সার্কাসে তুলসীদা খেলা দেখিয়েছে কী দেখায় নি, এই নিয়ে পাড়ায় বিবিধ মত ছিল। আমার বন্ধুরা জোর দিয়ে না বলেছিল, অথচ শিবুদা, কেষ্ট কাকা হলফ করে বলেছিল, তুলসীদাকে এক চাকা সাইকেল চালাতে দেখেছে, কাঁধের ওপর সাদা কাকাতুয়া; তুলসীদার বুকের ওপর টান টান করে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। ... ...
স্বস্তি জোড় হাতে তাঁর দিকে এগিয়ে গেল, নিচু হয়ে প্রণাম জানিয়ে বলল, “গুরুদেব, আজকে আপনাকে একদম অন্যরকম লাগছে কেন?” গৌতম আরও এগিয়ে স্বস্তিকে কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাই? ঠিক কী রকম লাগছে বল তো?” স্বস্তি গৌতমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “ঠিক কী বলতে পারব না, তবে একদম অন্যরকম। আপনি যেন কোন নক্ষত্রের মতো। সবে ফুটে ওঠা পদ্মফুলের মতো। কিংবা... কিংবা... গয়াশীর্ষ পাহাড়চূড়ার ওপরে পূর্ণিমার চাঁদের মতো”। ... ...
এইবার শিবরাম মাথা তুলে গড়্গড় করে বলতে লাগল “ আমি প্রতিদিন পড়া করে যাই বাবা। আজ পড়াটা হয়নি। কাল রারণ বধ খেলতে গিয়ে পড়তে বসা হয়নি। তাই পন্ডিত মশাই আমার কান মলে দিল। খুব লেগেছিল আমার। তাও কিছু বলিনি। কিন্তু তিনি আরও একবার…” কথাটা থামিয়ে একবার মাথা চুলকে নিয়ে কিছু একটা মনে করে বলল “ না না, একবার নয়। আরও দু-বার আমার কান মলে দিল। তাই আমিও তার কান মলে দিয়েছি।“ ... ...
বাংলার সমাজ অর্থনীতি সংস্কৃতির চলমান দলিল। পথে ঘাটে ট্রেনে বাসে অটো ট্রামের দেখা জীবন-সৃতি (স্মৃতি নয়)। ... ...
পথে ঘাটে যা দেখি। শুনি। এই কলকেতায়। তার একটি হদিস হাদিস। ... ...
২০০৬ এ যখন আমার এইচ আই ভির কথা জানাজানি হয়ে গেল এবং ঘরে বাইরে নানারকম ভাবে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছিল দাঁতে দাঁত চেপে তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাকে ভালো থাকতে হবে। লোকের মধ্যে ভুল ধারণাগুলো ভাঙতে হবে। ২০১১ সালে এই পোস্টারটা তৈরী করেছিলাম, আমার এখনকার অফিস থেকে। HIV নিয়েও সুস্থ সবল স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়, প্রচারের উদ্দেশ্যে। ... ...
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ১০০ দিন ছাড়াল। যুদ্ধাবসানে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা ক্ষীণ। ইউক্রেনের সেনানী ইউরোপে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউক্রেনকে আর ফ্রান্স পাঠাতে শুরু করেছে স্বয়ংক্রিয় সিজার হাউইৎজার কামান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনকে পশ্চিমি সামরিক সাহায্য আগুনে ঘি ঢালছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। কিন্তু যাবতীয় অশান্তি এবং বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ছড়ানোর মুলে তো গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আচমকা রুশ আগ্রাসন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত গুঁড়িয়ে দিতে অভ্যস্ত কলকাতা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পথে নামেনি। যদি নামত তাহলে রোজকার চায়ের সঙ্গে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে, গোপালদার চায়ের দোকানের ঠেকে বা বাড়ির বৈঠকখানায় বসে নিরীহ মারি বিস্কুট চিবানো বোধহয় সহজ হত না। তখন হয়ত রুশ দূতাবাসের সামনে জনতার বিক্ষোভে স্লোগান উঠত "বয়কট মারি বিস্কুট।" সাদামাঠা মারি বিস্কুটের সঙ্গেই যে জড়িয়ে রয়েছে রুশ রাজকীয় দম্ভের ইতিহাস! ... ...
অমিলপয়ার ছন্দে ফাল্গুনের এক বসন্তসন্ধ্যা নেমে আসছিলো আমাদের গ্রামে। বেঙ্গল ক্লাবে সারা রাতের অনুষ্ঠান। বুধাদিত্য বাজাবেন সেদিন। তিনি তখন যুবক এবং অদ্ভুত চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী নবীন প্রতিভা। সন্ধে আটটা নাগাদ অনুষ্ঠানের শুরু। সামনের দিকে সাকচি হাইওয়ের তেলেভাজার দোকানের পাশে বাইকটি লাগিয়ে আমি আর সুগত হলের দিকে এগোচ্ছি। অন্ধকার থেকে গেটের হ্যালোজেন আলোয় আসতেই দেখি সামনে পর্ণা আর একটি মেয়ে। প্রথম গেটে কার্ড দেখাচ্ছে। ঠিক পিছনেই আমরা। ময়ূরপঙ্খি রঙের সিল্ক থেকে মৃদু খসখস শব্দ আর অচেনা কোনও সুরভির অস্পষ্ট ইশারা। চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলুম। মুখ ফেরাতে দেখতে পেলো। ... ...
এক চমৎকার উজ্জ্বল শনিবারে জন চল্লিশ মানুষ এসে বাগান আলো করে গেলেন । তাঁদের সবার পরিচয় এই সামান্য প্রতিবেদনে দেওয়া সম্ভব নয় । এঁদের অনেকের সঙ্গে আমাদের এই পরিচয় ইতিমধ্যেই বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ একদিন শেষ হবে । তখনও আমরা এমনি বাগানে বা গৃহকোণে পাশা পাশি বসে গল্প করব। যেমন আইরিশরা বলে এই দুনিয়াতে অচেনা অজানা কেউ নয় , সবাই তোমার বন্ধু, এতদিন দেখা হয় নি শুধু। ... ...
ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিল হয়তো সামাজিক বিধি-বিধান থেকে অথবা আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তির আশায়। কিন্তু সেই ধর্মই এখন সারা বিশ্বের অন্যতম উদ্বেগের মূল কারণ ... ... ...
এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালের রাতগুলি বাষ্পহীন, মেঘহীন এবং নিঃশব্দ। সামনের একটা মাঠ ছাড়া চোখের সীমানায় কোথাও আলোর কোনো উৎস নেই, খালি দূরে হাইওয়ে যেন জ্বলন্ত আংরার শেষ আভাটুকু হয়ে ফুটে থাকে। এই রাত্রের অন্ধকারের মধ্যে মিশে বসে থাকি রোজ, মাথার উপরে তাকিয়ে খুঁজতে থাকি বাল্যবন্ধুর মতো চেনা তারামন্ডল - লুব্ধক চিনতে পারি, চিনতে পারি কালপুরুষের কোমরবন্ধনী, জিজ্ঞাসাচিহ্নের মত হাতড়ে হাতড়ে খুঁজি সপ্তর্ষিদের -- পুলহ, পুলস্ত্য, অত্রি, অঙ্গিরা ... আর? নামগুলো মনে পড়ে না আর, শুধু মনে পড়ে আগের জন্মের শহরে ফেলে আসা একটা অলৌকিক ছাদ আর সে ছাদের কোণায় কোণায় জমে থাকা ধুলোর মত ময়লা একটুকরো ছেলেবেলার গল্প ... ... ...
[ তিড়িং করে সে বাসের ফার্স্ট গেটে এক লাফ ! কি যে হলো অচিরেই ! ডান পা’খানা নীচের সিঁড়িতে লাগলই না আমার। হড়কে যেতে যেতে বুঝলাম রড ডান হাতে ধরা থাকলেও পা স্লিপ খেয়ে ঘষ্টাচ্ছে রাস্তায়। বাস থামল না। কণ্ডাক্টর দেখলো। গতি বাড়াল বাস। আমার হাত ছেড়ে গেল বাসের রড। চিৎ হয়ে সটান রাস্তায়। বাসের পেছনের চাকা অবলীলায় ঘষ্টে দিল আমার ডান উরু। একটা বিকট যন্ত্রণার মধ্যেই দেখলাম বাস চলে যাচ্ছে দূরে।] ... ...
কার্ল-হান্সের সঙ্গে পুতিনের প্রথম সাক্ষাতের দিন সে তার রাশিয়ান ফলাতে গিয়েছিল। তাকে রীতিমত চমকে দিয়ে পুতিন পরিষ্কার জার্মানে জবাব দিয়েছেন। কার্ল- হান্স অবশ্য তাঁর অ্যাকসেন্ট শুনে খুব মজা পায়। পুতিনের জার্মান জাখসেন প্রভাব দুষ্ট - যে উচ্চারণ আমি স্টাডরোডার হাইকে ও তার পরিবারের লোকজনের মুখে শুনেছি। ওই যে কয়েক বছর পুতিন ড্রেসডেনে ছিলেন, এটা সেই সংসর্গের ফল! কার্ল-হান্স খাঁটি প্রাশিয়ান - তার মতো পরিশীলিত জার্মান খুব কম লোককে বলতে শুনেছি। সভ্য সমাজে সোয়েবিশ হেসিশের মতন জাখসেন ডায়ালেকটকে একটু নিচু নজরে দেখা হয়। ... ...
কিছুদিন আগে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আশির দশকে বেশ কিছু ভালো স্মৃতি। সেই টানে, হচ্ছে শুনে, সংস্কৃতি-র অনুষ্ঠানে। দুজন ভালো গায়ক গায়িকা গাওয়ার কথা। গান শুনলাম। মন ভরলো না। ইউ টিউবে সিডিতে শোনার ভালো লাগা থাকলো না।কিন্তু যা দেখে একটু বিস্মিত। উদ্দাম নাচ।প্রচণ্ড গরম। জায়গাটা খোলা এটাই ভরসা।বাংলা লোকগান হোক আর রবীন্দ্রসঙ্গীত-- নাচ উদ্দাম।বিয়ারের বোতল দেখলাম ডেলিভারি দিচ্ছে।এক তরুণীর সঙ্গে বন্ধুদের মিষ্টি বচসা।'আমিই কিন্তু ফোনে অর্ডার দিয়েছিলাম। তাই আমি আগে'।ডেলিভারি বয়কে জিজ্ঞেস করে জানলাম, নরম উষ্ণ সব পানীয়ই আজকাল ফোন করে মেলে। হাজার হাজার তরুণ তরুণী।অনেকেই বসে শুনছিলেন।হাজার খানেক উদ্দাম নাচে। উন্মত্ত গরমে। আর এইসব কায়দার আলো।তার তাপও কম নয়।মঞ্চের একদম কাছে শত শত নৃত্যল ... ...