এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আজকের নাটক -পদ্মাবতী

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ নভেম্বর ২০১৭ | ৮২৩ বার পঠিত
  • পরের পর নাটক আসতেই থাকে আজকাল। গল্প সাধারণ, একটা জনগোষ্ঠীর গরিষ্ঠ অংশের অহংকে সুড়সুড়ি দেওয়া প্লট। তাদের বোঝান যে বাকিরা ও তাদের পূর্বপুরুষেরা লুঠতরাজ করে তোমাদের লাট করে দিয়েছিল, আজই সময় হয়েছে বদলা নিয়ে নাও, নয়ত কাল আবার ওরা তোমাদের শেষ করে দেবে। এই নাটক জনপ্রিয়, কারণ এতে বলা হচ্ছে তুমি ও তোমরা হলে গিয়ে ধোওয়া তুলসীপাতা, সব দোষ ওদের। দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধরে গত আড়াই বছর ধরে এই একমুখী প্রচার চালান খুব কঠিন কাজ নয় যখন মিডিয়া ব্যবসায়ের অধিকাংশ সেই নাট্যকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।

    কানহাইয়া কুমারদের “দেশদ্রোহী” তকমা দেওয়া থেকে যদি ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে গড়ে তিনমাসে একটা করে নাটক দেশবাসীকে দেখান শোনান গেলান ও ভোগান হয়েছে। এই নাটকের সর্বশেষ এপিসোডে এল পদ্মাবতী।

    এর মধ্যে যে নাটকগুলি ছিল, তা একবার স্মৃতি থেকে আউরে যাই - মনে করে দেখি আর কী। সিনেমা হলে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সঙ্গীত, গোমাংস সন্দেহে খুন, কাশ্মীরে ভোটদাতাকে জিপে বেঁধে ঘোরান, মহানাটক- নোটবন্দীর পর পর ঘটতে থাকা উপনাটক, তিন তালাক, আধার কার্ডের গল্প, মহানাটক জি এস টি, তাজমহলে শিবমন্দির। আসল প্লটটা এক। গল্পটা মাঝে মাঝে বদলে দিলে লোকের স্বাদবদল হয় আর কি। সবগুলো ছাই মনেও থাকে না।

    প্রতিটি নাটকের পিছনেই যথেষ্ট বদমায়েসি আছে। প্রতিটি নাটকই দেশের লোকের প্রভূত ক্ষতি করেছে, প্রাণে মেরেছে, ভাতে মেরেছে ও বিভাজন বাড়িয়েছে। বেশি ক্ষতি যে গুলো করেছে তাদের মহানাটক বলেছি। সেগুলোয় বিষয়বস্তু একটু শিক্ষার দাবী রাখে বলে সেইখানে সবচেয়ে বেশি ঘেঁটে ফেলেছে এরা।

    যাই হোক, আলোচ্য পদ্মাবতী নাটকের পটভূমি বুঝতে গেলে বাকি নাটকগুলো একটু ঝালান দরকার মনে হচ্ছিল। এখন এই নাটক কেন? এখন এই নাটকটিই বা কেন? এই দুই প্রশ্ন উঠলেই আগের নাটকগুলির সঙ্গে সঙ্গে পদ্মাবতী কেও বোঝা সহজ হয়।

    এখন কেন? এর উত্তরে দেখা যায় সদ্য হিমাচল প্রদেশে ভোট হয়ে গেল, এবার গুজরাট ভোট আসছে। দেশব্যাপী মিডিয়া ভোটের আগে থেকে এদের জিতিয়ে দিলেও এরা সে সব বিশ্বাস করে না। হাজার হোক ঢপবাজরা বড় একটা কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। তাছাড়া গুজরাটের আজে বাজে খবরও কিছু আসছে বাজারে। হার্দিক প্যাটেল, জিগনেশ রা কী সব বলে বেড়াচ্ছেন, তারা যে রাহুল গান্ধীকে যে তারা একেবারেই ধর্তব্যে আনতে চাইছেন না সেটুকু বলার জন্য এগার জন মুখ্যমন্ত্রীকে দরকার পড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা পরিযায়ী প্রধাণমন্ত্রী অবধি এই ক’দিন দেশেই থাকছেন, শুধু তাই নয়, সে রাজ্যে প্রতিদিন সভা করবেন বলে স্থির।

    এখন একটা নাটক দরকার ছিল। বেশ বড় মাপের। কিন্তু বিষয়বস্তু অর্থনীতি বা কর সংক্রান্ত হলে চলবে না - ও দুটোয় যে ওরা তেমন সড়গড় নয় তা ওরা জানে। কাজেই নাটকের বিষয় হল একটি সিনেমা। এমন একটি সিনেমা, যাতে এখনও অবধি লোকে জানে না ঠিক কি রয়েছে, কারণ সিনেমাটা এখনও মুক্তি পায় নি। অর্থাৎ কিনা “একলাখ আহমেদের ডিপ ফ্রিজে রাখা হলেও হতে পারে গরুর মাংস” - গোছের একটা বিষয়। সিনেমায় যদি তেমন কোনও “বিপজ্জনক” বিষয় না থাকে (যার সম্ভাবনাই বেশি) তাহলে তো ল্যাঠা চুকেই গেল। যদি থাকে তাহলে গা জোয়ারি কোর্ট কাছারি করে সে সিনেমার বারো বাজালেই দেশের ধর্ম রক্ষা পেল, পুরো উইন উইন প্লট।

    গল্পটা এই। এই সিনেমা বড়দিনের আগে পর্দায় আসবেও না। ততদিনে গুজরাট মন্ত্রীসভা শপথ নিয়ে নেবে। ততদিন, আমি আপনি আরও পাঁচজন পদ্মাবতী, রাজপুত, জহরব্রত, বারের ঠাকুরের উপোস, মেয়েরা কেন যে চাকরি করতে আসে, সব দোষ মুসলমানদের, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, এখন কত কাজ হচ্ছে চারিদিকে - একটু কষ্ট করলেই সব মুশকিল আসান, তো দশ কোটি কে যেন দেবে বলেছে কাকে মারলে - এইসব নানাবিধ চর্চায় মশগুল থাকব।

    এদিকে আমাদের পেট্রলের দর বাড়তেই থাকবে, জি এস টি লাগু হওয়া সত্ত্বেও কর আদায় তেমন বাড়েনি -শীর্ষক খবর এক কোনে পড়ে থাকবে, ছোট খাট ব্যবসায়ীরা মূলধন তুলে দিয়ে দালালী করবে, তাদের কাছে চাকরি করা লোকগুলো বেকার হয়ে কয়েকটা চোর ছ্যাঁচড় বাড়াবে, কিছু মরে টরে যাবে। চাষীরা আত্মহত্যা করবে। দেশে কয়েকটা শৌচালয়, সর্দার প্যাটেল ও শিবাজির স্ট্যাচু, একটা বুলেট ট্রেন ও একটা নির্দিষ্ট মন্দির বানালেই অশিক্ষা, দারিদ্র, অপুষ্টি দূর হয়ে যাবে - এই কথা হাড়ে মজ্জায় প্রতীত হয়ে যাবে, যদি না তার আগে সেখানে দুব্বো গজিয়ে যায়।

    আমরা নাটক দেখতে দেখতে নাটকের অংশ হয়ে ওদের ইচ্ছেমতো হাত পা ছুড়ব ছুড়তেই থাকব। নাটকের সমর্থন বা বিরোধীতা করব। কিন্তু ঠিকঠাক প্রশ্নগুলো করে উঠতেই পারব না বলে তার জবাব কেউ আমাদের দেবে না।

    আমরা মূল প্রশ্নে কিছুতেই ফিরতে পারব না। প্রচারমাধ্যম সে নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকবে। যারা মূল প্রশ্নগুলো করত তারা তিতিবিরক্ত হয়ে নাটকের বিরোধিতা করবে। নাটকের সমর্থন বা বিরোধিতাই চলবে, চলতেই থাকবে। অত:পর নতুন নাটক আমদানি হবে। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক খুন খারাবিও চলবে। এর জন্য পরের অনেকগুলো প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ নভেম্বর ২০১৭ | ৮২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ফরিদা | 37.56.171.59 (*) | ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৭59999
  • #
  • dc | 132.174.116.6 (*) | ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৭60000
  • বাঃ একদম আমার মনের মতো কথা। কমাস আগে কোন একটা টইতে ঠিক এটাই লিখেছিলাম, নাটকের পর নাটকের পর নাটক হয়েই চলেছে। এখন চলছে এই ঢপের পদ্মাবতী এপিসোড।

    ওদিকে একটা ছোট্ট খবর - একশো কোটি টাকা, সিবিআই কোর্ট আর অমিত শাহ স্যারঃ

    https://thewire.in/198843/sohrabuddin-encounter-judge-bribe-brijgopal-loya-amit-shah/
  • aranya | 172.118.16.5 (*) | ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৫60001
  • একদম মনের কথা লিখেছে ফরিদা

    ডিসগাস্টিং - এই নাটকের পর নাটক। এদিকে কত হাজার করে যেন চাষী প্রতি বছর মারা যায়
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৬60002
  • অতিবাস্তব কুনাট্যরঙ্গ। সত্যিই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন