এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • অর্থনীতি ও নোবেল পুরস্কার ২০২২

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৭ নভেম্বর ২০২২ | ৯৯৮ বার পঠিত
  • অর্থনীতি ও নোবেল পুরস্কার ২০২২  
     
    কল করেছেন আজব রকম চণ্ডীদাসের খুড়ো –
    সবাই শুনে সাবাস বলে পাড়ার ছেলে বুড়ো
    সামনে তাহার খাদ্য ঝোলে যার যেরকম রুচি
    মণ্ডা মিঠাই চপ কাটলেট খাজা কিংবা লুচি 
     
     
    সুকুমার রায়
     
    রাজকোষ রাজার । কোন খাতে কতো রাজস্ব আদায়  হলো আর কোথায় তা ব্যয় হবে সেটি নির্ণয় করতেন রাজ প্রতিভূ । রাজা  আরেকটা প্রাসাদ বানিয়ে নিভৃতে  জলকেলি করবেন,  না বিশাল সরোবর খুঁড়ে  জনতাকে পাবলিক সুইমিং পুল উপহার দেবেন  তা  নিয়ে কোন আলোচনার সুযোগ ছিল না।আজকের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের কর বাবদ কি আদায় আর কোথায় তার ব্যয় সে নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংসদে জন প্রতিনিধিদের বিস্তারিত বিচার বিবেচনার জন্য  যে নীতি পেশ করেন  তার নাম রাজস্বঘটিত নীতি বা ফিস্কাল পলিসি ।
     
    এককালে রাজস্ব আদায় হয়েছে চাল গম গোরু ভেড়া দিয়ে।  আকুল   আর্তি শোনা গেছে ‘বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেবো কীসে ? ‘ চাল গমের সরবরাহ নির্ভর করে চাষির মেহনত, বীজ কেনার সামর্থ্য, তার বলদের স্বাস্থ্য, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ইত্যাদি নানান অনিশ্চিত বস্তুর ওপরে,  যার কোনটা নিয়েই রাজা মশায়ের মাথা ব্যথা ছিল না । ধানের বীজ নয়, আদায়ের পেয়াদা পাঠানো তাঁর কাজ।
     
    আজ আমরা কর দিই  মুদ্রা মারফত  – প্রত্যক্ষ কর ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার বা চেক দিয়ে , পরোক্ষ কর ক্যাশ বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে । এই মুদ্রা ব্যবস্থার পরিচালক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক – টাকা পয়সা কোনো  হরি লুটের সামগ্রী নয় , তাই তাঁরা স্থির করেন কতো মুদ্রা ছাপা হবে , কি দরে ( সুদে)  চলবে তার বিনিময়। আমাদের কেতাবে এর নাম আর্থিক নীতি বা মানিটারি পলিসি ।
     
    অষ্টাদশ শতাব্দীতে  ফরাসি ব্যারন মন্তেস্কু  প্রথম বললেন সাম্য এবং স্বাধীনতা বজায় রাখতে প্রয়োজন ক্ষমতা স্বতন্ত্রিকরণ ( সেপারেশন অফ পাওয়ারস ) । আইন প্রণেতা ( লেজিসলেচার ) আইনের অনুশাসক ( একজিকিউটিভ) এবং  সেই আইন অনুযায়ী বিচার ব্যবস্থা ( জুডিশিয়ারি ) এই তিনটে বিভাগকে আলাদা না করলে স্বৈরাচারের  পুনরাবির্ভাব হবে -  শাসক নিজেই আইন প্রণয়ন , প্রয়োগ এবং সেই অনুযায়ী  বিচার করবেন । গত শতাব্দীতে জার্মানি বা  ইতালির গণতন্ত্রে এটাও আমরা হতে দেখেছি তবে সেটাকে ব্যতিক্রমের তালিকায় রাখা ভালো ।
     
    রাজস্ব ঘটিত নীতি এবং আর্থিক নীতি -এই দুটিকে একই দফতরের আওতায় রাখা সংগত কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হয়ে থাকে । কেউ কেউ বলেন কর আদায়ের পরিমাণের চেয়ে খরচা বেশি হলে সরকার কর বৃদ্ধি করে ঘাটতি মেটাতে পারেন।  সেটি ফিস্কাল পলিসির অঙ্গ , কিন্তু আগামী নির্বাচনের দিকে চোখ রেখে সে পথে না গিয়ে আরও নোট ছাপিয়ে যদি কাজ চালান তার ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে । এর পরিণাম ভয়াবহ। 
     
    বহু দিনে আগেই ফ্রান্স জার্মানি  তাদের সংসদে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা মঞ্জুর করেছে। অনেক  দেশ -যেমন আজকের ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক , ই সি বি – এই পথ অনুসরণ করে।    ব্যাঙ্ক অফ লাটভিয়ার(  কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক) গভর্নর আইনার রেপকে আমাকে বলেছিলেন – আমি লাটভিয়ান সরকারের অর্থমন্ত্রকের  ঠিকানাটা জানি , সেখানে কখনো যাই নি ( পশ্য :উত্তরের আলোয় অচেনা ইউরোপ- লাটভিয়া) ।
     
    ১৯৯৭ সাল অবধি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড ছিলো সরকারের একটি এজেন্সি । চ্যান্সেলর অফ দি এক্সচেকার বা অর্থমন্ত্রী তার প্রভু- মাইনে বোনাস প্রোমোশন তথায়  নির্ধারিত হয় ।  ব্যাঙ্কের  কাজ টাকা ছাপানো, সুদের হার নির্ণয় এবং ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান গুলির দেখভাল করা ।  তবে সামনে নির্বাচন আসছে দেখে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী কখনো ফোন করেছেন ব্যাঙ্ক  অফ ইংল্যান্ডের গভর্নরকে – ‘ রবিন , দেখো দিকি এই  ব্যাঙ্ক রেট কে একটু কমিয়ে দেওয়া যায় কিনা । তাতে  মর্টগেজের খরচা কমে ।  শিগগির সামনে নির্বাচনের  দিন ঘোষণা  হবে ‘ । গল্পটা জেরারড লায়ন্সের কাছে শোনা (স্ট্যান্ডার্ড  চার্টার্ড ব্যাঙ্কে এককালীন সহকর্মী, পরে  বরিস জনসনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা )।
     
    ২৩শে সেপ্টেম্বর ,২০২২ নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাসের অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেং পার্লামেন্টে অন্তর্বর্তী কালীন বাজেট পেশ করলেন – ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কর  কমানো হবে, সরকারি সেবায় কোন খামতি হবে না । এর ফলে সরকারি রাজস্ব খাতে ৪৫ বিলিয়ন পাউনডের  ব্যবধান দেখা দেবে । সেটি ফাঁক কিভাবে বুজনো হবে তার  হদিশ  তিনি নভেম্বর মাস নাগাদ দেবেন বলে জানালেন।
     
    বাজেট বক্তৃতা শেষ হবার আগেই ব্রিটিশ পাউনডের মূল্য কমতে থাকে নাটকীয়ভাবে।  সোমবার ২৬শে সেপ্টেম্বর সেটি নেমে গেলো ১.২৪ থেকে  ১.০৩ ডলারে ।  চল্লিশ বছরে নিম্নতম । ব্রিটিশ সরকারের বন্ড কেনা বেচার দর  বাড়ল দুই শতাংশ ।
     
    ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যানডরু বেইলি মাঠে  নামলেন।  ভাঁড়ারে জমানো পাউনড দিয়ে দুর্বার বেগে ব্যাঙ্ক বাজার থেকে কিনতে থাকে সরকারি বন্ড , ডলার । পাউনডের স্বাস্থ্য কিঞ্চিৎ উদ্ধার হলো।  পুনর্বার প্রমাণ হলো আর্থিক নীতি এবং রাজস্ব নীতি স্বতন্ত্র থাকা কতোটা প্রয়োজন।   বুধবার ২৮শে সেপ্টেম্বর টেলিভিশনের মুখোমুখি বসে বললেন গতকাল ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড যদি বাজারে না নামত ব্রিটিশ অর্থনীতির সর্বনাশ হতে পারতো।
     
    ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড সেদিন শ্রীমতী ট্রাসের তাঁবেদারিতে থাকলে কার  গোয়াল কে ধুনোর মতন বিচিত্র দৃশ্যের সৃষ্টি হতো । আমাদের মতন উলুখাগড়ার যেতো প্রাণ।
     
    ফেডারাল রিজারভ  (অতঃপর শুধু ‘ফেড ‘) সরকারের একটি এজেন্সি: তার একটি কেন্দ্রীয় বোর্ড, বারোটি আঞ্চলিক বছরে দুবার আর্থিক নীতি সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রকাশ করে । এরপরে ব্যাপারটা আরেকটু ধোঁয়াটে  আকৃতি ধারণ করে – আর্থিক নীতি কি হবে সেটার ইশারা দেয় আমেরিকান কংগ্রেস এবং কীভাবে সেটি কার্যকরী হবে সেটা স্থির করে ফেড।  দেশের ব্যাঙ্কগুলির তত্ত্বাবধানের কাজ আরেকটি সরকারি এজেন্সির ওপরে সমর্পিত – অফিস অফ দি কম্পট্রলার অফ কারেন্সি( ও সি সি )।
    এঁরা কি করেন ?
     
    ও সি সি  দেশের তাবৎ ব্যাঙ্কের গুরুজন।  এঁরা আলোচনা এবং নিয়মিত ইনসপেকশন করে তাদের বিজনেস মডেল বোঝেন, স্বাস্থ্যকর ব্যাঙ্ক পরিচালনার বিষয়ে শলা পরামর্শ দেন , বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা অনুধাবন করেন , নিয়মিত ব্যাঙ্কগুলি পরিদর্শন করে থাকেন , এমনকি বিদেশে আমেরিকান ব্যাঙ্কের শাখা প্রদর্শনে যান । সিটিব্যাঙ্ক লন্ডনে তাঁদের আপ্যায়ন করেছি - কি কাজ করি  তা বোঝানো খুব শক্ত হয় নি । অক্সফোরড বা স্টোন হেঞ্জ যাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় কি এ ছাড়া খুব কঠিন প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হয় নি ।
    দেশি বিদেশি নতুন ব্যাঙ্ক  খোলার অনুমোদন তাঁদের হাতে ।
     
    ও সি সির একটি বিশেষ দায়িত্ব হল- দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় কাজে কর্মে কোন ভুলচুক, বেয়াড়া বা বিপজ্জনক প্রবণতা দেখলে তাঁকে শুধরে দেওয়া ।
     
    আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অন্য চেহারা দেখতে অভ্যস্ত । আমার মতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তার অসামান্য উদাহরণ । কিছু দেশ আর বি আইয়ের  সংবিধানকে  রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে- আমার জানা শ্রেষ্ঠ নমুনা সাউথ আফ্রিকান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।  অকারণে ডক্টর সিং  দুনিয়ার অন্যতম  সেরা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কার হিসেবে পরিগণিত হন নি ।
     
    উনিশ তিরিশের মহা মন্দায় ফেডারাল রিজারভের ( অতঃপর শুধু ফেড  ) কর্ম পদ্ধতির সমালোচনা করেন বেঞ্জামিন বেরনানকে, সেটা তাঁর থিসিস ।  ফেড সুদ বাড়িয়ে এবং অর্থ সরবরাহ কমিয়ে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল।  অনেক কেতাব লেখার পরে তিনি নিজেই একদিন যখন ফেডের কর্ণধার হলেন,  দেশের অর্থব্যবস্থায় ঘনিয়ে ওঠা সঙ্কটের ছায়ামাত্র তিনি দেখতে পান নি ( যদিও ২০০৫ সালে রঘুরাম রাজন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন ) । আর পেলেই বা কি ? সে কাজ ও সি সির , ব্যাঙ্কের নিরীক্ষণ করার কাজ তাদের আউট সোর্স করা আছে
     
    ২০০৮ সালে  বেল আউট নামক যে প্যারাসুটটি বানানোর জন্য সুইডেনের রিকসবাঙ্ক বেরনানকেকে নোবেল স্মৃতি পুরস্কার দেওয়ার  সুপারিশ করলো সেটি  কি তিনি একা বানিয়েছিলেন না  আমেরিকান ট্রেজারির কর্তা হ্যাঙ্ক পলসেন নামক প্রাক্তন গোল্ডম্যান জাকসের  প্রাক্তন আধিকারিকের অনুমোদনে ? বেরনানকে  কেবল সইটি  করলেন কি ? মঞ্জুরি এলো কোথা হতে ? ফেড নিজেই সে সিদ্ধান্ত নিলো ? তার ব্যয় বহন করলো কে ?
     
    সে গৌরী সেনের নাম কি ইউ এস ট্রেজারি ?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৭ নভেম্বর ২০২২ | ৯৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:e77c:5d49:1cb1:65bc | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ২০:৩০514203
  • কৌতুহল বাড়ছে।
     
    সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করলে মার্কেটে খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়। অন্য কোন প্রাইভেট সংস্থা হস্তক্ষেপ করলে? এই যেমন গোল্ডম্যান! 
     
    অন্য কোন সুতোতে আরবিআই আর সাউথ আফ্রিকার সেন্ট্রাল ব্যাংক নিয়ে কিছু বললে বাধিত হব।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ নভেম্বর ২০২২ ২৩:০০514204
  • শ্রী পলিটিশিয়ান

    সেরেস্তায় টাকা বাড়ন্ত হলে সরকার কর বাড়াতে এবং/অথবা  বাজারে ধার নিতে পারেন – ধার পাওয়া যায় আম জনতার কাছে তাঁরা কোন কারেন্সি রিস্ক নিচ্ছেন না কিন্তু একটা বড়ো অংশ আসে বিদেশি দেনদারের কাছ থেকে যারা লগ্নি করেন সুদের হার এবং মুদ্রার মূল্যের স্থিরতা দেখে আমেরিকান লগ্নিকারক ১.৩ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এক মিলিয়ন পাউনডের যে গিলট ( ব্রিটিশ সরকারের ঋণ পত্র ) তিন পারসেনট সুদে  -ধরে নিন এক বছরের কাগজ –বছরের শেষে যদি সে ১.০৭ মিলিয়ন ফেরত তার লোকসান হয়ে মুদ্রা বিনিময়ের হারের কারণে এক্সচেঞ্জ রেটের ওঠা পড়ার অন্তত ছটি কারণ আমাদের দেখানো হয় তবে টোটাল পাবলিক ডেট এবং ইনফ্লেশান সবচেয়ে বড়ো ইনডিকেটর সরকারি ঋণ মুদ্রা মূল্য এবং বিনিময় হার দুটোকেই আহত করে অথবা আশ্বাস দেয় ।

    গোল্ডম্যানের  নাশক ক্ষমতা কম নয় । গ্রিস ২০০৭ ভাবুন বিদেশি লগ্নি কারকদের মাথায় টুপি পড়িয়ে হাজার মিথ্যেয় কথা বলে যে সরকারি বন্ড বেচল গোল্ডম্যান তার ঠেলে এখনও সামলাচ্ছে ই সি বি ও গ্রিস তবে আমার মতে একে এখনও ওয়েপন অফ মাস ডেসট্রাকশন বলা যায় না হয়তো গ্রিস আপন দেশেই সে টাকা ওঠাতে পারতো । এ নিয়ে পরে অন্য কোথাও  

    আর বি আই এবং সার্ব ( সাউথ আফ্রিকান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ) – তাদের  মিশন স্টেটমেন্ট , গঠন , বোর্ড মেম্বার সংখ্যা ও  নির্বাচনের নিরিখ  আমাদের আর বি আইয়ের মতন- সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের দায়িত্ব মুদ্রার সরবরাহ এবং  মূল্য বজায় রাখা রাখা ( পড়ুন মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানো ) ঋণ পদ্ধতি যেন সঠিক চালিত হয় ( পড়ুন  অর্থ প্রতিষ্ঠানকে নজরে রাখা ) – একটি স্বাধীন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক কেবলমাত্র সংসদের প্রতি দায়বদ্ধ , মাইনে  বোনাস বা পদোন্নতির জন্যে নয় ।
     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:252b:598b:b72c:fa09 | ২৮ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৫৯514212
  • আরো কিছু প্রশ্ন আছে। আপনার পরের পর্ব পড়ে তারপর করব।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ নভেম্বর ২০২২ ১৭:০৩514216
  • শ্রী পলিটিশিয়ান

    আমার আগের উত্তরটি নিতান্ত মাত্রাহীন ছিল  – দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ পড়েনি ঠিক জায়গায়। তাই সেটি আবার লিখছি, একটু সংস্কার করে।

    সেরেস্তায় টাকা বাড়ন্ত হলে সরকার কর বাড়াতে এবং/অথবা  বাজারে ধার নিতেই  পারেন ।  ধার পাওয়া যায় আম জনতার কাছে । তাঁরা কোন কারেন্সি রিস্ক নিচ্ছেন না আপন দেশের সরকারকে ধার দিচ্ছেন। কিন্তু একটা বড়ো অংশ আসে বিদেশি দেনদারের কাছ থেকে, যারা লগ্নি করেন সুদের হার এবং মুদ্রার মূল্যের স্থিরতা দেখে মুনাফা করার সাধু অভিলাষে ।   ধরুন আমেরিকান লগ্নিকারক ১.৩০  মিলিয়ন ডলার দিয়ে এক মিলিয়ন পাউনডের যে গিলট ( ব্রিটিশ সরকারের ঋণ পত্র ) তিন পারসেনট সুদে  কিনলেন - এক বছরের কাগজ –বছরের শেষে যদি সে ১.০৭ মিলিয়ন ফেরত  দেয়, সুদের হার দিয়ে তার মুদ্রা বিনিময়ের লোকসান উদ্ধার হয় না। এক্সচেঞ্জ রেটের ওঠা পড়ার অন্তত ছটি কারণ আমাদের দেখানো হয় । তবে টোটাল পাবলিক ডেট এবং ইনফ্লেশান সবচেয়ে বড়ো ইনডিকেটর ।  যেহেতু মুদ্রা মূল্য রক্ষা করার কাজ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের , সরকারি ঋণের বেমক্কা বৃদ্ধি  হার সে দেশের  মুদ্রার অন্তর্দেশীয়  মূল্য এবং বিনিময় হার দুটোকেই আহত করে।  এই কারণে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ডরু বেইলি  প্রকাশ্যে ব্রিটিশ সরকারকে ঝাড়লেন । 

    আমি ইউ কের হালের কাণ্ড কারখানা দিয়ে এটি দেখানোর চেষ্টা করেছি মাত্র -। উদাহরণ অজস্র। 

    গোল্ডম্যানের  নাশক ক্ষমতা কম নয় । গ্রিস ২০০৭ ভাবুন । বিদেশি লগ্নি কারকদের মাথায় টুপি পড়িয়ে হাজার মিথ্যে কথা বলে যে সরকারি বন্ড বেচল গোল্ডম্যান , তার ঠেলা  এখনও সামলাচ্ছে ই সি বি ও গ্রিস।  কোয়ানটিটেটিভ ইজিং যে খাল কেটে মুদ্রাস্ফীতি আনার অন্য নাম ছিলো   সেটি আমরা এখন বুঝতে পারছি – ইউরোপ জুড়ে ডাবল ডিজিট ইনফ্লেশন কেবল কোভিড এবং পুতিন দ্বারা উৎপন্ন হয় নি ।  

    তবে আমার মতে একে এখনও ওয়েপন অফ মাস ডেসট্রাকশন বলা যায় না হয়তো গ্রিস আপন দেশেই সে টাকা ওঠাতে পারতো তাতে ক্ষতিটা কম হতো । এ নিয়ে পরে অন্য কোথাও!   

    আর বি আই এবং সার্ব ( সাউথ আফ্রিকান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ) – তাদের  মিশন স্টেটমেন্ট, গঠন , বোর্ড মেম্বার সংখ্যা ও  নির্বাচনের নিরিখ  আমাদের আর বি আইয়ের মতন।  সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের দায়িত্ব মুদ্রার সরবরাহ এবং  মূল্য বজায় রাখা রাখা ( পড়ুন মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানো ) ঋণ পদ্ধতি যেন সঠিক চালিত হয় ( পড়ুন  অর্থ প্রতিষ্ঠানকে নজরে রাখা ) । একটি স্বাধীন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক কেবলমাত্র সংসদের প্রতি দায়বদ্ধ , মাইনে  বোনাস বা পদোন্নতির জন্যে নয়।  আর বি আই সূত্রটি আমি সার্ব সহ অধ্যক্ষ ডানিয়েল মিনেলির কাছে প্রিটোরিয়াতে শুনি ( ২০০৪)।

     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:f3a0:3bd:d24f:59b2 | ২৯ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪৭514231
  • ভারুফাকিস গ্রেক্সিট করতে বলেছিল। জানিনা সেটা করলে কি হত। তবে সেই আলোচনায় এই টইতে ঢুকতে চাইনা। পরে অন্য কোনো টইতে।
     
    আপাততঃ পরের কিস্তির প্রতীক্ষা।
  • জয়দেব শাসমল | 103.101.213.195 | ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৫২514361
  • অর্থনীতি র মৌলিক বিষয়গুলি সম্পূর্ন আয়ত্তে থাকলে কত সহজে বাস্তবের সমষ্যাগুলি বিশ্লেষণ করা যায়, তা হীরেনদার লেখায়  পরিস্কার বোঝা যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাঙ্কিং  , অর্থ ও আর্থিক বিষয়ে বিশ্ব জুড়ে হীরেনদার  অতি নিবিড় ও ব্যাপক প্রায়োগিক experience । চমৎকার বিশ্লেষণ। মোটামুটি ভাবে রাজস্ব নীতি ও সরকারের আয়ব্যয়  সরকারের নিয়ন্ত্রণে  থাকে। কিন্তু রাজস্ব ঘাটতি ( fiscal deficit) এর ফলে অতিরিক্ত টাকা ছাপানো, bond market এবং exchage  rate  এ তার প্রভাব  অর্থনীতি কে ভীষনভাবে ঘায়েল করতে পারে। তাই fiscal authority o monetary authrity কিভাবে ভারসাম্য রাখবে বা দুটি প্রতিষ্ঠান কতটা স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করবে এটা অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এটা হীরেনদা অনেক উদাহরন দিয়ে সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছেন। ধন্যবাদ হীরেনদা।  আসলে  বিশ্বায়নের আবহে টাকার যোগান, সুদের হার , বিনিময় হার , বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় এবং এসবের প্রভাবে আমদানি রফতানি , বিনিয়োগ সব ই প্রভাবিত হবে। সেজন্য open macro economy  framework এ পুরো বিষয়টাকে দেখতে হবে। পড়ে খুব ভালো লাগলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন