এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • গুমনামিজোচ্চরফেরেব্বাজ ৬

    Aniket Chattopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ১৯৯১ বার পঠিত
  • #গুমনামিজোচ্চরফেরেব্বাজ ৬

    গুমনামি = নেতাজী = মহাকাল = গুমনামি।

    আমি বলছিনা একথা বলেছেন অনুজ ধর এবং তাঁর বই এ একে একে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে উনিই নেতাজী । তর্কের খাতিরে আমি মেনে নিয়েছি যে উনিই নেতাজী। তারপর গুমনামি বাবা যা বলেছেন (অনুজ ধর এর বই তেই মাত্র যা আছে) তা নিয়ে আলোচনা করছি, সঙ্গে কোন পাতায় তা লেখা আছে সেটাও উল্লেখ করছি। বই এর শেষ অধ্যায় এ তিনি একটা escape route রেখেছেন এই বলে যে উনি Post Trauma Stress Disorder এর রোগি ছিলেন, তাই মাঝে মধ্যে hallucinate (ভুলভাল দেখা বা শোনা) করতেন তাই মাঝে মধ্যে ওরকম বলতেন। মানে মোদ্দা কথা হল নেতাজী শারিরীক ও মানসিক কষ্টের ভেতর দিয়ে গেছেন, এমন কি তাঁর স্ত্রী এবং নেতাজীর আড়াই বছরের কন্যা অনিতা শেঙ্কল নেতাজীর ওপর অত্যাচার করত। ভাবা যায় ? আড়াই বছরের কন্যাও অত্যাচার করত!! মানসিক ভারসাম্য কে হারিয়েছে ভাবুন, নেতাজী নাকি অনুজ ধর? অবশ্য এ আবিস্কার হালফিলের, এক পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনুজ ধর মশাই এ কথা বলেছেন !! আরও বলেছেন যে ১৯৪৭ এ দেশ বিভাজনের সময় নেতাজী হিন্দু মহিলাদের ওপর অত্যাচারের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, এবং এই কান্নায় ভেঙে পড়ার খবর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এদিকে উনি আগেই জানিয়েছেন যে ১৯৪৭ এ নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়ায় চীনের বিরুদ্ধে সাইবেরিয়ায় বিরাট বিরাট যন্ত্রপাতি নিয়ে আজাদ হিন্দ সরকারের লোকজন নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে এক বিরাট গোপন প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত। তো ওই রাশিয়া থেকে কোন কোন প্রত্যক্ষদর্শীরা এই খবর জানালেন? কী ভাবে জানালেন? কোন ভাষায় জানালেন? মিথ্যে এক এমন প্রতিভা যা ফুটে বের হবেই, এটাই মিথ্যের চলন। আমরা এই Post Trauma Stress Disorder নিয়ে পরে কথা বলবো, প্রমাণ করবো যে এটা selective disorder, মানে গোদা বাংলায় সেয়ানা পাগলামি। ঐ পথ ধরে পালাতে দেবনা, অন্য কোনও পথ খুঁজুন ধর মশাই।

    এবার আসি গুমনামি বাবায়। ১৯৬২ র চীন ভারত যুদ্ধে ভারতবর্ষ কে চীনের আগ্রাসন থেকে তো বাঁচালেন, পরিস্কার জানিয়ে দিলেন আগ্রাসন চলবেনা। চীন তো এই পালায় কি সেই পালায় ১৯ নভেম্বর সিজ ফায়ার, ২১ নভেম্বর থেকেই "জাই জিয়ান" গুড বাই বলে ঘরে ফেরা শুরু করলো। এদিকে অন্য রণাঙ্গন ডাকছে গুমনামি কে। এবার ভিয়েতনাম। যিনি ক্রুশ্চেভ এর সঙ্গে অপেরা দেখেন, মাও কে চিকিৎসার পদ্ধতি বলে দেন তিনি হো চি মিন এর কাছে যাবেন না? তাই কি হয়? তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম। আর কদিন পরেই অবশ্য তিনি বাঙলাদেশের মুক্তির জন্য মুক্তিবাহিনী গড়তে বলবেন পবিত্র মোহন রায় কে এবং পই পই করে বলে দেবেন যে সেই বাহিনী তে যেন কোনও মুসলমান আর কমিউনিস্ট না থাকে। গুমনামি যা বলেছেন তার ছত্রে ছত্রে মুসলমান আর কমিউনিস্ট বিরোধীতা আছে, তা নিয়ে পরে আলোচনা করব কিন্তু এখানে উল্লেখ করলাম এই জন্য যে কমিউনিস্ট বিরোধী হলে হবে কি তিনি দাঁড়ালেন হো চি মিন এর পাশে, এবং তিনিই তো, গিয়াপ নয়, দিন দিয়েম নয়, নগুয়েন কাও কি বা নগুয়েন ভ্যান থু এর মত যুদ্ধ বিশারদ যারা হো চি মিন এর পাশে ছিলেন তারা নয়, গুমনামি বাবাই হো চি মিন কে বোঝালেন আফিম ছড়িয়ে দিন, ইয়াঙ্কি সেনারা আফিম খেয়ে মত্ত থাকবে আর আমরা পটাপট তাদের মারব। শনে হো চি মিন তাই করলেন, এবং হাতে নাতে ফল। আমেরিকা হেরে গ্যালো। ভিয়েতনামের জয়ের পেছনেও গুমনামি। (পাতা ৪৫২)
    এই কোরিয়া যুদ্ধে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিনিদের বিরুদ্ধে, আবার তিব্বতে মার্কিনিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গেরিলা যুদ্ধ শেখানো, বলি হচ্ছে টা কী? গুল মারার ও তো একটা লিমিট থাকা দরকার।
    সেখান থেকে সোজা ...... সোজা কোথায় বলতে পারবো না কারণ ওদিকে বাঙলাদেশ উত্তাল এদিকে চীন সমস্যায়, চীনের সমস্যা হল তারা রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ পাচ্ছেন না। সত্যি কথাটা হল রাশিয়া পাশে দাঁড়ালেও আমেরিকা তখন চীন নিয়ে চিন্তিত। ছাত্র যুব আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বার্মা, ভারত শ্রীলঙ্কায়, পেছনে চীনের মদত। আমেরিকা ভেটো দিয়ে আটকাচ্ছিল। তো তুং ওরফে তুঙ্গভদ্রা ওরফে মাও এর এই বিপদে পাশে দাঁড়ালেন গুমনামি। গুমনামির ধারণা হল ওরা মানে মাও এর দলবল ঠিক করে দরখাস্ত টা লিখতে পারছেনা, তো উনি বললেন তোমরা আগে লেখ, দেখি কতটা পারো, তারপর আমি লিখে দেবো। তা সিকিউরিটি কাউন্সিলের দরখাস্ত তো রাস্তায় বসে লেখা হবে না, তার জন্য নিশ্চই থাকবে গ্রেট হল অফ পিপল অফ চায়না। মানে বলছি সম্রাট আকবর ঘোষণা করলেন, তা সেটা তো আর বৈঠকখানায় বসে করবেন না, দিল্লির দরবার থেকেই করবেন, তেমনিই নিশ্চই এই দরখাস্ত লেখার বৈঠক বসলো গ্রেট হল এ, তিয়েনান মেন স্কোয়ারের বাম দিকে। প্রাথমিক দরখাস্ত এনে দেখানো হল গুমনামি বাবা কে, বাবা দরখাস্ত টা নিয়ে ঠিকঠাক করে দিলেন। ব্যস, চীন পেয়ে গ্যালো নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পদ। তারপর সে কি হুল্লোড়। অভিনন্দন করতালি, মদের ফোয়ারা ছুটল অবশ্য গুমনামি বাবা জানিয়েছেন তিনি একটু শরবত আর সামান্য স্ন্যাক্স খেয়েছিলেন। (পাতা ৪০১) যদ্যপি গুমনামি বাবা মারা যাওয়ার পর ওনার ঘর থেকে কিঞ্চিৎ গাঁজা এবং ২ বোতল ব্রান্ডি পাওয়া গেছে, জানা নেই সেগুলো তিনি খেতেন না অন্য কেউ এলে দিতেন। (পাতা ৪৬৪)

    কোন নিম্ন স্তরের ধাপ্পাবাজ ফেরেব্বাজ হলে দরখাস্ত লিখে U N Security council এর সদস্য পদ পাওয়া যেতে পারে বলে বলা যায় !!
    এ কি গড়াগাছা সংসদের সদস্য পদ? না দুর্গাপুজো কমিটি? এই মানুষটাকে নেতাজী বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

    সঙ্গে দিলাম গত বছরে আমার বেইজিং বেড়ানোর একটা ভিডিও। তিয়ে নান মেন্স স্কোয়ারে তোলা, যেখানে ক্যামেরা থামছে ওটাই দরখাস্ত লেখার জায়গা মানে গ্রেট হল অফ পিপল অফ চায়না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৬ অক্টোবর ২০১৯ | ১৯৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন