এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খ্যাঁটন  হেঁশেলে হুঁশিয়ার  খাই দাই ঘুরি ফিরি

  • পাকশালার গুরুচণ্ডালি (২৫)

    শারদা মণ্ডল
    খ্যাঁটন | হেঁশেলে হুঁশিয়ার | ২৮ এপ্রিল ২০২২ | ৯০৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি - র২হ


    আমাদের সূর্য মেরুন




    আমাদের রক্তে খেলা,
    খেলার ছলে বিপ্লবী বেশ।
    আমরাই কখনো মুখ,
    কখনো দল, কখনো দেশ।

    সেনবাড়িতে ফিরে আসি। যাঁদের কথা বললাম, তাঁরা ছাড়াও ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র সেন বা কেষ্ট সেন, খগেন্দ্রনাথ সেন বা মন্টু সেন, মন্টু সেনের দাদা দীপেন সেন। এঁরা প্রত‍্যেকেই খেলোয়াড় এবং সংগঠক হিসেবে মোহনবাগানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
    - এক বাড়িতে মোহনবাগানের লোক এত জন?
    - এ আর কী শুনলি? আরও লোক আছে।
    - আরও?
    - হ‍্যাঁ। আর একজনের কথা না বললেই নয়। সম্পর্কে তিনি মায়ের পিসতুতো দাদাদের জেঠতুতো দাদা, মায়ের পিসেমশাই শ্রীশচন্দ্রের দাদা প্রিয়নাথ সেনের ছেলে। যৌথ পরিবার তো। দাদাদের তুতো দাদারাও নিজের দাদার মত। তিনি ভাউ সেন বা জিতেন্দ্রনাথ সেন। ভাউমামাও দীর্ঘদিন মোহনবাগানের সহ সভাপতি ছিলেন। মা ভাউদা বলতে অজ্ঞান ছিল। মা লেখাপড়ায় ভাল, দেখতে সুশ্রী, পুতুল পুতুল। সেনবাড়িতে মায়ের খুবই আদর ছিল। ও বাড়িতে মায়ের স্নেহের নাম ছিল রাজকুমারী। আসল নাম কেউ মনে রাখেনি।
    - রাজকুমারী? দারুণ নাম। বড়দিদাকে তো আমিও দেখেছি জেঠিমা, বয়েসকালেও কত সুন্দরী। তারপর বল।
    - কীর্তি মিত্রের পুত্র প্রিয়নাথ মিত্রও খেলা নিয়েই বেশি মেতে থাকতেন। প্রিয়নাথের তিন ছেলে।
    - দাঁড়াও দাঁড়াও মা। দু’জন প্রিয়নাথ?
    - হ‍্যাঁ, ভূতিবাবুর দাদা একজন, তিনি প্রিয়নাথ সেন। আর এখন যাঁর কথা বলছি, তিনি কীর্তি মিত্রের ছেলে, প্রিয়নাথ মিত্র। খেলার মাঠে তাঁকে সবাই ডাকত পি. মিত্র।

    পি. মিত্রের ছোট ছেলে রবীন মিত্র হলেন মায়ের ছোট পিসেমশাই। তিনিই পারিবারিক কারবার দেখাশোনা করতেন। বাকি দুই ছেলে হলেন শিশিল মিত্র এবং মলয় মিত্র। মা ডাকতো শিলি কাকা আর মন্টি কাকা। শিলি দাদুও আইনজ্ঞ। তাঁর মেয়ে দীপ্তির সঙ্গে বিয়ে হল মায়ের বড় পিসির ছেলে বাচি সেনের।
    - এদের কাউকে তো আমি দেখিনি।
    - বাচি মামা, দীপ্তি মাইমা কেউই আজ বেঁচে নেই বাবু। দীপ্তি মাইমা আমার বিয়েতে এসেছিলেন। তখন তো আর তোরা জন্মাসনি। মিত্র বাড়ির সম্পর্কে ওঁর সঙ্গে আমার মাসি বোনঝির সম্পর্ক। পাল্টিঘর আর চেনাশোনার মধ‍্যে বিয়ে - এই দুইয়ের পাল্লায় পড়ে সেকালে একজনের সঙ্গে এভাবে লতায় পাতায় একাধিক সম্পর্ক তৈরি হত।
    - হুম, তারপর?
    - মন্টি দাদু বিয়ে করেনি। দীপ্তি মামীমার মাকে আমার মা ডাকত পেনি খুড়িমা বলে। তাঁর বিয়ের আগের নাম হল অম্বালিকা দত্ত। আর এই মামীমা যেহেতু মিত্র বাড়ির সূত্রে আমার মাসি, মা এবং মামারা ওনাকে খুকুদি বলে ডাকত। বাচি সেনের বড়দা নমে সেনের স্ত্রী রেখা সেন ছিলেন এন্টালির দেব বাড়ির মেয়ে। ঐ বংশের প্রথিতযশা কন্যা নবনীতা দেবসেন। মোহনবাগান ই - লাইব্রেরি ফেসবুক পেজে নবনীতা দেবসেনের একটা চমৎকার ছড়া পড়েছি।

    "যদি মোহনবাগান জেতে,
    ঢাকঢোল আর সানাই নিয়ে
    উঠবে শহর মেতে।
    যদি মোহনবাগান হারে?
    এক মিনিটে লোডশেডিং হয়
    হৃদযন্ত্রের তারে।"

    - আরে, দারুণ দারুণ! নবনীতা দেবসেনও মোহনবাগানী?
    - ওরে বোনু ঘটি বাড়ির মেয়ে তো মোহনবাগান হবেনই। জেঠিমা, উত্তমকুমার ঘটি না বাঙাল গো?
    - উত্তমকুমার ভবানীপুরের ঘটি আর সুচিত্রা পাবনার কাঠ বাঙাল।
    - এ্যাঁ! তাই নাকি!
    - ওমা ওমা, আমাদের ক্লাসে অনেকের বাবা মা একজন ঘটি একজন বাঙাল। তারা কী বলতো?
    - বাটি?
    - ঠিক বলেছো। আর কয়েকজনের বাবা মা দুজন বাটি, কারোর আবার বাটি ঘটি। তারা কী জানো?
    - কী রে?
    - থালা আর গেলাস।
    - সেকি? এমন নাম কোথ্থেকে এল?

    - আমরা নাম দিয়েছি ক্লাসে। আমাদের তো ঘটি বাঙাল লড়াই হয়। তখন মনিটরেরা থালা গেলাসদের বলে তারা কোনদিকে যাবে ঠিক করে নিতে।
    - ঘটি বাঙাল লড়াই? তুই কী করিস?
    - আমার কী প্রবলেম? বাবা ঘটি, মা ঘটি, আমি ঘটি। আজ এদিকে কাল ওদিকে চয়েসের ব‍্যাপার নেই।
    - লড়াইটা কী হয়?
    - টিফিনের সময় ঘটি বাঙালের রেস হয়। স্ল‍্যাপ ডে, কিক ডে তে লড়াই হয়।
    - বলিস কী? ঐ ভ‍্যালেন্টাইনস ডের লেজুড় - স্ল‍্যাপ ডে, কিক ডে? মিসেরা কিছু বলেন না?
    - জানতে পারলে তো বলবে। একদিন বেল চেম্বার্স ব্লকের সামনে রেস হচ্ছিল। কে কাকে ল‍্যাঙ মেরে দিয়েছে, কে কার চুল খুলে দিয়েছে। গড়াগড়ি, চুলোচুলি হচ্ছিল। আর প্রিন্সিপাল ম‍্যামের গাড়ি এসে গেছে। ব‍্যাস, যেই ম‍্যাম গাড়ি থেকে নামছেন, টিফিন শেষের ঘণ্টা পড়ে গেছে, আমরা এক ছুটে হাওয়া - একদম ক্লাসে।
    - মেয়েদের ইসকুলে মারপিট হয়? কই আমাদের নিবেদিতা ইসকুলে তো এমন হত না।
    - তুমি হাসালে মা। মারপিট শুধু ছেলেরা করবে? মেয়েরা পারবে না? এমন প‍্যাঁচ আমি জানি, একদম শুইয়ে দেব। ইসকুলে সুরক্ষার ভিডিও দেখিয়েছে। অনেক বন্ধু কারাটে শেখে। আমরা দল করে প্র‍্যাকটিস করি। চুটিয়ে মারপিট করি।
    - ভগবান! মন্দ বলতে পারছি না। এ বেশ ভাল কথা। তবে কেউ আহত না হয়, সেটা দেখতে হবে। আমি কী বলছিলাম সব গুলিয়ে গেছে।
    - সেনবাড়ি আর মিত্র বাড়ির সম্পর্ক আর তার সঙ্গে মোহনবাগান - এটাই বলছিলে।
    - ও হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ। মায়ের বড় পিসির আর এক ছেলে হুঁকুজ সেনের বিয়ে হয় চিকিৎসক আর জি করের এক ভাই রাধারমণ করের মেয়ের নাতনি এবং জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর কন্যা পূরবীর সঙ্গে। রাধাগোবিন্দ কর বা আর জি কর নিজে নিঃসন্তান ছিলেন। আমার দিদা যেহেতু কর বাড়ির নাতনি, সেই সম্পর্কে পূরবী মাইমাও আমার একরকম মাসি।

    যদিও এইসব প্রজাপতি নির্বন্ধ ঘটেছিল, মোহনবাগানের জন্মের পরে। বোস, সেন আর মিত্র পরিবারের নেতৃত্বে মোহনবাগানের জন্ম হয়। এঁদের সঙ্গে লতায় পাতায় ছিল কর এবং দেব পরিবার। এমনিতেই প্রভাবশালী কায়স্থদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মোহনবাগানের জন্মের পরে দেখছি এই পরিবারগুলি বৈবাহিক প্রজাপতির পাখায় পাখায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী প্রজন্মের এই বাড়তি বন্ধুত্ব বা ভরসা হয়তো তৈরি হয়েছিল এই মোহনবাগান আবেগকে কেন্দ্র করে। আমি ভাবি, যেহেতু আমার দিদা লাবণ্য আর. জি. করের নাতনি এবং দাদু দিদার বিয়ের ঘটকালি করলেন দাঁতি সেন, তার মানে আমার এই অস্তিত্বটা মনে হয় মোহনবাগানের কাছে ঋণী।

    দুই মেয়ে হাততালি দিয়ে ওঠে।

    - তুমি মোহনবাগানের মেয়ে মা। তুমি হলে আমিও তাই।
    - জেঠিমা আমার মামার বাড়ি তো অন‍্য। আমি কী করবো?
    - এই বক্সিবাড়ি তো মোহনবাগান অন্তঃপ্রাণ। তোরও মোহনবাগানের মেয়ে হতে কোনো বাধা নেই তো।
    - আচ্ছা ঠিক আছে তবে। তারপর বল।
    - বাংলায় ফুটবলের জনক নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীও শোভাবাজার রাজবাড়ি মানে দেববংশের জামাই, যাঁকে দেখে স্বামী বিবেকানন্দের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল।
    - জেঠিমা, ন-গে-ন্দ্র প্রসাদ মানে গোলন্দাজ?
    - হ‍্যাঁ, যাকে নিয়ে দেবের সিনেমা, সেই নগেন্দ্রপ্রসাদ। আমরাও দেখেছি।

    ১৮৮৫ সালে তখনকার ওয়েলিংটন, ফ্রেন্ডস, প্রেসিডেন্সি ও বয়েজ ক্লাবকে মিশিয়ে দিয়ে শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে তিনি তৈরি করেন শোভাবাজার ক্লাব। সঙ্গে ছিলেন রাজা জিতেন্দ্র কৃষ্ণ দেব। ইনি হলেন শোভাবাজার রাজবাড়ির ছোট তরফের রাজা শিবকৃষ্ণ দেবের নাতি। প্রায় একই সময়ে আরও তিনটে ক্লাবের জন্ম হয় - কুমোরটুলি ক্লাব, টাউন ক্লাব আর ন‍্যাশনাল ক্লাব। আর দেখ, এই ১৮৮৫ তেই প্রতিষ্ঠা হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের। ১৮৮৭ সালে নবাবজাদা আমিনুল ইসলামের পৃষ্ঠপোষণায় জন্ম নেয় জুবিলী ক্লাব। পরে (১৮৯১) এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

    - ওমা একটা কথা বলব?
    - বোনু, তুই কিন্তু সাত সতেরো কথা টেনে আসল কথাটা গুলিয়ে দিচ্ছিস।
    - আহা, বলতে দে না কী বলবে।
    - ও মা! সিনেমা দেখতে গেলে যে প‍্যাকেট করা আলুভাজা কিনে খাই না, লম্বা লম্বা, ওরকম বাড়িতে করা যায়না? গোলন্দাজ দেখতে গিয়েও তো খেয়েছি।
    - ফ্রেঞ্চ ফ্রাই?
    - বোনু, তুই এত পেটুক কেন রে? শুনতে দে না।
    - দাঁড়া দাঁড়া ওরটা বলে নিই আগে, নইলে শান্ত হবে না। ঐরকম আলুভাজা আসলে বেলজিয়ানদের আবিষ্কার। বড়সড় লম্বাটে আলু ঐভাবে আঙুলের মাপে কেটে আগে ফুটন্ত নুন জলে ফেলতে হবে। একটু পরেই তুলে নিয়ে হাল্কা একটু কর্ন ফ্লাওয়ার মাখিয়ে নিতে হয়। এবারে ডুবো তেলে অল্প অল্প পরিমাণে ভাজতে হবে। একটু হলুদ রং ধরলে তুলে নিয়ে টিস্যু পেপারের ওপরে ছড়িয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরে গায়ের তেলটা টেনে গেলে আবার ডুবো তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে। তবে সঠিক ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হবে।
    - ওমা, বিকেলে ফেঞ্চ ফ্রাই আর ডালগোনা কফি দিয়ে ওপেন এয়ার মৈতনা কাফে করবে। অনেক দিন খাইনি।
    - এখানে এত লোকের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই করতে গেলে একবেলায় আলু অনেক খরচ হয়ে যাবে। তোর বাবা চেঁচাবে।
    - প্রস্তাবটা মন্দ নয় জেঠিমা। জেঠুকে আমরা দুজন ম‍্যানেজ করে নেব। ওটা বড় কথা নয়। ক্রিমি ডালগোনা কফি বাড়িতে কী করে হবে। শেষে যদি বিচ্ছিরি হয়ে যায়, আলুভাজার মজা মাটি হয়ে যাবে।

    - বিচ্ছিরি হবেনা রে দিদি। মা পারে করতে। দেখবি। মা কোল্ড কফিও পারে। দোকানের থেকে ভাল হয়।
    - তাহলে কোল্ড কফিটাই কর না জেঠিমা।
    - ভাল কোল্ড কফি করতে গেলে ফ্রেশ ক্রিম লাগবে। এখানে তো সেটা পাওয়া যায় না। ডালগোনা করা যেতে পারে।
    - তবে তাই হোক।

    বিকেলে মেয়েদের আবদার রাখার জন্য দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পাট চোকার পরে, আবার আলু কাটার পর্ব শুরু করতে হল। বিকেলে শুরু করলে প্লেটে দিতে সন্ধে পেরিয়ে যাবে। তখন একপেট আলুভাজা খেয়ে রাত্তিরে আর খেতে চাইবে না। কফির জন্য ইলেকট্রিক বিটারটাও সেট করে রাখতে হল। এবাড়িতে তো সারাবছর থাকা হয় না, তাই প্লাগগুলো অনেক সময় গোলমাল করে। তার ওপরে ভোল্টেজের একটা সমস্যা আছে। এখানে এলে প্রতি বছরেই দু’-একটা মোবাইল চার্জারের গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়। শখের বিটারটার সে দশা হোক – সেটা আমি চাই না।

    গোপীনাথের মন্দিরের চূড়ার কলসটা আর দেবদারু গাছের মাথাগুলো কমলা আলোয় ঝিলমিল করছে। ভোরের আলো তো সুন্দর। কিন্তু এখানে এই বিকেলের আলোর একটা আলাদা মাতন আছে। চোখে কেমন নেশা লাগে। কানে ভেসে আসে উচ্ছল কিছু শব্দ আর পায়ের ধুপধাপ।

    - আলুভাজার গন্ধ বেরিয়েছে রে দিদি, তাড়াতাড়ি ছুটে আয়।
    - জেঠিমা, কফি হয়ে গেছে?
    - না এবার শুরু করব।
    - আমি দেখব, কীভাবে কর।
    - ওমা আমায় ক’টা আলুভাজা দাও না।
    - আগেই খেয়ে নিবি? কফিটা হোক।
    - কফির সঙ্গে আবার খাব।
    - কর্ণা, তুই এদিকে আয়। আমি বলে বলে দিচ্ছি, নিজে হাতে কর।
    - বল।
    - এখনও তো সবাই খেতে আসেনি। ধর, তোকে এখন পাঁচজনের মত কফি করতে হবে।
    - হ‍্যাঁ।
    - এই চামচটার মাপে কাটাকাটা পাঁচ চামচ কফিগুঁড়ো এই বাটিতে ঢাল।
    সাবধানে। গুঁড়ো বাইরে পড়ল তো। তাহলে আর একটু নিয়ে নে।
    হয়েছে। এখানে দেখ ফ্লাস্কে গরমজল রাখা আছে। এই কাপের এক কাপ গরমজল মেপে ঐ বাটিতে দে।
    এবারে ঐ কফির চামচের দু’চামচ করে চিনি, মানে পাঁচ জনের জন্য দশ চামচ চিনি বাটিতে দে। চিনিটা কাটাকাটা মাপ নয়, উপচোনো মাপে নিবি। চামচ দিয়ে মিশ্রণটা ভাল করে গোলা।
    এবারে বিটার ধর।
    - পারব না জেঠিমা, আমার ভয় করছে। সব ছিটকে যাবে।
    - পারবি, খুব সহজ। আমি তো আছি। বাঁহাতে বাটিটা ধর। ডানহাতে এটা ধর। বুড়ো আঙুলে সুইচটা নিচের দিকে নামা।
    - ঘুরছে।
    - ঘুরবে তো।
    - ফেনা উঠছে। বোনু দেখ দেখ।
    - উঁ হু। শব্দ হচ্ছে কেন। বিটারটা বাটির মেঝে বা গায়ে লাগানো চলবে না।
    - ওদিকটা যে ফেনা হচ্ছে না।
    - প্রথম তো। বিটার সরাতে না পারলে, বাটিটা ঘুরিয়ে নে। সুইচটা ওপরের দিকে ঠেলে বন্ধ কর। এবার বাটি ঘোরা।
    - হচ্ছে হচ্ছে। পুরো ঘন ফেনা।
    - এবারে হয়ে গেছে। থামিয়ে দে।
    - আর একটু করি জেঠিমা, মজা আসছে।
    - পাগলি। আর না। রঞ্জা ফ্রিজ থেকে একটা বরফের ট্রে নিয়ে আয়। কর্ণা এই চকলেট সিরাপটা গ্লাসের ভিতরের গায়ে এমনভাবে ঢাল যাতে চারদিকে চারটে লাইন হয়ে যায়। এখানে দুধ রয়েছে। যে কাপে গরম জল দিয়েছিলি, সেই কাপের অর্ধেকের একটু বেশি মেপে এই কাচের গেলাসগুলোতে সাবধানে পর পর ঠান্ডা দুধ ঢাল। সব গেলাসে এক চামচ করে চিনি দে। চিনিটা গোলা।

    রঞ্জা, এই থালার ওপরে বরফের ট্রে উল্টে রেখে ওপর থেকে একটু একটু করে জল দে।
    কর্ণা, এবার দুধের মধ‍্যে দুটো করে বরফের কিউব দে। আর রঞ্জা চট করে খালি ট্রেটা জল ভরে ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিয়ে আয়।
    কর্ণা এবারে এই প্রত‍্যেকটা গেলাসে দুধের ওপরে চামচে করে কফির ঘন ফেনা দিয়ে ভরে দে।
    আরও দিতে হবে। গ্লাসের মুখে বেশ ছোট ছোট পাহাড়ের মত দেখতে হবে।
    - গেলাসগুলো কী দারুণ দেখতে হয়েছে গো জেঠিমা। একটু খাই। না, না, আগে ছবি তুলি। বন্ধুদের পাঠাতে হবে। আঃ ঠান্ডা দুধটা কী আরাম। বোনু, তোকে ধন‍্যবাদ। দারুণ আইডিয়া দিয়েছিলি।


    ক্রমশ...
  • খ্যাঁটন | ২৮ এপ্রিল ২০২২ | ৯০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন