জগন্নাথদেব মণ্ডলের দু'টি কবিতা ... ...
সেই দিনটাও ছিল বর্ষারই দিন, শেষবিকেলের দিক। কাফে ওয়েপলারে এক নবাগতাকে লক্ষ করলাম। আমি বেরিয়েছিলাম কেনাকাটা করতে, আমার হাত ভর্তি হয়ে আছে বই আর কিছু ফোনোগ্রাফ রেকর্ডে। সেদিন নিশ্চয়ই আমেরিকা থেকে একটা অপ্রত্যাশিত অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছিল যার ফলে কেনাকাটা যা করেছি তারপরেও কয়েকশো ফ্রাঙ্ক তখনও আমার পকেটে। আমি বসে আছি ওই এক্সচেঞ্জের জায়গাটায়, ক্ষুধাময় এক মহিলামহল পরিবেষ্টিত হয়ে; ক্রমাগত খুঁচিয়ে যাওয়া বেশ্যার দল আর যা কিছু আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে সেসবে আমার কোনও প্রতিবন্ধকতাই হচ্ছিল না, কারণ আমার চোখ তখন একনজরে তাক করে আছে মোহসঞ্চারী ওই নবাগতা সুন্দরীর দিকে, যে অনেকটা তফাতে কাফের দূরবর্তী কোণে বসে আছে। তাকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুন্দরী এক যুবতি বলেই মনে হল যে তার প্রেমিকের সাথে দেখা করবে বলে এসেছে এবং নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই চলে এসেছে। ... ...
ভারতের নির্বাচন চলছে। ৩ দফা হয়ে গেছে আরও ৪ দফা বাকি আছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না ভারতের নির্বাচন কি পদ্ধতিতে হয়। ভারতের নির্বাচন হয় এফপিটিপি বা ফার্স্ট পাস্ট দা পোস্ট পদ্ধতিতে। অনেকেই ভাবছেন এটা আবার কি বিষয়? সহজ করে বললে এই শব্দটার মানে দাঁড়ায় এই পদ্ধতিতে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশী ভোট পাবেন তাঁকেই জয়ী হিসেবে মান্য করতে হবে ভোটারদের। সে যদি কোনও ভোটার তাঁকে ভোট নাও দেন তাও। এই পদ্ধতিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ভোট হয়। দেখা গেছে যে যে সব দেশ বিভিন্ন সময়ে ইংরেজদের কলোনি ছিল যেমন কানাডা, সুদান, কেনিয়া , ভারত এবং অন্যান্যরা এখনো এই পদ্ধতিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পদ্ধতিতে অসুবিধা কোথায় এবং এর সঙ্গে ইভিএমের কি সম্পর্ক? ... ...
আদিম এই পেশাটিতে ঠেলে দেবার পেছনে যদিও দারিদ্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘর বাঁধবার দুস্তর স্বপ্ন, যা মরিয়াও মরে না-- এইগুলি এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং প্রায় একশ পার্সেন্ট দায়ী, তবু কাঁচা পয়সার প্রাবল্য একটা বড় ব্যাপার। অনেক মেয়েই সেই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারেনা। আর পুনর্বাসনের নামে তার সামনে যেসব প্রকল্প রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা অতি করুণ। দিনে দশ বার ঘন্টা সেলাই মেশিন চালিয়ে বা বিড়ি বেঁধে সে মাসিক যা ইনকাম করবে সোনাগাছিতে একদিনে তার বহুগুণ বেশি করবে। এই খানে ছোট্ট একটি তথ্য। একজন জনপ্রিয় যৌনকর্মী দিনে গড়ে প্রায় কুড়ি জন খদ্দেরের সন্তুষ্টি বিধান করে। এদের প্রায় প্রত্যেকের টাকায় তার আত্মীয় স্বজন প্রতিপালিত হয়। যেন সব লেডি দস্যু রত্নাকরের জীবনকাহিনী। পাপের ভাগ নয়, টাকার ভাগ চাই। ... ...
যেহেতু ২০১৭ সালে মায়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচার চরমে উঠেছিল, তাই গত বছরের মাঝামাঝি রিফিউজি ক্যাম্পে শিশু-জন্মের ঢল নেমেছিল। তখনই ইউনাইটেড নেশন জানিয়েছিলেন যে প্রতি দিনে প্রায় ৬০টি করে শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই শিশুদের অধিকাংশই জন্মায় সরকারী বা বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সীমানার বাইরে। গ্রাম্য দাই-এর হাতে জন্ম। জন্মের পরে এদের কোন রেজিস্ট্রেসন হয় না। তাই সরকারী ভাবে এরা অদৃশ্য – কোন সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সুযোগ এদের কাছে আকাশের চাঁদ। উদবাস্তু শিবিরের পানীয় জল, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থা যেমন, তাতে এই শিশুগুলির সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা কতটা সেটা বেশ চিন্তার। শিশুমৃত্যুর হার বোঝার চেষ্টাও বাতুলতা কারণ সরকারী হিসেবে শিশুগুলি স্রেফ নেই। ... ...
কলেজস্ট্রিটের এক ফুটপাথে থাকেন কয়েকজন টানা রিক্সা চালক। ফুটপাথেই তাঁদের সংসার। ফুটপাথের এক কোণে মাটির তোলা উনুন। ফুটপাথ লাগোয়া বাড়ির প্রবেশ দরজার পাশেই বড় স্টিলের ট্রাঙ্কের মধ্যে তাঁদের যাবতীয় জিনিসপত্র; হাড়িপাতিল থেকে জামাকাপড়। কর্পোরেশনের টাইম কলে স্নান করা, কাপড় কাচা, বাসন ধোয়া। ফুটপাথে দাঁড়িয়েই জামাকাপড় বদলে নেওয়া। ফুটপাথের ওপর টাঙানো দড়িতে শুকোয় তাঁদের পোশাক। পার্ক করা টানা রিক্সায় রোদ এসে পড়েছে। তাতেও শুকোতে দেওয়া কয়েকটা ছোট জামাকাপড়। মহেশ্বরী প্রসাদ (৪৫) এখানেই থাকেন। সাত বছর কলকাতায় আছেন। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে সতেরো/আঠেরো বছর বয়সে শহরে আসেন। প্রথমে মুটেগিরি করতেন। একশ কেজি, আশি কেজির বোঝা বইতেন। শেষে টানা রিক্সা চালানোই পেশা হিসেবে নেন। ... ...
লোকটা মরে ফর গেল না তো! অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি? কপালের কাছটা তো অনেকটা কেটে গেছে, হলদে হ্যালোজেন আলোয় রক্তের দাগ কালো দেখাচ্ছে। আশেপাশে কেউ দেখেছে নাকি? এদিকে তো আবার সব জায়গাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা বসান। কিন্তু দোষ তো লোকটারই, সেটাও নিশ্চয় বোঝা যাবে ক্যামেরায় আর ওর কাছে অস্ত্র ... ...
নলিনী উপন্যাস জুড়ে এরকম অসংখ্য চরিত্র- মানুষের যন্ত্রণা, হাসি, আনন্দ, দুঃখ, বেদনা, সর্বোপরি মানবীয় দ্বন্দ্ব, স্ব-বিরোধিতা নিয়ে জীবন্ত উঠে আসে। চরিত্রগুলোকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়। সাতশো চল্লিশ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি হয়ে ওঠে একটি যাত্রা যেখানে পাঠক হয়ে ওঠেন লোধা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জনসমুদায়গুলির নানান বহুত্বময়তার সঙ্গী। বন-নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে কৃষি মজুরে পরিণত হওয়া, তার ভিতরকার জটিল রাষ্ট্রীয় ও দলীয় রাজনীতি, পঞ্চায়েত, পুলিশ, পার্টি, কাঠ-ব্যবসা,সব মিলিয়ে যে সমাজ পরিবর্তন তার ফাঁকে ফাঁকে নলিনী আবিষ্কার করেন ঐতিহাসিকতা ... ...
চোয়াল শক্ত করে বড় মেয়ে অফিসের ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পায়ে ফটক পার করে যায়। কোর্টের নোটিশের সাকার অস্তিত্ব সে গ্রাহ্য করে না। করিমন বিবি জানে, তার পিছু পিছু টমিটা, যতটা টমির পৃথিবী, ততটা পর্যন্ত যাবে। সাক্রোশে করিমন বিবি শসায় আরেকটা কামড় বসায়। এবার তার ঠোঁটের কষ বেয়ে শসার অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। টের পায় ছোটোটা সুশীতল বুরহানি গ্লাস নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে কিছুটা দূরে। করিমন বিবি তার দিকে না ফিরেই ... ...
সবাইকে নিঃশব্দে লক্ষ্য করছি। ভাবছি, কে হতে পারেন ‘স্টোরি’র চরিত্র। কে হতে পারেন সেই মেয়ে যাকে নির্বাচন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যায়। গাছকোমর শাড়ি পরা এক মহিলা বেশ বড় একটা ঝুড়ির কাছে এসে দাঁড়ান। পাশে আরেকটা ছোট ঝুড়ি। হলদে পাড়, লাল-কালো বেবি প্রিন্ট মলিন শাড়ির ওপর কোমরে বাঁধা রঙচটা গোলাপি গামছা। লাল ব্লাউজের হাতার সেলাই অল্প খুলে গেছে। দুহাতে দুই ক্ষয়াটে সোনালী মেটাল চুড়ি। বাঁ হাতের বাজুতে বাঁধা রঙচটা ধাগা। মাথার চুল উল্টে ছোট্ট খোঁপা। অবাধ্য কুচো চুল কপাল ও কানের প্রান্তে ছড়িয়ে। তাঁকেই জিজ্ঞেস করা গেল, “দিদি, ঝুড়ি আপনার?” ... ...
নাগরিক জীবনে লোকগানকে প্রবেশ করাতে পিট সিগারের বিশ্বব্যাপী যে ভূমিকা, অমর পাল বাংলায় সম্ভবত সেই কাজটিই করতে চেয়েছিলেন বললে অত্যুক্তি হয়না। মোট চব্বিশটা বাংলা ছবিতে গান গেয়েছেন। সত্যজিৎ রায় , উৎপল দত্ত , সলিল চৌধুরী, শচীন দেববর্মণ- রা যার গানের গুণগ্রাহী ছিলেন, তাঁর নামে একটি উইকি পেজও নেই। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন: অর্ক দেব ... ...
আকাশের চাঁদ হাতে এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট জেতার সাড়ে চার বছর পর আমরা দাঁড়িয়ে আছি এমন এক সন্ধিক্ষণে যখন কর্মসংস্থানের হার বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন, কৃষিক্ষেত্র বিপর্যস্ত, অসংগঠিত ক্ষেত্র রক্তশুন্য, টাকার মূল্য তলানিতে, চলতি খাতে ঘাটতি ক্রমবর্ধমান, সুদের হার চড়া ব্যাংকিং ক্ষেত্র অপরিশোধিত ঋণের ভারে ন্যুব্জ, কর ব্যবস্থা বেহাল, কর্পোরেট মুনাফার হার নিম্নমুখী, রপ্তানি ক্রমশ কমছে, এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার যাবতীয় সংখ্যাতাত্ত্বিক চাতুরির পরেও আগের দশকের তুলনায় কম। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া প্রত্যাশার বুদবুদ আজ ফেটে গেছে। পড়ে আছে শুধু ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আর আশাভঙ্গের তিক্ততা। মার্কিন রাজনীতিবিদ মারিও কুমো একবার ... ...
ভারত-সরকার আয়োজিত 'দেশপ্রেমের গল্প লেখ' প্রতিযোগিতায় পরীক্ষার ফলাফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। আদিত্যনাথ ফার্স্ট হয়েছেন। একাই ৪০০ জঙ্গী মেরেছেন। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী অর্ণব গোস্বামী ও অন্যান্য ভারতীয় মিডিয়া। তাঁরা মেরেছেন ৩৫০। তৃতীয় স্থানে অমিত শাহ। সভাপতি হয়েও ২৫০ র উপরে উঠতে পারেননি। ওদিকে সাংসদ আলুওয়ালিয়া বলেছেন জঙ্গী মারতে যাওয়াই হয়নি, ফাঁকা মাঠে বোম ফেলে ব্রহ্মতেজ দেখানো হয়েছে মাত্র। তিনি পেয়েছেন সান্ত্বনা পুরষ্কার। ... ...
‘কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি’ গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ফ্রান্সে, অলিম্পিয়া প্রেস থেকে, ১৯৫৬ সালেই। আমেরিকায় মিলারের ‘ট্রপিক অফ ক্যান্সার’-এর ওপর দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে চলা অশ্লীলতার অভিযোগ তথা আইনি নিষেধাজ্ঞা ১৯৬৪-৬৫ নাগাদ উঠে যাবার পর ওঁর অন্যান্য বইয়ের সাথে এই উপন্যাসিকাটিও আমেরিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। প্রকাশক, গ্রোভ প্রেস। মিলারের ফোটোগ্রাফার-বন্ধু জর্জ ব্রাসেই ওঁর ‘হেনরি মিলার : দ্য প্যারিস ইয়ার্স’ বইতে জানিয়েছেন যে, মিলারের মতে (‘কোয়ায়েট্ ডেইজ ইন ক্লিশি’র) ‘টাইটল ইজ কমপ্লিটলি মিসলিডিং’। ... ...
ফিরভি ইঁয়াদ আ গ্যয়ে, তো কেয়া করে! খুদকো ডাঁটে কেয়া? ইঁয়াদকো রুখ দে কেয়া?" বলতে বলতে জল গড়িয়ে পড়ছিল ওঁর তুবড়ে যাওয়া গাল বেয়ে। গালের খাঁজে এসে ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে যাচ্ছিল সে নিম্নগামী নুন জলের স্রোত। চিবুক ছুঁয়ে সে জল পড়ে যাওয়ার আগেই তার উপর পশমের আস্তিন বুলিয়ে নিচ্ছিলেন মানুষটা। স্বজনের স্মৃতিতে বৃদ্ধ চোখে ভরে আসা মুক্তোজল, বড় দামী। ফেলা যায় না যে! তিনি মহম্মদ আতাউল্লা। তুরতুকের বাসিন্দা। ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের এই তুরতুক। কয়েক কিলোমিটার দূরেই পাকিস্তান সীমান্ত। এই তুরতুক গ্রামের মানুষেরা এখনও নিজেদের পরিচয় দেন বাল্টিস্তানি বলে। বছর কয়েক আগে বাল্টিস্তানই নাম ছিল এই প্রদেশের। আর দেশের নাম ছিল পাকিস্তান। তার পরে এল সেই চরম অস্থির বছরটা, ১৯৭১। মানচিত্রের সঙ্গেই ছারখার হয়ে গেল শতশত জীবন, পরিবার, সম্পর্ক, ভালবাসা। সীমান্তকে দিব্যি রেখে ভাগ হয়ে গেল জমিন। কিন্তু মানুষগুলোর ভাগ হওয়া তো জমিনের মতো সহজ নয়! সে যে কঠিন, বড় কঠিন! সেই কঠিনেরই শিকার হয়ে 'ভারতীয়' বনে গেলেন বাল্টিস্তানি আতাউল্লাজি। আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগে, বয়স তখন ২০। তখন রক্তে ফুটছে দেশপ্রেম। ভেবেছিলেন, যে করেই হোক ফিরে পাবেনই নিজের জায়গায়। ভেবেছিলেন, প্রিয়জনদের কাছে যাবেনই ফিরে! ভেবেছিলেন যুদ্ধের ক্ষমতা বুঝি ভালবাসার চেয়ে বেশি! বোকা ছেলে! ... ...
এ ভোটের বর্ণময় উৎসবে কি চাইবো আমি? কিই বা চাইতে পারে আমার মতো এককসত্তাসম্পন্ন, রাজনৈতিক- প্রশাসনিক-সামরিক ক্ষমতাহীন একজন মানুষ? চাইতে পারে “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”, নিদেন পক্ষে ফ্যানে-ভাতে। চাইতে পারে নদী-অরণ্য-বৃক্ষ-অরণ্যের সন্তানদের হত্যা বন্ধ হোক। আবার প্রায়-মৃত নদীগুলো বেগবান উঠুক। নদী মরে যাচ্ছে বলে খোদ আমেরিকায় ১৫০০-এর বেশি বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলোরাডোর সহ অনেক ছোট নদী আবার বেগবান হয়ে উঠেছে, হারিয়ে যাওয়া মাছ আর শৈবালেরা ফিরে আসছে ধরিত্রীর বুকে। এই সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর বিস্তর ঢালাও প্রতিশ্রুতির বন্যায় আমরাও একটু-আধটু চাইতে পারি। চাইতে পারি জীবন যাত্রার সুস্থ-স্বাভাবিক সমস্ত ধরনকে রাষ্ট্র এবং এর পরিচালকেরা মমতা নিয়ে স্বীকৃতি দিক। কোন একটি name tag-এ যেন তাদের দাগিয়ে দেওয়া না হয়। হাঙ্গর সদৃশ কর্পোরেটরা নয়, ভারতের অর্থনীতি নির্মিত হোক নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে। ... ...
ভোটে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে মমতা আন্দোল শুরু করেছিলেন ১৯৯০ থেকেই। তবে তিনি ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে গেল। পশ্চিম বঙ্গে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, গুন্ডা এবং বিপুল অর্থ ছাড়া ভোটে লড়াই করা সম্ভব নয়। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কানে এসেছে, প্রমাণ করা সম্ভব নয়, চলতি ভোটে বিপুল টাকা ছড়িয়েছে এই রাজ্যে আসন বৃদ্ধিতে উৎসাহী একটি দল। সারা দেশে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিপরীতে আমরা দেখছি, নতুন এক ঝাঁক তরুণ নেতা উঠে আসছেন। কানাহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, শহেলা রশিদ, জিগনেশ, হার্দিক। এরা কেজরিওয়াল পরবরতী প্রজন্ম। এইটুকুই যা আশার আলো। বাকিটা বড়ই অন্ধকার। ... ...
প্রায় জনমানবহীন এক আশ্চর্য নিসর্গকে রঙ-তুলিতে ধরতে চেয়ে গণেশ হালুই বারবার ভুল-বোঝার শিকার হয়েছেন। সমকালীন চিত্রধারার আপাত-দৃশ্যমান সমাজমুখিনতার বিপ্রতীপে তাঁর বিমূর্ত নিসর্গকে ফেলে তাঁর শিল্পকে সমাজবিমুখ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। মিতবাক, বিনয়ী মানুষটি উত্তর দিতে পারেন নি এই অভিযোগের। নাকি দিতে চাননি? আজ এক আত্মকথনে তিনি যখন বলেন, “এখন আমি একজন ছবি আঁকিয়ে। অনেকের মতে আমার ছবিতে মানুষের কথা নেই। আমি এর উত্তর খুঁজি। নির্ঘাত মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠাতেই মানুষ মৃত্যুর কথা ভোলে এবং এই ভোলার মধ্যেই যে আনন্দের ধারা, তাতেই সেই মৃত্যুর সুর বাজে।” সেও কোনো উচ্চকিত জবাব নয়, এ এক নিভৃত মনোলগ। নিজের সাথে নিজের কথা। ... ...
সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে, কৃষ্ণগহ্বর আসলে বিশাল পরিমাণ পদার্থকে ঠেসেঠুসে রাখা এক বস্তুপিন্ড। ঘনত্ব বোঝাতে আবারো আমাদের উদাহরণে ফিরে যাই। যে নক্ষত্রটি নিয়ে আমরা কথা শুরু করেছিলাম, সেই সূর্যের থেকে দশগুণ ভারি যে, তাকে যদি ঠেসে নিউ ইয়র্ক শহরের চৌহদ্দির মধ্যে পুরে দেওয়া হয় তাহলে যেরকম ব্যাপার হবে, একটা ব্ল্যাক হোলের ঘনত্ব অনেকটা সেরকম। কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষীয় বল এতই বেশি (কারণ প্রচন্ড বেশি ভর) যে তা আসেপাশের সমস্ত বস্তুপিন্ডকে গ্রাস করতে থাকে। অন্য নক্ষত্র যদি কাছে চলে আসে তবে তারও সেই হাল হয়। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা, কৃষ্ণগহ্বরের থেকে আলো পর্যন্ত নিস্তার পায়না। ফলে কৃষ্ণগহ্বর দেখতে ঠিক কেমন -- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন অন্ধকার এক বস্তুপিন্ডের কথা। ... ...
মেয়ে জন্ম নিলেই বাড়িতে মায়ের সতর্ক দৃষ্টি থাকে তার শরীর সাবধানে রাখার। শরীর তোমার দামী বিষয়টা যত না স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক তার চেয়ে ঢের বেশি যৌনাঙ্গকেন্দ্রিক। তোমার যোনি অক্ষত থাকা জরুরী, কারণ একদিন তোমায় একজন নির্দিষ্ট ছেলের মালিকানায় থাকতে হবে। কাজেই তোমার তুমি নয় তোমার যৌনাঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি ছেলে জন্মালে তার ট্রেনিং হয় মন নিয়ে। সে কতদূর পুরুষ হবে তার প্রমাণ রাখতে হয় সে কোন ইমোশনাল সেট ব্যাকে যাতে তার আবেগ চাপতে পারে। অর্থাৎ ছেলে আগে মন তারপর শরীর, যা কিনা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন একটি সত্ত্বা। তো এরকম ভিন্ন ফোকাস নিয়ে ছোট্টটি থেকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বড় হতে থাকে। এমন নয় যে এতে পরস্পরের প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে যায়। কারণ আপনি মানুন বা না মানুন ঐ “প্রেম” জিনিষটা যৌনবোধের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের। কিন্তু প্রেম ছাড়াও যৌনতা থাকে, আফটার অল সবই তো ঐ হরমোনের খেলা। ছেলেটি ক্রমাগত ইমোশন বা মন বিষয়কে মূল্যহীন ভাবতে ভাবতে ক্রমে একটি শরীর হয়ে দাঁড়ায় মূলতঃ। বাসে ট্রামে গা ঘেঁষে দাঁড়াতে চাওয়া এর খুব স্বাভাবিক পরিণতি। ... ...