মুশকিল হলো ঈশ্বর কাকে কোন কথা দিয়েছেন তার তোয়াক্কা না করে সিদন, টায়ার থেকে (আজকের সাইদা, টায়ার- লেবানন) গাজা অবধি সাড়ে ছশো মাইল ব্যাপী সমুদ্রতীর বরাবর বহু মানুষ বাসা বেঁধেছেন কয়েকশ বছর আগেই। তাঁরা ব্যবসা বাণিজ্যে অত্যন্ত তুখোড়, তাঁদের নৌকো, জাহাজ পাড়ি দেয় বন্দরে বন্দরে। ফিলিস্তিনরা (যা থেকে প্যালেসটাইন শব্দটা এসেছে) সমুদ্র বাণিজ্যে অত্যন্ত সফল, উন্নত জাতি। গাজা ফিলিস্তিনদের বৃহত্তম বন্দর।হঠাৎ দক্ষিণ পশ্চিমের মরুভূমি থেকে হাজির হলেন অজস্র ইহুদি – এটা নাকি তাঁদের প্রতিশ্রুত দেশ। এখানে তাঁরা ডেরা বসাবেন। কে দিয়েছে এই প্রতিশ্রুতি? কোন ঈশ্বর? এ কোন আবদার? বললেই ছেড়ে চলে যাবেন তাঁদের বাপ পিতেমোর ভিটে? ... ...
আমার চোখে তখনো আলকাতরার বোঝা ভারী ওজন নিয়ে চেপে বসে আছে। কেমন যেন মনে হয় ফুসফুসের ওপরেও যেন অন্ধকার চেপে আছে। আমি জোরেজোরে শ্বাস নিতে নিতে আন্দাজে হাতড়ে চেয়ারে বসলাম। কিন্তু মাথাটা তখনও টলমল করছে। হেড ইনজুরির পর থেকেই আমার ব্যালান্সের অসুবিধা হয়। চোখে দেখতে না পেলে আরো বেশি। আমি বন্ধুদের গলা শুনতে পাচ্ছি । "এই তো চামচ পেয়ে গেছি", "হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো আমার জলের গ্লাস।" শুনতে শুনতে আমার মনে আরো ভয় ঘনিয়ে আসে -- সবাই সব পেয়ে যাচ্ছে। আমি যে অতলে সেই অতলে। আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি? ... ...
বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দ মঠ পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশের (১৮৮২ সাল) প্রায় ১৫০ বছর পরে আজ নতুন করে একথা বলার প্রয়োজন নেই যে যে সামান্য কয়েকটি পুস্তক সময়ের সীমাকে অতিক্রম করে আসমুদ্র হিমাচলকে প্রভাবিত করেছে – বিশেষ করে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংগীত বন্দেমারতম্ – শুধু ভারতে কেন, সমগ্র বিশ্বেই এর তুলনা মেলা ভার। James Campbell Ker-এর কথায় – “The greeting “Bande Mataram became the war-cry of the extremist party in Bengal; it was raised at political meetings to welcome the popular leaders and ... also occasionally as a shout of defiance of Eropeans in the street.” ... ...
ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিলেন কিনা তা এই কাহিনীর উপজীব্য নয়। ট্যাঙ্কশংকরের ভর হয়েছিলো, এমন একটা কথা এসেছে। এখন, রেট্রোস্পেক্টিভ বিশ্লেষণে মনে হয়, যেটাকে ভর বলা হচ্ছে সেটা আসলে বাইপোলারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কিম্বা রোদ লেগে বায়ু চড়ে গিয়েছিলো, পিত্ত প্রকুপিত হয়েছিলো, এসবও হতে পারে। মোদ্দা, ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে আবির্ভুত হয়ে লুঙ্গি কোমরে তুলে অর্থাৎ নিচের যন্ত্রপাতি বার করে কতক্ষণ নেচেছিলেন সে সব উদলা প্রসঙ্গে এ কহানি বিলকুল ঢুকবে না। হতে পারে, তিনি এখনো নাচিতেছেন। ... ...
একটা ঢিল ছোড়া যাক। ঢিলটা কাক-ওড়া সরলরেখা ধরে যেতে থাক। যদিও কাকেরা সরলরেখায় ওড়ে, বিষয়টা এমন, মানে, প্রামাণ্য নয়। বিষয়টা কাক নয় ঢিল, ঢিলটা মহাজাগতিক দ্রুতগতিতে সাঁই সাঁই ধাবমান, সরলরেখা কিম্বা প্যারাবোলায়। সরলরেখা, প্যারাবোলা বা নেহায়েৎ ছাপোষা বক্ররেখা ধরে যেতে যেতে ঢিল টাল খেতে বা লড়খড়াতে পারে, নাও পারে। বিষয়টা সেটা নয়। মানে, ঢিলটা কি আদৌ আছে? থাকলেও সেটা কি দৌড়োচ্ছে? আরো মোদ্দা কথা যেটা, সেটা কি ছোড়া হয়েছে? এ সব প্রশ্নের মীমাংসা ধীরে ধীরে হবে, কিম্বা আদৌ, কখনোই হবে না। ... ...
সমুদ্রের দিক থেকে প্রবল হাওয়া উড়ে আসছিল। ঋষির মাথায় অবিন্যস্ত চুলগুলো এলোমেলো উড়ছিল সেই হাওয়ায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশে একবার ভাল মতো চোখ বুলিয়ে নিয়ে ও বলল ‘এক্সেলেন্ট।’ মাঝারি মাপের একটা জমির ওপর হোমস্টে-টা। তিনদিকে ছোট ছোট ঘর। মাঝখানে একটুকরো ঘাসে ঢাকা লনমতো। বসে বিশ্রাম নেবার জন্য বা সময় কাটানোর জন্য গোল খড়ের চালায় ছাওয়া জায়গা। হোমস্টের পেছনে বড় বড় কেওড়া গাছের জঙ্গল। গড়ান গাছও আছে। এই হোম স্টে থেকে বিশ/পঁচিশ মিটারের মধ্যেই সমুদ্র। সবসময়ই সামুদ্রিক হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এই হোমস্টে-এর গা ছুঁয়ে। এমন হাওয়ায় অবিন্যস্ত এলোমেলো হয়ে যেতে খুব ভাল লাগে। চতুর্দিকে সবুজের পাহারাও খুব সুন্দর। ... ...
ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে বরানগরের স্কুল থেকে বীণা সিনেমায় টেন কমান্ডমেনটস সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইংরেজি প্রায় কিছুই বুঝিনি ; দুর্দান্ত সব সিনারি মনে থেকে গেছে। বাইবেলের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয়। সে কথা দাভিদকে বলার মানে হয় না। এই গ্রন্থের যে নতুন পুরনো দুটো আলাদা খণ্ড আছে জানি কিন্তু কিছু মানুষ কেবল প্রথমটা পড়েন,দ্বিতীয়টা পড়া মানা আর কিছু মানুষ দুটোই পড়েন সেটা জানতে বহু বছর লেগে গেছে। জ্ঞানোদয় হলো এক ইনটার ব্যাঙ্ক কুইজ কনটেস্টে। আমার দলে গুরকান এন্সারি, তুর্কি এবং জশুয়া কোহেন। একটা প্রশ্ন এলো – যিশুর ভাইয়ের নাম কি? জশের সাহায্য খুঁজলাম। সে বললে বস, আমি তো কেবল আমাদের বাইবেলটা পড়েছি! অন্যটা নয়! ... ...
আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস রাখি—মঙ্গলবার বজরংবলির উপোস, শনিবার শংকর ভগবানের। তবে এই সব উপোসে চা এবং ফল খাওয়া যায়; অন্ন, মানে ভাত-রুটি-তরকারি, না খেলেই হল। সাধারণতঃ আমি কাঠগোড়া বাসস্ট্যান্ডে সিন্ধি ভদ্রলোকের একটা বড় ফলের দোকান থেকেই কিছু কলা, আপেল, সফেদা ও মুসম্বি কিনে নেই। আজ সেটা হতে পারে নি। ওখানে বিলাসপুর কোরবার বাস অন্ততঃ দশ মিনিট দাঁড়ায়। ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, খালাসিরা চা-জলখাবার খায়। কিছু যাত্রীও বাদ যায় না। ফলের দোকানের পাশেই গুপ্তা হোটেল। সেখানে চা খেয়ে সবাই পাশের গলিতে যায় তলপেটের চাপ হালকা করতে। ... ...
নিজের নাম লেখা কার্ড দিয়েছিলো পরিস্থিতি। আইভরি ফিনিশের ওপর কালো টানা অক্ষরে লেখা। 'ব্ল্যাকআউট ডাইনিং'। নামটা মনের মধ্যে বেশ বড় মাপের একটা কৌতুহলের ঢেউ তোলে। শুধু নামে আজকালকার দিনে আর কী-ই হয়? পরিচয় চাই না একটু? তা পরিচয়ও দিয়েছিলো বই কি। নাহলে লোকে আসবে কেন ওর কাছে? নামেই অনেকখানি বলা আছে, তবু কনসেপ্টটা বোঝা দরকার। এটা একটা রেস্টুরেন্ট যেখানে তোমাকে খেতে দেওয়া হবে সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে। ইন্দ্রিয়দের মধ্যে আমরা সচরাচর সবথেকে বেশি যাকে কাজে লাগাই সেই চোখকে এখানে ইচ্ছে করেই অকেজো করে দেওয়া, যাতে খাবারকে পুরোপুরি বুঝতে তোমায় বাকি ইন্দ্রিয়দের সাহায্য নিতে হয়। "দেখবেন আজকাল", পরিস্থিতি বলে চলে, "আজকাল বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে মানুষ খাবারের থেকেও খাবারের ছবি তোলার ওপরে বেশি মন দেয়। ইনস্টা-ওয়র্দি হলো কিনা। আমি যে খাচ্ছি তা সবাই জানলো কিনা। কিম্বা টেবিলে বসে সবাই যে যার ফোনের পর্দাতে বন্দি হয়ে থাকে। খাবার আসে, খাবার যায়। কেউ তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়না। এই অন্ধকারে কি আপনি খাবারকে 'খাবার' হিসেবে চিনতে শিখবেন? সেটাই দেখার। হা হা, স্যরি, সেটাই 'না দেখার'।" ... ...
আরও কথা বল বরং, আরও দৃশ্য তৈরি হোক, মুহূর্তের গর্ভে সারি সারি বিন্দু বিন্দু মুহূর্তের অণু-পরমাণুগুলি। বিশ্বাস করো, এখনও জমাই আমি পাগলের মতো তোমার সঙ্গে কাটানো সময়গুলি। প্রতিটি বাক্য, তার মধ্যের আলাদা আলাদা শব্দরা, তার উচ্চারণ, তখন কী বৃষ্টি হচ্ছিল না কি ফুরফুরে হাওয়া, কেমন ছিল এই কালভার্টের পাশে অল্প ঘাসগুলি, ইটভাটি থেকে ধোঁয়া উড়ছিল নাকি তখন, ফড়িং উড়ছিল কি না। জানো মস্ত এক রাজ্য বানিয়েছি অন্দরে। এইসব মুহূর্ত নিয়ে। তুমি শহরে ফিরলে আমিও টুপ করে ওখানে বেড়াতে চলে যাই। এক একটা দেখা হওয়ার দিনের এক একটা গুমটি দোকানঘরের মতো সেই চুরানব্বই সালের এগারোই নভেম্বর থেকে পর পর সাজানো। ঈশ, যদি তোমাকে দেখানো যেত! ... ...
শীতের রাতে আগুনে তিনজোড়া হাত উপুড় হয়ে আছে। উত্তুরে হাওয়ায় চাদরমুড়ি দেওয়া তিনটে শরীর আগলে থাকে আগুনকে। তিনজোড়া চোখে তার ছায়া কাঁপে। কাঠ ফাটার পট পট শব্দ। জমা খড়কুটো থেকে অল্প তুলে আগুনে দিলে চিড়বিড়িয়ে ওঠে। দূর হাইওয়ে ধরে শব্দ করে ছুটে যাচ্ছে ট্রাক। তাদের ব্রেক কষার আওয়াজে মিলন পিয়াসি হস্তিনীর ডাক ভ্রম হয়। ধীরেই কথা বলে তারা। ফিসফিস হাসি। রাত গভীর হু হু নীরব। জোরে শব্দ উঠলেই একটা স্থির ভেঙে টুকরো হয় বুঝি। শীত আর আগুন ঘেঁষাঘেঁষি থাকলে শরীর-কথায় ওম চায়। কেউ বলে ওঠে, - একজন করে আমাদের গোপন গল্পগুলো বলি চল আজ। শর্ত হলো, যে গল্প এর আগে কোথাও করিনি। অবসর পাইনি, অথবা তুমুল সংসারী, শান্তি বিঘ্ন হোক চাইনি, কিংবা বেমালুম ভুলেই ছিলাম,মনে করতে চাইনি। আগুনে কুটো পড়ে কিছু। হাইওয়ে ভেঙে আরও কয়েকটি ট্রাকের গর্জন দূরে মিলায়। একজন কেউ তার গল্পটা শুরু করবে এখন। ... ...
"ইংরেজের যতোই টেকনিকাল জ্ঞান থাকুক না কেন, জমির মালিক কনস্তানতিনোপেলের অটোমান সুলতান ; তিনি খামখা কূটবুদ্ধি ইংরেজকে রেল লাইন পাতার জন্য জমি দেবেন কেন? তিনি বললেন কেটে পড়ো, দান খয়রাতি করলে রাজ্য চলে না। ততদিনে ইংরেজ সেই লাইনের মাপজোক, এমনকি কোন খানে লাইন পড়বে তার অঙ্ক অবধি কষে ফেলেছে। খরচা হয়েছে, উশুল নেই। এবার তারা নরম সুরে ধর্ম সহিষ্ণু সুলতানের কাছে ইংরেজ (এবং কিছু ফরাসি) আবেদন জানাল, জাহাঁপনা, আপনি ক্রিস্টিয়ান, ইহুদিদের ধর্মস্থলের মেরামত করে দিয়েছেন, আপনার মহিমা অপার। একবার ভেবে দেখুন যাঁদের জন্য আপনার এই অসামান্য অবদান, তাঁদের, মানে ইহুদি ক্রিস্টিয়ান তীর্থযাত্রীদের পুণ্য শহর জেরুসালেমে পৌঁছুনোর পথে অনেক ঝকমারি, জাহাজ থেকে নেমে দুর্গম গিরি পার হতে হয়। সেই সব তীর্থ যাত্রী যদি জাফা (তেল আভিভের পত্তন এই মাত্তর ১৯০৯ সালে ; জাফা অতি প্রাচীন শহর) বা হাইফাতে জাহাজ থেকে নেমে ট্রেন ধরে সিধে জেরুসালেম যেতে পারেন তাহলে যাত্রী সংখ্যা ও সুলতানের তিজউরিতে অর্থাগম বাড়ে (জিজিয়া কর অবিশ্যি ততদিনে উঠে গেছে)। এই কাহিনি শুনে সুলতানের উজির বললেন হঠাৎ ইংরেজ ফরাসি এ তল্লাটে কেন হাজির হলেন তাঁরা নিজের রাজত্ব সামলান গিয়ে। এ হলো গিয়ে ১৮৬৫ সালের কথা।" ... ...
যশপতি সিংহের বুকের মধ্যে অনেকগুলো কাশফুল ডিজে মিক্সের তালে নাচছিল। পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। আজ আমদানি ভালই হল। দু'লাখ লাগিয়েছিলেন সকাল সাড়ে নটায়। বারোটার মধ্যেই বেড়ে হয়ে গেল দু'লাখ আশি। মানে ফর্টি পার্সেন্ট। শেয়ার বাজার কি জয়! প্রাণ ভরিয়ে ঝিঙ্গালালা ধ্বনি বাজছিল। অ্যাপ থেকে অর্ডার করে বিখ্যাত দোকানের কিং সাইজ বিরিয়ানি আনালেন। সাঁটিয়ে খেলেন। সঙ্গে ছিল মাটন চাঁপ, স্পেশাল রায়তা আর ফিরনি। তার পরে গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্ক ঢাললেন। দু-প্যাকেট জলজিরা মেশালেন। গ্লাসের অন্তঃস্থল থেকে উঠে এল আনন্দ বুড়বুড়ি। ... ...
সাফ সুতরো পবিত্র সমাধির গিরজেতে দেখা দিলো এক ধর্ম সঙ্কট। যিশুকে ঈশ্বরের সন্তান জ্ঞানে বন্দনা করার অধিকার সকল ক্রিস্টিয়ানের। কিন্তু তাদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধল সেই বন্দনার আচরণ প্রক্রিয়া নিয়ে - কে কোথায় কি ভাবে কোন ঘণ্টা বাজিয়ে কোন ধুনো দিয়ে কবার পাখা নেড়ে দিনের মধ্যে কতবার প্রার্থনা করবে তাই নিয়ে লড়াই চলে ; দেবস্থানের ঠিক কোন কোণায় কে দাঁড়াবে তার মীমাংসা হয় নি, এই নিয়ে মারামারি হয়েছে প্রভুর ক্রুশের সামনে। ধর্মের এই কুরুক্ষেত্রের লিগে ছজন প্লেয়ার, ছয় পুরুত, পূজারী পক্ষ – গ্রিক অর্থোডক্স (তাদের গলা সর্বদা উঁচুতে, আমাদের ভাষায় বাইবেল লেখা হয়েছে, বাবা, নইলে কি কেউ জানতে প্রভু এয়েছেন?), আর্মেনিয়ান চার্চ (দুনিয়ার পয়লা ক্রিস্টিয়ান দেশ, যখন বাকিরা পুতুল পুজোয় ব্যস্ত), মিশরের কপটিক (প্রভুর বাল্যকাল কেটেছে আমাদের দেশে), ক্যাথলিক (রোমের সে মহান গিরজে কে বানালো শুনি?), ইথিওপিয়ান চার্চ (সলোমনের বউ আমাগো দ্যাশের মাইয়া), সিরিয়ান চার্চ (ক্রিস্টিয়ানের পয়লা দীক্ষা, দামাস্কাসের পথে?)। প্রত্যেকে চান তাঁদের আপন নিয়ম মাফিক এই গিরজের পরিচালনার ভার এবং চাবি। ... ...
এ'লেখাটি কোনও 'ম্যানিফেস্টো' নয় জানবেন। এটি একটি শোকে ভেজা ছেঁড়া তমসুক মাত্র। প্রলাপ। আগুন, সে আর যথেষ্ট কই ধরাবার? এখন তো প্রিয় সব শবদেহ'ই অর্ধদগ্ধ! ... ...
সবেমাত্র চল্লিশের চৌকাঠ পেরিয়েছেন কেপলার। 'প্রবাবিলিটি' শব্দটা তখনও কেবলই লুডোর ছক্কাতেই সীমাবদ্ধ। গণিতশাস্ত্রের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থায়ী জায়গা করে নেয় নি। 'স্ট্যাটিস্টিক্সও' গণিতগর্ভের অঙ্কুর। ... ...
কতটা বিভক্ত এই দেশ? তেল আভিভ হতে ডেড সী যাবার মোটরওয়েতে বারবার চোখে পড়বে বড়ো অক্ষরে লেখা A B C : এটি কোন বর্ণ পরিচয়ের পাঠশালা নয়। এই অক্ষর মালা নির্দেশ করে কোন অঞ্চল কার তাঁবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু বছর পরেও ব্রিটিশ ফরাসি আমেরিকা এই তিন মিত্র শক্তি শাসন করেছে পশ্চিম বার্লিন। আপনি হাঁটছেন, হঠাৎ দেখলেন একটা মানুষের সাইজে সাইনবোর্ড – তাতে লেখা ‘আপনি ফরাসি সেক্টর পরিত্যাগ করিলেন’। এবার আপনাকে আরেকটি সাইনবোর্ড আমেরিকান সেক্টরে আপনাকে স্বাগত জানায়। মিত্র শক্তির এই দফায় দফায় দেওয়া নোটিসে আপনার চলা ফেরার কোন অসুবিধে হতো না কারণ কেউ আপনার পাসপোর্ট ভিসা পরীক্ষা করতে চায় নি ( যদিও সে ক্ষমতা তাদের ছিল। এক সেক্টর ছেড়ে অন্য সেক্টরে প্রবেশ করলে কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে না, কেবল পুলিশের, সৈন্যের পোশাকটা বদলে যায়। মুশকিল ছিল সোভিয়েত সেক্টর নিয়ে, সেখানে উঁচু দেওয়াল। ... ...
মিষ্টির ক্ষেত্রে বঙ্গ ও কলিঙ্গদেশ বাকি উপমহাদেশের তুলনায় আলাদা। এই দুই জাতি ছাড়া ভারতের আর কেউ বড়ো একটা (বা আদপেই) মিঠাইতে ছানার ব্যবহার করে না। আমাদের জিভে সঞ্চারিত রসের ওপর যদি ঐকান্তিক বিশ্বাস রাখা যায় তাহলে মানব সভ্যতার ইতিহাসের অনেক সত্য আপনি উন্মোচিত হতে পারে। কারণ রসনা এমন এক জায়গা যেখানে আমি আপনি সম্পূর্ণ নগ্ন। এই শিল্প আস্বাদনের ক্ষেত্রে কোন ভন্ডামি চলে না। আপনি লুচি, আলুর দম আর রসগোল্লা খেয়ে খাঁটি বাঙালিয়ানার ঢেঁকুর তুলবেন ভাবলেন – তা হবে না। আপনার বাঙালিয়ানার উদগারের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াবে পর্তুগীজ আর ওলন্দাজরা। রসগোল্লা আবিষ্কার নিয়ে এই যে উড়িষ্যা আর পশ্চিমবঙ্গের এত লড়াই ঝগড়া – অথচ তার মূল উপাদান এসেছে ইউরোপের ভিয়ান থেকে। খাঁটি দেশজ কালচার হিসেবে আর যারাই দাবী তুলুক, বাংলার অত্যন্ত গর্বের মিষ্টি চর্চা সেই অঙ্গীকার করতে পারে না। কারণ মিষ্টিতে বাঙালি তার স্বাতন্ত্র্যের জন্যে ইউরোপের কাছে ঋণী। (বাকি রেনেসাঁস থেকে কমিউনিজম – ভিনদেশী না বাঙালি বলেই সম্ভব তা বিদ্বজ্জনেরা বলবেন।) ... ...