এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • 'পুরাণপুরুষ' উপন্যাসের অভিসন্ধি 

    সিএস লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৭৮৮ বার পঠিত
  • এই উপন্যাসটি নিয়ে কিছু কথা লেখা উচিত। সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুরাণপুরুষ' (দেজ পাবলিশিং প্রকাশিত, মূল্য ২০০ টাকা)। 
     
    বেশ কিছুদিন আগে পড়া হয়ে গেলেও, আমার সঙ্গেই আছে উপন্যাসটি, ক্রমাগতই মাথার মধ্যে ঘুরেফিরে আসছে এই উপন্যাসের প্রকরণ ও বিষয়। এবং খুব কম উপন্যাসেই যা ঘটে, যে লেখার গঠন ও বিষয় যূক্তবেণীর মতো, এই উপন্যাসটিতে সেরকম ঘটেছে মনে করি। ১৩০ পাতার এই উপন্যাসটিতে সূক্ষ্মতা খুঁজে পেয়েছি প্রভূত পরিমাণে, সেইসবের কিছু আমার এই লেখাটিতে ছড়িয়ে থাকবে হয়ত, গোছানো বিশেষ নাও হতে পারে, নোটস হয়ত বা, যারা পড়বেন তাঁদের এই উপন্যাসটি পড়ায় প্ররোচিত করার জন্যই -
     
    এবং লেখাটি এই জন্যও যে ঐতিহাসিক উপন্যাস বা তার গল্পের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই বরং ক্ষীণায়তন উপন্যাসেই একজন ক্ষমতাবান ঔপন্যাসিক তার বর্তমান আর অতীতের বোধ নিয়ে 'আধুনিক' গদ্য লিখে ফেলতে পারেন, সেইরকমের একটি লেখা বলেই 'পুরাণপুরুষ' উপন্যাসটিকে পড়েছি -
     
    যেমন - 
     
    সময়ের বৃত্তাকার গতি 

    উপন্যাসটির প্রথম পরিচ্ছেদ শুরু হয়েছে আধবোজা জানালার  খড়খড়ি দিয়ে ঢুকে আসা এক আতরগন্ধী হাওয়ায় উপন্যাসের প্রধাণ চরিত্র, উনিশ শতকের মধ্যভাগের কলকাতা শহরে  রাজারাম দেবের, ভোররাতের দিকে তন্দ্রা ভেঙে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। ক্রমশঃ বোঝা যায় আটচল্লিশ বছরের রাজারাম কিছু একটা ঘটার জন্য অপেক্ষা করছে। এই অপেক্ষা করার সময় জুড়ে সীমন্তিনী নামের বেড়ালটিকে দেখা যায়, কাশীদাসী মাহাভারতের দুটি পদের কথা আসে রাজারামের কৈশোরের স্মৃতির অনুষঙ্গে, আতরের শিশির প্রতি টানের প্রসঙ্গ আসে, একুশ বছর ধরে রাজারামের যা অভ্যাস অর্থাৎ একটি মাত্র চাদর গায়ে দিয়ে রাতে নগ্ন শরীরেই ঘ্মোতে যাওয়া এবং এসবেরই সাথে তন্দ্রাচছন্ন অবস্থায় দেখা একটি স্বপ্নের কথা, হয়তবা তার দেখা শেষ স্বপ্ন। কী ঠিক ঘটবে বা ঘটল, কীসের জন্য রাজারামের প্রতীক্ষা, তার কী হল সে কথা জানা যাবে আরো ছয়টি পরিচ্ছেদ পেরিয়ে অষ্টম পরিচ্ছেদে, যা উপন্যাসের শেষ পরিচ্ছেদ, উপন্যাসের সমাপ্তি যেখানে। প্রথম পরিচ্ছেদে উপন্য়াসটি যে বিশেষ সময়ে দাঁড়িয়ে, শেষ পরিচ্ছেদে সেই সময়টিতেই উপন্যাসটি পৌঁছবে; মাঝের ছয়টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত থাকবে কৈশোর - যৌবন হয়ে আটচল্লিশ বছরে পৌঁছন রাজারামের জীবনবৃত্তান্ত, সেই জীবনের মধ্যে দিয়ে সমসময় দর্শন, সেই সময়ের মধ্যে ধ্বংসের ইঙ্গিত, বাস্তব ও ফ্যান্টাসি, জীবনবৃত্তান্তর মাধ্যমে রাজারামের পরিচিতিও সরলরৈখিকভাবে নয়, সাল - বছর ইত্যাদি জড়িয়ে রাখা, খুলে ফেলে বুঝে নিতে হয় । উপন্যাসের পরিচ্ছেদভাগের গঠনে সময়ের ঘুরে আসা, জুড়ে  যাওয়া, লক্ষ্য করি এই গঠনের মধ্যেই  সময়ের বৃত্তাকার গতিকে বুনে দেওয়া হয়েছে ! উপন্যাসটির প্রচ্ছদে যে ছবি যেখানে দেখা যায় একটি বিশালকায় সাপ নিজেকেই তার লেজ থেকে খেয়ে চলেছে, যে সাপটি জড়িয়ে আছে পুরোন কলকাতার একটি গ্যাসবাতিকে, সাপটির এই যে ইমেজ যা মানবসভ্যতার এক প্রাচীন মিথ যা বোঝায় সময়ের চক্রাকার গতি, যে সময়ের মধ্যে মানুষের সভ্যতায় একই ঘটনা বার বার ফিরে আসে, এই ধারণাটিকে উপন্যসটি তার ন্যারেটিভের গঠনে ধরে রেখেছে ! 
     
    সময়ের ভেতরে আর এক সময় 
     
    এই উপন্যাস আন্দাজ করতে চেয়েছে আগামীকে, অ্যান্টিসিপেট করতে চেয়েছে পরবর্তী শতকের মানবমন, মনন। উনিশ এখানে বিশের শরীরে ঢুকে পড়েছে অথব বিশ আত্মস্থ করেছে উনিশকে। 
     
    উপন্যাসটির এক প্যারাগ্রাফের ভূমিকা বা 'নান্দী' শিরোনামের লেখাটিতে লেখক এই মন্তব্যটি করেছেন। বিশ শতকের বাঙালী জীবন উনিশ শতক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অথব সেই সময়ের জের টেনে চলা, ইতিহাস বা সমাজতত্ত্বের সাথে পরিচিত থাকার ফলে এসবই আমাদের জানা। কিন্তু উনিশ শতকের মধ্যে বিশ শতকের ঢুকে থাকা, বিশ শতকে যা ঘটবে উনিশ শতকেই তার ইঙ্গিত পাওয়া, প্রথাগত ইতিহাসচেতনায় সেরকম ঘটেনা বলেই মনে হয়। কিন্তু উপন্যাসের বক্রতলে, যেখানে অনেক কিছুই ঘটিয়ে তোলা যায়, উপন্যাসের সেই কাল্পনিক স্পেসে এরকম ঘটে যেতে পারে; কিন্তু সেই ঘটিয়ে তোলাটি নির্ভর করে ঔপন্যাসিকের দৃষ্টির ওপরে, যা প্রথাগত উপন্যাসে অথবা প্রথাগত ঐতিহাসিক উপন্যাসে সাধারণতঃ ঘটে না। লেখকের প্রশংসা প্রাপ্য যে উপন্যসটিতে ইতিহাসের প্রক্ষেপ ঘটালেও তথাকথিত রিয়ালিস্ট উপন্যাস না লিখে উপন্যাস নিয়ে নিজের ধারণার প্রক্ষেপ ঘটিয়ে অ-বাস্তববাদী হয়ত বা অনৈতিহাসিকও, সেইরকম একটি উপন্যাস লিখেছেন। উনিশ শতকের মধ্যে বিশ শতককে ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজটি করা হয়েছে রাজারামের স্বপ্নগুলির মাধ্যমে; যেমন রাজারাম একটি স্বপ্নে দেখে অজানা এক শহরে হেঁটে যাচ্ছে অনেক মানুষ, হাঁটার সময়ে তাদের কানে হাত, কিছু যেন একটা ধরে আছে এবং তারা কথা বলছে, তাদের পায়ের ছাপের সাথে রক্ত লাগা, অথবা আর একটি স্বপ্নে অসে একটি ছেলে কানে কিছু একটা লাগিয়ে শুয়ে আছে, সামনে বসে আছে একটি কুকুর, সেই কুকুরের জিভ থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে । উহ্য থাকে বস্তুগুলির নামকরণ যা কানে ধরা বা কানে লাগানো, মোবাইল ফোন ও  হেডফোন, কুকুরটি রেকর্ড কোম্পানীর সেই কুকুরটি যেন। রাজারাম স্বপ্নে এও দেখে একটি মানুষকে হত্যা করে তার রক্তমাখা ভাত মানুষটির মাকে জোর করে খাওয়ানোর দৃশ্য। উনিশ শতকের রাজারাম স্বপ্নে শুধু বিশ শতকের বিজ্ঞানের কৃৎকৌশলই দেখে না, বিশ শতকের ভায়োলেন্স যা আমরা চিনে নিতে পারি, তাও রাজারামের স্বপ্নে ছায়া ফেলে ! স্বাভাবিক, বাস্তববাদী উপন্যাসের চরিত্রর  বিশ শতকের দ্রব্যবস্তুর সম্বন্ধে ধারণা করতে পারা সম্ভব নয়, কিন্তু উনিশ ও বিশ শতকের মধ্যে যোগ দেখাতে গেলে, সময়ের বৃত্তাকার গতির সাথেও যা সম্পর্কিত, সেই ইঙ্গিত রাখতে গেলে, বিজ্ঞান বা হিংসা নিয়ে লেখকের বক্তব্য উপন্যাসের মধ্যে মিশিয়ে দিতে চাইলে, বোধ করি স্বপ্নের ​​​​​​​ব্যবহার ​​​​​​​একটি দরকারী কৃৎকৌশল ! 
     
    ইতিহাসের প্রক্ষেপ 
     
    তবে ইতিহাস নিয়ে লেখা হলেই উপন্যাস ঐতিহাসিক হয় না। ইতিহাস এখানে এক মাধ্যম মাত্র যা বলতে চেষ্টা করছে আমাদেরই সময়ের কারও না কারও কথা, কারও  না কারও না বলা কথা। 
     
    উপন্যাসটির নান্দী অংশে এইরকম দুইটি বাক্যও লেখা হয়েছে। উনিশ শতক এই উপন্যাসের প্রেক্ষিত হলেও - উপন্যাসটি শেষ হচ্ছে ১৮৫৭ সালে, সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, কলকাতার সাহেব পাড়ায় প্রথম গ্যাসের বাতি জ্বলে উঠছে - লেখাটি ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়। ঐতিহাসিক উপন্যাসের চেনা চিহ্নগুলি যদিও এই উপন্যাস ব্যবহার করে, যথা বাস্তবের চরিত্র (দ্বারকানাথ ঠাকুর), কাল্পনিক চরিত্র (রাজারাম দেব ) অথবা সমসময়ের ঘটনাপ্রসঙ্গ (সিপাহী বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ ) কিন্তু ইতিহাসের ঘটনা সম্বন্ধে কিছু জানানো বা তার বর্ণনা দেওয়া এই উপন্যাসের উদ্দেশ্য নয়। রাজারাম হয়ত বা প্রায় আউটসাইডার একটি চরিত্র, যে তার সময়ের মধ্যে আঁটকে গেছে, সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি তার অন্বিষ্ট, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতাই তার ভবিতব্য, রাজারাম চরিত্রটি এইরকমই, সে নায়কও নয়, প্রতিনায়কও নয়, সমাজ  - সংসারের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণতঃ আউটসাইডারও নয়, সে এমন একজন যে দুইদিকের মাঝখানে রয়ে যাবে। তার এই মাঝখানে রয়ে যাওয়া একাধিকভাবে উপন্যাসটিতে এসেছে; উপন্যাসের শুরুতে ঘুমিয়ে না পড়তে চেয়ে, সজাগ থাকতে চেয়েও  তন্দ্রার মধ্যে ঢলে পড়া যেমন তার চরিত্র নির্দেশ করে তেমনি আর এক সময়ে দাবার ছকের মতো নকশা পাথরের মাটিতে তার দুই হাত ও দুই পা ছড়িয়ে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে পড়া, যখন তার মাথা কালো আর সাদার সীমান্ত ছুঁয়ে, যখন দুচোখের কোণ থেকে বেরিয়ে আসা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে নামছিল মাটিতে এবং যখন তার পুরুষাঙ্গ কঠিন হয়ে উঠেছিল, এইসবের বিবরণও তার মনোজগতকে খ্লে ধরে। বোধ করি, কোন সমাজতাত্বিক বা ইতিহাসমাফিক বর্ণনা না দিয়ে, এইসব দৃশ্য বা ইমেজের মাধ্যমে ঔপন্যাসিক কলোনিআমলের মধ্যে এক নেটিভের আকাঙ্খা ও তার ব্যর্থতা এবং সেই সময়ের মধ্যে ঝুলে থাকার অনুষঙ্গ রেখে যাচ্ছেন। 
     
     
    (চলবে)
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৭৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিএস | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০১:৪৬504244
  • । 
  • b | 14.139.196.16 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:৩৩504251
  • প্রকাশক , দাম এসবও  দিন। 
  • সিএস  | 103.99.156.98 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৫৬504252
  • প্রথমে জুড়ে দিলাম।
     
     
  • ইন্দ্রাণী | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৪০512227
  • আর লিখবেন না সি এস?
     
    পড়েছি।
    দ্য মাস্টার অ্যাণ্ড মার্গারিটার কথা এতই মনে হয়েছে...
    আপনার লেখা শেষ হলে, তবেই লিখব। 
  • | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫১512228
  • আম্মো পড়েছি। বেশ অনেকদিন হয়ে গেল অবশ্য। 
    সিএস তো বইমেলায় বলল ওর আর এইটা লিখতে ইচ্ছে করছে না। তুই লেখ বরং। 
     
  • ইন্দ্রাণী | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:১৬512236
  • আমি আর কী লিখব? সি এসের লেখা পড়ব বলে অপেক্ষা করছি।
    অতীব মেধাবী উপন্যাসটি। প্রচুর রেফারেন্স। পড়তে গিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। পড়তেও হয়েছে। সেই সব অভিজ্ঞতা লিখতে গেলে অনেক বড় একটা লেখা হয়ে যাবে। কে কী ভাবে পড়লেন উপন্যাসটি - এইটা জানার আগ্রহ।

    নান্দী তে লেখক স্পষ্টই লিখেছেন, পুরাণপুরুষ ক্রিস্টোফার মার্লোর কাছে কৃতজ্ঞ, বুলগাকভ, টমাস ও ক্লাউস মানের কাছে ঋণী। লিখেছেন, 'সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা অন্যের ভাষা, আবেগ ধার করে- সচেতনে, অবচেতনে-চলে এসেছি শতাব্দর পর শতাব্দ। কাল যা পালটে দিয়েছে তা অভিব্যক্তি, প্রয়োগের রকম। বাকিটা অপরিবর্তিত।"
    নান্দীতে বুলগাকভের উল্লেখ না থাকলেও, পুরাণপুরুষ পাঠে মাস্টার অ্যাণ্ড মার্গারিটা মনে পড়বেই। ভাবছিলাম, ঐ যে লাইনটি "কাল যা পালটে দিয়েছে তা অভিব্যক্তি, প্রয়োগের রকম। বাকিটা অপরিবর্তিত" - এইটিকে হাইপোথিসিস ধরে নিয়ে বুলগাকভকে নতুন প্রয়োগে, নতুন অভিব্যক্তিতে লেখা হল এই উপন্যাসে?
    আরো অনেক কিছু জানার ছিল।
    সি এস, দ, আর কেউ লিখলে প্রশ্ন/ টিপ্পনি/ ঝগড়া করা যেতে পারে।
  • সিএস | 49.37.32.48 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৫৮512245
  • ইন্দ্রাণী এই লেখাটা তুলেছেন !

    হ্যাঁ, তখন খেই হারিয়ে গেছিল, লেখা হয়নি আর, এখন আবার বইটা হাতের কাছে নেই, তখন সাথে সাথেই থাকত।

    ইন্দ্রাণী যেমন লিখেছেন, মেধাবী উপন্যাস, হ্যাঁ , ঠিকই। যাকে বলে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি, সেই জিনিস ছড়িয়ে আছে উপন্যাসটিতে, অজস্র জায়গায়। মেফিস্টো মিথ, ক্লাউজ মান, কার্নিভাল ইত্যাদি। হ্যামলেটের দুই সঙ্গীর কথাও তো ছিল ?

    কার্নিভাল এলে যেন নবারুণও এসে পড়তে পারেন; আমি যখন এই লেখাটা লিখব ভাবলাম , প্রথমে নাম দেব ভেবেছিলাম 'উনিশ শতকের হারবার্ট' ! মনে হয়েছিল হারবার্টের সাথে রাজারামের আত্মীয়তা আছে, ঐ লেখাটি না লেখা হলে এই লেখাটিও হয়ত হতো না !

    কিন্তু এত সব রেফারেন্স ইত্যাদি পেরিয়ে বা ব্যবহার করে লেখাটি প্রভূত এন্টারটেনিং, এর কারণ মনে হয় রাজারাম চরিত্রটি তৈরী করতে পারার মুন্সিয়ানার জন্য।
     
     
  • ইন্দ্রাণী | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২৬512250
  • হ্যাঁ সি এস,
    রোজেনক্রান্টজ আর গিলডেনস্টার্ন। হ্যামলেটের দুই অনুচর। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি। দেখে নিতে হয়েছিল এঁরা কারা। আবার হ্যামলেটে চোখ বুলাতে হল। সেই সূত্রে জানলাম, রোজেনক্রান্টজ অ্যান্ড গিলডেনস্টার্ন আর ডেড নামে একটি নাটকও আছে। আপনি যে ইন্টারটেক্স্চুয়ালিটির কথা লিখলেন, এই ব্যাপারটা এত আছে... ফলে ক্ষীণতনু লেখা বটে কিন্তু পড়তে অনেক সময় লাগে , আপাত আখ্যানের অনেক গভীরে যেতে হয় পাঠককে- কারণ একই সঙ্গে পাঠক শেকসপীয়ার পড়ছেন, মান পড়ছেন, বুলগাকভ তো অবশ্যই এবং গ্যেটেকে স্মরণ করছেন।
    নবারুণের কথা মনে হয়েছে বারবার। কার্নিভাল শুধু নয়; নবারুণের দণ্ডবায়সকে মনে পড়ে হাড়গিলে বনবিহারীর আবির্ভাবে, 'রাবণের দশমুণ্ড" র ফিরে ফিরে আসা এবং সর্বোপরি এই আখ্যানের যাবতীয় বিষাদ হারবার্টকে মনে করায়।

    আপনি আরো লিখুন বইটি নিয়ে। সকল পাঠককেই লিখতে বলি।বি, দ- যাঁদের এই টইতে দেখছি-লিখুন।
    আর জানতে ইচ্ছে করছে, সায়ন্তন চৌধুরীর বক্তব্য।
    সায়মের ইণ্টারটেক্স্চুয়ালিটি সায়ন্তন চৌধুরীকে মনে করিয়েছে।
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:৪৪512253
  • এই বইটা পড়েই মনে হয়েছিল অদূর ভবিষ্যতে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বা বাংলায় পাঠক্রমে পড়ানো হবে। সায়ম নিজেও সাহিত্যের কৃতী ছাত্র এবং কর্মসূত্রে দেশ পত্রিকার সাথে যুক্ত। সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিতে নয় , লিটারারি থিওরির আলোয় খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক টেক্সট পড়ার অভিজ্ঞতা তিনি পুরোদমে কাজে লাগিয়েছেন। এছাড়াও তিনি জানেন এরকম ইন্টারটেক্সচুয়াল লেখা বাংলায় বেশি লেখা হয়নি, তাই  সেদিকে আলো ফেলা দরকার ছিল।  
     
    নবারুণ , বুলগাকভ , মান এরা ছাড়াও যার প্রভাব সবথেকে বেশি এই লেখায় আছে  , তিনি কমলকুমার। 
  • হজবরল | 185.246.188.67 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০২:১৩512283
  • ঘুরতে ঘুরতে সায়ম বাবুর একটা ইন্টারভিউ পেলাম, লেখাটা বুঝতে কাজে দেবে  -
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন