এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নৈঃশব্দের উদ্দেশ্যে এক যুবা

    মিঠুন ভৌমিক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৩ মে ২০১০ | ৫৭৭ বার পঠিত
  • Georg Trakl, Will Stone (Translator). To the Silenced- selected poems ( London : Arc Publications, 2005), Pp.165, $ 17.95; ISBN 1-904614-10-8

    গবেষণার বাইরে খুব একটা চর্চিত নন অকালপ্রয়াত কবি জর্জ ত্রাকল। তাঁর প্রথম অনুবাদ হয় ১৯৫২ সালে। তারপর ২০০১ অবধি বেশ কয়েকবার বিভিন্ন রূপে কয়েকটি কবিতা আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়। প্রত্যেক অনুবাদের সময়ই কবির সাথে আমাদের পরিচিতির ব্যাপ্তি বাড়ে, কখনও কিছু নতুন কবিতা যোগ হয়। সুতরাং, উইল স্টোন যখন এই বই অনুবাদ করছেন, তখন এই কবিতাগুলির নিজেদের ইতিহাস তৈরি হয়ে গেছে, সে যতই অনিয়মিত ও অস্পষ্ট হোক না কেন। আগ্রহীরা মাইকেল হ্যামবার্গার ও ক্রিস্টোফার মিড্‌লটনের অনুবাদ দেখতে পারেন। অনেকে মনে করেন, ত্রাকলের কয়েকটি কবিতার অনুবাদে এই দুজনের কাজকে ছাপিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

    ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের তেসরা ফেব্রুয়ারি জর্জ ত্রাকলের জন্ম হয় সালসবার্গের এক সম্পন্ন পরিবারে। হার্ড-ওয়ারের ব্যাবসায়ী বাবা টোবিয়াস, মা মারিয়া এবং আরো পাঁচ ভাইবোন। ছয়-সাত বছর বয়স থেকেই জর্জ আত্মহত্যার চেষ্টা করতে থাকেন। অন্তত তিনটে ব্যর্থ চেষ্টার কথা আমরা জানতে পারি। এছাড়াও ছিলো হ্যালুসিনেশন, সেই ছোটবেলা থেকেই এই অদ্ভুৎ, যন্ত্রণাময়, দু:স্বপ্নরাজ্য জর্জ-এর সাথী। সঙ্গী ছিল মাদকাসক্তি, আমৃত্যু। এর মধ্যে একমাত্র সান্ত্বনা ছিল ছোট বোন গ্রেট-এর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব, যা একাধারে জর্জের জীবনে যন্ত্রণা, বিতর্ক ও প্রেরণা বয়ে এনেছে। ১৯০৫ সালে জর্জ শিক্ষানবিশ ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর আগে থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। নিৎসে এবং বিশেষত দস্তয়েভস্কির অনুরাগী ছিলেন জর্জ। এই সময় জর্জ অ্যাপোলো আর মিনার্ভা নামে দুটি সাহিত্যসভার সাথে যুক্ত হন। টোবিয়াস-এর মৃত্যুর পরে ১৯১২ নাগাদ ত্রাকল পরিবার ইন্‌সবার্গে চলে আসে এবং জর্জ সেনাবাহিনীর ফার্মেসিতে কাজ নেন। ১৯১৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ গেদিশতে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নাম সেবাস্টিয়ান ইন ড্রিম, প্রকাশিত হয় ওঁর মৃত্যুর পরে। ইনসবার্গেই জর্জ ত্রাকল-এর পরিচয় হয় লুদউইগ ভন ফিকার-এর সাথে, যিনি পরবর্তী কালে হয়ে উঠবেন জর্জ-এর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী ও প্রকাশক। ফিকার একটি সাহিত্যপত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। জর্জ দ্বিতীয়বার সেনাবাহিনীর কাজে যোগ দেন ১৯১২ সালে, এবং তৃতীয় ও শেষবার ১৯১৪ সালে। এর মাঝে প্রতিবারই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অন্যান্য কাজের চেষ্টা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিটা যুদ্ধের অভিজ্ঞতাই ওঁকে আরো অসুস্থ করে তুলতে থাকে। এর মধ্যে বিশেষ করে গ্রোদেকের যুদ্ধের কথা বলতে হয়। সেখানে আহত সৈনিকদের শুশ্রূষা করতে গিয়ে জর্জ বিহ্বল হয়ে পড়েন। অসংখ্য সৈনিক পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা না পেয়ে হয় যন্ত্রণায় তিলে তিলে মরতে থাকে, অথবা নিজেরাই মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে। সেই বছরই, অর্থাৎ ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে, স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত জর্জ হাসপাতালে ভর্তি হন। এর কিছুদিনের মধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত কোকেন নিয়ে আত্মহত্যা করেন জর্জ ত্রাকল।

    ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে, ফিকারের পরামর্শে দুজন সাহিত্যিককে পুরস্কৃত করা হয়। ঐ পুরষ্কারের সূত্রেই প্রথম জানা যায় অন্যতম পুরষ্কারপ্রাপক রিলকে ত্রাকলের কবিতার অনুরাগী ছিলেন।

    এবার চলে যাবো কবিতায়। সেখানে এক উন্মাদ প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা আর অন্ধকার খোলসে ঢুকে যেতে যেতে বাঁচতে চায়। সংকলনের প্রথম কবিতা থেকেই স্পষ্ট, কি হতে চলেছে।

    "... মসৃণ পর্দারা অস্ফুটে কথা বলে।
    খোলা জানলায় উঁকি দেয় চাঁদ,
    শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, শূন্য প্রান্তরে
    মুখোমুখি, আমি ও আমার হত্যাকারী।'

    ঘাতক, একাকিত্ব, মৃত্যু আর অন্ধকার। একের পর এক খালি ঘর পেরিয়ে যেতে যেতে দমকা হাওয়ার মত উপলব্ধি আসে। নীলাভ আলোর ছটা, পাহাড়ের চূড়া থেকে তীক্ষ্ম শব্দে যে প্রহর ঘোষণা করে, সেও একা। ঠাণ্ডায় কুঁচকানো শরীরটা জ্বরের ওম পেয়ে কেঁপে ওঠে। বৃক্ষের শাখা থেকে টুপিয়ে পড়ছে শিশির, রক্তের মত। নি:শ্বাসে বিষ নিয়ে ফুলে ভরে দিচ্ছে এক যুবা। ত্রাকল এইসব লিখছেন, আর আমরা চুপিসাড়ে অজান্তেই ঢুকে পড়ছি ওঁর নিজস্ব জগতে। সেখানে আমাদের সঙ্গী একটা আতঙ্ক।

    সেন্ট পিটার্স চার্চইয়ার্ড -এর কবিতাও শুরু হয় একাকিত্ব নিয়ে। পাথুরে চত্বর আর বিশাল অট্টালিকা, লাগোয়া বাগান আর সমাধিক্ষেত্র - সবই স্বপ্নের মত শান্ত আর নির্জন। ফুল ফোটার, ঘন সুখবোধে ভেসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে একদল ব্যর্থকাম মৃত মানুষ। খিলানের নিচে মোমবাতি জ্বেলে গেছে কেউ। ত্রাকলের কবিতা বড় কন্টাকাকীর্ণ। মৃত্যুচেতনা, একাকিত্ব আর মনুষ্যত্বের বিবর্তন তাঁর কবিতাকে কখনই সহজ হতে দেয়নি। অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠেছে ওঁর লেখা পঙক্তিসমষ্টি। কিন্তু সেই স্যাঁতস্যাঁতে বিষাক্ত আবহাওয়াতেই আলেয়ার মত চেতনাগ্রাসকারী কবিতা ফুটেছে। মৃতপ্রায় প্রাণীর মাথার ওপরে চক্রাকারে আবর্তিত শকুনের মত সত্যি সেইসব পংক্তি।

    রোমান্স টু নাইট। একটু আলাদা, অন্যদের চেয়ে। আঁধার এখানে অনেক ফিকে। একাকিত্ব আছে, তবে তা তীব্র যন্ত্রণাদায়ক না। এক অদ্ভুৎ ভালোলাগা খেলা করে ছত্র থেকে ছত্রে। তবে এই সাময়িক সুখবোধ তাসের ঘরের মত ভঙ্গুর। তারার চাঁদোয়ার নিচে হেঁটে যায় দীপ্ত পথচারী। ঘুম ভেঙে উঠে বসে বিস্মিত বালক। তার মুখে জ্যোৎস্না ঘনায়। আরো সব নানা অঘটন ঘটতে থাকে। মোটা গরাদ ভেদ করে বেরিয়ে পড়ে প্রেমাস্পদ। পূর্ণিমায়, পুকুরের ধার ঘেঁষে হাঁটে ওরা।

    "হয়ত শিশুকে বুকে ধরে
    ঘুম পাড়ানিয়া গান গায় কেউ
    চতুর্দিকে পবিত্রতা, শান্তি, নিদ্রাজড়িত
    হাসি ভেসে আসে। অনতিদূরেই
    আলো জ্বেলে জাগে পতিতালয়।'

    এভাবেই কাঠামোটা চুরচুর করে ভেঙে যায়। নির্জন চত্বরে হয়ত চাঁদের আলোছায়া খেলা করছে, সুদৃশ্য অট্টালিকার ছাদ মায়াছবি রচনা করেছে অবলীলায়। খোলা জানলায় পর্দা উড়ছে হাওয়ায়। এই আপাত শান্ত সময়েই ত্রাকল লিখবেন আসন্ন দূর্বিপাকের কথা। আশঙ্কা নিয়ে বাঁচার কথা। মৃত্যুবাসনা নিয়ে বাঁচার কথা। তাই ঐ স্বপ্নদৃশ্য মিথ্যে হয়ে যায়। নর্দমা বেয়ে আসা ইঁদুরেরা সন্তর্পণে উঠে আসে। এইরকম একের পর এক কবিতায় ছবি এঁকেছেন ত্রাকল। বিবর্ণ, ফ্যাকাসে চাঁদের আলোয় ধোয়া কবিতা।

    ড্রিম অফ ইভিলে প্রথম ত্রাকলের বোনের কথা আসে। তারপরও আসে, বারবার। শয়তান স্বপ্ন দেখে। সাধু, গর্ভিণী আর ধূসর মুখোশে আবৃত কেউ কথা বলে একান্তে। পার্কের একপাশে, সন্দিগ্ধভাবে বসে থাকে ছেলেটা। মেয়েটাও থাকে পাশে, অপাঙ্গে দেখা হয়। শীতে কাঁপে ওরা, একই রক্ত-মাংসে, একই গর্ভের অন্ধকারে ওদের লুকোনো আস্তানা। কিন্তু সেসব মিথ্যে, শয়তান স্বপ্ন দেখে। বোনের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন ত্রাক্‌লকে একসময় বিদ্ধØত করে দেয়। ১৯১৩ সালে ফিকারকে লেখা এক চিঠিতে ইঙ্গিতে তাঁর "অব্যক্ত যন্ত্রণা ও সর্বগ্রাসী তিক্ততা'র কথা জানান ত্রাকল। লেখেন :

    '........ Tell me I must have the power to live on and to act truthfully. Tell me I am not insane. A stony darkness has broken in. Oh m friend, how small and unhappy I have become. (F. M. Sharp. The poet's madness: A reading of Georg Trakl)'

    পরবর্তী কালে অনেক সমালোচক ত্রাকলের কবিতায় incest এর ছায়া খুঁজেছেন, বিশ্লেষণ করে দেখতে চেয়েছেন গ্রেটের পরিণতির জন্য কবি নিজেকে দায়ী করে সেই যন্ত্রণায় প্রায়শ্চিত্ত খুঁজে ফিরেছেন কিনা। জর্জ ত্রাক্‌লের সাথে তাঁর বোনের যৌনসম্পর্কের কথা সন্দেহাতীতভাবে জানা যায় না।

    মানবসভ্যতাকে ত্রাকল সম্ভবত দেখতেন সম্ভাব্য ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে। যখনই সমষ্টিগতভাবে মানুষের কথা এসেছে, আমরা শুনেছি যুদ্ধের কথা। যুদ্ধ মানেই রণোন্মত্ত একদল হিংস্র প্রাণীর পারস্পরিক সন্ত্রাস। শেষ নৈশাহারের দৃশ্য। রুটি আর মদ, কুয়াশায় পায়ের চিহ্ন আঁকা। আহতরা ঘুমের মধ্যেও আর্তনাদ করছে। ক্ষতস্থান ঘেঁটে দেখছে সাধুসন্তরা, যদি কোন পূণ্যবান মেলে। এভাবেই আহত সৈনিকদের শুশ্রূষার ফাঁকে কখন যেন ত্রাকল যন্ত্রণা বিনিময় করে নেন। একটু একটু করে মৃত্যুর কাছে পৌঁছতে থাকেন।

    হেলিয়ান । সংকলনের দীর্ঘতম কবিতা, ত্রাকল-এরও। একে একে এই কবিতায় ত্রাকল ছুঁয়েছেন ঋ্‌তুচক্র, বৃত্তাকারে আবর্তিত জন্ম-জরা-মৃত্যু, নিসর্গচেতনা আর ইন্দ্রিয়ের যাবতীয় বিবর্তন।

    " ...অন্ধকার সমতলে
    মেষপালকেরা ইতস্তত ফেরে
    শ্বেত নক্ষত্রেরা আসে পূর্ণিমা রাতে।'

    কিংবা

    "মৃত্যু আসে, ঝোড়ো হাওয়া দেয়
    সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে নির্জন মাঠে
    অন্ধকারে নুয়ে আসে মাথা
    সে অন্ধকার যেন অলিভের বন।'

    এরকম অসংখ্য ইমেজারি গেঁথে গেঁথে হেলিয়ান। শুধু দীর্ঘ আলাপে প্রায় ভুলিয়েই দেয় এই পাঠ সাময়িক। আমরা খুঁজে পাই কবিতার সেইসব বিরল মুহূর্ত, যেখানে আমরা কবিতায় বাস করি। শীতের স্তব্ধতায়, চাঁদের ঘোলাটে বর্ণে সময় সরতে থাকে। সময়ের সাথে পুরোনো ক্ষতস্থান জোড়া লাগে। ধ্বংসের পরে আসে সৃষ্টি। আমরা ইন্দ্রিয়দের অস্বীকার করতে চাই। এরপর আবার আসে ভাঙন। দৃষ্টি বাষ্পাচ্ছন্ন হয়, কখনও বা ভেঙে যায় কাচের মতন। যুদ্ধ, পৃথিবীকে নিজের মত করে ভাঙে। পুরো ছবিটা আর আমাদের চোখে পড়েনা।

    ডিক্লাইন এবং দ্য ওয়েস্ট কবিতা দুটির সাথে হেলিয়ান-এর যোগ আছে, যদিও খানিকটা অপ্রত্যক্ষভাবে। সময়ের সাথে ঘটনার আবর্তন। অতীতের থেকে ভবিষ্যতের দিকে যাওয়া, সে কি শুধুই অতীতনির্ভর? যে বিশেষ মানসিক অবস্থায় ত্রাকল এই কবিতাদুটি লেখেন তাকে সমালোচকরা "হেলিয়ান কমপ্লেক্স' বলেছেন। অসংখ্য মানুষের মৃত্যুদৃশ্যই হয়ত তাঁর মানসিক স্থৈর্য্য নষ্ট করে দিয়েছিল। আমাদের "সুস্থ' সমাজে তিনি হয়ে গেলেন "অপ্রকৃতিস্থ'।

    "আমাদের সমাধির দিকে
    চেয়ে আছে রাত, অন্ধকারে,
    কালো প্রশাখার সাথে
    বাঁধা আছে রজততরণী।'

    অনেকে ত্রাকলের কবিতাকে অর্থহীন বলেছেন। সেখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কবির অপরাধবোধ, স্কিজোফ্রেনিয়া, সম্ভাব্য মাদকাসক্তি ও অন্যান্য মানসিক অবস্থার পরিমিতি। যে উন্মাদ টু দ্য বয় ইলিস লেখেন, যাঁর কলমে আসে অটাম অফ সলিটারি কিংবা টু ওয়ান হু ডায়েড ইয়ং বা মেলাংকলি, তাঁর পাগলামি দীর্ঘজীবি হোক।

    যে কবিতার নামে এই সংকলনের নামকরণ, সেটির শেষ দুটি লাইন এরকম:

    '...But in the dark caves a mankind more silent bleeds,
    From hard metals forms the redeeming head.'

    গ্রোদেক-এর কথা দিয়ে শেষ করি। ১৯১৪ সালেই, এতগুলো যুদ্ধের আগেই, জর্জ ত্রাকল যুদ্ধের পরিণাম দেখে মনুষ্যত্বে বিশ্বাস হারিয়ে ফেললেন। গ্রোদেক ত্রাকলের শেষ কবিতা। এই কবিতায় এক ঝলকে ধরা আছে ত্রাকলের যুদ্ধসম্পর্কিত মনোভাবের ক্রমপরিবর্তন। ধ্বংসের পরেই আসে সৃষ্টি, অতএব সব মুছে গিয়ে নতুন যুগের সূচনা হবে -- এই ভেবে একসময় ত্রাকল আরো অনেকের মতই যুদ্ধের সমর্থক ছিলেন। সত্যিকারের যুদ্ধ তাঁকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরিয়ে যুদ্ধবিরোধী করে দিল মৃত্যুর আগে। গ্রোদেক কবিতায় দূর থেকে ক্রমশ চলচ্চিত্রের মত করে যুদ্ধক্ষেত্র আমাদের কাছে আসে। ওপরে আলগা স্তরটা সরে যেতেই নজরে আসে রক্তাক্ত কলেবর। রক্ত জমাট বেঁধে আঁধার ঘনায়। সকলেই আর্তনাদ করে, তবু কিছু শোনা যায়না। নিস্তব্ধ রণাঙ্গনে ছুটে ছুটে ফেরে এক মেয়ে, মৃত নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ভারসাম্যহীন। তপ্ত শিখায় জন্ম নেয় অযুত যন্ত্রণা। যদিও সে যন্ত্রণা প্রসববেদনা নয়, তাই উত্তরাধিকার আছোঁয়া থেকে যায়। এইসব, এসবই তিল তিল করে সয়ে, মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে, লিখেছেন জর্জ ত্রাকল। এক যুবা, চোখে মৃত্যুছায়া নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বসে থাকে। এক যুবা, যে বড় কমদিন পৃথিবীতে ছিল। দূরে কোন গ্রামের রেখাচিহ্ন ম্লান হয়ে আসে।

    ----

    ৩রা মে, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৩ মে ২০১০ | ৫৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন