এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • শিকাগোয় শিহরণ (দ্বিতীয় ও শেষ ভাগ)

    Nabhajit লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৫৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • প্রথম | দ্বিতীয় ও শেষ
    চার

    আজ সারারাত ঘুমোতে পারেনি ক্রিস। আইভরির খুনের পর, পুলিসে রিপোর্ট করে গাড়ী পার্ক করে যখন ক্রিস নিজের ফ্ল্যাটের দিকে যাচ্ছিল, ঠিক তখন মনে পড়ে গাড়ীর পেছনের সিটে রাখা আইভরির ব্যাগের কথা। ব্যাগটা খুলতেই আরেকটা শক খায় ক্রিস। ওই ব্যাগে ছিল ১০০ ডলারের ২৫ টা বান্ডিল, মানে দু লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ডলার। কোথায় রাখবে? কি ভাবে লুকোবে? কাকে দেবে এই সব ডলার? ক্রিস নিজে এই ডলার আত্মসাৎ করার কথা ভাবেও নি। সারারাত না ঘুমিয়ে ভাবছিলো ভারতে একটা অনাথ আশ্রম আছে ওর চেনা, সেখানে ও মাঝে মাঝে কিছু টাকা পাঠায়। এই পাপের ধনের কিছু অংশ তাদেরও দিলে মন্দ হয় না, কিন্তু এই টাকা নিয়ে যাওয়া মুশকিল। নিজের ব্যাঙ্ক একাউন্টে এই টাকা জমা দেওয়া যাবে না। ভাবছিলো, আইভরি কি কাউকে বলেছিলো যে ও ক্রিসের সঙ্গে কোথায় যাবে? আইভরিকে বিকেল বেলা ব্লুআইল্যান্ড এর একটা বাজারের সামনে থেকে গাড়িতে তুলেছিল, তখন সেখানে আর কেউ ছিল না। ক্রিসের মনে হচ্ছে যে হয়তো আইভরি কাউকে বলেনি কিন্তু হতে পারে ও কাউকে জানিয়েছিল। এই চিন্তা নিয়ে ঘুম আসছে না। আইভরি বিয়ে করেনি, একা থাকতো। ওর জীবনের আকর্ষণ ছিল ওর জিম। একজন ভালো মানুষের এই অকারণ মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। কাল জিম যাওয়ার দিন। ক্রিস ভাবছে কিভাবে রিএক্ট করবে যখন শুনবে যে আইভরি মারা গেছে।

    পরদিন অফিসে মন লাগাতে পারলো না ক্রিস। বিকেলে জিমে গিয়েই শুনলো আইভরির কথা। আইভরি কেন ওখানে গেছিলো সে কথা কেউ জানে না। পুলিশের সন্দেহ আইভরি ড্রাগের ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল। সেদিন আর জিম করা হয়নি। অনেকক্ষন তিনজন বসে ভাবতে থাকে কিভাবে চালানো যায় এই ক্লাব। ডিজেল বলে যে এই ক্লাবটা রেজিস্টার্ড। টনি, ডিজেল, ভোরোনিকা আর আলেক্স এই ক্লাবের এক্সেকিউটিভ মেম্বার। ভেরোনিকা ওদের পাড়ার মেয়ে, ক্লাব খুলতে অনেক সাহায্য করেছে। ক্রিস চিনতে পারলো মেয়েটাকে। খুব সুন্দর দেখতে, এই জিমেই দেখা হয়েছে অনেকবার।

    দু দিন পর পর ক্লাবে পুলিশ এসে অনেকরকম অনুসন্ধান চালায়। এদিকে এই শহরের শেরিফ এসে টনিকে বলে গেছে যে এই ক্লাব চলুক, কিছু গ্রান্ট দেওয়ার কথাও বলেছেন। আলেক্স একদিন ক্রিসকে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করে,
    - তুমি কি আইভরিকে নিয়ে গেছিলে শিকাগো হাইটস?
    - না তো, কেন জিজ্ঞাসা করছো?
    - না, আমাকে কিছুদিন আগে আইভরি বলছিলো যে ওর শিকাগো হাইটস যাওয়ার আছে, আমাকে অনুরোধ করেছিল নিয়ে যাওয়ার জন্য, আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই যেতে পারিনি। আমাদের মধ্যে আমি ছাড়া তোমার গাড়ি আছে, বাকি কারো নেই, তাই ভাবছিলাম।
    ক্রিস একটু নারভাস হয়ে পড়েছিল, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
    - আমি অফিসে ব্যস্ত থাকি, তাই হয়তো আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি। আইভরি ক্যাব নিয়েও তো যেতে পারে।
    - না, পুলিশ অনেক খোঁজ করেছে, লোকাল ক্যাব ড্রাইভাররা কেউ সেদিন ওখানে যায় নি। তাছাড়া ওখান থেকে ফেরার সময় ক্যাব পাওয়া খুব মুশকিল। আইভরি যেখানে গেছিলো, সেখানে নিজের কোনো বিশস্ত লোককেই ও নিয়ে গেছে বলে পুলিশ অনুমান করছে, কিন্তু ও এতদূর গেলো কি ভাবে? , আলেক্স সন্দেহ প্রকাশ করে।
    - আমার জানতে ইচ্ছা করে, আইভরি কেন গেলো ওই জায়গায়? ক্রিস পাল্টা প্রশ্ন করে।
    আলেক্স চুপ করে থাকে, কোনো জবাব দেয় না।

    এদিকে ক্রিস নিজের ফ্ল্যাটে প্রায় দু লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ডলার এর নোট নিয়ে বসে আছে, মাথায় চিন্তা সারাক্ষন যে কিভাবে এতো টাকা কে ঠিক কাজে লাগানো যেতে পারে। কোনোভাবে এই টাকা পুলিশের হাতে পড়লে ও খুব বাজে ভাবে জড়িয়ে যাবে এই ড্রাগ দুনিয়ায়।

    একদিন BIC ক্লাবের এক বাঙালি ছেলে অনিল এর সাথে দেখা হয় শিকাগো শহরে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যে অনিলের সখ পুরোনো মুদ্রাসংগ্রহের। একটা দোকান আছে শিকাগোতে, ও সেখানে প্রায়ই আসে নতুন কিছু এলো কিনা দেখবার জন্য। ক্রিস কথা বাড়ানোর জন্য জিজ্ঞাসা করে
    - নতুন কিছু দেখলে আজ?
    - হাঁ, একটা সোনার পয়সা দেখলাম আকবরের সময়ের ১৫৫৬-১৬০৫ সালের।
    - কি রকম দাম?
    - ৭০০০ ডলার চাইছে, এসব জিনিসের দাম শেয়ার এর দামের মতো উঠা নামা করে জানো?
    - তাই নাকি?
    এই কথা বলতে বলতে ক্রিসের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। কিছু পুরোনো কয়েন কিনে রাখা যেতে পারে এই পাপের পয়সায়। তারপর ব্যাংকের লকারে রেখে দিলেই শান্তি। ক্রিস জিজ্ঞাসা করে,
    - আচ্ছা ক্যাশ টাকা দিয়ে কেনা যায় এই ধরণের পয়সা।
    - চার পাঁচ হাজার পর্যন্ত ওরা ক্যাশ নিয়ে নেবে, জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারো। তুমি কি কয়েন জমাও নাকি?
    - তেমন কিছু নয়, সামান্য।

    পরদিন ক্রিস গিয়ে হাজির হয় আর্চার এভিনিউ, শিকাগো কয়েন কোম্পানির দোকানে। একথা সেকথার পর ওরা আকবরের সোনার কয়েনটা দেখায়। ৭০০০ ডলার। ক্রিস জিজ্ঞাসা করে ওরা ক্যাশ নেবে কিনা। দোকানদারের মুখ দেখে মনে হয় খুব খুশি নয়। ও ভেতরে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে যায়, তারপর ফিরে এসে বলে যে সাধারণত ওরা এতো টাকা ক্যাশে নেয় না, কিন্তু এই কয়েনের বেশি খরিদ্দার নেই তাই এই যাত্রায় ওরা ক্যাশ নেবে। ক্রিস টাকা দিয়ে কয়েনটা কিনে ফেলে। ক্যাশ ও নিয়েই গেছিলো।

    পরের সপ্তাহে ক্রিস নিজের ব্যাংকে গিয়ে একটা লকার ভাড়া করে, সেখানে গচ্ছিত রাখে সেই কয়েন। এরপর শুরু হয় ক্রিসের অভিযান, ক্যাশ দিয়ে আরো কিছু কয়েন কেনার। শিকাগোর পশ্চিমে একটা শহর আছে সমবার্গ, সেখানেও একজন কয়েন ডিলার আছে, তার থেকে আরো কিছু দুষ্প্রাপ্য কয়েন কিনে ফেলে। এদিকে ক্যাশ টাকা কমছে আর ব্যাংকার লকারে দুষ্প্রাপ্য মুদ্রা বাড়ছে। এক মাসের মধ্যেই প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ডলার শেষ, বাকি এক লক্ষ এখনো ঘরে পরে আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ পয়সা ও কিনেছে প্রাইভেট বিক্রেতাদের থেকে, নিজের নাম না বলে। দোকান থেকে কিনতে হলে নিজের নাম ঠিকানা দিতে হয়, কে জানে কখন এই খবর ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট এর হাতে চলে যাবে। এর মধ্যে একবার ক্রিসকে যেতে হয়েছিল ভারতে, ওর মা থাকেন। যাওয়ার সময় বেশ কিছু কয়েন নিয়ে গেছিলো, কোনো অসুবিধা হয় নি। একটা ছোট পয়সার ব্যাগে আরো বেশ কিছু পয়সার সাথে দশটা দুষ্প্রাপ্য কয়েন ও চলে গেছিলো ইন্ডিয়া। সেখানে ক্রিসের মায়ের একটা ব্যাঙ্ক লকার আছে।পয়সা গুলো সেখানে রেখে এসেছিলো। এইভাবে প্রায় দুমাস কেটে গেছে আইভরির খুন এর পর।

    পাঁচ

    একটা কথা মাঝে মাঝে মনে হয়েছে ক্রিসের যে আইভরির হাতে দু লক্ষ ডলার এলো কোথা থেকে। একদিন জিম থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে একটু হাঁপাচ্ছে, গাড়ি তখনো চালু করেনি, হঠাৎ দেখতে পেলো জিম থেকে টনি বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখছে। সেদিন জিমে টনি ছাড়া আর কেউছিল না, ক্রিস শেষে বেরিয়েছিল তারপর টনি জিম বন্ধ করে বেরিয়েছে। একবার ক্রিস ভাবলো টনিকে লিফ্ট দেবে কিন্তু টনি যে ভাবে এদিক ওদিক দেখছে ক্রিসের মনে হলো ও কারো জন্য অপেক্ষা করছে। ক্রিসের গাড়িটা বেশ খানিকটা দূরে পার্ক করা আছে, টনি দেখতে পাচ্ছে না।ক্রিস একটু অপেক্ষা করে দেখতে চাইলো টনি কার জন্য অপেক্ষা করছে। ঠিক সেই সময় একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো টনির কাছে। দু জন নামলো গাড়ি থেকে। ক্রিস দেখেই চিনতে পেরেছে এই দুজনকে, এরাই আইভরিকে মেরেছিলো। মাথা ঢাকা কিন্তু এদের চলা ফেরার ভঙ্গি দেখে ক্রিস চিনতে পেরেছে, এমনকি এদের পোশাকও এক, আগের দিন যেমন ছিল। বিশেষ করে একটা জিনিস ক্রিসের চোখে পড়েছে, একজনের জুতো সেই আগের দিনের মতো জ্বলছে। ক্রিস চুপ করে বসে দেখছে এরা কি করে। দেখে মনে হচ্ছে এরা টনির বন্ধু। কিছুক্ষন কথা বলার পর ওই দুজন টনির হাতে একটা ছোট ব্যাগ দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। ক্রিস বুঝতে পারছে না টনি কেন এই লোকগুলোর সাথে বন্ধুর মতো কথা বলছে। টনির হাতেই বা কি দিলো এরা? কিছুক্ষন পর আর একটা গাড়ি এলো, টনিকে নিয়ে চলে গেলো। রাত প্রায় নটা বাজে, এখন আর কিছুই করার নেই, ক্রিস চলে গেলো নিজের ফ্ল্যাটে। মাথায় জিদ চেপে গেছে ক্রিসের, দেখেই ছাড়বে এদের মতলব।

    টনি একটা বুট ক্যাম্প চালায় সকাল বেলা শনিবার। ক্রিস সেখানে গিয়ে হাজির হলো। ঘন্টা দুয়েকের অনুশীলনের পর টনি, ডিজেল আর আলেক্সের সাথে আড্ডা মারলো খানিকক্ষন, তারপর টনি অনুরোধ করলো ওকে কেলুমেট পর্যন্ত লিফ্ট দেবে কি না ক্রিস। ক্রিস রাজি হয়ে গেলো কারণ কেলুমেট ওর রাস্তায় পড়বে। আজ ছুটির দিন, এমনিতেই কিছু করার নেই আজ। গাড়িতে যেতে যেতে ক্রিস জিজ্ঞাসা করলো টনিকে,
    - আইভরির খুনিরা কেউ ধরা পড়েছে?
    - আমি জানি না, তুমি কেন জানতে চাইছো?
    - না, আইভরির সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিলো, ওর মৃত্যুটা মেনে নিতে খারাপ লাগছে। আমি চাই ওর খুনির শাস্ত হোক।
    - তুমি দেখেছো যে টিভিতে বলেছে যে আইভরিও ড্রাগ গ্যাং এর লোক ছিল। আমি নিজেকে এর মধ্যে জড়াতে চাই না, তুমিও বেশি কৌতূহল দেখিয়ো না।
    ক্রিসের ইচ্ছা করছিলো জিজ্ঞাসা করে, তাহলে সে দিনের ওই লোকগুলো কারা যারা তোমার হাতে কিছু দিয়ে চলে গেলো, ওরাই তো আইভরিকে মেরেছিলো, আমি নিজের চোখে দেখেছি। এই মুহূর্তে এতো কথা বলার কোনো মানে হয় না, টনি ঘাবড়ে গিয়ে কিছু করে ফেলতে পারে। টনিকে বরং ফলো করা উচিত কিছুদিন, দেখতে হবে ও কি করে। ক্রিস জিজ্ঞাসা করলো,
    - এখানে কোনো গ্রোসারির দোকান আছে? তাহলে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি কিছু বাজার করে নিতে পারি।
    টনি কেলুমেট এ পৌঁছে একটা বাজার দেখিয়ে দিলো ক্রিসকে, তারপর নেমে চলে গেলো। ক্রিস নজর রাখলো টনি যে দিকে গেছে সেই দিকে, তারপর এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করে টনির পিছু নিলো। বেশ অনেক দূরে টনিকে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলার সাথে কথা বলছে। রাস্তার দু দিকে দোকান, ক্রিস চলতে থাকলো আরো কিছুটা, টনির দিকে। টনি এখনো দেখতে পায়নি ক্রিসকে। দেখলেও বোঝার উপায় নেই যে ক্রিস ওকে ফলো করছে, কারণ এ জায়গাটা বাজার এলাকা, টনি জানে যে ক্রিস বাজার করতেই এসেছে। কিছুটা এগিয়ে দেখলো মেয়েটি ওদের ক্লাবের ভেরোনিকা। খুব সুন্দরী মেয়েটি। কালো মার্কিন সম্প্রদায়ে অনেক লোকজনের গায়ের রং প্রায় সাদা হয়ে গেছে দু তিন জেনেরেশনের সংমিশ্রনে। ভোরোনিকার চুল কোঁকড়া, কালো চোখ কিন্তু গায়ের রং সাদা। চেহারা টানটান। যৌবনকে আরো ইলেক্ট্রো বানাবার জন্য ভেরোনিকা খুব টাইট প্যান্টস আর টিশার্ট পরে। দুজনকে দেখে মনে হয়েছিল ওরা বোধহয় প্রেমিক প্রেমিকা তাই আর ফলো না করে ক্রিস সেদিন বাড়ি ফিরে আসে। এর পর দুদিন ক্রিস জিমে গেছে, তেমন কিছুই হয় নি কিন্তু ভেরোনিকা ক্রিস কে দেখে অল্প হেসেছে। কেমন আছো? জিম কেমন লাগছে? তোমার অনেক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে ইত্যাদি কথা বলে ভেরোনিকা চলে গেছে। এর পর একদিন জিমে টনি নেই শুধু আলেক্স আর ভেরোনিকা ছিল। জিম শেষ করে ক্রিস বেরিয়েছে, ঠিক পেছন পেছন ভেরোনিকা ও বেরোলো। ক্রিস দেখেও না দেখার ভান করে নিজের গাড়ি যেখানে পার্ক করা আছে সেদিকে এগিয়ে যায়। গাড়ির দরজা খুলবে ঠিক সেই সময় ভেরোনিকা পেছন থেকে এসে ক্রিসকে ডাকে। ক্রিস কিছুটা চমকে যায়। ভেরোনিকা বলে,
    - তুমি কি ডাউনটাউনে থাকো?
    - হা, কেন?
    - আমি ওদিকে যাচ্ছিলাম, একটা লিফ্ট পেতে পারি কি?
    ক্রিস একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে, তারপর বলে ঠিক আছে চলে এস। গাড়িতে যেতে যেতে ভেরোনিকা জানতে চায় ক্রিস কি কাজ করে। ক্রিস সংক্ষেপে উত্তর দেয়। এর পর কিছু নিজেদের কথা চলতে থাকে তারপর হঠাৎ ভেরোনিকা বলে ওঠে,
    - তুমি সেদিন টনিকে ফলো করছিলে তাই না?
    - কোনদিন? কোথায়?
    - গত শনিবার সকালে? কেলুমেটে আমি তোমাকে দেখেছি।
    - ও, বুঝেছি। সেদিন আমিই টনিকে ওখানে নামিয়ে একটু বাজার করছিলাম। আমি তো তোমাকে দেখিনি। তুমি টনিকে জিজ্ঞাসা কোরো।
    ভেরোনিকা বলে,
    - তুমি যা ভাবছো তা ঠিক নয়, টনি আমার বয়ফ্রেন্ড না। ও আমাকে কিছুদিন ধরে জিজ্ঞাসা করছে যে আমি আইভরিকে নিয়ে শিকাগো হাইটস গেছিলাম কি না, কারণ আমারও গাড়ি আছে এবং আইভরির সাথে আমার অনেক দিনের যোগাযোগ ছিল। আমরা এক পাড়ায় থাকি।
    - তুমি কি গেছিলে আইভরি কে নিয়ে? ক্রিস পাল্টা প্রশ্ন করে।
    - একদম না। আমি সেদিন এখানে ছিলাম না, আমার এক বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম সমবার্গে।
    - তাহলে তো মিটেই গেলো।
    - না মিটে গেলো না, কারণ কিছু লোকজন টনিকে বার বার বিরক্ত করছে এই জিজ্ঞাসা করে যে আইভরি সেদিন কার সাথে শিকাগো হাইটস গেছিলো। এরমধ্যে একজন আমাদের শহরের শেরিফ। পুলিশের লোকজনও এক প্রশ্ন করছে, কিন্তু কেউ জানে না কে আইভরিকে নিয়ে গেছিলো। সকলেই সন্দেহ করছে যে নিয়ে গেছিলো সে খুনিদের দেখেছে কিন্তু চুপ করে আছে।
    - আমাকে এই কথা শোনাচ্ছ কেন? গাড়িতে বসে ক্রিস একটু ঘামতে শুরু করেছে।
    - তোমাকে শোনাচ্ছি কারণ টনির মনে হচ্ছে তুমি হয়তো আইভরিকে নিয়ে গেছিলে।
    এবার ক্রিস একটু বিরক্তি দেখায়,
    - আমাকে আলেক্সও এই প্রশ্ন করেছিল কিন্তু আমি আইভরির সাথে সেদিন যাই নি। আমার অফিস নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত থাকি। তাছাড়া আইভরি আমাকে কখনো অনুরোধ করেনি ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শিকাগো হাইটস আমার বাড়ির রাস্তায় পরে না।
    ভেরোনিকা এবার একটু নিবিড় হয়ে ক্রিসকে বলে যে,
    - টনি একটু ভয় পাচ্ছে, কারণ কিছু লোকজন মনে করছে টনি আইভরিকে নিয়ে গেছিলো, এখন চুপ করে আছে।
    সেদিন গাড়িতে যেতে যেতে ভেরোনিকা জিজ্ঞাসা করে ক্রিস কোথায় থাকে। ক্রিস বলে ফেলে যে ২১৫ ওয়েস্ট ওয়াশিংটন। এই বাড়িটা শিকাগো শহরের নতুন বাড়ি, খুব বিখ্যাত। ভেরোনিকা বিস্ময়প্রকাশ করে এই বলে যে 'ওই বাড়িতে যারা থাকে তারা খুব বড়লোক', ক্রিস হাসে, কিছু বলে না। ভেরোনিকাকে ওয়েস্ট ম্যাডিসন স্ট্রিটে এক জায়গায় নামিয়ে ক্রিস ঘরে ফিরে আসে।
    ঘরে এসে ক্রিস ওই টাকার ব্যাগটা খোলে। এখনো ৯টা বান্ডিল আছে একশো ডলারের, মানে ৯০০০০ ডলার। টাকাগুলো একটা কাগজের প্যাকেটে ছিল, সেই প্যাকেটে আজ একটা নতুন জিনিস ক্রিসের নজরে পরে। অনেকগুলো নম্বর লেখা আছে। এই রকম,
    ৩৭৫,৮,১০
    ৪৯৭,৬,২০
    ৫৭৫,৩,১০
    ইত্যাদি প্রায় ২০টা নম্বর এই ভাবে লেখা।
    সেদিন রাতে একটা হুইস্কি খেতে খেতে একটা টিভি সিরিয়াল দেখতে লাগলো ক্রিস। মন লাগাতে পারছে না কোনো কিছুতেই। ভেরোনিকার কথা মনে হচ্ছে, টনি যদি সন্দেহ করছে যে ক্রিস আইভরিকে নিয়ে গেছিলো শিকাগো হাইটস তাহলে ও নিজে কেন জিজ্ঞাসা করলো না, সেদিন তো অনেক অবকাশ ছিল যেদিন টনিকে নিয়ে ক্রিস কালুমেট যাচ্ছিলো। এই সব চিন্তায় টিভি সিরিয়ালে মন বসছিলো না, এদিকে চারদিন ছুটি আসছে, থ্যাংক্সগিভিং উইকেন্ড। অফিসের সকলেই কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে। ক্রিস ভাবছে কোথাও যাবে কি না। টিকিটের দাম এই সময় খুব বেশি থাকে, তাছাড়া যেখানেই যেতে চাও সব জায়গায় ভিড়। ক্রিস ঠিক করলো এই কদিন ও টনির বিষয়ে একটু বেশি অনুসন্ধান করবে। যে লোকগুলো আইভরিকে মেরেছিলো তাদের সাথে টনির যোগাযোগ আছে তা তো নিজের চোখেই দেখেছে ক্রিস। টিভি সিরিয়ালে কিছু পুলিশের ডিটেক্টিভ এখন একটা সিক্রেট কোডকে ডিকোড করার চেষ্টা করছে। ক্রিস একটু মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। ওর ডিটেক্টিভ গল্প খুব ভালো লাগে। এখানেও কিছু নম্বরের খেলা ছিল। একজন পুলিশ বলে উঠলো যে এই নম্বর তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অতি সাধারণ একটা টেলিফোন ডিরেক্টরি কোড। অমনি আরেকজন একটা ডিরেক্টরি নিয়ে হাজির। প্রথমে পাতার নম্বর তারপর লাইন এই ভাবে ওরা ডিকোড করলো এক সংখ্যাজাল। হঠাৎ ক্রিস টিভি বন্ধ করে ভাবতে লাগলো ডলারের প্যাকেটের ওই নম্বরগুলোর কথা। প্যাকেটটা বের করলো আবার। টেলিফোন ডিরেক্টরি হাতের কাছেই ছিল, ইলিনয় টেলিফোন ডিরেক্টরি। প্রথম নম্বরটা দেখে পাতা খুললো, তারপর লাইন। এই নামটা দেখেই চমকে উঠলো ক্রিস। আইভরির ক্লাবের নাম। এর পর একটা নম্বর লেখা ২০, বুঝতে পারলো না তার মানে কি হতে পারে। এই ভাবে সবগুলো নম্বর মেলাতে গিয়ে ক্রিস দেখলো শেরিফের নাম ও ঠিকানা। সব শেষের নম্বর গুলো নিয়ে একটু খটকা লাগছিলো কিন্তু হঠাৎ ক্রিসের মনে হলো আচ্ছা এগুলো যোগ করে দেখা যাক। যোগ করে দেখ দেখলো ২৭০। ব্যাপারটা অনেক টা খুলে গেছে এখন। নিজেকে ফেলুদা মনে হচ্ছে। তার মানে আইভরি নিজের ২০০০০ সরিয়ে বাকি ২৫০০০০ ওই ব্যাগে নিয়ে গেছিলো ওই লোকগুলোকে দেওয়ার জন্য। হতে পারে এই ডলারগুলো বিভিন্ন লোককে দেওয়ার জন্য, কিন্তু কেন? বিশেষ করে শেরিফকে কেন? অন্য লোকগুলোই বা কারা? আজকের মতো এখানেই শেষ করে ঘুমোতে গেলো ক্রিস কিন্তু ঘুম এলো না।

    ছয়

    ক্রিস ঠিক করলো টনিকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করবে কেন টনির মনে হচ্ছে যে আইভরি ক্রিসের সাথে গেছিলো সেদিন? আর একটা খটকা মাথায় ঘুরছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না ক্রিস যে খটকাটা কোথায় !

    দু দিন পর আবার ধামাকা। ক্রিস জিমে গেছে, দেখে ভেরোনিকা আর আলেক্স ছাড়া কেউ নেই। জিম অন্ধকার। ক্রিসকে দেখে আলেক্স এগিয়ে এলো। বললো,
    - আজ টনিকে কেউ গুলি করেছে, টনি আর নেই। টনিকে গুলি করা হয়েছে ওর বাড়ির সামনে, মানে হোমউডে। চমকে উঠলো ক্রিস।
    - কি হচ্ছে এসব? কেন হচ্ছে, কেউ কিছু বলবে? এটা কি গ্যাং ওয়ার? আইভরি আর টনি কি কোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড দলের সাথে যুক্ত ছিল? ক্রিস প্রশ্ন করে।
    আলেক্স আর ভেরোনিকা নিশ্চই আগে কিছু আলোচনা করেছিল ক্রিসকে নিয়ে, তাই দুজন অপেক্ষা করছিলো ক্রিসের জন্য। আলেক্স বললো,
    - আমি দুঃখিত সেদিন তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি আইভরির সাথে গেছিলে কি না, কিন্তু এখন বুঝেছি যে টনি গেছিলো। খুনি টনিকে চিনে ফেলেছিলো, তাই টনিকে যেতে হলো।

    সেদিন আর জিম হলো না, কিছুক্ষন গল্প করে ক্রিস বেরিয়ে এলো, পেছনে ভেরোনিকা। আলেক্সের কিছু কাজ আছে তাই ও বললো কিছুক্ষন পর ও জিম বন্ধ করে চলে যাবে। আজও ভেরোনিকা ক্রিসকে অনুরোধ করলো লিফ্ট দেওয়ার জন্য। আজ ভেরোনিকা কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। একটা সাদা সোয়েটার আর নিচে টাইট জিন্স, শরীরের সব গোপনীয়তা প্রকট হয়েছে ওর জামা কাপড়ে, হয়তো ও তাই দেখাতে চাইছে। একটা পারফিউম লাগিয়েছে যার গন্ধে একটা বিশেষ মাদকতা আছে। গাড়িতে ভেরোনিকা ক্রিসের পাশে বসে আছে। ক্রিস এতো সহজে কারো প্রতি আকৃষ্ট হয় না কিন্তু আজ ক্রিসের মাথায় বদ মতলব চেপেছে।
    - কোথায় চললে আজ? ক্রিস জিজ্ঞাসা করে ভেরোনিকাকে।
    জবাব শুনে ক্রিসের মাথা ঘুরে গেলো,
    - তোমার ফ্ল্যাটে। কেন আজ কি তুমি খুব ব্যাস্ত?
    - আমার ফ্ল্যাটে? কেন?
    - আজ তোমার সাথে দুস্টুমি করতে ইচ্ছা করছে, বলে ভেরোনিকা ঝুঁকে পরে ক্রিসের গলা জড়িয়ে ধরে।
    তারপর ক্রিসের আপত্তি সত্বেও ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। ক্রিস আর কিছু ভাবতে পারছে না।
    গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে যায়। রাস্তায় দু একটা কথা বিনিময় হয়। এ দেশে একটা সুবিধা আছে। কোনো ইমোশনাল আকর্ষণ ছাড়াও এই ধরণের মজা করা যেতে পারে। ক্রিস অবশ্য এই মজার সুযোগ বেশি পায় নি, আজ কি যে হলো, কে জানে !! কাল থেকে এদেশে চার দিনের ছুটি, থ্যাংক্সগিভিং উইকেন্ড।
    ক্রিস ভাবলো কোথাও একসাথে ডিনার করে তারপর ঘরে ফিরবে।
    - আজ রাতে তোমার ঘরে ফেরার তাড়া আছে?
    - একদম না।
    - তাহলে চলো এক সাথে কোথাও ডিনার করি, তারপর ঘরে যাবো।
    - জো হুকুম জাহাঁপনা, ভেরোনিকা হেসে উত্তর দিলো। আজ ভেরোনিকা পাগল হয়ে গেছে, মাঝে মাঝে ক্রিসের গালে চুমু খাচ্ছে, হাত ধরছে, ক্রিসের থাই এর ওপর হাত রাখছে। ক্রিস গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। তার ওপর ভেরোনিকার পারফিউম, মনে হচ্ছে সব ছেড়ে দিয়ে ভেরোনিকার বুকের মাঝখানে নাক ডুবিয়ে শ্বাস নিতে। শিকাগো ডাউনটাউনের একটা ভালো রেস্টুরেন্টে খেয়ে, একটা ভালো ওয়াইন এর বোতল নিয়ে যখন ঘরে ঢুকলো দুজন তখন প্রায় রাত নটা বাজে। দুটো গ্লাসে ওয়াইন ঢালার সময় ক্রিস বুঝে গেছিলো আজ দুজনেরই খুব তাড়া আছে, ওয়াইনের গ্লাস দুটো দেখলো কত তাড়াতাড়ি ভালোবাসার জন্ম হয় আর কত তাড়াতাড়ি সব শেষ। সত্যিকারের প্রেমমিলনের পর অনেকক্ষন খুনশুঁটি চলে, কিন্তু যেখানে প্রেমের অভাব, সেখানে খেলা শেষে জামাজুতো পড়ার তাড়া লেগে যায়। ভেরোনিকা প্রায় তৈরী, এখন রাত দশটা। বললো ও একটা ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে যাবে। ক্রিস উঠে এসে একটা বিদায় চুম্বন এঁকে দিলো ভেরোনিকা ঠোঁটে। ভেরোনিকা চলে যাবার পর আরেক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে বসলো ক্রিস। অনেক চিন্তা আসছে মাথায়, হঠাৎ কেন ভেরোনিকা ক্রিসের প্রেমে পড়লো? শুধু কি দেহের খিদে? না কি অন্য মতলব আছে? ভাবতে ভাবতে লক্ষ্য করলো ভেরোনিকা ফেলে গেছে নিজের হাতব্যাগ। ব্যাগটা কিছু না ভেবেই খুলে ফেললো ক্রিস, দেখলো একটা ডায়েরি। কয়েকটা পাতা উল্টিয়ে চলে গেলো শেষের পাতা গুলোয়। একটা নোট, ক্রিসের নাম আর তার সাথে ও গত চার পাঁচ দিন কোথায় কোথায় গেছে তার লিস্ট। কোথায় পেলো ভেরোনিকা এই খবর? কেনই বা ক্রিসের গতিবিধির ওপর এতো নিয়ন্ত্রণ?
    মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো ক্রিসের, নিশ্চই ইলেকট্রনিক বাগ লাগিয়ে ক্রিসের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে ভেরোনিকা। কিন্তু কেন, শুধু কি দেহের খিদে মেটাবার তালে নাকি আরো কোনো রহস্য আছে?

    ক্রিস খুব তাড়াতাড়ি ওর ফোনের ক্যামেরায় ডায়েরির পাতাগুলোর ছবি তুলতে লাগলো, ছবি তোলা হতেই ডায়েরি ঠিক জায়গায় রেখে ভেরোনিকাকে ফোন লাগালো। বেশিদূর যায়নি এখনো। ভেরোনিকা ফোন তুলেই বললো যে ব্যাগটা ফেলে এসেছি তোমার ঘরে, তুমি কি সেইজন্য ফোন করছো?
    - ঠিক তাই, তুমি কি ফিরে আসবে নাকি আমি পরে পৌঁছে দেবো?
    - না আমি আসছি, একটু জেগে থাকো আরো কিছুক্ষন।
    - জেগেই আছি, আজ আর ঘুম হবে না, তোমার প্রেমে, বলে হেসে উঠলো ক্রিস।
    ক্রিস ভাবতে শুরু করেছে কি করে খুঁজে বের করবে ওই খুঁদে যন্ত্রগুলোকে। ওর গতিবিধি এখন সব ধরা পড়ছে ভেরোনিকার মনিটরে। কে এই ভেরোনিকা? ইতিমধ্যে ভেরোনিকা এসে হাজির। বেশি দেরি না করে ও নিজের ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো। ঠিক তার পরেই ক্রিস পৌঁছলো ওর গাড়িতে, গাড়িটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছু পেলো না, কিন্তু ও নিশ্চিত যে কোথাও না কোথাও কোনো ছোট্ট কোনো gsm ডিভাইস।
    লাগানো আছে ওর গাড়িতে আর ভেরোনিকা নজর রাখছে সব কিছু। গত কদিন ক্রিস অফিস জিম আর বাড়ি ছাড়া কোথাও যায়নি, একদিন গেছিলো লিংকন রোডে একটা কয়েন কিনতে, ভেরোনিকার ডাইরিতে তার উল্লেখ আছে। ক্রিস তাড়াতাড়ি ওর ঘরের আনাচে কানাচে খুঁজতে লাগলো আরো কোনো ডিভাইস প্লান্ট করা আছে কি না। ঘর অন্ধকার করে দেখতে লাগলো। এই ধরণের যন্ত্র থেকে একটা ইনফ্রা রেড বা নীলআলো বেরোয় বলে ও শুনেছে। ঘরে বা বাথরুমে কিছুই পেলো না। ক্রিস রিসার্চ করতে বসে গেলো কি ভাবে এই ধরণের সেন্সরগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। আমাজনে একটা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যাল ডিটেকশন সেট পেয়ে গেলো, মাত্র ৪৫ ডলার। এই মুহূর্তে অর্ডার দিয়ে দিলো।

    সাত

    নিজের জীবনকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে ক্রিস দুদিন কাটালো। তৃতীয় দিনে হাতে এলো ওই সিগন্যাল ডিটেকশন ডিভাইস। নিজের গাড়িতে গিয়ে চালু করতেই বিপ বিপ আওয়াজ শুরু। ড্রাইভারের সিটের পেছনে একটা সূক্ষ্ম খাঁজের ভেতর ভরা আছে একটা ছোট যন্ত্র যা থেকে একটা নীল আলো বিচ্ছুরণ হচ্ছে। আর কোনো সন্দেহ রইলো না। এই মুহূর্তে ওই যন্ত্রটা সরিয়ে দিয়ে লাভ নেই, তার থেকে ভালো গাড়িটা সার্ভিস করতে দিলে কেমন হয় ! ক্রিস ফোন করলো ওর গ্যারাজে। লোকটার সাথে ভালো আলাপ আছে ক্রিসের।
    ক্রিস বললো যে ও গাড়িটা বিক্রি করতে চায়, তার আগে যা কিছু রিপেয়ার করার থাকতে পারে সব ও করতে চায়।
    - পাঁচ দিন লাগবে স্যার, খুব ব্যাস্ত আছি আমরা।
    - ঠিক আছে, সময় নাও, একটা কার্টেসি গাড়ি পাওয়া যাবে?
    - যাবে স্যার, কিন্তু সামান্য ভাড়া লাগবে।
    - দিয়ে দেবো। আমি কাল তোমার গ্যারাজে গাড়িটা দিয়ে অন্য গাড়ি নিয়ে নেবো, ঠিক আছে?
    - বেশ।
    গত কিছুদিন ক্রিস সব খরচ চালাচ্ছে ক্যাশে, টাকাগুলো শেষ করতে হবে, এখন খুব বেশি বেঁচে নেই, মাত্র তিরিশ হাজার পরে আছে।
    কিছুদিন জিম যাওয়া বন্ধ করেছে ক্রিস, কিন্তু প্রায় রোজ ভেরোনিকার ফোন আসে। ফালতু কথায় জমিয়ে রাখে আর জিজ্ঞাসা করে তুমি কোথায় এখন। ক্রিস বুঝতে পারছে ওর অসহিষ্ণুতার কারণ, ক্রিসকে ট্র্যাক করতে পারছে না তাই এতো খবর নেবার তাড়া। ক্রিস একদিন বলেই বসলো যে গাড়িটা কিছু প্রবলেম করছিলো তাই গ্যারাজে দিয়েছে, এখন একটা ভাড়ার গাড়ি নিয়ে কাজ চালাচ্ছে।

    এদিকে আমেরিকার অফিসের দিন ফুরিয়ে এসেছে, এই মাসের শেষে ক্রিস চলে যাবে ইংল্যান্ডে। এই কথাটা ও কাউকে বলেনি এখনো, ভেরোনিকা বা আলেক্স কেউ জানে না।
    একদিন অফিস থেকে ফিরে ও গাড়ি পার্ক করতে যাচ্ছে, দেখে ওর বাড়ির নিচে ভেরোনিকা আর ওই দুজন লোক যাদের ও দেখেছিলো আইভরিকে মারতে, টনির হাতে একটা ব্যাগ দিতে। এবার একটু ঘাবড়ে গেলো ক্রিস। ওর ওপর নজরদারি বেড়েছে। ভাগ্য ভালো ওর ভাড়ার গাড়ি দেখে ভেরোনিকা চিনতে পারবে না যে ক্রিস ওদের দেখছে। ক্রিস গাড়িতে বসেই ওর টেলিফোন ক্যামেরাতে ওই তিন জনের ছবি তুললো। ওর মাথায় কোনো নতুন বুদ্ধি এসেছে। গাড়িটা পার্ক না করে ও সোজা চলে গেলো মিশিগান এভিনিউ। সেখানে ওর দাবা খেলার কিছু বন্ধু আছে। সোনডাস, আরউইন, কিং আর ডন। চারজনেই সোৎসাহে চেঁচিয়ে উঠলো ক্রিসকে দেখে।
    - কি ব্যাপার ব্রো, এতদিন কোথায় ছিলে, দেখা নেই কেন?
    - দাঁড়াও দাঁড়াও, তোমাদের সব বলছি, তোমাদের সাহায্য চাই।
    - বলো কি করতে পারি তোমার জন্য।
    - চলো কোথাও গিয়ে একটু বসা যাক। এই বলে ক্রিস সকলকে নিয়ে চললো ওর গাড়িতে। মিশিগান এভিনিউ খুব বড়লোকদের জায়গা, এখানে পাব বা রেস্টুরেন্ট গুলো খুব দামি, তাই ওরা চললো গ্রান্ড স্ট্রিটের দিকে, এদিকে এখনো বেশ সস্তায় খাবার দাবার পাওয়া যায়। প্রত্যেকে একটা করে বিয়ার আর কিছু নাচোস নিয়ে বসলো। ক্রিস খুব সংক্ষেপে ওদের বললো যে কিছু লোক ওর পিছু নিয়েছে, কিন্তু কেন তা ও জানে না, বলে ওর ক্যামেরা থেকে ছবি গুলো দেখালো ওর বন্ধুদের। আরো বললো,
    - দেখো আমি কোনো ডিটেক্টিভের সাহায্য নিতে পারি কিন্তু তোমাদের আমার নিজের লোক মনে হয়, যে খরচ আমি ডিটেক্টিভের পেছনে করবো, সেই টাকা তোমাদের দিলে তোমাদের উপকার হবে। কিন্তু দু দিনের মধ্যে আমাকে খুঁজে বের করতে হবে এরা কারা আমার পেছনে লেগেছে।
    এতো কথার মধ্যে কিং ছবি গুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো, ও হঠাৎ বলে উঠলো,
    - আমি এদের মধ্যে এই মেয়েটাকে দেখেছি, মনে করতে পারছিনা কোথায়, কিন্তু আমি দেখেছি।
    একটা আশার আলো দেখতে পেলো ক্রিস। ঠিক আছে তোমরা সময় নাও, তোমাদের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ছবিগুলো পাঠাও, কিন্তু আমার নাম যেন কেউ না জানে। তোমাদের পারিশ্রমিক বাবদ এই নাও এক হাজার ডলার, বলে দশটা একশো ডলারের নোট ধরিয়ে দিলো এই চারজনকে।
    ওরা ভাবতেও পারেনি এতোগুলো টাকা এতো সহজে পেয়ে যাবে। ক্রিস আরো বললো যে কাজ হয়ে গেলে আরো কিছু দেবো।
    ক্রিস আজ বাড়ি ফিরলো না, গাড়ি নিয়ে চলে গেলো শিকাগোর দক্ষিণের একটা শহর অর্ল্যান্ড পার্ক, সেখানে একটা হোটেল ভাড়া করলো সাতদিনের জন্য। অফিসের কাজ প্রায় শেষ, রোজ অফিস যাওয়ার দরকার নেই, এখানে বসে শেষ কিছু কাজ করতে চায় ক্রিস। ডাউন টাউনের ফ্ল্যাটটা সার্ভিসড এপার্টমেন্ট, ও নোটিশ দিয়ে দিয়েছে, দু সপ্তাহ পর এমনিতেই খালি করতে হবে। ওর নিজের কোনো জিনিস নেই ওই এপার্টমেন্টে জামাকাপড় আর কিছু বইপত্র ছাড়া। একদিন রাতের অন্ধকারে ও গুলো সরিয়ে ফেলা যাবে।
    রাতে কিং এর ফোন এলো।
    - ক্রিস, জেগে আছো?
    - হ্যাঁ, কোনো খবর আছে?
    - পেয়েছি মেয়েটাকে, কিন্তু আগে বোলো তুমি এই মেয়েটাকে চিনলে কেমন করে?
    - সে অনেক লম্বা গল্প, আমি আর ও এক জিমে যেতাম সেখানেই আলাপ।
    - মেয়েটা আন্ডারওয়ার্ল্ডের মেথ কুইন। ক্রিস্টাল মেথ বিক্রি করে। আজ রাতে ওকে পাবে একটা নাইট ক্লাবে, নাম ' FUNKY BUDHHA ', গ্রান্ড স্ট্রিট আর নর্থ হলস্টাড স্ট্রিটের ক্রসিংয়ে।
    - ধন্যবাদ কিং। তুমি জান না আমার কত বড় উপকার করলে তুমি।
    - আমি একা নই, আমরা সকলে মিলে এই কাজ করেছি তোমার জন্য। এদের থেকে একটু সাবধানে থেকো।
    - ঠিক আছে।
    ক্রিস এর পর ফোন মেলালো ভেরোনিকাকে,
    - হাই লাভ, কোথায় তুমি?
    - তুমি কোথায়? এতদিন তোমার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
    - হাঁ, আমি একটু কাজে ব্যাস্ত ছিলাম, শিকাগোর বাইরে আছি, আজ ফিরছি, তোমার সাথে দেখা হবে?
    - আজ আমি শিকাগো থেকে একটু দূরে আছি কাল দেখা করছি।
    ভেরোনিকা যখন কথা বলছিলো পেছনে খুব জোড়ে গান বাজনার আওয়াজ আসছিলো। ক্রিস জিজ্ঞাসা করলো তুমি কি কোনো নাইট ক্লাবে আছো?
    - হাঁ, ইন্ডিয়ানা তে, জায়গাটার নাম গ্যারি।
    - আমি জানি, আমি গ্যারি তে গেছি আগে, ক্রিস বলে।
    ভেরোনিকা বলে,
    - সরি ডার্লিং, কাল দেখা করছি তোমার সাথে, তুমি প্লিজ শিকাগোর বাইরে যাওয়ার আগে আমাকে জানিয়ো, আমি তোমাকে খুব মিস করি।
    এই সব মিষ্টি কথায় আর ভোলাতে পারবে না ক্রিসকে। ভেরোনিকাকে চমকে দেওয়ার জন্য ক্রিস বললো,
    - আজ আমিও একটা নাইট ক্লাবে যাচ্ছি কিছু বন্ধুবান্ধবদের সাথে।
    - কোন ক্লাবে।
    - FUNKY BUDHHA।
    ভেরোনিকা কিছুক্ষনের জন্য চুপ। তারপর বলে উঠলো,
    - কোথায় এই ক্লাব, নাম শুনিনি তো আগে।
    - আমিও চিনি না, কিছু বন্ধু এসে আমায় নিয়ে যাবে, বলে ফোন কেটে দিলো ক্রিস।
    ভেরোনিকাকে ওর নিজের জালে জড়ানোর সময় এসে গেছে। ক্রিস একা এই দলের সাথে লড়াই করতে পারবে না। এদের হাতে পুলিশ, শেরিফ সকলেই বিক্রি হয়ে গেছে। যে করেই হোক এদের নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে আর কিছু দিন, তারপর ক্রিস হয়ে যাবে ছু মন্তর। কেউ জানতেও পারবে না।

    ক্রিস এবার ফোন করলো সোনডাসকে।
    - হ্যালো দোস্ত, কি খবর?
    - কিং এর সাথে কথা হয়েছে তোমার?
    - হা, হয়েছে। তোমাদের সাহায্য চাই, আজ রাতে।
    - বলো কি করতে হবে
    - আমার একটা চালু সিম কার্ড চাই। আমার নামে ইসু করতে চাই না, বেনামের কোনো সিম কার্ড চাই।
    - হয়ে যাবে, কোথায় দেখা করবে বলো, আমরা আসছি।
    - তোমরা চলে এসো মিলেনিয়াম পার্কে, আমার সময় লাগবে প্রায় দু ঘন্টা, এখন সন্ধ্যে সাতটা বাজে, আমি এখুনি বেরোচ্ছি, রাত নটায় দেখা হবে তোমাদের সাথে।
    - ঠিক আছে।
    হোটেল থেকে বেরিয়ে ক্রিস সোজা চললো ওর এপার্টমেন্টে। এক ঘন্টায় পৌঁছে গেলো। ঘরে ঢুকে সব জিনিস পত্র প্যাক করতে সময় লাগলো মিনিট ৩০। গাড়ির বুটে দুটো সুটকেস তুলে ও চললো মিলেনিয়াম পার্ক, দু মিনিটের ড্রাইভ। গাড়িটা একটা পার্কিঙে রেখে ও হেঁটে গেলো পার্কে যেখানে একটা মেটাল বিন বানানো আছে, শিকাগোর অন্যতম আকর্ষণ। তার নিচে পেয়ে গেলো চারমূর্তিকে।
    - কি প্ল্যান তোমার ক্রিস, সিম কার্ড কেন চাইলে? সোনডাস জিজ্ঞাসা করে।
    - তোমরা বুঝবে না, আমি একটু খেলাচ্ছি এই সব ক্রিমিনালদের যাতে ওরা আমার থেকে দূরে থাকে।
    - কি করতে চাও তুমি?
    - সিমটা দাও আর এই নাও আরো এক হাজার ডলার।
    উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলো চারজন। ক্রিসকে অনেক ধন্যবাদ জানালো। ক্রিস বললো,
    - তোমাদের আরো কিছু প্রাপ্তি যোগ আছে, কিন্তু একটু রিস্ক ও আছে, রিস্ক নিতে রাজি আছো?
    - কি করতে হবে বলো? কিং বলে উঠলো।
    - আমি এই মেয়েটাকে একটু ব্ল্যাকমেল করে কিছু টাকা তোমাদের পাইয়ে দিতে পারি, এখুনি। টাকা নিয়ে তোমরা কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দাও।
    - ঠিক আছে, আমাদের মধ্যে আরউইন যাবে টাকা নিতে, ওর মাথায় একটাও চুল নেই, পরচুলা পড়ে থাকে। ও পরচুলা খুলে টাকা নেবে তারপর আবার নিজের চেহারায় ফিরে আসবে, কেউ ওকে চিনতেও পারবে না, এই দেখো -
    বলে আরউইন এর চুলটা খুলতে বললো। আরউইন চুল খোলার পর ক্রিস চমকে উঠলো, এতো অন্য চেহারা।
    ক্রিস একটা মোবাইল হ্যান্ডসেট নিয়ে এসেছে। সিমটা নতুন হ্যান্ডসেটে ভরে ভেরোনিকা কে একটা মেসেজ পাঠালো,
    - তোমার জন্য আমার কাছে একটা খবর আছে, তার জন্য তোমায় কিছু খরচ করতে হবে।
    কিছুক্ষন কোনো জবাব নেই, মিনিট ২০ পর মেসেজ এলো,
    - কে ভাই তুমি, আমাকে ডিসটার্ব করছো?
    - তোমার পেছনে DEA লেগেছে (DEA হলো আমেরিকার ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সী, খুব শক্তিশালী ফেডারেল সংস্থা, এরা লোকাল পুলিশকে অগ্রাহ্য করতে পারে)
    - তুমি কে?
    - সেটা জরুরি নয়, তুমি কি ৫০০০ ডলার খরচ করতে রাজি আছো? তাহলে আমি তোমাকে বলতে পারি কে তোমাকে ট্র্যাক করছে।
    - তুমি তাকে চিনলে কেমন করে?
    - আমি তার সাথেই কাজ করি, কিন্তু আমার কিছু টাকার দরকার তাই তোমাকে জানাচ্ছি।
    - আমি তোমাকে বিশ্বাস করবো কেন?
    - ঠিক আছে, তোমাকে কিছু প্রমান দিচ্ছি, তুমি এখন FUNKY BUDHHA ক্লাবে এ আছো তাই তো?
    কিছুক্ষনের নীরবতা। তারপর আবার মেসেজ,
    - আর কি জান?
    - আইভরি আর টনিকে যারা মেরেছে তারা তোমার সাথে আছে এখন, ক্রিস আন্দাজে ঝিল ছুড়েছে কিন্তু ঠিক জায়গায় লেগেছে।
    আবার কিছুক্ষনের নীরবতা।
    - টাকাটা কোথায় আর কখন চাও?
    - এখুনি, FUNKY BUDHHA র বাইরে আমার লোক এসে টাকা নিয়ে যাবে, কিন্তু ওকে ফলো করার চেষ্টা করো না তাহলে তোমার বিপদ বাড়বে। আমি যে লোকটাকে পাঠাচ্ছি সে টেকো আর গলায় লাল রঙের একটা স্কার্ফ আছে, টাকাটা পেয়ে ও আমাকে পাঁচ মিনিটে জানাবে, তারপর তুমি পেয়ে যাবে তোমার ইনফরমেশন। আমার লোক ক্লাবের বাইরে এলেই তোমাকে মেসেজ করছি, টাকা নিয়ে তৈরী থেকো,
    - ঠিক আছে।
    ডন এর একটা মোটর সাইকেল আছে। টেলর রোডে ওর বাড়ির সামনে পার্ক করা। টেলর রোড এখান থেকে পাঁচ সাত মিনিটের ড্রাইভ। সকলে ক্রিসের গাড়িতে আবার উঠলো। মোটর সাইকেল নিয়ে ডন আর আরউইন চললো। ডন এর মাথায় হেলমেট। আরউইন চুল খুলে, চুলটা একটা ব্যাগে নিয়ে ডনের পেছনে বসলো। দশ মিনিটের মাথায় কিংয়ের ফোন বেজে উঠলো। ওরা পৌঁছে গেছে। ক্রিস মেসেজ করলো ভেরোনিকাকে,
    - আমার লোক পৌঁছে গেছে।
    - ওকে।
    পাঁচ মিনিটের মাথায় আবার কিংয়ের ফোনে রিং। টাকার প্যাকেট নিয়ে ওরা অনেক দূর চলে এসেছে। ডন গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলো রাস্তার অন্য পারে। আরউইন হেঁটে গিয়ে প্যাকেটটা নেয়। তারপর হেঁটে অন্য পারে আসে। তারপর চকিতে ডনের পেছনে বসতেই ডন গাড়ি চালিয়ে দেয়। কেউ ফলো করার সুযোগ পায়নি। ইতিমধ্যে আরউইন চুল পরে নিয়েছে। ডনের গাড়ি পার্ক করা হয়ে গেছে অন্য কোথাও, সেখান থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়েছে দুজন। কেউ ওদের দেখে নি। ক্রিস বলে যে যা পাওয়া গেছে তা তোমাদের সকলের, কদিন শিকাগো ছেড়ে বাইরে কোথাও ঘুরে এসো।
    এবার ক্রিস গিয়ে বসলো ওর গাড়িতে। সোনডাস আর কিং চলে গেলো, যেতে যেতে অনেক ধন্যবাদ জানালো ক্রিসকে।
    গাড়িতে উঠেই ক্রিস মেসেজ পাঠালো ভেরোনিকাকে,
    - তোমার নতুন বন্ধু ক্রিস DEA এজেন্ট, সাবধান। তুমি যেদিন রাতে ওর ঘরে গেছিলে সেদিন থেকেই ও তোমাকে ট্র্যাক করছে।
    - থাঙ্কস, ভেরোনিকার শেষ মেসেজ।
    ক্রিস ফোন থেকে সিমটা বের করে ফেলে দিলো, গাড়ি চললো অর্ল্যান্ড পার্কের হোটেলের দিকে। ক্রিস যখন প্রায় পৌঁছে গেছে তখন ক্রিসের ফোনে ভেরোনিকার ফোন এলো,
    - হাই হানি, কোথায় তুমি? FUNKY BUDHHA য় গেছো?
    - ও, না যেতে পারলাম না, আমার এক বন্ধু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ওর সাথে হাসপাতালে এসেছি, ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে আছি।
    - আমি দুঃখিত তোমার বন্ধুর জন্য, আশা করি ও সেরে উঠুক। প্লিজ টেক কেয়ার, বলে ফোন ছেড়ে দিলো।
    মনে হচ্ছে ও ভয় পেয়েছে। ক্রিস আশ্চর্য হলো যে ও কাল দেখা হবে কিনা কিছু বললো না।
    পরদিন সকলে গাড়ির গ্যারাজে থেকে ফোন এলো,
    - তুমি বলেছিলে গাড়িটা বিক্রি করবে, আমার কাছে একজন ভালো খদ্দের আছে।
    ক্রিসের জন্য ভালো খবর, আর মাত্র চারদিন পর ও আমেরিকা ছেড়ে দেবে। গাড়িটা নিয়ে একটু চিন্তা ছিল।
    - কত দাম দেবে?
    - তুমি কত চাইছো?
    - ২০০০০ ডলার পেলে দিয়ে দেবো
    শেষে ১৯৫০০ তে রফা হলো। আজ বিকেলে গাড়ির কাগজ নিয়ে গ্যারাজে গেলো ক্রিস। টাকাটা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে ওর একাউন্টে পাঠানো হলো। গ্যারাজের দেনা মিটিয়ে ভাড়ার গাড়ি ফেরত দিয়ে ফিরে এলো ক্রিস। শুধু ড্রাইভার সিটের পেছন থেকে ট্র্যাকিং ডিভাইসটা নিয়ে এলো, এখনো আলো জ্বলছে। ডিভাইসটা ম্যাগনেটিক। ভাবলো একটু দুস্টুমি করলে কেমন হয় ! রাস্তায় একটা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তারপাশে গিয়ে জুতোর ফিতে বাঁধার অছিলায় গাড়ির মাডগার্ডের ভেতরের দিকে চিপকে দিলো ভেরোনিকার ট্র্যাকিং ডিভাইস। নিজের মনেই হাসতে লাগলো ক্রিস। এরকম দুস্টুমি স্কুলের বাচ্ছারা করে।

    আট

    বাকি দুদিন অফিসের পর জিমে গেলো, ভেরোনিকা ছিল না। আলেক্স কে পরের মাসের মেম্বারশিপ ফী দিয়ে এলো, যেন কেউ জানতে না পারে ক্রিস চলে যাচ্ছে। রোজ ভেরোনিকাকে ফোন করে মেসেজ রাখে,
    - হাই হানি, তোমাকে মিস করছি, কোথায় তুমি?
    আলেক্সকে জিজ্ঞাসা করতে ও বললো ভেরোনিকা ছুটিতে গেছে দিন সাতেকের জন্য।
    একবার এর মধ্যে নিজের এপার্টমেন্টে গিয়েছিলো, কিছুই আর নেওয়ার নেই। শুধু বিছানার দিকে তাকিয়ে ভেরোনিকা সাথে সেই রাতের কথা মনে পরে গেছিলো।

    দু দিন পর এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে ক্রিস, আর এক ঘন্টা পর ওর লন্ডনের ফ্লাইট। একটা মেসেজ করলো ভেরোনিকাকে,
    - কোথায় হারিয়ে গেলে ডার্লিং?
    এবার জবাব এলো,
    - ক্রিস, সত্যি করে বলো তুমি কি আইভরি কে সেদিন নিয়ে গেছিলে শিকাগো হাইটস?
    - কেন জানতে চাইছো? আমি তো তোমাকে আগেও বলেছি।
    - তুমি আমাকে ধোকা দিয়েছো ক্রিস।
    - আমি জানি না কেন তুমি এ কথা বলছো ! তুমি আমাকে ভুল বুঝছো ভেরোনিকা।
    - আমি ভুল বুঝিনি, তুমি সেদিন রাতে ৯১১ ডায়াল করে আইভরির খুনের রিপোর্ট করেছিলে, আমি তোমার গলা শুনেছি সেই রেকডিং এ।
    ভেরোনিকা আরো কিছু বলছিলো কিন্তু ফোনটা কেটে গেলো, এখানে সিগন্যাল খুব ভালো নয় ইতিমধ্যে লোকজন ফ্লাইটে উঠতে শুরু করেছে। ক্রিস ও এগিয়ে চললো সকলের সাথে ......

    সমাপ্ত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম | দ্বিতীয় ও শেষ
  • গপ্পো | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৫৭২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ভূতনাথ - Nabhajit
    আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত  | 173.49.254.96 | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৫525828
  • অনেক স্টোরি এলিমেন্ট তো ক্রাইম থ্রিলারের। তাড়াহুড়ো না করে একটু খেলিয়ে খেলিয়ে এটাই পাঁচ দশ পর্বের করলে - তিন চার্গুণ বেশি শব্দ নিয়ে লিখলে হয়ত পড়া সহজ হত, উপভোগ্য হত।  এ মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে স্টীমরোলার চলছে। স্বপনকুমারকেও মনে পড়ে যাচ্ছে কখনও কখনও।  যদি প্রথম প্রয়াস হয় তবে উত্সাহযোগ্য। 
  • Nabhajit | ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৩525841
  • খুব খেলিয়ে লিখলে অনেক বড় হয়ে যেত এই ভেবে একটু সঙ্খেপে লিখেছি। স্বপন কুমারের নায়কের তো ছ ছ টা হাত ছিল, আমি চেস্টা করেছি বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে। আপনার মতামত শিরোধার্য্য । আমি পরের গল্পে আরও একটু খেলাবার চেস্টা করবো। আমি বেশী খেলাতে গিয়ে দেখেছি পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি হয়। তবুও চেস্টা করবো। আপনাকে ধন্যবাদ। 
  • টুকাই | 2401:4900:1c84:91e0:1d2a:9fc6:f2a8:b198 | ১০ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২৯525896
  • বেশ ভাল লাগল। শিকাগো শহরটিকে প্রয়োজন মত বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে, যেটা পাঠককে গল্পের শেষ অবধি বেঁধে রাখে। আশাকরি এমন গল্প আরো পাবো। 
  • দেবব্রত দাস | 2405:201:802a:e042:dc6b:d389:5a57:c2df | ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৪১525922
  • গল্পের মধ্যে অসাধারণ একটা টান আছে... মুন্সিয়ানা আছে... খুব উপভোগ করলাম।
  • Nabhajit | ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৭525925
  • ধন্যবাদ। আমি ভ্রমনবিলাসী, তাই আমার গল্পের পটভুমি বেশীরভাগ বিদেশী। বিদেশ নিয়ে জানবার আগ্রহ থাকলে খেরোর খাতা বিভাগে দু তিনটে লেখা আছে পড়ে দেখতে পারেন। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:6869:4fdb:f4c9:468a | ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৭525949
  • সুন্দর গল্প। তবে আমারও মনে হল আরও একটু বড় করে লিখলে ভাল হত।
  • Nabhajit | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৮526152
  • ধন্যবাদ অরন্য। আমি লিখছি আরেকটা থ্রিলার কাম প্রেমের গল্প। একটু বড় করে। কিছুদিন লাগবে শেষ করতে। অন্য কাজ করে খাই। লেখার সময় পাচ্ছিনা। 
  • Nabhajit | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৯526266
  • টুকাই, প্রথমত ধন্যবাদ। আপনাকে নিরাশ করবো না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন