এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কুমায়ুন, সুন্দরী কুমায়ুন

    এবড়োখেবড়ো লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ নভেম্বর ২০১৭ | ৩০৫৮ বার পঠিত
  • গৌরচন্দ্রিকা

    ইচ্ছে ছিল এই শীতের ছুটিতে গুজরাট যাওয়ার। আমেদাবাদ-গির-সোমনাথ-দিউ-দ্বারকা-গ্রেটার রন-মোধেরা -পাটন ছুঁয়ে লিটল রনের বুনো গাধা আর ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁক দু’চোখ ভরে দেখে ঘরে ফিরে আসা। কিন্তু বিধি বাম! কন্যা জোর আপত্তি জানাল যে সে কিছুতেই ওই সময়ে বেড়াতে যাবে না — তার নাকি কীসব পরীক্ষাটরীক্ষা আছে, সেসব নিয়ে সে চরম ব্যস্ত থাকবে। চিরকালের অসফল ছাত্র আমি, তাই তার সফলতার চেষ্টার বিরুদ্ধে সেভাবে মুখ ফুটে কিছু আর বলতে পারলাম না। অগত্যা মেয়ের মাকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে উঠে পড়ে লাগতেই হল। চলো কুমায়ুন, দু’জনই সই। আমাদের হানিমুনে সঙ্গী হয়েছিল অম্‌লা (হস্টেলমেট অমলেশ চ্যাটার্জি, যে ব্যাটা অংক নিয়ে পড়ে অথচ সাহিত্যের চমৎকার সমঝদার, তার সাথে বেড়ানো আরেক বিরাট গপ্পো), সে হিসেবে আমাদের এটাকে বিলেটেড হানিমুন বলা যেতেই পারে! মেয়ের মা ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ মার্কা টানাপোড়েন কাটিয়ে অবশেষে রাজি হলেন আমার সহযাত্রী হতে। কন্যাকে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে শীতের ছুটিতে পুরী ঘোরানোর (সে ওখানে গেছিল পাক্কা সতেরো বছর আগে) প্রতিশ্রুতি দিয়ে লেগে পড়লাম টিকিট-হোটেল-গাড়ি ঠিক করার সাতসতেরো ঝক্কিঝামেলায়।

    ভবানীপুরে দেশবন্ধু মার্কেটের কাছে এক তস্য গলিতে কেএমভিএন-এর অফিস, সেখান থেকেই আস্তানা জোটানোর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেল আর গাড়ির দায়িত্ব নিল মোহন সিং। বাক্সপ্যাঁটরা (যেহেতু বিলেটেড হানিমুন তাই সন্ধেবেলার অলস সময়টুকু কাটানোর সঙ্গী হিসেবে গোটা তিনেক বই তাতে আলগোছে ভরে নিয়ে) গুছিয়ে লক্ষীপুজোর পরের দিন চললাম সকাল আটটার লালকুঁয়া এক্সপ্রেস ধরতে। এ প্রসঙ্গে বলি বাঘ এক্সপ্রেস ভয়ানক, লালকুঁয়া মন্দ নয় তবে প্যান্ট্রি নেই, সে হিসেবে দিল্লি হয়ে নৈনিতাল যাওয়া সবচেয়ে সুবিধার। ট্রেনে রাতটুকু কাটিয়ে পরদিন সকালবেলা রুদ্রপুর আসতে ফোন করলাম মোহনকে, লালকুঁয়া আসতেই দেখি আমাদের কামরার সামনে সে করজোড়ে হাজির! বিদেশবিভুঁইয়ে এহেন ভিআইপি অভ্যর্থনা পেয়ে আমরা দু’জনেই আপ্লুত ততক্ষণে!! ট্রেন লেট করেছে প্রায় তিন ঘন্টা, বেলা বারোটা নাগাদ মোহনের রথে চড়ে পাড়ি দিলাম নৈনিতালের দিকে। পরিকল্পনা ছিল বিকেলের দিকে লেক ট্যুর মানে ভীমতাল-সাততাল-নওকুচিয়াতাল ঘোরার কিন্তু দেরিতে নৈনিতাল পৌঁছনোয় সে প্ল্যান বাতিল করতে হল।

    নৈনিতাল ছোট্ট একটা জায়গা যার একদিকে তাল্লিতাল যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন গান্ধী আর অন্যদিকে মাল্লিতাল যেখানে আছেন গোবিন্দবল্লভ পন্থ। নৈনিতালের যাবতীয় কারিকুরি লেককে ঘিরে এই দেড় কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে, রাস্তা দু লেনের, সারা রাস্তা জুড়ে আছে অসংখ্য চিনার গাছ - ব্রিটিশ আমলের সুদৃশ্য রেলিং - হোটেল - সারি সারি দোকান। সবচেয়ে মজার কথা এই রাস্তাটায় সন্ধে ছ’টা থেকে আটটা পর্যন্ত সময়টুকু বাদ দিয়ে রিকশা চলে, ভাড়া কুড়ি টাকা। দুপুরবেলা বাঙালি খাবারের লোভে ‘মৌচাক’-এ হাজির হয়ে আর কোনোদিন খাব না প্রতিজ্ঞা করে ফিরলাম হোটেলে। সন্ধ্যাবেলায় পায়ে হেঁটে মাল্লিতাল গিয়ে চললাম নয়না দেবীর মন্দিরের আরতি দেখতে। ততক্ষণে শহর জুড়ে জ্বলে উঠেছে আলো, তার প্রতিফলন পড়েছে লেকের জলে। নয়না দেবীর মন্দির চত্বরের আশেপাশেই আছে গুরুদ্বারা-মসজিদ-চার্চ আর রাস্তার দু’পাশ জুড়ে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান যেখানে তখন চলছে চুটিয়ে বেচাকেনা। নৈনিতালের স্পেশালিটি মোমবাতি আর রডোডেনড্রনের ফুল থেকে তৈরি বুরানশ স্কোয়াশ। খুঁজেপেতে সেসব খানিক কিনে রিক্সা চেপে সোজা হোটেল। পরদিন যাব রানিখেত হয়ে শীতলাখেত।






    প্রথম পর্বের পর

    দ্বিতীয় পর্ব

    আজ যাচ্ছি নৈনিতাল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের রানিখেত। রানিখেতের সত্যিকারের ভালো লাগার জায়গা হল ঝুলাদেবীর মন্দির যে মন্দিরে ঘন্টার আধিক্য দেখে অবাক হতে হয়। ভক্তরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন, সে প্রার্থনা মঞ্জুর হলে তাঁরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মন্দিরে তাঁদের সাধ্য অনুযায়ী নানা আকারের ঘন্টা বেঁধে আসেন। সেই সব মূল্যবান ঘন্টা চুরি করার কথা কেউ মাথাতেও আনেন না। রানিখেত কুমায়ুন রেজিমেন্টের সদর দপ্তর, ফলে একটি মিলিটারি মিউজিয়াম আছে। যুদ্ধ-গোলাবারুদ যাঁদের ভালো লাগে তাঁদের এটি ভালো লাগতেই পারে, আমাদের কাছে সময়ের অপচয় মনে হল। মোহন অবশ্য আমার পাঠানো ট্যুর প্রোগ্রাম অনুযায়ী কোনও কিছু দেখানোতেই খামতি রাখছে না; সেই সুবাদে ফলহীন চৌবাটিয়া আপেলবাগান, চিলিয়ানৌলায় হেইড়াখান বাবার আশ্রম, উপতা গলফ কোর্স, কালিকা ব্যাঘ্রমন্দির সবই দেখলাম এবং অনুভব করলাম রানিখেত না দেখলেও কুমায়ুন ভ্রমণের কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না।

    ঝুলাদেবী মন্দির


    রানিখেতের ভিড় এড়িয়ে এইবার চললাম কাঠপুরিয়া হয়ে ৩০ কিলোমিটার দূরের শীতলাখেত, আজকের রাত্রিবাস ওইখানেই। অনেকেই রানিখেতকে বুড়িছোঁয়া করেন সোজা কৌশানি চলে যান, আমাদের অবশ্য শীতলাখেতের নির্জনতায় একটা রাত কাটাতে ভালোই লাগল। কেএমভিএন-এর শীতলাখেত পর্যটক আবাসে মোটে আটটা ঘর, তার ওপর সেদিন ওখানে আমরাই একমাত্র অতিথি। ওঁদের বদান্যতায় নিজেদের পছন্দমতো একটা ঘর বেছে নিয়ে শেষ বিকেলে পায়ে হেঁটে বেরোলাম সূর্যাস্তের শোভা দেখতে। সে পালা সাঙ্গ করে শীতলাখেতের অসীম নির্জনতায় ছাদে বসতে নজরে পড়ল দূরের আলমোড়া শহরের আলো। সকালে উঠে দেখি পাহাড়ের চূড়ায় ঠিকরে পড়ছে উদিত সূর্যের ছটা। চারিদিকে কোনও কোলাহল নেই, পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখার নানাবিধ ঝক্কিঝামেলা নেই, স্রেফ হোটেলের ছাদে বসে প্রকৃতির অকৃপণভাবে উজাড় করে দেওয়া শোভার সাক্ষী আমরা দু’জন। হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টের সদ্ব্যবহার করে (আগের রাতে সাত তাড়াতাড়ি খেয়ে নেওয়ায় খিদেটা পেয়েওছিল জব্বর!) সকাল ন’টা নাগাদ চললাম কাপড়াখান-সোমেশ্বর হয়ে ৬০ কিলোমিটার দূরের কৌশানি।

    সূর্যাস্ত, শীতলাখেত

    সূর্যোদয়, শীতলাখেত


    কৌশানি যাওয়ার পথে পড়ে কাটারমল সূর্যমন্দির। ত্রয়োদশ শতকে কাত্যুরি রাজা কাটারমল্লের তৈরি মন্দিরটি কুমায়ুনের একমাত্র সূর্যমন্দির, নিয়মিত পুজোও হয়। অনেকে আলমোড়া থেকে ঘুরে যান, তবে সে ঘুরপথে না গিয়ে আমরা চললাম মন্দির সন্দর্শনে। গাড়ি ছেড়ে পদব্রজে লোকজনের বাড়ির পাশ দিয়ে একচিলতে রাস্তা ধরে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাওয়া। পর্যটক হাতে গোনা চার-পাঁচজন, বাঙালি আর কেউ নেই। এ মন্দিরের কারুকার্য কোণারকের মতো নয়, তবে একটা নিজস্বতা বর্তমান। কুমায়ুনি শৈলিতে তৈরি মন্দিরের মাথার ওপর গাঢ় নীল আকাশ, ভেতরে অশ্বারূঢ় সূর্যদেব। পাণ্ডার অত্যাচার নেই, ভক্তের হুড়োহুড়ি নেই; সব মিলিয়ে অপার শান্তি, অসীম নৈঃশব্দ্য বিরাজমান।

    কাটারমল সূর্যমন্দির


    কৌশানির পর্যটক আবাসের দোতলার ব্যালকনি থেকে স্পষ্ট দেখা যায় ত্রিশূল শৃঙ্গ, অবশ্য কৌশানির সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে গেলে তিন কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হয় গান্ধী অনাসক্তি আশ্রম। এখানে গান্ধী দিন বারো ছিলেন, গীতার ভাষ্য লিখেছিলেন এবং কী এক অজানা কারণে কৌশানিকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলেছিলেন। আশ্রমের ভেতরে গান্ধীর কিছু ছবিটবি আছে, তার দু-একটায় রবীন্দ্রনাথ-সুভাষও আছেন। আশ্রমের চত্বরে আমরা চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে লাগলাম সূর্যাস্তের যার মায়াবী আলো রাঙিয়ে দেয় ত্রিশূলের চূড়া। বনে গিয়েই যেমন জন্তু দেখা যায় না ঠিক তেমনই পাহাড়ে গিয়েই সূর্যাস্ত দেখা কপালের ব্যাপার। আমাদের দু’জনের মধ্যে একজন যেমন কপালের ব্যাপারে ঘোর বিশ্বাসী, আরেকজন ততটাই অবিশ্বাসী হওয়ায় বোধ হয় মেঘে ঢেকে থাকল ত্রিশূল। ভগ্ন মনোরথ হয়ে লাগোয়া ‘রাঁধুনি’ রেস্তোরাঁ থেকে টিপিক্যাল বাঙালি খানা প্যাক করে হোটেলে ফিরে আসা। সকালে অবশ্য ত্রিশূল তার পূর্ণ রূপ মেলে ধরল আমাদের চোখের সামনে, মুগ্ধ বিস্ময়ে সে দৃশ্য দেখতে দেখতে কাল বিকেলের মনখারাপ এক নিমেষেই হাওয়া।

    গান্ধী আশ্রম, কৌশানি

    সকালে কৌশানি থেকে দৃশ্যমান পর্বতশৃঙ্গ



    তৃতীয় পর্ব

    কৌশানি থেকে চৌকরি যাওয়ার পথে কৌশানির মাত্র কিলোমিটার দশেক দূরে পিঙ্গলকোট, এখানে চোখে পড়ে একাধিক শাল কারখানা। তারই একটায় নেমে সামান্য কেনাকাটা পর্ব সাঙ্গ করে আজ প্রথমে চললাম বৈজনাথ। কৌশানির ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৈজনাথ ভারতের একমাত্র পার্বতী মন্দির, কেউ বা একে ভারতের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম মনে করেন। এটা আদতে একটা মন্দির কমপ্লেক্স, মন্দির গঠনশৈলীতে কুমায়ুনি ছাপ স্পষ্ট। পরিচ্ছন্ন এই মন্দিরের চাতালে বসে স্পষ্ট দেখা যায় দূরের হিমালয়। পাশ দিয়ে বয়ে চলছে শীর্ণকায়া গোমতী নদী। আমার দেখা কুমায়ুনের সম্ভবত সেরা মন্দির এটি।

    বৈজনাথ মন্দির কমপ্লেক্স


    বৈজনাথ দর্শন শেষে চললাম ২১ কিলোমিটার দূরের বাগেশ্বর। বাগেশ্বরের বাগনাথ মন্দির কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে সরযূ ও গোমতীর সঙ্গমে। অবশ্য মন্দিরের সাথে সাথে গোটা বাগেশ্বরের শোভা সুন্দর দৃশ্যমান দেড় কিলোমিটার দূরের চণ্ডিকা দেবীর মন্দির থেকে। মন্দিরের বিশেষত্ব তেমন কিছু নয় তবে অবস্থানটি চমৎকার জায়গায়। বাগেশ্বর ছাড়িয়ে ৪৫ কিমি দূরের চৌকরি পৌঁছনোর কিলোমিটার দশেক আগে মোহন মধ্যাহ্নভোজের জন্য গাড়ি থামাল ‘জায়কা’ রেস্তোরাঁর সামনে। রেস্তোরাঁ বলতে যে ছবি ভেসে ওঠে আমাদের মনে তার সাথে জায়কার সামান্যতম মিলও নেই, তবে সস্তায় খাঁটি কুমায়ুনি ব্যঞ্জন দিয়ে পেটপুজো করার এমন ঢালাও আয়োজনের ব্যাপারটাও বোধ হয় গোটা কুমায়ুনে নেই। যত খুশি ভাত, তিন রকমের ডাল, আলু-মুলোশাকের তরকারি, রাজমার তরকারি, আর ভাঙ কী চাটনি সহ অসামান্য আয়োজন। জায়কার মালিক প্রত্যেকটা ব্যঞ্জনের নামই বলেছিলেন, আমার শুধু ভাঙ কী চাটনি-র নামটাই মনে আছে! কী অসামান্য স্বাদ!!

    খেয়েদেয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে এইবার আমাদের গন্তব্য কোটমানিয়ার কস্তুরী মৃগ ফার্ম। জায়গাটা চৌকরি ঢোকার সামান্য আগে। পরের দিন আমরা যেহেতু পাতাল ভুবনেশ্বর যাব তাই আজকেই ফার্ম দেখা ঠিক হল। ফার্ম দর্শনার্থীদের বেলা তিনটের পরে জঙ্গলে ঢোকা বারণ, আমরা কোটমানিয়া পৌঁছেছি আন্দাজ আড়াইটে নাগাদ। মোহনের ভাষ্য অনুযায়ী ফার্মে দাদা যেতে পারবে কিন্তু বৌদির গাড়িতে বসে থাকাই ভালো। সে উপদেশ মান্য করে গাড়ি থেকে নেমে ‘পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য’ মার্কা রাবীন্দ্রিক বাণী আউড়ে সবে চড়াই ভাঙতে শুরু করেছি, ও মা দেখি ওই গহন জঙ্গলে আমার একা যাওয়ার ইচ্ছেকে ভণ্ডুল করে দিয়ে পেছন পেছন পত্নীও আসছেন! যদি নির্জন গভীর পথে আমায় চিতায় টেনে নিয়ে যায় তাহলে ‘এ জীবন লইয়া কী করিব?’ জাতীয় বঙ্কিমি চিন্তা থেকেই সম্ভবত তাঁর এমত সিদ্ধান্ত!! দেড় কিলোমিটার চড়াই ভেঙ্গে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট ওঠা চাড্ডিখানি কথা নয়, দমের ঘাটতি পড়লে খানিক বসে জিরিয়ে নিচ্ছি আর জেদও বেড়ে যাচ্ছে পাল্লা দিয়ে। মাঝরাস্তা বরাবর পৌঁছে দেখি একটি অবাঙালি পরিবারও আসছেন কস্তুরী মৃগ দর্শনের ইচ্ছা নিয়ে। এবার আমি আর একা নই, ফলে তিনি ফিরে যেতেই পারেন কিন্তু তাঁকে সে কথা বলতেই তিনি অবিকল সোনার কেল্লার লালমোহনবাবুর ভঙ্গীতে বলে উঠলেন ‘ফিরে যাব?’। আমি রণে ভঙ্গ দিলাম, অবশেষে অনেকটা চড়াই ভেঙ্গে পৌঁছে গেলাম ফার্মের দরজায়।

    কস্তুরী মৃগ খুব ভীতু প্রাণী। কোলাহল সহ্য করতে পারে না, ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু প্রায়ই হয়। এই ফার্মে আছে মোট ষোলটা হরিণ, তার মধ্যে পুরুষ ন’টা। পুরুষ কস্তুরী মৃগ চেনার উপায় হল এদের ওপরের মাড়ি থেকে দুটো গজদন্ত বেরোয়। এই পুরুষ হরিণ থেকেই সংগৃহীত হয় মৃগনাভি যা মূলত সুগন্ধী ও নানা ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। প্রত্যেকটা হরিণের জন্য বরাদ্দ আলাদা আলাদা ঘর, দেখভালের দায়িত্বে আছেন বারোজন কর্মচারী। কস্তুরী মৃগ মোটেই আর পাঁচটা হরিণের মত দেখতে নয়, গায়ে ছিটে দাগ বা মাথায় শিংও নেই। অনেকটা ছাগল আর শিয়ালের মিশ্রণ করলে যেমন দেখতে হয় অবিকল সেইরকম। যেহেতু পুরুষ হরিণের শরীরে মৃগনাভি তৈরি হয় এপ্রিল-মে নাগাদ সেহেতু ফার্মের চারপাশে মন মাতাল করা সুবাসও নেই। সে যাই হোক, খাঁচার ফাঁক দিয়ে আমরা বেশ কয়েকটা হরিণ দেখতে পেলাম, কর্মচারীদের মধ্যে মুরুব্বি গোছের একজনকে ম্যানেজ করে খানকতক ছবিও তুললাম (যদিও ছবি তোলা নিষিদ্ধ এখানে এবং কাজটা অন্যায় করেছিলাম), তারপর খানিক জিরিয়ে নিয়ে নেমে এলাম তরতর করে। দু’জনের মুখেই তখন যুদ্ধ জয়ের হাসি! মোহন খালি বলল, বৌদি পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন সুতরাং পাতাল ভুবনেশ্বর এর তুলনায় নস্যি। আমাদের মুখের হাসি আরও চওড়া হল!!

    চতুর্থ পর্ব

    চৌকরি পর্যটক আবাসে ঢুকতেই সমস্ত ক্লান্তি কোথায় যেন কর্পূরের মতো উবে গেল। চৌকরি মানেই অনাবিল, অনাস্বাদিত এবং অপাপবিদ্ধ প্রকৃতি। যদি এ লেখা পড়ে একজনও কুমায়ুন বেড়াতে যান তাহলে এখানে দু’টো দিন অবশ্যই থাকবেন। আবাসের বিশাল চত্বর, সামনের কেয়ারি করা বাগান, নন্দাদেবীর ক্ষণে ক্ষণে রূপবদল — সব মিলিয়ে চৌকরি লা জবাব। চৌকরির হোটেলের বিছানায় শুয়ে অনায়াসে দেখা যায় সূর্যাস্তের অপরূপ শোভা। যাঁরা টাইগার হিলে গেছেন এবং তার জন্য হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছেন তাঁরা দয়া করে একবার চৌকরি এসে অনুভব করুন পাহাড়ের বুকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দর্শন কতটা অনায়াস হতে পারে। আমরা হোটেলে ঢুকে বাগানে পাতা চেয়ারে বসে দেখলাম সূর্যাস্তের ছটায় নন্দাদেবীর রংবদল - প্রথমে কমলা, তারপর হালকা গেরুয়া আর সবশেষে টকটকে লাল।

    সূর্যাস্ত, চৌকরি


    পরের দিন ছ’টা নাগাদ সূর্যোদয় দেখা এবং তাকে লেন্সবন্দী করার বাসনায় উঠলাম পর্যটক আবাসের নজরমিনারে। মিনিট পনেরো বাদে আকাশ রং-এর ছটায় রাঙিয়ে দিয়ে উদিত হলেন দিনমণি আর তার আলোর বিচ্ছুরণ প্রতিবিম্বিত হল নন্দাদেবীর চূড়ায়। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা!

    সূর্যোদয়,চৌকরি


    চৌকরি পর্যটক আবাস থেকে দৃশ্যমান পর্বতশৃঙ্গ


    সকালে ব্রেকফাস্টের পালা চুকিয়ে চললাম পাতাল ভুবনেশ্বরের পথে। রাস্তায় গাড়ি থামাতেই হল। দিগন্ত জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে তুষারশুভ্র হিমালয়, বিশাল তার বিস্তৃতি। আমার ক্যামেরার ফ্রেমে তাকে আঁটাই সে সাধ্য কোথায়? তবুও কালবিলম্ব না করে, প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা সম্পর্কে সচেতন থেকে ছবি তুললাম বেশ কয়েকটা। তারপর সাহসে ভর করে গাইডের সাথে ঢুকে পড়লাম পাতাল ভুবনেশ্বরের গুহায়।

    পাতাল ভুবনেশ্বরের পথে ১


    পাতাল ভুবনেশ্বরের পথে ২


    এর আগে আরাকু ভ্যালির কাছে বোরাগুহা গেছি, স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট কী ভেলকি দেখাতে পারে তার সম্বন্ধে সামান্য অভিজ্ঞতাও আছে কিন্তু পাতাল ভুবনেশ্বর অপ্রতিদ্বন্দ্বী। খালি পায়ে গাইডের পিছু পিছু প্রায় একশো ফুট নীচে নামার ব্যাপারটাই চরম রোমহর্ষক। কোথাও পা টিপে, কোথাও প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে, আবার কোথাও বা সুড়ঙ্গপথের দু’ধারে বাঁধা লোহার শেকল ধরে নামা। নামা তো নয় বরং অবতরণ বলাই ভালো! শেকলের পাশেই যে ইলেকট্রিকের তার সেটাও মাথায় রাখতে হয়, মাথায় রাখতে হয় যে একবার নামলে আর ফিরে আসার উপায় নেই!! তবে একবার নেমে পড়তে পারলে শুরু হবে অবাক হওয়ার পালা। প্রথমেই শেষনাগ বা বাসুকির বিশাল ফনা যার ওপরে স্থাপিত এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, তারপর স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ, কামধেনুর দুধের ধারা, কালভৈরবের জিহ্বা, বিশ্বকর্মার হাত, ব্রহ্মার হাঁস, সহস্রপদযুক্ত ঐরাবত, শিবের জটা আরও কত কিছু। একদম শেষে পাতাল ভুবনেশ্বরের রুদ্ররূপী শিবলিঙ্গ যাকে শঙ্করাচার্য তামার পাতে ঢেকে দেন। এই অকৃত্রিম ভাস্কর্যগুলোকে বহুযুগ ধরে মানুষ এভাবেই কল্পনা করে আসছে। এখানে ক্যামেরা নিষিদ্ধ, তাই ছবি সব মনের মণিকোঠায়। আসার পথে গুহার খান বিশেক ছবি কিনে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে হোটেলের পথ ধরা। বিকেলে আর একবার সূর্যাস্ত দেখে সকাল সকাল লম্বা ঘুম। কাল যাব মুন্সিয়ারি, রাস্তা এর পর থেকে যথেষ্ট খারাপ তারই সামান্য প্রাক্‌প্রস্তুতি আর কি!

    পঞ্চম পর্ব

    চৌকরি থেকে মুন্সিয়ারি ঠিক একশো কিলোমিটার, রাস্তা সুনীল গাঙ্গুলির ভাষায় ‘ভয়ংকর সুন্দর'। চৌকরির ২৪ কিলোমিটার পরে থল থেকে মুন্সিয়ারি অবধি আমাদের সঙ্গ দিল রামগঙ্গা নদী। সেখান থেকে তেজাম হয়ে বিরথি পাক্কা ৪০ কিলোমিটার পথ। বিরথির কেএমভিএন-এ লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে চললাম বিরথি ফলস দেখতে। প্রায় ১০০ মিটার উঁচু থেকে অবিরাম জলধারা নামছে, পাশ বরাবর রাস্তা ধরে হেঁটে পৌছে গেলাম এক্কেবারে ঝরনার সামনে, সেখানে তখন রামধনু দেখাচ্ছে তার নিজস্ব খেলা।

    বিরথি ফলস


    ফিরে এসে খেয়েদেয়ে চললাম কালামুনি টপ (৯৭০০ ফুট) যেখান থেকে প্রথম দর্শন মেলে পঞ্চচুল্লির। এ তল্লাটের সমস্ত ড্রাইভার এই মন্দির প্রাঙ্গণে থামেন, প্রার্থনা জানান, তার পর আবার গাড়িতে ওঠেন। কালামুনি থেকে কখনও বাঁয়ে কখনও বা ডাইনে আমাদের মুগ্ধ করতে লাগল পঞ্চচুল্লি, মুন্সিয়ারি তখনও ২০ কিলোমিটার দূরে।

    কালামুনি টপ থেকে পঞ্চচুল্লির প্রথম দর্শন


    কৌশানি মানেই যেমন ত্রিশূল, চৌকরি মানেই যেমন নন্দাদেবী, মুন্সিয়ারি মানেই তেমন পঞ্চচুল্লি। মনে করা হয় মহাপ্রস্থানে যাওয়ার আগে দ্রৌপদী তাঁর পঞ্চস্বামীকে এখানে রান্না করে খাইয়েছিলেন। অস্তগামী সূর্যে পাহাড়ের চূড়াগুলোকে চুল্লির মতোই গনগনে লাগে। যাই হোক, মুন্সিয়ারির পর্যটক আবাসের ঘরে এসে বসতেই মনটা আনন্দে ভরে গেল, মনে হল যেন জানলা খুলে হাত বাড়ালেই ছোঁওয়া যাবে পঞ্চচুল্লিকে। হোটেলটার স্থান নির্বাচন অনবদ্য, এত কাছ থেকে পর্বতশৃঙ্গ এর আগে কখনও দেখিনি, না এমনকী পহেলগাঁওয়েও নয়। কিন্তু সব সুখ কপালে সয় না, আমাদেরও সইল না! আকাশ সামান্য মেঘে ঢাকা থাকায় সূর্যাস্তের সময় পঞ্চচুল্লির বুকে রঙের খেলা আমাদের আর দেখা হল না। মোহন আমাদের আশ্বাস দিল আগামীকাল নন্দাদেবীর মন্দির থেকে নাকি তা দেখা যাবেই। মুন্সিয়ারিতে গত বছর একটা বাঙালি খাবারের হোটেল হয়েছে, হোটেল ব্রহ্মকমল। হোটেলটা আমাদের হোটেল থেকে ১০০ মিটার দূরে, রাতে ওখানে মৎস সহযোগে অন্ন ভক্ষণের ব্যাপারটা খারাপ লাগল না।

    মুন্সিয়ারি পর্যটক আবাস থেকে পঞ্চচুল্লি


    ব্রহ্মকমলের মালিক সুমন আমাদের বললেন যে মুন্সিয়ারিতে সূর্যোদয় দেখার সেরা জায়গা হচ্ছে হেলিপ্যাড, ওঁর হোটেল থেকে মেরেকেটে ৩০০ মিটার মতো। সেই মোতাবেক ক্যামেরা বাগিয়ে সক্কালবেলা দু’জনে চললাম হেলিপ্যাডের দিকে। কিন্তু বিধি বাম। সূর্যদেব খানিক উঁকি দিয়ে সেই যে মেঘের আড়ালে মুখ লুকোলেন আধ ঘণ্টাখানেক আর সে আড়াল ছেড়ে বেরোলেনই না। খানিক বাদে মেঘটেঘ কেটে গেল, তিনি ফের প্রকাশ্য হলেন কিন্তু সেই আলো আর পঞ্চচুল্লিতে ঠিকরে পড়ছে না। মুন্সিয়ারি এই নিয়ে দু’বার আমাদের হতাশ করল ।

    পঞ্চচুল্লিতে সূর্যের প্রথম পরশ


    দুপুরের খাওয়া সেরে, খানিক বিশ্রাম নিয়ে তিনটে নাগাদ চললাম ট্রাইবাল হেরিটেজ মিউজিয়াম দেখতে। একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং সংগ্রহে গড়ে উঠেছে এই মিউজিয়াম, শের সিং পাংতে নামক ভদ্রলোক কুমায়ুনের হস্তশিল্পের নানা নমুনার পাশাপাশি সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন আকারের পাত্র, ধূমপানের সরঞ্জাম, অলংকার ছাড়াও নানা কিছু। কাউন্টারে বিক্রির জন্য রয়েছে হিমালয়ের পাখির নানা পিকচার পোস্টকার্ড, সূর্যাস্তের সময়ের পঞ্চচুল্লির ছবি, সিডি ইত্যাদি। কুমায়ুন ভ্রমণের স্মারক হিসাবে তার দু-একটা নমুনা কিনে চললাম নন্দাদেবী মন্দিরের দিকে। মূল রাস্তার (মানে যতদূর অবধি গাড়ি আসে) পর থেকে মন্দিরে পৌঁছনোর চমৎকার হাঁটার রাস্তা, সহজেই হাজির হওয়া যায় মন্দিরপ্রাঙ্গণে।

    মন্দির দেখতে যাওয়া তো নয়, আসলে ওখান থেকে সূর্যাস্তের মোহময় রূপ দেখব বলেই এতটা রাস্তা উজিয়ে আসা। ফেলুদার কথা ধার নিয়ে বলি ‘বিশ্বনাথের মন্দির তো সবাই দেখে কাশীতে, বিশ্বশ্রীর মন্দির আর ক’জন দেখে বলুন?’। মন্দির চত্বর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল এবং পঞ্চচুল্লি। সেখানে আরেকটু বাদেই শুরু হবে রং-এর খেলা যা দেখার জন্য আমাদের আর তর সইছে না! ও মা কোথায় কি!! বলা নেই কওয়া নেই ঝকঝকে আকাশকে ঢেকে দিয়ে কোত্থেকে হাজির হল একরাশ অবুঝ মেঘ। যতই বলি দোহাই তোরা একটুকু দূরে সর, তাদের সেসব কথায় পাত্তা দিতে বয়েই গেছে!!! ফলে মুন্সিয়ারিতে রঙের খেলা থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা, বার বার তিনবার। মোহন বেচারিরও মন খারাপ, বাঙালি দাদা-বৌদি সানসেট দেখতে পায়নি বলে সে-ই মনমরা বেশি। বলে কিনা কালকের দিনটা থেকে যান মুন্সিয়ারি! পাগল? কাল বিনসর যেতে হবে না?

    ষষ্ঠ পর্ব

    আজকে পাড়ি দিতে হবে সবচেয়ে বেশি রাস্তা। তার প্রস্তুতি নিয়ে সকাল ন’টা নাগাদ হোটেলের পাট চুকিয়ে চললাম বিনসরের দিকে। মুন্সিয়ারি থেকে থল অবধি ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা আমাদের চেনা, সেখান থেকে বেরিনাগ হয়ে সেরাঘাট আরও ৬০ কিমি। সেরাঘাট থেকে ধওলছিনা ১৮ কিলোমিটার। এই ধওলছিনা থেকে আধ ঘন্টা হাঁটা পথে যাওয়া যায় আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম, কিন্তু প্রায় ছ’ঘন্টা গাড়ি চেপে আমাদের আর নামার ইচ্ছে হল না। ধওলছিনা থেকে পাকা রাস্তা চলে গেছে দিনাপানি হয়ে আলমোড়া আর ডানদিকে জঙ্গলের কাঁচা রাস্তা গেছে বিনসরের দিকে। রাস্তা মোটে বারো কিলোমিটার কিন্তু সে পথ পেরোতে সময় লাগল এক ঘন্টারও বেশি। অরণ্যে প্রবেশ করার আগে চেকপোস্টে মাথাপিছু দেড়শো আর গাড়ির জন্য আরও দু’শো টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢোকা গেল বিনসরের গভীরে। তখন সূর্যদেব অস্ত যাচ্ছেন, টুক করে গাড়ি থেকে নেমে তা খানিক দেখে আর ছবি তুলে আন্দাজ ছ’টা নাগাদ ঢুকলাম বিনসর পর্যটক আবাসে।

    তিনি ডুবছেন,বিনসর


    বিনসরে অনেক ঝক্কি। বিদ্যুৎ নেই, সন্ধে ছ’টা থেকে ন’টা পর্যন্ত আলোর ব্যবস্থা, বাকি সময় মোমবাতি সম্বল, গরম জল বালতিতে নিতে হয়, রাতের খাওয়া সারতে হয় সাড়ে আটটার মধ্যে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবু এত কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও বিনসরে পর্যটক আসার বিরাম নেই। বিনসরের অরণ্যে বিশেষত শেষ বিকেলে হামেশাই চোখে পড়ে চিতা কিংবা বার্কিং ডিয়ার। জঙ্গলের অনেকটা গভীরে রাত কাটানোর এটাই একমাত্র আস্তানা এবং জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের ওপর অবস্থিত পর্যটক আবাস থেকে হিমালয়ের শোভা দেখার জন্য বিনসরের মতো জায়গা গোটা কুমায়ুনে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা সন্দেহ। কেদারনাথ, পঞ্চচুল্লি, নন্দাদেবী, ত্রিশূল, চৌখাম্বা সমেত হিমালয়ের প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত রেঞ্জ দেখতে পাওয়া যায় এখান থেকে। সর্বোপরি হোটেলের ছাদে দাঁড়ালেই ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখা যায় অপরূপ সূর্যোদয়।

    সেদিন রাতে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করে আটটা নাগাদ চললাম ডিনার সারতে। ছাদের রাস্তাটা ভালো করে চিনে নিয়ে মোমবাতির আলোয় রাত দশটা অবধি জেগে থেকে শুয়ে পড়লাম কাল সকালে সূর্যোদয় দেখব বলে। পরের দিন সকালবেলা ছাদে গিয়ে দেখি গোটা বারো উৎসাহী লোক হাজির সূর্যোদয় দেখার জন্য, বাকিরা কম্বলের তলায় তখনও সুখনিদ্রায় ব্যস্ত। অবশেষে তিনি উঠলেন, হিমালয় দৃশ্যমান হল, চূড়াগুলোও রঙীন হয়ে উঠতে থাকল ধীরে ধীরে কিন্তু কেন যেন আমার চৌকরির সূর্যোদয়ই বেশি ভালো লাগল।

    তিনি উঠছেন,বিনসর

    তিনি রাঙাচ্ছেন,বিনসর

    বিনসর পর্যটক আবাস


    এরপরেই কাহানি মে টুইস্ট! বিনসরে আমাদের বুকিং ছিল দু’দিনের। দীর্ঘযাত্রার ধকল কাটিয়ে একদিন হাত-পা ছড়িয়ে বিশ্রাম আর তার সাথে মোহনকেও একদিন গাড়ি চালানোর হাত থেকে রেহাই দেওয়াই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু আমাদের ফ্লোর এবং তার নীচের ফ্লোরের সবাই বিনসর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আজ সকালেই, আমাদের একা থাকতে হবে একটা গোটা রাত্তির - সে বিষয়ে আমার ভ্রমণসঙ্গি(নী) এই প্রথম তীব্র আপত্তি জানালেন। তিনি কিছুতেই বিনসরে আর থাকবেন না। আমি খানিক দোনামনা করছি, হঠাৎ সাক্ষাৎ দেবদূতের মতো হাজির হল মোহন। সে বলল তার বিশ্রামের কুছ পরোয়া নেই, ম্যানেজারকে বললে কেএমভিএন-এর অন্য কোথাও আস্তানা জুটে যেতে পারে। ম্যানেজারকে সে কথা বলতেই তিনি নৈনিতালে ফোন করলেন, সেখানে হোটেল ভাড়া অত্যধিক চড়া হওয়ায় ঠিক হল আজকের রাতটা কাটবে ভীমতালে। তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দিলেন; আমি খুশ, মোহনের বৌদি ভি খুশ! সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়ে বিনেশ্বর শিবমন্দির দর্শন করে চললাম দিনাপানি হয়ে আলমোড়া।

    বিনেশ্বর শিবমন্দির


    আলমোড়ায় এলে আর কিছু দেখুন ছাই না দেখুন শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে চিতই-এর গলুদেবতার মন্দির অবশ্যই দেখবেন। কুমায়ুনবাসীর কাছে গলুদেবতা অত্যন্ত জাগ্রত দেবতা, তিনি ভক্তবৃন্দকে ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করেন। গোটা মন্দিরে ছোট-বড় মিলিয়ে ঝুলছে দশ হাজারেরও বেশি ঘন্টা আর তার সঙ্গে আছে অসংখ্য আবেদনপত্র। সাদা কাগজে বা স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত আবেদনপত্রগুলোতে দেবতার কাছে নানা প্রার্থনা লেখা, হিন্দি-ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষায়। খুঁজে খুঁজে বাংলায় লেখা এক প্রার্থনাও চোখে পড়ল, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতা তাঁদের মনোকামনা জানিয়ে গলুদেবতাকে আবেদন করেছেন। দরখাস্তটা পড়ে মনটা খানিক ভারী হয়ে উঠল তাঁদের কথা ভেবে।

    গলুদেবতার মন্দির ১

    গলুদেবতার মন্দির ২

    বাংলায় লেখা আবেদনপত্র


    যাই হোক, ভিড়ে ভর্তি আলমোড়া ছেড়ে খয়েরনা-ভাওয়ালি হয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ পৌঁছলাম ভীমতাল।

    অনভ্যাসের চন্দনের ফোঁটা তো তাই কপালে চড়চড় করছে! দ-এর উপদেশ শিরোধার্য করে সাতসকালে লেখাটা মূল ব্লগে দিলাম।

    সপ্তম ও শেষ পর্ব

    ভীমতাল হল কুমায়ুনের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ, প্রথম নওকুচিয়াতাল। পর্যটক আবাসটির অবস্থান ভারী সুন্দর জায়গায়, শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে খানিকটা নির্জন এলাকায়। দোতলার ঘর থেকে কাচে ঘেরা বিশাল জানলা দিয়ে গোটা লেকটাই দৃশ্যমান। কুমায়ুনের যেটা সবচেয়ে ভালো লাগা সেটা হচ্ছে এঁরা কোনও জায়গাকেই অহেতুক বাণিজ্যিক করে তোলার নেশায় মাতেননি, প্রকৃতিকে খর্ব করে যেখানে সেখানে কুরকুরে-কোল্ড ড্রিংকসের দোকান বসানোর অনুমতি দেননি। হোটেলে দিল্লিবাসী এক পরিবারের সাথে আলাপ হল, তাঁরা আমাদের থেকে বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে প্রচুর টিপস নিলেন, আমার ঝোলা থেকে কুমায়ুনের একটি ম্যাপ তাঁদের দিকে এগিয়ে দিতেই ঝড়ের বেগে তার ফটোকপি করে নিয়ে আমাকে ফেরত দিলেন আর এই সামান্য কারণে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানালেন। ‘মছলি’ পেতে অসুবিধা হচ্ছে বুঝে তাঁরা ম্যানেজারকে আমাদের জন্য মাছের বন্দোবস্ত করতে বললেন। উত্তরে ম্যানেজার সাহাব যা বললেন তা শুনে আক্কেল গুড়ুম! আট প্লেটের নীচে নাকি মাছের অর্ডার নেওয়া হয় না!! আমরা মানুষ না বিড়াল তা ভাবতে ভাবতে খানিক সময় কাটল, তারপর মুখস্ত করা পড়া দিলাম - ছে রোটি, এক আলুগোবি, এক মটর পনির অউর এক মিক্সড ভেজ!!!

    ব্রেকফাস্ট সেরে হোটেল ছেড়ে দিয়ে চললাম ভীমতালের হনুমান মন্দির দেখতে। যে মন্দিরের স্থাপত্যসৌকর্য আমাকে আকৃষ্ট করে না বা বিশেষত্ব থাকে না সে মন্দিরের দেবতা বা দেবীমূর্তি আমার আগ্রহের কারণ হয় না। এটাও হল না, মন্দিরে খানিক থেকে ভীমতাল আসলাম। মাঝখানে দ্বীপের মতো একটা জায়গায় রেস্তোরাঁ আছে, আছে অজস্র রাজহাঁস আর বোটিং-এর জন্য সার দিয়ে অপেক্ষা করছে প্রচুর নৌকো। ভীমতাল দেখে চললাম সাততাল, পান্না সবুজ জল আর তার সাথে মিশে আছে সবুজ অরণ্য - সব মিলিয়ে দুর্দান্ত আরণ্যক পরিবেশ। সাততাল আসলে ছোট ছোট সাতটা হ্রদের সমাহার এবং পাখি দেখার আদর্শ জায়গা, আমরা সামান্য দেরি করায় তা আর দেখা হল না। সব শেষে গেলাম নওকুচিয়াতাল। এই হ্রদ নয় কোণবিশিষ্ট, জনশ্রুতি এই ন’টা কোণই যে দেখতে পায় সে আর বাঁচে না। আমাদের বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছা কাজেই সে চেষ্টাও করলাম না।

    ভীমতাল

    সাততাল

    নওকুচিয়াতাল


    যখন ভাওয়ালি হয়ে ভীমতাল এসেছিলাম তখনই চোখে পড়েছিল রাস্তার ধারে ফলের রস আর জ্যামের বিখ্যাত দোকান। আবার ভাওয়ালি হয়ে নৈনিতাল ফেরার সময় গাড়ি দাঁড় করালাম দোকানের সামনে। সেখানে সব কিছু চেখে ও দেখে কিছু জিনিসপত্তর কিনে উঠলাম গাড়িতে। মোহন আজ আমাদের নৈনিতালের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে ফিরে যাবে নিজের বাড়ি। এই দশদিন আমরা একসাথে ছিলাম, আজ ছেড়ে দেওয়ার সময় তাঁর মন খারাপ, আমাদেরও। এতদিন গাড়িতে পেন ড্রাইভে বেজেছে আমাদের পছন্দের গান। টাকাপয়সা মিটিয়ে মোহনের বাড়ির লোকেদের সামান্য ‘মিঠাই’ কিনে নিয়ে যাওয়ার টাকা দিতেই সে আমার কাছে পেন ড্রাইভটা চাইল। সাথে বলল ‘কেতো টাকা... কেতো টাকা চান আপনি মিস্টার মিত্তির?’ আমি ফেলুদা নই, মোহনও মগনলাল নয় কাজেই সাথে থাকা সিডিটা ওর হাতে দিতেই একটা ভুবনভোলানো হাসি আমাদের উপহার দিল মোহন যার মূল্য টাকাতে মাপা যায় না।

    আমাদের সারথি মোহন


    আবার সেই চেনা হোটেলে ফিরে আসা। কাঠগোদাম থেকে কাল রাতে ধরব রানিখেত এক্সপ্রেস, তারপর দিল্লি হয়ে বাড়ি ফেরা। তার আগের সন্ধেয় সামান্য কেনাকাটা হল আর ঠিক হল কাল দিনের বেলায় চিড়িয়াখানা আর নয়না দেবীর মন্দির দেখে ট্রেন ধরতে বেরিয়ে পড়ব বিকেল পাঁচটা নাগাদ। চিড়িয়াখানা সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল দশটায় খোলে, শাটল সার্ভিসের গাড়ি চেপে পৌঁছতে হয় সেখানে এবং তারপর হন্টনই ভরসা। কুমায়ুনের নানা পাখি ছাড়াও আছে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, চিতা, সম্বর, পান্ডা, নানা প্রজাতির হরিণ এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। চিড়িয়াখানা থেকে পাখির চোখে ধরা পড়ে গোটা নৈনিতাল লেক, হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখলাম নানা প্রাণী তবে চোখ কাড়ল বাংলার বাঘ। কি রাজকীয় চলাফেরা! চিড়িয়াখানা পর্ব সাঙ্গ করে নয়না দেবীর দর্শন করে পাঁচটা নাগাদ রওনা দিলাম কাঠগোদামের দিকে। বিদায় কুমায়ুন।

    আমার কথা ফুরালো যদিও নটে গাছটি এখনও মুড়ায়নি। হোটেল ও মোহনের নম্বর দিতেই হবে। সেটা এই ফাঁকে দিয়ে ফেলা যাক।
    ১. নৈনিতাল - কেএমভিএন নয় বরং প্রাইভেট হোটেল অ্যাম্বাসাডর বা এভারেস্ট। বুরানশ স্কোয়াশ কিনতে পারেন ম্যাল রোডে শের-ই-পাঞ্জাব লাগোয়া হিল হানি স্কোয়াশেস থেকে ৮৮৯৯১ ৮৩১৮৯। মোমবাতি কেনার আদর্শ দোকান নারায়ণ ক্যান্ডেলস ৯৮৩৭০ ০২৪৯৭।
    ২. শীতলাখেত - কেএমভিএন
    ৩. কৌশানি - কেএমভিএন দরকার নেই। তার চেয়ে পারলে হোটেল প্রশান্ত-এ থাকুন। ০৫৯৬২-২৫৮০৩৭/ ৯৪১২৯ ৯৫৮৫০। লাগোয়া ‘রাঁধুনি’তে বাঙালি খাবার খান।
    ৪. চৌকরি - কেএমভিএন ছাড়া অন্য কিছু ভাববেন না।
    ৫. মুন্সিয়ারি - কেএমভিএন তবে দোতলার ঘর বা তেতলার। ‘ব্রহ্মকমল’-এ মাছ-ভাত পাবেন।
    ৬. বিনসর - কেএমভিএন কিন্তু খবরদার ২৫০০ বা ৩১০০ টাকার ঘরে নয়।
    ৭. মোহন সিং কুলেগী - ০৮০৫৭৩ ৭৩২৪৯ / ৮৯৫৪৪ ৩৭০০৭। আমরা ওর Wagon R গাড়িতে ঘুরেছি প্রতিদিন ১৮০০ টাকার চুক্তিতে। কেএমভিএন একই গাড়িতে দিন প্রতি ২২০০ টাকা নেয় এবং প্রচুর টালবাহানা করে। কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ডে কেএমভিএন-এর সমস্ত পর্যটক আবাসের অনলাইন বুকিং হয় ।

    শরৎচন্দ্র ‘শ্রীকান্ত’য় লিখেছিলেন “ভ্রমণ করা এক, তাহা প্রকাশ করা আর। যাহার পা-দুটা আছে, সেই ভ্রমণ করিতে পারে; কিন্তু হাত-দুটা থাকিলেই ত আর লেখা যায় না! সে যে ভারি শক্ত”। যাঁরা এতদিন আমার এই অর্থহীন বকবকানি শুনলেন এবং মন্তব্য করলেন তাঁদের সকলকে অজস্র ধন্যবাদ। ধন্যবাদ তাঁদেরকেও যাঁরা শুনলেন না, মন্তব্যও করলেন না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩০ নভেম্বর ২০১৭ | ৩০৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • robu | 213.132.214.85 (*) | ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:১৯60318
  • আমার বেড়ানো খুবই ভালো হয়েছে, ধন্যবাদ ঃ-)
    ঠিকই বলেছেন, থল এ লাঞ্চ সম্ভব ছিল না। আর আমাদের ড্রাইভার-সাহেব শুদ্ধ শাকাহারী হওয়ায়, উনি আলু পরোটার হোটেল যত ভালো চিনতেন, ক্যাফে (কৌসানি) বা মোমোর দোকান তত ভালো চিনতেন না। শুরুতেই ব্যাপারটা বুঝে নেওয়ায় আমরা সেইমত খেতাম।
    কিন্তু মুন্সিয়ারিতে আমরা খুঁজে খুঁজে দিব্যি কিছু ছোট ছোট শ্যাকে ১০০ টাকায় চার পিস্ বড়ো বড়ো মাটন (চিকেনের দামের অর্ধেক), এছাড়াও কুমায়ুনী খাবার, মোমো ইত্যাদি খেয়েছি।
    বির্থী ফলস এ উঠিনি, শীতকালে ফলস দেখার ইচ্ছে থাকে না। কেএমভিএন এ চা খেলাম। বির্থী-র শান্ত পরিবেশ বেশ ভাল লেগেছে। তার আগে রামগঙ্গায় অনেকটা সময় কাটিয়েছিলাম।
  • এবড়োখেবড়ো | 212.142.119.129 (*) | ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:০৪60319
  • রোবু, আপনার মুন্সিয়ারির ছবি দেখে স্রেফ হিংসে ছাড়া আর কিছু হল না। কী লেন্সে তোলা জানতে পারলে বেশ হত। পাংতে-র মিউজিয়াম আর বিনসরের অভিজ্ঞতা জানার ইচ্ছা রইল।

    @দ, আপনাকেও ধন্যবাদ কৃশানু মজুমদারের ৩৩টি ছবি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
  • de | 24.139.119.172 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৫:৫১60324
  • আহা - রোবু আর এবড়োখেবড়ো পুরো জমিয়ে দিলেন এই টইটা -
  • রোবু | 213.132.214.83 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৫:৫৮60325
  • অমরলতা পড়িনি।
    সেই ক্লাস ইলেভেনে বোধ হয় দেশে একটা গল্প পড়েছিলাম, এক অল্পবয়সী বিধবা মেয়ের, দাদার কাছে থাকে। গল্পটা তার ভাইপোর চোখ দিয়ে লেখা। মুরগির খামার ছিল, রানীক্ষেত ডিজিজে ধ্বংস হয়ে যায়, স্বামী আত্মহত্যা করে। অসাধারণ গল্প ছিল। কালের নিয়মে নাম বা লেখক মনে নেই।
    কুমায়ুন বললে সবার আগে সেটাই মনে আসে।
  • এবড়োখেবড়ো | 212.142.80.2 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:১৮60326
  • দ্যাখো কাণ্ড! আমিও তো ১৮-৫৫ আর ৫৫-২০০ নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম!! মেয়েকে পুরী ঘোরানো হয়ে গেছে, গুজরাটের ব্যাপারেও প্রায় জপিয়ে ফেলেছি। এবার ৭০-৩০০ কিনছিই, বুনো গাধা আর ফ্লেমিঙ্গো তোলার জন্য।

    @ দে, আপনার মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ।
  • গবু | 223.223.143.178 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৪০97588
  • বাহ্ এটা আগে দেখিনি তো! বেশ বেশ। 


    রোবুকে একটা প্রশ্ন - আপনি খালিয়া টপ যাবেন প্ল্যান করেছিলেন মুন্সিয়ারি থেকে - শেষ অবধি গেছিলেন কি? গেলে একদিনে ওঠা নামার অভিজ্ঞতা যদি বলেন তো ভালো লাগবে।  


    আর ছবিগুলো কি আগে ছিল - এখন আর দেখা যাচ্ছেনা?

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন