এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  নস্টালজিয়া

  • অলীক উষ্ণতা

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | নস্টালজিয়া | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৫৭৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | |
      বড়দিনের ছুটিতে সুমন স্ত্রী, পুত্র, শ্বশুর, শাশুড়ী সহ দ্বিতীয়‌বার এসেছে দেওঘর। আগের বার এসেছিল এক দশক আগে, আরো বড় পারিবারিক দলে। সেবারও উঠেছিল এই আশ্রমের অথিতিশালায়। অনেকটা জমিতে গাছপালায় ঘেরা শতাব্দী প্রাচীন বাড়িটি, যেটি এখন আশ্রমের অতিথিনিবাস, সর্বাঙ্গে অতীত জড়িয়ে অলস অজগরের মতো পড়ে আছে। খাওয়া দাওয়া স্বাদু, তায় দেওঘরের হজমী জল। ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই সুমন সকাল বিকেলে নন্দন পাহাড়ে হাঁটতে যায়। দুপুরে স্নানের আগে ছাদে রোদে বসে গায়ে তেল মাখে। এবারের এক ‌সপ্তাহের এই পারিবারিক দেওঘর ভ্রমন এক অলস অবসর যাপন। 
     

       প্রাতরাশে‌র পর হিমেল মিঠে রোদে ছাদে চেয়ার পেতে সুমন মোবাইলে পড়ছি‌ল সুনীলের 'অরণ‍্যের দিনরাত্রি'। বহুকাল আগে প্রথম পড়েছিল। সে ঘোর আজ‌ও কাটেনি। তাই পূনঃপাঠ। অনবদ‍্য লেখনীতে জীবন্ত হয়ে ওঠা চার যুবকের সাথে সুমন‌ও যেন মানসভ্রমণ করছি‌ল ধলভূমগড়ের আশপাশের অরণ‍্যে। 
     
      একটা কাঠবেড়ালী চিড়িক চিড়িক করে ডাকছে ছাদের প‍্যারাপেটে। মাঝে মাঝে কালো পুঁতির মতো চোখ মেলে দেখছে ওকে। ওর মিষ্টি রকমসকম দেখতে গিয়ে সুমনের চোখ সরে যায় ব‌ই থেকে। ক্রমশ মন‌টাও ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে শুরু করে ছত্রিশ বছর আগে দেওঘরে আসা এক সদ‍্য একুশের তরুণের সাথে। সুমনের অতীত।

                        II ২ II

       সেটা আশির দশকের শুরু। সুমনের চলছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষ। তিন বছর আগে সুমনের থেকে কেতকীর শিক্ষাগত পথ আলাদা হয়ে গেছে। কেতকীর সাথে উচ্চমাধ‍্যমিক পড়ার সময় কোচিং ক্লাসে আলাপ। পরে ওদের বাড়ীতে বহু যাতায়াতে সে আলাপ ঘনিষ্ট হয়। কেতকী কলেজে পড়ছিল জীববিজ্ঞান নিয়ে। তবে স্কুল পেরিয়ে কলেজের বাইরে‌ও ওদের বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে। সপ্তাহে দু একবার ইচ্ছে হলেই সুমন চলে যায় ওদের বাড়ি। ছাদে বসে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। ওদের বাড়ির দরজা সুমনের জন‍্য অবাধ।
     

        ঐ বয়সের দুটি ছেলেমেয়ের মধ‍্যে  কোনো বিশেষ বিষয় ছাড়া‌ই আড্ডা চলতে পারে দীর্ঘসময়। দেওয়ালে হেলান দিয়ে কেতকী বসতো ছাদের নীচু পাঁচিলে। সুমন বসতো ছাদে পাতা মাদুরে পা ছড়িয়ে। কখনো শুয়ে‌ও পড়তো মাথার তলায় হাত দিয়ে। সন্ধ‍্যা উত্তীর্ণ অন্ধকারে শায়িত সুমনের  মুখ অস্পষ্ট হয়ে গেলে কেতকী বলতো, ‘তুই এখানে এসে বোস না, মুখ না দেখলে গল্প করতে ভাল্লাগে না।’ উপরে অনন্ত আকাশ। কাছে কেতকীর ডিমের মতো চিকন মুখে রাস্তার আলো - পেলব, নিদাগ, মোহময়ী। সুন্দরী মেয়েরা কস্তুরী মৃগের মতো। রুপের গরবে‌ই আচ্ছন্ন। কিন্তু কেতকীর সৌন্দর্য‌্য একাদশীর জোৎস্নার মত আবিষ্ট করা - উজ্বল অথচ স্নিগ্ধ - পূর্ণিমার মতো চোখ ধাঁধানো নয়। মাদুরের ঐ ভ‍্যান্টেজ পয়েন্ট ছেড়ে উঠতে চাইতো না সুমন। 
     

       আশির দশকের শুরুতে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ‍্যে মেলামেশায় শারীরিক নৈকট‍্যের অতো চল ছিল না। স‍্যাটেলাইট টিভির প্রভাবে সর্বসমক্ষে বীয়ারহাগ বা ইজিকিসি‌র প্রচলন‌‌ও তখন‌ শুরু হয়নি। হটপ‍্যান্ট ও স্লিভলেস টি-তে মেয়েদের রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে‌ও ঢের দেরী। সেসময় আলতো স্পর্শ বা হঠাৎ সরে যাওয়া আঁচলের কৃপায় আশ্চর্য উপত্যকা‌র চকিত আভাষেই আবিষ্ট হয়ে যেতো মন। সব রহস‍্য‌ই অচিরে উন্মোচিত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। এমনটা মনে হোতো তখন সুমনের। পরিণত বয়সে‌ও সে ধারণা বদলায়নি। হয়তো ও আধুনিক নয়, একটু সাবেকি চিন্তা‌ধারার।
     

         চার বছরের মেলামেশায় ওদের সম্পর্কটা যে নিছক বন্ধু্ত্বেই সীমাবদ্ধ ছিল না সেটা ওরা‌ও বুঝতো কিন্তু তার স্বরূপটা ছিল অস্পষ্ট। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এসব ক্ষেত্রে অসংখ‍্য বার নিভৃতে গাঢ় স্বরে উচ্চারিত তিনটি শব্দের বাক‍্যটিও ওরা কেউ‌ কাউকে বলেনি। হয়তো তার প্রয়োজন‌ মনে হয়নি। নিঃশ্বাস নিতে কি বাতাসের স্বীকৃতি লাগে? তেমনই সহজ ছিল ওদের বন্ধু‌ত্ব। তার পরিণতি নিয়ে‌ও কিছু ভাবেনি ওরা। সুমনের মনে হোতো এই যে ওদের বাড়িতে ওর অবারিত দ্বার, ইচ্ছে হলেই গিয়ে, কেউ না থাকলেও, ঘন্টার পর ঘন্টা ওর সাথে নির্দ্বিধায় আড্ডা দিতে পারে, এটা‌ই তো অনেক পাওয়া। কোনো কারণে তা বন্ধ হয়ে গেলে খুব খারাপ লাগবে‌। খুব ফাঁকা লাগবে মাসের কয়েকটা সন্ধ্যা। 
     

        কেতকী কি ভাবতো? তা ঠিক জানতো না সুমন। কিন্তু কখনো এক দু দিনের গ‍্যাপে পরপর কয়েকদিন গিয়ে‌ও কেতকীর মধ‍্যে কোনো আগ্ৰহের অভাব লক্ষ‍্য করেনি। একদিনের কথা। দুদিনের গ‍্যাপে পর পর তৃতীয়বার গিয়ে হাজির সুমন। উঠোনে‌র দরজা খুলে কেতকী বলে, তু‌ই একটু বাবার সাথে গল্প কর, আমি রাতের রুটি‌গুলো চটপট করে নি কেমন? তারপর ছাদে গিয়ে বসবো। 
     
      কেতকীর বাবা তখন ষাটোর্ধ্ব। গ্লুকোমা‌য় অনেকদিন ধরে দৃষ্টি‌শক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। উঠোনের পাশে একটি বাইরের বসার ঘরে শুয়ে বসে থাকেন। ক্ষীণদৃষ্টি সত্ত্বেও মুখের কাছে ব‌ই এনে পড়েন। সুমন, ‘কেমন আছেন মেশোমশাই‌’ বলে চৌকিতে গিয়ে ওনার পাশে বসলে, ‘ভালো আছি, বোসো’ - বলে ব‌ই রেখে - দেওয়ালে হেলান দিয়ে - চোখ বুঁজে ব‍্যারিটোন ভয়েসে সুমনের‌ সাথে কথা বলতেন। সুমনের সাথে গল্প ক‍রতে ভালো‌বাসতেন উনি। সুমনের‌ও ভালো লাগতো। নানা আকর্ষণীয় প্রসঙ্গে‌র অবতারণা করতেন। প্রশ্ন করতেন। সুমনের মতামত জানতে চাই‌তেন। ষাটোর্ধ্ব এক ক্ষীণদৃষ্টি‌র প্রায় স্থবির মানুষের সাথে আড্ডা চলতো একুশের এক তরতাজা তরুণের যে এসেছি‌ল তার সুন্দরী মেয়ের টানে, তার সাথে কিছু মধুর সময় কাটাতে।
     

          সেদিন প্রসঙ্গ‌টাই এমন তুলেছিলেন মেশোমশাই‌ যে সুমন জমে গেছি‌ল আলোচনা‌য়। মাঝে একবার কেতকী এসে দরজার পাশ থেকে হাতছানি দিয়ে ইশারা‌য় জানিয়েছিল, হয়ে গেছে আমার কাজ, চল যাই ছাদে। কিন্তু প্রায়ান্ধ, সঙ্গী‌হীন এক বয়স্ক মানুষ আগ্ৰহ নিয়ে কথা বলছেন, তার মধ‍্যে আচমকা আলোচনা‌য় ছেদ টেনে তো আর চলে যাওয়া যায় না। অমন অসৌজন্যতা সুমনের আসে না। তাই নিজে থেকে আর কথা না বলে - হুঁ, হ‍্যাঁ, ঠিক ইত‍্যাদি দিয়ে অপেক্ষা করছি‌ল ওনার  আলোচনা‌য় ইতি টানার জন‍্য। তিনি‌ও জানেন সুমন আসে তাঁর ছোটমেয়ের টানে। 
     

        তবু কেতকীর হাতছানি‌র পরে‌ও কিছুক্ষণ কেটে গেছে। এবার কেতকী ভেতরের দরজা‌র কাছে এসে চোখ পাকিয়ে, কিল মারার ভঙ্গি করে। তখন গরমকাল। গা টা ধুয়ে, ঘরে পরার শাড়ি ছেড়ে, চুল আঁচড়ে,  সামান‍্য রূপটান দিয়ে এসেছে। বাইরে গেলেও বেশী সাজগোজ ও করতো না। ঘরে থাকলে তো নয়‌ই। ওসব ওর দরকার‌ই হোতো না। কিছু না করে‌ই কচি কলাপাতার মতো সতেজ লাগতো ওকে। সেদিন‌ও, ক্ষুন্ন হয়ে, মূকাভিনয়ে কপট রাগের ভঙ্গিতে ওকে বেশ লাগছিল‌। হঠাৎ মেশোমশাই‌ বলেন, ‘আচ্ছা এবার এসো সুমন, কেতকী হয়তো অপেক্ষা করছে তোমার জন‍্য’।
     

    ভেতর অবধি কেঁপে গেছি‌ল সুমনের। মেশোমশাই‌ কী কোনোভাবে টের পেলেন কেতকী এসে নীরবে কী অঙ্গ‌ভঙ্গি করছে? অসম্ভব। উনি যেখানে বসে আছেন সেখান থেকে দৃষ্টি ঠিক থাকলেও কেতকী‌কে দেখতে পাওয়ার কথা‌ই নয়। হয়তো নিছক আপতন। ‘তাহলে আসি, মেশোমশাই‌’, বলে উঠে এসেছি‌ল সুমন। ছাদের দিকে যেতে যেতে কেতকী মৃদু অভিমানে বলে, ‘মনে হচ্ছিল তুই যেন বাবার সাথে গল্প করতেই এসেছিলি আজ। কতক্ষণ ধরে ডাকছি, হুঁশ‌ই নেই’। বাড়িতে আর কেউ নেই। সিঁড়ির মুখে কেতকীকে একটু জড়িয়ে ধরে সুমন বলে, ‘তোকে কখনো রাগতে দেখিনি, কী মিষ্টি লাগছিল’। কেতকী‌র অভিমান কচুপাতায় জল। নিমেষে হেসে ফেলে, আর বেশী অগ্ৰসর হতে না দিয়ে, নিজেকে ছাড়িয়ে বলে, ‘খুব হয়েছে আর ম‍্যানেজারি করতে হবে না’।

                         II ৩ II

       কিন্তু অন‍্য আর একদিন কেতকী সত‍্যি‌ই একটু ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কলেজে কেতকী‌রা তিন সহপাঠী বন্ধু শিবপুরে কাছাকাছি‌ই থাকতো। ওদের সাথেও সুমনের আলাপ করিয়ে দিয়েছিল কেতকী। গোপা ছিল লম্বা, রোগা, সিরিয়াস স্বভাবের। কেতকী লবঙ্গ‌লতিকার মতো ছিপছিপে। কিন্তু সুপ্রিয়া বর্ষার জলে পুষ্ট সতেজ পুঁইলতা। তেমনি খোলামেলা স্বভাব এবং হাসি। সুপ্রিয়া এনগেজড ছিল পাড়াতুতো এক দাদার সাথে। সে‌ই দাদা তখন শিবপুর বি‌ই কলেজে থার্ড ইয়ার পড়ছে। পাশ করে চাকরি পেয়ে কিছু‌দিন বাদে ওদের বিয়ের প্ল‍্যান। তাই কেতকীর বিশেষ বন্ধু জেনেও ও সাবলীল‌ভাবে মিশতো সুমনের সাথে।
     

    একদিন মরা বিকেলে সুমন কেতকী‌দের বাড়ি না গিয়ে সরাসরি সুপ্রিয়া‌দের বাড়ি এসেছে আড্ডা দিতে। দেখে কেতকী‌ও রয়েছে সেখানে। সুমনকে দেখে কেতকী বলে, ‘মা বললো নাকি আমি এখানে’? অর্থাৎ কেতকী ধরেই নিয়েছে সুমন প্রথমে ওদের বাড়ি গিয়ে, ওকে না পেয়ে, তারপর এসেছে এখানে। ও যে কেবল সুপ্রিয়া‌র সাথেও গল্প করতে আসতে পারে, তা হয়তো কখনো ভাবেনি কেতকী। সুমন সহজ‌ভাবে বলে, ‘না আমি এখানে‌ই এসেছি’। 
     

        সমলিঙ্গের, সমবয়সী আপাতঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ‍্যে‌ও কখনো নানারকম সুক্ষ্ম গূঢ়ৈষা (complex) কাজ করে। তার কিছুকিছু অনুভব করা গেলেও সেসবের মুখোমুখি করা যায় না। ভদ্রতা, চক্ষুলজ্জা বা আমিত্বে বাধে। কখনো তার তির্যক প্রকাশ হয় অন‍্যভাবে। সমবয়সী লেখক বন্ধুদের কোনো একজন অপ্রত্যাশিত সুযোগ, খ‍্যাতি, পুরস্কার, প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলে অন‍্য লেখকবন্ধু‌র চাপা ইর্ষা প্রকাশ পায় তার কোনো লেখায় যেখানে চরিত্র‌গুলি‌র নাম অন‍্য হলেও দুয়ে দুয়ে চার করতে মনযোগী পাঠকের বেগ পেতে হয় না। কখনো শর্তহীন বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু‌ত্বের মধ‍্যে‌ও উপলব্ধি হয় সুক্ষ্ম অধিকারবোধ।
     

        সেদিন সুমনের জবাব শুনে কেতকীর ভাবান্তর নজর এড়ায় না সুমনের। একটু পরে কেতকী উঠে পড়ে। সুমনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমি বাড়ি যাচ্ছি, তুই কি আসবি?’ সুমন বলে, ‘এই তো এলাম, তু‌ই আয়, আমি যাচ্ছি একটু বাদে। কেতকী চুপচাপ চলে যায়। কেন জানি, সেদিন ওর চলে যাওয়ার ভঙ্গি‌টা একটু বিষন্ন মনে হয় সুমনের। কেতকী চলে যেতে‌ও সুমন সহজভাবেই গল্প করছি‌ল সুপ্রিয়া‌র সাথে। একটু বাদে ওর বোন ও মা’ও এলেন বাজার থেকে। সুমনকে ওরা‌ও পছন্দ করে। চা মুড়ি‌র সাথে গল্প হোলো খানিক সবাই মিলে। 
     

       কেতকী চলে যাওয়ার ঘন্টা‌খানেক বাদে সুমন গেল কেতকী‌দের বাড়ি। অন্ধকার হয়ে গেছে। উঠোনের পাশে রান্নাঘরে‌র জানলায় গিয়ে দাঁড়ায় সুমন। ও জানে এ সময় রাতের রান্না করে কেতকী। ওকে জানলায় দেখে মুখ তুলে তাকায়। পরনে আগুন রঙা শাড়ি। আঁচের তাপে টকটকে ফরসা মুখে লালচে আভা। অপূর্ব লাগছে। কিন্তু থমথমে মুখে মাখা টসটসে অভিমান। ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে, ‘এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি? আর একটু থাকতে পারতিস ওখানে।’ 
     
     
       সুমন বোঝে, কোথায় বিঁধেছে। বলে, ‘চা খাওয়াবি না?’ কেতকী বলে, ‘ওমা, তোকে চা না খাইয়ে আসতে দিলো সুপ্রিয়া?’ সুমন বোঝে এখন ওর ম‍্যানেজারি‌র পালা। বলে, ‘খাইয়েছে, তবে মাসীমা‌ও ছিলেন বলে সিগারেট খেতে পারি‌নি। আর একবার খেতে চাই, খাওয়া‌বি?’ হয়তো এতোক্ষণ সুপ্রিয়া‌দের বাড়ি আড্ডা‌র সময় মাসীমা‌ও ছিলেন শুনে আবার ভাবান্তর হয় ওর। বলে, ‘ঘরে গিয়ে বোস, আনছি’। সেদিন চা খেয়ে ছাদে গিয়ে দুজনেই আর অন‍্যদিনের মতো সহজভাবে আড্ডা দিতে পারে না। সেদিন সুমন নিশ্চিতভাবে বুঝেছি‌ল, ইচ্ছে হলেই সাইকেল নিয়ে কেতকী‌দের বাড়ি দুদ্দাড়িয়ে চলে এলেও, টানটা কেবল একতরফা নয়।
     

                         ।। ৪ ।‌।

         দূর্গাপূজোর ছুটির পর কলেজ খুলতেই সুমন জানতে পারে প্রায় গোটা ডিসেম্বরটা কাটবে দেওঘরে সার্ভে ক‍্যাম্পে। সিনিয়ররা জানালো, দিনে ফিল্ড‌ওয়ার্ক, রাতে রিপোর্ট বানানো, ড্রয়িং করা এসব নিয়ে ক‍্যাম্পে‌র দিনগুলো দারুণ কাটবে। দেওঘরের মতো মনোরম জায়গায়, শীতকালে, উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে বন্ধুদের সাথে হৈচৈ করে একমাস কাটবে ভেবে সুমনের আনন্দ আর ধরে না। সেদিন বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে‌ই সুমন সাইকেল ছোটায় কেতকীদের বাড়ি।   
     

         দেওঘর যেতে তখন‌ও দেড়মাস বাকি। খুব উৎসাহ নিয়ে খবরটা জানাতে কেতকীর মুখটা একটু যেন ম্লান হয়ে গেল। অস্ফূটে বলে, ‘তুই তাহলে পুরো ডিসেম্বর‌টা থাকবি না? ধ‍্যাৎ, ভাল্লাগে না।’ তবে কেতকী মেয়ে, তায় ভীড়ের মধ‍্যেও চোখে পড়ার মতো সুন্দরী। অনেক পুরুষের মুগ্ধতা মাখানো দৃষ্টির তারিফে অভ‍্যস্ত। সুন্দরী নারীদের দূর্বলতা প্রকাশ না করা‌ই সহজাত প্রবৃত্তি। বরং পুরুষের একতরফা দুর্বলতা অনুভব করেও উদাসীন ভঙ্গিতে এড়িয়ে যেতেই তারা অভ‍্যস্থ। তাই পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বলে, ‘তবে তুই তো আর বেড়াতে যাচ্ছিস না, ওটা তোদের প্র‍্যাক্টিক‍্যাল, যেতে তো হবেই। খুব আনন্দ করবি মনে হচ্ছে। তোদের ছেলেদের কি মজা। আচ্ছা, দেওঘরে তো ডিসেম্বরে খুব ঠান্ডা পড়ে শুনেছি। তুই যা এ্যালবেলে, ভালো মতো শীতের পোষাক নিয়ে যাস কিন্তু। না হলে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে। ওখানে ভালো ডাক্তার বদ‍্যিও পাবি না। আচ্ছা, আমি তোকে একটা হাফ সোয়েটার বুনে দেবো, কেমন।’
     

        পরের সপ্তাহে গিয়ে সুমন দেখে হলুদ, মেরুন উল দিয়ে একমনে একটা সোয়েটার বুনছে কেতকী। বলে, ‘নিউ মার্কেট থেকে এনেছি। তুই ফর্সা তো, এই কম্বিনেশনটা তোকে মানাবে। আচ্ছা, একবার দাঁড়া তো, দেখি ঘরটা ঠিক নিলাম কি না।’ বর্ডার‌টা সুমনের গায়ে ফেলে ও সন্তুষ্ট হয়ে মাথা নাড়ে, ‘যাক বাবা, আন্দাজে নিয়েছিলাম, কিন্তু ঠিক হয়েছে।’ 

          দিন দশেক বাদে গিয়ে সুমন দেখে পিঠের দিকটা শেষ। বুকের দিকটা‌ও অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। সেদিন বিকেলে বাড়িতে কেউ নেই। সুমনকে দেখেই জানতে চায় কেতকী, আগের দিন আনবি বলেছিলি, এনেছিস? সুমন মাথা নেড়ে জানায় এনেছে। নিয়মিত দিনপঞ্জী লেখার অভ‍্যেস সুমনের নেই। তবে মাঝে মধ‍্যে কিছু কথা, ঘটনা নাড়া দেয়। সেসব অনূভব‌ই হারিয়ে যাওয়ার আগে ভাষার তবকে জড়িয়ে রেখে দেয় ডায়েরীর পাতায়। তাতে অনেক সময় থাকতো কেতকীকে নিয়ে ওর কল্পনাবিলাস। সপ্তাহে বার দুয়েক আড্ডা দেবার পরে‌ও ডায়েরীতে কাউকে নিয়ে লেখার তাগিদ হয়তো ঐ বয়েসেই মানায়। 
     

        কেতকী সুমনের ডায়েরী পড়তে চাইতো। বলতো, ‘তোর লেখার ভঙ্গীটা খুব সাবলীল। কতো সামান্য কথা, ঘটনার ওপরেও সুন্দরভাবে খেলিয়ে কত কী লিখিস তুই! আমি তো বাবা কোনোদিন পারব‌ না। ডায়েরী হচ্ছে আত্মকথন, তাই এতে মিথ‍্যাভাষণ করবি না। যদি কিছু পরিস্কার ভাবে লিখতে না পারিস প্রচ্ছন্ন ভাবে, রূপকের সাহায‍্যে লিখবি কিন্তু কপটতা করিসনা।’

        চার বছর মিশে‌ও সুমন ওর ডায়েরীর পাতাতেও ঐ তিনটি শব্দের প্রত‍্যাশিত বাক‍্যটি লেখে নি। তবে কেতকী‌কে নিয়ে ডায়েরীর পাতায় রাঁধা কিছু খেয়ালী পোলাওয়ের বিবরণ পড়েও কেতকী রুষ্ট হয়নি। বরং মাস ছয়েক আগে প্রথমবার ওর ডায়েরী পড়ে সুমনকে একটা ছোট্ট চিঠি লিখেছিল কেতকী - এই বয়সে‌ই আমি নানা রকম পুরুষ চরিত্র দেখে ফেলেছি। কিন্তু সামনে বসে গল্প করা তুই আর ডায়েরীর পাতায় ফানুস ওড়ানো তুই যেন দুটো আলাদা মানুষ। এতদিন মিশেও তোর বাহ‍্যিক আচরণে এহেন ভাবনার কোনো প্রকাশ দেখি নি কখনো। আশ্চর্য! 
     

        সেদিন চেয়ারে বসে টেবিলে দুহাত রেখে নিমগ্ন হয়ে ডায়েরীটা পড়ছে কেতকী। টকটকে লাল একটা স্লীভলেস ব্লাউজ পড়েছে। চোখের  সামনে থোড়ের  মতো পেলব অনাবৃত বাহু। টসটসে  অধরোষ্ঠ যেন আধচোষা লেবু লজেন্স। মাঝে মাঝে ঠোঁটের ফাঁকে খেলা করছে পাতলা হাসির পরত। সুমন সদ‍্য শেষ করেছে সুনীলের 'স্বপ্ন লজ্জাহীন'। তার কিছু রেশ হয়তো পড়েছে সাম্প্রতিক লেখায়। সুমনের মনে হচ্ছে সুনীলের অনবদ‍্য লেখনী‌তে জীবন্ত মনীষা‌ই যেন সামনে বসে আছে। 
     

        পড়া শেষ করে কেতকী মিটিমিটি হেসে বলে, ‘ক্রমশ তোর কলম খুব সাহসী হয়ে যাচ্ছে! তবে লেখার ধরণটা খুব আন্তরিক। চালিয়ে যা। আচ্ছা দাঁড়া, তোকে একটা জিনিস দেখাই।’ কেতকী ঝোলা ব‍্যাগ হাঁটকে একটা কলেজের খাতা বের করে। কয়েকটা পাতা সরিয়ে, ‘এই তো পেয়েছি’, বলে পাতাটা খুলে খাতাটা সুমনের দিকে বাড়ায়। ‘কী এটা?’ বলে সুমন। কেতকী বলে,  নিজে‌ই পড়ে দ‍্যাখ।’ সুমন খাতাটা নিয়ে দেখে তাতে একটা পুরো পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা - "কী খবর?" - নীচে তারিখ দিয়ে স‌ই করা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
     

         অবাক হয়ে সুমন বলে, ‘কী করে পেলি?’ মুচকি হেসে কেতকী বলে, ‘তবেই দ‍্যাখ, তুই এ্যাতো সুনীলদার ভক্ত অথচ আমি কেমন অটোগ্ৰাফ পেয়ে গেলাম।’ সুমন অধৈর্য হয়ে বলে, ‘কী ভাবে পেলি, সেটা বলবি তো?’ 
     ‘আচ্ছা বাবা, বলছি, শোন। পরশু বিকেলে এ্যাকাডেমিতে গেছিলাম, কলেজের কজন মিলে একটা নাটক দেখা‌র কথা ছিল। আমি আগে পৌঁছে গেছি। হাতে সময় ছিল তাই নেহাত টাইম পাস করতে‌ই কী একটা ছবির প্রদর্শনী হচ্ছিল, ঢুকেছি‌লাম। টিকিট ফিকিট নেই। ছবির কিছু বুঝি‌ও না আমি। এমনিই ঘুরে ঘুরে দেখছি‌লাম। হঠাৎ আমার ডানপাশে দেখি সুনীলদা। একটা ছবির দিকে খুব মগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছেন।’
     

        ‘আমি ছবি ছেড়ে সুনীলদাকে ভ‍্যালভ‍্যাল করে দেখছি। উনি মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে চেয়ে হেসে বললেন, "কী দেখছো?" আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, আপনাকে। উনি মুচকি হেসে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, "ছবি কিন্তু ওদিকে।" আমি লজ্জায় একশেষ, ঢোঁক গিলে বলি, আমার এক বন্ধু আপনার খুব ভক্ত, ও আমায় আপনার অনেক লেখা পড়িয়েছে।’ 
     

       ‘সুনীলদা আবার মুচকি হেসে বললেন, "ও, তোমার বন্ধু আমার ভক্ত, তুমি ন‌ও।" অপ্রস্তুত হয়ে কথা ঘোরাতে তাড়াতাড়ি এই খাতাটা বার করে বলি, একটা অটোগ্ৰাফ দেবেন, আমার বন্ধু‌কে দেখাবো। ও খুব খুশি হবে। "আর তুমি?" সুনীলদার চোখে মুখে চাপা হাসি। আমি‌ও, বলে আমি পালিয়ে বাঁচি।’ 

         সুমন বলে, ‘জানিস তো সুনীলদার লেখায় পড়েছি, উনি অচেনা পুরুষ‌দের সাথে খেজুরে আলাপ করতে একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু সুন্দরী মেয়েদের সাথে একবার আলাপ হলে জীবনে তাদের মুখ ভোলেন না। তাহলে তোর মুখটা‌ও সুনীলদার মনে শিলালিপি হয়ে রয়ে গেল।’ 

       রাঙিয়ে ওঠে কেতকী, ‘বাজে বকিস না, ওটা‌ আবার আলাপ নাকি। দু একটা মাত্র কথা। সেদিন ওখান থেকে বেরিয়ে‌ই হয়তো উনি ভুলে গেছেন আমায়। অমন কতজনের সাথে রোজ দেখা হয় ওনার। সুমন বলে, ‘কিন্তু তাদের সবাই তোর মতো সুন্দরী নয়। তুই পাঁচপেঁচি গোছের দেখতে হলে সুনীলদা হয়তো ঘুরেও দেখতেন না। তুই নিশ্চিত সুনীলদার মনে ছাপ ফেলেছিস, তা না হলে অতো বড়ো করে উনি লিখতেন না,  "কী খবর?" - যেন কতদিনের চেনা।’ 

        কেতকী চোখ পাকিয়ে বলে, ‘এবার কিন্তু গাঁট্টা খাবি তুই, এই জন‍্য‌ই তোকে আমি প্রথমে দেখা‌ই নি এটা, ঠিক জানতাম ইয়ারকী মারবি।'  সুমন বলে, ‘তোর ঠোঁটটা আজ এমন চকচক করছে কেন রে?’ কেতকী বলে, ‘আর বলিস না, আমার মেজদি, ঐ যে হিউস্টনে থাকে রে, ছুটিতে এসেছে এখানে। ও জানে আমি লিপস্টিক লাগা‌ই না, তাই আমার জন‍্য ন‍্যাচারাল লিপগ্লস এনেছে। ওটাই একটু লাগিয়েছি। কেন, ভাল্লাগছে না?’ 
    সুমন বলে, ‘না, না, ভালো‌ই লাগছে, তবে কেমন যেন অন‍্যরকম লাগছে।’ কেতকী ভ্রুভঙ্গী করে বলে, ‘অন‍্যরকম মানে?’ সুমনের প্রথমেই যা মনে হয়েছিল সেটাই মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, ‘তোর নীচের ঠোঁটটা যেন আধচোষা লেবু লজেন্সের মতো চকচক করছে।’
     

        হিলহিলে শরীরে ঢেউ তুলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে কেতকী। ও জানে চুলে হাত দিলে রেগে যায় সুমন তবু সেই ফরসা থোড় হাত বাড়িয়ে সুমনের কোঁকড়া চুল খুবসে ঘেঁটে  দিয়ে বলে, ‘ডায়েরী লিখে লিখে দেখছি তোর উর্বর মস্তিস্কে আজকাল নানান অদ্ভুত উপমা আসছে। আচ্ছা, বাজে না বকে, এবার একটু উঠে দাঁড়া তো, সামনেটা যতটা বুনেছি একটু দেখে নি‌ই, V-টা কোথায় ফেলবো।’
     

         উঠে দাঁড়ায় সুমন। সোয়েটারের সামনের অংশটা নিয়ে কেতকী‌ও উঠে এসে দাঁড়ায় ওর সামনে। হলুদ মেরুন দুটো উলের গোলা লেগে আছে কাঁটায়। মাপ নেওয়ার জন‍্য ও দাঁড়িয়েছে একদম গা ঘেঁষে। ঘরে ঢুকেই আজ যে হালকা সুবাসটা পেয়েছে সেটা এবার ঝাপটা মেরে উচাটন করে দেয় মন। ‘কি রে, পারফিউম মেখেছিস নাকি? ওটাও কি দিদি দিয়ে‌ছে? তোকে তো বাড়িতে কখনো সেন্ট লাগাতে দেখিনি?’ খুশী খুশী গলায় কেতকী বলে, ‘হুঁ, ঠিক ধরেছিস। সেটাই একটু লাগিয়েছি। গন্ধটা ভালো না?’ সুমন বলে, ‘হ‍্যাঁ, খুব মিষ্টি গন্ধ, বিদেশী দামি সেন্ট, ভালো তো হবেই।’ 

         কেতকীর বাঁ হাতটা উলের গোলা সমেত দুটো কাঁটা সুমনের গলার কাছে ধরে আছে। ওর কলকে ফুলের মতো কড়ে আঙুল গলায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে। অংশত বোনা সোয়েটারটা ঝুলছে বুকের ওপর। কেতকীর ডান হাতটা সোয়েটারের ওপর দিয়ে সুমনের বুকের ওপর  নড়াচড়া করছে V-এর অবস্থানটা বোঝার জন‍্য। কেতকী মুখটা একবার তুলতেই হঠাৎ সুমন দেখে সেই চকচকে লেবু লজেন্স ওর মুখের একদম কাছে। কেতকী খুব মন দিয়ে‌ মাপ নিচ্ছিল। কিন্তু মেয়েদের অজান্তেই ওদের কিছু সরল আচরণ‌ ছেলেদের মনে সৃষ্টি করতে পারে অপ্রত‍্যাশিত প্রতিক্রিয়া। 
     

        কেমন যেন ঘোর লেগে যায় সুমনের। দুহাতে হঠাৎই জড়িয়ে ধরে ওকে। প্রবল আলিঙ্গনে ওর নরম শরীরটা মিশে যায়  সুমনের শরীরে। কেতকীর দুটো হাত দড়ি থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় খসে পড়া গামছার মতো স্খলিত ভাবে ঝুলে পড়ে দুপাশে। উলের গোলা সমেত আধবোনা সোয়েটার ছিটকে পড়ে মেঝেয়। সুমন ওর বুকে অনুভব করে দুটি স্বর্গীয় পারাবতের স্পর্শ। সেই অনির্বচনীয় স্পর্শানুভূতি তখন‌ও অবধি সুমনের জীবনে অনাস্বাদিত। শিরশিরিয়ে ওঠে ওর সারা শরীর। তীব্র কোনো প্লাবনের অভিঘাতে পরক্ষণেই নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় ওর বাঁ হাত। মাথার পিছনে হাত দিয়ে কেতকী‌র মুখটা  নিমেষে টেনে আনে নিজের কাছে।  এতো নরম, এতো কবোষ্ণ হয় নারীর ওষ্ঠ! সেই প্রথম অনুভব করে সুমন। 
     

        গভীর আশ্লেষে আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ হয়ে থেমে গেছিল সুমনের সময়। কেতকী‌র কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। না প্রতিরোধ না আবাহন। যেন অচেতন সমর্পণ। কেতকীর শরীর যখন সুমনের আলিঙ্গনে আবদ্ধ, সুমনের ওষ্ঠ যখন প্রবল তৃষ্ণায় শুষে নিচ্ছে ওর ওষ্ঠে‌র উত্তাপ, তখনও কেতকীর ঝুলে থাকা দুটো হাত সুমনকে ক্ষণিকের জন‍্য‌ও জড়িয়ে ধরে না। তাহলে কী ভুল হয়ে গেল? এতদিন মিশে, অনেক সুযোগ পেয়েও সুমনের কখনো কোনো বিচ‍্যূতি হয়নি, সেই আত্মনিয়ন্ত্রণ কী ক্ষণিকের দূর্বলতায় হারিয়ে ফেললো ও? সুমনের প্রতি বিশ্বাসে কী চিড় ধরলো কেতকীর? 
     

        প্রথম থেকে শরীরকেন্দ্রীক আকর্ষণে কেতকীর অনীহা লক্ষ‍্য করেছে সুমন। যৌবনে নারী ও পুরুষের মধ‍্যে দেহাতীত প্রেম বা প্লেটোনিক লাভ হয়তো সোনার পাথরবাটির মত‌ই অবাস্তব কিন্তু মূলতঃ হরমোন প্রভাবিত সম্পর্কের টান‌ যে ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য এ ব‍্যাপারে ওরা দুজনেই ছিল সহমত। 
    মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথায় শশী কুসুমকে বলে, 'শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?' ওদের‌ও মনে হোতো নিবিড় কোনো মানসিক টান ক্ষণস্থায়ী শারীরিক আকর্ষণের চেয়ে অনেক মহার্ঘ। হামলে পড়া পুরুষ ছিল কেতকীর দু চক্ষের বালাই। ও যে সুমনকে পছন্দ করতো, সহজ ভাবে মিশতো তার প্রধান কারণ সুমনের  মধ‍্যে কখনো হ‍্যাংলামো দেখেনি ও। কিন্তু ওর নারীত্বের আবেদন‌ যে সুমনের কাছে মূল‍্যহীন নয় সেটাও ও জানতো সুমনের ডায়েরী পড়ে।
     

         হঠাৎ এই বোধোদয়ে যেমন আচম্বিতে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল সুমন, তেমনি আচমকা‌‌ই ছেড়ে দেয়। আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থা থেকে হঠাৎ অবলম্বনহীন হয়ে একটু টলে গিয়ে টেবিলটা ধরে সামলে নেয় কেতকী। নীচু করে রাখা ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে গেছে। কয়েক পলের সূচীপতন নীরবতা। তারপরেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কেতকী। মনে সংশয়ের দোলাচল নিয়ে বসে থাকে সুমন।

                    ।। ৫  ।।

        প্রায় মিনিট পনেরো বাদে দুটো চায়ের কাপ হাতে ঘরে আসে কেতকী। মুখে চোখে জল দিয়ে এসেছে। ঠোঁটে লিপগ্লসের চিহ্ন‌মাত্র নেই। সহজ ভাবে বলে, কি রে, ভ‍্যাবলার মতো বসে আছিস কেন? নে, চা খা। একটা কাপ বাড়িয়ে দেয় সুমনের দিকে। 

        সুমন আড়চোখে দেখে ওকে। একটু আগের ঘটনার লেশমাত্র রেশ নেই ওর ব‍্যবহারে। সুমনের দৃষ্টি থমকে যায় ওর ঠোঁটে। ফর্সা মুখে ওপরের ঠোঁটের একটু অংশ এখনও গাঢ় লালচে হয়ে আছে। তাহলে কি উত্তেজনার বশে বেশ জোরেই ... ছি ছি! ওর মনের কথাটা পড়ে ফেলে কেতকী। অস্ফুটে বলে,  ‘ভোঁদড় একটা। এভাবে কেউ...।’ বাক‍্যটা অসমাপ্ত রেখে‌‌‌ই টেরিয়ে তাকায় সুমনের দিকে। মুখে বিষ্ময় ও কৌতুকের হেঁয়ালী প্রলেপ।

       ‘ক‍্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি‌স যে? তোকে সাধাসিধে ভাবতাম, কিন্তু পেটে পেটে এ্যাতো? ঐ সুনীলদাই তোর মাথা খেয়েছে‌ন মনে হচ্ছে।’ কেতকীর কৌতুকে তির্যক প্রশ্রয় সুস্পষ্ট। তবে সুমন তখন ছিল নিতান্তই গোলা। মিনমন করে বলতে যায়, ‘আসলে মাথাটা কেমন গুলি‌য়ে গেল। মিষ্টি সেন্টের গন্ধ, অতো কাছে তোর লজেন্সের মতো ঠোঁট, আর...।’ তড়বড় করে কেতকী থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘খুব হয়েছে, তোকে আর অজুহাতের ফিরিস্তি দিতে হবে না, পাজী কোথাকার। চা খেয়ে তুই এখন কেটে পড়। আমায় একবার স‍্যারের কাছে যেতে হবে নোটস আনতে।’

         সেদিন চলে আসার সময় সুমনের বেশ অভিমান হয়েছিল। চার বছরের মেলামেশায় সেই প্রথম কেতকী ওকে নিজে থেকে চলে যেতে বললো। এর আগে অনেকবার চলে আসার আগে ও বলেছে, আর একটু বোস না বাবা। আসলে এক হাতে যে তালি বাজে না সেই প্রবাদবাক‍্যটি সেদিন সুমনের মনে পড়েনি। ও বোঝেনি সংকোচের দ্বিধা কেটে যেতে সেদিন ফাঁকা বাড়ীতে সংযমের বাঁধ‌ ভাঙার ভয় কেতকীর‌ও ছিল। ভয়টা শুধু সুমনকে নয়, ভয় ছিল হয়তো ওর নিজেকেও। তাই বাইরে যাওয়ার ছল করে ও সুমনকে  ভাগিয়ে দিয়েছিল। 

        আলোচনা‌য় দেহাতীত প্রেমের ধ্বজা ওড়ালেও একুশের সজীব যৌবন চার বছরের অন্তরঙ্গতায় ওটুকু নৈকট‍্য দাবি করতেই পারে। সেটা‌ মোটেই দোষের‌ও কিছু নয় বরং খুব‌ই স্বাভাবিক। অল্প আলাপে পুরুষের একতরফা হামলে পড়া স্বভাব মেয়েদের অবাঞ্ছিত লাগলেও দীর্ঘ মেলা‌মেশার পরে‌ও প্রিয়জনের নৈকট‍্যে অনাসক্তি‌ আবার অস্বাভাবিক লাগতে পারে। 
     

        পুরুষ কাছে টানতে চাইবে, নারী রহস‍্য করে এড়িয়ে গিয়ে সেই টান জি‌ইয়ে রাখবে। কখন‌ও বা ধরা দেবে নিজের মর্জিতে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। এতদিন সুমনকে সেই প্রচলিত ছকে ফেলতে না পেরে কেতকী হয়তো ভেবেছিল সুমনের সেই তাগিদ‌‌ই হয়তো কম। তাই হঠাৎ ওর নারীত্বের আকর্ষনে সুমনকে অমন প্রবল ভাবে সাড়া দিতে দেখে ভালো লাগার আবেশে সে‌ও হয়তো বিহ্বল হয়ে যায়। মেয়েরা তো পরিস্কার করে কিছু বলে না। ভোঁদড়, পাজী এসব কপট বিশেষণ‌ই হয়তো লুকিয়ে ছিল সেই আবেশের তির্যক প্রকাশ‌। গোলা সুমন সেদিন তা বোঝেনি।
     

        সেদিনের ঘটনার পর‌ ক‍্যাম্পে যাওয়ার আগে অবধি আরো বেশ কয়েকবার সুমন ওদের বাড়ি গেছে। বাড়িতে কেউ না থাকলেও ওরা সহজ ভাবেই আগের মতো আড্ডা দিয়েছে। কেবল মাঝে মধ‍্যে ওর মুখের দিকে সুমনকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেতকী চোখ পাকিয়ে ধমক দিয়েছে, ‘এ্যাই, আবার কোনো বদমায়েশীর ফন্দী আঁটছিস? ভালো হবে না বলছি।’
     

        সুমনের আত্মসম্মান জ্ঞান ছিল টনটনে। কিন্তু মেয়েদের ব‍্যাপারে ছিল নিরেট। তাই কেতকীর কপট ধমকের আড়ালে যে অনুক্ত হাতছানি তা ও দেখতে পায়নি। ফলে তারপর যতদিন ওদের সম্পর্ক ছিল আর কোনোদিন সুমনের আচরণে কোনো 'বিচ‍্যূতি' প্রকাশ পায়নি। সুমন ভাবতো সেটা ওর আত্মসংযমের পরাকাষ্ঠা। কেতকী কী ভাবতো তা ও ভেবে পায়নি।

        আর মাপ না নিয়েই কেতকী শেষ করে দিয়েছিল সেই সোয়েটার। গায়ে দিতে দেখা গেল V-টা একটু ঢিলে রয়ে গেছে। কেতকী দেখে বলে, ‘ইস, V-টা ঠিক হয়নি।’ সুমনের গালে মৃদু ঠোনা মেরে বলে, ‘তুই পাজীটা এর জন‍্যে দায়ী, বেশ বুনছিলাম, দিলি সব গুলিয়ে।’ ওই সামান‍্য ত্রুটিতে অবশ‍্য কিছু‌‌ই এসে যায় না কারণ সুমনের প্রতি কেতকীর সখ‍্যতা মাখা ছিল ঐ সোয়েটারে। ওই সামান‍্য বিকৃতি‌‌ আসলে ক্ষণিকের এক মধুর বিচ‍্যুতির স্মারক‍।

                   ।। ৬  ।।

        ক‍্যাম্পে গিয়ে সুমন ওর কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধু‌কে বলে, ‘জানিস এই সোয়েটারটা না কেতকী বুনে দিয়েছে।’ শুনে ওদের কী আহ্লাদ। ‘তাই নাকি? তাহলে তো তোর একদম‌ই শীত করছে না, কী বলিস? আমাদের তো মা, দিদি ছাড়া আর কেউ বুনে দেওয়ার নেই। একটু হাত বুলোতে দে মাইরি, ফীল করি।’ বন্ধুদের চ‍্যাংড়ামি সুমন বেশ উপভোগ‌ করে। ওর অনেক বন্ধুরা যখন মেয়েদের নিয়ে জল্পনা কল্পনা হাসি মস্করা করতো, সুমন তখন বিগত চার বছর ধরে এক জলজ্যান্ত সুন্দরী‌র সাথে নির্ভেজাল আনন্দে চুটিয়ে মিশেছে। কেতকী শুধু সুন্দরী‌ই নয়, তার স্বভাবটিও ছিল কোমল, অন্তরঙ্গ। 

        যৌবনে নারী‌র শীতল প্রত‍্যাখানে অপমানিত পৌরুষ হয়ে যেতে পারে কর্কশ, বিপথগামী। সবল পুরুষের হবে সংযমী হৃদয়, তাতে অযথা উঠবে না ভাবাবেগের তরঙ্গ, উঠলেও তার পাথরপ্রথিম মুখচ্ছবি‌তে ফুটবে না অন্তর্লীন বেদনার সামান্য আঁকিবুঁকি, একান্তে ক্ষণিক ক্রন্দন‌ও সর্বৈব নৈব নৈব চ। এই হচ্ছে সমাজে পুরুষের প্রচলিত ম‍্যানলি ইমেজ‍। অজান্তেই এই ইমেজ অনুশীলনে‌ রত অধিকাংশ মেল শভিনিস্ট। যারা এ ছকে পড়ে না, নারীর মধুর আন্তরিক সঙ্গ তাদের মননকে করতে পারে গভীর সংবেদনশীলতায় সমৃদ্ধ। সুমনের কাছে কেতকী‌র সাহচর্য ছিল সেরকম। গন্তব্য নয়, যতদিন সম্ভব সখ‍্যতা‌র সহযাত্রা‌ই ছিল সুমনের কাছে অতীব আনন্দ‌ময়।
     

         ফেরার দিন ছাত্র, পাচক, সাহায‍্যকারী নিয়ে প্রায় সত্তর জন। তার ওপর আছে সার্ভের যন্ত্রপাতি, ব‍্যক্তিগত মাল। সরকারী কলেজের শিক্ষামূলক ভ্রমন, বাজেট কম। তাই RMS ভ‍্যান সংলগ্ন একটা  অর্ধেক জেনারেল ডাব্বা রিজার্ভ করা হয়েছে। ওতেই ওরা যাবে। জশিডি জংশনের সাইডিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা। মোগলসরাই প‍্যাসেঞ্জার এলে তার সাথে জুড়ে দেওয়া হবে। ট্রেন প্রচুর লেট। কামরা অন্ধকার। কেউ শুয়ে পড়েছে। কয়েকজন মোমবাতি জ্বালিয়ে তাস খেলছে। বাকি‌রা আড্ডা মারছে। রাত প্রায় দুটো। স্টেশনে একা পায়চারি করছে সুমন। ঘুম আসছে না। কাল কেতকীর সাথে দেখা হবে। মাত্র এক মাসের অদেখা। কিন্তু মনে হচ্ছে কতদিন হয়ে গেছে। 
     

         নির্জন প্ল‍্যাটফর্ম। উলিকটের ফুলহাতা গেঞ্জির ওপর সুমন পরেছে কেতকীর বোনা সোয়েটার, তার ওপর চাপিয়েছে বাবার দেওয়া পুলিশের ওভারকোট। মাথায় হনুমান টুপী। তাও শেষ ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো বিহারের ঠান্ডার দাপট টের পাওয়া যাচ্ছে। একবার ওভারকোটের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে সোয়েটারের ওপর নিজের বুকে হাত বোলায় সুমন। আঙ্গুলে স্পর্শ করে সেই ঠিকঠাক না হ‌ওয়া V. নিমেষে অলীক উষ্ণতার আবেশে ভরে যায় মন।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • স্মৃতিচারণ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৫৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৃষ্টিছাড়া | 2405:201:a41e:a09d:8cdb:8f37:6fb8:276d | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৪০527221
  • আর্থিক সমৃদ্ধশালী প্রতিষ্ঠিত ছাড়া প্রেম প্রীতি অল্পশিক্ষিত দের ওসব বিলাসিতা বিলাসী লেখকদের সাহিত্যেও স্থান নেই।
    সমরেশ নামের মর্যাদাহানি 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:০০527223
  • যদি কারো জন্ম হয় অনাকাঙ্ক্ষিত, প্রেমহীন দাম্পত্য সম্পর্কে বা বিবাহবহির্ভূত দুর্ঘটনায় - তার প্রেম, ভালো‌বাসার প্রতি আক্রোশ খুব‌ই স্বাভাবিক। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৬527230
  • নিকের সাথে কুস্তি করে গাত্রে হোলো ব‍্যাথা - হে হে, এতো নিরেট আমি ন‌ই। আমি‌ও মজা নিচ্ছি। যদি আমার জুতো গালে পড়ে নিকের দল গাল‌ও পাড়ে - আমার ভাষা দেখলেই বোঝা যাবে, তা চাইনিজ হাওয়া‌ই  চটি নয় -  NIKE - এমন ভাষায় গাল দেওয়া নিকের কম্মো নয়। হি হি।
  • সৃষ্টিছাড়া | 2405:201:a41e:a09d:8cdb:8f37:6fb8:276d | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২২527233
  • আগাছা বিলাসী
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১০527237
  • লোভ ত‍্যাগ, হিংসা ক্ষমা, ঔদার্য সংকীর্ণতা, সাহস কাপুরুষ‌তা এহেন নানা পরস্পর‌বিরোধী মানবিক প্রবৃত্তি, আচরণের মতো প্রেম‌ও একটি মানবিক আবেগ যার প্রভাব মানবদরদী রবীন্দ্রনাথ থেকে পিশাচ হিটলার - অনেকেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
     
    তবে যে নিকনামের মধ‍্যে‌‌ই জন্মদোষ সূচীত - তাদের মগজে‌ই -  "প্রেম প্রীতি অল্পশিক্ষিতদের বিলাসিতা" - এহেন উদ্ভট ভাবনা আসতে পারে।
     
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪২527238
  • বলতে ভুলে গেছি রণক্লান্ত সেনাপতি নেতাজী সুভাষ, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, চিত্রপরিচালক মৃণাল ও সত‍্যজিৎ, কবি সুনীল ও শক্তি ... এহেন নানা অল্পশিক্ষিতরা‌ও এক বা একাধিক‌বার প্রেমে পড়েছি‌লেন। সমরেশ বসু বিবাহিত পত্নীর বদলে শ‍্যালিকা‌র সাথে থাকতেন। সলিল চৌধুরী প্রথমা পত্নী জ‍্যোতিকে ডিভোর্স না করে‌ই ২২ বছরের ছোট ছাত্রী সবিতার প্রেমে পড়ে তাকে বিবাহ করেন। এ এক এমন আবেগ যার প্রভাব এড়ানো মুশকিল। 
     
    আসলে এমন সব সৃষ্টি‌ছাড়া মন্তব্য -  সুচিন্তিত, মার্জিত পাঠ প্রতিক্রিয়া বা সমালোচনা নয় - নিতান্ত ব‍্যক্তি আক্রোশ উগড়ে দেওয়া - তাই এসব ইউজড ডায়াপারের মতো লিটার বিনে নিক্ষেপযোগ‍্য। তবু কিছু কথা লিখে ফেললাম কারণ প্রসঙ্গটি আমার আগ্ৰহের পরিমণ্ডলে।
  • dc | 2401:4900:1cd1:565e:44b9:1b:f420:4999 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৪527240
  • এই জীবনে প্রেম ছাড়া আর কি আছে? "ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড করো প্রেমের পদ্যটাই, বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই" :-)
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:১৯527241
  • আহাহা...মোক্ষম ছুঁয়ে গেল .... তাই থাকলো এটা ... বেনোজল ধুয়ে যাক বৃষ্টির ধারায়
     
  • Arindam Basu | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩২527243
  • ভারি সুন্দর গল্পটা | কেন  যেন নরেন্দ্রনাথ মিত্রকে মনে করিয়ে  দিলেন, :-)
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৪527245
  • Birds of same feather not only floc  together but possibly sing together as well, if they can... but vultures focus  on caracass alone .... Amen. 
     
    না, এটা কোথাও থেকে টুকিনি, অরিনের অনুরণন দেখে স্বতোৎসারিত হয়ে গেলheart
     
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১৬527249
  • পেরেম নিয়ে কথা হচ্ছে যখন - আমার এই প্রিয় গানটি‌ও না হয় থাকলো heart
     
  • হে হে | 2405:8100:8000:5ca1::be:239 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৪527255
  • চুতিয়াদাদু সব লেখায় খিস্তি মেরে বেড়ায় কাজেই তাকে সমরেশবুড়ো বেজম্মা বলে খিস্তালে হেহের কিছু যায় না। হে হে বরং সমালোচনা দেকলেই  সমরেশের তিড়িংনাচ হবে জানত।  হচ্ছেও। খ্যাক খ্যাক। পেমের গপ্পো নিয়ে বড় লেখকদের সাক্ষী টানলে নিক নিয়েও অত চুদুরবুদুরের কিছু নেই হে বুড়ো। ভানুসিংহ কালকুট নীললোহিত এগুলো সব নিক।
    লাö আবার লাচো দেখি।
  • dc | 2401:4900:1cd1:565e:7807:9bf0:d45a:916d | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০৫527258
  • এটা একেবারেই মাথামুন্ডুহীন কমেন্ট। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:২৯527262
  • বরং বহুশ্রুত একটা গান আবার শোনা যাক এবং আবার‌ও আশা করা যাক - হয়তো কখনো বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে নর্দমার পাঁক heart
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন