এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  প্রথম পাঠ

  • বীরসিংহের সিংহশিশু বিদ্যাসাগর বীর: পাঠ-প্রতিক্রিয়া (৩)

    রঞ্জন রায়
    পড়াবই | প্রথম পাঠ | ১৯ জুন ২০২১ | ২২৪৮ বার পঠিত

  • (৫.০) বিদ্যাসাগরের ‘নিজস্ব শিক্ষাসংস্কার’

    সপ্তম অধ্যায়ে লেখক বলছেন, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ রূপে বিদ্যাসাগর ‘লাভ করেন অসীম দাপট, অবাধ ক্ষমতা ও একক কর্তৃত্ব’। [1] তারপর বিদ্যাসাগর ওই কলেজে শিক্ষাসংস্কারের জন্যে যা করেছেন সেগুলোকে লেখক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণাকে ভিত্তি করে আটটি বিন্দুতে বেঁধেছেন। তারপর ওই সংস্কারগুলোর নিজস্ব মূল্যায়ন করতে গিয়ে বেশ কিছু অজানা তথ্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমরাও এ’ব্যাপারে লেখককে অনুসরণ করব।

    (৫.১) কলেজে বেতনপ্রথা চালু করা এবং মেধাবী ছাত্রদের জন্যে ‘মানি প্রাইজের’ বদলে ‘বুক প্রাইজ’ শুরু করা

    এর পৃষ্ঠভূমি হিসেবে লেখক দেখিয়েছেন যে কলেজের জন্মলগ্ন থেকে ছাত্ররা বিনা বেতনে পড়ত। কিন্তু ১৮৩৫ সালে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রচলনের পরে সংস্কৃত কলেজের আর্থিক হাল ক্রমশ খারাপ হতে থাকে, কারণ সরকারি আর্থিক সাহায্য কমাতে থাকে। মেকলে তাঁর বিখ্যাত প্রস্তাবে কোলকাতার মাদ্রাসা ও সংস্কৃত কলেজ দুটোই তুলে দেয়ার পক্ষে বলেন। বেন্টিঙ্ক এইসব প্রাচ্যবিদ্যা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে দেননি। কিন্তু নতুন ছাত্রদের জন্যে বৃত্তিপ্রথা তুলে দেন।

    কলেজে ছাত্রপিছু সরকারের ব্যয় ১৮৩৫ সালে ছিল প্রায় ১৬২ টাকা, যা ১৮৫১ সালে কমে গিয়ে হয় মাত্র ৬২ টাকা।

    অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়ে এর সমাধান হিসেবে বিদ্যাসাগর কী করলেন? দুটো কাজ।

    ক) মেধাবী ছাত্রদের জন্যে ‘মানি প্রাইজের’ বদলে ‘বুক প্রাইজ’ শুরু করলেন।
    খ) কলেজের খরচা চালাতে বেতন প্রথা শুরু করলেন।

    লেখকের আপত্তি কোথায়?

    ক) ঈশ্বরচন্দ্র নিজে ১৮৩৮-৩৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়ে নগদ ৮০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন।

    ‘তিনিই ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ১৮৫১ সালের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষা সংসদের কার্যকরী সম্পাদককে চিঠি লিখে ‘মানি প্রাইজের’ বদলে ‘বুক প্রাইজ’ শুরু করার পরামর্শ দিলেন।[2] (নজরটান আমার)।

    আমার উত্তরপক্ষ -

    কোম্পানির আমলে সরকার তাদের প্রাথমিকতা বদলে যাওয়ায় ব্যয় সংকোচের নীতি নিল। মেকলে কলেজ বন্ধ করার পক্ষে বলেছেন। সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে বিদ্যাসাগর যদি ‘ইকনমিক ভায়াবিলিটি’র খাতিরে নগদ টাকার বদলে পুরস্কার হিসেবে বই দেয়ার প্রথা শুরু করে থাকেন তাতে ভুল কোথায়? আজও স্বাধীন ভারতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাইজ হিসেবে টাকার বদলে বই দেওয়ারই প্রথা চলছে। বৃত্তি প্রদান আলাদা ব্যাপার। এর মধ্যে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার কথা আসছে কোত্থেকে? দেশজ শিক্ষাব্যবস্থায় কি আর্থিক পুরস্কারের ব্যাপার ছিল? বরং ভাল ফল করলে ‘মানি প্রাইজ’ ব্যাপারটাই ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার দান।

    আর ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র মানি প্রাইজ পেলেন এবং একই কলেজে বারো বছর পরে প্রশাসকের ভূমিকায় এসে বিষম আর্থিক পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেটা রদ করলেন – এর মধ্যে আয়রনি অথবা নৈতিক প্রশ্ন কেন উঠবে?

    খ) লেখকের প্রথম প্রেমিস সংস্কৃত কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার — যেখানে ছাত্ররা বিনে পয়সায় পড়তে পেত, যার পিছনে সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল আদালতের কাজে সহায়তা করার জন্য কিছু সস্তা পন্ডিতের জোগান অব্যাহত রাখা। --- কিন্তু দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা পুরোদমে চালু হওয়ার পরে, এই প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের বোঝাস্বরূপ হয়ে ওঠে। তখন তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে, ‘যে কোন উপায়ে প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ব্যয়বরাদ্দ হ্রাস করা’। [3]

    -- একদম সঠিক। যথেষ্ট তথ্য দিয়ে এই প্রেক্ষিত লেখক স্থাপন করেছেন। কিন্তু ওঁর আপত্তি অবৈতনিক ব্যবস্থা তুলে দিয়ে বেতন ব্যবস্থা চালু করায়। লেখক অরবিন্দ গুহ সম্পাদিত ‘আনপাব্লিশড লেটার্স অফ বিদ্যাসাগর’ থেকে দেখাচ্ছেন:

    ১) তিনি ১৯ অগস্ট ১৮৫২ তারিখে সম্পাদক মোয়াটকে চিঠি লিখে জানান যে বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থায় ছাত্রদের হাজিরা অনিয়মিত, ইংরেজি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলে ওরা এই কলেজ ছেড়ে দেয়। তাই শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে নতুন নিয়ম হোক: ভর্তি ফি ২ টাকা, হাজিরা খাতা থেকে একবার নাম কাটা গেলে ফের ভর্তি হতে আবার ২ টাকা।

    দেখা যাচ্ছে এই ব্যবস্থা শুরু হল সেপ্টেম্বর মাসে। তার ছ’মাস পরে বিদ্যাসাগর চিঠি লিখে জানাচ্ছেন এ’বাবদ আদায় হয়েছিল মাত্র ৪০ টাকা!

    আমার কথা: বিদ্যাসাগরের ঘোষিত উদ্দেশ্য তো জরিমানা বা ভর্তির ফি থেকে আয় বৃদ্ধি করা নয়, বরং ক্লাস পালানো বা স্কুল পালানো বন্ধ করা। হতে পারে জরিমানার ফলে স্কুলে অনিয়মিত হাজিরা কমে গিয়েছিল, তাই আদায় কম। যাই হোক, শিক্ষাসত্রের শেষ কোয়ার্টারে চালু করা কোন নিয়মের মূল্যায়ন ছ’মাসে হতে পারে না।

    কিন্তু এরপর লেখক আরও গুরুতর অভিযোগ আনলেন।

    “কলেজের জন্মলগ্ন থেকে ১৮৫১ সাল পর্য্যন্ত বিদ্যাসাগর যে ছাত্রতালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেন, তাতে দেখা যায় দীর্ঘ ২৮ বছরে ভর্তি হওয়া একটি ছাত্রও পড়া ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যায় নি!!” [4]

    অভিযোগ মিথ্যাচারের

    আমার উত্তরপক্ষ:

    এক, লেখক ৯৮ পৃষ্ঠায় বলেছেন - ‘১৮৩৫-এ দেশে শিক্ষা প্রচলনের পরে’। অর্থাৎ, আমাদের বিবেচ্য বিষয়ে ২৮ বছর নয়, শেষ ১৬ বছর গুরুত্বপূর্ণ। এহ বাহ্য। বিদ্যাসাগর ২৮ বছরের সূচি কেন পেশ করেছিলেন? তাঁর উদ্দেশ্য না জানলে এই সূচির সাক্ষ্যটি যথেষ্ট নয়। আশা করব লেখক এই জায়গাটা স্পষ্ট করবেন। প্রত্যেক তালিকা তৈরির বিশেষ অ্যাজেন্ডা থাকে। স্পষ্টত ২৮ বছরের ছাত্রসংখ্যার সূচিটি কলেজে কত ছাত্র ছিল তার সূচি। আমাকে যদি পুরনো কোন বছরের ছাত্রসংখ্যার তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয় আমি কী করব? প্রত্যেক বছরে কত ছাত্র ভর্তি হয়েছিল? অথবা বছরের শেষের অন্তিম সূচি? আমার অনুমান (অবশ্যই অনুমান) শেষ উপলব্ধ সূচি। ওই সূচিতে ক’জন ছেড়ে গিয়েছে তার কলাম ছিল কি? তাহলে কীভাবে এই সিদ্ধান্ত টানা যায় যে এত বছরে কোন ছাত্র কলেজ বদলায় নি?

    কাজেই মিথ্যাচারের অভিযোগটির জন্যে লেখক যে প্রমাণ হাজির করেছেন তা এক নজরে মেনে নেওয়ার মত নয় বলেই আমার মনে হয়।

    পূর্বপক্ষ: লেখকের আসল বক্তব্য হল - শৃঙ্খলা ইত্যাদি ফালতু বাহানা, আসলে উনি কলেজে মাইনে দিয়ে পড়ার ব্যবস্থা চালু করতে চাইতেন। এইটা ছিল তাঁর আসল অ্যাজেন্ডা। তাই তিনি ভর্তি ফি শুরু করার চিঠিটির শেষ লাইনে লেখেন – আশা করা যায়, এই ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে ক্রমশ মাসিক বেতন দিয়ে পড়ার ব্যবস্থা চালু করা যাবে।

    তারপর ১৮৫৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মাসিক এক টাকা বেতন নেয়া শুরু হলে তিনি ২৪ জুন শিক্ষা সংসদের সম্পাদককে চিঠি লিখে ভর্তি ফি এবং পুনর্ভর্তি ফি রদ করতে বলেন। [5]

    অতএব, ‘কলেজে বেতনপ্রথা চালু করার ক্ষেত্রে তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল, সরকারি ব্যয় সংকোচ নীতির সঙ্গে সাযুজ্য বজায় রাখা’।

    -- নিঃসন্দেহে। একজন সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল আর্থিক ব্যাপারে সরকারের নীতির বিরোধিতা করে চাকরি করবেন কি? স্বাধীন ভারতেও?

    আমার উত্তরপক্ষ:

    অধ্যক্ষ হিসেবে বিদ্যাসাগরের চ্যালেঞ্জ হল প্রতিষ্ঠানটিকে হয় বন্ধ করে দেয়া, নয় আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। উনি যদি প্রথম বিকল্পটিকে বেছে নিতেন তাহলে ইতিহাসে ঔপনিবেশিক প্রভুদের বশংবদ মোসাহেব হিসেবে অবশ্যই নিন্দিত হতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিলেন দ্বিতীয় বিকল্পটি। শুধু তাই নয়, মাসিক বেতন চালু হলে ভর্তি ফি রদ করার নমনীয়তাও দেখিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি কলেজ পরিচালনার আর্থিক পক্ষ নিয়ে যথেষ্ট সংবেদনশীল ছিলেন।

    তৃতীয় কোন বিকল্প ছিল কি? আমার জানা নেই। লেখকের থেকে শুনতে আগ্রহী।

    (৫.২) হিন্দু কলেজ ও কলকাতা মাদ্রাসার ছাত্রদের মতো সংস্কৃত কলেজের ছাত্রদের জন্যও ডেপুটিগিরির সুযোগ করে দেওয়া

    লেখক জানিয়েছেন যে হিন্দু কলেজ ও কলকাতা মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রথমাবধি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ পেত। সংস্কৃত কলেজের ছাত্ররা পেত না। এ’নিয়ে তাঁর কলেজের ছাত্রদের জন্যেও এই সুযোগ পাওয়ার অনুরোধ করে বিদ্যাসাগর ১৮৫২ সালের ১৩ জানুয়ারি মোয়াট সাহেবকে চিঠি লেখেন এবং তাঁর অনুরোধ মঞ্জুর হলে ছাত্ররা ডেপুটিগিরির পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায়।

    লেখকের সমালোচনা ও আমার মন্তব্য :

    “এই কলেজ যে আর পাঁচটা কলেজের মতো ছাত্রদের ভবিষ্যতের পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা পালন করতে পারে, এই আশা দেখিয়ে অধিক সংখ্যক ছাত্রভর্তি করাই ছিল এই তথাকথিত ‘সংস্কার’-এর মূল উদ্দেশ্য”।

    -- একদম ঠিক। এতে ব্যঙ্গের কারণ কী বুঝলাম না। আজকের দিনেও কোন প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে, বিশেষ করে আর্থিক সংকটকালে, দেখতে হয় যে কোন ব্যাপারে সেটি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের থেকে পিছিয়ে আছে।

    এবং

    “কলেজের ছাত্রদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নতুন পদে আবেদন করার সুযোগ করে দেওয়ার বেশি এই ‘সংস্কার’-এর অতিরিক্ত কোন মূল্যই নেই”

    - নিঃসন্দেহে, কিন্তু অতিরিক্ত মূল্যের দাবি কেউ করেছে কি? লেখক বলছেন যে ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে কতজন ছাত্র শেষ পর্য্যন্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি পেয়েছিল, সে কথা জানা যায় না’।

    - বেশ, কিন্তু বিদ্যাসাগরের দায়িত্ব সুযোগ করে দেয়া, আগে সেই সুযোগই ছিল না। মাদ্রাসা ও হিন্দু কলেজের থেকে পাস হওয়া ছাত্রদের ছিল। বিধবাবিবাহ আইন পাশ হওয়ার পর বহু বছর হাতে গোনা বিধবাবিবাহ হয়েছে। এখন হচ্ছে। তার জন্যে কি দেড়শ বছর আগে ওই আইন পাশ হওয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কমে গেছে? তবে এ নিয়ে যথাসময়ে কথা হবে।

    (৫.৩) অষ্টমী ও প্রতিপদে ছুটির বদলে রবিবার ছুটি এবং দুমাস গরমের ছুটি চালু করা

    লেখক জানাচ্ছেন - সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হওয়ার পর থেকে অষ্টমী ও প্রতিপদ তিথিতে কলেজ বন্ধ থাকত। বিদ্যাসাগর মোয়াট সাহেবকে চিঠি লিখে শুধু রোববার করালেন। তাতে কার্যদিবস সমান থাকবে বলা হলেও আসলে কলেজ বন্ধ হয় ৪৮ দিনের বদলে ৫২ দিন। দেখাই যাচ্ছে, বারোমাসের বারোটা রবিবার, কিন্তু প্রতি তিনমাসে একটা করে রোববার বেড়ে যায়, তাই ৪৮+ ৪= ৫২। দুই পক্ষে ৩০ দিনে ২ অষ্টমী ও ২ প্রতিপদ, ফলে ৪৮ দিন ছুটি। তারপর বিদ্যাসাগর পরীক্ষা (বার্ষিক?) অক্টোবর থেকে পিছিয়ে এপ্রিল করান এবং দু’মাস গরমের ছুটি করিয়ে দিন। তাতে সবমিলিয়ে কর্ম দিবস প্রায় এক মাস কমে যায়। ছুটি ৬২ দিনের জায়গায় ৮৫ দিন হয়। কর্তৃপক্ষ অরাজি হন নি।

    এতে কী সমস্যা হল বুঝতে পারছি না। আজও বহুজায়গায় ছাত্রদের দু’মাস গ্রীষ্মাবকাশ চলে এবং বার্ষিক অবকাশ আগের তুলনায় বেশি। মনে হয় আপত্তির কারণ দুটো।

    এক, ‘দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি বন্ধ’ করা এবং দুই, ‘Her Majesty’s Birthday’ ছুটি বন্ধ না করা। [6]

    এই আপত্তিগুলো আমার কিঞ্চিৎ ছেলেমানুষি মনে হয়েছে। ইংরেজের রাজত্ব, ইংরেজের স্কুল — সেখানে মহারানির জনমদিনে ছুটি হবে না? সেই ছুটি রদ করার চেষ্টা না করায় বিদ্যাসাগর কলোনিয়াল প্রভুর মোসাহেব! আজ স্বাধীন ভারতে মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবসে ছুটি থাকে না? বা খ্রিস্টান স্কুলে ক্রিসমাসের সময় টানা এক সপ্তাহ ছুটি হয় না? বিদ্যাসাগর ছাপাখানা খুলে ছিলেন বটে, কিন্তু নতুন কলেজ খুলতে পারতেন কি?

    (৫.৪) সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি পাঠক্রম চালু করা বা ইংরেজি বিভাগ খোলা

    এখানে আমি লেখকের সঙ্গে একমত। বিদ্যাসাগরের উদ্দেশ্য ছিল ‘নতুন যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত কলেজে আকৃষ্ট করা’। এবং ‘প্রকৃতপক্ষে সরকারি ব্যয়সংকোচ নীতির সঙ্গে সাযুজ্য বজায় রাখার জন্য তিনি যেমন কলেজে বেতন প্রথা চালু করেন, তেমনই ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাচ্যবিদ্যার প্রতিষ্ঠানেও চালু করার জন্য তিনি ডেপুটিগিরির প্রলোভন দেখিয়ে কলেজে ইংরেজি বিভাগ চালু করেন’। [7] (নজরটান আমার)।

    লেখকের আপত্তি: ইংরেজি নামক রাজভাষাকে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার হাতিয়ার হিসেবে প্রাচ্যবিদ্যার অঙ্গনে উদ্যোগী হয়ে অনধিকার প্রবেশ দেওয়া। ফল হল মারাত্মক। আগে অঙ্ক শেখানো হত সংস্কৃতে, ভাস্করাচার্যের বীজগণিত ও লীলাবতী পড়ানো হত, এখন ইংরেজিতে পড়ানো হবে অ্যালজেব্রা। এছাড়া বিদ্যাসাগর ইংরেজির নতুন অধ্যাপকদের ৫০ টাকা মাইনে বাড়ানোর সুপারিশ করলেন কিন্তু সংস্কৃতের অধ্যাপক ও পন্ডিতদের বিগত বারো বছর ধরে মাইনে না বাড়লেও এখন মাত্র ১০ টাকা বাড়ানোর কথা বলেন। [8]

    উত্তরপক্ষ:

    আমি সংস্কৃত কলেজে কোর্স মডার্নাইজ করার মধ্যে কলোনিয়াল এজেন্ডার মোসাহেবি আক্ষেপের তাৎপর্য বুঝতে পারছি না। লেখকের মতে কি সংস্কৃতে অঙ্ক শেখানো চালু রাখা হত, সেটাই ঠিক ছিল? আর ঔপনিবেশিক ভারতে ঔপনিবেশিক কলেজে চাকরি করার মধ্যে যতটুকু দাসত্বের আরোপ বর্তায় ততটুকু বিদ্যাসাগরের জন্যেও প্রযোজ্য, ঠিক যে অর্থে ব্রিটিশ ভারতে যে সমস্ত ভারতীয় নাগরিক ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন- রেলে, আদালতে, সরকারি দপ্তরে বা পুলিশ ও মিলিটারিতে — সবাই কলোনিয়াল দাস এবং তাঁরা কলোনিয়াল অ্যাজেন্ডায় কাজ করছেন। কিন্ত এর অতিরিক্ত কোনও অভিযোগ, অর্থাৎ ব্যক্তি বিদ্যাসাগর অতিরিক্ত উদ্যোগ নিয়ে অনাবশ্যক ভাবে কিছু করছেন – তেমনটা প্রমাণ করার জন্য এই তথ্য যথেষ্ট - এমন মনে হচ্ছে না। তবে সংস্কৃত পণ্ডিতদের আর্থিক দুরবস্থার ব্যাপারে সৈয়দ মুজতবা আলীর বলা পণ্ডিত মশায়ের নিজেকে সাহেবের পোষা কুকুরের চেয়েও নগণ্য মনে করার গল্পটি অবশ্যই মনে পড়বে।

    লেখকের ব্যঙ্গোক্তিটি - “ইংরেজি আমলে ইংরেজি জানা শিক্ষকদের বেতন যে অন্যদের থেকে বেশি হবে, এ আর কী এমন নতুন কথা!” [9] -- কিন্তু এটাই পরাধীন ভারতের সত্য। শুধু শিক্ষাবিভাগ কেন, আদালত, সরকারি বিভাগ - সর্বত্রই একই নিয়ম।

    লেখক নিজেই দেখিয়েছেন যে বিদ্যাসাগরের জন্মের আগে প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে (১৮০০ সাল) যে সায়েবরা আরবি, হিন্দুস্তানি ও সংস্কৃত বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের মাইনে গড়পড়তা ১৫০০ টাকা, অথচ তাঁদের সহায়ক বাঙালি পণ্ডিতদের সর্বোচ্চ মাইনে ২০০ টাকা মাত্র! [10]

    তাহলে শুধু বিদ্যাসাগরের থেকে আমরা কোন নীতিগত ব্যতিক্রম কেন আশা করব?

    কিন্তু লেখক দেখিয়েছেন যে মাত্র তিনবছরে বিদ্যাসাগরের মাইনে বেড়ে দ্বিগুণ হল। আশ্চর্য! কিন্তু এটাও খেয়াল করতে হবে যে ওই সময় বিদ্যাসাগর একইসঙ্গে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক, সম্পাদক ও প্রিন্সিপালের কাজ একাই সামলাচ্ছেন। ফলে ব্যয়সংকোচ করেও বিদ্যাসাগরের বেতন বাড়াতে কোন অসুবিধে হবার কথা নয়।

    অবশ্যই আজকে আমাদের চোখে এটি বিসদৃশ। কারণ বিদ্যাসাগর বলতে যে ভাবমূর্তিকে আমরা পুজো করে থাকি তার বদলে একজন চতুর বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন এবং নিজের আর্থিক লাভের প্রতি সচেতন একজন মানুষের চেহারা এবার উঁকি মারছে।

    লেখকের প্রশ্ন: এত সব করেও কলেজের ছাত্ররা কতটুকু ইংরেজি শিখেছিল?

    বিদ্যাসাগরের কৃতি ছাত্র কৃষ্ণকমল লিখে গেছেন যে বিদ্যাসাগরের খেদোক্তি ‘না ইংরাজিও তেমন লিখতে পারিস, না সংস্কৃতেও পণ্ডিত হলি’। তিনি চাইতেন যে ‘বিধবাবিবাহ’ বিষয়ক ওঁর যুক্তিগুলো কেউ ইংরেজিতে ভাল করে লিখুক। কিন্তু ‘সংস্কৃতও ভাল বুঝে, ইংরাজিও ভাল লিখিতে পারে এরূপ লোক না পাওয়ায় নিরস্ত হইয়াছিলেন’।[11]

    ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে কলেজে ইংরেজি চালু হয়। কৃষ্ণকমল সাতবছর ওখানে ইংরেজি পড়েছিলেন, পরে প্রেসিডেন্সিতে অধ্যাপনা করেন। কথা হচ্ছে, সেইসব দিনে প্রেসিডেন্সিতে শিক্ষার মাধ্যম কী ছিল? অবশ্যই ইংরেজি। তাহলে আজকের মানদণ্ডেও কৃতি ছাত্ররা যতটুকু ইংরেজি শিখেছিলেন তা যথেষ্ট নয় কি!

    বিদ্যাসাগরের ‘সংস্কৃতও ভাল বুঝে, ইংরাজিও ভাল লিখিতে পারে এরূপ লোক না পাওয়ায়’ খেদোক্তি দিয়ে ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষার মান বিচার করব, অথচ প্রেসিডেন্সিতে অধ্যাপনার যোগ্যতা প্রসঙ্গে নজর দেব না?

    আজকের কলকাতায় কতজন বাংলা মিডিয়াম স্কুলের পাশ করা ছাত্র ভাল ইংরেজিতে বই অনুবাদের মত আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন?

    (৫.৫) ব্যাকরণ শ্রেণিতে মুগ্ধবোধ পড়ানোর বিলুপ্তি

    এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা নিয়ে লেখক পূর্ববর্তী সমস্ত বিদ্যাসাগর-গবেষকদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিক্ত ভাষায় কিছু মন্তব্য করেছেন। আমরা আগে অভিযোগটি বোঝার চেষ্টা করি।

    লেখকের দেয়া তথ্য থেকে:

    ১) নভেম্বর ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত কলেজে সংস্কৃত গ্রামার হিসেবে হিসেবে ব্যোপদেবের মুগ্ধবোধ পড়ানো হত।

    ২) বিদ্যাসাগরের উপলব্ধি - সাধারণ বাঙালি ছেলের পক্ষে সংস্কৃত ভাষায় সংস্কৃত গ্রামার আয়ত্ত করা আয়াসসাধ্য, প্রায় পাঁচ বছর লাগে। ছেলেরা অর্থ না বুঝে মুখস্থ করে। বাংলায় সংস্কৃত গ্রামার পড়ালে সহজ হবে।

    ৩) তাই বিদ্যাসাগর বাংলায় লিখলেন ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’ (ইন্ট্রোডাক্টরি) এবং ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’ (অ্যাডভান্সড)। এবং সংস্কৃত সাহিত্যের বই থেকে নির্বাচিত গদ্য ও পদ্যাংশ নিয়ে ঋজুপাঠ (১ম, ২য় ও ৩য়)।

    ৪) বিদ্যাসাগর মশায় কলেজের ‘শিক্ষাসমাজ’ (যাতে মার্শাল, মোয়াট ইত্যাদি বিদ্যাসাগরের গুণমুগ্ধ সায়েবরা রয়েছেন) থেকে প্রস্তাব পাশ করিয়ে ১৯৫৫ থেকে নিজের লেখা পাঁচটি উপরোক্ত বই কলেজে পাঠ্য করলেন।

    এই পদক্ষেপকে বাংলার গবেষকরা এবং মধ্যবিত্ত সমাজ আজও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাসংস্কার মনে করে।

    লেখকের পূর্বপক্ষ:

    ১) বিদ্যাসাগরের এই সংস্কার আসলে একটি ছল বা ধাপ্পাবাজি (শব্দটি আমার)। বিদ্যাসাগর নিজে মুগ্ধবোধ তিনবছরে শেষ করেছিলেন, কৃতি ছাত্র রামকমল চার বছরে। ফলে গড়পড়তা ছাত্রদের পাঁচ বছর লাগত - এটা বাজে কথা।

    ২) বিদ্যাসাগরের নতুন ব্যবস্থায় ছাত্রদের বোঝা বেড়ে গেল। এক মুগ্ধবোধের বদলে খোদ বিদ্যাসাগরের লেখা পাঁচ-পাঁচটি বই পড়তে হল। তাতে যে সবাই সংস্কৃতের পণ্ডিত হয়নি তার প্রমাণ বিদ্যাসাগরের পূর্বোক্ত খেদোক্তির প্রথম অংশেঃ “না ইংরাজিও তেমন লিখতে পারিস, না সংস্কৃতেও পণ্ডিত হলি”।

    ৩) লেখকের কথায়: “একজন কলেজের অধ্যক্ষ তাঁর নিজের লেখা পাঁচটি বই তাঁরই কলেজের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছেন, তৎকালীন সময়ে এমন ঘটনা সারা ভারতবর্ষে ঘটেছিল কিনা সন্দেহ”। [12]

    ৪) রামকমল ভটাচার্য ১৮৪৮ সালে ভর্তি হয়ে ১৮৬০ সালে ওখান থেকে গ্রাজুয়েট হলেন। ভর্তি হয়েই মুগ্ধবোধ পড়া আরম্ভ করে চার বছরে মুগ্ধবোধ শেষ হোল। কিন্তু বিদ্যাসাগরের মতে “না সংস্কৃতেও পণ্ডিত হলি”।

    লেখকের মতে, “তার মানে মুগ্ধবোধের পাঁচ-পাঁচটা ‘সহায়িকা’য় না কমেছিল সময়, না বেড়েছিল সংস্কৃতে ছাত্রদের দক্ষতা”।

    আমার উত্তরপক্ষ:

    নীচের থেকে শুরু করি।

    ৩) অধ্যক্ষের নিজের একগাদা বইপাঠক্রমে ঢোকানো, সে সময়ে গোটা ভারতে আর কোথাও? সারা ভারতের কথা জানিনা, তবে কয়েক দশক পরে রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন - বিশ্বভারতীতে সহজ পাঠ (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ), বিশ্ব পরিচয় এবং প্রাথমিক ইংরেজি শেখানোর পাঠ। কারণটা কিন্তু এক; মাতৃভাষার মাধ্যমে বিদেশি ভাষা শেখানো। এনিয়ে ওঁর মাতৃদুগ্ধ যুক্তির সঙ্গে সবাই পরিচিত। বিদ্যাসাগরেও একই যুক্তি। আর দুজনকে একই ‘অপরাধ’ করতে হয়েছিল। কারণ, তখন বিকল্প ছিল না। আজকের চশমায় অতীতকে দেখলে এই ভুল হবে।

    বরং বিদ্যাসাগরের সময়ে এই সমস্যাটি আরও প্রকট। তাই বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ দুজনেই ধন্যবাদার্হ সমস্যাটা বুঝে নিজেরাই সমাধানের ভার কাঁধে তুলে নেয়ার জন্যে। এই বিন্দুতে বর্তমান লেখকের পূর্বসূরী বিদ্যাসাগর-গবেষকরা বোধহয় বেশি ঠিক।

    আমরা নিজের অভিজ্ঞতায় জানি গোড়াতেই নেসফিল্ডের গ্রামার না পড়ে বাংলার মাধ্যমে লেখা গ্রামার পড়ে লাভ হয়েছে। নেসফিল্ডের গ্রামার ইংরেজদের জন্যে, যারা ভাষাটা জানে। যেমন আমাদের বাংলার গ্রামারের জন্যে সুনীতিকুমার।

    ৪) উদাহরণটা ভুল। কৃষ্ণকমল (১৮৪৮+৪) মানে ১৮৫২ সালে মুগ্ধবোধ পড়া শেষ করেন। ১৮৫৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যাসাগরের বই আসেনি। কৃষ্ণকমল ১৮৫৫ সালে সপ্তম বর্ষের ছাত্র; ব্যাকরণ শেষ করে দর্শন, স্মৃতি, সাহিত্য এইসব পড়ছেন। তিনি কেন বিদ্যাসাগরের প্রাইমার সপ্তম বর্ষে পড়বেন?

    ২) উপক্রমণিকা আদৌ মুগ্ধবোধের সহায়িকা নয়, সাবস্টিটিউট। আর উপক্রমণিকা এবং কৌমুদী আলাদা আলাদা স্ট্যান্ডার্ডের জন্য। যেমন ঋজুপাঠ ১, ২ ও ৩ মূল সংস্কৃত সাহিত্যের জায়গায় গ্রেডেড পাঠ সংকলন মাত্র। আদৌ মুগ্ধবোধের সহায়িকা নয়। আমাদের বাংলায় স্কুলে পাঠ সংকলন বা কিশলয়ের মত। এর মানে মোটেই নয় যে পাঁচটা বই একই ক্লাসে পড়ানো হচ্ছে। বিদ্যাসাগর পুরো পাঠ্যসূচিকে ঢেলে সাজিয়েছেন। নতুনদের জন্যে মাতৃভাষায় সংস্কৃত গ্রামার দুই লেভেলে এবং মূল সংস্কৃত সাহিত্যের টেক্সটের জায়গায় পাঠ সংকলন। এটা সংস্কার নয়তো কী?

    ১) কাজেই বিদ্যাসাগর ও কৃষ্ণকমলের উদাহরণ দিয়ে গড়পড়তা ছাত্রদের সমস্যা বোঝা যাবে না। বরং বিদ্যাসাগর যে সাধারণ ছাত্রদের সমস্যাটা বুঝে নিদান বের করেছেন সেটাই বড় কথা। আমরাও ওই সংস্কারের একশ’ বছর পরে ওই উপক্রমণিকাই পড়েছি। অর্থাৎ বইটি ফালতু হলে ১০০ বছর টিকে থাকত না।

    (৫.৬) বিদ্যাসাগরের কথিত ‘বেদান্ত-বিরোধিতা’

    কাশীর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ব্যালান্টাইন কোলকাতার সংস্কৃত কলেজ পরিদর্শনে এসে যে রিপোর্ট দাখিল করেন বিদ্যাসাগর ৭ই সেপ্টেম্বর ১৮৫৩তে তার সমালোচনা করে এক দীর্ঘ চিঠি সংসদের সম্পাদক মোয়াটকে পাঠান। তার অংশটি হল “সংস্কৃত কলেজে আমাদের বেদান্ত এবং সাংখ্য পড়াতেই হয়। কিন্তু বেদান্ত ও সাংখ্য যে ভ্রান্ত দর্শন, এ’বিষয়ে এখন আর কোন বিতর্ক নেই। তবে ভ্রান্ত হলেও এই দুই দর্শনের প্রতি হিন্দুদের গভীর শ্রদ্ধা আছে” -- তাই এদের প্রভাব দুর করার জন্যে উনি জন স্টুয়ার্ট মিলের লজিক পড়ানোর সাজেশন দিয়েছেন। [13]

    এইটুকুই ঘটনা। লেখকের আপত্তি কোথায়? আপত্তি বুদ্ধিজীবী বাঙালীর (লেখকের হিসেবে) সবটা না-জেনে ‘আপ্লুত’ হওয়ায়।

    পূর্বপক্ষ:

    ১) প্রমথনাথ বিশী প্রমুখেরা ভুলে গেছেন বিদ্যাসাগর আদৌ জীবদ্দশায় বেদান্ত ও সাংখ্য ভ্রান্ত দর্শন এই উক্তিটি প্রকাশ্যে করেন। তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৩৭ বছর ১৯২৭ সালে পরে বিদ্যাসাগর গবেষক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় প্রবন্ধে ওই চিঠিটির উল্লেখ করেন।

    ২) বিদ্যাসাগর কোন দিন পাঠ্যক্রম থেকে বেদান্তকে বাদ দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি। বরং ১৮৫২ সালের ১২ এপ্রিল খসড়া পরিকল্পনার ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখেন:

    “এ কথা ঠিক যে হিন্দু দর্শনের অনেক মতামত আধুনিক যুগের প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে মেলে না --- একজন ভালো পণ্ডিতকে এই দর্শনগুলি জানতেই হবে”। এবং পাঠ্যতালিকায় উনি ষড়দর্শন - সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, পূর্ব মীমাংসা ও বেদান্তসার এবং ব্যাসের সূত্র ( অধ্যায় ১ ও ২) এবং অতিরিক্ত হিসেবে সর্বদর্শনসংগ্রহ (মাধবাচার্য) পড়তে হবে।

    ৩) অবসরগ্রহণের কিছু পরে সরকারের তরফে ছোটলাট সংস্কৃত কলেজের পাঠ্যক্রম সংস্কারের একটি প্রস্তাব বিদ্যাসাগরের মন্তব্যের জন্যে পাঠালে তিনি ১৮৫৯ সালের ১৭ এপ্রিল লেখেন, নতুন অধ্যক্ষ কাওয়েল সাহেব কলেজে স্মৃতি ও বেদান্ত পড়ানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন কিন্তু তিনি ভিন্নমত। বিদ্যাসাগরের মতে বেদান্ত ও স্মৃতি পড়ানো বন্ধ করার কোন যুক্তিসংগত আপত্তি হতে পারে না। এই দুটি বিষয় বাদ দিলে ‘কলেজের পাঠক্রম খুবই ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়বে’। [14]

    ৪) বিদ্যাসাগর সম্ভবত ব্যালান্টাইনের রিপোর্টের বিরোধিতা করেছিলেন দুটি কারণে:

    ক) ব্যালান্টাইন মিলের লজিকের একটি সংক্ষিপ্তসার নিজে রচনা করে কাশীর সংস্কৃত কলেজে চালু করেছিলেন — সেটা আটকানো।
    খ) যেকোন উপায়ে সংস্কৃত কলেজে ইংরেজি বিভাগ চালু করা; এবং দুটি বিষয়েই বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিস্বার্থ নিহিত।

    আমার উত্তরপক্ষ:

    ১) বেদান্ত ও সাংখ্য ভ্রান্ত দর্শন — এটা বিদ্যাসাগরের নিজস্ব অভিমত যা তিনি প্রশাসনিক কারণে চিঠিতে লিখেছেন এবং সেটা ডকুমেন্ট। এটা বিধাবাবিবাহের মত কোন সামাজিক ইস্যু নয় যে প্রকাশ্যে বলতে হবে। অধ্যাপক প্র না বি, সুনীল গঙ্গো (‘সেই সময়’ উপন্যাসে) এবং অন্যান্যরা একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের চোখে বেদান্ত ও সাংখ্য ভ্রান্ত দর্শন লিখিত ভাবে বলাকে সঠিক ভাবেই বৌদ্ধিক বিপ্লব বলে চিহ্নিত করেছেন। আজ থেকে একশ ষাট বছর আগের কথা ছেড়ে দিন, আজ একুশে শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ক’জন সংস্কৃতের অধ্যাপক বেদান্ত ও সাংখ্যকে ভ্রান্ত বলার সাহস ও প্রত্যয় রাখেন এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে মিলের লজিক পড়ানোর কথা বলতে পারেন?

    ২) এবং ৩) তিনি বেদান্তকে ভ্রান্ত মনে করলে কেন বেদান্ত, সাংখ্য ও স্মৃতিকে কোর্স থেকে বাদ দেননি, বরং রাখার পক্ষে ওকালতি করেছেন?

    আমি এই যুক্তিটি বুঝতে অপারগ। আজও কেউ যদি ভারতীয় দর্শনের পাঠক্রম নির্ধারণ করেন তো অবশ্যই ষড়দর্শনকে পাঠ্যসূচিতে রাখতে হবে। বেদান্ত একটি প্রধান দর্শন – বাদ দেয়ার কথা উঠছে কেন? মার্ক্স পাঠ্যসূচিতে রাখলে কান্ট, লাইবনিজ, হেগেল ও বার্কলে বাদ দিতে হবে?

    - লেখক যদি একটু ওঁর নিজের উদ্ধৃতি খেয়াল করেন তো দেখবেন বিদ্যাসাগর বেদান্তের মাত্র প্রথম দুটো পরিচ্ছেদ পাঠ্যসূচিতে রেখেছেন, কিন্তু নিরীশ্বরবাদী দর্শনগুলোর (সাংখ্য, ন্যায় বৈশেষিক ও পূর্বমীমাংসা) মূল সূত্র এবং তার প্রধান ভাষ্যগুলো রেখেছেন -- যেমন ন্যায়ে গৌতম এর সূত্রের সঙ্গে উদয়নের টীকা কুসুমাঞ্জলি, সাংখ্যে কপিলের সূত্রের সঙ্গে ভাষ্য তত্ত্বকৌমুদী ইত্যাদি।

    ৪) বিদ্যাসাগরের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে লেখকের অনুমান? ধোপে টেকে না।

    কারণ-

    ক) যদি ব্যালান্টাইনের লেখা মিলের লজিকের উপর বইটি আটকানোই বিদ্যাসাগরের উদ্দেশ্য হত, তাহলে উনি মিলের লজিকের নামটাই নিতেন না। সেধে কেন মিলের নাম নেবেন?

    খ) লেখক নিজে আগের অধ্যায়গুলোতে দেখিয়েছেন – বিদ্যাসাগর কেন ইংরেজিকে বিষয় হিসেবে পাঠ্যসূচিতে রাখতে চান, যেমন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরির জন্যে ছাত্রদের উপযুক্ত করে তোলা। এবং কর্তৃপক্ষ সদয় এবং এব্যাপারে উৎসাহী হওয়ায় সহজেই ইংরেজি বিভাগ খুলে যায়। ৯ মার্চ ১৯৫৩ সালে মোয়াট জানিয়েছিলেন যে বিভাগ খোলার প্রস্তাব ‘ফেভারেবলি কনসিডার্ড’। তাহলে ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩তে ব্যালান্টাইনের রিপোর্টের পালটা বেদান্ত নিয়ে আলোচনা এখানে কী করে প্রাসংগিক হল বুঝতে পারছি না।

    এখানে লেখক যা বিদ্যাসাগর কখনও বলেননি বা যা তাঁর উদ্দেশ্য নয় (বেদান্তকে কলেজ থেকে নির্বাসন দেয়া) সেটা ধরে নিয়ে বিদ্যাসাগরকে খড়ের পুতুল দাঁড় করিয়েছেন, অথচ যা বলেছেন (বেদান্ত ও সাংখ্য ভ্রান্ত দর্শন, তার অ্যান্টিডোট হিসেবে মিলের লজিক পড়ানো) তার গুরুত্বকে পাত্তা দেননি।

    (৫.৭) কলেজে ভর্তি সমস্ত ছাত্রদের জন্যে উন্মুক্ত না করা

    লেখকের দেয়া তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে গোড়ায় সংস্কৃত কলেজে কেবল ব্রাহ্মণ ও বৈদ্যরা পড়তে পেত। আবার মনুস্মৃতি মেনে কোন অব্রাহ্মণ, এখানে বৈদ্যরা ভর্তি হলেও ব্যাকরণ, সাহিত্য ও দর্শন পড়তে পেত, কিন্তু বেদ ও স্মৃতিশাস্ত্র নৈব নৈব চ!

    বিদ্যাসাগর অধ্যক্ষ হয়ে কী করলেন?

    ১) প্রথমে ১৮৫১ সালের জুলাই থেকে শূদ্রদের মধ্যে শুধু কায়স্থদের ভর্তির নিয়ম শুরু করলেন। কারণ হিসেবে লিখলেন “the other Shudras at present, as a body, are wanting in respectability and stand lower in the scale of social consideration. Their admission, therefore, ---- prejudice the interests of the institution”. [15] অর্থাৎ ছোটলোকদের ভর্তি করলে সম্ভ্রান্তদের আপত্তি হবে, কলেজের ক্ষতি হবে।

    ২) হিন্দু কলেজে শুধু হিন্দুরা পড়তে পেত। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ-শূদ্র বিভেদ করা হত না। ডাক্তারি ক্লাসে দেহ ব্যবচ্ছেদও হয়েছিল।

    ৩) বিদ্যাসাগর ২৩ নভেম্বর, ১৯৫৪তে বললেন - সময় এসেছে কলেজের দ্বার সমস্ত সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়ার। কুড়ি দিনে প্রস্তাব মেনে নেয়া হল। কিন্তু ১৯৭১ সালে বিদ্যাসাগরের ‘আনপাব্লিশড লেটার্স’ প্রকাশিত হলে দেখা যাচ্ছে যে সম্ভ্রান্তদের মধ্যে কেবলমাত্র নবশাখদের অনুমতি দেয়া হল। [16]

    নবশাখ কারা? যে ন’টি জাতের হাত থেকে ব্রাহ্মণরা জল খেত, চলতি বাংলায় ‘জলচল’। এঁরা হচ্ছেন তিলি, তাঁতি, মালাকার, সদগোপ, নাপিত, বারুই, কামার, কুমোর ও ময়রা।

    ৪) এখানেই শেষ নয়; সোনার বেনেদের ভর্তির ব্যারে যথেপাষ্ট আপত্তি জানিয়ে ২১ নভেম্বর, ১৯৫৫তে অধিকর্তা গর্ডন ইয়ংকে লেখেন তাহলে কলেজের গোঁড়া পণ্ডিতদের প্রেজুডিস আহত হবে এবং তার ফলে সংস্থার জনপ্রিয়তা ও সম্মানে টান পড়বে। [17]

    ৫) বিদ্যাসাগরের পদত্যাগের পর ৪ নভেম্বর ১৮৫৮ তারিখে অধ্যক্ষ হন কাওয়েল সাহেব। উনি পাঁচ বছর পর ১৮৬৩ সালের মার্চ মাসে ‘জাতি নির্বিশেষে’ সমস্ত হিন্দুদের কলেজে প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব পাশ করান।

    লেখকের পূর্বপক্ষ:

    ১) যদি কাওয়েল পাঁচ বছর পরে এই অসাধ্য সাধন করে জাতি নির্বিশেষে সমস্ত হিন্দুকে বিনা কোন শর্ত ভর্তি করাতে পারেন, বিদ্যাসাগর কেন পারেন নি? পাঁচ বছরে কোন বড় সামাজিক পরিবর্তন হয়েছিল?

    ২) ওই সময়ে (১৯৫১) মহারাষ্ট্রে জ্যোতিবা ফুলের পত্নী সাবিত্রী বাঈ ফুলে “মাত্র এক বছরের মধ্যে শূদ্র ও অতিশূদ্রদের জন্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন ১৮টি বিদ্যালয়”। কিন্তু বঙ্গভূমিতে তাঁর কোন স্বীকৃতি নেই। বরং চূড়ান্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী বিদ্যাসাগর হলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষাসংস্কারক! [18]

    আমার উত্তরপক্ষ:

    ১) বিদ্যাসাগর প্রথম বছরে কায়স্থদের ভর্তির ব্যবস্থা করলেন। তিন বছর পর নবশাখ (নয়টি জাতির) দের জন্যেও অনুমতি পাওয়া গেল। তারপর কাওয়েল পাঁচবছরের মাথায় সমস্ত শূদ্রদের।

    ধরুন, একজন কেজি ক্লাস থেকে শুরু করে মিডল অব্দি পৌঁছে দিলেন। পরের জন মাধ্যমিক শুরু করলেন তো আমরা কি বলব যে আগের জন কিছুই করেনি, মাধ্যমিকও করতে পারেনি। যা করেছে পরের জন? একটা গেলাস পুরো খালি ছিল। আমি তার অর্ধেক জল দিয়ে ভরে দিলাম। তাহলে আমি গেলাস অর্ধেক খালি বলব নাকি অর্ধেক ভরা?

    হিন্দু কলেজে কি কেবল সংস্কৃত পড়ানো হত? হলে প্রথমে মনুবাদী সংস্কার কাজ করত। আর সোনার বেনে নিয়ে সংস্কারের উল্লেখ দেখুন বহুবছর পরে লেখা রবীন্দ্রনাথের চতুরঙ্গ উপন্যাসে। শ্রীবিলাস বিশ্বাসই করতে চায়নি যে শচীশ সোনার বেনে। শিক্ষিত পরিবারে সোনার বেনেকে কত নিচু নজরে দেখা হত তা উপন্যাসের প্রথম দু’পাতার মধ্যে ধরা রয়েছে। সেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে একটু একটু করে বিদ্যাসাগর বেড়া ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন? নাকি যথাস্থিতি অবলম্বন করেছিলেন?

    ভবিষ্যতে যখন ভারতে সমলিঙ্গে বিয়ে এবং লিভ ইন আইনি হবে তখন আমাদের আজকের দিনে এ’ব্যাপারে যে সংস্কার তা’ ঘৃণার চোখে দেখা হবে। কিন্তু আজ?

    ২) তথ্যটি পুরোপুরি ঠিক নয়, সাবিত্রীবাঈ ফুলে স্বামী জ্যোতিবা ফুলের সঙ্গে কাঁআজ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারাজীবনে ১৮টি স্কুল খোলেন, “মাত্র এক বছরে নয়”। [19]

    সারাভারতে তাঁর এবং জ্যোতিবা ফুলের অবদান আজ স্বীকৃত, আগে বঙ্গে তাঁদের ব্যাপারে কতটুকু জানা গিয়েছিল? আর দুজনের মধ্যে তুলনা কী করে হবে? একজন নিজে দলিত পরিবারের। স্বামী অগ্রগামী দলিতপক্ষধর সমাজ সংস্কারক। এই স্কুলগুলো তাঁদের প্রাইভেট ট্রাস্ট বানিয়ে ক্রমে ক্রমে খোলা, সরকারি স্কুল নয়। এই দম্পতি দলিতদের সম্মানের জন্যে সংঘর্ষ করতে গিয়ে উচ্চবর্ণের শারীরিক ও সামাজিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন বারবার।

    বিদ্যাসাগর নিজের জীবনের জন্যে এমন কোন লক্ষ্য নির্ধারণ করেন নি। তিনি তখনকার হিসেবে সংস্কৃত এবং রাজভাষা ইংরেজিতে শিক্ষা পেয়ে সরকারি সংস্থায় প্রিন্সিপাল। দুজনের জীবিকা, জীবনযাত্রা ও লক্ষ্যের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। একজনকে সম্মান করতে আরেকজনকে অপমান করতে হবে কেন?

    বিদ্যাসাগরের মূল্যায়ন হবে তিনি কেন সাবিত্রীবাঈ বা জ্যোতিবা ফুলে হন নি বলে নয়, বরং বিদ্যাসাগর হয়ে তৎকালীন সমাজের জন্যে কী কী করেছেন বা আদৌ কিছু করেছেন কিনা তার নিরিখে। যাঁরা বিদ্যাসাগরকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাসংস্কারক বলেন তাঁরা কেবল বঙ্গের এবং বাংলাভাষার সন্দর্ভেই বলেন।এখানে সাবিত্রী বাঈয়ের সঙ্গে তুলনা অনপেক্ষিত।

    সাবিত্রীবাঈ ও বিদ্যাসাগরের স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা নিয়ে কথা বলা হবে পরের কিস্তিতে।

    [1] বিদ্যাসাগরঃ নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণের আখ্যান, পৃঃ ৯৭
    [2] ঐ,পৃঃ ৯৯।
    [3] ঐ, পৃঃ ৯৯।
    [4] ঐ, পৃঃ ৯৯।
    [5] ঐ, পৃঃ ১০০।
    [6] ঐ, পৃঃ ১০১।
    [7] ঐ, পৃঃ ১০১।
    [8] ঐ, পৃঃ ১০২।
    [9] ঐ, পৃঃ ১০২।
    [10] ঐ, পৃঃ ৫২।
    [11] ঐ, পৃঃ ১০৩।
    [12] ঐ, পৃঃ ১০৪।
    [13] ঐ, পৃঃ ১০৮।
    [14] ঐ, পৃঃ ১০৯।
    [15] ঐ, পৃঃ ১১১।
    [16] ঐ, পৃঃ ১১৩।
    [17] ঐ, পৃঃ ১১৪।
    [18] ঐ, পৃঃ ১১২।
    [19] ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ১৯ জুন ২০২১ | ২২৪৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন