এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপর বাংলা

  • বাঘাইছড়ির আশ্চর্য দেবশিশুগণ .

    বিপ্লব রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ০৬ মে ২০২০ | ২৪৬৫ বার পঠিত

  • [বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আদিবাসী পাহাড়ি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো হিংসার ফল্গু ধারা বয়ে যায়। জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে কখনো বাঙালি সেটেলারদের অস্ত্রে নিজ ভূমেই শিকার হন আদিবাসী। হিংসার অনলে পুড়ে খাক হয় একের পর এক পাহাড়ি গ্রাম। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ উস্কানিতে অন্তত চার দশক ধরে পাহাড়ে প্রকাশ্যে চলছে এই জাতিগত নিধনযজ্ঞ। এ যেন রাষ্ট্রের ভেতরে আরেক রাষ্ট্র, স্বাধীন বাংলার নয়া উপনিবেশ।]



    আমরা তো ভুলি নাই শহীদ



    সেদিন সন্ধ্যা হতে না হতেই তথ্য সাংবাদিকতার সূত্রে একের পর এক আসতে থাকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ির সহিংসতার তাজা সব খবর। জানা যায়, জায়গা-জমি দখলের উন্মোত্ততার শিকার হয়েছেন কয়েকটি গ্রামের পাহাড়ি মানুষ। অন্তত দু-জন পাহাড়িকে নিরাপত্তা বাহিনী ও সেটেলাররা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আরেকজন গুম খুন হয়েছেন। ‌“নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর” ধ্বণীতে মহান সৃষ্টিকর্তার নামে নির্বিচারে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক পাহাড়ি গ্রাম, বৌদ্ধ মন্দির, স্কুল, হাট-বাজার।…   



    স্থানীয় সাংবাদিকরা ছাড়াও বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখীরা একের পর এক টেলিফোন করতে থাকেন, টেক্সটের পর টেক্সট, ইমেইলের পর ইমেল, ফ্যাক্সেও আসে কিছু খবর। মুহুর্মুহু গুলি, ধারালো দায়ের কোপ, মশালে পুড়িয়ে দেওয়া সারি সারি আদিবাসী গ্রাম, আর ভয়ার্ত মানুষের আর্তনাদ একের পর এক সিনেমার স্লাইডের মতো মূর্ত হতে থাকে এতোশত মাইল দূরে পাষানপুরীর হিমশীতল নিউজ রুমে। এ যেন স্বাধীন দেশেই আরেক ১৯৭১ সাল! পাকিস্তান সেনা বাহিনী যে নির্মম অপরারেশন সার্চ লাইট চালিয়েছিল এদেশে, এখন জয় বাংলার নিরাপত্তা বাহিনী যেন একাই পদাংক অনুসরণ করে চলেছে!…   



    পাহাড়ে এখনো পাকিপনা



    ২০১০ সালের ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি বাঘাইছড়ির ওই বর্ববরতার দিন দশেক পরে ঘটনার সরেজমিন তদন্তে পৌঁছানো গেল বাঘাইহাট বাজারে। মার্চ পহেলা খর দুপুরে বাজারের রাস্তার দু-পাশে সার সার পোড়া ঘর-বাড়ির কংকাল, মাটির ঘরের ধ্বংসস্তুপ। বাজারের পোড়া দোকান-পাটের টিনগুলো আগুনের উত্তাপে বেঁকেচুড়ে ছিন্নভিন্ন বাতিল খবরের কাগজের মতো এখানে-সেখানে পড়ে আছে।



    ওই আগুনে পোড়া বাজারের সড়কেই দেখা মেলে কিছু আশ্রয়হীন, বিপন্ন পাহাড়ি নারী-পুরুষের, তাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে চাকমা জুম চাষী (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরণের চাষাবাদ), অল্প কিছু মারমা জাতিগোষ্ঠীও আছেন। ভাঙা চাকমা ভাষা ভরসা করে টুকরো আলাপে জানা যায়, তারা সেখানে  এসেছেন সামান্য ত্রাণের আশায়।



    পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গ্রিন হিল ছাড়াও আরো কিছু বেসরকরি সংগঠন চাঁদা তুলে বাঘাইছড়ির অসহায় মানুষের জন্য সামান্য কিছু চাল, আলু, শুটকি মাছ ইত্যাদি খাদ্য সাহায্য দিচ্ছে। স্থানীয় যাত্রী ছাউনিটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্থায়ী ত্রাণ কেন্দ্র হিসেবে। তালিকা ধরে মাইকে নাম ঘোষণা হতেই একেকজন নারী-পুরুষ সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ নিচ্ছেন। সবার চোখে-মুখে কেমন যেন চাপা আতংক, অজানা ভীতি খেলা করে। এতো মানুষের চলাচল, কিন্তু কোথাও কোনো কলরব নেই, সবাই কথা বলছেন ফিসফিসিয়ে, মুখে গামছা না হয় খাদি (তাঁতে বোনা চাকমা ওড়না) চাপা দিয়ে।





    বাজার থেকে একটু দূরে সড়কের একপাশে দেখা যায়, দুজন নিহত পাহাড়ির স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতির মিনার। সেখানে তীব্র রোদ ও ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে ঘুর ঘুরে করছে ছোট চাকমা ছেলেমেয়ের একটি দল। বাড়ির বড়রা যখন ত্রাণ নিতে ব্যস্ত, তখন এই সব শিশুর দল পোড়া ও প্রায় পরিত্যাক্ত বাজারে এদিক-সেদিক আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।  দুর্বল চাকমা ভাষা সম্বলে সহজেই কথোপকথন হয় শিশুদের সঙ্গে।





    আমার সোনার বাংলা          



    আলাপচারিতায় জানা গেল, নিরাপত্তা বাহিনী আর বাঙালি সেটেলারদের সহিংস আক্রমণের বিভীষিকাময় ছাপ পড়েছে কচি শিশুদের মনেও। গোলাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী এসব ছেলেমেয়ের এরই মধ্যে হয়েছে সশস্ত্র আক্রমণের নির্মম অভিজ্ঞতা। কম-বেশি এক সপ্তাহ জঙ্গলবাসও করেছে তারা। আগুনের কবল থেকে স্কুল ঘরটি রক্ষা পেলেও সবার বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়েছে জামা-কাপড়, বই-পত্র, বিছানা, হাড়িকুড়ি, আসবাব- সবই। এখনো থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। রাতে পরিবারের বড়রা নানা আশঙ্কার কথা বলাবলি করেন। তাই শুনে তারাও ভীত-সন্ত্রস্ত। কেউ জানে না, কবে পরিস্থিতি শান্ত হবে, কবে আবার তারা স্কুলে যেতে পারবে।…



    সুনীল কুমার চাকমা নামের এক শিশু ২০ ফেব্রুয়ারির (২০১০) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই প্রতিবেদককে বলে, “গুলি শুরু হতেই মা আমাকে নিয়ে হাত ধরে জঙ্গলের দিকে পালাতে থাকেন। দূরে বাঙালি সেটেলারদের দা হাতে আমি আমাদের গ্রামটির দিকে দৌড়ে আসতে দেখি। ভয়ে আমি তখন চিৎকার করে কাঁদছিলাম।“…



    পরান থু চাকমা বলে, “জঙ্গলের ভেতরে অনেক পাহাড়িসহ আমরা এক নাগাড়ে কয়েকদিন লুকিয়ে ছিলাম। সেখানে একদিন-একরাত আমরা ভাত-পানি কিছুই খাইনি। পরদিন মা জঙ্গল থেকে বুনো আলু খুঁজে এনে খাইয়েছেন।“…



    অনিশ্চয়তার ভেতরে অভুক্ত অবস্থায় জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে একই শ্রেণীর ছাত্রী কমলা রানি চাকমারও। সে বলে, “জঙ্গলের ভেতর খিদের জ্বালায় আমরা ছোটরা অনেকে কান্নাকাটি করছিলাম। বড়রা সবাই লাঠি নিয়ে আমাদের পাহারা দিচ্ছিলেন। তারা বারবার আমাদের কান্না করতে নিষেধ করছিলেন। তারা বলছিলেন, কান্নার শব্দে হয়তো সেটেলার বাঙালিরা জঙ্গলের ভেতরে আমাদের অবস্থান জেনে ফেলবে; তখন তারা সেখানেই দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করবে আমাদের।“…



    কনক বিকাশ চাকমা বলে, “আমাদের ঘরবাড়ি, বই-পত্র, জামা-কাপাড় সব আগুনে পুড়ে গেছে। এক জামা-কাপড় পরে থাকতে ভালো লাগে না। আবার স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। আগের মতো খেলাধুলা করতে ইচ্ছে করে।“...



    আরো তথ্য সংগ্রহ, আরো আলোকচিত্র গ্রহণ করে একের পর এক সরেজমিন সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করা হয় সে সময়ের কর্মস্থল দৈনিক কালের কণ্ঠে। করা হয় কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিবেদন। পাহাড়িদের কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন ও ব্লগের জন্যও লেখা হয় নোট। উইকিমিডিয়ায় দান করা হয় কয়েকটি ছবি।



    শত ব্যস্ততা, নিত্যকর্ম, কর্পোরেট কার্টিসির ব্যুহ ভেদ করে বার বার মনের গহিনে গোপনে হানা দেয় পাহাড়ের গণহত্যা, গণধর্ষন, ত্রিপুরার শরণার্থী শিবির, কল্পনা চাকমা অপহরণ, মেশিন গানের গুলির ভেতর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মিছিল-- আরো অসংখ্য রক্তাক্ত অতীত স্মৃতি… কেউ জানে না সে এক গোপন হরর থ্রিলার যাত্রা, ব্যাং ব্যাং ক্লাবের একই কেভিন-যন্ত্রণা! আর ঘুমের ঘোরে এখনো ফিরে ফিরে আসে বাঘাইছড়ির সেই আশ্চর্য দেবশিশুর দল।...



    __



    ছবি © : নিহতদের স্মরণে স্মৃতির মিনার এবং আশ্রয়হীন শিশুর দল, বাঘাইছড়ি, মার্চ ২০১০, লেখক


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপর বাংলা | ০৬ মে ২০২০ | ২৪৬৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ০৬ মে ২০২০ ১৪:৩৫93064
  • কী ভয়াবহ কঠিন বাস্তব !  অথচ এইরকম তো হবার কথা ছিল না ! 

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 162.158.166.134 | ০৬ মে ২০২০ ১৫:০৪93066
  • সবসময়ই রিপোর্ট গুলি পড়ি
  • ar | 108.162.219.173 | ০৭ মে ২০২০ ০৬:২২93080
  • @ বিপ্লব

    প্রান্তিক মানুষের সংগ্রামের কথা গুরুর পাতায় তুলে আনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

    দুটো প্রশ্ন থেকেই যায় .....

    এই যে সারাজীবন ধরে বইপত্তরে এই কথাগুলো পড়ে এলাম ......
    "তৎকালীন জেনারাল টীক্কা খান ২৫শে মার্চের ভোরে তার অধঃ্স্তন অফিসার খাদিম হুসেন রাজাকে বলিলেন, " খাদিম, আজ রাতেই।"। সেই আদেশ পেয়েই রাজা আর তার বহিনী, ২৫শে মধ্যরাত্রি থেকে নির্বিচারে (বাঙ্গালী) গণহত্যায় মেতে ওঠেন। এর পরের তিন চারদিন ধরে, ঢাকা ও তার পার্শবর্তী এলাকাতে, পাক-সেনাবহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।" মৃতের প্রকৃত সংখ্যা বোধ্করি আজও জানা যায়নি"। (সৈয়ধ বদরুল আহসান, ঢাকা ট্রিইবিউন, ২০১৬)।

    আমার ছেলের বয়স বছর পনেরো, নাম দায়েদ, গোরিলা বহিনীতে যোগ দিয়েছে। আমরা মানা করেছিলাম, কিন্তু সে শোনেনি। বল্লাম, বাছা তোর ভয় লাগে না .... ত সে বলে, "ভয়!! আমার হাতের বন্দুক আমার হয়ে জবাব দেবে।"
    দিগন্ত কালো ধোঁয়ার ঢাকা, নৌকার মাঝিকে গিয়ে শুধালে জবাব পাই, "ওরা গ্রাম জ্বালায় দিসে, চাইরটা গ্রাম"। পাক বাহিনী চারটা গ্রাম মুক্তিবাহিনীর ছেলেদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে সম্পুর্ন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। (Hunting for Mukti Bahini, Behind the lines, John Saar, Bangladesh in Life Magazine, 1971 বাঙ্গালাদেশ আর্কাইভ; বাঙ্গালাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, ১৯৮২)

    "ভৈরব হতে ট্রেনযোগে প্রায় দু শতাধিক হানাদার সৈন্য ভারী অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঐদিন বিকেল ৪ ঘটিকায় কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশনে উপস্থিত হয়। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের সমস্তলোক তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করে দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়" (বাঙ্গালাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, ১৯৮২)।

    আবার আজকে আপনার লেখাই পড়লাম।।

    "গুলি শুরু হতেই মা আমাকে নিয়ে হাত ধরে জঙ্গলের দিকে পালাতে থাকেন। দূরে বাঙ্গালি সেটেলারদের দা হাতে আমি আমাদের গ্রামটির দিকে দৌড়ে আসতে দেখি। " .......
    পরান থু চাকমা বলেন, " জঙ্গলের ভেতরে অনেক পাহাড়িসহ আমরা এক নাগাড়ে কয়েকদিন লুকিয়েছিলাম"। (বাঘাইছড়ির আশ্চর্য দেবশিশুগণ, বিপ্লব রহমান)

    কালের প্রবাহে অত্যাচারিতের নিজেই অত্যাচারীর ভূমিকায় রূপান্তর, এ কি রাতারাতি ঘটে গেল, না এক স্বাধীন রাষ্ট্রের শৈশবকাল থেকেই প্রান্তিক (পার্বত্য চট্টগ্রাম) মানুষের প্রতি (রাষ্ট্রের) নিদারুণ অবহেলা ধীরে ধীরে ৪০-৫০ বছর ধরে ক্রমেই অত্যাচারের মহীরুহতে পরিণত হল।

    আপনার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ে চলেছি।
  • বিপ্লব রহমান | ০৭ মে ২০২০ ০৭:০০93081
  • প্রতিভা দি,  বোধিস্বত্ত্ব, 

    এই আমার দেশ।  সংগে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।       

  • বিপ্লব রহমান | ০৭ মে ২০২০ ০৮:০৬93082
  • ar, 

    "এক স্বাধীন রাষ্ট্রের শৈশবকাল থেকেই প্রান্তিক (পার্বত্য চট্টগ্রাম) মানুষের প্রতি (রাষ্ট্রের) নিদারুণ অবহেলা ধীরে ধীরে ৪০-৫০ বছর ধরে ক্রমেই অত্যাচারের মহীরুহতে পরিণত হল।" 

    প্রথমেই আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।      

    আপনার ওই বক্তব্যের ভেতরেই আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের করুণ ইতিহাস।  খুব সংক্ষেপে- 

    পাহাড়িদের বঞ্চনার শুরু পাকিস্তান আমলেই।  ৬০ দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় এক লাখ পাহাড়ি আদিবাসীকে উদ্বাস্তু করা হয়।

    স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে  উপেক্ষিত হয় আদিবাসীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি। আট ও নয়ের দশকে জিয়া-এরশাদ- খালেদা সরকার  পাহাড়িদের গেরিলা গ্রুপ শান্তি বাহিনী দমনের নামে পাহাড়ে ব্যাপক সামরিকায়ন ও বাংগালি সেটেলার অনুপ্রবেশ ঘটায়।  নিরাপত্তা বাহিনী ও সেটেলারদের যৌথ হামলায় পাহাড়ি জনপদে অন্তত ১৩টি গণহত্যা হয়। ৭০ হাজার পাহাড়ি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন ত্রিপুরায়।

    আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তিতে শান্তি বাহিনী অস্ত্র জমা দেয়,  শরণার্থীরা দেশে ফেরে, আড়াই দশকের গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।   

    কিন্তু এরপর গত আড়াই দশকে শান্তি চুক্তির মৌলিক শর্ত (যেমন, ভূমির ওপর পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠা) তেমন কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু পাহাড়ে জমির বিরোধ আরো বেড়েছে। আর  সেটেলার বাংগালী ও নেপথ্য উস্কানিদাতা নিরাপত্তা বাহিনীর একই জাতিগত বিদ্বেষ রয়েই গেছে।  এরই জেরে রামগড়, বাঘাইছড়ি, মাটিরংগা, লংগদু জনপদে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। 

    এই লেখায় এরই একটি খণ্ড চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।  আরও দেখুন : 

    https://intercontinentalcry-org.cdn.ampproject.org/v/s/intercontinentalcry.org/life-is-still-not-ours-a-story-of-chittagong-hill-tracts/amp/?amp_js_v=a3&amp_gsa=1&usqp=mq331AQFKAGwASA%3D#aoh=15888133204729&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&amp_tf=From%20%251%24s&ampshare=https%3A%2F%2Fintercontinentalcry.org%2Flife-is-still-not-ours-a-story-of-chittagong-hill-tracts%2F

           

                                                                  

                                

  • ar | 162.158.62.108 | ০৮ মে ২০২০ ১০:২৪93113
  • @ বিপ্লব

    আপনাকে আবার ধন্যবাদ জানাই।
    হ্যাঁ, কাপ্তাই প্রকল্পের কথা আমি পড়েছি। কিন্তু পাকিস্থানী আমলের ভুল শোধরানোর একটা সুবর্ণ
    সুযোগ ছিল ১৯৭২ এ। আর এম এন লারমা তো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন প্রথম সংসদের সদস্যই ছিলেন। এটা দুর্ভাগ্য যে, পার্বত্য জনজাতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়া বা তাদের দাবীগুলো সম্পুর্ণ উপেক্ষা করা, এই কাহিনীর পার্শ্ব-রচয়িতা স্বয়ং বঙ্গবন্ধু!! (বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার পারিবারিক অসীম শ্রদ্ধার জায়গায় দাঁড়িয়েই এইটা লিখলাম!) । এইটাই আমাকে একাধারে অবাক করে এবং ব্যথিতও করে।

    বাঙ্গালাদেশ স্বাধীনতার গণ-আন্দোলনে পার্বত্য জনজাতির ভূমিকা বা অবদান, একটু বৃহত্তর আঙ্গিকে,
    বাঙ্গালাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান কী ছিল, এই সংক্রান্ত কোন অ্যাকাডেমিক কাজ হয়েছে কি? হয়ত এই বিষয়টি আগামী প্রজন্মের কাছে আরও ভালভাবে তুলে ধরতে পারলে জনজাতির জীবনে শান্তি ফিরে পাওয়ারও সম্ভব্না বাড়বে।

    আপনার প্রতিবেদনগুলি মন দিয়ে পড়ি। ভাল থাকবেন।
  • বিপ্লব রহমান | ০৮ মে ২০২০ ১৬:৩৪93115
  • ar, 

    স্বাধীনতার পরে বাংগালী জাতীয়তাবাদের জোয়ারে হয়তো আদিবাসীদের স্বাধিকারের দাবি ভেসে গিয়েছিল। 

    একদা পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথিপত্রসহ মুক্তমনা ব্লগে ধারাবাহিক লিখেছিলাম, পুরো লেখাটি আমার বইয়ে আছে, এর প্রথম পর্ব এখানে : 

         https://blog.mukto-mona.com/2011/12/15/20676/            

  • ar | 162.158.63.61 | ০৯ মে ২০২০ ০০:৫৯93129
  • বিপ্লব,

    হ্যাঁ, প্রাথমিক জোয়ার কিছুটা নেমে যাওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘায়ু হওয়ার সৌভাগ্য লাভ, এই দুটির সমাপতন হলে, হয়ত ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতে পারত।
    মুক্তোমনার লিংকটা জন্য ধন্যবাদ।

    শুভেচ্ছা,
  • বিপ্লব রহমান | ০৯ মে ২০২০ ০৮:৪২93135
  • ,ar, 

    কাল মোবাইলে চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছিল,  দ্রুততায় বলা হয়নি। সংগে থাকার আবারও আপনাকে ধন্যবাদ। শুভ       

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন