এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ  শনিবারবেলা

  • লেবারের বিদেশ যাত্রা - ৬

    মঞ্জীরা সাহা
    ধারাবাহিক | সমাজ | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ২৩২৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)

  • খন্যান থেকে ইরান (তৃতীয় পর্ব)

    মইনুদ্দিনের হাতে টাকা প্রায় শেষ। পাসপোর্ট নেই। বললেও ফেরত পাবে না পাসপোর্ট কোম্পানির কাছ থেকে। কিন্তু হাতে ছিল অন্য কিছু। স্মার্ট ফোন। আর তাতে নেট কানেকশন।
    সারাদিনের ওয়ার্কশপের কাজ চলছে। ওরা সবাই প্রতিদিন বাঁচার পথ খুঁজছে অন্ধকারের ভেতর। মইনুদ্দিনের মাথায় হঠাৎ বুদ্ধি খেলে গেল। মনে পড়ে গেল একখানা নাম। কলকাতায় তাঁর অফিস। রুবি হাসপাতালের কাছে। যাঁর সাথে মইনুদ্দিনের কোনও একটা অন্য কারণে পরিচয় হয়েছিল সামান্য। মনে পড়ে গেল তাঁর কার্যকলাপ। নেট অন করে শুরু সার্চ। গুগল সার্চ করতে করতে পেয়ে গেল একটা অ্যাপের নাম। প্লে-স্টোরে পৌঁছলো। এন.এ.টি.সি। ন্যাশনাল অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং কমিটি। ন্যাশনাল অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং কমিটির প্রধানের নামখানাই ওর পরিচিত। যাঁর সাথে সামান্য আলাপ হয়েছিল কখনও অন্য একটা কারণে।

    ইন্সটল বাটনে প্রেস। ওপেন। খুলে গেল অ্যাপ। অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং কমিটির লোগো। নিচে লেখা ‘হ্যাভিং ট্রাবল’। তার নিচে মেসেজ বক্স। সেই সাদা বাক্সে লেখা ‘এন্টার ইওর মেসেজ’। সাদা বক্সে পৌঁছে গেল মইনুদ্দিনের আঙুল। লিখে ফেলল। ওরা কোথায় কীভাবে আটকে আছে। ব্যস! সাবমিট।

    দুপুর শেষ হয়ে বিকেল-সন্ধে-রাত। ছ’ঘণ্টা পার। রাত এগারোটা। ওয়ার্কশপের কাজ সেরে অনেকক্ষণ আগে ফিরেছে ওরা। রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ। ঘরের লাইট অফ। বিচের পাশের লাইট এসে ঢুকছে কাচের জানালাখানা দিয়ে। ঘুম নেই ভালোমত অনেকদিন ধরেই। আরও একটা অনিশ্চিত দিনের অপেক্ষা। আরও কিছুটা বিনা-মজুরিতে দক্ষতা দিয়ে কারিগরি দেখানোর অপেক্ষা। বাড়ির মানুষের রোগ-ব্যাধি-মৃত্যুর খবর, প্রেমিকার চিন্তা, বৌ-বাচ্চার চিন্তা, অন্য সব চিন্তা গিয়ে, কেবল নিজের জন্য দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাথায়। হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠল মইনুদ্দিনের ফোনে। ভারতের ফোন নম্বর। প্লাস নাইন ওয়ান দিয়ে শুরু। কলকাতা থেকে ফোন। ন্যাশনাল অ্যান্টি-ট্র্যাফিকিং কমিটির চেয়ারম্যানের ফোন। নাম জিন্নার আলি। এই নামটাই মনে পড়েছিল মইনুদ্দিনের। সকালবেলা। সেই ব্যক্তির সঙ্গেই রাতের মধ্যে সরাসরি কথা হবে সুদূর ইরানে বসে, এত তাড়াতাড়ি রেসপন্স এসে যাবে ভাবতে পারা যায়নি। ফোনে সামান্য দু’চার কথা । রাত সাড়ে এগারোটা। শুরু হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং। জিন্নার বাবুর পার্সোনাল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মেসেজ আসছে পরপর।

    ক’জন আটকা পড়ে আছে?
    কোথায়? ঠিক কোন অ্যাড্রেসে?
    কোন কাজ?
    কোন কোম্পানি?
    ঠিকানা?
    কবে গেছে?
    কোন এজেন্ট নিয়ে গেছে?
    কার আন্ডারে কোন এজেন্ট?
    মেইন এজেন্ট কে?
    এজেন্টের ভিলেজ? পোস্টঅফিস? থানা?
    নিয়ে গেছে কীভাবে?
    কোন মাস?
    কোন তারিখ?
    কজন ছেলে?
    সবার পাসপোর্টের নম্বর?
    বাবার নাম?
    গ্রামের নাম?
    পোস্ট অফিস?
    থানা?
    জেলা?

    চ্যাটিং চলছে। রাত গভীর হয়ে চলেছে। দূরে পোর্টে মাল নামানো-ওঠানোর কাজ চলছে। কারখানাগুলোয় রাতের ডিউটি চলছে লেবারদের। ফোনের স্ক্রিনে আঙুল দিয়ে টাচ করে একের পর এক উত্তর দিয়ে চলেছে মইনুদ্দিন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে চলেছে। রাত পার হয়ে যাচ্ছে। মইনুদ্দিনের চোখ সজাগ। সারা দিনের একটানা খাটুনির পর একফোঁটাও ঘুম নেই দু’চোখে। সব উত্তর ঠিকঠাক লিখে চলেছে। উল্টোদিকের প্রশ্নকর্তার চোখেও ঘুম আসার ব্যাপার নেই। যত ডিটেইল জানা দরকার, সব প্রশ্ন টাইপ করে চলেছে সারা রাত ধরে। ভোর চারটে বেজে গেল। উপসাগরের পারে, ইরানের আকাশে কতটুকু আলো ফুটেছিল জানা নেই তবে মইনুদ্দিনের মনে আশার আলো ফুটতে শুরু করেছিল।

    পরদিন সকাল হল কলকাতায়। ইমেইল গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। একটা ইমেইল মিনিস্ট্রি অফ এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সে। আরও একটা, প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরে। ইমেইলগুলো করলেন জিন্নার আলি। আবার রাত কাটল। পরদিন সকাল। ফোন এল মইনুদ্দিনের মোবাইলে। ইরানের ইন্ডিয়ান এম্বাসি থেকে ফোন। খবর ততক্ষণে পৌঁছে গেছে কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে সোজা ইরান। ইরানের তেহেরান থেকে ফোনটা এসেছিল। ইরানের চাবাহারে ইন্ডিয়ান এম্বাসি নেই। আছে তেহেরানে। সেই বহুদূরের শহর।


    চলছে মিটিং

    সেদিনই সন্ধ্যাবেলা। চাবাহারের সোনার কারখানা-ঘরের ভেতর তখন অনেক মানুষ। তেহেরানের ইন্ডিয়ান এম্বাসি থেকে একটা টিম সোজাসুজি এসে হাজির চাবাহারের সোনার কারখানায়। ইন্ডিয়ান এম্বাসির পাঁচজনের টিম তৈরি হয়েছে ওই ছেলেদের রেসকিউ করার জন্য। অফিসার এ কে সিং রয়েছেন তাঁদের মধ্যে। লোকাল পুলিশের টিম সঙ্গে। কোম্পানির লোকজন, ম্যানেজার আর এই সোনার কারিগরেরা তখন হল-ঘরের ভেতর। দীর্ঘ মিটিং চলছে। ইন্ডিয়ান এম্বাসির কর্মকর্তারা কোম্পানির ম্যানেজার-ওয়ার্কারদের সঙ্গে মিটিং করছেন। মিটিং-এ ইন্ডিয়ান এম্বাসির কর্মকর্তাদের বক্তব্য স্পষ্ট। যারা থাকতে চাইবে তাদের রাখা হোক। আর যারা ফিরে যেতে চাইছে, খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করতে হবে দেশে পাঠানোর। এই কয়েক মাসের সব বকেয়া বেতন ক্লিয়ার করতে হবে ওয়ার্কারদের। চাপ দিল কোম্পানিকে। ভাষাগুলো ফার্সিতে হলেও বুঝে নিতে পারছিল মইনুদ্দিন। আর অন্য একটা অদ্ভুত অনুভূতি। খানিক বিস্ময়। অনেকটা আনন্দ। বিদেশের এই কারখানা অঞ্চলে আটকে থাকা কয়েকজন লেবার ছেলের জন্য সুদূর তেহেরান থেকে চলে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মানুষ। মাত্র দুদিনের মাথায় ঘটে গেছে এ অবিশ্বাস্য কাণ্ড। সেই সারাফা বাজারে গালাগাল খাওয়া কারিগর। বিদেশের ওয়ার্কশপে রোজ রোজ প্রাণে মারার হুমকি খাওয়া কারিগর। যাকে ইচ্ছে করলেই বিনা পয়সায় কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। যাকে শুধুমাত্র অল্প কিছু খেতে দিয়ে অনেক কাজ করানো যায়। যাকে ইচ্ছে করলেই ধরে মারা যায়। মাটিতে পুঁতে ফেলা যায়। বন্দি করে রাখা যায়। ট্রেনিং নেওয়ার সময়ে মালিকের বাড়ির এঁটো বাসন মাজানো যায়। মোছানো যায় মালিকের বেডরুম ড্রইং রুম কিচেন। বাড়ির আবর্জনা বহন করানো যায়। পায়খানা-বাথরুম পরিষ্কার করানো যায়। সেরকম এক কারিগরের প্রাণের দাম যে এতটা হতে পারে, ভাবতে পারছে না নিজেই। জন্ম থেকে শৈশব-কৈশোর-যৌবনের এতগুলো বছর পার করে হঠাৎ দুহাজার আঠারোর অক্টোবর মাসের এই দিনটায় এসে যেন নিজের কাছেই নিজের প্রাণের দাম বেড়ে গেল মইনুদ্দিনের। কীরকম অবিশ্বাস্য লাগছে। বাইরে হাসি নেই। মুখটা গম্ভীর। ভেতরে কীরকম একটা রোমাঞ্চ। মন দিয়ে শুনে চলেছে কথাগুলো। দু ঘণ্টা চলল মিটিং। মালিকপক্ষ মেনে নিল সব।

    রাত ন’টা-সোয়া নটা। মিটিং শেষ। ইন্ডিয়ান এম্বাসির অফিসারেরা আবার রওনা হয়ে গেলেন তেহেরান শহরের দিকে।

    ওয়ার্কারেরা ফিরে এল সেই হলরুমে। ডিনার কমপ্লিট। ঘরের লাইট অফ। শুয়ে আছে যে যার বেডে। হাতে মোবাইল। বাইরে জাহাজগুলোর ওখানে ব্যস্ততা চলছে কোথাও। গুডস রেডি হচ্ছে কোথাও। আর হলঘরের ভেতর! ওই এগারোজন পাশাপাশি সোনার কারিগরের ভেতর কী চলছে? বোঝা যাচ্ছে সবাই বেশ কিছুটা নিশ্চিন্ত। এই বিনা-মজুরির চাকরি, বন্দিদশা, ওই হুমকি – এ সব কিছু থেকে এবার মুক্তি। চোখা বা বোঁচা ওই সব ক’টা নাক দিয়ে বুকের ভেতরগুলো হাল্কা হয়ে নিঃশ্বাস বেরোচ্ছে ক্রমাগত। সত্যিই তবে ফেরা হবে। ডেস্টিনেশন এবার সেই নিজের বাড়ি। ঠাসাঠাসি করে থাকার ঘর। কলতলা। পলি মাখা নদী। কাদাজল। রাস্তার জমাজল। বন্ধুবান্ধবের আড্ডার ঠেক। চায়ের দোকান। আত্মীয় বাড়ি, বিয়ে শাদির বাড়ি, শ্রাদ্ধ বাড়ি, শনি পূজা, শীতলা পূজা, ইদের নিমন্ত্রণ। আর কেউ হুমকি দিতে পারবে না। ফেলে আসা লাভারের সঙ্গে আবার দেখা। এই এতদিনের বিচ্ছেদে ভেঙে যাওয়া প্রেমকে আবার একবার জোড়া লাগানোর চেষ্টা চলবে। নয়তো নতুন প্রেম। এ-পাড়া সে-পাড়ার নতুন কোনও প্রেমিকার মুখ। যে টাকার জন্য এত দূর আসা, এত দিনের এত পরিশ্রম, এত ধারকর্জ - এবার তবে কিছু আসবে হাতে। ঘুম আসছে না কিছুতেই।

    যে কারণে রাত এগারোটার দিকে ওই চোখগুলোয় ঘুম আসছিল না, তার এক ঘণ্টা পর অন্য কারণে ঘুম উড়ে গেল সকলের। সে কারণটা একেবারে উল্টো।

    রাত সাড়ে এগারোটা। প্রচণ্ড জোর আওয়াজ আসছে নিচ থেকে। বিল্ডিং-এর একেবারে নিচে লোহার মেইন গেট। ওই গেটে প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে কারা যেন! ঝন ঝন - খট খট - ধড়াম ধড়াম। নানারকমের আওয়াজ হয়ে চলেছে গেটে। সঙ্গে চিৎকার। শোনা যাচ্ছে না ভালো মত। কী যেন বলে চলেছে উগ্র চিৎকারে। হলঘরের ভেতর আর কোনও কথার শব্দ নেই। যা শব্দ, এখন কেবল বিল্ডিং-এর নিচ থেকে। মেইন দরজার বাইরে কি কথাবার্তা চলছে - কান পেতে শুনছে ওরা। কথাগুলো ফার্সিতে। হুমকি দিয়ে চলেছে। বোঝা যাচ্ছে, ওরা সেই কোম্পানির মালিকপক্ষের লোক। ওদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ওদের সেই ফার্সি কথাগুলো বাংলা করলে হয়, সব কটাকে মেরে ফেলব। পুঁতে দেব এখানেই। কেউ ফিরতে পারবে না দেশে। দরজা খোল…। কথাগুলো হয়ে চলেছে অনেকগুলো কন্ঠস্বরে। এবার সঙ্গে অন্য একটা আওয়াজ। বুকের ভেতরগুলো কেঁপে উঠলো। ফাঁকা ফায়ারিং হচ্ছে নীচে। কেউ নামছে না ওরা নিচে। গেট ভেতর থেকে লক করা। ওরা বুঝতে পারছে লক একবার খুলে দিলে আর উপায় নেই। আজ রাতেই মরতে হবে সবার। কেউ খোলেনি লক। কিন্তু ওই লোহার গেট কতক্ষণই বা বন্ধ করে রাখা যাবে? ভেঙে ফেলার চান্স আছে। বেরোতে তো হবেই কখনও না কখনও। বেরোলে যে কী হবে সেটা আর ভাবতে পারছে না ওরা। বাইরে চলল চিৎকার।

    রাত প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই। চিৎকার তখনও থামেনি। নিচে দাঁড়িয়ে আছে এখনও ওভাবেই। হঠাৎ মনে হল একজনকে জানানো যায়। মইনুদ্দিন ফোনটা তুলে নিল হাতে। জিন্নার আলির হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে গিয়ে নীচে ডানপাশে ছোট্ট মাইক্রোফোনের ছবি। প্রেস। গলাটা কাঁপছে ওর। আমরা ফেঁসে গেলাম স্যার। আমাদের প্রাণে মেরে দেবে আজ রাতেই।

    ইরানের চাবাহার থেকে কলকাতার দূরত্ব যতটাই হোক, জিন্নারবাবু দেশ পেরিয়ে, এত হাজার কিলোমিটার দূর থেকে, তৎক্ষণাৎ যে স্টেপ নিলেন - তাতে সে রাতে মৃত্যুফাঁদে পড়া সোনার কারিগরেরা বেঁচে গেল।

    রাত আড়াইটা। লোকাল পুলিশের টিম হাজির ওদের হলঘরের নিচে। নীচের চিৎকার-ফায়ারিং থেমে গেল। বুক দুরদুর চলতে লাগল। পুলিশ পাহারা দিচ্ছে নিচে। কোনওমতে রাতটা কাটছে ওদের।

    পরদিন। ইন্ডিয়ান এম্বাসির টিম এসে হাজির। আবার তেহেরান থেকে সেই টিম - আরও অনেকে। লোকাল পুলিশ হাজির। এবার কড়া স্টেপ নিল পুলিশ। পুলিশফোর্স সিল করে দিল সেই ওয়ার্কশপ-কারখানা। সোনার কাজ-কারবার দিল সব বন্ধ করে। কোম্পানিকে চাপ এবার অনেক বেশি। দুদিন মাত্র টাইম দিল মালিকপক্ষকে। সবাইকে নিজের দেশে ফিরিয়ে দিতে হবে দুদিনের ভেতর। সব বেতন মিটিয়ে দিতে হবে পুরোপুরি। ফ্লাইটের খরচ, যাত্রাপথের সব খরচ - দিতে হবে মালিকপক্ষকে।


    মেনুতে ডাল-আলু ভর্তা-ভাত

    শুধু খোলা রইল ওদের থাকার ঘরখানা। শুধু ডাল-ভাত। কখনও আলু ভর্তা-ভাত। খাবার যা - যতটুকু আসছে, সেটা খেয়েই ওই হল ঘরের ভেতর চলছে অপেক্ষা।

    আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে হলঘরখানা। ফিলিপিন্সের কারিগরেরা বেরিয়ে গেছে আগেই। পাকিস্তানের কারিগররাও বেরিয়ে গেছে। ওরা কাজ খুঁজতে চলে গেছে অন্য কোথাও।
    দুদিনের একদিন পার হল। হঠাৎ ডাক এল। ওদের এগারোজনের নয়। বাকি কয়েকজন পশ্চিমবঙ্গের ছেলের। আজকেই ফ্লাইট। এক্ষুনি ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে রেডি হয়ে নিতে হবে তাদের। স্যালারি এখনও ডিউ সবার। বলা হল তেহেরানে পৌঁছে মিটিয়ে দেবে স্যালারি। ওদের যেতে হবে প্রথমে ট্যাক্সি করে চাবাহার বাস স্ট্যান্ড। তারপর আবার সেই সাতাশ ঘণ্টার বাসের সফর সেরে তেহেরান থেকে ইন্ডিয়ার ফ্লাইট। ফ্লাইটের টিকিট ওদের দিল্লি অবধি। কথা হল দিল্লি থেকে সেই টিম কলকাতা ফিরবে ফ্লাইটে নয়। ট্রেনে।

    এই যারা রওনা হয়ে যাচ্ছে - এরাই সেই উগ্র মেজাজের ছেলেরা। এদের থামাতে পারেনি কোম্পানির লোক অনেক ভয় দেখিয়েও। ওরা উল্টে কোম্পানির লোকগুলোকে ভয় দেখিয়েছিল পুলিশের। বলেছিল, আমাদের স্যালারি না দিলে আমরা পুলিশের কাছে যাবো। তবে যেতে আর পারেনি।


    তেহেরানের রেস্তোঁরার বিল

    কোম্পানির লোকজন তাড়া দিচ্ছে খুব। এক্ষুনি বেরোতে হবে। ব্যাগ গুছিয়ে রেডি। রওনা দিল ওরা ট্যাক্সি চেপে চাবাহার বাস স্ট্যান্ডের দিকে। সাতাশ ঘণ্টার বাস পার করে যখন তেহেরান গিয়ে পৌঁছলো, হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল যার যার পাসপোর্ট। আর সাথে, চল্লিশ ডলার পঞ্চাশ ডলার। দিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার খরচ। আর বাকি স্যালারির এক ডলারও দিল না ওদের। বলল, দেশে চলে যা। অ্যাকাউন্টে জমা করে দেওয়া হবে। তেহেরান থেকে ফ্লাইটের টাইম হয়ে এসেছে তখন। আর সময় নেই হাতে। এয়ারপোর্টে ঢুকে রিপোর্টিং না করলে ফ্লাইটে চড়া যাবে না আর। টাকা নিয়ে ঝামেলা করার সময় নেই আর ওদের হাতে। এরপর আর বাড়ি ফেরার পথ থাকবে না আর। কোম্পানির লোক যা বলল, মেনে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে রওনা দিল ওরা তেহেরান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দিকে।

    ওই হলঘরে এখন মাত্র সেই এগারোজন। ওয়ার্কশপ সিল হয়ে রয়েছে। কাজ নেই। অপেক্ষা শুধু ফেরার। ওদেরও ফ্লাইটের টিকিট হয়ে গেছে জানিয়ে দিল কোম্পানি। পাসপোর্ট পেল হাতে। এবার আর সাতাশ ঘণ্টার বাস জার্নি করে যেতে হবে না ওদের তেহেরান অবধি। এবার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে কম্পানি। ইন্ডিয়ান এম্বাসি বাধ্য করেছিল কোম্পানিকে এই ছেলেদের পুরো পথ ফ্লাইটে পৌঁছে দিতে।

    তার পরদিন। সকাল আটটা। সবাই রেডি। ব্যাগ-ট্রলি গোছানো কমপ্লিট। জামা-প্যান্ট পরে রেডি এগারোজন কারিগর। হলঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল ওরা শেষবারের মত। চাবাহারের প্রচণ্ড তাপমাত্রা ওদের শরীর ছুঁয়ে, চামড়া জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। ট্যাক্সিস্ট্যান্ড অবধি হাঁটাপথ। ওই উঁচু জায়গাটার থেকে পায়ে হেঁটে নামল। ট্যাক্সি চলল। পিছনে চলে যেতে থাকল সেই বিশাল কাচের জানালা, ওমান উপসাগরের ঢেউ, সোনার ওয়ার্কশপ, শহিদ বেহস্তি বন্দর, সেই আলোক মালায় সজ্জিত ইরানের আকাশ, আর সঙ্গে সেই সব প্রাণনাশের হুমকি।
    ভয় তখনও কাটেনি। স্যালারির এক ডলারও পায়নি হাতে। কথা আছে তেহেরান পৌঁছলে ওদের নিয়ে যাবে কোম্পানির সোনার গয়নার শো-রুমে। সেখানে বকেয়া স্যালারি মিটিয়ে দেওয়া হবে।

    চাবাহারে ছোট্ট একটা এয়ারপোর্ট। একটা মাত্র ফ্লাইট আসে। সেটাই আবার ব্যাক করে। স্টার্ট করল ওদের ফ্লাইট।

    চাবাহারের প্রচণ্ড গরম ছেড়ে এসে এবার নামল ইমাম খোমেনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। তারিখটা - সাতাশে অক্টোবর দু’হাজার আঠারো। তেহেরানের রাস্তায় হাড়-কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কোম্পানির লোক। গতকালও দাঁড়িয়ে ছিল পশ্চিবঙ্গের অন্য লেবারদের জন্য। কিন্তু স্যালারি মিটিয়ে দেয়নি কিচ্ছু। চাবাহারের তীব্র গরম, তেহেরানের তীব্র ঠান্ডা ছেড়ে ওরা ফিরে চলে গেছে নিজের দেশে এতদিনের বকেয়া স্যালারির এক ডলারও না পেয়ে। খবরটা পেয়ে এখনও উদ্বেগ কাটেনি এদের কারুর মন থেকে।
    তেহেরানে ছয় ঘণ্টা স্টে করতে হবে। নিয়ে গেল হোটেলে। হোটেলে এল এবার কোম্পানির লোক। মইনুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন জিন্নার বাবু। কলকাতা থেকে। ওদের সমস্ত গতি-প্রকৃতি তখন ওঁর নজরে। সবার বকেয়া স্যালারি দিল হিসেব করে মইনুদ্দিনের হাতে। কোম্পানির লোকেদের তাড়া ছিল। তাই জনে জনে স্যালারি না দিয়ে সব স্যালারি তুলে দিল একজনের হাতে। এই কয়েকমাসে ওই বন্দিদশায় কীভাবে যেন মইনুদ্দিন হয়ে উঠেছিল আর দশজন অচেনা ছেলেদের সবথেকে বিশ্বাসের মানুষ। দলের লিডার। ওর বুদ্ধির জোরে, ও যেভাবে বলছে, বাকিরা সেভাবেই চলেছে। এবারেও হল তাই। ওর হাতে ডলার ভাগ হল কড়ায়-গন্ডায়। যার যা বকেয়া ছিল, লেখা ছিল খাতায়। ব্যস! স্বস্তি। তেহেরানের বিখ্যাত চা আর নাস্তা রেস্তোরাঁয়।


    আবার পাসপোর্ট হাতে এল

    তেহেরানের উঁচু উঁচু বিল্ডিং, বরফ ঢাকা পাহাড়-পর্বত-এর উপর দিয়ে উড়ল ওদের ফ্লাইট দোহার দিকে। দোহায় দেড় ঘণ্টা স্টে। এবার সোজা কলকাতার ফ্লাইট।

    রাত তিনটে। ফ্লাইটের চাকা ছুঁল দমদম বিমানবন্দরের রানওয়ে। উর্বর মাটির ব-দ্বীপ সমভূমিতে, পাথুরে সিমেন্টে বাঁধানো ফ্লোরে, আবার পা রাখতে পেরেছে ওরা। গত পাঁচ-সাত দিন আগেও জানা ছিলনা আর কখনও ফেরা হবে কিনা গঙ্গার পলিতে তৈরি এই সমভূমির মাটিতে! লাগেজ বার করে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বাইরে। কলকাতার আকাশ তখনও অন্ধকার। এয়ারপোর্টের আলোয় দেখা যাচ্ছে - বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন জিন্নারবাবু নিজে। সবাইকে তুলে নিলেন নিজের গাড়ি আর একটি ভাড়া গাড়িতে। গন্তব্য - বাইপাসের ধারে হোটেল গেটওয়ের পিছনে সানোয়ার মঞ্জিল লজ। জিন্নার বাবু ব্যবস্থা করে রেখেছেন এতদিনের দুঃসাধ্য যাত্রা পার করে আসা এগারোজন লেবারের খানিক বিশ্রামের জন্য দু’খানা ঘর। ফ্রেশ হয়ে ঘণ্টাখানেক ঘুম। ব্রেকফাস্ট। জিন্নার সাহেবের অফিসে অপেক্ষা করছে ওদের জন্য নিউজ চ্যানেলের রিপোর্টারেরা। খবর হল কাগজে কাগজে, চ্যানেলে চ্যানেলে। সাতদিনের মধ্যে ঘটে গেল অবাক করা কাণ্ড। এ খবরের জেরে চারশ-পাঁচশ কেস জমা পড়ল জিন্নার বাবুদের এন.এ.টি.সি অ্যাপে। কাতার-কুয়েত-আরব-ইরাক-ইরান থেকে নানা আটকে পড়া লেবারদের তথ্যে ভরে যেতে থাকল জিন্নার বাবুর ডায়েরি। চাপা পড়ে থাকা লেবারদের গল্পগুলো আসতে থাকল সামনে।

    গাড়ি চলছে জিন্নার সাহেবের অফিস ছেড়ে, দ্বিতীয় হুগলি সেতু পার করে, জিরাট রোড ধরে, মগরা হয়ে, খন্যানের হরিদাসপুরের দিকে। ক্যালেন্ডারে শরৎ দেখালেও, বর্ষার মেঘ তখনও সরেনি পুরো আকাশ ছেড়ে দিয়ে। গুমোট গরম যায়নি তখনও। সামান্য ভেজা ভেজা হাওয়া লাগছে পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের ছেলেটির গায়ে। গলার ভাঁজে ঘাম জমে যাচ্ছে মাঝেমাঝেই। আবার শুকিয়ে যাচ্ছে কলাগাছ, আমগাছ, বাঁশঝাড়, ভেজা কাশফুলের শরীর দুলিয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে…


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ২৩২৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ramit Chatterjee | ১৪ আগস্ট ২০২১ ১২:৪৪496753
  • আপনার লেখায় এই বেদনাময় অভিজ্ঞতাও হয়ে উঠেছে রোমাঞ্চকর থ্রিলার। শেষ পর্বের  অপেক্ষায় ছিলাম।  ভারত সরকারের লোকজন ঠিক সময়ে স্টেপ  নিতে পাারাায় এত প্রাণ  বাঁচল তবু।  

  • Sk Moinuddin | 2401:4900:122b:d8e4:1:2:9c77:8ca9 | ১৪ আগস্ট ২০২১ ১৫:৩৪496759
  • খুব ভালো হয়েছে ম্যাডাম , আপনাদের মত মানুষ সমাজ এর প্রতিটা মানুষের পাশে থাকুন । 

  • Sk Moinuddin | 2401:4900:122b:d8e4:1:2:9c77:8ca9 | ১৪ আগস্ট ২০২১ ১৫:৩৪496758
  • খুব ভালো হয়েছে ম্যাডাম , আপনাদের মত মানুষ সমাজ এর প্রতিটা মানুষের পাশে থাকুন । 

  • | ২১ আগস্ট ২০২১ ১৯:৫৩496976
  • পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিৎ এই অ্যাপটির প্রচার করা। অনবরত গ্রাম মফস্বল থেকে লোকে  কাজের প্রয়োজনে বেরোচ্ছে আর পাচার হয়ে যাচ্ছে। 


    ইন্ডিয়ান এম্ব্যাসি যে মাঝেসাঝে কাজের কাজও করে সে টা জেনেই ভাল লাগছে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন