সেই জায়্গা থেকে বিস্ফোরণ ও তৎসংক্রান্ত দর্শনকে তুচ্ছ লাগা হয়তো একদম ধৃষ্টতাই - হারবার্ট পড়ার এত বছর পরে আজ আর বিস্ফোরণকে তেমন তীব্রও মনে হয় না অথচ এত দিন পরেও একটা দৃশ্যকল্প কেমন জ্বালায় - ঐ শেষ পরিচ্ছেদের একটা দৃশ্যকল্প - হারবার্টের সেই সাইনবোর্ড বেলুন বন্দুকওলা কিনে নেয় এবং এর ওপরে কাঁটা পেরেক ঝুলিয়ে বেলুন ঝোলাবার ব্যবস্থা করে - সব বেলুন ফেটে গেলে পেরেকের মধ্যে হয়তো বা চোখে পড়বে, উল্টো হরফ - 'মৃতের সঙ্গে কথোপকথন' প্রোঃ হারবার্ট সরকার - ... ...
তোমাকে পড়ছি রাষ্ট্রদ্রোহী, তোমাকে খুঁড়ছি নিরন্তর যাওয়া-আসা সেও চলতেই থাকে, পুড়ে যায় পোড়ো মাটির ঘর ... ...
হুট করে লিখতে বললেই কি পাট করে প্রবন্ধ নেমে যায়? সব সময় হয়তো না। কিন্তু, কিছু কিছু বলার মতো কথা তো থাকেই যা অন্তত না বলে থাকা অনুচিত। অনুরোধ একান্তই ফেরাতে পারেননি যাঁরা, তাঁদের দু-কলম অনন্যোপায় লেখা এখানে একসঙ্গেই থাকল, নাহোক নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করার অছিলাতেই। ... ...
তা-ও তো, তখনও হারবার্ট পড়িনি। ফ্যাতাড়ুদের বৃত্তান্ত তো নয়-ই! হারবার্ট পড়তে দিল আমারই হাতিবাগান পাড়ার কোনও এক বন্ধু। পড়লাম আর শিউরে-শিউরে উঠলাম। এই বেস্-এর ওপর দাঁড়িয়ে, আমি লিখব কী করে? কোন কনভিকশন নিয়ে ? লিখব, আর ভুশ করে ডুবে যাব তো ছাইগাদায়। ব্যবহৃত হব, আধো-অন্ধকার, পুরনো বাড়ির কলতলায় বাসন-মাজার আঁশটে কাজে। বাড়িগুলি প্রোমোটারের হাতে চলে গেলে, কাঁসা-পিতল বাতিল হয়ে গেলে, সে-কাজেও লাগব না আর ! ... ...
মনের ভাবপ্রকাশের জন্য মানুষ যা সৃষ্টি করেছে নিজের বাগ্যন্ত্রের মাধ্যমে, তা-ই হয়ে উঠেছে সাহিত্য। নিজের মনের ভাব অপরে জানুক, মনে রাখুক, তার ভাবপ্রকাশেও যেন আমারই ভাবের ছায়া পড়ে – এই আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। হয়তো ব্যক্তিত্বের উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গেই এই স্বকীয়তার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে মানব মননে। তখন থেকেই ভাষা গঠনের পর পরই ভাব প্রকাশের বাহ্যিক, প্রকাশিত রূপকে সংরক্ষণের চেষ্টাও শুরু, হয়তো। এই সংরক্ষণ করতে গিয়ে মানুষ বুঝল। সেইসব প্রকাশ্য রূপই সে মনে রাখতে পারছে, যেগুলি সে ঝোঁক দিয়ে বলছে, বলছে, ছন্দে, বলছে অন্ত্যমিলে। মৌখিক সাহিত্যের পরম্পরায় আমরা এর প্রমাণ পাই। এরই সঙ্গে আসছে ভাষার লিখিত রূপ, লিপি। কিন্তু মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে সেই লিপি, বা ভাষার লেখ্য রূপ খুব কম সংখ্যক মানুষেরই আয়ত্ত ছিল। লিপিকরের সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। সংখ্যাগুরু মানুষ তাই সাহিত্যরস আস্বাদন করতে নির্ভর করেছেন মৌখিক সাহিত্যের ওপরেই। ... ...
এসব বলে বেঁচে থাকা বামন। শোনে এক নতুন লোক - উইন্ডচিটার, যে তাদের পানীয় জলের শুদ্ধধারা দেখিয়ে দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে প্রথমে। এমনকি খেলনানগরে লুকোনো সোনার কথাও সত্যি, বলে সে। ‘৮’ এবং ‘৯’ ভাবে ওই সোনাবেচা টাকা দিয়ে আবার কারখানা খুলবে। তারা কারখানা-প্রাঙ্গন খুঁড়ে পাথরের স্ল্যাব বের করে, কিন্তু উইন্ডচিটারের দেওয়া ঘুমপাড়ানি ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে হাতকাটার দল ওদের দেখতে পায় [কে ওদের খবর দিল?] এবং গর্তের মধ্যে সোনার মুদ্রা থাকায়, যেটা উইন্ডচিটারই রেখে দিয়েছিল, ওরা চোর সন্দেহে ‘৮’ ও ‘৯’ কে উলঙ্গ করে পিটিয়ে মেরে ছাদের ওপর উল্টো করে ঝুলিয়ে দ্যায় একটি অস্বাভাবিক বড় মৃত শকুনের পাশে। সেটি প্রকৃতপক্ষে ওই ধ্বংসকারী ক্যাপিটালিস্ট শ্রেণির খবর পাচারকারীর কাজ করত। ... ...
আজন্ম পরিচিত কিন্তু ছুঁয়েও না দ্যাখা তিস্তাপারের বৃত্তান্ত, দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, খোয়াবনামা যেভাবে আলমারিতে এসেছিল, হারবার্ট সেভাবে আসেনি। হারবার্টকে আনা হয়েছিল নিজের হাতে, সচেতনে। নতুন শিখতে থাকা পাখিপড়া তত্ত্বজ্ঞানের বুদবুদ মাথায় নিয়ে,অন্যের পরামর্শে হারবার্ট পড়তে বসা হয়েছিল আট বছর আগে। উদ্দেশ্য নিয়ে হারবার্ট পড়ার কারণ হলো, এতে নাকি মূলধারার বাইরের প্রথাবিরোধী প্রতিষ্ঠানবিরোধী উত্তরাধুনিক নানা জ্ঞানের সমাহার রয়েছে। তাছাড়া, নবারুণের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ লাইনটি সংসদ থেকে ফুটপাথ, ডান থেকে বাম, সবাই যে যার সুবিধামতন যেভাবে মুখস্থ আওড়ায় তাতে মনে হয়েছিল সে বেশ কেওকেটা লেখক হয়ে থাকবে! নাম দেখে অনুবাদ বই বলে ভুল করা মহাজ্ঞানী ‘আমি’ উপন্যাসের কোত্থাও কোনো তত্ত্বের উল্লেখ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। বড় বড় তত্ত্ব শেখার উদ্দেশ্য নিয়ে বসে, আনকোরা অনভিজ্ঞ মাথা আর বাছা বাছা মজার খাবার খাওয়া জিবে সোয়াদ নিলে কোন বই থেকে কতখানিই বা শেখা যায়! ... ...
এইখানে একটু নবারুণের বহুচর্চিত রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা। আমৃত্যু মার্ক্সবাদে বিশ্বাস গচ্ছিত রেখেছেন নবারুণ। শ্রেণীমুক্তি মানেই লিঙ্গ নিরপেক্ষ মুক্তি। সর্বজনের। তাই সংগ্রাম যতই রূপকধর্মী হোক না কেন, তার মূল লক্ষ্য শ্রেণীমুক্তি। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের অনুরূপ একটি ক্ষমতার পাকা কাঠামো যে পিতৃতন্ত্রে অবিচ্ছেদ্য এবং সাম্রাজ্যবাদ দূর হটলেও সে যেমন তেমনি থাকে এ নিয়ে ভাবনা আশু লক্ষ্য প্রাপ্তির চেষ্টার কাছে গৌণ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। লিঙ্গ বৈষম্য ও যৌন হেনস্থা শুধু ধনতান্ত্রিক সমাজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং সব প্রান্তিক মানুষ একই শ্রেণীতে পড়েন এইরকম চিন্তার উল্টো পিঠটা নেড়েচেড়ে লিঙ্গ বৈষম্যের অনন্যতা ধরতে চেষ্টা করেছেন ধ্রুপদী মার্কসবাদে বিশ্বাসী নবারুণ এইরকম মনে হয় না। ... ...
জিহাদীদের সিরিজ খুনের চাপাতির কোপ "নাস্তিক ব্লগার" এর পরিধি ছাড়িয়ে শিগগিরই বিদেশি, ভিন্ন ধর্মালম্বী, অধ্যাপক, হোমিও চিকিৎসক, সমকামী, এমনকি মসজিদের ইমাম, শিয়া ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে শেষমেষ সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অভিযানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃংখলা বাহিনী। অভিযানে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী-জঙ্গি। অবশ্য আমরা মুক্তমনারা আগেই সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলাম, ব্লগার খুন হচ্ছে জিহাদের সূচনা মাত্র; খেলাফত, তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খোয়াবে মশগুল মুজাহিদরা শিগগিরই হত্যার পরিধি বিস্তৃত করবে। রাষ্ট্র দখল করাই যেহেতু তাদের লক্ষ্য, তাই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানবে শিগগিরই। আর সরকারি উদাসিনতায়, বলা ভালো, জিহাদীদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞ দেশজুড়ে ছড়াতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ... ...
২০১০ সালের অক্টোবর মাস। বুরহান ওয়ানি - তখন ১৬ বছরের - তার বড় ভাই খালিদ ওয়ানি ও আরেক বন্ধুর সাথে বাইকে চেপে ঘুরতে বেরিয়েছিল তাদের ট্রাল এলাকায়, যেমন এই বয়সী ছেলেরা করেই থাকে যে কোন জায়গায়। জম্মু আর কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের একটা পিকেটে তাদের আটকানো হয়, এবং বলা হয় সিগারেট নিয়ে আসতে। খালিদ যায় সিগারেট আনতে, বুরহান ও তাদের অপর সাথী অপেক্ষা করে থাকে। সিগারেট দেওয়ার পর কোন কারণ ছাড়াই ট্রুপের লোকজন ছেলে তিনজনের উপর চড়াও হয়। তাদের মারধোর করা হয়, খালিদের প্রিয়তম বাইকটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। খালিদ এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। সেদিন হয়তো সবথেকে বেশি আহত হয়েছিল ১৬ বছরের বুরহান, তবে সেই আঘাত অদৃশ্য - এমন এক আঘাত যেটা হয়তো যে কোন সেলফ-রেসপেক্টিং তরুণই বোধ করবে যদি তাকে অকারণে মার খেতে হয়। ... ...
অবশ্য তাতে তাঁর কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। কারণ তিনি নিশ্চিতভাবেই জানেন, আজ থেকে কয়েক দশক পরে যখন পূর্ব কলকাতার এই জলাভুমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, যখন এই শহরটাও আর বাসযোগ্য থাকবেনা, তখন ঠাঁইনাড়া মানুষ তাঁর লেখা পড়ে জানবে এই আশ্চর্য বাস্তুতন্ত্রের কাহিনি। এও এক সত্যি রূপকথা। সত্যিই কি তাই হবে? সত্যিই কি আন্তর্জাতিক রামসর স্বীকৃতি পাওয়া এই জলাভূমি সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে? আমি জানি না। আমি কেবল স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি স্বপ্ন দেখি, তাঁকে মাথায় রেখে গড়ে উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, যেখানে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিয়ে হাতেকলমে গবেষণা করছে ছাত্রছাত্রীরা। দেশ বিদেশের বিভিন্ন শহর থেকে প্রতিনিধি দল আসছে এই মডেল রূপায়ণের জন্য। রাজ্যের নানান প্রান্ত থেকে স্কুলের ছেলেমেয়েরা আসছে শিক্ষামূলক ভ্রমণে । আমি স্বপ্ন দেখি, এই জলাভূমি মুক্ত রাখার জন্য এক বিশাল মিছিল, যাতে পা মিলিয়েছে সেই তরুণ প্রজন্ম যারা সেদিন ক্যাম্পাস মুক্ত রাখার জন্য পথে নেমেছিল। এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি হয়েছে রাস্তার অন্য পারে পূর্বকলকাতার জলাভূমি, আমি স্বপ্ন দেখি, বিশাল মাল্টিমিডিয়া প্যাভিলিয়ান। হাতুড়ি ঠুকে মেলার উদ্বোধন করছেন জলাভূমির একনিষ্ঠ ভাষ্যকার। কলকাতার নতুন লোগোয় হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া আর শহিদ মিনারের বদলে এখন থেকে জলজমিনের ছবি। ... ...
বন্দনা মহাকুর, বয়েস ১৫ বছর। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন। হতদরিদ্র বাবা মার ৫ মেয়ে, অথচ গায়ে কাজ নেই। তাই কলকাতায় সব মেয়েকেই কাজে পাঠানো। ছোট মেয়ে বন্দনাকে দমদম শেঠবাগান এর শ্রাবণী সাহা সঞ্জয় সাহার বাড়িতে ২৪ ঘণ্টার বাচ্চা দেখার কাজে দেয় মাস ছয়েক আগে। মাইনে পাওয়ার কথা ছিল পনেরো’শ। কাজে ঢোকার দেড় মাসের মাথায় একবারই কলকাতার বাসন্তি কলোনিতে মেজোদিদির বাড়ি এসেছিল বন্দনা। দিদির সাড়ে চার বছরের ছেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে- একদিনের জন্য। মাইনেও মিলেছে মাত্র একমাসের। একটা মেয়ের পেটের চিন্তা করতে হচ্ছে না তাতেই খুশি ছিল গরীব বাবা মা। কিন্তু গত মাসে হঠাত ফোন, বাবা-মা-দিদিকে ডেকে শ্রাবণী সাহা জানায়, তোমাদের মেয়ে দেড় লাখ টাকার সোনার গয়না চুরি করে তোমাদের দিয়ে এসেছে। ... ...
যত ঘুরছি, কথা বলছি, জানছি, শিখছি, একটা বিষয় পরিস্কার হচ্ছে। ফৌজি-কৃত ভায়োলেন্স এবং মাইনিং-এর মধ্যে একটা আলবাৎ-কোরিলেশান রয়েছে। যে সব জায়গায় মাইনিং আরম্ভ হয়, সেই সব অঞ্চলে তার আগ-আগ দিয়ে বন-বাদাড় সাফ করে গড়ে ওঠে আধাসামরিক ক্যাম্প। ক্যাম্প বলতে মূলতঃ কাঁকের ও নারায়ণপুর জেলায় বর্ডার সিক্যুরিটি ফোর্স এবং সশস্ত্র সীমা বল এবং বস্তার, দান্তেওয়াড়া, সুকমা, বীজাপুর জুড়ে সি-আর-পি-এফ, মূলতঃ তাদের ‘এলিট’ শার্প-শ্যুটার কোব্রা ব্যাটেলিয়ন। বস্তার সম্ভাগ দেশের কোনো বর্ডারের ধারেকাছে নয়, তাই বি-এস-এফ বা সশস্ত্র সীমা বল এ’খানে কি করছে তা সভ্রেনেরই মালুম। ... ...
কিন্ত ইতিমধ্যেই বাঙলায় মুসলমান এবং হিন্দু উৎখাত শুরু হয়ে গিয়েছে । দেশভাগের অনতিপূর্বে এবং পরে কুখ্যাত কোলকাতা কিলিং এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের নিজগৃহ এবং নিজভূমী থেকে উৎখাত করা শুরু করে । তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি সরকার মুসলমানদের জীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তারক্ষায় পূর্ণ রূপে ব্যর্থ প্রমাণিত হন । ঘন ঘন মুসলমান বস্তিতে আগুণ , হত্যার ঘটনা এই ব্যর্থতা এবং উদাসীনতার অন্যতম উদাহরণ । প্রকৃত অর্থে এ কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিলোনা বরং মুসলমানদের ওপর একতরফা আক্রমণ এবংসরকারী নিস্ক্রিয়তার ইতিহাস । এই ক্রমাগত দাঙ্গার ফলে এবং ভয়ঙ্কর ভয়ের পরিবেশে পশ্চিমবঙ্গের বিপুল পরিমাণ মুসলমান প্রাণ বাচাতে গৃহত্যাগী , দেশত্যাগী হতে বাধ্য হতে থাকে ।দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধিষ্ণু মুসলমান সম্প্রদায় নিরাপত্তার খাতিরে হয় শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে অথবা সদ্য গঠিত পূর্ব পাকিস্তানে দলে দলে চলে যেতে থাকেন । ... ...
এই সব তথাকথিত টাউনে যারা হোমড়া চোমড়া, তাদের মোটমাট প্রত্যেকেই অনাদিবাসী, গরিষ্ঠাংশের তেল—বনোপজ-লকড়ির ব্যবসা। (নুনটা জঙ্গল থেকে লুঠ করা ব্যবসায়িক-ভাবে অপ্রয়োজনীয়, কারণ আপাতত বিশ্ব-বাজার ছেয়ে আছে সৈন্ধবলবণে, জঙ্গলের বিভিন্ন গ্রামে থাকা আদিবাসীদেরও মুখিয়ে থাকতে হয় সমুদ্র থেকে তোলা নুন কবে বাজারে আসবে, তার উপরে। বস্তারের ধারেকাছে তো সমুদ্র নেই। বস্তারিয়া কৌম-প্রাকৃত ফুড সিস্টেমে ইতিহাসের কতটা স্রোত-ঢেউ-বাতাসিয়া-লুপের ফলে, মলয়াদ্রি বা সহয়াদ্রির উপকুলবর্তী জঙ্গল থেকে আসা মানুষেরা সৈন্ধব লবণ নিয়ে এসেছিলো, অথবা কত শতাব্দী-সহস্রাব্দের সৈন্ধব লবণের খাদ্য-প্রাকৃতিক বা ফুড-কালচারাল হেজিমনির বশবর্তী হয়ে রক-সল্ট ছেড়ে সৈন্ধব লবণ দিতে শুরু করল রান্নায়, আন্দাজ দুষ্কর।) তবে এই সমস্ত হোমড়া চোমড়ারা কেউই বস্তার তো ধূস্তরি মায়া, এক বা ম্যাক্সিমাম দুই জেনারেশন আগে কেউই হালের ‘ছত্তিসগড়’ এলাকাতেও থাকতোও না, থাকত মূলতঃ উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা বা মহারাষ্ট্রতে, অথবা নর্মদা নদীর উত্তর উপকুলের টেবল-টপ-সমতলময় ডেকানিয় উত্তর-মধ্যপ্রদেশে, মানে যেইখানে গোণ্ডওয়ানাল্যাণ্ড মিশে গ্যালো অ্যাংগোরাল্যাণ্ড, সেইখানে। ... ...
তত্ত্বগতভাবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী সমস্ত নাগরিক আইনের চোখে এক হলেও মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই তাত্বিক অবস্থান বাস্তব অর্থে যে ভিন্ন ছিল তা প্রমাণিত হয় সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে । মুসলমানদের যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে তারা এদেশীয় নন । তাদের আনুগত্য বিষয়ে সদা সন্দিহান মনোবৃত্তির ফলে ভারতের ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস মুসলমানদের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ ***(পাদটীকা ) । ভারতের এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারী অ্যাডমিনস্ট্রেসানের উচ্চ পদে মুসলমান সংখ্যা অতি নগণ্য । শিক্ষা ক্ষেত্রের উচ্চ পদে মুসলমান অবর্তমান । ভারতীয় রেলে যত সংখ্যক মুসলমান কর্মরত তার ৯৭ % চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা ঐতিহাসিক সময় থেকে হিন্দুদের তুলনায় সম্পদে, রাজনৈতিক ক্ষমতায় এবং শিক্ষায় পিছিয়ে থেকেছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে হিন্দুরা ছিল জমিদার আর মুসলমানেরা রায়ত এবং ভাগচাষী । কেবলমাত্র ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ এর সময়ে অবিভক্ত বাঙলায় মুসলমান মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী হিন্দুদের কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে দাঁড় করাতে পেরেছিল । মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র এবং ব্রিটিশ প্রবর্তিত কিছু সংরক্ষণের সুবিধা ,সাথে মুসলিম লীগের রাজনীতি তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতার কিছুটা পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হয়েছিল , কিন্তু দেশ ভাগের পরে সমস্ত প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং শিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের সাথে সাথে স্বাধীন সেকুলার ভারতবর্ষে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের পরিবর্তে চলে আসে জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণ । ... ...
এই রাস্তার ওপরেই ক্ষমতা আয়েশে এসে মেশার সময় একটা এসইউভি নৃপেন রুইদাসকে শিকার করলো। তার বাঁ পাটা হাঁটুর তলা থেকে আক্ষরিক অর্থেই চুরমার হয়ে গেল। এমন ভাবে যে তাকে তুলে দূর্গাপুরের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় চামড়া আর মাংসের টুকরোগুলোকে রাস্তাতেই ফেলে আসতে হলো। এমার্জেন্সির ডাক্তারবাবুরও এরকম হুশহুশ করে রক্ত পড়ে যাওয়া রুগী আর তার মারমুখো সঙ্গীসাথীদের দেখে হাত পা ঠান্ডা হওয়ার যোগাড়। তবু মোটামুটি সাহস সঞ্চয় করে ব্যাখ্যা করলেন যে, রুগীকে বাঁচাতে হলে ছিঁড়ে যাওয়া রক্তনালিকাগুলোকে এক্ষুণি বেঁধে দিতে হবে আর তার ফলে ওই পা’য়ে রক্তচলাচল বন্ধ হবে। ... ...
মণিদাকে আমার মাঝে মাঝে মনে হত living Encyclopedia, এক অসামান্য গুরু, যার সংস্পর্শে আসা ভাগ্যের কথা। সেই সময় আমি প্রায়ই মণিদার সঙ্গে Beethoven এর বিখ্যাত Trio for violin, viola & cello শুনতাম। একদিন শোনার পর হঠাৎ মণিদা guitar নিয়ে একটা সুর ভাঁজতে লাগল আর আমি তা শুনে manuscript এ সুরটা scoring করতে লাগলাম। সৃষ্টি হল string orchestra র পরিবেশনায় সেই অবিস্মরণীয় মহীনের ঘোড়াগুলির গান 'ভালবাসি জোৎস্নায়' এর অসামান্য prelude, মণিদার magic voice, বুলাদার হাতের ছোঁয়ায় অনবদ্য guitar bass, তার সাথে বিশুর drumming-এর perfect sense of tempo, যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতিমধ্য “সংবিগ্ন পাখিকুল ও কলকাতা” বিষয়ক নিয়ে আমাদের struggle চলছে। লোকজন বলতে শুরু করেছে আমরা নাকি উন্মাদের দল। ... ...
নতুন কী লিখবো বলুন তো! আমি আপনাকে স্টেজে দেখিনি, আপনার নাকতলার দেড়তলা বাড়ির আড্ডা, দীপক মজুমদারের ‘বিসর্জন’-এ রঘুপতি আপনি, বাউলের আপনি, স্যাক্সোফোনের আপনি- কোনোটাই আমার জানা-চেনা নেই। আপনার বানানো ডকুমেন্টারি, ‘সময়’, ‘নাগমতী’ও দেখিনি।এদিক-ওদিক থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি ডিজিটাইজড কয়েকটুকরো মহীন, অ্যালবামের সঙ্গে বেরোনো বই, লাইভ শোয়ের রেকর্ডিং, আর চেনাশোনা লোকজনের কাছ থেকে মহীন-মিথের ভাষ্য, এতেই হাতড়ে হাতড়ে বোঝার চেষ্টা করি। বেসিক্যালি, আপনাকে নিয়ে, আপনাদের নিয়ে একটা লাইন লেখার জন্য আমি কোয়ালিফাই-ই করি না, অনেস্টলি। প্লাস, এগুলো নিয়ে এত এত কথা হয়ে গেছে... তবু, আপনাকেই মুরশিদ মানি, তাই, দু’হাজার সালের বইমেলায় ‘গৌতম’ বেরোনোর পাক্কা তেরো বছর পর আরেকটা বইমেলায়, কয়েকটা প্রশ্ন করি? উত্তর পাওয়ার জন্য ... ...
তখনই সবাই জানতে পারে যে, এই দু’মুখো যন্ত্রটি আদতে ফরেনের মাল। সাগরবালার শ্বশুর অর্থাৎ অজাত ফরেনের বাবা ফরেন শব্দটির ধ্বনিমাধুর্যে বিমোহিত হয়ে পড়ে। খেতে নিড়ানি দিতে দিতে, পিঠের দাদ চুলকোতে গিয়ে, এমন কী রাতে বিছানায় তার বউ মালতীকে সোহাগ করার সময় ফলুই বর্মন ‘ফরেন’ শব্দের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়। শব্দটি নিয়ে সে মুখের ভেতরে এধার ওধার করে। তখন ধানের গোছ, দাদনিসৃত রস ও মালতীর শরীরের উষ্ণতা পার হয়ে সে নতুন এক রকম সুখ টের পাচ্ছিল। মালতী সন্তানসম্ভবা সে ঠিক করে ব্যাটাছুয়া যদি জন্মায়, তবে তার নাম হবে ফরেন বর্মন। বিশেষত তার নিজের নাম ফলুই হওয়ায় ‘ফ’-এর বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এ-ও ঠাকুরের এক লীলা। ... ...