ফেলে আসা সেই সব দিনের কথা এমন দিনেই বলা যায়। ... ...
সত্যেন সেন এই বিদ্রোহ নিয়ে লিখেছেন অসাধারণ এক উপন্যাস বিদ্রোহী কৈবর্ত। আমার জ্ঞান চক্ষু উন্মোচিত হয়েছে এই উপন্যাস পড়েই। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস তো অনেকেই পড়ছি, আমি এইটাও তেমন কিছুই আশা করে বই নিয়ে যখন বসলাম তখন একটা ঝাটকা খেলাম। সত্যেন সেনের লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম। লেখার ভঙ্গি আমার পরিচিত। কিন্তু এখানে যেন সব অন্য রকম। এক টানে আমাকে নিয়ে চলে গেলেন তৎকালীন গৌড় জনপথে! কৈবর্ত প্রধান দিব্বোক যে সেই সময় এবং অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অসাধারণ চরিত্রের নেতা ছিলেন তা যেন দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। ক্ষমতা নিয়েই কৈবর্ত রাজা দিব্বোক ঘোষণা দেন এতদিন রাজা কর নিত ফসলের ছয় ভাগের এক ভাগ, এবার থেকে নিবে আট ভাগের এক ভাগ! এইটা ওই সময়ের হিসেবে বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা, কৈবর্তরা তাদের দেবতা ওলান ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নরবলি দিত, সবার অমতে দিব্বোক প্রথম বছরেই নরবলি বন্ধ ঘোষণা করেন। ধর্ম বড় নেশা, এই নেশায় মাতালরা এইটা মেনে নিতে রাজি ছিল না। দিব্বোক প্রথম বছরে পারে নাই কিন্তু পরবর্তীতে দিব্বোক এত জনপ্রিয় হয় যে জনগণ দিব্বোককে খুশি করতে নিজেরাই নরবলি বন্ধ করে দেয়। ... ...
সামনের জলে সেই প্রতিফলনের ছবি সুস্পষ্ট! চৌখাম্বা, মন্দানি, সুমেরু, খর্চাকুন্ট আর কেদার – বাকি শৃঙ্গরা ঢাকা পড়েছে ওক, দেওদার, রডোডেনড্রনের বনানীর পেছনে, তার-ও ছায়া জলে। আমাদের দেখাদেখি আরও চার-পাঁচজন পর্যটক এসে জড়ো হন সেই জায়গায়। সকলেই আমরা নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে সেই স্নিগ্ধ ভোরের অলৌকিক দৃশ্যটুকু শরীর-মনের অলিন্দে পূর্ণ করে নিতে থাকি। তবু এই পূর্ণতার কি সীমা আছে! না শেষ আছে! “অসীম কালসাগরে ভুবন ভেসে চলেছে। অমৃতভবন কোথা আছে তাহা কে জানে।। হেরো আপন হৃদয়মাঝে ডুবিয়ে, একি শোভা! অমৃতময় দেবতা সতত বিরাজে এই মন্দিরে, এই সুধানিকেতনে।।“ ... ...
রেখাদি সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বকছেন রাতের খাবার হজম না হওয়া সত্ত্বেও সকালের খাবার খাওয়ার জন্য, স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার না খেয়ে মুখরোচক খাবার খাওয়ার জন্য। উনি জানতেন না কল্পনার বেশীরভাগ দিনই রাত্রে খাওয়া হয় না, সকালেও না। ওর মা দুপুরের পর এসে রান্না করলে ওরা সবাই বিকেলের দিকে একবার খায়। কল্পনার মা যেসব বাড়ী কাজ করে তারা কেউ কোনওদিন রুটি বা মুড়ি দিলে রাত্রে ওরা একগাল খায়, নাহলে আবার সেই পরেরদিন বিকেলে। উনি জানতে চানও নি অবশ্য। মিনুদি কোত্থেকে একঠোঙা মুড়ি এনে ওর হাতে দিয়ে বলে 'তুই আস্তে আস্তে একটু করে জল দিয়ে দিয়ে খা দিকিনি'। রেখাদির দিকে তাকিয়ে বলে 'আপনি ক্লাসে যান দিদিমণি, এই মুড়িটুকু খাইয়েই আমি ওকে ক্লাসে দিয়ে আসছি'। আমরা চুপি চুপি ফিরে আসি। আমি জানি অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে পেটে খুব ব্যথা হয়, বাবা বলত রাত্রে না খেলে অনেকক্ষণ পেট্খালি থাকবে, পেটে খুব ব্যথা হবে। ... ...
কাজী নজরুল ইসলামের ("বিদ্রোহী কবি") ভাঙার গান শীর্ষক "কারার ঐ লৌহকপাট" গানটিকে সম্প্রতি আল্লারাখা রহমান সাহেব পিপা নামে একটি চলচ্চিত্রে নিজের মতন করে সুর দিয়ে ব্যবহার করেছেন। গানের কথা এক রেখেছেন কিন্তু সুরটি নিজের মতন করে অনেকটা বাংলার লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকে (শুনে মনে হল, আমি সুরের সমঝদার নই, পাঠকদের কাছে নিবেদন, যদি ভুল মনে হয়, শুধরে ... ...
এই বনসাই হিমলিঙ্গটিকে মৃত্যুঞ্জয়নাথের পবিত্র তুষারলিঙ্গ বলে ইউটিউবে পোষ্ট করলে গনেশের দুগ্ধপানের মতো পাবলিক খেতেও পারে। যে দেশে অহরহ দেখা যায় বিশ্বাসে মিলায় বস্তুর নমুনা - যে দেশে "গো করোনা, গো" ভজন গেয়ে মন্ত্রী নাচেন ধৈ ধৈ করে, সে দেশে এই সামান্য ঘটনাও এক অলৌকিক চমৎকার হিসেবে বিবেচিত হতেই পারে। ... ...
আজ ভূত চতুর্দশী - মানুষের মতো ভূতদেরও চতুর এবং নানা দোষে দোষী হতে কোন অসুবিধে নেই - তাই আজ ভূত চতুর্দশীতে তাদের স্মরণ করা যাক। ... ...
ডোপামিন নামক হরমোন। উগ্র দেশপ্রেম। ক্রিকেট, বলিউড, হিন্দুত্ব, রামমন্দির। শাসকশ্রেণীর উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে কীভাবে তার দৈনন্দিন, বাস্তব, জ্বলন্ত সমস্যা থেকে যত বেশি পারা যায়, ভুলিয়ে রাখা। ... ...
উখীমঠের কিছু আগে থেকে রাস্তার চড়াই শুরু হল। এখান থেকে গুপ্তকাশীর রাস্তাও চলে গেল নদী পার হয়ে ওপারে। কেদারের পথ ঐদিকেই মন্দাকিনী বরাবর। এপাশ থেকে আমরা দেখলাম অপর পাশে পাহাড়ের গায়ে স্তরে স্তরে বাড়ি-ঘর নিয়ে সেজে ওঠা গুপ্তকাশী, ঠিক যেন কেউ আঠা দিয়ে খেলনা কিছু ঘরবাড়ি বসিয়ে দিয়েছে, এমন ঝুলে আছে বলে মনে হচ্ছে সেগুলো! আর পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে চাষ-বাসের উদ্যোগ। সবুজ উপত্যকা মাঝে মাঝেই বেশ কিছুটা পাহাড়ি ঢাল জুড়ে। আমরা ফেরার পথে উখীমঠ দেখবো, এখন সোজা চোপতা যেতে হবে। উখীমঠ থেকে চোপতার রাস্তার সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। অপরাজিত-এ অপুর প্রণবকে লেখা চিঠির কথা মনে পড়ে “I enter it by the Ancient way, Through the Ivory Gate and Golden”! এই পথ ঐতিহাসিক পথ, এই পথ পুরাণের-ও পথ। ইতিহাস আর পুরাণ এসে মিলে যায় যেন এই পথে। শিব মহিষের রূপ ধরে পালিয়ে বেড়ান পঞ্চকেদারের পথে, পঞ্চপান্ডব তাড়া করে ফেরেন তাঁকে ধরবেন বলে, উমাপ্রসাদ, প্রবোধকুমার, জলধর সেনরা জীবনকে নতুন করে খুঁজে বেড়ান, মানুষ দেখেন, ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করেন, জানিয়ে দেন আমাদের। আর আমরা ফিরে ফিরে এসে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি সেসব বারবার, মানুষ, ইতিহাস, পুরাণ আর সর্বোপরি হিমালয়ের অতুলনীয় সৌন্দর্য-সম্পদ। তীর্থযাত্রার বা ধর্মকর্মের উদ্দেশ্যে বের হইনি, কিন্তু হিমালয় নিজেই যে তীর্থ, সে স্থান-মাহাত্ম্যে আর সৌন্দর্যে প্রতি মুহূর্তে মালুম হয়। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৯ … বলি, কিছু মনে করবেন না হাফিজভাই, মুসলিম হয়েও আপনি তো এই হনুমান মন্দির সম্পর্কে অনেক খবর রাখেন! উনি বলেন, এখানে হিন্দু মুসলিম ভেদভাব নেই। বহুদিন ধরে আমরা মিলেমিশে আছি। এই দেখুন না খবর পেলাম ঐ মন্দিরে বার বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গতকাল পর্ষদের ইলেকট্রিসিয়ানকে ধরে খুঁজে বার করলাম এক জায়গায় লুজ কনেকশন ছিল। দাঁড়িয়ে থেকে তা ঠিক করালাম। তারপর উনি কপালে হাত ঠেকিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকে এই মন্দিরের কথা অনেক শুনেছি। স্থানীয়রা এই হনুমানজীকে খুব জাগ্ৰত বলে মানে। ... ...
ক্রিকেট নামক মগজধোলাই মেশিন, এবং গ্ল্যাডিয়েটরদের মাথা কেটে নেওয়ার উন্মাদনা। ... ...
এই দিকের গেটের একটু পাশেই ভোপাল ইন্টারস্টেট বাস স্ট্যান্ড। সোজা জাতীয় সড়ক ৪৬ চলে গেছে ওবাইদুল্লাগঞ্জ হয়ে সাতপুরা জাতীয় উদ্যান , পাঁচমারি ইত্যাদি হয়ে হোসাঙ্গাবাদের দিকে। ওবাইদুল্লাগঞ্জের পরেই ডানদিকে কিছুটা বেঁকে গিয়ে বিন্ধ্য পর্বতের কোলে রাতাপানী ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে ভীমবেটকা। মহাভারতের ভীম বনবাসের সময় নাকি কিছুদিন এখানে ছিলেন , সেই ভীমের বৈঠক থেকে জায়গার নাম স্থানীয়দের মতে ভীমবেঠকা। ভীমের জন্য নয় , জায়গাটা আদিম মানুষদের গুহাচিত্রের জন্য বিখ্যাত। আদিম মানুষ এখানে গুহায় রাত্তিরবেলা থাকত , সকালবেলা বাইরে বেরিয়ে শিকার করত , হান্টার গ্যাদারার তারা চাষবাস শেখেনি তখনও। একসময় তারাই সেখানকার পাহাড়ের আশ্রয়গুলোর দেওয়ালে আঁকতে শুরু করে। প্রথমে সরলরেখায়। কাঠির মাথায় আলুর দম। আলতামিরায় বা ফ্রান্সের ল্যাসকো , শোভে ইত্যাদি গুহাগুলোতে রঙিন টানা স্কেচের মত যেসব ছবি দেখা যায় তার থেকে ভীমবেটকার ছবি অনেকটা আলাদা। দশহাজার বছর আগে তারা জ্যামিতি না জানলেও পরিষ্কার ত্রিভুজ , বর্গক্ষেত্র ইত্যাদি আঁকতে পারত। ভীমবেটকা ছাড়াও এই রকম নব্য প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র পাওয়া গেছে আশেপাশের সাতধারা , জাওরা এবং পাঁচমারিতে। ... ...
রুদ্রপ্রয়াগ থেকে অগস্ত্যমুনির দিকে গাড়ি এগনোর সাথে সাথেই চারপাশের পাহাড়গুলো কেমন হঠাৎ ক’রে উঁচু হতে হতে আকাশ ছুঁয়ে ফেলছিল, ঘিরে ফেলছিল পাঁচিলের মত, বাঁক নেওয়ার মুহূর্তে মনে হচ্ছিল এরপর আর রাস্তা আছে তো? অলকানন্দার বাঁদিক ধরে চলতে চলতে অগস্ত্যমুনি পৌঁছনোর একটু আগে গাড়ির কাঁচে হঠাৎ একঝলক দুধসাদা পাহাড়ের অংশ, একেবারেই হতবাক করে দিয়ে আবার মিলিয়ে গেল। মেঘ বলে ভুল করার কোনো উপায় নেই, চারটে কোণ আর শিখরদেশের ট্রাপিজিয়ামের আকৃতিতে ওই এক ঝলকেই চিনিয়ে দিয়ে গিয়েছে সে নিজেকে; হ্যাঁ, চৌখাম্বা দর্শন দিয়েই তাহলে এ’যাত্রার শুরু; তখনো জানিনা, এরপর এ-যাত্রা যেখানেই যাই আকাশের গায়ে চৌখাম্বা লেগে থাকবে সফেদ-শুভ্র শিখরশ্রেণীর কিরীটে কোহিনূর-এর মতো! কিন্তু ওই একবারই, অগস্ত্যমুনির কাছে এসে বাঁদিকে কেদারের গিরিশ্রেণী দৃশ্যমান হলেও সামনের উঁচু পাহাড়-প্রাচীরে চৌখাম্বা আবার অদৃশ্য উখিমঠের কাছাকাছি আসা পর্যন্ত। পাহাড় কিভাবে প্রাচীর হয়ে তার ভয়ঙ্কর সুন্দর চেহারা নিয়ে দিগবিদিক জুড়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, গাড়োয়ালের হিমালয় তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ! ... ...
"৮৭৬ সালে , মাঘ মাসের উজ্জ্বল অর্ধের দ্বিতীয় দিনে সবাই এই মন্দিরে সমবেত হয়েছে যা ভৈলবভট্টের ছেলে আল্লা ২৭০ হস্ত দৈর্ঘ্য এবং ১৮৭ হস্ত প্রস্থের ওপর বানিয়েছেন। এছাড়াও একটা ফুলের বাগানের জন্য পুরো নগর অর্থ দান করেছে যাতে এই মন্দিরের পুজোর জন্য দিনে ৫০টা করে ফুলের মালা তৈরী হতে পারে।" [১ হস্ত ~ ৪৫ সেন্টিমিটার] গণিতজ্ঞ ব্রহ্মগুপ্ত এর প্রায় দুশো বছর আগে পাটিগণিতের নিয়মগুলো লিখে ফেলেছিলেন। ১৯৩১ সালে ৬৮৩ সালের ক্যাম্বোডিয়ার একটা মন্দিরের লিপিতে শূন্য পাওয়া যায়। আপাতত সেটাই পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন শূন্য। গ্বলিয়র দ্বিতীয় স্থানে। আরেকটা প্রাচীন শূণ্য পাওয়া গেছে পাকিস্তানের বাকশালী পুঁথির বার্চ গাছের ছালের পাণ্ডুলিপিতে , যেটা রাখা আছে অক্সফোর্ডের বোডলেইন লাইব্রেরীতে। শূন্যের ইতিহাসে আগে যদি কোনোদিন গ্বলিয়র শিলালেখের উল্লেখ দেখে থাকেন তাহলে বুঝে নেবেন এটাই সেই জায়গা। ... ...