আর এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের নাক গলানোর উপায় দুটো...

    একটি উপায় হল সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের সাথে আত্তীকৃত করে ফেলা। এই এসিমিলেশনে আন্দোলনকারীদেরকে কিছু দাবী দাওয়া মানা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়, কিছু পুরণ করা হয়, আন্দোলনে নিজেদের লোক নিয়োগ করে একে পুরোপুরি নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসা হয়। আর এভাবে আন্দোলনকে বড় কোন আকার লাভ করা থেকে আটকানো হয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী বিচারের উদ্দেশ্যে করা শাহবাগ আন্দোলন ছিল এমন একটা আন্দোলন। ক্ষমতাসীন সরকার আস্তে আস্তে এখানে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে পুরো আন্দোলনকে নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসে। তা না হলে আন্দোলন যে আকার ধারণ করেছিল, তা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধের আন্দোলন, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের আন্দোলন, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ... তুলে দেয়ার আন্দোলন সহ আরও বড় কোন আন্দোলনের রূপ নিতে পারত, যা ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য খুব একটা ভাল হত না।

    দ্বিতীয় নাক গলানোর উপায় হচ্ছে ডিমনাইজিং দ্য এনিমি, ফ্ল্যাগ ওয়েভিং এর মত প্রোপাগান্ডা টেকনিক ব্যবহার করা। ডিমনাইজিং দ্য এনিমি সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রোপাগান্ডা টেকনিক। সেই প্রাচীন গ্রীসেও এর ব্যবহার হয়েছিল বলে থুসিডাইডিস লিখে গেছেন। এখানে কোন শত্রু, বিপক্ষ, বিপক্ষ আন্দোলনকারীদেরকে ইভিল, অনিষ্টকারী প্রভৃতির ভূমিকায় ট্যাগ লাগিয়ে এদের আন্দোলনকে ডিলেজিটিমাইজ করার চেষ্টা করা হয়। সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে আন্দোলনকারীরা অনিষ্টকারী, জাতির শত্রু, মানবতার শত্রু, তাই এদের সমর্থন না করাই শ্রেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে চলা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদেরকে ক্ষমতাসীনরা রাজাকার, পাকিস্তানের দালাল, জামাত-শিবির বলে আখ্যায়িত করে এই আন্দোলনকে ডিলেজিটিমাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমেরিকান লেখক জুল বেকফের মতে, এই প্রোপাগান্ডা টেকনিকে প্রতিপক্ষকে মানিকিয়ান উপায়ে তুলে ধরা হয় (ওরা সবাই খারাপ, আর আমরা সবাই ভাল এরকম চিন্তা- মানিকিজম একটি প্রাচীন পারসিয়ান ধর্মমত, যা অনুসারে কসমোলজি ভাল ও খারাপ - এই দুটি অংশে বিভক্ত)। ফ্ল্যাগ ওয়েভিং আরেকটি প্রোপাগান্ডা টেকনিক যেখানে প্রতিপক্ষকে দেশদ্রোহী হিসেবে আর নিজেদেরকে খাটি দেশপ্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদেরকে জামাত-শিবির, রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দেয়াও এর মধ্যেই পড়ে। স্বাধীনতার পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামীদেরকে দেশদ্রোহী, ভারতীয় দালাল ট্যাগ দেয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারীদেরকে নকশাল মাওবাদী ট্যাগ দেয়াও অনেকটা এরকমই।

    এরকম ডিমনাইজিং এর চাপে পড়ে আন্দোলনকারীরা অনেক সময় ক্ষমতাসীনদের তোয়াজ করে আন্দোলন করে, যেমন বাংলাদেশে কোটা সংস্কারবাদীরা আওয়ামী লীগ এর স্লোগান "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু" ব্যবহার করে। তারা শেখ হাসিনাকে দিয়েছে 'মাদার অফ এডুকেশন' খেতাব। ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে শুয়ে থাকা ফারুকের গায়ের টিশার্টে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি। আন্দোলনকারীদের গায়ে যাতে জামাত শিবির, রাজাকারের ট্যাগ না লাগে তাই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল হয়তো। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় নি, ট্যাগ তো লেগেছেই, তার উপর এটা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন তৈরি ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করেছে। এতে আন্দোলনে বিজয় তো ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেই, সেই সাথে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার অবস্থাও খুব একটা ভাল না। নেতাকর্মীদের একাংশ ছাত্রলীগের মার খেয়ে হাসপাতালে, না হয় পুলিস হেফাজতে। আর এভাবেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল প্রোপাগান্ডা ব্যবহার করে আন্দোলন নস্যাৎ করতে একরকম সফল। আন্দোলন করার সময় এগুলোও মাথায় রাখতে হয়...

    ঢাকা থেকে সংহতি।
  • শ্রী খান | 7823.147.450123.100 (*) | ২০ জুলাই ২০১৮ ০৬:৫১85492
  • কবীর সুমনরা কোথায়???
    আর কতো প্রাণ সংশয় দেখা দিলে তাদের গিটার বেজে উঠবে??? কন্ঠে ধ্বনিত হবে সংহতির গান???
  • Du | 7845.184.90012.64 (*) | ২০ জুলাই ২০১৮ ০৮:৫৭85493
  • কবীর সুমনের বক্তব্য জানতে হলে এসেমের লেখাগুলো পড়ে নিন।
  • | 453412.159.896712.72 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩৩85495
  • চমৎকার গোছানো লেখা। কলকাতার বাইরের লোকের পক্ষে হ্যান্ডি ইনফো।
  • বিপ্লব রহমান | 9001212.30.2334.47 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৮:৪১85496
  • অভিনন্দন বিপ্লবী ছাত্র সমাজ। সেল্যুট বীর জনতা!
  • অর্জুন অভিষেক | 341212.21.90067.242 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৯:৩৬85497
  • ইউ টিউবে এই ভিডিও টা দেখলে অনেক কিছু জানা যাবে।

  • π | 7845.29.675612.125 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৯:৪৮85498
  • ওরা জিতে গেছে।

  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.74 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৮ ১২:৩৯85494
  • আন্দোলনকে ট্যাগিং করার রাজকূট আসলে বেশ পুরনো ও কমন!

    এপারেও সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমে এসেছেন। শিক্ষকরাও দাঁড়িয়েছেন তাঁদের পাশে।

    ওদিকে "মাদার অব এডুকেশন" ইউটার্ন নিয়েছেন। সরকারের মন্ত্রী, উজির, নাজির, কোটাল, মোসাহেব, তস্য মোসাহেব, পেশাদার টকশো বুদ্ধিজীবী ইত্যাদি কোং স্বতঃস্ফূর্ত এই আদোলনকে "জামাত-শিবির/বিএনপি/ (এমন কি) জংগী" ট্যাগ দিতে ব্যস্ত।

    শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে পুলিশের পাশাপাশি ঝাপিয়ে পড়েছে রঘু ডাকাতের দল ছাত্রলীগ! গ্রেপ্তার, লাঠিপেটা, হাতুড়ি দিয়ে পা ভেংগে দেওয়া, ছাত্রী লাঞ্চনা, শিক্ষকের চুলের মুঠি ধরে শাসানো -- সবই চলছে।

    তবু আন্দোলন দমন করা যায়নি। প্রতিদিন মিছিল হচ্ছে, ছাত্র-শিক্ষক- জনতা আরো আসছেন। ভোটের বছরে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়ে আরো মিছিল আসছে।

    "সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের প্রতিটি লাথি গিয়ে পড়ছে সরকারের মুখে।"

    কলকাতার পাশেই আছে ঢাকা। মেডিকেল আন্দোলনে সংহতি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন