'আজ থেকে সাড়ে তিনশো বছর আগে ইউরোপের শিক্ষিত মানুষেরা সভ্যতার আলো নিয়ে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছেছিল। ওখানকার আদি বাসিন্দা অসভ্য রেড ইন্ডিয়ানদের যখন কিছুতেই বশ করতে পারছিল না, তখন কি করেছিল জানেন? হত দরিদ্র রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে শয়ে শয়ে কম্বল বিতরণ করেছিল।' 'সেতো অত্যন্ত ভালো কাজ। সভ্য মানুষদের মত কাজ।' আমি হাসলাম। বললাম, 'কম্বলগুলো ছিল হাসপাতালে স্মল পক্সে আক্রান্ত মৃত রোগীদের। উত্তর আমেরিকা স্মল পক্স মুক্ত অঞ্চল ছিল। তাই এই রোগের বিরুদ্ধে রেড ইন্ডিয়ানদের কোনরকম গোষ্ঠী ইমিউনিটিও ছিল না। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে কয়েক লাখ রেড ইন্ডিয়ান স্মল পক্সের মহামারীতে মারা গেল। আমেরিকা শেষমেশ সত্যিকারের সভ্য দেশ হয়ে উঠল।' ... ...
হারুনের এই ঝড়ের মতো হাজির হওয়া, হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে মজাদার কিসসা বলে এতগুলো ঝানু ব্যাবসাদারকে মাতিয়ে রাখা আবার ঝুপ করে অন্ধকার পথে মিলিয়ে যাওয়া এসবই একজন হাঁ করে গিলছিল। তার নাম হরিণ। বারো-তেরো বছরের বালক। এসেছে শান্তিপুরের দুকুল আর মলমল নিয়ে, দামোদর শেঠের তল্পিবাহক হয়ে। ফাই-ফরমাশ খাটে। শেঠের গা হাত পা টিপে দেয়। মাথায় তেল মাখিয়ে দেয়। শেঠ খাটিয়ে নেবে কিন্তু খেতে পরতে দেবে, কিছু টঙ্কাও আসবে গরিবের সংসারে। এই ভেবেই তাকে যেতে দিল তার বাপ। তা মন্দ লাগছে না হরিণের, এই শেঠের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে। তবে এই ভর হেমন্ত সন্ধ্যায় তার বাড়ির কথা মনে পড়ে। আকাশে মস্ত চাঁদ। জোছনার মধ্যে সে পিঠেপুলির গন্ধ পায়। নারকেলে গুড়ের পাক দেওয়ার গন্ধ। ... ...
কবিতা কি সত্যি কখনো অস্ত্র হয় বা হয়েছে? মানে ঠিক যেভাবে দেখাতে চায় মেরুকরণের রাজনীতি, কবিকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে? নাকি তার জায়গাটা একটু আলাদা যা চিনতে না পেরে আমরা কবিতার প্রাসঙ্গিকতাকে ওই একই খোপে ঢোকাতে চাই ও বারংবার ব্যর্থ হয়ে নিরাশায় ভুগি। আদতে, সমালোচকদের মধ্যে একটা মাপকাঠি কাজ করেছে চিরকাল, যে, যথেষ্ট দেকার্তিয়ান না হলে, সেইটে আধুনিক রাজনীতির অংশ হয় না। ... ...
কোভিড-এর আক্রমণে সবই যখন সামাজিক দূরত্বের বিধানে অসম্বদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখনই একদিন অনেকদিন পর হঠাৎ মনে পড়ল, ফাদার রোবের্জ-এর খোঁজ পাইনি অনেকদিন। ফোনে বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম, উনি দীর্ঘদিন অসুস্থ, ঘরবন্দি! তারপর বুধবার সকালে (২৬ অগাস্ট, ২০২০) মৃত্যুসংবাদ! ... ...
রিচার্ড ডেভিড উল্ফ। মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। সহজ ভাষাতে আমজনতার কাছে মার্কসবাদ তুলে ধরতেও সচেষ্ট তিনি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একটি বই ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মার্কসিজম’। এবার বাংলা তরজমায়। পড়লেন অর্থনীতির অধ্যাপক দেবর্ষি দাস। ... ...
অজাজিল। জিশু খ্রিস্ট কি মানবসন্তান ছিলেন নাকি ঈশ্বরের পুত্র? পঞ্চম শতকের এই বিতর্ক, এক খ্রিস্টান সন্ন্যাসীর সঙ্গে দুই নারীর প্রেম ও দৈহিক সম্পর্ক, বিভিন্ন সত্য ঐতিহাসিক ঘটনা, সেসময়ের মিশর ও সিরিয়ার নিসর্গ ও জনজীবনের অনুপুঙ্খ বর্ণনায় জমজমাট এক রুদ্ধশ্বাস উপন্যাস। এ সময়ের আরবি সাহিত্যের একটি অনবদ্য নিদর্শন। পড়লেন পাকিস্তানের কবি ও তরজমাকার অফজাল আহমেদ সৈয়দ। ... ...
প্রকাশিত হল আরও পাঁচটি পুস্তক পরিচিতি। লিখেছেন রন্তিদেব রায়। ... ...
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। মহাবিজ্ঞানী। কিন্তু মানুষটি কেমন ছিলেন? ১৯২২-২৩ সালে এশিয়া-আফ্রিকায় ভ্রমণকালে তিনি যে ডায়েরি লিখেছিলেন তার পাতায় পাতায় মেলে অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য। ২০১৮ সালে এ ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে বই হয়ে। পড়লেন চিকিৎসক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। ... ...
কী হয়েছে না হয়েছে তা সকলেই জানতে পারে। লোকে সাধারণত পার্টি আর মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করেন, কিন্তু সেসব তথ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা থাকে। এরকম একটি সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত অঞ্চলে, যেখানে যে-কোনো সময় দাঙ্গার আগুন জ্বলে উঠতে পারে, সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যথেষ্ট কঠিন কাজ, বিশেষ করে যারা পরিবারের লোকজনদের হারিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ বাদ দিয়েই আমরা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলব বলে পরিকল্পনা করলাম। ... ...
আমি ভিজিট রেখে বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছিলাম, ছেলেটির বাবা বলল, ডাক্তারবাবু, দয়া করে টাকাটা রেখে দিন। সবার তো দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমার ছোট্ট একটা মুদির দোকান আছে। লকডাউনে লোকজনের অবস্থা নিজের চোখে দেখেছি। তেমন কয়েকজনকে যদি পয়সা না নিয়ে দেখে দেন। ক্ষমতা থাকলে আরও দিতাম। আমি কিছুতেই নেব না। আর ছেলেটির বাবা দুহাত জোর করে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে, আমি গরীব ডাক্তারবাবু, কিন্তু আমারও তো কিছু করতে ইচ্ছে করে। গরীব? কে গরীব? যে তার সীমিত সাধ্য নিয়েও এই অকালে অন্যের পাশে দাঁড়াতে চাইছে? নাকি গরীব তারা, যারা এই মহামারীর সময়েও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াচ্ছে? ... ...
জয়মালিকা সেনের কর্মকাণ্ডের ঠিক ঠিক মতো সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে পান না সোমেশ্বর। শুনেছেন, শুরু হয়েছিলো বনসৃজনের পরিকল্পনা নিয়ে। পাথুরে, ঊষর পাহাড়িয়া জমিতে বহু গাছ পুঁতেছিলেন তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধব, এবং বহু যত্নে বাঁচিয়েছিলেন তাদের, বাড়িয়েও ছিলেন। কত গাছ? হদিশ করা মুশকিল। হয়তো এক লক্ষ, পাঁচ লক্ষও হয়তো বা। এ সবই শোনা কথা। জয়মালিকা নিজেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যার কথা বলেন। কিন্তু আসলে সংখ্যাটি অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক। জমি এবং প্রকৃতির চরিত্র অনেকটাই বদলিয়ে দেবার মতো যথেষ্ট সংখ্যক বৃক্ষরোপণ যে হয়েছিলো, সে বিষয়ে তো সন্দেহ নেই। আজ এখানে ধান ফলে, প্রতিটি মরশুমে শাক-সবজিও ফলানো হয়। বড় বড় ফলের গাছ, আম-কাঁঠাল-আতা-গাবের অভাব নেই। ফুল ফোটে হাজারো রকমের, বসন্তে অশোক-পলাশের লাল, নীল পাহাড়ের পটে অপরূপ শোভা ধরে। গো পালন হয়, প্রায় পঁয়ত্রিশ-চল্লিশটা ষাঁড়-গোরু-মোষের সংসার। ... ...
একবার একটি রুগ্ন ছেলেকে নিয়ে কী বিষম বিপদই না হয়েছিলো। মধ্য এশিয়ার যে অঞ্চল থেকে শাহেনশাহ বাবর এসে হিন্দুস্তানের দখল নিলেন, সেই বীররসসিক্ত ফরগনার আসেপাশে কোথাও একটি পরিবারের গল্প। বাড়ির ছেলেটি ছোট থেকেই রুগ্ন, প্রায় নানা অসুখ বিসুখে ভোগে। মধ্য এশিয়ার মানুষদের সাথে যাঁরা মিশেছেন তাঁরা জানবেন --- শারীরিক দুর্বলতা ওখানে একটা ভীষণরকম লজ্জার ব্যাপার। গল্পের রুগ্ন ছেলেটি, বাংলায় হলে হ্যত তার নাম হত অমল, সোভিয়েত আজ্ঞাধীন বর্তমান উজবেকিস্তানে তারই নাম হলো স্পার্টাক। তো, স্পার্টাক ছোট থেকেই বাড়িসুদ্ধ সবার আলোচ্য বস্তু। আমাদের দেশে হলে মা ঠাকুমা আজ এই মন্দির কাল সেই পীরের থানে মানত করত -- হেই বাবা রোগ ভালো করে দাও। কিন্তু স্থানমাহাত্ম্য এমনই, স্পার্টাককে নিয়ে বাড়ির লোকের আলোচনা --এর বোধহয় স্পার্মকাউন্ট খুব একটা ভালো হবেনা। ... ...
হাসিখুশি আমার প্রথম বই। তখন আমি পড়তে শিখে গিয়েছি মনে হয়। কবে আমার অক্ষরজ্ঞান হয় তা আর মনে নেই। ক্লাস ওয়ান-টু পড়িনি, একেবারে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়েছিলাম বেলগাছিয়ার মনোহর একাডেমিতে। বাড়িতে আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেন রাখালবাবু। বস্তিতে থাকতেন, তাঁর ভাই বাজারে আলু বিক্রি করতেন। তা আমি পরে দেখেছি। এঁরা সব পূর্ববঙ্গের মানুষ। অবস্থার ফেরে জীবন এমন হয়েছিল। বাজারে যে চায়ের দোকান ছিল ব্রজেনবাবুর, তাঁর পুত্র তপন আমাদের বন্ধু। তারাও ছিল বড় ঘর। অবস্থার ফেরে তার বাবা এপারে এসে চায়ের দোকান করে সংসার নির্বাহ করতেন। তপনের বোন শিখা আমার বোন অপর্ণার সহপাঠী। তাকে আমাদের এক বন্ধু ছোটন, এখন সে বেঁচে নেই, বলত চা-উলি। খুব খারাপ লাগত। ছোটনরা ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। এসব যেমন বলত, আবার তপনের সঙ্গে মিশতও। এমনিতে সেই সময়ে ধনী দরিদ্রে ভেদাভেদ ছিল না বিশেষ। পূর্ববঙ্গে জমি নির্ভর মানুষ দেশভাগে কী বিপন্ন হয়েছিল তা এখন বুঝতে পারি। ... ...
শুক্কুরবার রাতের কবিতার পাতায় আজ প্রকাশিত হলো কবি ও গদ্যকার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ। ... ...
... ...
সাংবাদিকরা ভেবেছিলেন তাঁরা শ্রমিক নন। তাই বুঝে উঠতে পারেননি চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে ঠিকা শ্রমিকের চেয়ে বেশি অধিকার দাবি করা যায় না। আর জোট বেঁধে দাবি পেশ করার অধিকার না থাকলে কোন অধিকারই থাকে না। ... ...
রজতাভ দত্ত বা গৌতম ঘোষ ধৈর্য্য ধরার কথা বলছেন বটে, কিন্তু তাঁরাও জানেন, তেমন অবকাশ টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই নেই। ... ...
প্রয়োজন আছে, তবে সে তুলনায় মান নেই বা দাম। প্রাইভেট টিউটররা যেন ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। আমাদের রোজগার নেই, ক্রমশ ফুরোচ্ছে নুন-পান্তা। ঘিরে ধরছে অচেনা দারিদ্র্য আর অবসাদ। ... ...
কেউ কি বলতে পারেন, কবে করোনার টিকা আবিষ্কার হবে? কবে এই টিকা বাংলাদেশ পাবে? কবে বা ফুরাবে এই দুঃসময়? জানি না, কবে স্বপ্নের রেস্তোরাঁটি আবার খুলতে পারবো! ... ...
আশৈশব লিঙ্গ-বৈষম্যের শিকার এক তরুণীর বিদ্রোহ। বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে তার যাচিত ও অযাচিত সম্পর্কের অভিজ্ঞতা। তার স্বাধীনচেতা মনের পায়ে সমাজের বেড়ি। নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা কোন্ পথে—এ সবের মধ্যে দিয়েই সে প্রশ্নের খোঁজ-করা একটি উপন্যাস। পড়লেন মীরাতুন নাহার। ... ...