হারানো প্রযুক্তি ... ...
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ? তাঁকে দেখাবো আমার কাঁচা প্রেমের কবিতা ? যার মাত্র সতেরো বছর বয়েসে লেখা কবিতা ‘ একটি চিঠি ‘ সাগরময় ঘোষ দেশ পত্রিকায় ছেপেছিলেন ? যিনি লিখেছেন , ‘ আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে / তোমার দুচোখে তবু ভীরুতার হিম’। এই তো সেদিন চৌঠা এপ্রিল, শুক্রবার ওভারটুন হলে কৃত্তিবাসের সভায় যাকে প্রথম চাক্ষুষ করে এসেছি! তেত্রিশ বছরের দুঃখ উজাড় করে বলে গেলেন মাঝি নাদের আলী , আগমনী গাওয়া বোস্টুমি তাদের কথা রাখে নি। সুনীলদার সামনে বসে এই প্রথম তাঁর আবৃত্তি শোনা । তারপরে কত পূর্ণিমা অমাবস্যা কেটে গেলো কিন্তু সেদিন শোনা ‘ কেউ কথা রাখে নি ‘ মনে থেকে গেছে সারা জীবন। কোন কবি পারেন সে গীতি শোনাতে। তার রেশটুকু আজও থেকে গেছে। হাতের কাছে বইটা পেয়েও সোনালি দুঃখ আর পড়িনি । ত্রিস্তান ইসোলদে নামক হলিউডি ছবিটি দেখা দেয় বছর পনেরো আগে , দেখি নি। এক আশ্বিনের বিকেলে বীরভূমের গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের মুখোমুখি বসে দু চোখ ভিজিয়ে দেওয়া পাওয়া ও হারানো ভালোবাসার যে রাগিণী শুনেছিলাম সেটি বাজে মাত্র একবার। ... ...
আমার উড়াল ... ...
“ ঘোড়ার পেছনে কখনও নিজের টাকা নিয়ে ছুটো না । ব্যাঙ্কারদের সেটা কখনও করা উচিত নয় । কিন্তু মনে রেখো - ঘোড়া হলো ব্যাঙ্কারদের বিজনেস পার্টনার । লোকে আমাদের কাছ থেকে ধার নিয়ে ঘোড়ার পেছনে পয়সা লাগাবে। সে ঘোড়া জিতলে লাভের টাকা আবার আমাদেরই সেভিংস ব্যাঙ্কে জমা দেবে “ আমি বললাম, “ আর যদি হারে ?” মুখে সেই অনবদ্য হাসি “ তখন তারা আমাদের পায়ে পড়বে আরও টাকা ধার নেওয়ার জন্যে ! ঘোড়া জিতলে আমাদের ব্যাঙ্কে পয়সা জমা করবে , হারলে ধার নেবে! “ ... ...
কলেজ স্ট্রিট এলাকা নিয়ে গত সাড়ে চার দশকের অবলোকন ... ...
১৯৯৩ সালের কথা - জ্যোতিবাবু যাচ্ছেন কিউবা, প্রথমে যাবেন কিউবার রাজধানী হাভানা, সেখানে ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে দেখা সাক্ষাত করে তারপর কিউবা একটু ঘুরে দেখবেন। সিপিআইএম পার্টি থেকে জ্যোতিবাবুর সঙ্গী হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরী। যাওয়ার কয়েকদিন আগে জ্যোতিবাবু ফোন লাগালেন ইয়েচুরী-কে। - সীতা, তা তুমি কি নিয়ে যাবে ভাবছো কাস্ত্রো-র জন্য? এত দূর থেকে যাচ্ছি, খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না! - জ্যোতিদা আমি তো এখনো তেমন ডিটেলস কিছু ভাবিনি! তা আপনি কি নিয়ে যাচ্ছেন? জ্যোতিবাবু ফোনের এদিকে তাঁর সেই বিখ্যাত না ফুটে বেরুনো হাসিটা হেসে নিলেন – কারণ তিনি জানেন যে এই ব্যাপারে তিনি এগিয়ে আছেন ইয়েচুরীর থেকে। তাঁর ভাবার তত কিছু নেই – কারণ কুড়ি বছর আগে কাস্ত্রো কলকাতা এলে বোঝাই গিয়েছিল তিনি কি জিনিস ভালোবাসেন। তাই জ্যোতি বসু বললেন - - আমার দিক থেকে তেমন ভাবার কিছু নেই, ও সব ঠিক আছে। - একটু খুলেই বলুন না। - অত কথা এখন ফোনে বলার সময় নেই, এয়ারপোর্টে দেখা হলে বলব সেই গল্প না হয়। - ঠিক আছে, তাহলে আমি ভেবে দেখি কি নেওয়া যায় - বেশী দামী জিনিস নিও না যেন! একটা কথা মনে রেখো সীতা, আমরা কমিউনিষ্ট পার্টি – দামী জিনিস আমাদের ইমেজের সাথে যাবে না ... ...
কলেজ স্ট্রিট এলাকা নিয়ে সাড়ে চার দশকের অবলোকন ... ...
কতো গল্প যে মগজে ঘুরঘুর করে ... ...
বাবা ... ...
কলেজ স্ট্রিট এলাকা নিয়ে গত সাড়ে চার দশকের অবলোকন ... ...
লাঞ্চ নাগাদ ২৯৫/৫, সেমুর নার্স আউট । সাত নম্বরে ব্যাট করতে এলেন গারফিল্ড সেন্ট অবারন সোবারস। জীবনে সেই একদিনই তাঁর ব্যাটিং চাক্ষুষ করেছি । একি লাবণ্য প্রাণে ! অফের বল টেনে স্বচ্ছন্দে লেগে ঘোরালেন ,একি লাবণ্য প্রাণে ! অফের বল টেনে স্বচ্ছন্দে লেগে ঘোরালেন , ব্যাটিং নয় এ যেন একটা উচ্চকিত হাসি, দূরে গঙ্গায় জাহাজের ভেঁপু বাজলো তিনি খেলে গেলেন এই ছায়া আলোকের আকুল কল্পনে , এই শীত মধ্যাহ্নের মর্মরিত ইডেনে ! এগারোটি বাউনডারি সহ সোয়া ঘণ্টায় ৭০ রান ! পরের দিন নতুন কায়ায় আবির্ভূত - কখনো স্পিন কখনো মিডিয়াম পেস । একটা শিখতে জীবন কেটে যায় আর ইনি পারেন না এমন কিছু নেই! একই অঙ্গে এতো রূপ ?‘ ... ...
ছোট করে চুল কাটলে আমাকে একদমই বাঙালী বলে চেনা যায় না সেটা আবার আজ টের পেলাম। আর এমনিতে আমাকে দেখে ঠিক কি মনে হয় সেটারও রিমাইন্ডার এসে গেল আজ আমাদের হাউসিং কমপ্লেক্সে ওনম উপলক্ষ্যে মেলা টাইপের বসেছে - নানা ধরণের নারকেল তেল বিক্রী হচ্ছে খুব। কি খাওয়া সেফ হবে সেই ভাবতে ভাবতে দেখতে পেলাম এক দোকানে লস্যি পাওয়া যাচ্ছে। একবোতল ম্যাঙ্গো আর একবোতল স্ট্রবেরী কিনে বগলদাবা করে ফিরছিলাম, সেই দোকানী ভালোবেসে কাগজের ঠোঙায় প্যাক করে দিল সেই প্যাকিং নিয়ে আমি লিফটে ঢুকে দেখি এক দম্পতি। লোকটি আমাকে আপাদমস্তক দেখে হিন্দীতে বলল - - অ্যাই সুইগি ভাই, তুমি এই লিফটে কেন? ভেন্ডরদের জন্য যে লিফট আছে সেটায় যাও নি কেন? - আমি তো সুইগি নয়! - তাহলে জ্যমেটো হবে! তোমাদের তো কোম্পানী লেখা টিশার্ট থাকে। সেটা পর নি কেন? ... ...
যে কোন নাটকের গোড়ায় পাত্র পাত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় , তারপরে ঘটনার ঘন ঘটা - রাইজিং অ্যাকশন! সেটির পরিণতি ক্লাইম্যাক্সে ; অতঃপর ফলিং অ্যাকশন । বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা থেকে স্বচ্ছন্দে বলতে পারি নাট্য শাস্ত্রীদের এই বিন্যাসের সঙ্গে ফুটবল খেলাটা হুবহু মিলে যায় । তফাত এই যে সবটাই মঞ্চে বা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় না । পাত্রদের নাম ধাম , প্রতি সপ্তাহের বেতন কত তা আমরা জানি । তাদের ভূমিকা এই নাটিকার ক্লাইম্যাক্স পর্বে , মানে মাঠের ভেতরে। খেলা শুরুর আগে মঞ্চের চারপাশে যা চলতে থাকে সেটা রাইজিং অ্যাকশন, সেটা আমার কাছে আসল খেলার চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়! ম্যাচের কয়েকদিন আগে থেকেই শহরের পথঘাট ভরে যায় - নানান দেশের পতাকা, মুখে রং, মাথায় বিচিত্র টুপি , ক্লাউনের সাজ সজ্জা , ফুটপাথে ম্যাপ ও ছবি আঁকা, নানান গান ( একবার লন্সে ইউরো ২০১৬ তে ক্রোয়েশিয়া আর পর্তুগালের ফ্যানরা রাস্তার ওপরে লোক সঙ্গীতের চাপান উতর বসিয়ে দিয়েছিলেন – এ যতো গায় অন্যে গায় তার শত গুণ । কারো ভাষা অবিশ্যি কেউ বোঝে না )। স্লোগানে স্লোগানে অলি গলি গুলজার। সারা ইউরোপে উজ্জ্বল গ্রীষ্মের দিনে অজস্র হাসি খুশি মানুষের মেলা বসে যায় – ফুটবল শুধু একটা বাহানা! ... ...
জীবনের নানা দিক নানা পথ ... ...
কলেজ স্ট্রিট এলাকা নিয়ে সাড়ে চার দশকের অবলোকন ... ...
জীবনের কথা ... ...
গড়িয়ার মেসি মেস ... ...
১৯৯৭ সালের শেষ নাগাদ একটি টেলিফোন কল পেলাম- আই এফ আর পত্রিকা আমাদের কর্মধারা লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে এমারজিং মার্কেটে বানিজ্যরত ব্যাঙ্কগুলির মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। প্রায় বলতে যাচ্ছিলাম আমরা ছাড়া বাজারে আর আছেটা কে! একাধিক টেলিফোন কনফারেন্স, সাক্ষাৎকার এবং ডিলের দলিল দস্তাবেজ প্রদানের পরে অন্তত আমার মনে কোন সংশয় ছিল না এই পুরস্কারের প্রথম বিজয়ের গৌরব একমাত্র আমাদের প্রাপ্য! যথা সময়ে তা এলো। ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিং রিভিউ পত্রিকার ইতিহাসে প্রথম এমারজিং মার্কেট ব্যাঙ্ক অফ দি ইয়ার সম্মান পেলো সিটি ব্যাঙ্ক । অস্কার সেরিমনির মতন নাটকীয়ভাবে কোন বন্ধ খাম খোলা হয় না , আগেভাগেই জানানো হয় কে পাস কে ফেল । ডরচেষ্টার হোটেলে বার্ষিক পুরষ্কার প্রদানের অনুষ্ঠান ১৮ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে *। প্রধান অতিথি ব্রিটিশ মহারানির একমাত্র কন্যা প্রিন্সেস অ্যান, যিনি প্রিন্সেস রয়্যাল আখ্যাতেও বিভূষিত। সেভ দি চিলড্রেন নামক জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট তিনি। রাজকুমারী অ্যান শুধু খানাপিনার জন্যে আসেন না– তিনি তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান সেভ দি চিলড্রেনের জন্যে টাকাও তোলেন! সমাগত পুরস্কৃত প্রতিষ্ঠানগুলি মুক্তহস্তে দান করে থাকেন সেই তহবিলে। ... ...
এমন সময় চেরকাশভ সুইমিং পুল থেকে উঠে বাথরোব লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। সামনের ফিতেটা ভালো করে বাঁধা নেই। তাঁর চোখে পড়ে গেল সলিলের দিকে – দেখেই তিনি ছুটে এলেন “আর রোকতো নই নই! আর ধ্বোংসো নই নই” গাইতে গাইতে। চেরকাশভ ছুটে আসছেন, খোলা গাউন উড়ছে দুইদিকে, সামনে ফাঁকা – অনেকে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, ঋত্বিক বলছেন ‘কি দেখিলাম গ্র্যান্ডে এসে’। প্রায় সাত ফুট সেই মানুষটা কাছে এসে ‘সালিল, সালিল’ বলে প্রায় কোলে তুলে নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলেন। বেশ খানিক গল্পের পর চেরকাশভ আর পুদভোকিন বের করলেন ওঁদের সাথে করে আনা টিনের ক্যানের রাশিয়ান পিবা বা বিয়ার। আপনারা বললে বিশ্বাস করবেন না, সেই প্রথম সলিল এবং ঋত্বিক দুজনারই বিয়ার তথা মদ্যপান। আর সেদিন এক ক্যান বিয়ার খেয়েই ঋত্বিক পুরো আউট। চেরকাশভ আর পুদভোকিন খানিক পরে এক সভায় যোগদান করার জন্য বেরিয়ে গেলেন, কিন্তু এদিকে ঋত্বিকের নড়ার ক্ষমতা নেই! গ্র্যান্ড হোটেলের এক রুমের বারান্দায় সোফায় বসে প্রথম বারের মত মাতাল হওয়া ঋত্বিক নীচের কলকাতা দেখতে লাগলেন। কিন্তু কতক্ষণ আর বসে থাকবেন বারান্দায় চুপচাপ – তাই খানিক পরেই বিরক্ত হয়ে সলিল-কে বললেন, “এখানে বসে থাকার চেয়ে বরং চল গঙ্গার হাওয়া খেয়ে আসি”। এই বলে দুজনা হোটেল থেকে বেরিয়ে ইডেন গার্ডেন এর পাশ দিয়ে গঙ্গার ধারে এসে বসলেন। ঋত্বিক বলতে লাগলেন, “এ জিনিস কেন মানুষ খায়! আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে আর এই জিনিস ছোঁব না!” ... ...