এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • হারিয়ে যাওয়া কোলকাতার গল্পঃ (১৯৫০-৬০) ১০ম পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৩ জুলাই ২০২১ | ২২৬৭ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
    আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আকাশে

    সত্যি কথা, পার্কসার্কাসের ওই ১/সি সার্কাস মার্কেট প্লেসের তিন কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট, যার ভেতরে গাদাগাদি করে আমরা অন্ততঃ আঠেরো জন থাকি, তাতে চলতে ফিরতে কারও না কারও গায়ে ধাক্কা লাগার কথা। লাগত না, তার দুটো কারণ। এক, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের সংখ্যা কমতে থাকত। সবাই এক এক করে স্কুল-কলেজে বা অফিস-কাচারিতে, একেবারে ‘যাও সবে নিজ নিজ কাজে’। মা-কাকিমারা ব্যস্ত রান্নাঘরে, আর আমরা ছোটরা চিঁড়ে-মুড়ি-রুটি যা জোটে সাঁটিয়ে সোজা ছাদে। ওই বিশাল ছাদটি যেন ক্লাস এইটে যাদববাবুর পাটিগণিত থেকে তুলে আনা ক্ষেত্রফলের অংক। সেই যে - একটি মাঠের দৈর্ঘ্য প্রস্থ যদি অমুক এবং তমুক হয় এবং তাহার চারিপার্শ্বে অমুক প্রস্থের একটি রাস্তা বাঁধানো হয় তাহা হইলে ---।

    মনে করুন, আমাদের ছাদ হোল সেই রাস্তা, যা ফ্ল্যাটগুলোর ব্যাক-ইয়ার্ডের শূন্য ক্ষেত্রের বর্ডার, বা শাড়ির পাড়। প্রতি দুটো ফ্ল্যাটের ছাদের পর একটা করে মানুষ সমান পাঁচিল। সেই ছাদের মেজেতে সিমেন্ট দেওয়া নেই, দেখায় যেন ছোট ছোট অগুণতি পোস্তদানা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানলাম এরে কয় জলছাদ, দুরমুশ করছে, সিমেন্ট গুইল্যা ঢালে নাই, পয়সা বাঁচাইছে।

    পাঁচিলের পাশে একটা করে জলের ট্যাংক, বিশবছরে জং ধরে বাতিল। বাচ্চাদের চোখে ওই ট্যাঙ্কের রহস্য সেনাবাহিনীর ট্যাংকের চেয়ে কম নয়; ওই রকম গোলগলা তায় লোহার ঢাকনা, যা খুলতে বেশ বেগ পেতে হয়। আমরা ওর উপরে চড়ে বসে গল্প করি । দরকার পড়লে ওর উপর থেকে একফুট উঁচু বিভাজিকা পাঁচিলে চড়ে বসে মহানন্দে ঠ্যাং দোলাই। বিকেলের দিকে ওদিকের ছাদে মেলা বসে যায়। উল্টোদিকের তিনটে ফ্ল্যাটে ছোটছেলেপুলের সংখ্যা অনেক বেশি। অল্পবয়সে পিতৃহারা কুন্ডুরা পাঁচভাই। তিনজনের মুখভর্তি গুটিবসন্তের দাগ যেন শিল-কাটাওয়ের দল এসে বাটালি দিয়ে শিলনোড়ার গায়ে ছোট ছোট গর্ত খুদে দিয়েছে। ছাদের মেজেতে মাদুর পেতে বসেছেন ওদের মা -- সাদাখোলের শাড়ি, খালি হাত খালি গা, এলোচুল আর শান্ত মুখশ্রী; ঠিক যেন পিসিমার ঘরের দেয়ালে টাঙানো ফ্রেমেবাঁধা সারদা মায়ের ছবি। এবার ওঁর বড়ছেলে বাবলুদা গল্প শোনাচ্ছে — সদ্য দেখে আসা সিনেমার গল্প। উত্তম-সুচিত্রার হিট ছবি ‘পথে হল দেরি’। পাশে মাটিতে বসে শুনছে ওদের গায়েলাগা ফ্ল্যাটের গুপ্তপরিবারের তিনবোন — বাচ্চুদি, ঝর্ণা আর রেখা। আমরা দু’ভাই পাঁচিলের উপর বসে শুনছি, মানে গোগ্রাসে গিলছি। আস্তে আস্তে চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে অন্য এক মায়াবী দুনিয়া।

    আমাদের বাড়িতে সিনেমার গান গাওয়া বারণ, সিনেমার গল্প নিয়ে হইচই করা বখামি। বাচ্চাদের সিনেমা দেখার প্রশ্নই ওঠে না। লালু-ভুলু, জাগৃতি, দেড়শ’ খোকার কান্ড — কিস্যু না । স্কুলের ছাত্র সিনেমা দেখলে বখে যায়। আচ্ছা, ‘বখে’ গেলে কোথায় যায়? ‘বখা’ নামের জায়গাটা কী’রকম দেখতে? যেতে ক’দিন লাগে?

    অল্পদিনের মধ্যে সবার চোখে পড়ল কুণ্ডুদের চতুর্থ সন্তান ক্লাস সেভেনের স্বপন গায়ে গতরে যেমন শক্তসমর্থ তেমনি অসম্ভব দুরন্ত। কাটা ঘুড়ি ধরতে ও অনায়াসে দোতলার ছাদের প্যারাপিট ওয়ালের উপর দিয়ে দৌড়ে এ’ছাদ থেকে ও’ছাদে চলে যায় । নীচের ধাঙড় বাজারের সামনের লোকজন হায়-হায় গেল-গেল রব তোলে। কিন্তু ওর নার্ভ বোধহয় লোহার। ওর আর একটি প্রিয় খেলা ছিল বাজারের সামনের দেহাতি মুটে মজুরদের গামছা ছিনিয়ে নেওয়া।

    ছাত থেকে দোতলা সমান লম্বা সুতোয় গাঁথা একটি সেফটিপিন ওর ভাই ঝুলিয়ে দিত যা সহজে কারও চোখে পড়ত না। ও নীচে নেমে পথচলতি কোন দেহাতি মানুষের কাঁধের গামছায় সেটি নিপুণ হাতে গেঁথে দিত। তারপর সুতোর টানে সেই গামছা হটাৎ উড়ে যেত শূন্যে, হারিয়ে যেত ছাদের ওপাশে। অসহায় মানুষটির ফ্যাল ফ্যাল করে তাকানো দেখে অনেকেই মজা পেত। আমি তখনই বুঝতে পারতাম যে হিন্দিভাষী মানুষদের প্রতি, বিশেষ করে রিকশাওলা, ঠেলাওলা বা ঝাঁকামুটেদের নিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালীদের মানসে একরকম প্রকট তাচ্ছিল্য ও অবহেলার ভাব আছে। বিহারের হলে ওদের অভিধা জুটত খোট্টা, ব্যবসায়ীদের মেড়ো বা মাউড়া। রিকশাওলার সঙ্গে দু’আনার জায়গায় ১৪ নয়া পয়সা চাওয়ায় আমার দিদি একবার রেগে গিয়ে এমন বকাবকি করছিলেন যে ভিড় জমে গেল। ঝামেলার কেন্দ্রে মহিলা বলে সাহায্যের হাত এগিয়ে এল।

    -- কী হয়েছে দিদি?

    -- আর বলবেন না, এইসব রিকশাওলাদের ধরে পুলিশের কাছে হ্যান্ড ওভার করা উচিত।

    আমরা দু’ভাই, ক্লাস থ্রি ও ফোর খিক খিক করে হাসতে থাকি।

    মাঝে মাঝে ছাতে জমে যায় মার্বেল খেলা। বড় বড় কাঁচের গুলি — যার নাম ‘টল’ -- দিয়ে টিপ করে মারতে হয় ছোটগুলোকে। খেলাগুলোর বিচিত্র নাম — গাইপার, সাইপার এইসব। খেলার নিজস্ব লিংগো আছে। যেমন ‘নট নড়ন চড়ন, নট কিস্যু’ বা ‘ওই আঁটে’ ‘আঁটে বুটে’ ইত্যাদি। সামনের বাজার থেকে গুলি খেলতে আসত দু’ভাই — বাছুয়া আর ফেকুয়া। একজন হ্যান্ডসাম হাসিখুশি, অন্যজনের ভুরূ সারাক্ষণ সেকন্ড ব্র্যাকেট। দু’ভাইয়ের মুখেই বসন্তের দাগ। ওই প্রজন্মের বাচ্চাদের মুখে বসন্তের দাগ হামেশাই চোখে পড়ত, আজকাল দেখি নি। রবি ঠাকুরের ‘কোথা হা-হন্ত চিরবসন্ত , আমি বসন্তে মরি’ এখন শুধু অনুপ্রাসের ও যমক অলংকারের উদাহরণ মাত্র।

    ওদের মুখে হিন্দি মেশানো ভাঙা বাংলা বেশ মজার। কিছুদিন পরে জানলাম ওরা বিহার থেকে এসেছে। সামনের বাজারে ঢোকার মুখেই ওদের সাবানের দোকান। সেখানে পাওয়া যায় সাদা রঙের এত্তবড় কামানের গোলার মত ‘জয়লক্ষ্মী’ সাবান যা দিয়ে কাপড় কাচা হয়। কিছুদিন পরেই ওরা বাবা-কাকার সঙ্গে দোকানে বসতে শুরু করল। খেলার সময় নেই, মাঝেমধ্যে আমায় বাজারে কাপড় কাচার সাবান কিনতে পাঠালে আমি অবধারিত ভাবে বাছুয়ার দোকানে যেতাম। একটু হাসি, কেইসা হো !

    কয়েক দশক পরে পার্কসার্কাস বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অকারণে উঁকি মারি। সেই বাছুয়া এখন অনেক লম্বা, জুলপি ও দু’দিনের দাড়িতে সাদার ছোপ; অলস দুপুরে খাটিয়া পেতে পাশের দোকানদারদের সঙ্গে তাস খেলছে। খেলার আবার বয়েস আছে নাকি!

    মুশকিলে পড়েছি। ছাতের জলের ট্যাংকের উপর জমায়েতে স্বপন আমাকে দেখে ছড়া কাটল, যেটা তখন রায়-পদবী হলে বাচ্চাদের শুনতে হত।
    ----
    পালকি চড়ে যায়,
    পালকি থেকে বৌ পালালো হায়, হায়, হায়!

    অন্য বাচ্চারা ধরতাই দেয়। কোন জুতসই জবাব জোটে না। মুখ চুণ করে নিচে নেমে এসে মেজদাকে ধরি। ও মুখে মুখে ছড়া বানাতে ওস্তাদ। এই ব্যাপার? ভাবিস না।

    বীরবিক্রমে আবার ছাদে যাই। সবাই হৈ হৈ করে ওঠে, আবার পালকি নিয়ে ছড়াটা কোরাসে শুরু হয়। আমি মুচকি হাসি।

    স্ব--প--ন কুন্ডু,
    কাকে নিল মুন্ডু,
    চিলে নিল ঠ্যাং,
    ড্যাং--ড্যাঙাড্যাং--ড্যাং!

    আমাদের ছাদে ওঠার আর একটা আকর্ষণ ছিল ঘুড়ি। সরস্বতী পূজোর থেকে শুরু হত ঘুড়ি ওড়া আর শেষ হত শ্রাবণমাসে বিশ্বকর্মা পূজোর দিনে। অনেকগুলো ঘুড়ি উড়ত রাস্তা থেকে, কিন্তু বেশিরভাগই চারপাশের দোতলা বাড়িগুলোর ছাদ থেকে। কাছাকাছি কোন বাড়ি থেকে উড়তে শুরু করেছে একটা ঘুড়ি। বেশি হাওয়া নেই। তাই ছুক ছুক করে সুতো টেনে টেনে ওকে ওড়ানোর চেষ্টা — যেন মা ছোট বাচ্চাকে সাজিয়েগুজিয়ে মুখ মুছিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছে। দেখতে দেখতে খোকন বড় হতে থাকে। ক্রমশঃ ছোট হতে হতে মেঘের রাজ্যে পৌঁছে যায়। এবার ও হাওয়া পেয়ে গেছে, খালি সুতো ছাড়লেই হল। ঘুড়ি মহাশূন্যে প্রায় স্থির। ও কি কোন এরোপ্লেনের নাগাল পাবে?

    কবে অমন ঘুড়ি ওড়াতে পারব? কেউ যদি শিখিয়ে দেয় তো তাকে দিতে পারি না এমন কিছু আছে কি? কে শেখাবে? কেন, মহাদেবদা! আমাদের বাড়ির নতুন কাজের লোক — শ্রীমান মহাদেব চন্দ্র সরকার। বেঁটে খাটো গাঁট্টাগোঁট্টা দাঁতউঁচু মহাদেবদা ছিল রবি ঠাকুরের কবিতার সেই পুরাতন ভৃত্য। একেবারে ‘তিনখানা দিলে একখানা রাখে বাকি কোথা নাহি জানে, একখানা দিলে নিমেষ ফিরিতে তিনখানা করে আনে’ কেস। করপোরেশনের কলের জল দিনে দু’বার করে আসে, আধঘন্টার জন্যে। তখন ফটাফট একের পরে এক বালতি করে রান্না ও বাসন মাজার জল ধরা, পেতলের কলসি করে খাওয়ার জল এবং বাথরুমের চৌবাচ্চায় স্নানের জল ধরা। কিন্তু মহাদেবচন্দ্রের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। সে তখন অখন্ড মনোযোগে আকাশে তিনটে ঘুড়ি কেটে ফেলার পর একটা বড় ঘুড়ির সঙ্গে লড়াইয়ে মত্ত। সেই ঢাউস ঘুড়ি সম্ভবতঃ আট আনা দামের একটা মোমবাত্তি। মহাদেবেরটা সবচেয়ে ছোট বাজার চলতি লসাগু অর্থাৎ চার পয়সার পেটকাট্টি। আমরা দু’ভাই মুগ্ধ বিস্ময়ে একটি ন্যাট বিমানের সঙ্গে এফ-৩২ ফাইটারের অসম লড়াই দেখি।

    আমি মহাদেবদার নির্দেশ মত ঢিলে হাতে লাটাই ধরেছি। মহাদেবদার হাত চলছে। কালো জমিতে লাল দিয়ে আঁকা বিশাল মোমবাত্তি ঘুড়ি অনেক উঁচু থেকে গোঁ গোঁ করে ঝাপটা মেরে নেমে আসছে । মহাদেবদার পেটকাট্টি একেবারে শেষ মুহুর্তে পাশ কাটিয়ে সরে গেল। বড় ঘুড়ি শোঁ শোঁ করে আবার উঁচু আকাশে উঠে গিয়ে পাক খাচ্ছে। যেন অভিজ্ঞ বক্সার সরে গিয়ে রিঙের রোপে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে আর ছক কষছে পরবর্তী আক্রমণের। আবার নেমে আসে মোমবাত্তি বাজপাখির মত, আবার সরে যায় নীলসাদা পেটকাট্টি। আমি বিরক্ত হয়ে যাই। পালাচ্ছে কেন মহাদেবদা? হয়ে যাক একটা এসপার ওস্পার।

    মহাদেবদা এই যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি বোঝায়। মোমবাত্তি বড় ও ভারি ঘুড়ি। চেষ্টা করছে ঘাড়ে পড়বার, তারপর ও ঢিলে খেলবে। ওর ওজনেই আমার ছোট ঘুড়ি ঘাড় মটকে সুতো কেটে জমিতে আছড়ে পড়বে।

    তাহলে? এর কোন কাট নেই?

    আছে, তাই করছি। আমার নতুন চিঁড়ের মাঞ্জা, খুব ধার, ইস্পেশাল। আমাকে আচমকা নীচের থেকে টেনে খেলে ওকে এক চোটে কেটে দিতে হবে। ও পাকা খিলাড়ি, আমার চাল বোঝে। তাই ওর ছোবল ফসকে গেলেই শাঁ শাঁ করে উপরে উঠে যায় ।

    সন্ধ্যে নামছে, আকাশের প্ল্যাটফর্ম থেকে অবশিষ্ট ঘুড়ি গেল নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অসমযুদ্ধে মোমবাত্তির কাছে পেটকাট্টি হেরে গেছে। আমার চোখ জলে ঝাপসা, কেটে যাওয়া সুতো ঠিক করে গোটাতে পারছি না। সুতো অন্য অনেক ছাদের উপর দিয়ে আসছে। আর সেখানে অনেক লোভী হাত ‘হাপ্তা’ ধরে নেবার চেষ্টায় আছে। এত যত্নের তৈরি মাঞ্জা চোট হয়ে যাবে? ও আমার হাত থেকে লাটাই ছিনিয়ে নিয়ে বনবন করে গোটাতে থাকে। তারপর জিভ কাটে! আরে, ছ’টা বেজে গেছে বোধহয়। কলের জল চলে না যায়। একদৌড়ে নীচে নেমে গিয়ে একটু পরেই ফিরে আসে। আমার হাতে লাটাই তুলে দিয়ে বলে — এটা তোমাকে দিলাম।

    মানে?

    কাল সকালে চলে যাচ্ছি। ওরা বলেছেন কাল থেকে না আসতে।

    কারা?

    বড়বৌদি মেজবৌদি দুজনেই। ওদের দোষ নেই। কলের জল চলে যাচ্ছিল। তো ওরাই বালতি কলসি চৌবাচ্চা সব ভরেছেন।

    আমি একদৌড়ে নীচে নেমে সোজা অ্যাপেলেট কোর্ট অর্থাৎ এ’বাড়ির কর্তা আমার দাদুর কাছে পিটিশন দায়ের করি। দাদু, কাইল মহাদেবদা চইল্যা যাইব; মা যাইতে কইছে।

    দাদু আমার জলভরা চোখ দেখে একটু চুপ করে রায় দিলেন — আচ্ছা, মহাদেইব্যারে কও, যাওনের দরকার নাই। কিন্তু এইবারই শ্যাষ, ঠিক কইরা কাম না করলে—

    আমি নাচতে নাচতে সুখবরটা মহাদেবদাকে দিয়ে আসি। সে তখন বিড়ি ধরাতে ব্যস্ত। মনে করিয়ে দিই, এইটাই লাস্ট চান্স!

    কিন্তু অমন লাস্ট চান্স কতবার যে এল আর গেল। ছাতে ওঠার সিঁড়ির বাঁকে একটুখানি আয়তক্ষেত্র, বাঙাল ভাষায় হাঁটুভাঙ্গা, তাতেই মহাদেবদার বিছানা। শীতের এক রাতে ছাদের চিলেকোঠায় ঘুমন্ত এক কাকার ধোঁয়ার চোটে শ্বাসবন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যায়। ব্যাপারটার উৎস খুঁজতে নীচে নামতে গিয়ে দেখে মহাদেবচন্দ্র ঘুমে কাতর, হাতের বিড়ির আগুনে ওর কম্বল পুড়ছে, সেখান থেকে কালো ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে ছাদের দিকে ধাবমান। কিন্তু ও নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। রাগের চোটে কাকা চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে ওকে তুললেন। তারপর বাথরুম থেকে বালতি ভরে ভরে জল এনে সে আগুন নেভানো হল।

    পরের রান্নাঘরে এ নিয়ে তুলকালাম। কাকারা ওকে ঘাড়ধাক্কা দেবার পক্ষে, কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছেন বড়বৌদি। - ঠাকুরপো, এইডা দুর্ঘটনা। এর থেইক্যা শিক্ষা নিয়া আপনেরা যদি বিড়ি-সিগ্রেট খাওয়া ছাড়েন হেই যথেষ্ট।

    মহাদেবদা রয়ে গেল আরও ছ’মাস। মাসে দুটো শনিবার আমার মায়ের থেকে দু’আনা বকশিস চাইত নাইট শো’তে ইংরেজি সিনেমা দেখবে বলে। মা হাসতেন আর ওকে তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া খাইয়ে দিতেন। কারণ বাঙালবাড়িতে রাইতের খাওন এগারোটার আগে হয় না। বারোটার আগে কেউ শুতে যায় না।

    আগে খেয়ে নিলে যদি মাঝরাতে খিদের চোটে ঘুম ভেঙে যায়! তাড়াতাড়ি ডিনার সারা? ওসব নকল সায়েবিয়ানা।

    কিন্তু মহাদেবদা একদিন চলে গেল। বসন্তের দিনে সামনের দত্তদের বাগানে সকাল সন্ধ্যে কোথাও একটা কোকিল লুকিয়ে ডাকে। ওদের বাগানের পেয়ারা ও অন্য গাছে নতুন পাতা উঁকি দেয়। এমন সময় মহাদেবদা গায়েব হয়ে গেল। তিনদিন পরেও যখন কোন খবর নেই কাকারা ভাবতে বসলেন কড়েয়া থানায় যাবেন কি না। কিন্তু ও তো কিছুই নিয়ে যায় নি, বরং ছেঁড়াখোঁড়া বিছানাটাও ফেলে গেছে।

    চতুর্থ দিন মহাদেবদা হাজির, পান খেয়ে ফিকফিক হাসছে। হাতে একটা ছোট সন্দেশের বাক্স। মার হাতে দিয়ে বলল — ন্যান, ধরেন।

    তারপর ঢিপ করে প্রণাম করে বলল – বিয়া করছি।

    সবার বাক্যি হরে গেছে। তখন মহাদেবদা পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকে বলল — কই গো, আস; সবারে পন্নাম কর।

    আড়াল থেকে এগিয়ে এসেছে এক মেয়ে। লজ্জা ও ভয়ে কাপড়ের পুঁটলি হয়ে আছে। তারপর শুরু হোল ঢিপ ঢিপ করে প্রণামের পালা। বুড়াবাবু, কর্তামা কেউ বাদ পড়লেন না। মা বাক্স খুলে একটা পুরনো কিন্তু ভাল জাতের শাড়ি বের কোরে নতুন বৌয়ের হাতে দিল। জানা গেল মহাদেবচন্দ্র খিদিরপুর ডকের দিকে ভাল কাজ জোগাড় করেছে। খাটুনি আছে — খাটতে ও কবে ভয় পায় — তবে এককামরার ভাড়ার ঘরে বৌ নিয়ে খেয়ে পরে থাকা যাবে; আর কী চাই ?

    মহাদেবদা চলে গেছে। কিন্তু আমাদের ছাদ তো আছে। তাতে আমরা ক’ঘর ভাড়াটে পরিবারের ছেলেমেয়েরা একদিন ‘বিচিত্রানুষ্ঠান’ করলাম। মানে ঠাকুমার থেকে চেয়ে ন্যাপথালিনের গন্ধওলা একটি ছোট চাঁদোয়া এনে টাঙিয়ে তার তলায় আমাদের সমবেত কন্ঠে ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ গান (শুধু মুখড়া) ও সঙ্গে নীচের তলার নিলোফারের মাথায় রঙিন ফিতে বেঁধে নাচ। তারপর তিনজনের মাথায় গামছা বাঁধা ও হাতে ঝাঁটার কাঠি দিয়ে তৈরি তিরধনুক। আমরা রাজর্ষি নাটকের চন্দ্রনারায়ণ, ইন্দ্রকুমার ও রাজধর। স্ক্রিপ্ট কিশলয় নামের সরকারি পাঠ্যপুস্তক। দর্শক বলতে দু’বাড়ির মা-কাকিমা-মাসিমা এবং কাজের মাসি। শেষে সব আর্টিস্টকে ঘরে তৈরি নারকোলের তক্তি খেতে দেওয়া হোল। হয়ে গেল বিচিত্রানুষ্ঠান।

    এই শব্দটা তখন নতুন শিখেছি খবরের কাগজ থেকে। নতুন নতুন পড়তে শিখেছি। বড়রা বেরিয়ে গেলে পত্রিকা খুলে বসি। রাজনীতি বড়দের ব্যাপার। দেখি খেলার পাতা আর সিনেমার পাতা। তখন দু’পাতা জুড়ে সিনেমার আর বিচিত্রানুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থাকত, শুধু সপ্তাহে একদিন নয় — রোজ। তাতে নায়ক-নায়িকাদের মুখের প্রোফাইল ও নাচের পোজ দেখে কল্প-দুনিয়ায় চলে যেতাম। নামগুলো কী ! ঝনক ঝনক পায়েল বাজে, কালী টোপি লাল রুমাল, দো আঁখে বারহ হাত, নও দো গ্যারহ, হাম পঞ্ছি এক ডাল কে, শ্রী ৪২০ ।

    বাংলায় হারানো সুর, প্রিয় বান্ধবী, বসু পরিবার, রাইকমল, বিপাশা, ভুলি নাই, বাঘা যতীন, মরুতীর্থ হিংলাজ, মায়ামৃগ, ছেলে কার?

    হলের চেইন গুলো মুখস্থ করে ছাদে বাচ্চাদের জিকে চেক করা হত । মিনার-বিজলী-ছবিঘর, উত্তরা-পূরবী-উজ্জ্বলা, শ্রী-প্রাচী-ইন্দিরা, রূপবাণী-অরুণা-ভারতী। বড়দের কাছে আমার জিকের বহর দেখাতে গিয়ে জুটল কানে আড়াই পাক।

    এবার মন দিলাম খেলার পাতায়, তাতে কোন নিষেধের আঙুল ওঠে নি।

    কিছু না বুঝেই একজন হই মোহনবাগানের সাপোর্টার তো একজন ইস্টবেঙ্গলের। সেবার তেজেশ সোম থুড়ি বাঘা সোমের কোচিং পেয়ে ইস্টার্ন রেল বলে একটা নতুন টিম লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এত বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন হত হয় মোহনবাগান, মহমেডান, নয় ইস্টবেঙ্গল।

    কী হইচই ! তাতে উঠে আসছে পিকে ব্যানার্জি বলে একজন রাইট আউট আর নিখিল নন্দী বলে একজন লেফট হাফের নাম। সেই সব দিনে টিম সাজানো হত দুই-তিন-পাঁচ ফর্মেশনে। নামগুলো অন্যরকম। দু’জন ফুল ব্যাক, তারপর রাইট, সেন্টার ও লেফট হাফ। সামনে রাইট উইং, রাইট ইন, সেন্টার ফরওয়ার্ড, লেফট ইন ও লেফট আউট। স্টপার, সুইপার ব্যাক, স্ট্রাইকার শব্দগুলি তখনও গড়ের মাঠে আসে নি। আমার ভাই ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে ইস্টার্ন রেলের সাপোর্টার রয়ে গেল, যদ্দিন টিমটা উঠে না যায়। আমাকে আকর্ষণ করত টিমের নামগুলো —উয়াড়ি, এরিয়ান্স, ইন্টারন্যাশনাল এইসব।

    শুধু মাত্র খেলা নিয়ে অনেকগুলি পত্রিকা ছিল। এদের মধ্যে অভিজাত ছিল ইংরেজিতে স্পোর্টস এন্ড পাস্টটাইম। এতে সব রকম খেলা এমনকি দাবা এবং ব্রিজ নিয়ে পাতা থাকত। ছবিগুলো ভাল এবং রঙিন। কিন্তু অল্পদামের বাংলা ম্যাগাজিনগুলো বেশি জনপ্রিয় ছিল, যেমন ময়দান, গড়ের মাঠ, খেলার মাঠে, স্টেডিয়াম ও অলিম্পিক। তাতে পাঠকদের চিঠিপত্র ও নানান সাজেশন ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং ।

    এমনসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলে কালো মানুষের দেশ থেকে একটা টিম ভারতে ক্রিকেট খেলতে এল, তার ক্যাপ্টেন জেরি আলেকজেন্ডার বলে এক সাদা মানুষ। রোজ ছবি বেরোয় দু’জন ফার্স্ট বোলারের — ওয়েসলি হল ও রয় গিলক্রিস্ট। আবার দু’জন স্পিনার – রামাধীন এবং ল্যান্স গিবস। কিন্তু যাদের নিয়ে চারদিকে কথাবার্তা তাঁরা হলেন গ্যারি সোবার্স ও রোহন কানহাই। বাবা কাকার দল রেডিও ভাড়া করে এনে কমেন্টারি শোনেন। সেসব হত ইংরেজিতে, বাচ্চাদের বোধের অগম্য। কিছু নাম কানে আসে – পিয়ার্সন সুরিটা, বেরি সর্বাধিকারী, ভিজি। ট্রাঞ্জিস্টর এল ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। বাংলা কমেন্টারি ফুটবলের ময়দানে আটকে না থেকে ইডেন গার্ডেনেও এল। কমল ভট্টাচার্য্য, অজয় বসু ও পুষ্পেন সরকার ঘরে ঘরে পরিচিত নামের লিস্টিতে এলেন। আমরা পূজোয় কিনলাম অজয় বসুর লেখা দুটো বই, ‘খেলার রাজা ক্রিকেট’ ও ‘মজার খেলা ক্রিকেট’; একটা বোলিং নিয়ে লেখা আর অন্যটি ব্যাটিং নিয়ে ।

    একটা চার আনার বল কিনে আমরা দু’ভাই ছাদের দু’মাথায় দাঁড়াই। একজন আরেকজনের দিকে বোলিং করি । সে ধরে নিয়ে পালটা বল করে । এভাবে কেটে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা, যতক্ষণ না ঘরের থেকে কেউ ডাকতে আসে। একদিন আবিষ্কার করি যে আমরা দু’জনেই অফ ব্রেক করাতে পারছি। ছোটভাই মহাচালাক; সে পাড়ার কারও থেকে লেগব্রেকের গ্রিপ ও ডেলিভারি শিখে এসে আমাকে চমকে দিল। আমরা এবার ট্রামলাইনের কাছে বড়দের গলি ক্রিকেটের কাছে ঘুরঘুর করি, যদি একবার চান্স দেয়। ওদের নজরে পড়ার জন্যে ফুটপাথে ইঁটের টুকরো বা স্কুল থেকে আনা চকখড়ি দিয়ে স্কোর লিখে দিই, বিশেষ করে অন্য পাড়ার সঙ্গে ম্যাচের সময়। একদিন দিনের শেষে সন্ধ্যে হয় হয় সময়ে পেলাম এক ওভার। বলটা অনেকটা ঘুরে সোজা উইকেটে। ব্যাটসম্যান বিরস বদনে বললেন — বলটা পাশের ড্রেনের গর্তে পড়ে ঘুরেছে। এটা ক্যানসেল করা হোক। আমি প্রায় কেঁদে ফেলি। আবার বল করলাম, একই ব্যাপার। আমি কয়েকজনের কোলে উঠলাম। আমাকে আর পায় কে!

    আমরা দু’ভাই সারাদিন ঘরেতেও হাত ঘোরাতে থাকি। শ্যাডো প্র্যাকটিস করি । আমার ভবিষ্যৎ ঠিক হয়ে গেছে। আমি বড় হয়ে একজন অফ স্পিনার হব, ইন্ডিয়ার হয়ে খেলব। স্কুলের হোমটাস্ক চুলোয় যাক। পঙ্কজ রায়, ভিন্নু মানকড়, সুভাষ গুপ্তে এবং পলি উম্রিগর কি ঘরে বসে হোমটাস্ক করেন!

    ঠাকুমা বিরক্ত হয়ে ছোটকাকে বললেন — দ্যাখ ত! এদের মাথায় যে কী ছাতামাথা ঢুকছে! সারাদিন নাইচের মত হাত ঘুরায়, পাও নড়ায়।

    ছোটকা সব শুনেটুনে একটা আতসকাঁচ নিয়ে এসে অনেকক্ষণ ধরে মন দিয়ে আমার হাতের রেখা দেখল। তারপর একটা কাগজে কী সব আঁক কষে আমাকে ডেকে গম্ভীর মুখে বললে — সরি! তোর হাতের রেখায় অফ স্পিনার হবার যোগ দেখতে পাচ্ছি না তো!

    আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে বললাম আমি যে ওইটাই হতে চাই !

    -- সে ঠিক আছে, ভালই তো। কিন্তু হাতের রেখা যে অন্য কথা বলছে। আমি দেখছি তোর ভবিষ্যত কলেজের প্রফেসর হওয়া (ছোটকা নিজে বোধহয় তাই হতে চাইতো)। নিয়তি কেন বাধ্যতে!

    ছাদে গিয়ে চোখের জল ফেললাম, অন্ততঃ দু’ঘন্টা; তারপর নীচে নেমে গুটিগুটি বইখাতা খুলে বসলাম।

    পরে বুঝেছি মেয়েরা বোধহয় এইভাবেই বাপ-মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬
  • ধারাবাহিক | ০৩ জুলাই ২০২১ | ২২৬৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Anindita Roy Saha | ০৪ জুলাই ২০২১ ০৭:৩৫495589
  • পদবী (জাত পরিচয়) নিয়ে পেছনে লাগা সত্তর আশির দশকেও ছিল। এখনো আছে কিনা জানি না। জাতের নামে বজ্জাতির চর্চা বোধহয় এভাবেই আমাদের মজ্জায় মিশেছিল। 


    শেষ লাইনটি পড়ে মনে হল , ছেলেরা কি মা-বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে না? সেটা কেমন লাগে? 

  • সুকি | 49.207.221.179 | ০৪ জুলাই ২০২১ ০৮:২৮495591
  • রঞ্জনদার লেখা গুলি পড়ি কিন্তু কমেন্ট করা হয় না - আসলে এই কোলকাতার জীবন আমাদের বেড়ে ওঠার থেকে এতটাই আলাদা যে কি বলব বুঝতে পারি না - তবে পড়ছি হয় এটা জানিয়ে রাখলাম আর কি  

  • Ranjan Roy | ০৪ জুলাই ২০২১ ১০:৪১495597
  • অনিন্দিতা


    আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত ভ্যালিড। তবে তফাৎটা দেখুন।


    আমাদের সময়ে ছেলেদের শুধু বাবা-মার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে হত, মেয়ের পরিবারকে নয়। কিন্তু মেয়েটির বিয়ে হত ছেলের গোটা পরিবারের সাথে। তাকে নিজের শেকড় উপড়ে অচেনা অজানা জায়গায় নতুন করে শেকড় ছড়াতে হত। এই যন্ত্রণা ছেলেদের ভুগতে হয় নি। তাই তারা বুঝতে ও পারে না। আমি ওই জায়গাটা ধরতে চেয়েছি।


    আজকে ওই সমস্যাটা নেই। কারণ মেয়েটি ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাকরি করে এবং নবদম্পতি আলাদা আস্তানা গড়ে।


    আমাদের সময় বাড়ির বৌয়ের চাকরি বা বিয়ে করে আলাদা বাসা করা স্যাক্রিলেজ।


    "বাড়ির বৌ" কথাটা দেখুন।


    সুকিকে ধন্যবাদ।

  • Amit | 121.200.237.26 | ০৪ জুলাই ২০২১ ১২:৩৯495598
  • এজ উজুয়াল লা জবাব রঞ্জনদা। 


    সেই বন্ধুর মায়ের বৈধব্য আর সাদা শাড়ী র গল্প পড়ে ছোটবেলায় নিজের দেখা কিছু কিছু  তিক্ত স্মৃতি ফিরে এলো। বহু মানুষ যে কতভাবে দুর্বলদের টর্চার করে আনন্দ পায়। স্যাডিজম ছাড়া কিচ্ছু নয়। 


    অবশ্য এখনই বা কতটা পাল্টেছে আর ? যেটুকু পাল্টেছে , হয়তো তারা আমাদের দেখা শহুরে কয়েকজন মাত্তর। এই তো কালকের কাগজেই এসেছে মন্দিরা বেদী স্বামীর শেষ যাত্রায় সাদা কাপড় না পড়ে জিনস পড়েছেন বলে কিছু জানোয়ার যথরীতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করে যাচ্ছে। এই সময়ে। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন