সিন্ধু সভ্যতার পরবর্তীকালে ভারতে ব্রোঞ্জের মূর্তি পাওয়া গেছে গুপ্ত - বকাটক আমলে [পঞ্চম শতাব্দী]। গুপ্তদের ব্রোঞ্জ কৌশল এগিয়ে নিয়ে গেছে বাংলায় পাল , পশ্চিম ভারতে মৈত্রক , মধ্যভারতে চেড়ি , উত্তর ভারতে প্রতিহাররা। দক্ষিণ ভারতের পল্লব এবং চোলরা গুপ্তদের থেকে শিখলেও নিজস্ব স্টাইল বের করেছিল। এর পাশাপাশি গুপ্তদের পরবর্তী সময়ে হিমালয়ের কাশ্মীর এবং চাম্বা উপত্যকার ব্রোঞ্জ মূর্তিরও আলাদা স্টাইল আছে। এর পাশাপাশি ছিল বৌদ্ধ এবং জৈনদের ব্রোঞ্জ মূর্তি।
নবম শতাব্দীর কাশ্মীরের চার মাথা ওয়ালা বৈকুন্ঠ বিষ্ণুর পিতল মূর্তি। দুদিকে গদাদেবী এবং চক্রপুরুষ।
দশম শতাব্দীর চাম্বার ভৈরবী মূর্তি , শিবের মূর্তির ওপর ললিতাসনে বসা অবস্থায়। দুদিকে কার্তিক এবং গণেশ।
বৌদ্ধ ব্রোঞ্জ , বজ্রযান ঘরানার জম্ভল এবং হেরুক
নবম শতাব্দীর জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের ব্রোঞ্জ , গুজরাটের আকোটা থেকে সংগৃহিত। বৌদ্ধ মূর্তির সঙ্গে জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তির প্রধান পার্থক্য - জৈন মূর্তিদের বুকের মাঝখানে একটা মণি খোদাই করা থাকে।
পশ্চিম ভারত থেকে পাওয়া ~১৪০০ শতাব্দীর ১৭তম জৈন তীর্থঙ্কর কুন্থুনাথের ব্রোঞ্জ মূর্তি। তাকে ঘিরে কুলুঙ্গিগুলোতে চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মূর্তি। সবাই পদ্মাসনে।
নবম শতাব্দীর চোলদের নটরাজ
বারোশো শতাব্দীর চোলদের বিষ্ণু।
উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের ব্রোঞ্জ মূর্তির প্রধান পার্থক্য হল , এই মূর্তিগুলো অনেক রোগা , ছিপছিপে ধরণের। মূর্তি ঢালাই করতে অল্প ব্রোঞ্জ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু বেশি নিখুঁত। দক্ষিণের মূর্তির হাতের পিছনের দিকে শঙ্খ , চক্র , গদা , পদ্ম আটকে দেওয়া থাকে , সেখানে উত্তরের বা আমাদেরও দুর্গা মূর্তিতে এই জিনিসগুলো হাতের মুঠোর ফাঁকের মধ্যে গলিয়ে দেওয়া হয়।
কর্ণাটকের চালুক্যদের উমা , মহেশ্বর। বারোশো শতাব্দী।
বারোশো শতাব্দীতে তামিলনাড়ুর চোলদের তৈরী সবথেকে বিখ্যাত নটরাজ।
১৫০০ শতাব্দীর বিজয়নগরের নান্দিকেশ্বর [শৈব] মূর্তি। পিছনের এক হাতে পরশু আরেক হাতে মৃগ।
পনেরোশো শতাব্দীর কেরালার চন্দ্রশেখর [শৈব] মূর্তি , এখানেও পিছনের এক হাতে পরশু আরেক হাতে মৃগ।
ব্রোঞ্জ গ্যালারি থেকে বেরিয়ে ছবির সংগ্রহে। কোম্পানী আমলের আগেকার এই সব ছবি মূলত আঁকা হত পাণ্ডুলিপির পাতায় এবং ছোট ছোট আকৃতিতে।
১৬২০ , জাহাঙ্গীর ম্যাডোনার একটি ছবি দেখছেন।
~১৫৮০ , আকবরের নির্দেশে তুর্কী থেকে ফার্সিতে অনূদিত হয়েছিল বাবরের আত্মজীবনী বাবরনামা। এই বইতে আছে ১৪৪ টি ছবি। বইটা জাদুঘরের জিম্মায় থাকলেও কয়েকটি পাতা সাজানো আছে গ্যালারিতে। এটা তার মধ্যে একটা।
আকবরের সময়েই সংস্কৃত মহাভারত ফার্সি রজমনামায় [যুদ্ধের বই] অনূদিত হয়। এখানে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের একটি খন্ডচিত্র, ভীম এবং
কোনো এক কৌরবের গদার লড়াই দেখা যাচ্ছে। রাজপ্রাসাদে মুঘল স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট।
~১৭৪০ , দারা শিকোহের বিয়ের শোভাযাত্রায় শাহজাহান
পদ্মপত্রের দশটি পাতায় দশজন শিখ ধর্মগুরু। এই পাতাটি গুরু গ্রন্থ সাহেব থেকে নেওয়া এবং শিখ ঘরানার আঁকার স্টাইল।
রাজপুতানার মেবার ঘরনার আঁকা ছবি। উদয়পুরের জগমন্দির প্রাসাদের ল্যান্ডস্কেপ।
হিমাচল প্রদেশের কাংড়া পাহাড়ি ঘরানার আঁকা
এটা ভারতীয় নয়। মেক্সিকোর Codex Zouche-Nuttall , পশুচামড়ার ওপর আঁকা , তারপর পশুচামড়াকে শুকিয়ে ভাঁজ করে একর্ডিয়নের বইয়ের মত বানানো হয়েছিল। মূল কপিটা আছে লন্ডনের বৃটিশ মিউজিয়ামে। একটা কপি রাখা আছে দিল্লিতে।
শ্মশানকালী
~১৮০০ শতাব্দীর রাজস্থানে শারদ পূর্ণিমার উৎসবে শ্রীনাথ জী [শ্রীকৃষ্ণ]। তিনটি প্যানেলে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের জন্য ২৪টি উৎসব দেখানো হয়েছে - রাখিবন্ধন , জন্মাষ্টমী , রাধা অষ্টমী , অন্নকূট , বসন্ত পঞ্চমী , রথযাত্রা , রামনবমী , দোল ইত্যাদি।
এই প্যানেলে দেখানো হয়েছে কিভাবে ব্রাহ্মীলিপি থেকে বাংলা / অহমিয়া লিপি এসেছে। অশোক > ক্ষত্রপ > গুপ্ত > মৌখারি > শশাঙ্ক > পাল > সেন হয়ে সর্বশেষ পঞ্চদশ শতাব্দীর শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের লিপি , যা আধুনিক বাংলা।
মুদ্রা গ্যালারি ছিল দোতলায় /তিনতলায়।
সত্য সেলুকাস
কণিষ্কের মুদ্রা।
এখানে বলা যেতে পারে , কণিষ্কের বাবা ভীম কাদফিসেস এবং গ্রীক রাজা আলেক্সান্ডারের মুদ্রাগুলো কলকাতা জাদুঘরে দেখেছি।
সমুদ্রগুপ্ত র বিখ্যাত অশ্বমেধ মুদ্রা
তোরমানের সময়কালে হুণদের মুদ্রা
শশাঙ্কের সময় বাংলার মুদ্রা
দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগরের গরুড় এবং বৃষ ছাপের মুদ্রা।
ত্রিপুরা এবং মণিপুরের রাজাদের নিজস্ব মুদ্রা
কোচবিহারের রাজাদের মুদ্রা। বাংলায় লেখা আছে শ্রী শ্রী জিতেন্দ্র নারায়ণ।
নবাবী এবং কোম্পানী আমলের বাংলার টাকা আনা পাই সিকি। ইংরেজি এবং উর্দুর পাশাপাশি বাংলায় খোদাই করা।
একটা ঘরে প্রদর্শনী চলছিল খোটানের টেরাকোটা মূর্তির। খোটান প্রাচীন সিল্ক রুটের ওপর অবস্থিত তিব্বতের এক শহর। সেখানেও ~১৯০০ সালের পর প্রত্নকার্য চালিয়ে সিন্ধু সভ্যতার মত ছোট ছোট টেরাকোটা পাওয়া গেছে, সময়কাল চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতাব্দী। এই মূর্তিগুলোর বৈশিষ্ট হচ্ছে , মূর্তিগুলি এনথ্রোপোমরফিক। অর্থাৎ মানুষকে পশুর মত দেখানো হয়েছে।
পাখির মত দেখতে একটি বীণা বাদনরত মূর্তি
এটা পাখি নয় অন্য কিছু , কিন্তু বীণা বাদনরত
মাথায় হাত দেওয়া চিন্তাশীল বাঁদর
লম্বাটে নাক , ছুঁচোলো জোড়হাত
এসব ছাড়াও যারা এনথ্রোপোলজিতে আগ্রহী তাদের জন্য আরো গাদা গ্যালারি আছে পোশাক , গয়না , বাদ্যযন্ত্র , লোকশিল্প , উত্তর পূর্ব ভারতের লোকাচার ইত্যাদি অনেক কিছুর ওপর। আমি শুধু ওপরের গ্যালারি গুলো দেখেই বেরিয়ে গেছিলাম। বেশি দেখলে মাথা ঘোরে।
বাংলালিপির বিবর্তন -
খবর -
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।