আরে ধুর, ছেলেটা হাত দিয়ে যেন হাওয়া তাড়ায়। এক জায়গায় দুবার কখনও হবে না, টেররিস্টরা কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলে? আবার কোথাও করবে, পুলিশ টিকিও ছুঁতে পারবে না। পুলিশও কোন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না। দুই টেররিস্ট তো পরশুদিনই এনকাউন্টারে মারা গেছে। একটা তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পরে সুবিমলের মুখে। কিন্তু কি অডাসিটি , তারপরেও আবার ব্লাস্ট হয়েছে। তার মানে বুঝতে পারছ? গমগম করে ওঠে সুবিমলের গলা। পাকিস্তানের মদত আর ট্রেনিং। সবকটা মুসলমানকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলে তবে যদি কিছু হয়। কিন্তু এনকাউন্টার করল কেন? খবরের কাগজ থেকে মুখ সরাল উপরের বার্থের লোকটা এবার। ওদের ধরতে পারলে তো বরং কিছু খবর জানা যেতো। হয়তো পরের ব্লাস্টটা হত না। সবাইকে চমকে দিয়ে সালমা বলে ওঠে, আল্লা জানেন, পিছন থেকে গুলি করে মেরেছে ছেলেটাকে, ওদের হাতে তখন কোন হাতিয়ার ছিল না। তার জলভরা চোখ বোরখার সীমানা ছাড়ায়। হঠাত কামরাটা এক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কিন্তু পর মুহূর্তে সুবিমল ঝাঁঝিয়ে ওঠে, বেশ করেছে, এতগুলো নিরীহ লোকের জান নিতে ওদের তো হাত কাঁপেনি। দেশের দুষমন সব। ধরে ধরে সবাইকে গুলি করে মারা উচিত। সালমার কান্না আর নিঃশব্দ রইল না। বাধ্য হয়ে রমাকে বলতে হল , তুমি থামো তো একটু। সব জায়গায় গিয়ে তোমাকে পুলিশগিরি করতে হবে না। ... ...
আমার বাবা জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও পূর্বপুরুষের আদিবাস ছিলো ভাটি অঞ্চলের ময়মনসিংহে। মাটির সূত্রে, ভাষার সূত্রে যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা, নাইবা থাকলো ব্যক্তিগত পরিচয়, পারেননি দুর্ভাগ্যের দিনে তাদের প্রতি উদাসীন থাকতে। একটি পলায়নপর ক্ষুধাতুর, ক্লান্ত দলকে নিজের সীমিত ক্ষমতায় একটু বিশ্রাম একটু আহার দিতে চেষ্টা করেছেন। বাবা দুঃসাহস করেছিলেন। নিজে আক্রান্ত হতে পারতেন। বাগান আক্রান্ত হতে পারতো। ঘরছাড়া মানুষ যেটুকু সম্বল পারে নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলো অজানা নূতন ঠিকানার খোঁজে। পথেই ছেড়ে যেতেও হচ্ছিলো কিছু। এক দর্জি তার সেলাইকলটি --ফুটমেশিনটি নিয়ে যাত্রা করেছিলো, যেখানেই যাক করে খেতে তো হবে। পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে সেটি বাবার কাছে বিক্রি করে গেলো। ওটি বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা আর, পাথেয়র প্রয়োজনও ছিল। আমাদের মা আমাদের সম্বতসরের জামাকাপড় সেই মেশিনে সেলাই করতেন। সেই মেশিনে জড়িয়ে ছিলো ঘরহারার দীর্ঘশ্বাস । ... ...
এই তো গেল খাওয়াদাওয়া। আলতাফের আরও অনেক গুণ। সে গড়গড়িয়ে সংস্কৃত বলতে পারে, ইতিহাসের বৈদিক যুগ তার খুব পছন্দের, কেনোপনিষদে কত নম্বর সূক্তে যম নচিকেতাকে কী কী বলেছিল সে সব তো বটেই উর্দু আরবি কোরান হাদিসও একইরকম ভাবে হজম করে ফেলেছে মহাভারতের ইল্বল বাতাপির মতো। তারপর আগেই বলেছি তার পরোপকারের তুলনা নেই। আলতাফের খুব পছন্দের শব্দ হল ইত্তেফাক অর্থাৎ কিনা কোইন্সিডেন্স অর্থাৎ কিনা সমাপতন। ওতেই জীবনের সব রহস্য লুকিয়ে আছে বলে ওর মনে হয়। এই যেমন আমার বন্ধু রিনা আর্কাইভের গবেষণা করতে দিল্লিতে না এলে আলতাফের সঙ্গে আমার দেখাই হত না। এরকম অজস্র ইত্তেফাকের কাহিনি নিয়ে আলতাফের সোজা সরল মজার জীবন। আমি বললুম, চলো, হজরত নিজামুদ্দিনের দরগায় একদিন যাই। যেখানে উনি সাধনা করতেন সে নাকি খুব শান্তির জায়গা। আমার বন্ধুরা বলেছে। আলতাফ একটু চুপ করে রইল, বলল, আপনি বলছেন, আমি নিশ্চয়ই যাব কিন্তু আমি মসজিদ দরগায় যাই না, তাই আপনাকে হয়তো ভালো করে গুছিয়ে সব বলতে পারব না। আমি বললাম সে তো আমিও নিয়মিত মন্দিরে যাই না। তাতে কী এসে গেল? মেহবুব-এ- ইলাহি এই সুফিসাধকের দরগায় সব ধর্ম আর জাতের মানুষরা যায়। আর এখানেই পাশাপাশি চিরশান্তিতে শুয়ে আছেন মুরিদ আর মুরশিদ, শিষ্য আর গুরু। চিস্তি সুফিয়ানা সিলসিলা ধরে রেখেছে বিখ্যাত শায়ের, সংগীতজ্ঞ, কাওয়ালির স্রষ্টা, ভাষার জাদুকর আমির খুসরো আর তাঁর গুরু নিজামুদ্দিন আউলিয়ার গভীর প্রীতিময় আখ্যান। ... ...
সে কি আর নীতেশ রবিদাস জানে না? পৌরসভার নোটিশ পেয়ে কার কাছে না গিয়ে ধর্ণা দিয়েছে তারা। ব্রিটিশ আমল পার হয়ে পাকিস্তানি আমল, জয়বাংলা, কেউ তাদের ওঠাতে চায়নি। ফুলে ফেঁপে বড়ো হয়েছে তাদের পরিবার। বাঁশের বেড়া দিয়ে খোপ খোপ বিভক্ত হয়েছে পরিবার। চামড়া সেলাইয়ের কাজ ছেড়ে রংমিস্ত্রি, রিকশা মিস্ত্রি, কত পেশায় ছিড়িয়ে গেছে তারা। কিন্তু সন্ত ঋষি সন্তানদের ওঠানোর চিন্তা করেনি কেউ। দ্য প্যারাগন হাউজিংই প্রথম এদের উৎখাতের প্রসঙ্গ ওঠায়। কেউ তখন পাশে দাঁড়ায়নি একা বদরুল ছাড়া। তাও নিশীথের কারণে। সব জানা আছে নীতেশের। মনে আছে তখন আর কেউ এগিয়ে আসেনি। এ নিয়ে সীতেশবাবুর সাথে তর্ক বাড়িয়ে লাভ নেই। সে এসেছে তারা এবার মা দুর্গার পূজা করবে এটা জানাতে। বাঙালি না হলেও দীর্ঘদিন এই বাঙালি সমাজে থেকে তারা মনেপ্রাণে বাঙালি সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে। আর এ যেন সেই দুর্গোৎসব শুরুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, খেয়ে পরে সবাই ভালো আছে তাই উদ্বৃত্ত টাকায় শারদীয় ঊৎসবের আয়োজন। মূল স্রোতে মিশে যাওয়ার চেষ্টা। ... ...
কমল বলে, “এই বাড়ি আপনাদের কাছ থেকে আমি কিনে নেব। দেখবেন আমি কেমন যত্ন করে রাখব। নতুন বাঁধন দেব, ভাঙ্গা ইঁট বদলাব, চুনকাম করব।” মজিবুল মাথা নেড়ে হাসে, বলে, “এমনই হবার কথা ছিল, কমলবাবু।” রেজওয়ানা বোঝে না মজিবুল কী বলতে চায়। তারপর কমল বলে, “কাল শুক্রবার। ছুটির দিন। আমার একটা অনুরোধ রাখুন আপনারা। আজ রাতে আপনারা এখানে থেকে যান। রাতের খাবার তৈরি। মনে করুন আপনারা আজ স্বাধীন, বেড়াতে এসেছেন আপনাদের শহরেরই আর এক প্রান্তে এক হোটেলে।” রেজওয়ানা কমলের দিকে তাকায়, একটা সন্ধ্যায় কমলের মুখটা মনে হয় বয়সে ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে। এমন ভাবে জীবনকে দেখা যেতে পারে, ভাবে রেজওয়ানা, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়। দুজনে যে কখন কমলের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করল তারা নিজেরাই জানল না। সন্ধ্যাতারা কখন ডুবে গেছে। রেজওয়ানা কবির আর ড্রাইভার সেলিমকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দিল। ... ...
সিন্ধু নদকে ছেড়ে ইসমত আর কীর্তনখোলা নদীকে ছেড়ে সআদত এসে পড়েছিল এক নতুন দেশে, যেখানে তারা সংখ্যালঘু। তবু তারা বেছে নিয়েছিল এই দেশটাকে, কেন-না, মাঝখানের এই দেশটাই জুড়ে রেখেছিল পরস্পরের জন্মভূমিকে। পালানোর আগে স্থির হয়েছিল, দু'জনের দেখা হবে দিল্লিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে─সবে পঁচিশ বছর বয়স তখন তার, সেভাবে সেজে ওঠেনি তখনও, ওরা চিঠিতে জানিয়েছিল, জেনেছিলও এমন-কি, সেই প্রায় সদ্যোজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনেই থাকবে তারা; সেখানেই দেখা হবে তাদের, বহুদিনের দাবদাহের পর বৃষ্টি নামবে চোখের পাতায়─আনন্দজল। সআদত তাকে বাংলা ভাষাশিক্ষার কিছু প্রাইমার রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠালেও ইসমত তখনও বাংলা ভাষাটা পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেনি, কারণ যেহেতু তার বাড়িতে সবাই উর্দুতে কথা বলে, ফলত তার বাংলা বলার অক্ষম চেষ্টায় ক্রিয়াপদ গুলিয়ে যায় এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে উর্দু শব্দ। সআদত যে তাকে বাংলা শেখার জন্য জোরাজুরি করেছিল, তা নয়; বরং ইসমত নিজেই চেয়েছিল ভাষাটা শিখতে : ওদের বিয়ের পর সআদতের আম্মি-আব্বুর সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করে তোলার উপায় হিসাবেই বিষয়টাকে দেখেছিল ইসমত আর তাই বছর ঘুরতে-না-ঘুরতেই মোটামুটি চলনসই একটা কথোপকথনের ভাষা, নিজের মতো করে, তৈরি করে নিতে পেরেছিল সে। ... ...
এটা হবেই, জানা কথা। তাই গত দশ বছরে বেশ কয়েকবার একা বা ওর দলের সঙ্গে এই বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও ভেতরে কখনো পা রাখার কথা ভাবে নি রাজিয়া। তিনতলায় উঠে আসা তো দূরের কথা। ওকে ওর দীক্ষা মা বলেছিল পুর্বাশ্রমের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যেতে হয়। হিজড়া সমাজের এটাই নিয়ম। তাই রাজেশনারায়ণকে মুছে ফেলে ওকে দেওয়া হয়েছিল ওর নতুন নাম। দীক্ষা মা জিজ্ঞেস করেছিল, “কি নাম নিবি রে বেটি?” রাজেশের মনে পড়েছিল ছোটবেলার কথা। ইস্কুলে ইতিহাস পড়ার সময় কেমন কখনো নিজেকে মনে হত লক্ষীবাই, কখনো রাজিয়া সুলতানা। পুরনো নামের সঙ্গে মিলিয়ে তাই নিজের নতুন নাম রেখেছিল রাজিয়া। পূর্বাশ্রমের কথা এতদিন তো ভুলেই ছিল। তাই এমনকি পুজোর কদিন মনটা হু হু করলেও কখনও এদিকে পা মাড়ায় নি ও। কিন্তু আজ আর কিছু করার নেই। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সিংহভবনের চৌকাঠ পেরোতে হল রাজিয়াকে। উকিল বলেছে, এনআরসিতে নাম তুলতে হলে বার্থ সার্টিফিকেটটা যেভাবেই হোক নিয়ে যেতে হবে। বাকি কাগজপত্র, অপারেশানের সার্টিফিকেট সব যোগাড় হয়ে গেছে। শুধু এইটাই বাকি। জীবনও কখনো কখনো কিছু কৌতুক করে। আজ রাজিয়ার নাগরিকত্ব প্রমাণের কাজে লাগবে দশ বছর আগে বিসর্জন হয়ে যাওয়া রাজেশনারায়ণের জন্মনথি। যাকে কেউ মনে রাখে নি। রাজিয়া নিজেও না। ... ...
রমজান মাস পড়ল। সে সময় চলছে বাগদি পাড়ার পুন্যি পুকুরে জবকার্ড থেকে মাটি কাটার কাজ। বেলা বারোটা। সব পাড়া থেকেই দু-চারজন করে কাজে লেগেছে। যারা রোজা রেখেছে, খালি পেটে টলছে। তখন বাগদি পাড়ার কেউ একজন বলে উঠল, তুমরা যারা রোজা রেখেছ, ঘর যাবে তো চলে যাও। বাকি কাজ আমরাই করে দিব। এত রোদে খালি পেটে আর খাটতে হয় না। দুগি বাগদির মেয়েটার বিয়ে লেগেছে মাছডোবায়। জামাইকে দিতে হবে একখানা নতুন সাইকেল, হাত ঘড়ি, আর নগদ পনেরো হাজার টাকা। কোথায় পাবে দুগি! খালেবিলে, নদীতে, মুয়ানে মাছ ধরে সে। দুগি গেল মল্লিকপাড়ার ঝড়ো মল্লিকের কাছে। গিয়ে সব কথা বলে আবদার করে বসল, ও চাচা, দুগিটার বিয়ে লাগাইছি। তুমি কিছু দিবে নাই? ঝড়ো মল্লিক বলল, ও মা, এ তো খুশির খবর! মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিস, কিছু দিতে হবে বইকি। তা কী দিলে খুশি হবি বলত? আবদুল চাচা তো সাইকেলটা দিচ্ছে, তুমি একখানা ভালো হাত ঘড়ি কিনে দিও তাইলে। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে সিম্বামওয়েন্নি থেকে উগোগো অঞ্চলের চুন্যো জনপদের উদ্দেশে পথচলার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
দক্ষিণ ইওরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দেশ। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য, মধ্যযুগীয় মুসলমান শাসন, প্রাক-আধুনিক ঔপনিবেশিক শক্তি, আধুনিক কালে দীর্ঘ স্বৈরতন্ত্র ও পরে গণতন্ত্রের মিশ্রণে বিচিত্র রঙিন সংস্কৃতি। ঠিক পর্যটক হয়ে সাইট-সিয়িং নয়। কখনও শিক্ষার্থী, পরে তরজমাকার হয়ে এদেশের নানা শহরের অন্দরমহলে উঁকি-ঝুঁকির অভিজ্ঞতা। এ কিস্তিতে কুইম্ব্রার কাফে, রেস্তোরাঁয় খাস পোর্তুগিজ খানা-পিনা। ঋতা রায় ... ...
ন্যায়বিচারের প্রাথমিক শর্ত হল, যেকোনো আদশের পশ্চাতে যে কারণগুলো আছে তা ব্যাখ্যা করা। সকলকে জানানো। কারণ কমিশন নাগরিকের সমক্ষে দাঁড়িয়ে, মানুষের নজরদারির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করার অন্যতম স্বাধীন সংস্থা।কাজের স্বচ্ছতা তাই আবশ্যিক শর্ত। তা অনুসৃত হওয়ার মধ্য দিয়েই কমিশনের মত স্বাধীন সংস্থার জনগ্রাহ্যতা, বিশ্বাস, আস্থা গড়ে ওঠে। দায়বদ্ধতাহীন ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারের জন্ম দেয়। ... ...
নিরস্ত্র জনতার উপর গুলি চালানো এবং হত্যার পর দেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই সব মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর তা নিয়ে নীরব থাকা, একটাই কথা বলে। সেটা হল, ঘৃণা এখন ভারতে শাসকের রাজনীতির সব থেকে জরুরি উপাদান। এর সঙ্গে মিলিয়ে নিন আরও কয়েকটি তথ্য। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আন্দোলনকারীদের পোশাক দেখে চিনতে। মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যকে শাহিনবাগকে উদ্দেশ্য করে জনতাকে দিয়ে বলাতে দেখা গিয়েছিল, ‘গোলি মারো সালোকো’। মোদী মন্ত্রিসভারই আরেক মন্ত্রীকে দেখা গিয়েছিল আখলাখ খুনে গ্রেফতার হওয়া এক অভিযুক্তের স্বাভাবিক মৃত্যুর পর, সেই শবযাত্রায় উপস্থিত থাকতে, যেখানে হত্যায় অভিযুক্তের ওই মৃতদেহ জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর টুইটে তাকে বলা হয়েছিল ‘শহিদ’। এই সব কিছু একই সুতোয় বাঁধা। আর এই মুহূর্তে তারা সবাই সক্রিয় শীতলকুচিতে। ... ...
যোহন বলিলেন, মানুষের যা অসাধ্য কাজ, কেমন করে সাধিব তা আজ। প্রভু বললেন, মনুষ্যের কথা ছাড়। পশ্চিমে তাকাও। বিস্তীর্ণ গোবলয় থেকে দেখ নিয়ে আসছি কেন্দ্রীয় বানরসেনা। এ বাহিনীতে প্রবেশ করতে গেলে সুললিত রাষ্ট্রভাষা জানা আবশ্যক। কোনো বঙ্গীয় যিহাদি এর মধ্যে প্রবেশে সমর্থ নয়। এরা কর্তার ইচ্ছায় কর্ম ও হুপহাপ করে। ব্যবহার কর। শব্দের মাধ্যমে ধর্মপ্রচার না হলে বজ্রপাতের ব্যবস্থা কর। ... ...
শীতলকুচির ঘটনা খুব পীড়াদায়ক। তার পাশাপাশি এটাও কম পীড়াদায়ক নয় যে আমাদের সহনাগরিকদের একাংশ এই ঘটনায় দৃশ্যতঃ দুঃখিত নন। রাজ্যের শাসনক্ষমতায় বিজেপি এসে গেল বলে হিড়িক উঠেছে, সেই দলের পক্ষ থেকে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত কেউ এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন নি বরং তাদের রাজ্য সভাপতি বিবৃতি দিয়েছেন দরকারে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে। এ আমাদের স্তম্ভিত করে দেয়। এই রাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে হত্যার কথা আমরা মনে করতে পারি। দোষারোপের পালা ভিন্ন হলেও, শাসক বিরোধী নির্বিশেষে সমস্ত প্রথমসারির রাজনৈতিক নেতা পুলিশের গুলিতে মানুষের মৃত্যুতে দুঃখ জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি মইদুল মিদ্যার মৃত্যুতেও দেখলাম শাসনক্ষমতায় থাকা মানুষ দুঃখ প্রকাশ করলেন। আর বড়ো কথা, সামাজিক পরিমণ্ডলে এ ওর দিকে দোষ ছুঁড়ে দেয়, কিন্তু পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা প্রায় সকলেই করে থাকেন, ভুল হল- করে থাকতেন। ... ...
ক্লাউস ডেমুজ। জার্মানির সাহিত্যিক। আধুনিক মরমিয়া কবি। প্রায়শই উপেক্ষিত। শান্ত, সমাহিত স্বর। তাঁর কবিতা পড়লেন ও জার্মান থেকে তরজমা করলেন কবি হিন্দোল ভট্টাচার্য ... ...
সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি ভিন্ন স্বাদের বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। লিখেছেন নবকুমার ... ...
মহা বুদ্ধিমান সেই মানুষটি সমুদ্রের তীরে নুড়ি কুড়োনোর কথা বলেছিলেন। নুড়ি, ঝিনুক, এইসব। আমার বুদ্ধিসুদ্ধি তত নেই। কিন্তু আমিও একটা বিশাল সমুদ্রের ধারে নুড়ি খুঁজে বেড়াই। কখনো সমুদ্রের ধারে, কখনো নদীর। সব নদীই তো একদিন সমুদ্র হয়ে যায়। কাজেই ব্যপারটা একই হলো। নানা রকম রং ওদের। নানা আকার। আকৃতি। প্রত্যেকটা নুড়ি আমাকে গল্প বলে। একেক জনের একেক রকম গল্প। আমি ঢেউয়ের মাঝখানে একটা উঁচু পাথরে বসে সব গল্প হাওয়ায় উড়িয়ে দিই। কোনকিছুই নিজের জন্য জমিয়ে রাখার নেই এই পৃথিবীতে। শব্দগুলো ভাসতে ভাসতে কত দূর দূর চলে যায়। কেউ শোনে, কেউ শোনেনা। তুমি শুনলে গল্পটাকে পাখির পালকের মত আবার ভাসিয়ে দিও । কিম্বা নাই শুনলে। মশার ভিনভিনানির মত হাত নেড়ে তাড়িয়ে দিও। নুড়িতলার গল্পগুলোকে। ... ...
তাদের রান্নাঘরেও আম ঢুকে পড়ল। কাচ্চে আমকা ক্ষীর তার মধ্যে একটি। আমের মরশুমে সকাল সন্ধে রাত সবসময় আম খেতে কোনো আপত্তি নেই তাদের। শেহেরয়ালি রন্ধন খুবই জমকালো। নিরামিষ। শুদ্ধ শাকাহারী। বৈচিত্র্যে ভরপুর। জাফরান, গোলাপজল, বাদাম পেস্তার দরাজ ব্যবহার। গোলাপজলের মিঠে সুবাস জড়িয়ে থাকবে প্রায় সব খাবারেই। আর হ্যাঁ, ওদের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছিল বাংলার পাঁচফোড়ন। আর পিঠা। বাংলার পিঠে। পেটে খেলে পিঠে সয়! ওদের পেটে সয়ে গিয়েছিল মোচা আর কদবেলও। শেহেরওয়ালিরা রাজস্থানি উর্দু হিন্দি ভাঙা বাংলা মিশিয়ে কথা বলত। জল বই গাছ তরকারি এইসব বাংলা শব্দ ওদের কথায় পাওয়া যাবে। ... ...
গতবারে করোনার কারণে গাজন হয় নি, সব লকডাউন ছিল। কেবল মাত্র টিম টিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল – এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দুদিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয় নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়ে ছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিবদুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহুদূর শোনা যাচ্ছিল। কোন এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুর দুয়ারে বসে এত মুখ খারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখ খারাপ না করলেই কি নয়! ... ...