এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • চলো এগিয়ে চলি

    Sumon Ganguly Bhattacharyya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ নভেম্বর ২০১৮ | ২৬৪৩ বার পঠিত
  • #চলো এগিয়ে চলি
    #সুমন গাঙ্গুলী ভট্টাচার্য
    বেশিরভাগ অটিস্টিক মানুষদের রেসপন্স একটু ধীরে হয়।মানুষের মস্তিষ্কের সিগন্যাল এর কাজটি সাধারণত আলোর গতিতে হয়ে থাকে।যেকোন কিছু কথোপকথন ,ভাবের আদানপ্রদান বিদ্যুতের গতিতে করি আমরা নিজেদের অজান্তেই।যেমন আমরা ফোনে কথা বলি সেটাও তো আলোর গতিতে যায় তাই "হ্যালো" বলার সাথে সাথে উত্তর আসে, আলোচনা এগিয়ে চলে।
    একজন অটিস্টিক মানুষের ক্ষেত্রে সিগন্যাল গুলি মানে বাইরের জগতের সমস্ত কিছু স্পর্শ, গন্ধ,স্বাদ,শব্দ ইত্যাদির মাধ্যমে যাওয়া সিগন্যাল যদি যায় আলোর গতিতে কিন্তু অনেক সময় তার প্রসেসিং হয় শব্দের গতিতে ,সেই ফাঁক টি পূরণ হয় তো হয় না,অনেক সময় সিগন্যালিংও ঠিক মত যায় না,তারা যেটা দেখছে,সেটা অন্য কিছুর সাথে গুলিয়ে ফেলতেই পারে।একটা ভারসাম্যের জটিলতা শুরু হয়।
    একদম আলো আর শব্দের গতি।আমরা ভাগ্যবান আমাদের মাথায় সিগন্যাল আসা যাওয়া করে আলোর গতিতে, অটিস্টিক মানুষ দের ক্ষেত্রে সিগন্যাল গুলি বহু রাজপথ,গলি, মাঠ ঘাট পেরিয়ে আসা যাওয়া করে মানে মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরোনে ধাক্কা খেতে খেতে চলে ।
    আমি একজন স্পেশাল মম।"স্পেশাল"শব্দ টি জুড়ে গেছে সেই মুহূর্তে যখন আমার সন্তান শ্রীমান বিনায়করুকুর অটিজম আছে বলে Diagnosed হয়।
    সময় টা আজ থেকে প্রায় 14 বছর আগে।আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়। রুকুর অসুবিধে যা আমরা খেয়াল করেছিলাম তা হলো,...এক কথা বার বার বলা,প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে দেরি হওয়া,কোন পছন্দের জিনিস (তা খেলনার ক্ষুদ্র অংশ হোক বা পোষা বিড়ালের/কাক,শালিখ,চড়ুই পাখির অনুপস্থিতি,পুরোনো ব্যবহার করা চটি জোড়া,বা কফির কাপ)হারিয়ে গেলে অস্থির কান্নাকাটি,দূরেকোথাও বেড়াতে গেলে, কিছুক্ষন আমাকে দেখতে না পেলে উচ্চস্বরে কান্না , এই অবস্থা সামলানো প্রাথমিক ভাবে আমাদের প্রায়োরিটি হয়ে ওঠে।সমস্ত ছোট খেলনা,ভঙ্গুর জিনিস ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলি।পরিবর্তে ব্যাট বল,ট্যাব,বড় গামলা,রাবার হাতুড়ি,
    'Hit me' পুতুল,দোলনা, কাগজ,রং,ম্যাগনিফাইং গ্লাস,মোটা বাঁধানো বই যা চকচকে কাগজের এবং ছবি আঁকা,নকল মাটি,এবং একটু বড় সাইজের বিভিন্ন জন্তুর মডেল রুকু কে দিতে থাকি।
    একটা ঢাউস গামলা দি সাথে খেলার পর গুছিয়ে রাখবে বলে।গামলা টি নির্দিষ্ট ভাবে তার ঘরে রাখার অভ্যেস করাই।বাড়িতে অন্য ছোট বাচ্চা অতিথি আসলে রুকুর খেলনা যাতে নষ্টনা হয় তা আমাদের দেখতে হোত।কারণ কিছুখোয়া গেলে বা ভেঙে গেলে রুকু কে সামলানো যেত না। রুকুর কোন পুরোনো খেলনা আমাকে সামলিয়ে রাখতেহোতো।পুরোনো চটি রেখে দিতাম,কফি/দুধের কাপ প্ল্যাস্টিক এর করে দিয়েছিলাম।
    কোথাও বেড়াতে যাওয়ার থাকলে দিন তিনেক আগে অন্ততঃ না বললে রুকু আজও যেতে চায় না।কোথায় যাবো,কেন যাবো,কে কে থাকবে,সম্ভাব্য পরিবেশ বলে রাখা এবং দেখিয়ে রাখি আজ ও। এবং সম্ভাব্য কথোপকথন কি হতে পারে তাও বলে রাখি।
    পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে।পাড়ার বেশ কয়েকটি কুকুর কে ,পাড়ার দু চারটে বিড়াল একত্রে, দেখাতে থাকি।কাক,চড়ুই,শালিখ সব সময় এক সাথে থাকে ওদের জ্বর হয়েছে তাই আসিনি ,এই ভাবে বোঝাতে থাকি।যেহেতু ছোট শহর পাখির অভাব খুব একটা হয় নি তখন।কোন একটা কিছুর বদলে গ্রুপ এ পশু পাখি দেখাতে থাকি এই আর কি।
    রুকুর লোডশেডিং হলে খুব অস্থির লাগতো, কিন্তু সেটা চেনা জায়গায়। কখনো অচেনা জায়গা তে অপরিচিতের বাড়িতে পাওয়ার কাট হলে অস্থির করে না। আমি সোশ্যাল স্টোরি দেখিয়ে যা আমাকে করে দিয়েছেন আমার বন্ধু Sandip Goonসন্দীপ গুন মহাশয়
    অনেক ফল পেয়েছি।লোডশেডিং এখন সমস্যা নয়। আশা রাখি ধীরে ধীরে ও সমস্ত অন্ধকার কে জয় করবে।
    মাঝে মাঝে রুকু অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ,আমরা সাধ্যমত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।যেমন ঝড়ে তার ছিঁড়ে গেছে কারেন্ট এর কিন্তু রুকুর মনে হয় চোর এসে চুরি করেছে,।এবং রুকু তার যে কোন ধারণা তে অটল থাকে,সব সময় যে সেই ধারণা ঠিক তা নয় কিন্তু তাকে ওই চিন্তা থেকে সরানো যায় না। তাই কিছু ব্যাপার ম্যানেজ করার চেষ্টা
    করি।সব পারিনা।পাড়া -প্রতিবেশী সকলেই জানেন আমাদের সন্তানের একটা অসুবিধে
    আছে ,তারাও সাহায্য করেন।রুকু একা একা দোকান বাজার করে,মামাবাড়িতে ,পড়তে যায়।পাড়া তে সবাই রুকুর সাথে কথা বলে।রুকু একা কোথাও গেলে আমাকে তৎক্ষণাৎ ফোনে খবর দেয়, আমি জানি কিনা।আমরা কৃতজ্ঞ সবার কাছে।
    পৃথিবী বোধকরি এখনও বাসযোগ্য আছে।মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি জানেন এই বিষয়ে আমার মনে হয় প্রচার আরো উপকার করবে।
    রুকু নার্ভাস হলে ওর পাপার হাত ধরতে চায়।তাই আমরা যেখানেই যাই তিন জন যাই।আমরা একটা unit হিসেবে কাজ করি।একে ওপরের সমস্ত প্রয়োজন,চাহিদা বুঝতে পারি।বিশেষ করে রুকু কে বুঝতে পারি।যে বাচ্চা উঁচু স্লিপে উঠতে চাইতো না তাকে নিয়ে আমরা হলঙ এ হাতির পিঠে চেপেছিলাম।
    বেড়াতে যাওয়ার কিছুদিন আগে চিড়িয়াখানা দেখিয়ে আর ছবি, সিনেমা দেখিয়ে।এবং প্রতি মুহূর্তে তার পাপা বোঝাতো আমরা এক সাথে আছি।"আফ্রিকান সাফারি"সিনেমা টি দেখিয়ে
    জঙ্গলের একটা ধারণা দিয়েছিলাম।দিগন্ত বিস্তৃত ঘাস জমির জঙ্গল বা 'সাভানা" এবং তার আড়ালে বন্য প্রাণী ইত্যাদি তাকে দেখানো
    শুরু করেছিলাম প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে।
    একজন অটিস্টিক মানুষের ক্ষেত্রে অনেকেই একটা প্রশ্ন করেই ধৈর্য হারিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যান বা সিম্পলি অবজ্ঞা করেন,কারণ এর সব কিছু একটু ধীরে ধীরে করে। অনেক অটিস্টিক মানুষের রাগ শুরু হয়, কোথাও রাগ মিশ্রিত বিরক্তি।সে মাথা নাড়তে শুরু করে অথবা হাত মুঠো করে গালে ঘষে।এদের বোঝাবার এবং বোঝানো একটু আলাদা কিন্তু অনুভূতি আলাদা নয়।চেনা পরিবেশ,নিজের জিনিসপত্র আমাদের ও প্রিয় কিন্তু আমরা অভাব বোধ মেনে নিতে পারি এরা পারেনা।এই সত্য আমাদের মত মা -বাবার জীবনের বাস্তব।
    আমার সন্তানও ব্যতিক্রম নয় রুকু সব পারে এবং পারবে হয় তো একটু সময় বেশি নেবে।
    এরা যোদ্ধা, সাথে সাথে অটিস্টিক মানুষ দের সাথে যারা থাকেন তারাও।
    আমি বিশেষজ্ঞ নই, জীবন থেকে কিছু শিখেছি যদি আপনাদের কাজে লাগে।
    আমার মনে হয় আমাদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খুব দামি।
    সর্বপরি আমাদের মা এবং বাবা কে ভালো থাকতে হবে।বেশির ভাগ বাবা ,মা প্রথমে মানতে পারেন না ।তারপর বাচ্চার autism মানতে বাধ্য হন।তারপর চলে মনখারাপের
    মহাকাব্য।তারপর বিভিন্ন চিকিৎসা, অকূপেশনাল থেরাপি, school ইত্যাদির চাপ।
    সময় দিতে হয় প্রচুর ,আমাদের বাচ্চাদের এই সময় টাই পথ্য বলতে পারেন।
    বাবা এবং মা পরস্পরের পরিপূরক হলে যুদ্ধ টা সহজ হবে অনেক।
    "অটিজম শাট ডাউন"বলে এই ভয়ঙ্কর শব্দ টি
    আমাদের হয় তো খেয়াল রাখতে হবে।বাচ্চা কিছু পারছে বলে তাকে দিয়ে কলুর বলদের মত তেল বার করতে শুরু করলে সমূহ বিপদ।
    বাচ্চা একদম চুপচাপ এবং নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাবে হাজার চিকিৎসা হলেও আর ফেরাতে পারবো না ।
    এরা যদি কিছু পারে তা হলেই অনেক।এরা এদের নিজেদের মত নিজেদের লেবেল অনুযায়ী বড় হবে।
    সবাই ভালো থাকুন।
    সবাই কে এক নীল সমুদ্র ভালোবাসা।
    সুমন।
    https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10215064429035894&id=1585735784
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ নভেম্বর ২০১৮ | ২৬৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন