এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • তেল, তেল-এ (পর্ব - ১১)

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৪ মার্চ ২০২০ | ১৮৩০ বার পঠিত
  • পর্ব – ১১) : ওয়ার্ল্ড এনার্জী আউটলুক ২০১৯
    ---------------------------------------------------------------

    ইন্টারনেশ্যানাল এনার্জি এজেন্সি প্রতিবছর এক গাব্দা রিপোর্ট বের করে ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক’ নামে। সেইমত কিছুদিন আগে বেরিয়েছে ২০১৯ সালের রিপোর্ট – ৮১০ পাতার সুবিশাল রিপোর্ট। এতে তেল ছাড়াও আছে গ্যাস, কয়লা, বিদ্যুত সহ বাকি আরো কিছু রিন্যুউএবেল জ্বালানীশক্তি নিয়ে আলোচনা। তবে আমাদের এই লেখা তেল সংক্রান্ত বলে, ওই রিপোর্টে তেলের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কি দাবী দাওয়া আছে তাই দেখব এখন।

    আমরা এই মুহুর্তে জ্বালানীশক্তি নিয়ে আলোচনায় হুড়ুম-দুড়ুম যাই বক্তব্য রাখি না কেন – ব্যাপার হল গড়পড়তা পুরো পৃথিবী মধ্যপ্রাচ্যের তেলের উপর এখনো ভীষণভাবে নির্ভরশীল। সামগ্রিক ভাবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য বিশ্ব-বাজারে তেলের সর্ববৃহৎ সরাবরাহকারী এবং তার সাথে এল এন জি (লিক্যুইফায়েড ন্যেচার‍্যাল গ্যাস)। এশিয়া মহাদেশের দেশ যেমন ভারত, চীন, জাপান এবং কোরিয়া অদূর ভবিষ্যতেও এই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানীকরা তেলের উপর নির্ভর করে থাকবে। এই মুহুর্তের হিসাব অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক তেল-বাণিজ্যের প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রিত হবে এশিয়াতে। এবং আমাদের দেশ ভারত এর পিছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে – কারণ, আমাদের নিজেদের তেমন কিছু তেল-টেল নাই, আর ওদিকে চাহিদা বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। মানে ভারতকে আর আরো বেশী করে তেল কিনতে হবে। এইভাবেই ‘হারমুজ প্রণালী’, যা কিনা যুক্ত করছে পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরকে, এবং সেখান থেকে আরব সাগরে - তা হয়ে উঠবে আরো আরো গুরুত্বপূর্ণ তেলের বাণিজ্য চালাবার জন্য। এই জল পথ ধরেই তেল সহজে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসবে বাকি এশিয়ার বাজারে বা দরকার মত বাকি বিশ্বে।

    সামগ্রিক জ্বালানী চাহিদা যে গতিতে বৃদ্ধি পাবে, তার থেকেও দ্বিগুণ গতিতে বৃদ্ধি পাবে বিদ্যুত শক্তির ব্যবহার – আর এই ভাবেই আধুনিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদের অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠবে বিদ্যুত শক্তি। এই যে বলা হচ্ছে বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণ হবে, তা সেটা মূলত কিসের জন্য তা তলিয়ে দেখলে জানা যাবে এর প্রধান অবদান থাকবে মূলত চীনে শিল্প কাজে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার, আর তা ছাড়া গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি, শীত-তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি। শক্তির চূড়ান্ত ব্যবহারের হিসাব অনুযায়ী আজকের দিনে বিদ্যুতের ব্যবহার তেলের ব্যবাহারের অর্ধেক, কিন্তু এটা প্রোজেকশন করা হচ্ছে যে ২০৪০ সাল নাগাদ শক্তি হিসাবে বিদ্যুতের ব্যবহার তেল-কে ছাপিয়ে যাবে। এই বিদ্যুত শক্তি উৎপাদনের মূল স্তম্ভ ভবিষ্যতে হবে বায়ু-শক্তি এবং সৌরশক্তি। এদের ব্যবহার সেই ভাবে বাড়ার কথা তেমন চললে ২০২৫ সাল বা তার কিছু পরেই কয়লা থেকে বিদ্যুত শক্তি উৎপাদনে ছাড়িয়ে যাবে বায়ু এবং সৌর। ২০৪০ সালের মধ্যে কম-কার্বন সোর্স থেকে উৎপন্ন বিদ্যুত শক্তি হয়ে যাবে মোট বিদ্যুত শক্তি উৎপাদনের অর্ধেক – বায়ু এবং সৌর শক্তির ভাগ থাকবে বেশী, তবে জলবিদ্যুত (১৫%) এবং পারমাণবিক শক্তি (৮%) তাদের অবদান রাখবে।

    ভারতের ক্ষেত্রে সৌরশক্তি-র অবদানকে দেখা হচ্ছে আমাদের দেশের শক্তির চাহিদা পূরণের এক খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে। তবে সৌরশক্তির চূড়ান্ত সার্থকতার সাথে জুড়ে থাকবে ব্যাটারি-তে কত কম পয়সায় শক্তি স্টোর করা যায় সেই বিষয়ক সাফল্যের ব্যাপারটা। এটা মোটামুটি প্রমাণিত যে সৌর-শক্তি এবং ব্যাটারী-র কম-খরচের যুগলবন্দী ভারতের এনার্জী ফিউচারের প্রধান ঘুঁটি।

    নীচের তিনটি ছবি থেকে দেখে নেওয়া যাক পৃথিবীতে শক্তির ব্যবহার কিভাবে পরিবর্তিত হতে পারে ২০২০-২০৪০ সালের মধ্যে এবং কোন প্রকার জ্বালানীর অবদান কতটা সেই শক্তি অর্জনে।







    এই গ্রাফগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, চীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শক্তি ব্যবহারকারী হিসাবেই থেকে যাবে আপাতত – তবে এই যে শক্তির ক্রমাগত চাহিদাবৃদ্ধি, এতে আমাদের দেশের অবদান সবচেয়ে বেশী। তেলের নিয়ন্ত্রন, সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে বর্তমান বিশ্বের দুশ্চিন্তা রাতারাতি হাপিস হয়ে যাবে না। তেল মার্কেটের টানাপোড়েন, সাপ্লাই-ডিম্যান্ড ইত্যাদি আপাতত চলতেই থাকবে। এখন যা চলছে তেমন ভাবেই চললে দেখা যাবে ২০৩০ পর্যন্ত পৃথিবীতে তেল উৎপাদনের পারিমাণ যদি বৃদ্ধি হয়, তার প্রায় ৮৫% আসবে আমেরিকা থেকে। এমন অবস্থা চলে আসবে যে আমেরিকা তখন তেল আমদানী থেকে সরে গিয়ে বিশ্বে তেল রফতানী করতে লাগবে।



    ২০২৫-২০৩০ সালের মধ্যে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে যাবে সর্ববৃতহৎ কয়লা আমদানী-কারী দেশ হিসাবে। ২০১৮ সালে ভারতের যা তেলের দরকার ছিল জ্বালানী হিসাবে তার ৮৩% আমদানী করা হয়েছিল। প্রোজেকশন বলছে যে এই ভাবে চললে, ২০৪০ সালের সেই ভাগটা বেড়ে ৯২% হবে। অনুরূপ ভাবে ২০১৮ থেকে ২০৪০ আমদানী করা গ্যাসের ভাগ বেড়ে হবে ৪৯% থেকে ৭৪%। ২০১৮ সালে ভারতের মোট দরকারী জ্বালানীর ১৮% আমদানী করা হয়েছে – আর ২০৪০ সাল নাগাদ আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমদানী করতে হবে প্রায় ৩৫%।

    বিশ্বের তেলের চাহিদা এখনো প্রায় দু-দশক বাড়তেই থাকবে, এবং তারপর আশা করা হচ্ছে ক্রমশঃ চাহিদা কমতে থাকবে। ২০১৮ সালে বিশ্বে তেলের চাহিদা ছিল প্রায় ৯৭ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন। সেটা প্রতিবছর ১ মিলিয়ন ব্যারেল করে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তারপর থেকে ০.১ মিলিয়ন/দিন প্রত্যেক বছর করে বেড়ে ২০৪০ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ১০৬ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন। চীনে তেলের চাহিদা মনে করা হচ্ছে বেড়ে যাবে ক্রমশঃ ২০৩০ সাল অবধি, সর্বোচ্চ ১৫.৭ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন। ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ তৈল খাদক হিসাবে চীন ছাড়িয়ে যাবে আমেরিকা-কে, কারণ আমেরিকা ততদিনে নিজের দেশে তেল তুলে চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী যোগ্য হয়ে উঠবে। ভারতে তেলের চাহিদা এখনকার থেকে বেড়ে দ্বিগুণ বেড়ে ৯ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন হবে ২০৪০ সাল নাগাদ।

    আমেরিকাতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের বাড়বাড়ন্ত বেশীর ভাগটাই আসবে ‘টাইট-ওয়েল’ থেকে, ২০১৮ সালের ৬ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন থেকে বেড়ে ২০৩৫ সালে দাঁড়াবে ১১ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন। তবে মনে রাখা ভালো, এই টাইট-ওয়েলের বাড়ন্তের ব্যাপারটা কিন্তু একটা প্রোজেকশন – প্রচুর অনৈশ্চয়তা আছে এর মধ্যে। মনে করা হচ্ছে তেল তোলার প্রযুক্তি বিদ্যার দ্রুত উন্নতি হয়ে এই বৃদ্ধি সম্ভব – কিন্তু আশানুরূপ উন্নতি না হলে প্রায় ২ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন এর এদিক ওদিক হতে পারে উৎপাদনে। প্রযুক্তি ছাড়াও আছে পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপার – এমন হতে পারে যে তৈল নিষ্কাষণ বেশ কিছু জায়গায় বন্ধ হয়ে গেল পরিবেশ দূষণের কারণে। আর যাই হোক, তেল তোলা খুব একটা ইকো ফ্রেন্ডলি কিছু ব্যাপার নয়।

    আমেরিকা ছাড়াও ওদিকে রয়েছে ব্রাজিল ডিপ-ওয়াটার এর আরো বেশী করে তেল তোলার সম্ভাবনা। ব্রাজিলের এই যে তেলের বেশী উৎপাদন সেটা কিছু শুধুমাত্র সেই দেশের উপরেই প্রভাব ফেলবে না, এর সুদূর প্রসারী প্রভাব দেখা যাবে সারা পৃথিবীর জিও-পলিটিক্সে। ব্রাজিলে যদি সত্যিই যা ভাবা হচ্ছে তেমন আশানুরূপ তেল ওঠে, তাহলে ওপেক (OPEC) দেশ এবং রাশিয়ার তেল আধিপত্য হয়ত অনেকটা কমে যাবে – এদের মিলিত তেলের মার্কেট শেয়ার কমে ৪৭% হয়ে যাবে ২০৩০ সাল নাগাদ। তাহলেও রাশিয়া এবং ওপেক দেশগুলি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ থেকে যাবেই যতদিন না তেলের বাজার শেষ হয়ে আসে।

    ওদিকে ধারণা করা হচ্ছে যে ২০৪০ সালে গিয়ে দেখা যাবে প্রতি বছর প্রায় তিন কোটি ইলেক্ট্রিক প্যাসেঞ্জার গাড়ি বিক্রী হচ্ছে বাজারে, আর ততদিনে রাস্তায় মোট ইলেক্ট্রিক গাড়ির সংখ্যা হয়ে গেছে প্রায় ৩৩ কোটি। এতগুলো গাড়ি বিদ্যুত চালিত হয়ে যাওয়া মানে আজকের দিনের ডিজেল বা পেট্রোল চালিত গাড়ির সংখ্যা কমবে – এবং এর ফলে তেলের চাহিদা কমতে পারে ৪ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন। তবে এর গণনার পিছনেও কিন্তু একটা ক্যাচ আছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে যে আজকের দিনের এই যে এস ইউ ভি (SUV) টাইপের গাড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, তা ২০৪০ সালের বেশ কিছু আগেই সাম্য অবস্থায় চলে আসবে। কিন্তু এই গাড়ির চাহিদা যদি তখনও বাড়তে থাকে তা হলে তেলের চাহিদা কমা তো দূরের কথা, বরং ২ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন বেড়ে যাবে। আসলে এই SUV গুলি বেশ বড়সড় আকারের হয় এবং তার জন্য এদের ইলেকট্রিক গাড়িতে পরিবর্তন করা খুব শক্ত।

    যত দিন যাবে এশিয় মহাদেশ ক্রমশঃ তেলের আমদানী বাড়াতে থাকবে – ২০২০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে আমেরিকা তেল রপ্তানীতে সৌদি আরব-কে ছাড়িয়ে যাবে। আর তেলের চক্করে যে কিছু কিছু জলপথ, বিশেষত প্রণালী এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে তাই বা আমার মত আমজনতা কি আগে আঁচ করতে পেরেছিল? আগেই ‘হারমুজ-প্রণালীর’ কথা উল্লেখ করেছিলাম – পেনাং সহ মালয়েশিয়ার আরো দু-এক্টা শহরে বেড়াতে গিয়ে ‘মালাক্কা প্রণালীর’ দিকে তাকিয়ে থেকে সৌন্দর্য্য উপভোগ করতাম। হারমুজের মত মালাক্কাও তেল যাতায়াতের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। এখনকার হিসেব মত ২০৪০ সাল নাগাদ মালাক্কা প্রণালী দিয়ে ২৬ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন তেল আসা যাওয়া করবে, আর হারমুজ দিয়ে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এই দুই প্রণালীর সুরক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ থেকে যাবে অদূর ভবিষ্যতেও। তেল ট্যাঙ্কারের এবং মধ্যপ্রাচ্যে তেল বাণিজ্যের সাথে যুক্ত পরিমাঠামোয় যে সব আক্রমণ হয়েছিল বা হচ্ছে – ওদিকে ভেনিজুয়েলা, ইরান, লিবিয়া এই সব দেশে যা হচ্ছে – তা মাঝে মাঝেই দেখিয়ে দেয় তেল ব্যবসা কতখানি জিও-পলিটিক্স এর উপরে নির্ভরশীল। বেশী ধুন্ধুমার শুরু হয়ে গেলে আজকের তেল ব্যবসার এই প্রোজেকশন পাল্টাতে বেশী সময় লাগবে না।



    তো নানাদিক খতিয়ে দেখে ওয়ার্ল্ড এনার্জি এজেন্সি তিনটে বিষয় চিহ্নিত করেছে যা কিনা তেলের বাজারের ভবিষ্যত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে – ১) গাড়ির মালিকানার পরিবর্তনের প্রভাব, ২) আমেরিকার ‘টাইট-ওয়েল’ এর ভূমিকা, ৩) তেলের সুরক্ষার প্রভাব

    ১) গাড়ির মালিকানার পরিবর্তনের প্রভাবঃ আজকের দিনে তেলের সবচেয়ে বড় মার্কেট হচ্ছে গাড়ি। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে তৈল চালিত গাড়ি থেকে সরে বাজারে ইলেকট্রিকে গাড়ি ইত্যাদি আসছে। ওদিকে গাড়ি বিক্রী কমেছে, কিন্তু ভীড়-ভাট্টার শহরে মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশী ব্যবহার করছে – শেয়ারে গাড়ি ব্যবহার করছে। তবে এও দেখা গেছে যে মানুষের বড় গাড়ির দিকে ঝোঁক বাড়ছে যারা অত এনার্জি এফিনিয়েন্ট নয়। তাই সব মিলিয়ে এক ডেলিকেট ব্যালেন্স। ২০১৯ সালে চীনে গাড়ি বিক্রী কমেছে ১৪%, ভারতে ১০%, ইউরোপে ৩% এবং আমেরিকাতে ২%।

    ২) আমেরিকার ‘টাইট-ওয়েল’: নির্ধিদ্ধায় বলা যেতে পারে যে তেলের বাজারে টাইট-ওয়েলের থেকে বড় খবর গত দুই দশকে কিছু আসে নি। কেমন ভাবে এই বাজারটা বিবর্তিত হয় তার উপরে শুধু আমেরিকা নয়, নির্ভর করছে সারা বিশ্বের তেলের দোলচাল। প্রথমদিকে এই বাজারটা শুরু হয়েছিল পাবলিক ফান্ডিং দিয়ে, পরে নানা ছোট-খাট কোম্পানী মার্কেট ছেয়ে ফেলে। এখন দেখা যাচ্ছে বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানী গুলোও বাজারে ঢুকে পড়েছে। তবে চাপও আছে প্রচুর – অনিন্ত্রিত বাড়াবাড়ি হলে যা হয় আর কি, ঠিক মত পরিকাঠামো গড়ে ওঠে নি অনেক জায়গায়। তাছাড়া পরিবেশে জলের ব্যবহার, অতিরিক্ত গ্যাসের জ্বলন, আশেপাশের জনতার প্রচুর অসুবিধার সৃষ্টি করা – এই সব নিয়ে ঘেঁটে আছে অনেক। আর তা ছাড়া আছে ক্যাস ফ্লো-র দিকে একটা অর্থনৈতিক ব্যাপার। প্রথম দিকে তারাতাড়ি সব বাড়াতে গিয়ে লং টার্ম প্ল্যান-গুলো তেমন জুতসই হয় নি।

    ৩) তেলের সুরক্ষারঃ আমেরিকা তার তেলের উৎপাদন বাড়ালে তার প্রভাব ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। আর তা ছাড়া ওই হারমুজ বা মালাক্কা প্রণালীর কথা তো আগেই লিখেছি। বিশেষ করে হারমুজ প্রণালীর উপর মধ্য প্রাচ্যের তেল ব্যবসার অনেক কিছু নির্ভর করে আছে। কেবলমাত্র সৌদি আরব এবং ইউ এ ই পারে তাদের কিছু তেল রপ্তানী করতে এই হারমুজ প্রনালী ব্যবহার না করে পাইপলাইনের মাধ্যমে। যদি এই হারমুজ কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তা প্রভাব ফেলবে ১৬ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন, মানে বিশ্ব তেল বাজারের ১৭%। ২০১৯ সালে সৌদি আরবে তেল-কারখানা ধ্বংস হইয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫.৭ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন সরাবরাহ হয়ে গিয়েছিল, এর ফলে সামইয়িক ভাবে বাজারে ২০% দাম বাড়ে তেলের।

    তো যাই হোক, এই যে এত তেল তেল করছি, তা এই তেল ব্যবহার হচ্ছে কোথায় বা ২০৪০ সাল নাগাদ তার প্রোজেকশনই বা কি? নীচের ছবিতে দেখা যাবে সেই সবঃ



    [ক্রমশঃ]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ মার্চ ২০২০ | ১৮৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 162.158.167.17 | ১৪ মার্চ ২০২০ ১৫:১৪91458
  • আগের লেখাটার সাথে যোগ করতে পারলাম না - 'সম্পাদনা' ব্যাপারটা কাজ করল না। তাই আলাদা করেই দিয়ে দিলাম।

    যারা আগের পর্বগুলোর সন্ধান চান, এখানে পাবেনঃ

    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=১৩৯৭৪
  • সে | 162.158.150.21 | ১৪ মার্চ ২০২০ ১৬:০৪91459
  • লিখতে থাকো। পড়ছি।
  • গবু | 162.158.227.69 | ১৫ মার্চ ২০২০ ১২:০৭91463
  • সুকি - আগের পর্বগুলো ফিরে পড়ছি - তারপর আবার এইটা রিপিট পড়বো - নইলে ঘেঁটে যাচ্ছি।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন