এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ

    Saswata Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ অক্টোবর ২০১৪ | ১৬৮৬ বার পঠিত
  • (১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪)

    কলম মিথ্যা বললে, ক্ষুদ্রস্বার্থে কদর্য হয়ে উঠলে কষ্ট হয়।

    ছাত্রছাত্রীরা, যারা দেড়শো ঘন্টা শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পরেও নজর কর্তৃপক্ষের পায়নি, তারা ঘেরাও করেছিল। রাত জাগছিল। গুন্ডা ও পুলিশ দিয়ে ক্যাম্পাস ঘিরে ফেলা হলে, তারা বন্ধুদের ডাকে। খোলাখুলি, সকলের সামনেই দৃশ্যমান ছিল সেই ডাক। নানান জায়গা থেকে এসে ওই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ায় মানুষ।

    এবং শেষ অবধি দেখা যায়, হানাদারির ওই ভয় অমূলক নয়। মধ্যরাতে পুলিশ আসে। আসে গুন্ডাদল। কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় আলো নিভে যায়। নির্মমভাবে পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় সে রাতের ব্যারিকেড।
    টিভি চ্যানেলের দৌলতে সবই দেখতে পাচ্ছেন গোটা দুনিয়ার মানুষজন। তবু এখনও কেউ কেউ বলছেন, লিখছেন –

    যারা মার খেল তারা উচ্ছৃঙ্খল।

    যারা মার খেল তারা অমানবিক।

    মার খাবে বলে অলীক উপায়ে আলো নিভিয়ে দিল আন্দোলনকারীরা।

    যে মানুষ বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়াল মধ্যরাতে, হানাদারদের ভয় অতিক্রম করে, তারা বহিরাগত।

    স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মস্তান-পরিবৃত হয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ভিসি। অদূরে মাটির ওপর ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওনার ছাত্রছাত্রীদের; যাদের ভার ছিল ওনার হাতে –তবু লোকটার লজ্জা নেই।

    ভিসির ইন্টারভিউ ছাপা হচ্ছে। সদম্ভে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, যা হয়েছে বেশ হয়েছে। - এটা অমানবিক নয়?

    কিন্তু এত সংবেদনশীলভাবেই যদি আন্দোলন ভাঙা হয়ে থাকে, তার জন্য সময়টা মাঝরাত্তির বাছা হল কেন? আর কয়েক ঘন্টা আগে বা পরে পুলিশ পাঠানো হল না কেন? - উত্তর নেই।

    ভিসি একবার কেন বেরিয়ে এসে কথা বললেন না ছাত্রদের সঙ্গে; স্পষ্ট পাবলিক স্টেটমেন্ট দিলেন না ওই শ্লীলতাহানির তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে, কীই বা তার ভবিষ্যত দিক – উত্তর নেই?

    যাদবপুরের পাশে নয় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল বহিরাগতরা। তারা তো নিজেদের মুখ লুকোচ্ছেন না। স্পষ্ট কথায় বলছেন কেন গিয়েছিলেন, কখন গিয়েছিলেন। তারা সকলেই পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু, কাছে মানুষ। কিন্তু যারা গিয়েছিলেন পুলিশের সঙ্গে ছাত্র পেটাতে, তারা কেন বলছেন না সামনে এসে তারাদের পরিচয় কী? তবে কী পুলিশ একা পারবে না বলে তাদের ডাকা হয়েছিল? – উত্তর নেই।

    তবে কি এই ঘটনা ঘটিয়ে এ-কথাই বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ছিল, যে – মুখ খুলো না। প্রশংসার হাততালি আর উৎসবের নাচাগানা (‘ঢেউ’ নামে একটা ব্যান্ড হয়েছিল না, একসময় খুব ‘ধিতাং ধিতাং বলে’ গাইত, তার খবর কেউ রাখেন?) ছাড়া আর কোনো শব্দ কোরো না?

    এর পর যথারীতি ‘ছোটো ঘটনা’। ‘তিল থেকে তাল’। মাও-ঈঙ্গিত। এমনকী ভয়ংকর সব অস্ত্র ঢুকেছে যাদবপুরে (একটা নেলকাটারও উদ্ধার করতে পারল না পুলিশ, এমন অপদার্থ – ছিঃ)।

    এরপর লক্ষ্য শঙ্খ ঘোষ। হ্যাঁ। এটার অপেক্ষা করছিলাম।

    একটা নির্লজ্জ সংবাদপত্র আছে যাদের বিক্রিবাটা কমে গেলেই, তারা কিছু নামধাম ঝুলি থেকে টেনে বার করে এনে দুহাতে মন দিয়ে কাদা মাখায়। এপন্থা নতুন নয়।

    কয়েক বছর আগে আরেকজনও করতেন এইসব। সৌরভ গাঙ্গুলীর নামে বলেছিলেন – সিপিএম-এর সৌরভ। এখন এক মুখ খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে দিয়ে পুলিশের গুঁতো খেতে খেতে বলছেন – সারদার মমতা।

    এই কথা যেন ভুলে না যাই।

    খবর ৩৬৫ দিন লিখেছে ‘ধান্দাশঙ্খ’। হ্যাঁ, উনি ধান্দাবাজ তো বটেনই। নাছোড়বান্দা পিঠগুলোর ওপর ‘না-পাঠানো-লাঠির’ যে দাগ জ্বল্‌জ্বল্‌ করছে, উনি তাদের ধান্দা দেখেন।

    আমরা, যারা ওনার বই সঙ্গে নিয়ে ঘুরি, ঘুমের ভেতরেও ছুঁয়ে ফেলি মাথার পাশে রাখা ‘মাটি খোঁড়া পুরোনো করোটি’, উনি তাদের জন্য ধান্দাবাজ।

    কী অবলীলায় ভুলে গেলেন কিছু মানুষ, এই শঙ্খ ঘোষ পূর্বতন সরকারের গণহত্যার প্রতিবাদ-মিছিলে ছিলেন একেবারে সামনের মুখ।

    ভুলে গেলেন, বহু লেখায়, বক্তৃতায় উনি বলেছেন ‘বামপন্থী’ সরকারের ঔদ্ধত্য, দলতন্ত্রের কথা। শঙ্খ ঘোষের লেখা তো জলের দাগ নয়। তাদের বিনাশ নেই। সেসব কথা এখনও জ্বল্‌জ্বল্‌ করছে ওনার বইয়ে।

    শঙ্খ ঘোষ জানতেন না খবর ৩৬৫ দিন-এ ওনার বিরুদ্ধে ওই কুৎসার কথা। একটু আগে নিজে জানতে পেরে, ফোনে জানালাম।

    এর আগেও কথা হয়েছিল, এই খবর ৩৬৫ দিন-এর দৌলতেই। সেবার রাজ্যে ক্রমাগত নারী-নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে মিছিল ডেকে শাসকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন কবি।

    সেই একই কথা বললেন - কষ্ট পেও না। এই কুৎসার কোনো উত্তর নেই।

    বহুক্ষণ চুপ করে থাকলাম।

    অনেক দূরের এক দেশে দাঁড়িয়ে তখন দেখতে পাচ্ছি আমার বাংলার রাজপথ ভরে উঠছে এই কদর্যতার প্রতিবাদে। জ্বলে জ্বলে উঠছে নিভন্ত সব চুল্লিগুলো। অনেকদিন স্তব্ধ পড়ে থাকা বহুস্বর স্লোগানে স্লোগান কাঁপিয়ে তুলছে দেশ।

    আমাদেরও কিছু কৃতজ্ঞতা আছে। প্রণাম ও দায়বদ্ধতা আছে। সেকথা যেন ভুলে না যাই।

    যেন প্রতিবাদে, প্রতিরোধে আমাদের পাঁজরে পাঁজরে ভীষণ দাঁড়ের শন্দ উঠে মিথ্যাবাদী অত্যাচারীর ঘুম ভেঙে দেয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ অক্টোবর ২০১৪ | ১৬৮৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    জবাব - Saswata Banerjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | 125.242.128.205 (*) | ০৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৪75121
  • এবার ভাঙ্গা পাঁজর
    শপথশিখায় জ্বলো
    আনো আরও আলো
    বল মাভৈ যাবই খর নদীর পাড়ে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন