এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • চাম্বা

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ২৬ জুলাই ২০২৩ | ৫৪১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • গরমকাল। ধওলাধারের নীচের দিকে যেমন কাংড়া উপত্যকা, ধওলাধার শৃঙ্গগুলো পেরিয়ে গেলে উল্টো দিকে তেমনই হিমাচলের চাম্বা জেলার ডালহৌসি, খাজ্জিয়ার, চাম্বা, ভারমৌরের মত পাহাড়ী সমস্ত জনপদ। ধওলাধার পেরোনোর কোনো গিরিপথ নেই। সেজন্য সরাসরি কাংড়া থেকে চাম্বা যাওয়া যায় না, ঘুরে যেতে হবে। ধওলাধার আর পীর পাঞ্জালের মাঝখানে রাভি নদীর উপত্যকায় ছড়িয়ে থাকা এই দেড় হাজার বছরের পুরোনো স্বাধীন রাজ্য এই কারণে বহুদিন দুর্গম ছিল বলে মুঘলরা এখানে আক্রমণ করেনি। স্বাধীনতার পরে চাম্বা ভারতে যোগদান করে।

    চাম্বার রাজবংশের শুরুর দিকে রাজা মরুর আমলে রাজধানী ছিল চাম্বা থেকে আরো দূরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত ভারমৌর জনপদ। সেখান থেকে এখনো বছরে দুতিনমাস মণিমহেশ যাত্রা হয়। শৈবদের তীর্থস্থানের মধ্যে মানস সরোবরের পরেই মণিমহেশের স্থান। হাজার বছর আগে রাজা সাহিল বর্মন রাজধানী ভারমৌর থেকে আরো পশ্চিমে চাম্বা নগরে সরিয়ে আনেন।

    এক শুক্রবার রাতে পূজা এসএফ এক্সপ্রেস। ট্রেনটা আজমের থেকে আসছে। পুরোনো দিল্লিতে দাঁড়াবে পনেরো মিনিট। পাঠানকোট নামতে হবে ভোর পাঁচটায়। ট্রেন যাবে জম্মু তাওয়াই পর্যন্ত। 

    এখন বেশিরভাগ দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো প্যান্ট্রি কার থাকে না। অনলাইন অর্ডার দিলে বিশেষ বিশেষ বড় স্টেশনে গাড়ি দাঁড়ালে দোকান থেকে কেউ এসে খাবার দিয়ে যায় । সেখানে ডোমিনোজ, ফাসুস ইত্যাদি ফাস্ট ফুড, পিজা চেনেরাও কনট্র্যাক্ট নিয়ে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে।  অফলাইনও হয়। কিছু ছেলেপুলে কাগজ পেন নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। 

    পাঠানকোটে দুটো ট্রেন স্টেশন আছে - ক্যান্টনমেন্ট আর জংশন। বেশিরভাগ ট্রেন থামে পাঠানকোট ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে ভোরবেলা নেমে শেয়ার অটো। তিরিশ টাকা। নামিয়ে দিল পাঠানকোটের মহা রানা প্রতাপ ইন্টার স্টেট বাসস্ট্যান্ড। এটা পাঠানকোট জংশন ট্রেন স্টেশনের পাশে, অথচ বেশিরভাগ ট্রেন পাঠানকোট ক্যান্টনমেন্ট হয়ে জম্মুর দিকে বেরিয়ে যায়। কাংড়া উপত্যকার খেলনা ট্রেনটা শুধু জংশন থেকে ছাড়ে। 

    বাসস্ট্যান্ডে ভোর ছটার সময় গিয়ে দেখা গেল হিমাচল পরিবহনের চাম্বা যাবার সরকারি বাস আছে সাড়ে সাতটায়। ডালহৌসী যাবার বাস সাড়ে নটায়। সময় নষ্ট না করে প্রাইভেট বাসে চেপে পড়া। ডালহৌসি একশো চল্লিশ টাকা। এই বাসে আবার যার যেমন সিট নাম্বারের বালাই নেই । ফাঁকা দেখে  একটা জানলার ধারে বসে পড়া গেল। 

    মামুনের ভারতীয় সেনা ছাউনি পেরিয়ে বাস বাঁদিকে ঘুরে গেল। রঞ্জিত সাগর জলাধারের অর্ধেকটা জম্মু কাশ্মীরে আর অর্ধেকটা পাঞ্জাবে, তার ​​​​পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে দুনেরাতে কুড়ি মিনিটের জন্য থামল। দুনেরা পাঞ্জাবের সীমান্ত শহর, এরপর হিমাচল প্রদেশের পুলিশের চেকপোস্ট। এই দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগে বাসের মধ্যে ভেলপুরি, আচার, কাটা নারকেল ইত্যাদি বিক্রি করতে উঠছিলেন লোকজন।

    ইতিমধ্যে কিন্তু বাসটা এমনিতেও রাস্তায় কেউ হাত দেখালে বা কন্ডাক্টর শিষ দিলেই বারবার থামছে আর স্থানীয় লোকজন ওঠানামা করছে। পাহাড়ে সরকারি বেসরকারি নির্বিশেষে সমস্ত বাসই এরকম। স্থানীয় লোকেদের যাতায়াতের বলভরসা। তাদের মধ্যে অনেকে পরে উঠেছেন বলে বসার জায়গা পাননি, দাঁড়িয়ে আছেন। বাসটা ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে শুরু করল, পাশে রাভি নদী বয়ে যাচ্ছে গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে। বাসের জানলা থেকে তাকে মাঝে মাঝে কিছুটা নীচে দেখা যাচ্ছে। বাসের সামনের দিকে একটা ছোট স্পিকারসমেত টিভি লাগানো। হিমাচলী ভাষায় সেখানে মিউজিক ভিডিও চলছে। 
     
    পাঠানকোট থেকে বানিখেতের রাস্তায় 
     
     
    বানিখেতে এসে বাসটা দাঁড়াল আড়াই ঘন্টা পর। এখান থেকে ডানদিকে গেলে ডালহৌসি। আর সোজা রাভি নদীর ধার দিয়ে যেতে থাকলে চাম্বা। ডালহৌসি থেকেও চাম্বা যাওয়া যায় খাজ্জিয়ারের রাস্তা দিয়ে। শীতকালে বরফ পড়ার জন্য সেই রাস্তা বন্ধ থাকে। বানিখেত থেকে এই তিন জায়গারই ট্যাক্সি পাওয়া যায় - পাঠানকোট, চাম্বা, ডালহৌসি। 
     
     
    বানিখেত থেকে ডালহৌসি বাস স্ট্যান্ড পনেরো মিনিটের রাস্তা। লর্ড ডালহৌসি গরমকালে বৃটিশদের গ্রীষ্মাবাস হিসেবে অনেকটা জায়গা নিয়ে ছড়ানো এই ছোট জনপদ গড়ে তুলেছিলেন, তার নামই রয়ে গেছে। উত্তর ভারতের বাকি নামকরা পাহাড়ী জনপদ বা হিলস্টেশনগুলোর তুলনায় অনেক ফাঁকা। প্রধানত তিনটে চক বা কেন্দ্র আছে এই জনপদের। কেন্দ্রগুলো একে অপরের সঙ্গে রাস্তা দিয়ে যুক্ত। সবথেকে নীচে হচ্ছে বাস স্ট্যান্ড তারপর ঘোরানো রাস্তা দিয়ে একটু ওপরে উঠে সুভাষ চক। সেখান থেকে আরো ওপরে উঠলে গান্ধী চক। এই তিনটে জায়গার ট্যাক্সি অপারেটরদের ইউনিয়ান আলাদা এবং এক ইউনিয়নের চালক অন্য ইউনিয়নের ট্যাক্সি চালাতে পারে না। পরে খাজ্জিয়ার যাবার সময় ক্যাব চালক আমাকে এসব গল্প বলেছেন। গাড়ি বা পেট্রল সব দায়িত্ত্ব ইউনিয়নের। চালক শুধু চালান। অর্ধেক টাকা যাবার আগে, অর্ধেক টাকা ফিরে আসার পর। আর ইউনিয়ন পঞ্চাশ টাকা নেয়। পার্কিংয়ের টাকাও এর মধ্যে ধরা আছে।
     
    হোটেল সুভাষ চকের কাছে। চেক ইন অনেক দেরিতে বলে প্রথমে জলখাবার খেয়ে ভাবলাম খাজ্জিয়ারটা সকাল সকাল ঘুরে আসি। একটা সরকারি বাস সকালবেলা ডালহৌসি থেকে খাজ্জিয়ার হয়ে চাম্বা যায় কিন্তু ফেরার সময় খাজ্জিয়ার থেকে ডালহৌসির বাস পাব কিনা জানা নেই, তাই ক্যাবই সই।  সেইমত দুটো আলু পেঁয়াজ কুলচা আর চা খাবার পর উপায়ান্তর না দেখে সুভাষ চকের ট্যাক্সি ইউনিয়ন থেকে ক্যাব নেওয়া গেল। দেড়ঘন্টা নাকি লাগবে খাজ্জিয়ার যেতে। 

    গান্ধী চক থেকেও গাড়ি ধীরে ধীরে আরো ওপরে উঠতে শুরু করে। এই ডালহৌসি থেকে খাজ্জিয়ার যাবার রাস্তায় 'ডালহৌসি পাবলিক স্কুল' ইত্যাদি দুটো বড় বড় বোর্ডিং স্কুল পড়ে, রাস্তার দুধারে অনেকগুলো ধাপে তাদের নানারকম সম্পত্তি। পয়সাওলাদের ব্যাপার। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী তো বাইরের। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা কমই সুযোগ পায়। এমনকি এই জায়গাটায় রাস্তার দুধারের বহু ফুলগাছও স্কুলগুলোই দেখাশোনা করে। 

    খাজ্জিয়ারের রাস্তায় 

    মারুতি অল্টোর গাড়িতে পেন ড্রাইভ আগে থেকেই লাগানো ছিল। ক্যাবচালক একটু পরে গান চালিয়ে দিলেন । পাহাড়ি রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে যেকোনো গান শুনতে বেশ ভালো লাগে। ভারত সরকারের  'বর্ডার রোডস অরগানাইজেশন' এই রাস্তাটার তৈরী এবং তত্ত্বাবধানের দায়িত্ত্বে আছে। 
     
    কালাটপ জঙ্গলের ভেতরের রাস্তা 
     
    অর্ধেক রাস্তা যাবার পর কালাটপ জঙ্গলের চেকপোস্ট পড়ে। এখান থেকে ডানদিকে গেলে ডালহৌসির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ডাইনকুন্ড ট্রেক করার রাস্তা। 
     
    গাড়িচালক খাজ্জিয়ার থেকে একটু আগে নিয়ে গেলেন একটা নতুন শিবমূর্তি দেখাতে। আকাশে মেঘ না থাকলে এখান থেকে পুরো পীর পাঞ্জাল দেখা যায়। আকাশে মেঘ ছিল না। কিন্তু পীর পাঞ্জাল মেঘে ঢাকা। অল্প অল্প সাদা শৃঙ্গগুলো দেখা যাচ্ছিল, ক্যামেরায় আসেনি। এই জায়গাটায় একগাদা প্যারা সেলিংও হচ্ছে। 
     
    শিবমূর্তির পিছনে পুরো দিগন্ত জোড়া মেঘে ঢাকা পীর পাঞ্জাল 
     
    এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে খাজ্জিয়ারের ফটকের বাইরে ছেড়ে দিলেন। পুরো রাস্তাটা নির্জন থাকলেও এই জায়গাটায় একেবারে গাড়ির এবং মানুষের মেলা বসে গেছে। খাজ্জিয়ার একেবারে প্রাকৃতিক একটা গড়ের মাঠের মত। চারদিক কালাটপ বনাঞ্চলের পাইন দিয়ে ঢাকা। বৃষ্টির জল জমে মাঝখানে একটা ছোট হ্রদ। সেখানে অবশ্য এখন গরমকালে বড় বড় মানুষসমান ঘাসের ঝোপ জন্মেছে। বর্ষাকালের পর আবার জল বাড়বে  ঘাসের ঝোপ ঢেকে যাবে। শীতকালে এই উপত্যকা বরফে ঢেকে যায়। কিছু থাকার জায়গাও হয়েছে এখন খাজ্জিয়ারের কাছাকছি। 
     
     
     
     
     
    খাজ্জিয়ার জায়গাটা যথেষ্ট বড়। একটা ছবিতে আসছে না। 
     
    টুরিস্টদের খাওয়াদাওয়ার জন্য জায়গাটা নোংরা হচ্ছে। ওখানকার স্থানীয় লোকজন এই নোংরা ব্যাপারটা পছন্দ করছে না। কিন্তু লোভ বড় বালাই। এই সবুজ ঘাসের আয়ু আর বেশিদিন নেই বোঝা গেল। এই পুরো উপত্যকা ঘিরে হাঁটার জন্য বাঁধানো রাস্তা করা আছে। এছাড়াও উপত্যকা ফেন্স দিয়ে ঘেরা যাতে বন্য জন্তুরা কালাটপ থেকে খোলা জায়গায় ঢুকে না পড়তে পারে। সেখানে লোকজন ঘোড়ায় চেপে ঘুরছে। উপত্যকার ভেতরের সবুজ লনে চলছে জর্বিং। ভেতরের জলাশয়ে একটা ছোট জেটি মতন করা। 
     
    ডালহৌসি ফিরে এসে বিকেল সন্ধেবেলা তিনটে চকে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা গেল। বাসস্ট্যান্ডের কাছে আছে ইন্দো তিব্বতী বাজার। গান্ধী চকের কাছে সারি দিয়ে দোকানগুলোতে খাওয়াদাওয়া, কেনাকাটি চলছে। সুভাষ চকের কাছে নেতাজীর মূর্তি ঘিরে সেলফি তুলতে ব্যস্ত জনতা। ডালহৌসি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা ওপরে বলে এখানে ভাড়ার স্কুটির উপদ্রব নেই।  প্রচুর মহিলা পুলিশ গাড়ির ট্র্যাফিক সামলাচ্ছেন। চক গুলোর কাছাকাছি দুটো চার্চ আছে। রাত নামতেই কুয়াশা মুড়ে নিচ্ছিল ডালহৌসী শহরের রাস্তার আলোদের। 
     
    ডালহৌসির রাস্তা থেকে নিচে চাম্বা উপত্যকা 
     
    পরেরদিন হোটেলে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট বাফে খেয়ে, তাড়াতাড়ি চেক আউট করে সাড়ে নটার সময় বাস স্ট্যান্ডে এসে চাম্বা যাবার সরকারি বাসে উঠে বসা গেল। এই বাস খাজ্জিয়ার দিয়েই যাবে। খাজ্জিয়ার পেরোতে ধীরে ধীরে গাছগাছালি কমে গিয়ে চারপাশ পাথুরে হয়ে উঠতে লাগল। সাদা ধুলো উড়ছিল রাস্তা থেকে। 
     
    খাজ্জিয়ার পেরিয়ে চাম্বার রাস্তায় 
     
     
    ধীরে ধীরে বাস পাহাড় থেকে নামছিল। আড়াই ঘন্টা বাদে চাম্বার বাসস্ট্যান্ড পৌঁছানো গেল। নেমে প্রথমেই বোঝা গেল চাম্বার বাস স্টেশন অনেক বড়। ডালহৌসিরটায় খুব বেশি হলে চারটে বাস দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। চাম্বা জেলা সদর বলে সার্কিট হাউস, আদালত, সরকারি অফিস এই সব আছে, জমজমাট জায়গা। 
     
    রাভি নদীর বুকে জেগে থাকা পাথর 
     
    চাম্বার প্রাণকেন্দ্র চৌগানে যাবার জন্য বাস স্ট্যান্ডের পেছন দিক দিয়ে সিঁড়ির শর্টকাট করা আছে। রাস্তাঘাট হাঁটাহাঁটির পক্ষে অসম্ভব খাড়াই। কষ্টে ওপরে এসে পৌঁছনো গেল। 
     
    চাম্বার শতাব্দীপ্রাচীন চৌগান
     
     
    চাম্বার চৌগানে [হিমাচলী ভাষায় মাঠ] গাছের তলায় বসে রোববারের দুপুরে জিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। চৌগানকে ঘিরে রাস্তার একপাশে হিমাচল সরকারের নিজস্ব খানাপিনার জায়গা। ঠান্ডা বিয়ারও পাওয়া যাচ্ছে। একটা নিরামিষ থালি নিলাম। চৌগানের আশেপাশে এই একটাই বড় খাবার দোকান। বাকি কাউকে লাইসেন্স দিয়ে জায়গাটা নোংরা করা হয়নি। চৌগানের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিচে রাভি নদী, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। 
     
    চৌগানের রাস্তা থেকে নীচে চাম্বা বাসস্ট্যান্ড
     
    রাভি নদীর ওপর শীতলা ব্রিজ 
     
    চৌগান থেকে এগোতে থাকলে আরো ওপরের দিকে হাজার বছরের পুরোনো লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরগুচ্ছ - পাঁচটা মন্দির একসঙ্গে। ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগের 'প্রোটেক্টেড মনুমেন্ট' মার্কা বোর্ড লাগানো আছে জুতো রাখার জায়গায়। মন্দিরগুলোর বাইরের মূর্তিগুলো দেখছিলাম ঘুরে ঘুরে। অদ্ভুত সমস্ত মূর্তি কারণ অনেক মূর্তির দাঁত আছে।
     
     
     
     
     
     
     
     
     
    মন্দির গুলোর গায়ে প্রায় পাঁচশোর বেশী ছোট বড় মূর্তি আছে, কয়েকটার ছবি তুলেছি 
     
     
    রোববারের অলস দুপুরে চাম্বার অলিগলি 
     
    বাসস্ট্যান্ডে এসে একটু পরে পাঠানকোট যাবার বাসের টিকিট কাটলাম। ফেরার সময় বাস রাভি নদীর পাশ দিয়েই যেতে থাকল। একসময় রাস্তা আবার এত ওপরে উঠে গেল যে ডানদিকে তাকিয়ে রাভি নদী এত নিচে যে দেখাই যাচ্ছিল না কিছু। মেঘের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছিল রাভি নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে তৈরী চামেরা হ্রদ। 

    এদিকে শুক্রবার বিকেলে ফেরার ট্রেনের টিকিটটা দেখেছিলাম জম্মু রাজধানীতে ওয়েটিং লিস্ট ওয়ান। এটা তো কনফার্ম হয়ে যাবারই কথা। কিন্তু পাঠানকোট ফেরার রাস্তাতেই বাসে বসে রেলের এসএমএস পেলাম - 'চার্ট প্রিপেয়ার্ড। টিকিট কনফার্ম হয়নি'। পুরো কেস। 

    পাঠানকোট অবধি টিকিট কাটলেও এই বাসটা আসলে দিল্লী অবধিই যাবে। কিন্তু 'সাধারণ' বাস বলে আমার পাশে বসে থাকা লোকজন মন্ত্র দিল - পাঠানকোটে নেমে সেখান থেকে দিল্লির এসি বাস ধরবার। এই 'অর্ডিনারি' বাস যেভাবে দাঁড়াতে দাঁড়াতে যাচ্ছে তাতে দিল্লি পৌঁছতে কাল বেলা হয়ে যাবে। সেইমত পাঠানকোট বাস স্ট্যান্ড থেকে একটা 'হিমধারা'র একদম পিছনের সিটে লাফাতে লাফাতে পরেরদিন সকালে ফিরে এলাম। হিমধারা এসি বাস, কিন্তু এটাও বসার জায়গা থাকলে রাস্তায় লোকজন তুলতে তুলতে যায়। আগে ম্যাকলিওডগঞ্জের পর্বে যে 'হিমসুতা' বাসের কথা লিখেছিলাম সেটা নন স্টপ, খাওয়ার জায়গা ছাড়া কোথাও দাঁড়ায় না। 

    ফেরার সময় পাঠানকোট থেকে জাসসুর, রাজাকি তালাও হয়ে পং বাঁধের রাস্তা। বিপাশার[বিয়াস] ওপর এই পং বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে আরেকটা জলাধার - রানা প্রতাপ সাগর। আর শতদ্রুর [সুতলেজ] ওপর নাঙ্গালে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে গোবিন্দ সাগর। পাঞ্জাবের জলের চাহিদা মেটাতে হিমাচলের এই দুটো বাঁধের বড় ভূমিকা আছে। দাসুয়া জাতীয় অরণ্যর কানঘেঁষা রাস্তা দিয়ে আবার সেই অম্ব, উনা, নাঙ্গাল হয়ে চন্ডিগড়ের রাস্তা। তারপর চুয়াল্লিশ নম্বর জাতীয় সড়ক। 

    আজ যখন এই লেখা লিখছি, হিমাচলে বন্যা হচ্ছে, প্রায় একশোজনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। রাভি নদীর জন্য বন্যা হয়েছে চাম্বাতেও। বর্ষাকালে ওই নদীর আর তার পাশের জনপদের অবস্থা ভাবলেই শিউরে উঠতে হচ্ছে। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৬ জুলাই ২০২৩ | ৫৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৬:৪১521808
  • চমৎকার লাগল। 
     
    হিমাচল আমার বড় পছন্দের। গাঢ়োয়ালের চেয়েও হিমাচল বেশী পছন্দ। হিমাচল অনেক বেশী সবুজ, গাঢ়োয়াল খানিক রুক্ষ। 
     
    এই বড় বড় বাঁধগুলো শর্টটার্মে বেশ মিছু সুবিধে করলেও লংটার্মে প্রচুর ক্ষতি করেছে। 
  • | ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৬:৪২521809
  • *কিছু
  • kk | 2607:fb91:87b:8018:e3da:7b88:fc40:7b50 | ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫২521811
  • খুব সুন্দর লেখা। ছবিগুলোও যথারীতি দারুণ। আমি ডালহৌসি, খাজ্জিয়ার গেছি কলেজে পড়ার সময়ে। খুব ভালো লেগেছিলো। বলতে কী ভারতের যত জায়গায় আমি বেড়াতে গেছি, আর সেটা খুব কম নয়, তার মধ্যে এই দুটো জায়গা আমার সবচেয়ে প্রিয়। একটা প্রশ্ন মনে আসছে। এই যে দেবদেবীর মূর্তি, বেশির ভাগেরই দেখছি পায়ের তলায় কাউকে চেপে রাখা হয়েছে। এর গল্পগুলো জানেন নাকি?
  • Swati Ray | 117.194.36.212 | ৩০ জুলাই ২০২৩ ০০:২৪521886
  • অনেক দিন পরে এসে আবার আপনার লেখা পড়ে মন ভাল হয়ে গেল। 
  • দীমু | 182.69.179.140 | ৩০ জুলাই ২০২৩ ১২:৩৪521909
  • দ , হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। হিমাচল আর কাশ্মীর অনেক বেশি সবুজ। উত্তরখণ্ডে ন্যাড়া পাথর বেশি। 
     
    কেকে, না এই গল্পগুলো জানি না। মূর্তিগুলোর মধ্যে একটা হিংস্রতা আছে সেটা ঠিক। সমসাময়িক চান্দেলদের খাজুরাহোর মূর্তিগুলো থেকে এই চাম্বা স্টাইল পুরো আলাদা। 
     
    স্বাতী রায়, ধন্যবাদ yes
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন