এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • চলো এগিয়ে চলি 2

    Sumon Ganguly Bhattacharyya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ২৪৭৯ বার পঠিত
  • #চলো এগিয়ে চলি 2
    #সুমন গাঙ্গুলী ভট্টাচার্য
    বিবর্তনের ঠিক কোন জায়গায় মানুষ কথা বলতে শিখেছে আমার জানা নেই।তবে আগুন
    আবিষ্কারের চেয়ে এর গুরুত্ব কিছু কম নয়।
    মানুষের মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম জায়গা
    কথা বলা।
    A person with Autism Spectrum দের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে কথা বলা,বা
    সঠিকভাবে ভাব প্রকাশ এর সমস্যা দেখা যায়
    শতকরা আশি ভাগ ক্ষেত্রে। কথা বলতে শেখার প্রথম শর্ত শুনতে পাওয়া,স্বরযন্ত্রের সক্ষমতা,এবং কথা মাথার ভিতরে তৈরি করা।
    বোধ্যাঙ্ক বা IQ একটা মানুষের নির্দিষ্ট মানের না থাকলে কথা তৈরিতে সমস্যা হয়।Autism আক্রান্ত মানুষদের অনেক ক্ষেত্রেই শুনতে পাওয়া বা স্বরযন্ত্রের কোন গোলমাল থাকেনা।কিন্তু IQ কম হয়ে থাকার জন্য কথা বলা বা কথা চালানো,বা সঠিকভাবে ভাব প্রকাশ করতে সমস্যা হয়।
    কথা বলতে না পারলে কোন চিকিৎসা কথা বলাতে পারে না।কিন্তু অল্প কথা বলতে পারলে
    সঠিক থেরাপি,এবং চিকিৎসা কথার সংখ্যা বাড়াতে পারে।
    আমি বিনায়করুকুর মা।রুকুর অটিজম আছে।রুকু কে বড় করতে গিয়ে আমি যে যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি আমি আপনাদের সাথে তাই share করছি ।আপনাদের যদি কাজে লাগে।আপনারা নিজেদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক এর পরামর্শ নেবেন।
    রুকু কথা বলতে শুরু করে 2 বছর বয়সে কিন্তু কথা রিপিট করতো।যার পোশাকি নাম
    "ইকোলেলিয়া"।খুব সাধারণ ভাবে আমার মনে
    হত ,মাথার কোন একটা নির্দিষ্ট অংশে কথাটি
    ধাক্কা লেগে আবার ফিরে আসছে।
    প্রশ্নকর্তা যদি রুকু কে প্রশ্ন করতেন"তোমার নাম কি?" রুকু এক টোনে উত্তর দিতো "তোমার নাম কি?"আবার জিজ্ঞেস করলে একটু থেমে "বিনায়করুকু" বলতো।
    আমরা লক্ষ্য করেছিলাম ওর কথার স্টক কম।ও কথা তৈরি করতে পারছে না।একজন
    সাধারণ মানুষ শুনতে শুনতে নিজের কথার স্টক তৈরি করে।কিন্তু রুকুর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হচ্ছেনা দেখে আমরা কিছু প্ল্যান করি যেটা আপনাদের আজ বলবো।
    একএকটা পূর্ব পরিকল্পিত স্ক্রিপ্ট তৈরি করা।
    দুই বাচ্চার সাথে প্রচুর কথা বলা।
    তিন সঠিকভাবে, সঠিক উচ্চারণে কথা বলা।
    বাচ্চা ছোট বলেই"ওলে বাবলে",আধো, আধো
    বুলি আমাদের বাড়িতে কেউ ব্যবহার করতো না।
    কোন অবাস্তব গল্প বলতাম না।যে ছেলে সাধারণ কিছু একটু ধীরে একটু পরে বোঝে, তাকে রূপকথা,তেপান্তরের মাঠ, ইউনিকর্ন,বোঝানো বৃথা।রুকুর সাথে আমাদের গল্প হতো ।
    "গৌতম দা দুধ দিয়ে যায়।দুধ সাদা।গরম করে রুকু খায়।"
    সহজ পাঠের গল্প যেমন হয় ।"আজ মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করার দিন।"সেই রকম বাস্তব গল্প।তিন থেকে চার লাইনের গল্প।
    চার ছোট ছোট বাক্য বলা।থেমে উত্তর দেওয়া,
    এক কথায় নির্দেশ দেয়া।
    রুকু বাটি আনো।রুকু দাঁত মাজো।কখনোই
    "এই রুকু বাটিতে মুড়ি নিয়ে খেয়ে দাঁত মাজো"
    একে বারেই নয়।
    স্ক্রিপ্ট বলতে ধরুন স্কুল এ
    1good morning বলা।
    2 ম্যাম কে খাতা দেয়া।
    3 থ্যাংক ইউ বলা
    4 ম্যাম লিখেছি/ম্যাম কি লিখবো?
    বন্ধু দের ক্ষেত্রে
    1(গাড়িতে)সরে বোস।
    2ক্লাসে চল
    3টিফিন খাই চল
    4আমি যাচ্ছি খেলতে
    বিয়ে বাড়িতে
    1নাম কি?
    2বিনায়করুকু।
    3স্কুল আর ক্লাস।
    4দাদু ঠাম্মা ভালো আছে।
    5তুমি ভালো আছো?
    6হ্যাঁ খেয়েছি/খেতে যাবো।
    এই ভাবে ঘটনাক্রম বিচার করে বাচ্চাকে রেডি করিয়েছি।সব সময় মিলতো না।কেউ হঠাৎ অন্য প্রশ্ন যা তৈরি নেই জিজ্ঞেস করলে রিপিট করে ফেলতো।একটা দীর্ঘ সময়ের পর ও নিজেই পারে এখন।
    মানুষের সাথে মিশিয়েছি।একটা বড় গ্রুপ এ বেড়াতে গেছি বছরে দুবার সেখানে মানিয়ে নেওয়া।রুকু কে বলে দিয়েছিলাম কেউ জটিল
    কিছু জিজ্ঞেস করেছে পারছো না,সেক্ষেত্রে হালকা হেসে ম্যানেজ দেবে।আমি বা পাপা সামনে থাকলে তোমাকে সাহায্য করবো।না থাকলে বলবে "ঠিক জানিনা বা পারছি না।"
    না পারা তে লজ্জা নেই তুমি সঠিক বলারচেষ্টা করবে।সেখানেই তুমি জিতবে।
    অনেকেই পাড়াতে দেখতাম আমার সহজ সরল ছেলে কে গালি গালাজ শিখিয়ে মজা পেত।স্কুলেও উঁচু ক্লাসের দাদারা শেখাতো।
    সাধারণ বাচ্চারা জানে কোথায় কোন ভাষার প্রয়োগ আমার ছেলে পারতো না ।স্কুল বা পাড়ার মানুষ নিত্য নালিশ করতেন আমাদের।
    এহেন অবস্থায় ছেলে কে বার বার বোঝাতাম
    এই কথা বলা ঠিক নয়।পেট গুড় গুড় করলে বাথরুম এ গিয়ে বলো কারোর সামনে নয়।
    এখন শেখাই প্রতিবাদ করা,রাস্তাঘাটে মারামারি দেখলে এড়িয়ে যাওয়া।বাজে মানুষ নোংরা কথা চেনা এবং ব্যবহার না করা।
    বাজে কথা ব্যবহার যদি বলি করবেনা, রুকু প্রশ্ন করে" পিছনে বস্তির সালু,কিশোর,আন্না কেন বলে আমিও বলবো"।উত্তর দি "ওরা জানে না এই টা খারাপ
    কথা ,ওদের শেখাই নি কেউ ইত্যাদি"।
    সব সময় যুক্তি দিতে পারিনা।
    তবে একটা কথা বুঝি বার বার বলে বলে ঠিক
    জায়গায় কিছুটা হলেও এনেছি।রুকু প্রতিবাদ
    করে ওর মত।নিজের কথা বলে।
    সব বাচ্চা যেন এগিয়ে যেতে পারে।সবার মঙ্গল হোক।
    এক নীল সমুদ্র ভালোবাসা সবাই কে।
    সুমন।
    https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10214785317178272&id=1585735784
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ২৪৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | 781212.194.6767.54 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৩61866
  • সুমন, এই লেখাগুলি যদি এক সঙ্গে মানে একটা লিঙ্কের তলায় পাওয়া যায় তাহলে বড় ভালো হয়। এখন খুঁজে বের করে পড়তে হল।

    পরের কিস্তিগুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.74 (*) | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:৪২61865
  • বিনয়ক রকুকে ভাল লেগে গেল। কি স্বচ্ছ হাসি! ভিকট্রি সাইনটিও ড্যাসিং। ছেলে বড় হচ্ছে; যদিও কচিপনা মুখায়ব থেকে এখনও শৈশব পুরোপুরি ঘুচে যায়নি।

    হেংলার মত অকপটে "এক নীল সমুদ্র ভালোবাসা"র সবটুকু নিলাম। সংগ্রামী সুমনকে অভিনন্দন। শুভ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন