এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য  মোচ্ছব

  • আশা জাগায় গৃহবধূ এবং সাপ

    Samaresh Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | মোচ্ছব | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৪৯৬ বার পঠিত
  • চার মাস আগে চলে গেল 'আমরা দিবস'। আসছে বছর আবার আসবে 5ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস বা World Environment Day - সংক্ষেপে WE Day অর্থাৎ আমরা দিবস। ইদানিং কলকাতার নানা দুগ্গা পুজো‌য় প্রতিমা‌য় থাকে কিছু থিম। সনাতন ডাকের সাজের পুজো আজ‌ও টিকে আছে কিছু সাবেকি বাড়ি‌র প্রাচীন পুজোয়। প্রতি বছর এই 'আমরা দিবস' উপলক্ষে‌ও একটি থিম ঘোষিত হয়। তা নিয়ে, পৃথিবী জুড়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি‌তে আয়োজিত হয় নানা উদযাপন - মিছিল - বৃক্ষরোপণ ইত‍্যাদি। 'আমরা দিবস' উপলক্ষে ভার্চুয়াল মাধ্যমে‌ও হয় বহুল আমড়াগাছি - হোয়াতে, ফেবুতে ছড়ায় ক‍্যাচি পোষ্টিং, চলে ভিউ, লাইক, শেয়ার কাউন্টিং। আমরা দিবস নিয়ে এটা‌ও এক আমড়াগাছি।

    আমরা দিবসে বাস্তবে কিছু করতে না পারার মর্মবেদনা‌য় একান্তে মোবাইলের পর্দায় আঙুল‌ চলে। বটের চারা বীজ ছাড়া‌ই জন্মায় কাকে‌র পটি থেকে - আমার বেশিরভাগ বাঁজা লেখা‌ও তেমনি, বিশেষ বিষয়ে সুলিখিত নিবন্ধ নয়, সামান্য স্ফূলিঙ্গ থেকে বুশফায়ার। বটুদার জমি না হলেও চলে - পুরোনো বাড়ির প‍্যারাপেট, ভাঙা পাঁচিল থেকে‌ই বটুছেনু মাথা তোলে - সাপের মতো ফাটল ধরে শেকড় চালিয়ে, ঝুরি নামিয়ে বাড়ে। আমার বেশিরভাগ লেখা‌ই তেমনি - সম্পাদিত পত্রিকার উপযোগী‌ নয়। তাই গুরুচণ্ডালি‌তে নামাচ্ছি এইসব হ‍্যাজ‍। এসব আসলে কিছু টুকরো উপাখ্যান, উপমা, পার্শ্বপ্রসঙ্গ সহযোগে তৈরী হাওয়া‌ই মেঠাই বা Cotton candy। বট ফুল লাগে না পুজোয়, তার ফল‌‌ও খায় কাক শালিখে। আমার এসব লেখা‌‌ও তেমনি।

    ২০২৩এর আমরা দিবসের থিম ছিল - Beat Plastic Pollution। এখনও বহু অপগণ্ড নিত‍্যদিন চতুর্দিকে প্লাস্টিক ছড়াতে থাকে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি‌তে কিছু দায়িত্ব‌বোধসম্পন্ন মানুষ, ছাত্রছাত্রী, সমাজসেবক সংগঠন সাধ‍্য মতো চেষ্টা করে চলে। সংখ্যা‌য় প্রথম দল অনেক ভারী। ভারতের মতো অপদার্থ দেশে "BAN PLASTIC" সরকারি ফতোয়া রয়ে যায় সরকারি দপ্তরে প্লাস্টিক ফাইলবন্দী হয়ে বা ঝোলে নেতা নেত্রী‌র ছবিসহ রাস্তায় প্লাস্টিক ফ্লেক্সে। ব‍্যাঙ্গালোরে‌র মতো হাইটেক শহরে ডিজিটাল ঢ‍্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা হোলো একলা জুলাই ২০২২ থেকে সব দোকানে Single Use Polythene packet will be banned - ধরা পড়লে করা হবে হেব্বি ফাইন, বিশ্বেস না হয় তো দ‍্যাখো নীচে …



     না, না পুরো খবর পড়ার দরকার নেই কারণ ঐ ব‍্যান ঘোষণা বাটি বাজানো ব‍্যান্ডেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে - বাস্তবে কার্যকর হয়নি। তিনশো বছর সাহেবের লাথি খাওয়া দেশের অধিকাংশ নাগরিক সদিচ্ছা‌য় সিভিক সেন্স দেখাবে সেটা দুরাশা। সুতরাং ফাইনের গুঁতো না পড়লে কাজ হয় না। কিন্তু যারা এই সব নির্দেশ ঘোষণা করে এবং যাদের তা জমিতে কার্যকর করার কথা তাদের কারোরই তেমন উদ‍্যম বা সদিচ্ছা‌ নেই। তাই কিছু‌দিন হাওয়া মেপে আবার নির্বিচারে সব দোকানে‌ই দেখি চারটে পাতি নেবু বা দশ টাকার লংকা কিনলেও Single use polythene প‍্যাকেটেই দিচ্ছে। 
     
    চতুর্দিকে 'আমরা দিবস' উপলক্ষে নানা উদযাপন দেখে একটু আত্মগ্লানি হোলো - মনে হোলো - আমার‌ও কিছু করা উচিত। কিন্তু কী করি? অতীতে ইমেলে আসা একটা নীতি‌গল্প মনে পড়লো। সৈকত ধরে একটি ছোট মেয়ে হাঁটছে আর মাঝে মাঝে ঝুঁকে পড়ে কী যেন তুলে জলে ছুঁড়ে ফেলছে। দুর থেকে দেখে একটি প্রৌঢ়ের কৌতূহল হোলো। কী কুড়িয়ে তুলছে ও? ঝিনুক? কুড়োচ্ছেই যদি জলে ছুঁড়ে ফেলছে কেন? একটা‌ও পছন্দ হচ্ছে না? তিনি চুপিসাড়ে কাছাকাছি গিয়ে মেয়েটির পিছন পিছন হাঁটতে লাগলেন। এবার বুঝলেন কী কুড়িয়ে তুলছে ও। বড় ঢেউয়ে ভেসে আসা কিছু স্টারফিশ বালিতে আটকে গিয়ে ছটফট করছে। আরো বড় ঢেউ এসে ওদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু রোদের বেশ তেজ। তেমন ঢেউ তাড়াতাড়ি না এলে শুকিয়ে মরে যাবে। মেয়েটা অমন আটকে যাওয়া স্টারফিশ তুলে তুলে জলে ছুঁড়ে ফেলছে। লোকটি অবাক হয়ে বলে, খুকি, এ তুমি কী করছো? দিগন্ত বিস্তৃত সৈকত, তুমি একা এভাবে কতো আটকে যাওয়া স্টারফিশ তুলতে পারবে? মেয়েটি কোনো উত্তর দেয় না। সরল মুখে, গভীর নীল চোখে তাকায়, তার‌পর, অমন একটি আটকে যাওয়া স্টারফিশ জলে ফেলে বলে - I made difference to this one. I don't know about others. 

    গল্পটা মনে পড়তে আর একটা নীতিবাক্য মনে পড়লো - EACH ONE - TEACH ONE. অর্থাৎ ফেবু, হোয়াতে জ্ঞান বিতরণ নয় - Lead by example মোডে সামনাসামনি কথা বলে প্রতিটি মানুষ যদি তার জীবৎকালে একজনকে‌ও বাঞ্ছিত দিশায় প্রভাবিত করতে পারে, তাও ফ‍্যালনা নয়। ঠিকমতো প্রভাবিত হলে তারাও হয়তো অন‍্য কাউকে প্রভাবিত করবে। এভাবেই চাকা ঘুরবে। যেভাবে Advertising by mouth হয়। Slow but sure impact. তাই ভাবলুম, আগেও তো বহু‌বার করেছি, এ বছরের 'আমরা দিবস' থিম নিয়ে আরো কজনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু কাকে করবো? ব‍্যাঙ্গালোরে‌র পাবলিক ট‍্যাঁশ মার্কা। আমি বহিরাগত। কন্নড় জানি না। EOTO করতে গিয়ে যদি প‍্যাঁক খাই? তবে যে কোনো সদিচ্ছা পোষণের ক্ষেত্রে‌ই কিছু ঝুঁকি তো থাকেই। প‍্যাঁক খাওয়া এমন কিছু ব‍্যাপার নয়। গুরুচণ্ডালি‌তে লিখলেও অনেকে মুখোশ পরে গোবর ছুঁড়বে। ওসব নিয়ে ভাবলে চলে। নিজের জায়গায় ঠিক থাকলে মনে এসব সংকোচ, আশাংকা রাখতে নেই। তাই প্রাতঃভ্রমণ‌কালে চোখ কান খোলা রেখে চলতে লাগলুম। সময় হিসেবে সকাল‌টা ভালো। হ‍্যাংওভার না কাটা মাতাল ছাড়া তখন সচরাচর মানুষের মুড ভালো‌ই থাকে। আমার প্রভাবিত করার প্রচেষ্টায় তখন কারুর অফেন্স নেওয়ার চান্স কম। 

    একদিন দেখি এক মহিলা স্ল‍্যাকসের ওপর হাফহাতা কুর্তা পরে গুটগুট করে আগে চলেছেন। ঢিলেঢালা পোশাকে পিছন থেকে দেখে কোনো মহিলা‌র বয়স বোঝার মতো অন্তর্দৃষ্টি আমার নেই। পিছনে ফোল্ড করা ফরসা হাত দুটি দেখে মনে হয় তাদের মালকিন ২৫ থেকে ৪০ এর মধ‍্যে হতে পারেন। সকাল সাড়ে সাতটায় অমন আলস‍্যময় হাঁটার ভঙ্গি দেখে মনে হয় গৃহবধূটধূ হবেন, কর্মরতা মহিলা নন। আমি হাঁটি কলোনির মধ‍্যে গাড়ি বিরল ২৫০ মিটার রাস্তায়‌। বারো রাউন্ড মারলে হয় তিন কিমি।  পরের রাউন্ডে দেখি উনি তেমনি অলস ভঙ্গিতে‌ই একটা পলিথিন প‍্যাকেটে দু প‍্যাকেট দুধ নিয়ে ফিরছেন। এবার সামনে থেকে দেখি। মধ‍্য তিরিশের এক সুশ্রী সুশীলা। মাথায় সিঁদুরের দাগ স্পষ্ট অত‌এব বিবাহিতা এবং ট্র‍্যাডিশনাল, ট‍্যাঁশ নন। ভাবি এনাকে দিয়েই শুরু করি আমার এবারের EOTO মিশন। 

    একটু দুর থেকে তর্জনীর তৃতীয় দাগে বুড়ো আঙুল ঠেকিয়ে দক্ষিণ হস্তটি মহিলা‌র দিকে তুলি। বদনে নিকোনো বিনম্র হাস‍্যময় ভঙ্গি। ইংগিত সুস্পষ্ট - একটু কথা বলতে চাই। কালো বারমুডার ওপর ইউনিফর্মলি ফেডেড বিশ বছরের পুরোনো হলুদ টি-শার্ট। গৌরবর্ণ চেহারা, মাথায় কাঁচাপাকা কলপ না করা অগোছালো কেশ। সৌম‍্য বার্ধক‍্যের প্রতিরূপ - অস্বস্তি‌কর কিছু নয়। মহিলা‌টি জিজ্ঞাসু চোখে দাঁড়িয়ে পড়েন‌। কাছে এসে বলি, কিছু মনে না করলে, একটা কথা বলবো? মহিলা‌টি মিষ্টি হেসে বলেন - বলুন না। দেখুন কদিন আগে ৫ই জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের থিম ছিল - প্লাস্টিক বর্জন। কিন্তু তা তো কেবল একদিন পালনের ব‍্যাপার নয়। আমরা সবাই, সারা বছর যদি তা যথাসম্ভব পালন করতে পারি তাহলে আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন‍্য তা মঙ্গল‌দায়ক হতে পারে। নিশ্চয়ই জানেন প্লাস্টিক দূষণ এখন বিপজ্জনক মাত্রায় চলে গেছে। এখনও আমরা সচেতন না হলে সমূহ বিপদ। মহিলা‌টি আগ্ৰহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। মনে আশা জাগে। 

    আমি এখানে রোজ হাঁটি। আগেও দেখেছি আপনি ভেঙ্কটেশ টাওয়ার থেকে সকালে খালি হাতে বেরোন, ফিরে যান‌ পলিথিন প‍্যাকেটে দু প‍্যাকেট দুধ নিয়ে। বাড়ি গিয়ে এটা ফেলে দেবেন ডাস্টবিনে, চলে যাবে ল‍্যান্ডফিলে। দুধের প‍্যাকেট তো না নিয়ে উপায় নেই, কিন্তু যদি একটা ছোট ব‍্যাগ নিয়ে যান - এই পলিথিন প‍্যাকেট‌টা তাহলে নিতে হয় না। এই দেখুন, আমি হাঁটতে বেরিয়ে‌ও ওয়েষ্ট পাউচে একটা ছোট্ট কাপড়ের থলি রাখি, ফেরার পথে টুকটাক কিছু কিনে এতে ক‍রে নিয়ে ফিরি। পাউচ থেকে পুঁচকে থলি‌টা বা‌র করে দেখা‌ই। Lead by example এর প্রথম এবং প্রধান শর্ত - Don't just talk - Walk the talk. 

    মহিলা‌টি বিব্রত মুখে বলেন, সরি, ভুল হয়ে গেছে, এবার থেকে খেয়াল রাখবো। বৌমণি বলে, হাসলে নাকি আমার কর্কশ মুখটা এখনো একটু মোলায়েম লাগে। মহিলা‌টিকে লজ্জা পেতে দেখে মনে আশা জাগে, হয়তো তিনি এবার থেকে সত্যিই মনে রাখবেন। মোলায়েম হেসে, তাকে একটু সহজ করতে আর একবার বলি - আমার কথায় কিছু মনে করেন নি তো? না, না, মনে করার কী আছে, আপনি তো ঠিক‌ই বলেছেন।  

    আজকের EOTO মিশনের সাফল্যের সম্ভাবনা‌য় ফুরফুরে মেজাজে আবার হাঁটতে থাকি। এখনো বাকি তিন রাউন্ড। পরের রাউন্ডে দেখি দুহাতে চারটে পলিথিন ব‍্যাগে বেশ কিছু জিনিস কিনে আসছে ঐ পথে একটি এ্যাপার্টমেন্টের চৌকিদার। স্বাস্থ্য‌বান চেহারা, বছর চল্লিশ বয়স। প্রাতঃভ্রমণে অনেকবার চোখাচুখি হয়েছে - তাই মুখ চেনা - তবে কোনো‌দিন কথা হয়নি। একাকী ভ্রমণপথে - দুর প্রদেশে - ছোটোখাটো জায়গায় - অনেক সাধারণ মানুষের সাথে আমি যেচে আলাপ করি। মধ‍্যপ্রদেশ, রাজস্থানের অধিকাংশ মানুষ‌কে আমার বেশ মিশুকে লেগেছে। তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটক, কেরালার অধিকাংশ মানুষ‌কে আমার খুব রিজার্ভ‌ড্ লেগেছে। হিন্দি‌তে কথা বললে ভাবলেশহীন বদনে তাকায়। মহারাষ্ট্রে‌ও লেগেছে অমন, তবে একটু কম। তুলনায় কর্মসূত্রে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব, গুজরাটে থাকতে এমন গোমড়া‌মুখো ব‍্যবহার খুব কম পেয়েছি। তাই একাকী ভ্রমণ শেষে ব‍্যাঙ্গালোরে ফিরে আমি‌ও খোলসে ঢুকে যাই। দোকান গিয়ে পাথুরে মুখে কেনাকাটা করি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত  একটি কথা‌ও বলি না।  

    এই গাঁট্টাগোঁট্টা চৌকিদার‌টির মুখ দেখে মনে হয় নেপালী। এখানে অনেক নেপালী আছে। বেশিরভাগ নানা বিল্ডিং‌য়ের দারোয়ান। তাদের বৌরা লোকের বাড়ি কাজ করে। কোনোদিন কথা না হলেও, ঐ মহিলা‌টির মতো, এর মুখ দেখেও মনে হোলো - প্লাস্টিক কমা‌‌ও - পরিবেশ বাঁচাও নিয়ে EOTO করতে গেলে, হয়তো এ অফেন্স নেবে না। তার সাথে  হোলো নিম্নরূপ কথোপকথন, হিন্দি‌তেই:

    - তুমি ঐ S.S টাওয়ারে‌র ওয়াচম‍্যান?
    - হাঁ সাপ।
    - তুমি নিশ্চয়ই এখান‌কার স্থানীয় নয়?
    - না সাপ।
    - তুমি কী নেপাল থেকে এসেছো?
    - হাঁ সাপ।
    - তোমার তাড়া নেই তো?  
    - না সাপ।
    - তুমি হয়তো এখানে আমায় প্রায়‌‌ই হাঁটতে দেখেছো।
    - হাঁ সাপ।
    - একটা কথা বলবো, কিছু মনে করবে না তো?
    - না সাপ।
    - তুমি নিশ্চিত কিছু কিনবো ভেবেই বেরিয়ে‌ছিলে?
    - হাঁ সাপ।
    - অথচ একটা ব‍্যাগ নিয়ে যাওনি?
    - না সাপ।
    - তাই চারটে পলিথিন ব‍্যাগে মাল নিয়ে আসছো।
    - হাঁ সাপ।
    - এতোগুলো পলিথিন ব‍্যাগ নেওয়া কি ঠিক হোলো?
    - না সাপ।
    - একটা ব‍্যাগ নিয়ে গেলে ভালো হোতো না?
    - হাঁ সাপ।
    - নেপালে গিয়ে‌ও কী এমন করো?
    - না সাপ।
    - এখানে চারদিকে প্লাস্টিক ছড়িয়ে আছে বলে খেয়াল থাকে না, তাই তো?
    - হাঁ সাপ।
    - কিন্তু তুমি তো পূণ‍্যভূমি হিমালয়ের মানুষ, এভাবে প্লাস্টিক ছড়ানো কী ঠিক?
    - না সাপ।
    - তাহলে এবার থেকে দোকানে যাওয়ার সময় ব‍্যাগ নিয়ে যাবে তো?
    - হাঁ সাপ।
    - আমার কথায় কিছু মনে করোনি তো?
    - না সাপ।

    পুনশ্চঃ - দুটি ঘটনা‌ই নির্জলা সত‍্য - তবে চৌকিদার‌টির সাথে কথোপকথন ঠিক এভাবে হয়নি। যদিও আমি‌ই কথা বলেছি বেশী, ওকে বোঝাতে। ও বেশিরভাগ সময় আমার কথায় অমন হ‍্যাঁ/না করেই সায় দিয়েছে। তবে দু একটি বাক‍্য‌ও বলেছিল। এটা একটু মজা করে পেশ করলাম। প্রশ্ন যদি এভাবে করা যায় তাহলে উত্তরদাতা কেবল হ‍্যাঁ বা না দিয়ে‌ও তার বক্তব্য জানাতে পারে। 

    নেপালী‌দের একটু আধো আধো হিন্দি উচ্চারণে 'সাব'-এর ব টা শোনায় - ব আর প এর মাঝামাঝি একটা স্বরে - যেটা বর্ণমালা‌য় নেই। তাই মজা করে সাব এর জায়গা‌য় সাপ লিখেছি। উপরোক্ত ঘটনা দুটি ৮ই জুন ২০২৩এর। এখন পোষ্ট করছি চারমাস বাদে, ৫ই অক্টোবর। ঐ মহিলা‌টি ও নেপালী দারোয়ান‌টির  সাথে পরে‌ও ঐ পথে অনেকবার দেখা হয়েছে। মহিলা‌টি একটা পুঁচকে ব‍্যাগ দেখি‌য়ে দূর থেকে ইংগিত‌পূর্ণ ভাবে হেসেছে‌ন। অর্থাৎ তিনি মনে রেখেছেন। আমি‌ও নীরব হাসির সাথে থাম্বস আপ দেখিয়ে উৎসাহ দিয়েছি। চৌকিদার‌টিকেও পরে দেখেছি ব‍্যাগ নিয়ে দোকানে যাচ্ছে। দীর্ঘ পেশাগত এবং সামাজিক যাপনে অনেক শিক্ষিত মানুষকে দেখেছি বদভ‍্যাসের দাস। চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার পরেও এক‌ই গর্হিত কাজ তারা বারংবার করে। তাই ঐ গৃহবধূ বা সাধাসিধে নেপালী দারোয়ান‌টিকে যে একবার বলতেই কাজ হবে ভাবিনি। দেখে ভালো লাগে। আশা জাগে, এরা‌ই হয়তো ভরসা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অন্যান্য | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৪৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb91:140e:8383:9a7:2f20:160b:e3a6 | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৩৬524314
  • ভালো লাগলো। 'বটুছেনু' কথাটা খুব পছন্দ হলো। সাদু-বাদুর গল্পেও 'ছেনু' পড়ে খুব ভালো লেগেছিলো। তখন জানানো হয়নি।
  • jsl | 192.139.20.199 | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ২১:১৭524318
  • তখন কতিপয় বন্ধুগন মেস করে থাকি, একেকদিন ভোরবেলা একেকজনের বাজারের পালা পড়ে। শীতের সকালে আবছালা গায় দিয়ে ঢুলতে ঢুলতে বাজার পরিদর্শন করছি, ঠোঁটে সক্কালবেলার একখানা অতি সাধের নেভিকাট।

    হঠাৎ সামনে এক জ্যাঠামশাই উদয় হয়ে, কী করছো কী করছো সকালবেলা সিগারেট ছিছি অন্ধ হয়ে যাবে ফেলে দাও ফেলে দাও বলে এমন হাহাকার শুরু করলেন যে আমিও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সিগারেটটা ফেলে দিলাম।
    সেই সময় একখানা নেভিকাট বহুমূল্য জ্ঞান করতাম, কালেভদ্রে উচ্চাকাঙ্খার মত প্রায়।
    ভদ্রলোককে ক্ষমা করিনি। উনিও এরকম কোন ইওটিওর মধ্যে ছিলেন কিনা জানি না।

    প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে যেকোন রকম সচেতনতার চর্চা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য, কিন্তু পুরনো দুঃখ মনে পড়ায় বলে ফেললাম আরকি।
  • Samaresh Mukherjee | ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১২524320
  • @kk,

    কিছু শব্দ একটু অন‍্যরকম ভাবে বললে জিভের, শুনলে কানের আরাম হয়। তেমনি, লিখলে হয় আঙ্গুলের, পড়লে হয় চোখের আরাম। এসব ছাড়িয়ে আসলে হয় মনের আরাম‌। যেমন, সাদু-বাদুর লেখা পড়ে একজন লিখেছি‌ল - "বাদুকে এখন কেমন দেখতে হয়েছে?"  আজ সেখানে বাদুর হালের ছবি পোষ্টে লিখলুম - "হেংলু বাদু"।
  • Ranjan Roy | ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০২:০৭524325
  • সাফল্য অনেকটাই  বক্তব্যের কন্টেন্টের  চেয়ে  কীভাবে বলা বা কমিউনিকেট  করা হল তার উপর  নির্ভর করে।
    তাই মুখুজ্যে মশায়  সফল।
     
    আর ফালতু ভুলভাল জ্ঞান দেয়া জ্যেঠু  অবশ্যই ক্ষমার অযোগ্য। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন