এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খ্যাঁটন  হেঁশেলে হুঁশিয়ার  খাই দাই ঘুরি ফিরি

  • পাকশালার গুরুচণ্ডালি (৭২)

    শারদা মণ্ডল
    খ্যাঁটন | হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৫ মে ২০২৩ | ৯২৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ | পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭ | পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০ | পর্ব ১১ | পর্ব ১২ | পর্ব ১৩ | পর্ব ১৪ | পর্ব ১৫ | পর্ব ১৬ | পর্ব ১৭ | পর্ব ১৮ | পর্ব ১৯ | পর্ব ২০ | পর্ব ২১ | পর্ব ২২ | পর্ব ২৩ | পর্ব ২৪ | পর্ব ২৫ | পর্ব ২৬ | পর্ব ২৭ | পর্ব ২৮ | পর্ব ২৯ | পর্ব ৩০ | পর্ব ৩১ | পর্ব ৩২ | পর্ব ৩৩ | পর্ব ৩৪ | পর্ব ৩৫ | পর্ব ৩৬ | পর্ব ৩৭ | পর্ব ৩৮ | পর্ব ৩৯ | পর্ব ৪০ | পর্ব ৪১ | পর্ব ৪২ | পর্ব ৪৩ | পর্ব ৪৪ | পর্ব ৪৫ | পর্ব ৪৬ | পর্ব ৪৭ | পর্ব ৪৮ | পর্ব ৪৯ | পর্ব ৫০ | পর্ব ৫১ | পর্ব ৫২ | পর্ব ৫৩ | পর্ব ৫৪ | পর্ব ৫৫ | পর্ব ৫৬ | পর্ব ৫৭ | পর্ব ৫৮ | পর্ব ৫৯ | পর্ব ৬০ | পর্ব ৬১ | পর্ব ৬২ | পর্ব ৬৩ | পর্ব ৬৪ | পর্ব ৬৫ | পর্ব ৬৬ | পর্ব ৬৭ | পর্ব ৬৮ | পর্ব ৬৯ | পর্ব ৭০ | পর্ব ৭১ | পর্ব ৭২ | পর্ব ৭৩ | পর্ব ৭৪ | পর্ব ৭৫ | পর্ব ৭৬ | পর্ব ৭৭ | পর্ব ৭৮ | পর্ব ৭৯ | পর্ব ৮০ | পর্ব ৮১ | পর্ব ৮২
    ছবি - র২হ


    লকডাউনের জানালা


    ২১

    লকডাউনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের অতি নিদারুণ এই দিনগুলি কোনমতে কাটছিল। খেয়াল করলাম, আমাদের অনার্সের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে গ্রুপ চ্যাটে অনেকদিন কোন কথা বলছেনা। ফোন করলেও ফোন ধরছেনা। কী করে যোগাযোগ করি ভেবে পাইনা। শেষে তাদের বন্ধুদের কাজে লাগিয়ে জানলাম, প্রত্যেকের বাড়িতেই একাধিক নিকটাত্মীয় মারা গেছেন। এদিকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি তলানির দিকে, যারা আসে, তারাও ঠিকমত সাড়া দেয়না। বুঝি মনটা ওদের ভালো নেই। এর মধ্যে অনেক গুলিই ঘটনা ঘটল - তার মধ্যে দুটো বলছি। পিজি ক্লাসের একটি ছেলে আর একটি মেয়ে হঠাৎ করে গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গেল, সব যোগাযোগ বন্ধ। অনেকবার ধরে ফোন করতে করতে জানতে পারলাম, ছেলেটার কারণ কী। ছেলেটির নাম, না আসল নাম বলছিনা, কাছাকাছি কিছু, ধরে নিলাম তারাপদ, থ্যালাসেমিয়ার রোগী - বাড়ির বড় ছেলে, সংসারে আরও ছোট ভাই বোন আছে। প্রতি মাসে ওর ইঞ্জেকশনের খরচ অনেক হাজার টাকা। ওর বাবার সামর্থ্য নেই টাকা দিয়ে সেই ইঞ্জেকশন কেনার, তবে সরকারি হাসপাতালে ওর চিকিৎসা বিনামূল্যে হয়, তাই এখনও অবধি সে দিক দিয়ে তেমন কোন অসুবিধে ছিলনা। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে হাসপাতালে সেই ইঞ্জেকশন অমিল হয়েছে, বিছানা ছেড়ে এখন ওঠার শক্তি নেই ছেলেটার।

    - এই কথাগুলো আমাদের কাউকে না জানিয়ে, তুমি ক্লাসের গ্রুপ ছেড়ে দিলে কেন?
    - ম্যাডাম, সরি, আপনি অনেকবার ফোন করেছেন, আমি ধরতে পারিনি, আসলে আমি আর পড়বোনা।
    - কেন? ভর্তি হবার সময়ে যে বলেছিলে, অসুখ জয় করে তুমি পড়বে, ফিল্ডে যাবে, চাকরি করবে, সেসব কথার কী হবে?
    - পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে ম্যাডাম।
    - পরিস্থিতি? বিশ্ব জুড়ে সবার পরিস্থিতিই তো এক, এর মধ্যে তোমার পড়াশোনাটা আলাদা করে বন্ধ হবে কেন? এখন তো যাতায়াতও করতে হচ্ছেনা, পরীক্ষাও অনলাইনে হবে, তুমি ফাইনাল সেমেস্টারে আছ, পরীক্ষাটা দিয়ে দিতে পারলেই ডিগ্রী। সামনে সুবর্ণ সুযোগ - এক দু মাসের জন্য ডিগ্রী হারাবে?
    - ম্যাডাম ডিগ্রী হারাতে তো চাইনা, বাবার রোজগার কমে গেছে, ইঞ্জেকশন কিনতে গেলে বাড়ি জমি বিক্রি করতে হবে। ছোট ভাইবোনগুলো আছে, ওদের ভবিষ্যৎ কীভাবে নষ্ট করব? পরীক্ষা দিতে গেলে কলেজের ফীটাও তো দিতে হবে। আমি এখনও এই সেমেস্টারে ভর্তি হইনি, মানে টাকা জমা দিতে পারিনি।
    - তোমার বাবা কী করেন?
    - ম্যাডাম, আমরা চাষি পরিবার, বাবার এখন ষাটের কোঠায় বয়স, নিজে আর জমিতে তেমন খাটতে পারেনা। আমি যে সাহায্য করে দেব, তাতেও ভগবান মেরেছেন। ভাই অনেক ছোট। আমাদের জমিতে কাজ করতে যারা আসে, লকডাউনে তারা কেউ আসেনি। আমাদের ফসল ওঠেনি, হাতে টাকা নেই। বাড়িতে হাঁড়ি চড়া দায়। মা কীকরে চালাচ্ছে, আমি জানিনা।
    - পড়াশোনা ছেড়ে কী করবে ভাবছ?
    - আমি তো উঠতে পারছিনা ম্যাডাম, ইঞ্জেকশন নেবার ডেট চলে গেছে। এভাবেই হয়ে যাবে সব….।
    (আমার গলায় ভীষণ ব্যথা করতে থাকে, কিন্তু যতটা সম্ভব স্বর নির্বিকার রেখে পুরোদমে কথা চালিয়ে যাই। আমাদের স্নাতকোত্তর বিভাগটা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার কোর্স, কিন্তু সেলফ ফিনান্সিং। তাই টাকাটা নেহাৎ কম নয়)
    - বুঝলাম তুমি বিনা চিকিৎসায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছ, তাইতো?
    - (উত্তর নেই)
    - বিছানায় পড়ে থাকতে থাকতে অবস্থা যখন আরও খারাপ হবে, তোমার বাবা মা কি এই মৃত্যুর সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন? নাকি জমি বাড়ি বিক্রি করে শেষ চেষ্টা করবেন? তুমি কি তখন বাধা দিতে পারবে? সে অবস্থায় থাকবে? ……… চুপ করে আছ কেন? উত্তর দাও।
    - বাবা মা চেষ্টা করবেন।
    - তাহলে?
    - আমি কী করব ম্যাডাম?
    - শোন, সব সিদ্ধান্ত, সব সমাধান নিজের হাতে থাকেনা। সমস্যা খুলে বলতে হয়, আমরা সবাই সমস্যায় আছি। মনের কথা মুখে প্রকাশ করলে কোন লজ্জা নেই। তোমার ক্লাসের বন্ধুরা এসব কথা জানে?
    - না ম্যাডাম।
    - কলেজের ফি মকুব হয়ে যাবে, ও নিয়ে চিন্তা নেই। ইঞ্জেকশনের ব্যাপারটা আমি দেখছি, তোমাকে গ্রুপে অ্যাড করে দিচ্ছি। সব ক্লাসে ঢুকবে - আর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বল, গল্প কর। নিজের হাতের পাতাটা দেখ, তোমার আয়ু রেখা এখনও লম্বা আছে, ফুরিয়ে যায়নি। আমি রাখছি এখন।

    ওকে ভরসা তো দিলাম, কিন্তু করবটা কী? মাথাটা ঝিমঝিম করতে থাকে আমার। ধীরে ধীরে মনটা শান্ত করে, একটা লম্বা মেসেজ লিখে নেতৃত্ব গুণ আছে, এমন কিছু ছাত্রছাত্রীকে আলাদা করে পাঠালাম, আর সঙ্গে আমার বন্ধু স্থানীয় কয়েকজন সহকর্মীকে। তারপরে অবাক হয়ে দেখলাম, একটা ভালোবাসার অদৃশ্য শিকল কেমনভাবে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, সহজ দিনে তাকিয়ে দেখিনা, বুঝেও বুঝিনা। সকলের চেষ্টায় মাস দুয়েকের ইঞ্জেকশন কেনা গিয়েছিল, আর তারপরে হাসপাতালে আবার সব ঠিক হয়ে গেল। ছেলেটা বাঁচল, পরীক্ষা দিল, পাশও করল ভালোভাবে।

    এবারে সেই মেয়েটির কাহিনী বলি। নাম ধরে নিলাম অঙ্কিতা - বিবাহিতা, ক্লাসে চুপচাপ থাকে, ক্লাস শেষ হলেই বাড়ি চলে যায়, তাই ওর সঙ্গে বেশি মেশামেশি করার সুযোগ হয়নি আগে। আমরা কেউই জানতাম না, যে শ্বশুরবাড়ি ওর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার ঘোরতর বিরোধী, বৌ গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেছে, ব্যাস, আবার পড়া কীসের? এটা জানতাম, যে ও ভালো রান্না করে, সব ঘরের কাজ সামলে সুমলে আসতে হয়, কলেজ থেকে ফিরে আবার রান্নাঘরে লেগে পড়তে হয়। ওর বন্ধুরাই বলতো, কোনদিন পিকনিক হলে অঙ্কিতা নাকি রেঁধে খাওয়াবে। লকডাউনের আগে এসব কথা নিয়ে অত ভাবিনি, আমাদের ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগই তো মেসে হাত পুড়িয়ে খায়। বিয়ের আগে কী আর পরে কী - ব্যাপার তো একই। ছেলেরা বিয়ে হয়ে গেলে একটা ঘরের কাজের লোক পায়, আর মেয়েদের কাজ বাড়ে। আমরা নিজেরাও তো তাই, রান্নাঘর সামলে হিল্লি দিল্লি করছি। এসব জীবনের অঙ্গ। বর্তমান সমস্যা হল, মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। আর ওর বয়ানে শ্বশুর বাড়িতে ভয়ানক অশান্তি শুরু হয়েছে।

    - দেখো অঙ্কিতা একসঙ্গে থাকতে গেলে অশান্তি হতে পারে, কিন্তু তুমি ক্লাসের গ্রুপ ছাড়লে কেন? ওটুকুই তো মুক্তি।
    - আমি আর পড়তে পারবোনা ম্যাডাম। ওরা চায়না আমি পড়ি।
    - তোমার মুখে যা শুনলাম, তাতে তো দেখছি, ওরা কোনদিনও চাইতনা। তাহলে এতদিন, সেই বাধা ঠেলে কলেজে আসতে কীকরে?
    - তখন মনের জোর ছিল।
    - এখন নেই কেন?
    - ম্যাডাম, চারদিকে অসুখের বাড়াবাড়ি। শাশুড়ি শুনেছেন যে পুজোর আগে কলেজ খুলে যাবে, যদি বাচ্চার কিছু হয়ে যায়, তাই আমাকে আর কলেজে যেতে দেবেননা।
    - অঙ্কিতা তোমার করোনা ভ্যাকসিন হয়েছে একটাও?
    - না ম্যাডাম, আমি পঞ্চায়েতে ভিড়ে গিয়ে নিতে পারিনি।
    - আছা ছাত্রছাত্রীদের সকলের ভ্যাকসিন হবার আগে সরকার কলেজ খুলবে বলে তোমার মনে হয়?
    - খুলবেনা?
    - পুজো এখনও অনেক দেরি অঙ্কিতা। ভ্যাকসিনের যোগান এলে দেখবে কলেজেই ক্যাম্প হবে। এখনও আমরা তেমন কিছুর খবর পাইনি। বিডিও অফিস থেকে আমাদের বলেছে অপেক্ষা করতে, ওঁরা জানিয়ে দেবেন। এখনই এত আশঙ্কার কী আছে?
    - শাশুড়ি মা বুঝবেননা ম্যাডাম। দিবারাত্র গঞ্জনা, আমি আর সহ্য করতে পারছিনা ম্যাডাম। আর শক্তি পাচ্ছিনা লড়াই করার।
    - অঙ্কিতা তোমার ক মাস চলছে?
    - পাঁচ মাস।
    - মাই গুডনেস। নড়াচড়া বুঝতে পারছো?
    - একটু একটু।
    - অঙ্কিতা তুমি আমাকে হাসালে, একটা মেয়ে না একজন মা, কার মনের জোর, সহ্য শক্তি বেশি বলতো দেখি। তোমার সব চেয়ে বড় জোর এসে গেছে, আর তুমি বলছ পারছিনা?
    (ফোনের ওপারে উত্তর পাইনা, কেবল একটা দমচাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।)
    অঙ্কিতা নিজেকে সামলাও, তোমার বর কী বলছে?
    - বরের আপত্তি নেই পড়াশোনায়, মায়ের ওপরে কিছু বলতে পারেনা।
    - দেখো অঙ্কিতা, তোমার শাশুড়ি মায়ের বয়স হয়েছে, তোমার চেয়ে ওঁর মেন্টাল স্ট্রেস অনেক বেশি হচ্ছে, তাই এমন করছেন। তোমার বরকে বুঝিয়ে কটা মাস, মায়ের কাছে থাকতে পারবেনা? লকডাউন বলে দেরি হচ্ছে, নইলে এতদিনে তোমাদের পরীক্ষা হয়ে যেত। ধৈর্য ধর। সব ঠিক হয়ে যাবে। ক্লাস শুরু কর।

    আমার এইসব ভোকাল টনিকে সরাসরি কোন কাজ হয়েছিল কিনা জানিনা, তবে যথা সময়ে অঙ্কিতা ভালোভাবেই পাশ করেছিল, আর পরীক্ষার পরে ওর ফুটফুটে ছেলের ছবিও ভেসে এসেছিল ক্লাসের গ্রুপে।

    অনলাইন পরীক্ষায় বই দেখে লিখে পাশ তো সকলেই করছে, কিন্তু সাধারণভাবে ঐ ফল কোন আনন্দ বয়ে তো আনলোইনা, উলটে বিপদ বাড়ল। আমাদের বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা প্রতি বছরেই বেশ কয়েকজন করে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে চান্স পায়। এবারে পেলনা। কলকাতার বেশ কিছু নামী কলেজেরও আমাদের মতই দশা হল। দেখা গেল, কিছু কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নব্বই শতাংশেরও বেশি পেয়ে মেধা তালিকার ওপরে চলে গেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আরও কলেজ সেন্টার আছে, কিন্তু তাতে খরচ বেশি, সায়েন্স কলেজে পেলে খরচ কম, ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেশি, লাইব্রেরি বড়। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমরাও মন খারাপে ডুবে গেলাম। হোম সেন্টার হিসেবে অনলাইনে খাতা আমরাই দেখেছি, কিন্তু মান ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম, চোখ বুজে পঁচানব্বই ছিয়ানব্বই দিতে পারিনি। এক শ্রেণীর কলেজের জন্য আমাদের ছেলেমেয়েগুলো পিছিয়ে গেল। পড়াশোনার ব্যাপারে এমনিতেই ওদের মোটিভেশনের সমস্যা হচ্ছিল, কেবলই বলত -
    “আমরা করোনা ব্যাচ, কিছু শিখিনি, ইন্সট্রুমেন্ট সার্ভে জানিনা। ইন্টারভিউয়ের সময়ে প্রথমেই আমাদের বাদ দিয়ে দেবে। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবোনা।”

    আমরা সান্ত্বনা দিতাম। বলতাম, “দেখ, যে পড়াশোনার লাইনে থাকেনা, তারা এমনিতেই এইসব পড়ার খুঁটিনাটি ভুলে যায়, আর যারা টেবিলের ওপারে গিয়ে পড়াতে বসে, তাদের আবার নতুন করে শিখতে হয়, তাই যতটা ভাবছ, তত সমস্যা হবেনা।” এখন ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্টের পরে এইরকম হাতে গরম ফল দেখে ওদের দুর্দশার আশঙ্কাই সত্যি হল, আর জুনিয়র সেমেস্টারকেও আমাদের বলার মুখ রইলনা।

    তবে সব কিছুই যে খুব খারাপ ঘটছিল তা নয়, অনেক মজারু ছেলেমেয়েও থাকে, যারা আশেপাশের মানুষকে ভাল থাকার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে। এমনই একটি মেয়ে একদিন ক্লাসের গ্রুপে মেসেজ পাঠাল, সঙ্গে ছবি।
    - ওরে তোরা ভবিষ্যতের অন্ধকার ছবি এখন রাখ। এই দেখ আমি আজ কী বানিয়েছি দুপুরে।
    - কী বানিয়েছ অনন্যা?
    - এই যে ম্যাডাম চিংড়ি মাছের জলবড়া, আর ডবকা।
    - সে আবার কী গো, জীবনে এমন নাম শুনিনি।
    - ঠাকুমার কাছে শিখেছি ম্যাডাম।
    - ঠাকুমার রেসিপি! শিগগির বল, আমি শিখব।
    - একটু তরিবৎ আছে ম্যাডাম, আপনি কি সময় করতে পারবেন?

    প্রশ্নটা শুনে আমি চুপ, কিছুক্ষণ আর উত্তর দিইনা। ওরা ভাবে আমি টিচার, আমারও যে ঘর, সংসার আছে, সেটা ওদের মাথায় আসেনা। অনেক বছর আগের একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে যায় আমার। সেবার অনার্সের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদ। হাতে চালানো তাঁতে সিল্ক বোনা হয়, এমন একটা গ্রামে সার্ভে শেষ করার পর কাছাকাছি নদীতে পাড় ভাঙ্গন দেখতে গিয়েছিলাম আমরা। ট্রাভেল এজেন্ট স্থানীয় ইস্কুল বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সকলকে নিয়ে ফিরছি, এমন সময়ে দেখি নাসির নেই। খোঁজ খোঁজ, দেখা গেল, সে একা দল থেকে বহু দূরে ভাঙা পাড়ে প্রায় নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট মনে প্রকৃতি দেখছে। আমার বুক কেঁপে উঠলো। আমরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে ফিল্ড সার্ভেতে যাই, ঝুঁকি থাকে, তার মধ্যে কোন ছেলে কথা না শুনে, যদি এমন করে মাথার ঠিক রাখা যায়না। তখন আমার বয়স কম, মনটা অনেক পিউরিটান ছিল, ভাবতাম সকলে আদর্শ বিধিনিষেধ মেনে চলবে। বন্ধুরা ছুটে গিয়ে নাসিরকে নিয়ে আসার পরে, আমি তো খুব বকাবকি করছি। রাগের মাথায় বলে দিয়েছি, ‘এভাবে দলছুট হয়ে থাকলে, তোমার পিঠের ছাল তুলে দেব।’ তখনই শুনি আমার জুনিয়র কলিগ অর্পিতা ফিসফিস করে বলছে,
    - 'আপনার ছাল তোলার কী সময় হবে ম্যাডাম? ওকে বলে দিন পিঠের ছাল জমা দিতে, আপনি সাইন করে দেবেন।'

    একথা শুনে সর্বনাশ হয়ে গেল, ক্লাইম্যাক্সে উঠে আমি হেসে ফেললাম। বাকি ছেলেমেয়েগুলো একবার আমার দিকে, একবার নাসিরের দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিল। তারা পিছন ঘুরে গেল, আর নাসিরকে নিয়ে ওখান থেকে সরে গেল।
    যাই হোক, অনন্যার কাছে হার না মেনে বললাম, ‘তুমি বলইনা, চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই।’ অগত্যা অনন্যা রেসিপি দিল।

    চিংড়ি মাছের জলবড়া বলতে আসল ব্যাপার যা বুঝলাম, তা হল নারকেল দুধে চিংড়ির বড়ার ঝোল। মাঝারি আকারের চিংড়ি মাছ বাটা, নুন, কাঁচা লঙ্কা কুচি মেখে ছোট ছোট বল বানিয়ে হালকা ভেজে রাখতে হবে। সরষের তেলে গোটা জিরে, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, ফোড়ন দিয়ে একে একে পেঁয়াজ কুচি, আদা রসুন বাটা, নুন, হলুদ, শুকনো লঙ্কা আর জিরে বাটা দিয়ে কষে নিতে হবে। এতে নারকেল দুধ দিয়ে চিংড়ির বল গুলো দিয়ে ফোটাতে হবে। সেদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হলে অনন্যার ঠাকুমা বলেছেন একটু ঘি ছড়িয়ে রান্না নামাতে। আগেকার মানুষ তো, তাই টমেটোর কথা বলেননি। এখনকার ইউ টিউবার হলে ঠিক বলত টমেটো পিউরি দিয়ে মশলা কষতে।

    চিংড়ি মাছের ডবকা কী সেটাও উদ্ধার করলাম। এটা আসলে একরকমের তেঁতুলের টক। আমার শ্বশুর বাড়িতে এতরকম টক রান্না হয়, ডবকা কখনও শুনিনি। এই রান্নায় ভেজানো মুসুর ডাল আর চিংড়ি মাছ মিক্সিতে মিহি করে বাটতে হবে। এই বাটাতে মেশাতে হবে জিরে গুঁড়ো, লংকা গুঁড়ো, হলুদ, নুন, মিষ্টি, তারপরে বেশ অনেকক্ষণ ধরে ফেটিয়ে ঢেকে রেখে দিতে হবে। আসলে একটু ফেঁপে ওঠার সময় দিতে হবে। এবারে বেশ একদলা পাকা তেঁতুল জলে চটকে ক্বাথ বের করে রাখতে হবে। সর্ষের তেলে পাঁচফোড়ন, শুকনো লংকা দিয়ে তেঁতুলের ক্বাথ বেশ কিছুক্ষণ জাল দিতে হবে, সঙ্গে পরিমাণ মত নুন মিষ্টি। এই ফুটন্ত তেঁতুলের রসে ডাল, চিংড়ি বাটার মিশ্রণটা ছোট ছোট দলা করে ফেলতে হবে। দলা গুলো গরম রসে ফুটে শক্ত হবে, আর রসালোও হবে। বড়ির মত তেঁতুলের ঝোলে ভেসে বেড়াবে। নাঃ স্বীকার করতেই হচ্ছে, এই রেসিপিটা বেশ শক্ত।

    ছাত্রীর হাতে তৈরি প্রাচীন রান্না - আপ্লুত হয়ে আমি ছাত্রীর ছবি সমেত সব কিছু আমাদের সেই ফেসবুক পেজে আপলোড করলাম। তারপরে আর কী, প্রতিদিন রাশি রাশি মটন-আলুর চপ, বাঁধাকপির পায়েস, মুলোর পরোটা, মালাই ইলিশ, তালের কেকের ছবি আর রেসিপি আসতে লাগল। কাকে ছেড়ে কাকে দেখি। কিছু সময় খরচ হল বটে, কিন্তু উপকারটাও তো কম নয়। কলেজে এসে, হৈ হৈ করে, দুটো বকুনি খেয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি, মজা করে, দুষ্টুমি করে, ক্যান্টিনে বসে, রাস্তায় ফুচকা খেয়ে যে চাপ হালকা হয়ে যায়, বা অন্যদিকে সরে যায়, সেইটা এখন অনুপস্থিত। তাই একটা একাকীত্বের অনুভব সকলের যেন টুঁটি টিপে ধরছে। অনেকেই আমাকে লিখেছিল, ”মনে হয় যেন আমায় কেউ কোনো গুরুত্ব দেয় না.. আমার মা বাবা যেন আমার থেকে বোন ভাই কে বেশি ভালোবাসে”। কেউ লিখেছিল, “আমি বেশি ইমোশনাল। অল্পে রেগে উঠি। যেখানে বেশি রিঅ্যাকশন দেখানোর দরকার ছিলনা, সেখানেও দেখিয়ে ফেলি। আগে সমস্যাটা কম ছিল। খুব একটা অসুবিধে হতনা। লকডাউনে এই সমস্যাটা খুব বেড়ে গেছে। নিজেকে একদম সামলে রাখতে পারছিনা ম্যাডাম। পরে যখন বুঝছি, তখন ভীষণ কষ্ট হচ্ছে”। ওদের ঘুমের রুটিন বদলে গেছে। এই মুহূর্তে নানা দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম আসছেনা। মন ভালো নেই বলে অনেক ছাত্রীর ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু এরা বড় মেয়ে, কলেজ পেরিয়ে বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করবে, তাই এই ব্যাপারটাও ওদের মনে একটা বাড়তি চিন্তার সৃষ্টি করছে। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে মাথার যন্ত্রণার সমস্যা বাড়ছে। এইসব সমস্যা থেকে একটু হলেও এইসব রান্নার ছবি আর রেসিপির রেষারেষি করে অন্যদিকে মেতে থাকা তো হল। আমি ভাবি, এই কঠিন দিনে কী কী হারিয়েছি, সেকথা নিয়ে নাই বা পড়ে রইলাম। আমাদের কাছে নতুন হলেও পৃথিবীর কাছে প্রকৃতির কাছে অতিমারী নতুন নয়। বন্দী থেকে, দূরে থেকেও যে সকলকে এত কাছে পাওয়া যায়, এ অনুভূতিও এক পরম পাওয়া।

    “এ লড়াই সেই সে লড়াই
    সকল লড়াই ঘুচিয়ে দেবার,
    এ লড়াই বহু দিনের
    বাকির হিসেব চুকিয়ে দেবার।

    এ লড়াই আঁধার চিরে
    আলোর তোরণ পরশ করার,
    এ লড়াই তোমার আমার
    এ লড়াই সর্ব হারার। ”


    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ | পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭ | পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০ | পর্ব ১১ | পর্ব ১২ | পর্ব ১৩ | পর্ব ১৪ | পর্ব ১৫ | পর্ব ১৬ | পর্ব ১৭ | পর্ব ১৮ | পর্ব ১৯ | পর্ব ২০ | পর্ব ২১ | পর্ব ২২ | পর্ব ২৩ | পর্ব ২৪ | পর্ব ২৫ | পর্ব ২৬ | পর্ব ২৭ | পর্ব ২৮ | পর্ব ২৯ | পর্ব ৩০ | পর্ব ৩১ | পর্ব ৩২ | পর্ব ৩৩ | পর্ব ৩৪ | পর্ব ৩৫ | পর্ব ৩৬ | পর্ব ৩৭ | পর্ব ৩৮ | পর্ব ৩৯ | পর্ব ৪০ | পর্ব ৪১ | পর্ব ৪২ | পর্ব ৪৩ | পর্ব ৪৪ | পর্ব ৪৫ | পর্ব ৪৬ | পর্ব ৪৭ | পর্ব ৪৮ | পর্ব ৪৯ | পর্ব ৫০ | পর্ব ৫১ | পর্ব ৫২ | পর্ব ৫৩ | পর্ব ৫৪ | পর্ব ৫৫ | পর্ব ৫৬ | পর্ব ৫৭ | পর্ব ৫৮ | পর্ব ৫৯ | পর্ব ৬০ | পর্ব ৬১ | পর্ব ৬২ | পর্ব ৬৩ | পর্ব ৬৪ | পর্ব ৬৫ | পর্ব ৬৬ | পর্ব ৬৭ | পর্ব ৬৮ | পর্ব ৬৯ | পর্ব ৭০ | পর্ব ৭১ | পর্ব ৭২ | পর্ব ৭৩ | পর্ব ৭৪ | পর্ব ৭৫ | পর্ব ৭৬ | পর্ব ৭৭ | পর্ব ৭৮ | পর্ব ৭৯ | পর্ব ৮০ | পর্ব ৮১ | পর্ব ৮২
  • খ্যাঁটন | ২৫ মে ২০২৩ | ৯২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন