এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • গন্ধ - মান্টোর গল্প

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১৩১২ বার পঠিত
  • গন্ধ : সাদত হসন মন্টো

    সেদিনও এমনি বূষ্টি পড়ছিল।জানলার বাইরে অশ্বত্থের পাতাগুলো এমনি করে ভিজছিল।স্প্রিংয়ের গদিওলা সেগুনের খাটে,যেটা এখন জানলার পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, একটি পাহাড়ি মেয়ে রণধীরের সঙ্গে লেপটে শুয়েছিল। জানলার বাইরে দুধসাদা অন্ধকারে অশ্বত্থের পাতাগুলো ঝুমকোর মত থরথরিয়ে কাঁপতে কাঁপতে নাইতে লেগেছিল।আর থরথর পাহাড়ি মেয়েটি রণধীরের গায়ে লেপটে শুয়েছিল।
    সারাদিন ধরে একটা ইংরেজি কাগজের সমস্ত খবর মায় বিজ্ঞাপন শুদ্দু পড়তে পড়তে বিকেল গড়িয়ে গেলে ও একটু পায়চারি করবে বলে সবে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে চোখে পড়ল বূষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচতে তেঁতুল গাছের নীচে দাঁড়ানো ওই পাহাড়ি মেয়েটি; বোধহয় কাছের দড়িপাকানোর কারখানায় কাজ করে।একটু কাশি আর গলাখাঁকারির শব্দে চোখ তুলে তাকাতেই ও মেয়েটাকে হাত নেড়ে ওপরে ডেকে নিল।
    কিছুদিন ধরে ওর বড্ড একলা একলা লাগছিল। যুদ্ধ লাগতেই বেশির ভাগ ক্রিশ্চান ছুঁড়িগুলো, যাদের আগে নামমাত্র টাকায় পাওয়া যেত, মেয়েদের অক্সিলিয়ারি ফোর্সে ভর্তি হয়ে গেল।কয়েকজন ফোর্টের পাশে ডান্সিং স্কুল খুলে দিল যেখানে শুধু গোরা সৈনিকরা যেতে পারবে।
    রণধীরের মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক।রণধীর জানে যে ওই গোরা সেপাইদের চেয়ে ও অনেক বেশি ভদ্র, শিক্ষিত আর দেখতেও ভাল। শুধু রঙটা ফর্সা নয় বলে ও ক্লাবগুলোতে ঢুকতে পারবে না!যুদ্ধের আগে নাগপাড়া ও তাজ হোটেলের এলাকায় বেশ নামকরা কিছু ক্রিশ্চান মেয়ের সঙ্গে ওর শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল।যে ক্রিশ্চান ছোঁড়াগুলো ওই মেয়েগুলোর পেছনে ঘুর ঘুর করে শেষে কোন একটাকে বিয়ে করে ফেলত, ও জানত, ওরা ওর পাশে দাঁড়ানোর যুগ্যি নয়।
    ওই পাহাড়ি মেয়েটিকে ইশারায় ওপরে ডেকে নেওয়ার সময় রণধীরের মনে শুধু হেজেল বলে ক্রিশ্চান মেয়েটির ওপর খার তোলার ইচ্ছে ছিল। হেজেল বলে মেয়েটা থাকে ওর নীচের তলার ফ্ল্যাটে।রোজ সকালে উর্দি পরে খাকি রঙের তেরচা টুপিতে ববকাট চুল ঢেকে এমন কায়দা করে চলে যেন গোটা রাস্তার লোক ওর পায়ে লুটিয়ে পড়বে।ও রণধীরকে পাত্তা দেয় না।
    রণধীর ভেবে পায় না কেন ওই ক্রিশ্চান ছুঁড়িগুলো কে নিয়ে ও এত মাথা ঘামায়! কোন সন্দেহ নেই যে ওরা শরীরের যা যা দেখানোর জিনিস সব বেশ কায়দা করে দেখায়।নি:সংকোচে নিজের সব কিছু শোনাতে থাকে, এমনকি পুরানো প্রেমিকদের নিয়ে গল্প শোনাতেও ছাড়ে না।আর যখন নাচের সুর বেজে ওঠামাত্তর তালে তালে পা’ কাঁপাতে থাকে। সে না হয় হল, তবে এসব গুণ তো অনেক মেয়ের মধ্যেই দেখা যায়।
    মেয়েটাকে ওপরে নিয়ে যাওয়ার সময় রণধীরের একটুও বিশ্বাস হয় নি যে ওর সঙ্গে শুতে পারবে।কিন্তু একটু পরে ওর চোখ পড়ল ওর জবজবে ভিজে কাপড়ের দিকে। ভাবল–– আহা, বেচারির নিমোনিয়া না হয়ে যায়! বলল––‘ কাপড়চোপড় ছেড়ে ফেল, ঠান্ডা লেগে যাবে’।
    মেয়েটা সব বুঝতে পারছিল, তাই চোখে লজ্জার লালিমা।কিন্তু রণধীর একটা শুকনো ধুতি বের করে দিলে ও একটু ভেবে ওর ঘাঘরা খুলে ফেলল–– ভিজে গিয়ে ওটার ময়লা ময়লা ভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।ভিজে কাপড় একমাসে রেখে ও ধুতি দিয়ে গোটা শরীর ঢেকে নিল।তারপর তাড়াহুড়ো করে দুটো কোনা আঁটো করে বাঁধা চোলির গিঁট খোলার চেষ্টা করতে লাগল।ওটা ওর উদ্ধত বুকের খাঁজে বেশ কেটে বসেছে।
    বেশ খানিকক্ষণ গিঁট খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করে হার মেনে ও মারাঠি ভাষায় রণধীরকে যা বলল তার নিগলিতার্থ––– কী করি? খুলছে না যে!
    আসলে ভিজে গিয়ে ওর চোলি খুব কড়া হয়ে গেছল।
    রণধীর ওর পাশে বসে টানাটানি করে খুলতে না পেরে দু’হাতে চোলির দু’পাশ ধরে মারল এক হ্যাঁচকা টান।গিঁট খুলল, ওর হাত ছিটকে সরে গেল আর ওর মুঠোয় এল ধুকপুক দুই নরম বুক।পাহাড়ি মেয়েটার বুকের নরম নরম মাটির তাল ওর কুমোরের মত পাকা হাতে দুটো পেয়ালার রূপ ধরেছে।ওই ভরা বুক যেন কুমোরের চাক থেকে সদ্য বেরনো বাসন; তেমনি সুডোল,কোমল, উষ্ঞ ও শীতল। মেটে রঙের নির্মল দুই বুকে এক অদ্ভুত চকচকে ভাব।ধোঁয়া ধোঁয়া আলোর আভা যেন দীঘির কালো জলের তলে কেউ জলটুঙ্গিতে প্রদীপ জ্বেলেছে।
    সেও ছিল এমনি এক বূষ্টিঝরা দিন।জানলার বাইরে বূষ্টির ফোঁটায় থিরথিরিয়ে কাঁপে বটের পাতা।পাহাড়ি মেয়েটার ওই দু’টুকরো জবজবে ভিজে পোষাক ঘরের এককোণে মাটিতে লুটোয় আর ও নিজে রণধীরকে জড়িয়ে শুয়ে।ওর নগ্ন ময়লা শরীরের উষ্ঞতা রণধীরের শরীরে শীতের দিনে নোংরা বাথরুমে গরম জলের ফোয়ারায় স্নান করার আরাম ছড়িয়ে দিচ্ছিল।
    সারারাত্তির ও রণধীরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে শুয়ে রইল।মাত্র দু’একটা কথা। কারণ গরম নি:শ্বাস, ঠোঁট ও হাতের ছোঁয়ার পরে বাকি সব ফালতু হয়ে যায়।রণধীরের হাত সারারাত ওর বুকে মাঠের ওপর বয়ে যাওয়া হাওয়ার মত খেলে বেড়ায়।ছোট ছোট স্তন, বোঁটার চারপাশে কালো বূত্ত–– ওই পাগল হাওয়ায় জেগে উঠে পাহাড়ি নারীর শরীরে এমন কাঁপন ধরায় যে রণধীরের শরীরও দপ করে জ্বলে ওঠে।
    এমন কাঁপন–জাগানো অনুভূতির সঙ্গে রণধীরের অনেক পুরনো পরিচয়। বহু মেয়ের নরম ও উদ্ধত বুকে বুক লাগিয়ে এমন অনেক রাত ও কাটিয়েছে।এমন খোলামেলা মেয়েও জুটেছে যে রাতভোর ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের ঘরের সেসব কেচ্ছা শুনিয়েছে যা কেউ অপরিচিতকে বলে না।ওর সেরকম কিছু মেয়ের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল যারা সবকিছু নিজে এগিয়ে এসে করে দিত, ওকে কিস্যু করতে হত না। কিন্তু ওই পাহাড়ি মেয়েটা! তেঁতুলগাছের নীচে দাঁড়িয়ে ভিজছিল আর ওর এক ইশারায় উপরে চলে এল, কিন্তু কেমন যেন আলগা আলগা উদাস ভাবভঙ্গি।
    ওর শরীর থেকে এক অদ্ভূত গন্ধ রণধীরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। সারারাত।সে’ গন্ধ যেমন অসহ্য তেমনি মাদক।গন্ধ ভেসে আসছিল ওর বগল থেকে, চুল থেকে, বুকের ভাঁজ থেকে, পেট থেকে, বোধহয় ওর গোটা শরীর থেকে আর ছড়িয়ে পড়ছিল ওর প্রত্যেক শ্বাস–প্রশ্বাসে।সমস্ত রাত ওর মনে হচ্ছিল যদি ওই পাহাড়ি মেয়েটি এত কাছাকাছি না শুতো বা ওর গা’ থেকে অমন তীব্র গন্ধ না ছড়াত।অমন গন্ধ যা রণধীরের হূদয়মনের পরতে পরতে বাসা বাঁধছে, ওর সমস্ত পুরনো ও নতুন ভাবনাচিন্তাকে দখল করে ফেলছে।
    ওই গন্ধ রণধীর আর ওই মেয়েটাকে একরাতের বাঁধনে এমন করে বাঁধল যে ওরা একে অন্যের গহনে প্রবেশ করে মানবীয় অনুভূতির, কামনার অতল গভীরে ডুবে গেল। সে কামনা যেন সাময়িক হয়েও চিরন্তন। ওরা দু’জন যেন এক জোড়া পাখি যারা আকাশের নীলিমায় উড়তে উড়তে এক পলকের জন্যে দেখা দেয়।
    পাহাড়ি মেয়ের শরীরের সমস্ত রোমকূপ থেকে ছড়িয়ে পড়া ওই গন্ধকে রণধীর বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু তার ব্যাখ্যা করা ওর সাধ্যের বাইরে।খানিকটা যেন রুক্ষ মাটিতে কয় ফোঁটা জল পড়লে যেমন সোঁদা গন্ধ বেরোয় – সে’রকম; না:, ঠিক তা’ও না।এই গন্ধটা যেন একটু অন্যরকম।এতে ল্যাভেন্ডার ও আতরের নকলভাবটা নেই। এ হল খাঁটি জিনিস–– পুরুষ ও নারীর অন্তরঙ্গ সম্পর্কের মত আসল ও খাঁটি।
    ঘামের গন্ধে রণধীরের বড্ড ঘেন্না। স্নানের পর ও নিজের বগলে সুগন্ধ পাউডার লাগায়, নইলে এমন কোন জিনিস লাগায় যাতে ঘামের গন্ধ চাপা পড়ে।আর কি আশ্চর্য! ও কতবার পাহাড়ি মেয়েটার লোমে ভরা বগলে চুমু খেল কিন্তু একটুও ঘেন্না হল না!বরং ও নিজের ভেতরে এক অদ্ভূত কামনার জোয়ার টের পেল।বগলে নরম নরম লোম ঘামে ভিজে একশা’।ওখান থেকেও তাড়া করছে সেই চেনা–চেনা তবু–অচেনা গন্ধটা।রণধীরের মনে হল গন্ধটাকে ও ভাল করে জানে, চেনে, ওর মানেও বোঝে– কিন্তু অন্য কাউকে বোঝাতে পারে না।
    সেদিনটাও এমনিই ছিল; এমনি এক বূষ্টি–ঝরঝর দিন।এই জানলাটা দি্য়েই বাইরে তাকালে চোখে পড়ছিল বটের পাতার জলধারায় স্নানের আনন্দে মেতে ওঠা।হাওয়ায় সরসর–ফরফর মিলেমিশে যায়।অন্ধকার, কিন্তু তারমধ্যেই ঘোলাটে আলোর রেখা।ঠিক যেন বূষ্টিধারায় ঠিকরে পড়া তারার ফিকে আলো।
    সত্যি, সেদিনও ছিল এমনি এক বর্ষার দিন।তখন রণধীরের এই ঘরটায় শুধু একটাই সেগুনের পালংক দেখা যেত,আজ কিন্তু দু্টো পালংক,পাশাপাশি,–– কোণে আবার একটা নতুন ড্রেসিং টেবিল।
    আজকের দিনটা অমনি বর্ষামুখর, আবহাওয়াও ঠিক তাই। বূষ্টিধারায় ঠিকরে পড়া তারার ফিকে আলোও চোখে পড়ছে।খালি বাতাস ভারি হয়ে আছে হেনার আতরের তীব্র গন্ধে।
    অন্য খাটটা খালি।রণধীর নিজের খাটে উপুড় হয়ে জানলার বাইরের আলো–আঁধারিতে বূষ্টিভেজা বটের পাতার নাচন দেখছিল, এক ফর্সা মেয়ে ওর পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে কাদা। মেয়েটা ওর নগ্ন শরীর ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বিছানার চাদর টেনে ঘুমিয়ে পড়েছে।ওর লাল রেশমী সালোয়ার পাশের খাটে লুটোচ্ছে।তার গাঢ় লালরঙা একটা ফিতে খাটের পাশ থেকে নীচে ঝুলছে।ওই খাটে ওর বাকি কাপড়চোপড় ঢিপ হয়ে পড়ে আছে।ওর সোনালি ফুলকাটা কামিজ, ব্রেসিয়ার, প্যান্টি আর ওড়না,–– সব লালরঙের, খুনখারাপি লাল।সমস্ত কাপড়ে হেনার আতরের তীব্র গন্ধ।
    মেয়েটির কালো চুলে জরির ফিতের বিনুনি কেমন জমে থাকা ময়লার মত দেখাচ্ছিল।গালের রুজ, লাল লিপস্টিক ও চুলের জরি মিলেমিশে অদ্ভুত এক রঙের আবহ তৈরি করেছে। প্রাণহীন,উদাস। ওর ফরসা বুকে লালরঙা আঁটোসাঁটো বক্ষবন্ধনী লাল লাল ছোপ লাগিয়েছে।
    সাদা দুধেল স্তন, তাতে অল্প নীলচে আভা। পাঁশুটে রঙা কামানো বগল।রণধীর বেশ কয়েকবার মেয়েটিকে দেখে আর ভাবে––মনে হচ্ছে, ওকে যেন প্যাকিং বাক্সের পেরেক খুলে মাত্র বের করেছি।বই বা চিনেমাটির বাসনের মতন।বইযের গায়েও ঠেসে ভরার দাগ থাকে, চিনেমাটির বাসনেও নাড়াচাড়ার ফলে চুলফাটা দাগ ধরে। মেয়েটার শরীরেও যেন তেমনি কিছু দাগ আছে।
    রণধীর যখন ওর কড়া আঁটোসাঁটো ব্রেসিয়ার খুলেছিল তখন ওর পিঠে এবং বুকের নরম নরম মাংসের তালে ডোরাডোরা দাগ দেখতে পেয়েছিল। আরো ছিল–– কষি আলগা করায় কোমরের চারপাশে ও ভারি চোখা জড়োয়া নেকলেস সরানোয় গলায় ও বুকে নোখ দিয়ে জোরে খিমচানোর মত লালচে দাগ।
    সেদিনটাও এমনিই ছিল; এমনি এক বূষ্টি–ঝরঝর দিন।বটের কোমল পাতায় বূষ্টির ফোঁটা পড়ে তেমনি আওয়াজ হচ্ছিল, যেমনটি রণধীর সেদিন রাতভোর শুনতে পেয়েছিল।দারুণ আবহাওয়া।ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা আসছে, কিন্তু তাতে যে মিশে আছে হেনা–আতরের তীব্র গন্ধ!
    রণধীরের হাত ঘুরে বেড়ায় দুধসাদা মেয়েটির কাঁচাদুধের মত বুকে, ঝোড়ো হাওয়ার মত, অনেকক্ষণ। ওর আঙুল ওই শ্বেতশুভ্র নারীদেহের ভেতর নানা তরঙ্গের খোঁজ পেয়ে যায়।টের পায় ওই নরম নরম শরীরের অনেক অংশ জেগে উঠছে, ছুটে বেড়াচ্ছে আবেগ।এবার ও বুকে বুক লাগায় আর ওর প্রতিটি রোমকূপে ছড়িয়ে পড়ে নারীদেহটির বীণার তারের ঝংকারের অনুরণন।
    কিন্তু কোথায় সেই আহ্বান? কোথায় সে’ ডাক? যে ডাক ও শুনতে পেয়েছিল পাহাড়ি মেয়েটির শরীরের মাদক গন্ধে!যে ডাক দুধের জন্যে শিশুর কান্নার চেয়ে স্পষ্ট। আজ সে’ডাক কোথায় হারিয়ে গেল?
    রণধীর জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকায়। জানালার পাশে বটের পাতা নেচে বেড়ায; কিন্তু ওর দূষ্টি পেরিয়ে যায় বটের পাতার নাচনকোঁদন, দেখতে চায় দূরে, অনেক দূরে, যেখানে ময়লাছোপ ধরা মেঘের ভেতর চোখে পড়ে এক ঘোলাটে আলো; এমন আলো যা দেখেছিল পাহাড়ি মেয়েটির বুকে, যা গোপনকথার মত গোপন থেকেও নিজেকে জানান দেয়।
    রণধীরের পাশে শুয়ে এক দুধসাদা নারী, যার শরীর দুধ–ঘি দিয়ে মাখা আটার তালের মত নরম, যার নেতিয়ে পড়া শরীরে হেনা–আতরের সুবাসের ক্লান্তি। রণধীরের দম আটকে আসে, অসহ্য লাগে এই মরুটে গন্ধ।এতে এখন টকটক গন্ধ, এক বেয়াড়া টোকো গন্ধ যা চোঁয়া ঢেকুরের মত।
    এবার ও পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকায়।দুধ কেটে গেলে যেমন সাদা সাদা গুঁড়ো ট্যালটেলে জলের মধ্যে চ্যাপচেপে হয়ে থেকে যায় তেমনি মেয়েটির নারীত্ব ওর চেতনায় বসত করে––চ্যাপচেপে সাদা সাদা গুঁড়ো হয়ে।আসলে রণধীরের চেতনে–অবচেতনে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই গন্ধ যা পাহাড়ি মেয়েটির শরীর থেকে অনায়াসে পেয়েছিল;যা হেনা– আতরের চেয়ে বেশ নরম কিন্তু ছড়িয়ে পরে অনেক দূরে; যাকে কষ্ট করে শুঁকতে হয় না, যা নিজে–নিজেই সঠিক ঠিকানায় পৌঁছে যায়।
    রণধীর এবার শেষ চেষ্টা করল। মেয়েটার ফর্সা শরীরে হাত বোলাল; না, কোন স্পন্দন নেই, কোন অনুরণন জাগল না।ওর সদ্য বিয়ে করা বৌ, ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ে, বিএ পাশ, কলেজের একশ’ ছেলের বুকের ধুকধুকি, রণধীরের বুকে কোন ঢেউ তুলতে পারল না।হেনার মিলিয়ে যাওয়া গন্ধের মধ্যে ও আতুর হয়ে খুঁজতে লাগল সেই অদ্ভূত এক গন্ধ যা ও পেয়েছিল এমনি এক বাদলঝরা দিনে, যখন জানলার পাশে বটের পাতা বূষ্টিধারায় স্নান করছিল আর ও ডুবেছিল এক পাহাড়ি মেয়ের আধময়লা শরীরে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১৩১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Blank | 180.153.65.102 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:৩০74019
  • "।স্প্রিংয়ের গদিওলা সেগুনের খাটে,যেটা এখন জানলার পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, একটি পাহাড়ি মেয়ে রণধীরের সঙ্গে লেপটে শুয়েছিল" - এটা ঠিক বাংলা লেখার মতন লাগলো না রঞ্জন দা।
  • a x | 138.249.1.202 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৪:৪১74020
  • কেমন মনে হল ঠিক স্বাদ পেলাম না। গল্প পেলাম একটা, কিন্তু মান্টোকে পেলাম না। গল্পটা একা নিজের পায়ে সেরকম দাঁড়াতে পারলনা। ৪০এর দশকে এ লেখা সহজ না, তাই ডকুমেন্টেশনের স্বার্থে কাজের জিনিস।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৪:৪৪74021
  • রঞ্জনদা, লেখার নামগুলো বাংলায় দিন না। অন্য কোথাও একটা লিখে কপি পেস্ট করতে হবে খালি।
  • Ranjan Roy | 24.99.46.213 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৭:৪৭74022
  • অক্ষ এবং ব্ল্যাংকির কমেন্টগুলো একেবারে খাপে খাপ। অনুবাদটি বাজে, তাড়াহুড়ো করে মন্টোর মূল রচনার আক্ষরিক অনুবাদের দিকে গেছে। সহজ প্রসাদগুণ সম্পন্ন বাংলা হয় নি। ব্ড্ড হোঁচট খেতে হচ্ছে পড়তে গিয়ে।

    ঈশান,
    এটা খেরোর খাতা থেকে মুছে দেওয়া হোক।
    এটাকে ঠিক করে আবার লিখছি। তখন বাংলা নাম দিয়ে ঠিক করে পেস্ট করব।

    সুমিত রায়কে ধন্যবাদ।
  • | 24.97.134.207 (*) | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৫:১৮74023
  • আমি কিন্তু এবারে কিচ্ছুটি বলিনি। চুপচাপ পড়ে চলে গেছি :-)
  • সায়ন | 170.83.96.84 (*) | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৬:৩৯74024
  • কিন্তু বূষ্টি, বূত্ত, হূদয় - এসব কী!
  • Ranjan Roy | 24.99.217.94 (*) | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১০:৫৯74025
  • সায়্ন,
    কী আর বলব? গরীবের ঘোড়া রোগ! STM এর বাংল ইউনিকোড লোড করেছি। কী-বোর্ড ঋকার বলতে যেখানে হাত দিতে বলছে তাতে এই মাল বেরোচ্ছে-- কী যে করি! আবার non-unicode বাংলায় shift+m= ং হওয়ার কথা, হচ্ছে অন্য কিছু।ঃ(((((

    দময়ন্তী,
    তাইলে তুমি এইডারে ভুল শুধরাইবার লায়েকও ভাব নাই।
    এই কি ময়মন্সিংহের মাইয়ার উপযুক্ত কথা?ঃ))))
  • Biplob Rahman | 212.164.212.61 (*) | ০৪ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৫74026
  • চলুক। :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন