এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্লুতস্বর

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ | ৫৭৩ বার পঠিত
  • হাঁকাটু
    হ্যাঁ, এটা একটা ইতিহাস বই? রাজ্যের ভুলভাল কথা সব। এক একটা লোক যা নয় তাই লিখে রেখেছে। সব ব্যাটার মাথা খারাপ – আচ্ছা যাদের মাথার গোলমাল তাদেরই কি লেখালেখির কাজ দেওয়া হয়? উফফ… ইচ্ছে করছে সব কটা বই নিয়ে গিয়ে বাইরে ফেলে আসি, যা গরম বাইরে এমনি কিছুক্ষণ থাকলে পুড়ে ঝামা হয়ে যাবে। আর ওই বিতিকিচ্ছিরি ছবিগুলো – ওগুলো নাকি পোশাক। ওই পোশাকে বাইরে বেরোলেই সঙ্গে সঙ্গে ঘামাচি হয়ে মরে যেতে হবে। পারেও বটে এরা।
    এইসব শিখতে স্কুলে যেতে হয়। ক্লাসে এমন একটা ব্যাঙের বই, বাইরেও আবার ফুটকড়াইয়ের মতো গরম, এখনও তিরিশ ঘন্টা পরে সন্ধে আসবে। ততক্ষণ...। বিরক্তিকর!
    এর আগের ক্লাসের বইটারও কোনোও মাথামুন্ডু ছিল না, তাতে বলছে দেশের একমাত্র যানবাহন নাকি জাহাজ। স্কুলের বাচ্চারা নাকি নিজের নিজের ডিঙি নৌকা করে স্কুল থেকে বাড়ি যাতায়াত করে।
    ওয়াটারপোলো নাকি আমাদের দেশের জাতীয় খেলা – বোঝো ঠ্যালা।

    আমি একটু সরল সাদাসিধে লোক। জরিং কে এসব বলতে হবে। ওর এসব ব্যাপারে বুদ্ধি খোলে ভালো। আর ক’দিন যাক, দেখি বলব ওকে – এটা প্লুতস্বরে বলা উচিৎ।
    ........................
    ইলিপি
    দেখো কাণ্ড, আমি তো হেসে বাঁচি না – এটা ভূগোল বই? কী সব উল্টোপাল্টা লেখা রে বাবা। এ কী ছাপার ভুল নাকি অন্য কিছু। নাকি অন্য দেশের বই নিলাম? না তো – এই তো লেখা আছে ভিন্ডিয়ার ভূগোল – হ্যাঁ , এই তো আছে আমাদের রাজ্যের কথা – ট্যাঙ্গো। এখানে নাকি অঢেল কমলালেবুর ফলন – সেটা আবার কী বস্তু রে বাবা? আমি তো জন্ম ইস্তক জানি ফল মানেই আম, মাঝে মধ্যে জাম কাঁঠাল আর লিচু। আমাদের রাজ্য আমরাজ্য। আমাদের নাম আমজনতা। আমি আম খাই, আমরা সবাই আমই খাই। আমাদের রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে, শুধু আমগাছ। আর এই বইতে পাতায় পাতায় লেখা ট্যাঙ্গো রাজ্যের কমলা নাকি বিখ্যাত – এমনকি দেশের পতাকার মাথায় অবধি সেই কমলা রঙ – হাঁকাটু অবশ্য বলছে ওটা নাকি গেরুয়া – কে জানে কোত্থেকে শোনে ও ওসব।

    শুধু ফলে গণ্ডগোল নেই – কোত্থেকে জানি এক ধরণের রঙিন ফুলের ছবি দেওয়া – তার আবার কত রকমের রঙ। তার নাম নাকি গোলাপ। আমার তো পড়ে মনে হচ্ছে এর আদ্যন্ত প্রলাপ! এটা কি পাঠক্রম না রূপকথার গপ্প ফেঁদেছে। এদিকে সাদা ছাড়া ফুল কেউ কখনো দেখেছে কেউ? বলুক একবার সামনে এসে। বেভুল একবার বসে আঁকো তে ভুল করে ফুলে হলদে রঙ করে দিয়েছে বলে আমরা কি হাসাহাসিই না করলাম – আর দেখো কাণ্ড – ওর দাদু এসে কী আশকারাটাই না দিল – তাদের ছোটোবেলায় নাকি ওই হলদে ফুল নাকি খুব হত – কী যেন একটা নাম বলল – হ্যাঁ, মনে পড়েছে, গাঁদা – পুরো বোকা হাঁদা। নিজের নাতিকে লাই দিয়ে মাথায় তুলেছে বুঝবে ঠেলা। ভালোই হয়েছে আঁকার স্যর এসব ইয়ার্কি মোটেই বরদাস্ত করেন নি। বেভুলের বাকি সব কিছু ঠিকই ছিল – তাও সে কিছু হয় নি। আর দেখ – তার দাদু নাকি তাকে আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে গেল। আমার একটা অমন দাদু ভাগ্যিস নেই। থাকলে আমারও ল্যাজ গজাত নির্ঘাৎ।
    ...............

    জরিং
    একটা অদ্ভুত কথা শুনলাম আজ – এ কী সম্ভব? বানিয়ে বলল এসব নাকি ছেলেটা? তা কি করে হবে! সে তো আমাদের বয়সীই একটা ছেলে এমনিতে অঙ্ক টঙ্কও তো জানে দেখলাম আমাদের মতোই। ফুটবলেও ওই চলনসই, বরং একটুতেই হাঁফিয়ে পড়ে দেখলাম। সে কিন্তু তার একটা অজুহাত দিয়ে যাচ্ছিল – এখানে এত গরমে তার নাকি দমে ঘাটতি হচ্ছে। ওরা নাকি গরমটা একটু কমলে ফুটবল খেলে – আরও বলল বৃষ্টিতে কাদা মাঠে খেলতে নাকি দারুণ লাগে।
    সেটা বড় ব্যাপার নয়। বৃষ্টি কি সেটা আমিও জানি। এমনি এমনি তো আর ফার্স্ট হই না প্রতিবার। কিন্তু আমার বয়সী একজন নিয়মিত বৃষ্টিতে ফুটবল খেলে শুনে একটু অবাক লাগছিল। কিন্তু তারপরেই ও ওরকম লাগামছাড়া বকতে শুরু করল।

    পৃথিবীতে নাকি কয়েক মাসের মধ্যেই গরম কমে যায়, বর্ষাকাল আসে, তারপর কিছুদিন টালবাহানা করে করে ঝুপ করে শীতকাল। ইয়ার্কি পেয়েছে নাকি? মামার বাড়ি? ওরা নাকি দিনের আলো ফুটলে ঘুম থেকে ওঠে – তারপর স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া সারতেই বিকেল। তারপর সন্ধে! তারপর পড়তে বসে একটু, ট্যাব ফ্যাব দেখে আড্ডা মেরে খেয়ে যখন ঘুমোয় তখন রাত। মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় একটা আস্ত সকাল দুপুর বিকেল সন্ধে রাত?

    না, এতেও আমি খুব অবাক হইনি। ডেটাপ্যাকে ভরে আমরা এখন সহজেই এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাতায়াত করি বলে একটু আধটু পাগলামি আমরা সবাই অল্পবিস্তর করি বটে। কেউ কেউ তো জেনে বুঝেই পাগলামো করে। ইলিপি সেবারে একটা অদ্ভুত করে কথা বলতে শুরু করেছিল একটা ভ্যাকেশান থেকে ফিরে – তাকে নাকি গান গাওয়া বলে। সব সময় ওই অদ্ভুত করে কিছু শব্দ বলছিল – শুনতে খুব একটা খারাপ লাগছিল না। ও নাকি ওর দাদুর বাক্স থেকে কী সব হাবিজাবি পেয়ে কী একটা শুনেছিল – তাকে নাকি গান বলে।

    কিন্তু এই পৃথিবীর ছেলেটা যা বলল তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম – ওরা সবাই নাকি আলাদা আলাদা করে গরমকাল, শীতকাল, বর্ষাকাল বসন্তকাল দেখতে পায় তাই না – সেটা নাকি নিয়মিত দেখতেও পায় – আর এক এক জনের নাকি বারো তেরটা করে জন্মদিন হয়ে গেছে এর মধ্যে!
    ভাবছি! গাঁজাখুরির একটা সীমা থাকা উচিৎ। পৃথিবী থেকে এসেছে বলে যা নয় তাই বলবে। আমি কালকেই স্কুল অ্যাসেমব্লিতে এটা বলব। তাতে যদি কাজ না হয় তো মেল করব সোজা আমাদের প্লুটো গ্রহের সদর দফতর প্লুতস্বরে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ | ৫৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ফরিদা | 176.62.53.94 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৭:৪৭58683
  • গপ্প লিখে ফেল্লাম :)
  • de | 176.62.53.94 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২০58686
  • ভালোই হয়েচে ঃ)
  • সিকি | 176.62.53.94 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০৬58687
  • শুনছি নাকি খিদেও পায়, সারাদিন না খেলে
    চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটা তেমন পেলে!

    :)
  • | 176.62.53.94 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:০৮58685
  • পড়েও ফেললাম। দিব্বি হয়েছে।
  • | 176.62.53.94 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:০৮58684
  • পড়েও ফেললাম। দিব্বি হয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন