এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আমার বাবা আজিজ মেহের

    বিপ্লব রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ আগস্ট ২০১৭ | ২১৩৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • আমার বাবা আজিজ মেহের (৮৬) সেদিন সকালে ঘুমের ভেতর হৃদরোগে মারা গেলেন।

    সকাল সাড়ে আটটার দিকে (১০ আগস্ট) যখন টেলিফোনে খবরটি পাই, তখন আমি পাতলা আটার রুটি দিয়ে আলু-বরবটি ভাজির নাস্তা খাচ্ছিলাম। মানে রুটি-ভাজি খাওয়া শেষ, রং চায়ে আয়েশ করে চুমুক দিয়ে বাবার কথাই ভাবছিলাম।

    আজ তাকে কাছেই সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। দুদিন আগে তিনি পর পর তিনবার বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন। ৮৬ বছর বয়সে এই প্রথম তার পা ফস্কে গেল। নইলে এতো বছর ধরে সব কাজ তিনি একাই করেছেন। অস্বাভাবিক পরিস্কার স্মৃতি তার। আর ভীষণ বই পড়ার বাতিক।

    এইসব ভাবতে না ভাবতেই অনিন্দ্য, আমার ভাতিজার টেলিফোন, দাদু, দাদু করে ওর হু হু কান্না শুনেই বুঝে গেলাম, বাবা আর নেই। বাবা অনিন্দ্যর বাসাতেই আছেন গত বছর বিশেক ধরে।

    আমি তরিঘড়ি করে দৌড়ালাম। কাছেই মগবাজারে অনিন্দ্যর বাসা। সেখানে আমার বড় বোনেরা, বাবার বোনেরা, আরো সব আত্নীয়-স্বজন জড়ো হতে থাকেন। বাবাকে সিরাজগঞ্জের গ্রাম মুগবেলাইয়ে, তার পারিবাকি কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়। পুরো বাড়িটি ধীরে ধীরে মরা বাড়িতে পরিনত হয়। অদ্ভুদ সব অচেনা লোকেরা পুরনো এপার্টমেন্টটিতে গিজ গিজ করে।

    আমি একটি আ্যাম্বুলেন্সে করে বাবার মরদেহ কমিউনিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেই, ডেফ সার্টিফিকেটের জন্য। সেখানে আমার বন্ধু ঝন্টু চাকমার স্ত্রী সাথি চাকমা বৌদি সহায়তা করেন। জরুরি বিভাগে কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়। আমি হাসপাতালের লবিতে পাখার নীচে বসে মোবাইল চিপে বাবাকে নিয়ে ছোট্ট একটি ফেসবুক নোট লিখি। জানাই তার চলে যাওয়ার সংবাদ। আমার অফিসেও ফোন করে জানাই বাবার মৃত্য সংবাদ। হেড অফ দা নিউজ তার সম্পর্কে আরো জানতে চান। আমি ফেসবুক নোটটির কথা বলি। আমি দু-তিনদিন ছুটি চাই, তখনই তা মঞ্জুর হয়।

    ফেসবুক দেখে, আমার কর্মস্থলের টিভি সংবাদ দেখে একের পর এক টেলিফোন আসতে থাকে। সবাই জানতে চান, কখন, কিভাবে? আহা, তার মতো আদর্শিক লোক হয় না। পুরোনো কমিউনিস্ট নেতা বিমল বিশ্বাস ফোন করেন। বাবার স্নেহভাজন জুনায়েদ সাকী সহমর্মিতা জানান জার্মানি থেকে। গণ সংহতি আন্দোলনের আরো অনেক বন্ধু, শুভাকাংখী ফোন করেন। সাংবাদিক বন্ধুদের অনেকেই। অচেনা নম্বর থেকেও একের পর এক ফোন আসতে থাকে। আমি কথা বলতে বলতে অসুস্থ বোধ করতে থাকি। এরপর আমি সেলফ সেন্সর করে বেছে বেছে ফোন ধরি। এছাড়া আমার কোনো উপায় থাকে না।

    বাবার মরদেহ বাসায় আনার পর দু-একজন আত্নীয়-স্বজন কান্নাকাটির চেষ্টা করেন। আমি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। অনিন্দ্যর ছোট বোন, ভাতিজি প্রার্থণা দাদুর বিছানার পাশে বসে নিরবে চোখ মোছে। আমি স্কুল পড়ুয়া কিশোরীটির চোখ মুছে দেই। সবার সামনে বলি, উনি তার কোর্স পূর্ণ করেছেন। একটুও না ভুগে, কাউকে না ভুগিয়ে মারা গেছেন, এতে কান্নার কিছু নেই। জন্মের মতো মৃত্যুও স্বাভাবিক, ইত্যাদি ইত্যাদি।

    স্নানের পর হিমায়িত লাশবাহি গাড়িতে বাবার মরদেহ সিরাজগঞ্জ রওনা হয়ে যায়। আমি আর অনিন্দ্য কল্যানপুর থেকে বাস ধরে সিরাজগঞ্জের পথে রওনা দেই। সঙ্গে আমার মেজ বোন, আরেক মামাতো বোন।

    আমর চারটি প্রাণী যখন সিরাজগঞ্জের মুগবেলাই গ্রামে পৌছাই তখন ঘুট ঘুটে আধার। সবার হাতে হাতে টর্চ দেখে বোঝা গেল, পল্লী বিদ্যুতের খুব ঘন ঘন লোড শেডিং হয়। দাদু বাড়ির সামনের উঠোনে বাবার মরদেহ আনা হয়। সেখানে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ টিপটিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, আধার ভেঙে নামাজে জানাযায় দাড়ান। আরো আসেন বাবার কৃষক কর্মীরা, যাদের নিয়ে তিনি জীবনের ৪০টি বছর কাটিয়েছেন।

    এরপর বাড়ির পেছনে পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে গোর দেয়া হয়। আমি ভীড় থেকে একটু দূরে অন্ধকারে শাল গাছের নীচে দাড়িয়ে পাথর মুখে সব দেখি। আমি জানি, চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়।

    একজন চোয়াল ভাঙা, খোঁচা খোঁচা দাড়ির বয়স্ক লোক আমার দিকে টর্চের আলো ফেলে বলেন, তুই টিংকু (বাবার ডাক নাম) ভাইয়ের ছেলে না? আমি তোর মোমেন চাচা হই। পাশেই সৈয়দ গাতি গ্রামে থাকি। আমি আর তোর বাবা অনেক কৃষক সংগ্রাম করেছি। অনেক আন্দোলন-সম্মেলন করেছি। সে মেলা কথা। একদিন আসিস তো! সব বলবো নে। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেই।

    এরই মধ্যে কেউ একজন এক মুঠো মাটি এনে বাবার গোরে দিতে বলে। আমি মাটিটুকু ঢেলে দেই। এক লাহমায় আমার মনে পড়ে যায়, কবরে শোয়ানো বুড়ো লোকটির আত্মত্যাগ, আদর্শের দীর্ঘ যাত্রা।

    বাবা আজিজ মেহের ছিলেন সাবেক নকশাল নেতা, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল, মতিন-আলাউদ্দীন) এর সাধারণ সম্পাদক। সারাজীবন অনেক কৃষক আন্দোলন করেছেন, মওলানা ভাষানীর সাথে কাগমারী সম্মেলন করেছেন, সন্তোষের মহা সমাবেশ করেছেন, পাকিস্তান আমলে বহু জেল খেটেছেন, সবশেষ কারা বরণ করেছেন জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসন আমলে।

    বাংলাদেশ আমলে তিনি “বস্তু প্রকাশন” নামে একটি প্রকাশনা গড়ে তোলেন। ‘বস্তু প্রকাশন’এর বইগুলো সবই ছিলো চিন্তাশীল এবং যথারীতি ব্যবসা-বিফল। বাবা প্রকাশ করেছিলেন — ড. আহমদ শরীফ, বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক আহসাব উদ্দীন আহমেদ, আহমদ ছফা, আনু মুহাম্মদ, আরজ আলী মাতুব্বর, এমন কি মাওসেতুং, লু-সুন’ও। মাতুব্বরের ’সত্যের সন্ধান’ ও ‘সৃষ্টি রহস্য’র দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিলো আদি প্রচ্ছদে ‘বস্তু প্রকাশন’ থেকেই। সে কথা একটু পরেই আবার বলছি।

    আটের দশকে আমার বাবা সাপ্তাহিক খবরেরকাগজ সহ বিভিন্ন কাগজে নিয়মিত কলামও লিখতেন।

    তখন আমি কলেজে পড়ি, তখন আমি আর্জেস গ্রেনেড, দারুণ যৌবনকাল! সে সময় লিটল ম্যাগাজিনের ভূত ঘাড়ে চেপে বসায় আমি অকালপক্ক বয়সেই জেনে গিয়েছিলাম, ছাপাখানার কল-কব্জা। সীসার হরফ, কাঠের ব্লক, তেল-কালি মাখা গ্যালি-বয়, মেশিন ম্যান, ল্যান্ড মাইনের মতো ছাপার কালির টিন, এমনকি আলো-আঁধারিতে ঘোলা বাল্বের নীচে ভাড়ি চশমা আঁটা প্রুফ-রিডার — সবই আমাকে খুব টানতো।

    আরো পরে এলো কম্পিউটার, ডিমাই ও ডাবল ডিমাই আকৃতির অফসেট প্রেস। সংবাদ পত্র, বই-পত্র, পোস্টার-লিফলেট, এমন কি লিটল ম্যাগাজিনও ছাপা হতে লাগলো কম্পিউটারে। প্রথমে অ্যাপেল ম্যাকিনটস-এর ছোট্ট সাদা-কালো মনিটর, পরে আইবিএম-এর ঢাউশ-আকৃতির সাদাকালো মনিটর ওয়ালা কম্পিউটারই ভরসা।…

    আমার বাবা অনেক চেষ্টা করেছিলেন তার প্রকাশনাটিকে দাড় করাতে। কয়েকটি কম্পিউটার না হোক, অন্তত একটি ডিমাই আকৃতির অফসেট প্রেস কেনার। তাতে হয়তো তার প্রকাশনার ব্যবসার সুবিধা হতো। নিজস্ব বই প্রকাশ ছাড়াও বাইরের অন্যান্য ছাপার কাজও তিনি হয়তো পেতেন। কিন্তু মা’র রেডিও অফিসের কেরানীর চাকরি, আমরা ভাই-বোনগুলো তখন মাত্র একে একে পাস করে বেরিয়েছি, কোনো পারিবারিক সঞ্চয় নেই –সংসার চালানোই দায়, এ অবস্থায় কিছুতেই বাবা কোনো প্রেস কিনতে পারলেন না। উনি বই প্রকাশ করতে শুরু করলেন রশিদ মিয়ার প্রেস, আল-আমিন প্রিন্টার্স, ৭২ নম্বর, নারিন্দা থেকে।

    পারিবারিক উত্তপ্ত আলোচনা থেকে ওই বয়সেই আমি জেনেছিলাম, বাবা বই প্রকাশ করতেন দাদুর আমলের আম-কাঁঠালের বিশাল বাগানের পুরনো সব গাছ উজাড় করার টাকায়। আর তার ব্যাক্তি পরিচিতির কারণে তিনি লেখক সন্মানী দিতে পারতেন সামান্যই। এই করে তিনি রশিদ মিয়ার বাকী টাকা শোধ করতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু যথারীতি ব্যবসাটি খুব শিগগিরই লাটে উঠে যায়।…

    এখনো মনে আছে, পুরনো পল্টনে বাসস অফিসের নীচে, বাবার অফিস ঘরের পেছনে স্তুপ করে রাখা হতো অবিক্রিত বই। খাগড়াছড়িতে আমার পাহাড়ি বন্ধুরা পাঠাগার খুলতে চাইলে বাবার কাছ থেকে আমরা বিনা পয়সায় এক ট্রাক নিউজ প্রিন্টে ছাপা (সুলভ সংস্করণ) বই পেয়েছিলাম। …

    কমিউনিস্ট আন্দোলন নিয়ে বাবার লেখা একটি বই ‘নিষিদ্ধ কথকথা’! সে বইটি বাজারে নেই অনেক বছর। তাকে উদ্ধত করে আমি মুক্তমনাসহ বিভিন্ন সাইটে একটি নোট লিখেছিলাম, ‘সিরাজ সিকদার: অন্য আলোয় দেখা’, গুগল করলেও সেই লেখাটি বোধহয় পাওয়া যাবে।

    আমার বাবা আপোষহীন আদর্শ আর হাজার তিনেক বই ছাড়া কোন সম্পদ রেখে যাননি। তাকে নিয়ে আমি গর্বিত।

    ওইদিনই রাতে লাস্ট বাস ধরে আমি আর অনিন্দ্য ঢাকায় ফিরি। তখন ঝিরি ঝরি বৃষ্টি। আমি মোবাইল খুল হোয়াটস এপে এক বন্ধুর খুব শান্তনা নেই। ফেসবুক খুলে বাবাকে নিয়ে লেখা মন্তব্যগুলো অনিন্দ্যকে পড়ে শোনাতে শোনাতে আমার গলা ধরে আসে। অনিন্দ্য চোখ মোছে। আমরা বন্ধুর মতো হাত ধরে পাশাপাশি বসে থাকি অন্ধকার বাসে। শ্যামলী পরিবহনের বাসটি যেন মহাসড়ক ছেড়ে উড়াল দিয়েছে, এমনই গতিপ্রাপ্ত বলে মনে হয়।

    বাবার কথা ভাবতে ভাবতে আমি আধো ঘুম-জাগরণ, তীব্র মাথা ব্যাথা ও বিবমিষায় ভুগি। ফিস ফিস করে যেন নিজেকেই বলি, তব যাত্রা হোক শুভ। ভাল থাকুন বাবা, লাল সেলাম!
    *সংযুক্ত...

    আমার বাবা রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি যৌবনে ভাল স্টিল ফটোগ্রাফি করেছেন। এরপর কি করে যেন জড়িয়ে পড়েছিলেন চলচ্চিত্রেও। বাবার পৈত্রিক নাম কিন্তু ছিল এসএম মসিউর রহমান। আর সিনে জগত ও গোপন পার্টির ছদ্মনাম ছিল আজিজ মেহের। শেষে তিনি এই নামেই পরিচিতি পানা। কালক্রমে তার আসল নামটিই হারিয়ে যায়। বাবা সর্বত্র পরিচিত ছিলেন আজিজ মেহের নামেই।

    তিনি পাকিস্তান আমলের বিখ্যাত ছবি “জাগো হুয়া সাবেরা”র সম্ভবত সহকারি পরিচালক ছিলেন। পরে উনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান এবং আলমগীর কবিরের সঙ্গে দু-একটি ছবিতে কাজ করেছেন। আলমগীর কবিরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র “ধীরে বহে মেঘনা” ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন বাবা।

    স্বাধীনতার পর পরই আমার বাবা “বিচার” নামে একটি সামাজিক ছবি নির্মাণ করেছিলেন। সুচন্দা ছিলেন এই ছবির মায়ের চরিত্রে। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যাবে, মা কুপুত্রকে নিজেই দোনালা বন্দুকের গুলিতে হত্যা করেন—এটিই ছিল তার বিচার।

    আটের দশকে তিনি ড. আহমদ শরীফের ওপর একটি প্রামন্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন, “উজান স্রোতের যাত্রী”। গণসংগীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের “উজান স্রোতের যাত্রী/ ওরে ও ছাত্রছাত্রী/ মশাল জ্বালো, মশাল জ্বালো, মশাল জ্বালো…” গানটি থেকে কথা নিয়ে এই ছবিটির নামকরণ আমিই করেছিলাম।

    এখনো মনে আছে জহির রায়হানের ক্যামেরা ম্যান লক্ষণ দাস ছিলেন এই ছবিটির চিত্রগ্রাহক। কলকাতার বিদ্যাসগর মহিলা কলেজের অধ্যাপিকা, ড. আহমদ শরীফের পালক কন্যা, ড. প্রথমা রায় মন্ডল ছিলেন এর প্রযোজক। সম্ভবত এর একটি রাশ প্রিন্ট এখনো তার কাছে রয়েছে। ড. শরীফের পরিবারের কাছে এর মূল কপিটি থাকার কথা।


    * সংযুক্ত -০২//

    এক বন্ধুর সাথে আলাপচারিতায় হঠাৎ মনে পড়ল। পরে মনে হল, এখানেও টুকে রাখি।...

    আমার জন্মের সময় বাবা আজিজ মেহের নকশাল বাড়ি কৃষক বিদ্রোহ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন, তার জেল হয়েছিল। সেখানে তাকে প্রচুর টর্চার করা হয়। সে সময় তার টিবি হয়েছিল।

    ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাবা জেল থেকে ছাড়া পান। সে সময় তিনি অনেক ভুগেছেন। হয়তো মরেই যেতেন, এমন দশা। পরে মা সৈয়দা আজগারি সিরাজীর কাছে সেই গল্প শুনেছি।

    অভাবের সংসারে বাবার অষুধপত্র, দুধ, ডিম, মাখন, ফলমূল ইত্যাদি পুষ্টি যোগাতে মাকে খুব হেনস্থা হতে হয়েছিল। আমরা ছোট ছোট পাঁচজন ভাইবোন।

    সেই সময় মা নিজের সব গহনা বিক্রি করে খরচ জুগিয়েছেন। যুদ্ধের বাজারে তেমন দামও পাননি।

    আরো পরে সাদাকালো ছবিতে মার সে সব পুরনো নকশার ভাড়ি ভাড়ি গহনা দেখেছি, যেন সুচিত্রা সেন!

    আমার মা সারাজীবনে আর কখনও গহনা কিনতে পারেন নি।
    ছেলেমেয়েদের বিয়েতেও কোন গহনা দিতে পারেননি। আহারে রেডিও অফিসের আপার ক্লার্ক মা জননী, আমার চির দুখী মা, মধু, ওরফে মধুমালা!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ আগস্ট ২০১৭ | ২১৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শঙ্খ | 113.242.199.119 (*) | ১৫ আগস্ট ২০১৭ ০৬:০১60713
  • বিপ্লবদা, শক্ত থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
    ...বিরহ দহন লাগে
    তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে...
  • h | 60.250.21.21 (*) | ১৫ আগস্ট ২০১৭ ১০:৫৮60714
  • খুব কষ্ট হলো পড়ে। কি আর বলবো। শক্ত থাকেন।
  • পাই | 57.29.240.103 (*) | ১৬ আগস্ট ২০১৭ ০২:৩৭60717
  • এইসাব লেখায় কী লিখব, অস্বস্তি হয়।
  • শিবাংশু | 113.217.234.95 (*) | ১৬ আগস্ট ২০১৭ ০৬:০২60716
  • স্পর্শ করলো। ভালো থাকবেন...
  • aranya | 172.118.16.5 (*) | ১৬ আগস্ট ২০১৭ ১২:০৭60715
  • এক্জন মানুষের মত মানুষ চলে গেলেন
  • বিপ্লব রহমান | 113.231.160.190 (*) | ২০ আগস্ট ২০১৭ ০৩:১১60718
  • চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়।

    এই লেখাটি পড়ে আমার বাবা আজিজ মেহেরের মৃত্যুতে যারা শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে জানাই কৃতজ্ঞতা!

    মূল লেখায় কি করে যেন বাবার সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র জীবন বাদ পড়ে গিয়েছিল, এখন সেটি সংযুক্ত করেছি।
  • শক্তি | 223.191.21.172 | ১০ আগস্ট ২০২০ ০৬:৪৩96115
  • অন্তরঙ্গ পিতৃস্মৃতি শুধু নয় সংগ্রামী সাহিত্যিক শিল্পী আজিজ মেহের  (পৈতৃক নাম এস এম মসিউর রহমান ) মা রেডিও অফিসের আপার ক্লার্ক মধুমালাকে আমাদের মুগ্ধ শ্রদ্ধালু দৃষ্টিপথে তুলে ধরার জন্য লেখককে ধন্যবাদ ।বড় কাজ  করলেন 

  • পারমিতা। | 2409:4060:40c:93ac:8152:deff:e16:6a60 | ১০ আগস্ট ২০২০ ১১:৫২96122
  • স্মৃতি।

  • বিপ্লব রহমান | ১০ আগস্ট ২০২০ ১৪:০১96127
  • শক্তি দি,  পারমিতা দি, 

    পাঠ ও সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ। 

    আসলে   মৃত্যুর পরে কোনো জীবন নাই। আবার দেহজ মৃত্যু মানেই মরণ নয়। মৃতরা  বাঁচেন জীবতদের ভালবাসায় । 

    সে অর্থে আজিজ মেহেরদের মরণ নাই।

  • Prativa Sarker | ১০ আগস্ট ২০২০ ১৫:৪০96134
  • ঠিক কথা বিপ্লব। এঁদের মরণ নাই। প্রতুলের গানটার কথা মনে পড়ছে, সব মরণ নয় সমান। 

  • Mujtoba Saud. | 103.213.242.69 | ১২ আগস্ট ২০২০ ১৭:২৮96200
  • আরও আগে না পড়তে দুঃখ হচ্ছে। অনেক বিষয়ে আমার জানা ছিলোনা। উনি বুঝতে দিতেন না। 

    খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। তাঁর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।                 

  • aranya | 162.115.44.101 | ১৩ আগস্ট ২০২০ ০৭:৫৩96215
  • ওপার বাংলায় নকশাল আন্দোলন, এপার বাংলার আন্দোলনকারীদের সাথে তাদের যোগাযোগ - এ নিয়ে কোন বই / লেখা আছে ? @ বিপ্লব

    সব মরণ নয় সমান - খুবই ঠিক কথা
  • বিপ্লব রহমান | ২৮ আগস্ট ২০২০ ০৮:০৪96715
  • প্রতিভা দি,  মুজতবা, 

    অনেক দেরীতে বলছি, পাঠ ও সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ। আগামীতেও সাথে থাকার বিনীত অনুরোধ             

  • বিপ্লব রহমান | ২৮ আগস্ট ২০২০ ০৮:১১96716
  • অরণ্য, 

    আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।     

    কিছু বইপত্র লেখা হয়েছে,  কিন্তু খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। আমার বাবার একটি আত্মজীবনী কিছুদিন আগে মুক্তমনায় ই-বুক আকারে প্রকাশ করেছি। সেটা দেখতে পারেন                 

    https://blog.mukto-mona.com/2019/12/04/55513/

  • | 2601:247:4280:d10:25f1:f43b:af2e:baba | ২৮ আগস্ট ২০২০ ১৭:৪৪96727
  • বিপ্লব, সমবেদনা

    যদি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারতাম যে নেই সে আসলে আছে, বড় ভালো হত...

  • শক্তি দত্ত রায় | ১০ আগস্ট ২০২১ ০৫:৫৫496616
  • কষ্ট হলো,গর্বও হলো আপোষহীন সংগ্রামী মানুষটির জন‍্য। শ্রদ্ধা জানাই 

  • শক্তি দত্ত রায় | ১০ আগস্ট ২০২১ ০৫:৫৮496617
  • কষ্ট হলো।গর্ব হচ্ছে আপোষহীন বিপ্লবীর জন‍্য।শ্রদ্ধা জানাই

  • সম্বিৎ | ১০ আগস্ট ২০২১ ০৮:২৯496618
  • তখন কেন পড়িনি, জানিনা। বিপ্লব ঠিকই বলেছেন, এ যাওয়া তো নয় যাওয়া।

  • Saswati Basu | ১০ আগস্ট ২০২১ ১১:৩৭496624
  • ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বিশ্বাস করি মনে প্রাণে যে যাওয়া মানেই প্রস্থাণ নয়। আমাদের ভালবাসায়তাঁরা বেঁচে থাকেন আরো বেশী করে। মুক্তমনা আদর্শবাদী আজিজ মেহেরের জন্য আমার শ্রদ্ধা রইল  

  • বিপ্লব রহমান | ১০ আগস্ট ২০২১ ২২:০৬496638
  • শক্তি দি, সম্বিৎ, স্বস্তি,


    আজ বাবার চতুর্থ প্রয়াণ দিবস।


    করোনার ভয়াবহ ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থতিতে এই প্রথম গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না, মা ও বোনদের সাথে দেখা হলো না! 


    স্বীকার করি, আমার বাবা আজিজ মেহেরের মতো এত আধুনিক, এতো জ্ঞানী মানুষ আর একজন দেখি না! 


    মাথার ভেতরে বৃষ্টির মতো অবিরাম ঝমোঝম করে বব ডিলান বাজছে, "পিপলস ডোন্ট লিভ অর ডাই, দে জাস্ট ফ্লোট"...

  • অপু | 2409:4060:80:1f2a::c23:c0a5 | ১০ আগস্ট ২০২১ ২৩:০০496641
  • বিপ্লব বাবু এ শোকের সান্ত্বনা  হয় না। শক্ত থাকুন। ভগবানের  কাছে প্রার্থনা  করি এ শোক অতিক্রম  করার শক্তি  যেন উনি আপনাকে দেন।

  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১১ আগস্ট ২০২১ ০৩:৩৫496644
  • বিপ্লবদা, এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা মানুষদের চেতনায় তিনি মিশে থাকবেন তাদের জান্তে অথবা অজান্তে।
    যেমন আপনি
    বলেছেন - একটা গোটা জীবন যাপন করেছেন তিনি তাঁর হিসাব মত; যা দাম দিতে হয় দিয়ে। খুব কম জন-ই করে উঠতে পারেন। তাঁর উত্তরাধিকার আপনাকে শক্তি দিক, সামর্থ্য জুগিয়ে চলুক। 

  • বিপ্লব রহমান | ১১ আগস্ট ২০২১ ০৮:২৯496649
  • অপু, অমিতাভ বাবু, 


    অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। 


    এখন হাতেনাতে বুঝি, কাকে বলে "মৃত্যু",  "চলে যাওয়া",  "চির বিদায়"! সত্যিই বাবা আর নেই? ❤️

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন