এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আমার স্বাধীনতা - দিবস

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ১৭৪৮ বার পঠিত
  • স্কুল জীবনে স্কাউটিং করতাম। লিডার ট্রেনিং করে টরে একাকার। কিন্তু আমি প্যারেডে গলা ছেড়ে কমান্ড দিতে পারতাম না। মানে ওইটা আমার ভিতরে নাইই। কিন্তু স্কুল তা মানতে চাইত না। তুমি লিডার শিপ ট্রেনিং করে আসছ কাজেই তুমিই আরামে দাঁড়াও, সোজা হও বলে চিৎকার করবা! আমি বুঝাতে পারি নাই যে স্কাউটিং করা এক জিনিস আর প্যারেড পরিচালনা করা আরেক জিনিস। শুধু এই কারনেই স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আমাকে একটা আতঙ্কে ফেলে দিত সেই সময়। (এই আতঙ্কেই আমি কলেজে উঠে রোভার স্কাউটিং এর যোগদানের ফরম হাতে নিয়েও ফেরত দিয়ে দিয়েছিলাম।আমি ভেবে দেখছিলাম স্কুল জীবন তো আমার গেছে পেরেশানিতে, এখন কলেজ জীবনেও যদি এই চিন্তা করে আমার দিন যায় তাহলে আমি শেষ!! পরে অবশ্য শুনেছিলাম যে স্কাউটিং এর মজা রোভারেই, কিন্তু আমার অত মজা আর দরকার ছিল না) মার্চ মাস আর ডিসেম্বর মাস আসলে আমার গায়ে জ্বর এসে যেত যেন। স্কুলে যাই বাম ডান বাম করে পার করে দেওয়া যেত, কিন্তু ২৬ মার্চ সকালে স্টেডিয়ামে অত অত মানুষের সামনে আমার ট্রুপ নিয়ে আমি প্যারেড করে যাব? আমি শেষ!! প্রতি বারই শেষ মুহূর্তে কোন একটা কিছু করে অন্যের ঘাড়ে দায়িত্ব গোছায় দিতাম। যাকে দিতাম সে আর কিছু না পারলেও চিৎকার দিয়ে সবাই কে চম়্কায় দিতে পারত খুব ভাল ভাবে। ও দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার একটু স্বস্তি। তখন চিন্তা শুরু হত কখন বাড়ি ফিরব তা নিয়ে। বন্ধের দিন, আমি যেতে যেতে ক্রিকেট ম্যাচ যদি শুরু করে দেয় সবাই!! তখন শুরু করতাম ঘুরে ঘুরে পুরো স্টেডিয়াম চক্কর দেওয়া। বয়েজ স্কুলের ছেলে আমরা, গার্লস স্কুলের মেয়েদের অত কাছে ওই একদিনই যাওয়া যেত। গার্লস স্কুলের আশেপাশে দিয়ে চক্কর দিয়ে মহিলা কলেজের সামনেও চলে আসতাম। অবাক হয়ে দেখতাম তাদের।
    একটা সময় পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবস ছিল আমার কাছেই এইই।

    পরবর্তীতে স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস আমাকে আকর্ষণ করত অন্য একটা কারনে। ওইদিন প্রাণ খুলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যেত। আমরা কয়েকজন বন্ধু বান্ধব এক হয়ে সক্কালে গিয়ে বসে থাকতাম। যখন এক সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হত তখন গলা ছেড়ে গাইতাম আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি…..
    তারপর প্যারেড দেখা, নিজেরা নিজেরা বেধুম আড্ডা দিয়ে সারাদিন পার করে দেওয়া কিংবা এলাকায় ফিরে ক্রিকেট খেলা। সরকারী ভাবে সিনেমা হল গুলাতে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখাত, মাঝেসাঝে ওই সব সিনেমা দেখা।
    একটা সময় পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবস বলতে আমি এই বুঝতাম।

    স্বাধীনতা দিবসের বা স্বাধীনতা শব্দটার সংজ্ঞা পরিবর্তন শুরু হয় ধীরে ধীরে। আমি জানলাম আমরা পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় জাতি যারা স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। জানলাম এত অল্প সময়ে এত বড় গণহত্যা পৃথিবীর বুকে আর হয় নাই। আমি জানলাম ২৫ মার্চ কালরাতের বিভীষিকার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে ম্যাসাকার করে দেওয়ার কথা শুনে শিউরে উঠলাম। জানলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেবের কথা। অধ্যাপক আনোয়ার পাশা তার রাইফেল রোটি আওরাত উপন্যাসে বলেছেন, “কলি যুগের দেবতা দেখতে চাও? তাহলে ড. দেব কে দেখো।” যিনি চিরকুমার থেকে অনেক গুলা সন্তান পালতেন। তার অনেক সন্তানের মাঝে কে হিন্দু আর কে মুসলমান তা নিয়ে বাছবিচার করতেন না। যিনি ঈদে মিলাদুন্নবি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মসজিদে গিয়ে বসে থাকেন। একজন মহামানবের জন্মদিন, তিনি তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন না? এমন মানুষকে গুলি করে, ব্রাশ ফায়ার করে মেরেছে ২৫ তারিখ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
    আমার কাছে ২৫ তারিখ রাতের সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে যায়। কালো রাত আরো কালো হয়ে যায় আমার কাছে। ড. গোবিন্দ দেব আমাকে দিশেহারা করে দেয়, ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা আমাকে হতভম্ব করে দেয়, পরিসংখ্যান বিভাগের এন এম মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রীর সাহসিকতা তাজ্জব করে। মধুর ক্যান্টিনের মধুদা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, শহীদ আনোয়ার পাশা আমাকে আমার সামনে দাঁড় করায়। প্রিয় মৃত্তিকা আমার এত দিনের নির্লিপ্ততাকে প্রশ্ন করে, মা তোর মুখের হাঁসি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি লাইনটা অদ্ভুত এক শিহরণ নিয়ে হাজির হয়, গলা কেঁপে উঠে অজান্তেই। আমি স্বাধীনতা শব্দটার ওজন সম্পর্কে বুঝতে শুরু করি, চুকানো দাম আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয় বলতে কি বুঝিয়েছেন আমি চুপচাপ বুঝতে পারি এখন।

    দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফরাসী লেখক - দার্শনিক আন্দ্রে মালরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বলেছিলেন, আমি সম্ভবত এমন এক প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি যেখানে মৃতের সংখ্যা জীবিতদের থেকে বেশি!! ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু করে যে ম্যাসাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিল তার সম্পর্কে এর চেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর কথা সম্ভবত আর কেউ বলে নাই।
    এত রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা তার কতখানি ঋণ শোধ করে যেতে পারছি?
    সবাই কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্চা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ১৭৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 147.157.8.253 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৮ ১০:১৯64092
  • অসম্ভব আন্তরিক লেখাখানি।
  • aranya | 83.160.123.238 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৫২64093
  • ভাল লাগল
  • Muhammad Sadequzzaman Sharif | 129.30.47.203 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৪:৪৬64094
  • ধন্যবাদ...
  • বিপ্লব রহমান | 113.231.162.110 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৮:০১64095
  • জয় বাংলা!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন