কেমন করে সময় দেখতাম আমরা? সত্তর দশকে? বাড়িতে প্রথমে একটাই ঘড়ি। যে ঘড়ি বাবা ষাট বছরের বেশি সময় পরেছেন। পরে দাদার একটা ঘড়ি হয়। কিন্তু দাদাও তো বাইরে থাকেন। আমরা সময় মেলাতাম নানা পদ্ধতিতে। একটা ছিল পাশের বাড়িতে একটা দেওয়াল ঘড়ি ছিল হরিণের শিংয়ের পাশে। কাঠের পেন্ডুলাম দেওয়া ঘড়ি। সবসময় যেতে ইচ্ছে হতো না। একটা তো মায়ের ওঠা। মা কী করে উঠতেন মা-ই জানেন। এছাড়া ভোর চার ১৫ মিনিটে ফজরের আজান। সবসময় শুনতে পেতাম না। দুই, সকালে গুঁড়ুভাইয়ের হাঁক ডাক করে আসা। ঠিক ছটায়। কই, শাশুড়ি চা কই? তিন, নোটনমণি ফুলের ফোটা। ঠিক নটায়। চার, ঝাঁটার কাঠির ছায়া মেপে। পাঁচ, বালি ঘড়ি করে। ... ...
বিয়ের দিন স্থিরই হয়ে গেল, শুভস্য শীঘ্রম যেমন বলেছিল আকবর। জ্যৈষ্ঠ পেরিয়েই। আষাঢ়ের তেসরা। আসমতুন্নেসা মেয়েকে নিয়ে এখন এই বাড়িতেই থাকছে, বিয়ে মামাবাড়ি থেকেই হবে। নজরুলের আত্মীয়স্বজনদের খবর দেওয়া হবে কীভাবে, জানতে চাইলেন আলতাফ আলি। আমার কোন আত্মীয় নেই, বলে নজরুল, কুমিল্লার সেনগুপ্ত পরিবারই আমার আত্মীয়, বিরজাসুন্দরীই আমার মা, ওঁদের জানান। আলতাফ বলে, তাহলে কুমিল্লায় চলেই যাই, ওঁরা তো আমাদেরও আত্মীয়, বিশেষ করে আকবরের আর আমার। নজরুল বলে, যাবার আগে আমাকে বলবেন, আমি একটা চিঠি লিখে দেব মাকে। ... ...
গোদার বিপ্লব। গোদার নাশকতা। গোদার ধ্বংস, সৃষ্টি, স্পর্ধা সব কিছুই। বিংশ শতাব্দী জ পল সাত্র, বব ডিলান বা বিটলস ছাড়া এরকম সুগভীর চুম্বনের স্বাদ খুব একটা পেয়েছে বলে মনে করা যায় না। তাঁর যাবতীয় রহস্য, দুর্বোধ্যতা, ইমেজ সমস্ত কিছু নিয়ে পাতার পর পাতা লেখাপত্র হয়েছে, তুফান উঠেছে চায়ের কাপে, গবেষণা কাটাছেঁড়া বিতর্ক কিছুই নেই যা এই নামটিকে ঘিরে হয়নি। তিনি সিনেমার শতাব্দী স্পন্দিত নায়ক। তাঁর অরৈখিক সম্পাদনা, কাহিনী বিরোধিতা, জাম্প কাট, প্রতিবিল্পব ও প্রতিসংস্কৃতি প্রায় রূপকথার মতন পঠিত। আজ বিয়োগের মুহূর্তে সেইসব আলোচনা করে আমি এই শূন্য দেবস্থানে বিলাপ করতে চাইনা। কেবল রইল গোদার নামক কোন এক ধ্রুবতারার সাথে একুশ শতকের একটি তাল-ভোলা যুবকের আলাপ আর সম্পর্কের কিছু চিরকুট। ... ...
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতে পারে না। দেশের সবথেকে নিচুতলার মানুষের সুখ-দুঃখকে না ছুঁতে পারলে ‘ভারত জোড়ো’ কেবলমাত্র একটা স্লোগান হয়েই থেকে যাবে। এটাও আমরা মাথায় রাখছি যে, ‘ভারত জোড়ো’-কে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হলে আমাদের একটি রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। সেটা হল দেশের মানুষের রোজগার সংক্রান্ত পরিসংখ্যান। গত ২ বছরে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে, কিন্তু একই সময়ে মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে ৩ গুণ এবং আদানির সাম্রাজ্য ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, দেশের বিত্তশালীদের মধ্যে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে শামিল হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে বিদেশে বসত গড়েছে। এইসব ধনী ভারতীয়রা আজকাল দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছে। এছাড়া ‘হাম দো হামারে দো’, এটাই তো এই সরকারের অর্থনৈতিক নীতি। মোদি-শাহের এই আদানি-আম্বানিমুখী অর্থনীতিতে দেশ দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ না করে ভারত জোড়ার স্বপ্ন দেখাও বৃথা। নজিরবিহীন বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশার এই সময়ে ভারত ঐক্যবদ্ধ করার অর্থ হবে লুঠেরা-ডাকাতাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষকে অর্থনীতির কেন্দ্রেস্থলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। গর্বকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করা। ... ...
– জেঠিমা, তার মানে পুতুল দিদা যে এমন হৈ চৈ করে, সেটা মনের দুঃখ ঢেকে রাখার জন্য? এসব এত কিছু তো জানতামই না। – মানুষের মনের খবর কেই বা রাখতে পারে বাবু। – জেঠিমা, তুমি মোহনবাগানের গল্প বলতে গিয়ে বলেছিলে, স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন কুমুদিনী। পুতুলদিদাও কি ভেঙে পড়েছে? – এসব কথা তো আর কাউকে জিজ্ঞেস করা যায় না। বুঝে নিতে হয়। তবে আগের পিসি আর এখনকার পিসির মধ্যে কিছুটা তফাৎ তো আছেই। তোর জেঠুও ঐজন্য সবসময়ে দেখিস না পিসির সঙ্গে টরেটক্কা করে যায়? আগের পিসিকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আর রইল কুমুদিনীর কথা। নিজের কথা তিনি নিজেই বলে গেছেন। ... ...
বাবিসা সর্দারের গ্রামে থাকাকালীন, হ্রদের পশ্চিম তীরের থেকে এক মিশ্র-বর্ণের আরব এসে পৌঁছায় ও খবর দেয় যে মাজিতুর একটা দল তার সব কিছু লুঠ করেছে। ঘটনাটা এমন একটা জায়গায় ঘটেছে যেটা তারা এখন যেখানে আছেন তার থেকে কমপক্ষে ১৫০ মাইল উত্তর-বায়ু (উত্তর-উত্তর-পশ্চিম) কোণে। ডাক্তার ও জোহানাদের সর্দার মুসা দু'জনেই সেটা খুব ভাল করে জানেন। মুসা খুব আগ্রহ নিয়ে আরবদের গল্প শুনেছিল আর সেটা পুরো বিশ্বাস করেছিল। তার অবশ্য অন্য কারণ ছিল, সেটা এখনই বলব। ... ...
নব্বই সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সে পরিবর্তনের আঘাত এত দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল যে বিশ্বের তাবড় বড় অনেক রাষ্ট্র ঝাপটে পড়েছে। অর্থনীতি মুচড়ে গেছে। রাষ্ট্রের সীমানা আর জনগণের নাগরিকত্ব বদলের সঙ্গে সঙ্গে দেশহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। পুঁজিবাদ নিপাত যাক বলে লাল ঝাণ্ডার পাণ্ডারা আর ফান্ডা দেখাতে পারছে না। বিপ্লব হিমঘরে। নেতাদের চরিত্র পালটে সম্পূর্ণ বিপরীতে এসে ঠেকেছে। সমাজতন্ত্র ভাগাড়ে আর ধর্মনিরপেক্ষতার মরণ হয়েছে। গণতন্ত্র সেজে উঠেছে ভোগবাদী আভিজাত্যে। এর সঙ্গে ধম্মো ধম্মো বোল উঠেছে আকাশ বাতাস মাটিতে, নদীতে। আজকাল দেখি অনেকেই স্ত্রী সহবাস, স্বামী সহবাসের দোআ মুখস্থ করার পাশাপাশি হাগতে যাওয়ার দোআও মুখস্থ করে ফেলছে। মন্দিরা শঙ্খ বাজিয়ে তিন বেলা সাড়ম্বরে পূজা করছে। পাঁচ বেলা পড়ে নামাজ পড়ে কপাল ঘষে ঈমানী ছাপ বসাচ্ছে। তবে ধর্ম যত জোরে শোরে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, ঘরে ঘরে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দাঁত শূলাচ্ছে তারচে বেশী জোরে নৈতিকতা পালিয়ে গেছে। মানুষ বেশি বেশি মুসলমান হয়েছে। বেশি বেশি হিন্দু হয়ে গেছে। ... ...
আমি বলছি না, যে ওপরে সেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত সত্য। আসুন আমরা অনুমান করি যে এইগুলি অসত্য ছিল, এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারপরেও, যখন মাটির তলায় চাপা দেওয়া এইসব অভিযোগগুলোকে ওপরে তুলে এনে তা জনসমক্ষে পেশ করা হয় এবং আইনি প্রকিয়ার মাধ্যমে কয়েক ডজন নথিপত্র, তথ্য, উপাত্ত, প্রমাণ-সহ সেগুলো হাজির করা হয় – তখন আমরা কি আশা করতে পারি না, যে আদালত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি ফয়সালা করবে, যাতে কোনো ভুলত্রুটি না থাকে? আমরা যদি ধরেও নিই, যে অভিযোগগুলি সত্য হলেও, সংশ্লিষ্ট বিচারকদের আচরণ বাইরের থেকে প্রভাবিত হয়নি – তারপরেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং আর্থিক নথি প্রকাশের নির্দেশিকা নিয়ে আসতে এই মামলাগুলি খতিয়ে দেখা কি সাহায্য করবে না? এবং যদি এই অভিযোগগুলিতে সত্যের কোনো উপাদান থেকে থাকে তবে এই ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু শুনানি কি বিচারবিভাগীয় দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি ও সংস্কারের সহায়ক হত না? ... ...
রাঢ়ের এই অঞ্চলের অতীতের ইতিহাস আমরা মঙ্গলকাব্যগুলোতে পাই। ... তারা কি দুর্যোধনের মত মারাত্মক? ব্যাপক সামাজিক ধ্বংস, হত্যালীলার নায়ক? মাহুদ্যা আর ভাঁড়ুদত্তের মধ্যে প্রথম জন কেমন যেন মাথা গরমের, আর দ্বিতীয় জন লোভী, কুচুটে। যারা ঝিল বোজাতে চায়, তারা ব্যাপকভাবে অন্ধকারের মানুষ এমনটা নয় কিন্তু! চরম ধ্বংসাত্মক মনোভাব এখানকার মানুষের তেমন নেই। উচ্চকিত মন্দ নেই, গড়পরতা ভাল, গড়পরতা মন্দ।” বলতে বলতে আচমকা হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, “তোমরা যদি কখনও উপন্যাস লেখ, এই এলাকার পটভূমিতে মহৎ উপন্যাসের সাদা মানুষ কালো মানুষ নিয়ে মুশকিলে পড়বে। আপাদমস্তক “কালো” মানুষ বোধহয় আঁকতে পারবে না, যদি বাস্তব থেকে চরিত্র খোঁজো। আবার সব ভাল মানুষের পো যদি সেই লেখার চরিত্র হয়, তবে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না নিশ্চিত। কৃত্রিমতার অভিযোগ উঠতে পারে কিন্তু! ... ...
য়োখেন আমার গভীর সংশয়ের আখ্যান শুনে বললে, জ্ঞান দিও না। .... এই যেমন তোমরা সিটি ব্যাঙ্ক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার যোগাড় করে আফ্রিকার ঘানা কোকো বোর্ডকে ধার দিচ্ছ, আর সেটা ফেরত পাচ্ছ কোকো বোর্ডের নেসলে প্রমুখ খ্যাতনামা ইউরোপীয় চকোলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। ঘানা কোকো বোর্ডকে চেনে দুনিয়ার কোন বান্দা? কিন্তু এক বিলিয়ন ডলার দিতে বাজার পিছপা হচ্ছে না – কারণ তারা চেনে নেসলেকে, যারা কোকো থেকে চকোলেট বানায়। কোকো গেছে নেসলের ঘরে। তোমার আমার ছেলেমেয়ের দাঁতের সর্বনাশকারী চকোলেট বেচে তারা ঠিক টাকা দেবে। আমরা সেরকম একটা কিছু করতে চাইছি। ... ...
সৌম্য বলল, “এটাকে আসলে বলে ইন্টার্নালাইজড হোমোফোবিয়া। অনেক হোমোফোবিক মানুষ আসলে নিজেরাই গে বা লেসবিয়ান। নিজেদের ওরিয়েন্টেশনকে ঢাকতে এরা ওভার কম্পেনসেশন করে আরো বেশি বেশি হোমোফোবিক হয়ে যায়। এরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে, যে যদি এরা কুইয়ার মানুষজনকে সাপোর্ট করে, তবে লোকে এদের কুইয়ার ভাববে। তুষারবাবুও তাদের মধ্যে একজন। তার সাথেই ছিল কনজারভেটিভ ভোটব্যাংক হারানোর ভয়। সব মিলিয়ে উনি ওই রকম হোমোফোবিক হয়ে উঠেছিলেন। তবে শুধু তুষারবাবু নন, মনে রাখিস আমাদের পলিটিশিয়ানদের অনেকেই এর শিকার। আমি ধরে ধরে এরকম বেশ কয়েকজন পলিটিশিয়ানের নাম বলে দিতে পারি। বিশেষত দিল্লি আর ব্যাঙ্গালোরের। আর আনন্দের মত এরকম অল্পবয়সী, আকর্ষক ছেলেরা এইসব হাই এন্ড ক্লায়েন্টদের গোপনে সার্ভিস দেয়, ফর সাম ক্যুইক ক্যাশ। অল গোজ ওয়েল যতক্ষণ না কোনও গোপন ক্যামেরায় কিছু রেকর্ড হয়ে যায়।” ... ...
“বিদ্যুৎ (সংশোধনী) আইন ২০২২” নামক এই বিলের আসল কাজ হল বিদ্যুৎ বিতরণকে প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তাদের মনমাফিক শর্তের ভিত্তিতে তুলে দেওয়া। বিদ্যুৎ ব্যবসার মোট তিনটে অঙ্গ আছে: কয়লা, জল বা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন (জেনরেশন), হাইটেনশন টাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ (ট্রান্সমিশন) এবং স্থানীয় বা আঞ্চলিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ (ডিস্ট্রিবিউশন)। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ২০০৩ সাল থেকেই প্রাইভেট কোম্পানি অনুমতি পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত অর্ধেক উৎপাদন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর একটুও আগ্রহ নেই। ... ...
সাবুধানার দুধে এবার পড়ল ছোট করে কেটে রাখা বড়দাদির গাছের কচি তালশাঁস। আবার অনবরত নাড়া পড়ে দুধ-সাবুতে। তালশাঁসগুলো একটু জল ছেড়ে ছোট হয়ে আসতেই ঠাকুমা কোরানো নারিকেল ছড়িয়ে খাবড়ি নামিয়ে ফেলে। তাঁলশাসের পায়েস পাথরের বাটিতে ঢেলে ঠাকুমা নিবেদন করে দেয়ালে ঝুলানো রাধাকৃষ্ণের ছবির সামনে। কমলা রঙের পদ্মজবা পড়ে সেখানে। ঠাকুমা দু’হাতে তালি দিয়ে গেয়ে ওঠে, “হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে। গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে…” ... ...
পরে আমি অনেক ভেবেছি জানিস। সকালের পায়েস, বিকেলে সেটা কয়েকমাসের বাচ্চার পক্ষে বিষ, গ্রামে তো অত ঢাকা-চাপা দেবার অভ্যেস নেই। আর এ বাড়িতে সব কিছু কাজের লোকের ওপরে নির্ভর। রুপোর টাকার কোনো দরকার ছিল না। তাও যখন দেওয়া হল, সেটা মুখে লাগানোর আগে গরম জলে ফুটিয়ে নেওয়া দরকার ছিল। আর এ জায়গাটা ঊপকূল। ভূগর্ভস্থ জলস্তর মাটির খুব কাছে। বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ফিল্টার হওয়ার সুযোগ পায় না। তাই জলের কোয়ালিটি খুব খারাপ। এখন আমরা বড়রা কেনা জল খাই। ঐ জলে ধুয়ে বাচ্চার মুখে দেওয়া অন্যায় হয়েছিল। আমি কিন্তু তখন প্রফেসর। পুঁথিগত জ্ঞান-বিজ্ঞান সবই জানা ছিল। কিন্তু আমি হাতেকলমে রান্নাবান্না নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। বইয়ের জগতে বাস করতাম। সবকিছুতে বড়দের ওপরে নির্ভর করে চোখ বুজে বসে থাকতাম। আমি তখন মা হয়েছি, তবে প্রকৃত মা হতে পারিনি। অযোগ্য ছিলাম। সেই ঘটনা থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, রান্না আমায় শিখতে হবে। আর হেঁশেলে কর্ত্রী হতে হবে। মূর্খ রাঁধুনিদের ওস্তাদি বন্ধ করতে হবে। আর সন্তানের খাওয়া দাওয়ার জন্য গুরুজন, লঘুজন কারোর ওপরে ভরসা করব না, ভগবান এলেও না। ... ...
এক রাতে আমার নোট-বই বের করলাম, আর তাঁর মুখ থেকে তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কে বক্তব্য শোনার জন্য বসলাম; নিঃসংকোচে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। তার একটি সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হল। ডাঃ ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৬৬ সালের মার্চ মাসে জাঞ্জিবার দ্বীপ থেকে রওনা দেন। পরের মাসের ৭ তারিখে তিনি সদলবলে কিন্ডিনি বে থেকে আফ্রিকার অভ্যন্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁর দলে ছিল বোম্বাই থেকে আসা বারোজন সিপাই, কোমোরো দ্বীপপুঞ্জের জোহানার নজন লোক, সাতজন মুক্তি পাওয়া দাস, আর দু'জন জাম্বেজির লোক। তাদের পরীক্ষামূলক ভাবে দলে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ছটা উট, তিনটে মোষ, দুটো খচ্চর আর তিনটে গাধা। এইরকম মোট ত্রিশজন লোক সঙ্গে ছিল, যাদের মধ্যে বারোজন যেমন সিপাই ছিল, যারা দলকে পাহারা দেবে। তাদের বেশিরভাগই এনফিল্ড রাইফেল দিয়ে সজ্জিত । সেই রাইফেলগুলো বোম্বাই-এর সরকার ডাক্তারকে উপহার দিয়েছিল। ... ...
দ্য প্রিন্টের ওপিনিয়ন এডিটর রমা লক্ষ্মী এই পদ্ধতিকে “বৃহৎ-ই-সেরা, প্রযুক্তি-সজ্জিত, চমকপ্রদ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটাই মোদি-র সযত্নে তৈরি করা এই ক্ষমতাবান ভাবমূর্তিকে বিকশিত করার তন্ত্র। যদি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয় থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধগুলির দিকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়, তাহলে ঠিক একইভাবে গ্র্যান্ড স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এবং আম্বেদকর মেমোরিয়াল হচ্ছে প্রাক-স্বাধীনতা পর্বের থেকে বর্তমান শাসকরা যা কৌশলে চুরি করে নিজেদের অনুকুলে ব্যবহার করতে পারে, তারই প্রচেষ্টা। সেন্ট্রাল ভিস্তা এখনও উদ্বোধন করা হয়নি, তবে আমরা অনুমান করতে পারি, যে এটা একটা মহিমা প্রচার এবং বিস্ময়ে তাক লাগানোর প্রচেষ্টা হবে। সম্ভবত ওয়াল্টার বেঞ্জামিন ‘দেখনদারির রাজনীতি’ বলতে এইটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। যা জনসাধারণকে ফাঁকা বুলি দিয়ে প্রভাবিত করে, যা চারুকলা, বিনোদন এবং চমকের ভেল্কিতে মানুষকে বাস্তব পরিস্থিতি ভুলিয়ে মাতিয়ে রাখে। ... ...
সারা ভারত জুড়ে বছরভর যে মাইলের পর মাইল পদযাত্রা চলে এগুলো তারই সামান্য কয়েকটা টুকরো দেখলাম আমরা। এরকম আরো অজস্র হেঁটে-চলার, হাঁটতে হাঁটতে বসে পড়ার, পড়ে মরে যাবার নির্মম কাহিনী রয়েছে সমৃদ্ধ দত্তর লেখা ‘হাঁটার গল্প’ বইয়ে। এই লকডাউনে যারা হেঁটে গেল দেশজুড়ে তারা কজন পৌঁছল গন্তব্যে? কেমন ছিল সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরন্তর হাঁটার অপমানগুলোর কাহিনী? কত রকমের মাইগ্রেশান হয় দেশে? শিক্ষার নিরিখে একেবারে নীচের দিকে থাকা বিহার আর একদম উপরে থাকা কেরলে মাইগ্রেশানের হার এত বেশি কেন? কী সেই অন্তর্নিহিত সমীকরণ যার ফলে দলে দলে মানুষ বাইরে যায়? এইরকম নানা প্রশ্নের উত্তর এই বইতে খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক। ... ...
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের 'লালসালু' পড়লেও বোঝা যায়, মানুষের আসল ধর্ম বেঁচে থাকা। ধর্মব্যবসায়ীরা তাকে বদলে ধর্মান্ধ করে তুলতে চায় ধান্দায়। গ্রামে ধর্ম ছিল ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ছিল না। ১৯৭০ এ গ্রামে কোনো মসজিদ ছিল না। ২০২০র আগে গ্রামে আলাদা করে কোনো স্থায়ী দুর্গামন্দির ছিল না। গ্রামে একটা ছোট্ট শিবমন্দির ছিল। গাজন বা চড়কে হিন্দু মুসলমান সবাই অংশ নিত। বারোয়ারি পুজো একটা ছিল। দুর্গা নয় ওলাইচণ্ডী পূজা। তাকে ঘিরে মেলা যাত্রা হতো। হিন্দু মুসলমানের মিলিত উৎসব। তালবড়া, তালের ফুলুরি জেলার খাওয়া হতো তার সঙ্গে কৃষ্ণের কোনো সম্পর্ক আছে কলকাতা না এলে জানতে পারতাম না। গরিব মানুষ তো ভাদর আশ্বিন মাসে তাল খেয়েই বেঁচে থাকতেন। তাল আর শাকপাতা। ভাত, আলু ডাল তো দূরের কথা জুটতো কতজনের? সামান্য জাও বা ফ্যানভাত জুটলেই তাকে উৎসব বলে মনে হতো অনেকের। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানোয় খাওয়ার কষ্ট পাইনি। কিন্তু অনেকের তো দেখেছি। ... ...
সবার মুখের ওপর চোখ বুলিয়ে রজত বলতে থাকল, “পৃথাদেবীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ধারণা পেতে আমি ওঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলগুলো খুঁটিয়ে দেখা শুরু করলাম। সেটা করতে গিয়েই ইনস্টাগ্রামে দেখতে পেলাম তুহিন আর পৃথার মানালি বেড়াতে যাওয়ার ছবি। খুব আনন্দে ভরা ছবি সব। আর সেই সব ছবির মধ্যেই আমার চোখে পড়ল আরেকটা জিনিস। চৌঠা নভেম্বরের ছবিতে পৃথার হাতে ছিল ওদের বিয়ের আংটি, যে আংটির ছবি এই ঘরে টাঙানো ছবিতে রয়েছে। পাঁচই নভেম্বর আঙুল খালি। ছয় নভেম্বর ওই আঙুলে আবার আংটি ফেরত এল। কিন্তু এবার অন্য আংটি। তবে দেখতে অনেকটা আগেরটার মতনই। ফলে খুঁটিয়ে না দেখলে সবার চোখে চট করে ধরা পড়বে না। কী মহেশবাবু, ওই দিনই তো আপনাদের ইনফর্ম্যাল এনগেজমেন্ট ছিল, তাই না?” ... ...
ভারতে খাদ্য হিসেবে জিনশস্য চালু করতে অনেক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। একমাত্র অখাদ্য ফসল হিসেবে জিনশস্য তুলোর চাষ ভারতে সর্বাধিক হয়। কিন্ত ওই তুলো বীজের তেল বনস্পতি তৈরীতে ব্যবহার হয়। এবার ভারতে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যার দোহাই দিয়ে এবার নতুন চাল। বছরে খরচ হবে প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা (indianexpress.com/article/india/cabinet-fortified-rice-cost-rs-2700-crore-per-yea…)। সব কিছুর মূলে রয়েছে পরোক্ষ ভাবে সেই বিশ্ব বানিজ্য চুক্তি ও ভারত মার্কিন কৃষি চুক্তি ২০০৫ (AKI চুক্তি)। ভিটামিন এ’র অভাবে রাতকানা রোগ, লোহার অভাবে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম হওয়ার জন্য রক্তাপ্লতা ও অনান্য অনুখাদ্য ও প্রোটিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অপুষ্টি দুরীকরনের জন্য বিশেষ কিছু ফসলে প্রথাগত প্রজনন, বাইরের থেকে খাবারে লোহা ও জিঙ্ক মৌলের লবন মিশিয়ে ও জিন পরিবর্তনের দ্বারা ফসলের “পুষ্টিগুন” বাড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই ভাবে তৈরী “পুষ্টিকর ফসল” খেয়ে ভারতবাসীর অপুষ্টি দূর করা যাবে বলে দাবী করা হয়েছে। ২০১৬ সালের আগে থেকেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ অনান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা যৌথ ভাবে কাজ শুরু করেছে। ২০২১ এর ১৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেন অপুষ্টিতে ভোগা গরীব গরিব মহিলা ও শিশুদের জন্য ২০২৪ সালের মধ্যে রেশনে, অঙ্গনওয়াড়ী ও দুপুরের খাবার হবে জৈবিক ভাবে “পুষ্টি সমৃদ্ধ” চাল। এ হল “পোষান অভিযান” প্রকল্প। ... ...