এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নারীদের শ্রম-জীবন

    বকলমে লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ মার্চ ২০১৯ | ৮২৫ বার পঠিত
  • লোপামুদ্রা সরকার

    ভদ্রলোক ব্যস্ত মানুষ। উচ্চপদস্থ। তাঁকে প্ল্যান্টে নিয়ে যেতে কোয়ার্টারের সামনে গাড়ি আসে। তিনি সকালে উঠে, চা খেয়ে, কিঞ্চিৎ স্বাস্থ্যচর্চা করে, ব্রেকফাস্ট সেরে, পোশাক পরিচ্ছদ পরে তৈরি হয়ে প্ল্যান্টের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। এই সময় তাঁর হাতে থাকে খবরের কাগজ। হেডলাইনে চোখ বোলাতে বোলাতে তিনি গিন্নির দিকে তাকিয়ে বলেন, “রুমাল টা নিতে ভুলে গেছি , দাও তো”। কণ্ঠস্বরের আদেশের ঝাঁজটি হজম করে গৃহবধূ গিন্নি দোতলায় দৌড়ান। রুমাল নিয়ে নিচে নামতে নামতে পিক-আপ গাড়ি এসে পড়ে। কোনরকমে খবরের কাগজটি সোফার উপর নামিয়ে, গিন্নির হাত থেকে রুমালটি নিয়ে ভদ্রলোক গাড়িতে উঠে পড়েন। গিন্নি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর দিকে ফিরে ধন্যবাদ-জ্ঞাপক বা বিদায়ী হাসিটুকু উপহার দিয়ে যাবার কথা ভদ্রলোকের মনে থাকে না। গাড়ি বেরিয়ে গেলে ঘরের ভিতর ফ্যানের হাওয়ায় উড়তে থাকা খবরের কাগজের পৃষ্ঠাগুলি জড়ো করে যত্নে ভাঁজ করে সেন্টার টেবিলের উপর রাখেন গিন্নি। হেড লাইনে চোখ বোলানোর প্রবল তাগিদ সামলে রান্নাঘরে দৌড়ান। ছোটো বাচ্চাটির ততক্ষণে ঘুম ভেঙে গেছে। মায়ের আর সময় কই। এর পর সংসারের সাত-সতেরো কাজে জুটে যেতে যেতে দুপুর গড়িয়ে আসবে। লাঞ্চ-আওয়ারে ভদ্রলোক বাড়ি ফিরবেন। খাওয়া সেরে, বিশ্রাম নিয়ে আবার প্ল্যান্টে বেরোবেন। গাড়ির জন্য খবরের কাগজ হাতে অপেক্ষা করবেন এবং একইরকম ভাবে সেটি সোফায় নামিয়ে দ্রুত-পায়ে কাজে বেরিয়ে যাবেন। গিন্নি আবার ভাঁজ করে সাজিয়ে রেখে শিশুটিকে ঘুম পাড়াবেন। সে একটু ঘুমোলেই তাঁর সুযোগ জুটবে একটু বিশ্রামের বা পড়ে থাকা গৃহকাজটুকু সেরে নেবার। এইভাবে সন্ধ্যে বা রাতে ভদ্রলোক যতবার খবরের কাগজ খুলে দেশ ও দশের খবরে চোখ রাখবেন কখনোই তাঁর খবরের কাগজটি ভাঁজ করে রাখার কথা মনে থাকবে না। পরের দিন সকালে বিছানা গোছানোর সময়, বিছানায় ছড়িয়ে থাকা বাসি খবরের কাগজটি শেষবার ভাঁজ করতে করতে গৃহিণীর মনে হবে, “ইস! কালকের কাগজটা পড়াই হলো না !” তিনি যত্ন করে জমিয়ে রাখবেন, সুযোগমত পড়ে নেবেন এই আশায়। গৃহিণী পড়ুয়া মানুষ। তাঁরও দেশের , দশের খবর জানতে ইচ্ছে করে। দিনের পর দিন জমতে জমতে না-পড়া বাসী খবরের কাগজের স্তুপ তৈরি হয় বিছানার পাশে। গৃহিণীর সময় হয় না, পড়বার। তবুও কাগজ বিক্রি করার কথা ভাবলেই তাঁর মনে হয়, আর কদিন থাক। এভাবেই জমতে থাকে “পড়বো” ভেবে আলাদা করে রাখা রবিবাসরীয়, পাক্ষিক পত্রিকা। জমতে জমতে পাহাড়-প্রমাণ হয়ে উঠলে গিন্নিকে নিয়ে উপহাস শুরু হয়, “জঞ্জাল জমানোর স্বভাব তোমার”। গোটা জীবনটাই যাঁর জঞ্জাল হয়ে যায়, জঞ্জালের প্রতি কিছু অতিরিক্ত মমত্ব তাঁর জন্মাতেই পারে। সেই জঞ্জাল বিক্রি হয়ে যাওয়ার সময় তার প্রাণ হায় হায় করে উঠতেই পারে…. “আহা রে! কত ভালো ভালো সম্পাদকীয় কলাম অপঠিত রয়ে গেলো।” দিনে চার-পাঁচবার খবরের কাগজ ভাঁজ করার মত অজস্র অনাবশ্যক ও অকিঞ্চিৎকর কাজ তাঁকে করতে না হলে তিনি ওইটুকু সময় হয়তো নিজের জন্য, নিজের ভালো লাগার জন্য, নিজের ইচ্ছের খাতিরে ব্যয় করতে পারতেন।
    এ গল্প কিন্তু “গল্প হলেও সত্যি”। এ গল্প আসলে “ঘর ঘর কি কাহানি”। শুধু বাড়ির অন্য মানুষগুলো যদি নিজের কাজটুকু নিজে করতেন, যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে গৃহকর্তা নিজের বিছানাটি নিজেই গুছিয়ে নিতেন, ছেলেমেয়েরা পড়ার টেবিল, বইয়ের তাক নিজেরা গুছিয়ে রাখতো, সবাই জায়গার জিনিষ মনে করে জায়গায় রাখতো, যদি প্রত্যেকের প্রতিটা হারানো জিনিষ গৃহিনীকেই খুঁজে না দিতে হতো, তাহলেই অনেক অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনেক সময়ের অপচয়ের হাত থেকে তাঁর মুক্তি হতো। তিনি নিজের জন্য একটু সময় পেতেন। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তাঁর মনে হতো না তাঁর জীবন আসলে পণ্ডশ্রমের সমষ্টি… নষ্ট সময়ের ইতিকথা।
    পরিবারের রসনা-পরিতৃপ্ত করতে গৃহবধূদের দিনের অর্ধেক সময় চলে যায় রান্নাঘরে। শুক্তো, কচুর শাক, কচুর লতি, পিঠে পায়েসের চক্করে পড়ে হাঁড়ি-কুড়ির বাইরের যে একটা জগৎ আছে সেটা ভুলেই যেতে বসেন তাঁরা। আজকাল এই সব ট্রাডিশনাল খাবার মেনু থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে বলে যাঁরা “হায় হায়” করেন তাঁরা আসলে আমাদের দিদিমা-ঠাকুমাদের রান্নাঘরবন্দী জীবনের হা-হুতাশটুকু শোনার জন্য কান পাতেন না। দু ঘন্টার পরিশ্রমে যা রান্না হয়, দু মিনিটে তা খাওয়া হয়ে যায়। দু ঘন্টার পরিশ্রমের দাম একটু প্রশংসা বই কিছু নয়। এই রন্ধন পটুত্বও কিন্তু রোজগারের রাস্তা হতে পারতো… কিন্তু তেমন প্রস্তাবে কর্তাটি রাজি হবেন কি? ঘরের বউ রোজগারে নামলে অনেক অসুবিধে। তাহলে বাড়ির খুঁটিনাটি অনেক কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকবে, বাইরের কাজ সেরে বাড়ি ফিরে পরিপাটি গৃহস্থালিটি পাওয়া যাবে না, প্রতিটি প্রয়োজনের মুহূর্তে সদা-প্রস্তুত সাহায্যকারী হাতটি জুটবে না, সর্বোপরি পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার পরিসরটি সংকুচিত হয়ে যাবে। এ কারণেই পরিকাঠামো উন্নয়নের তালিকায় মেয়েদের বাইরে কাজ করতে বেরোনোর জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টাটা সবচেয়ে পিছিয়ে রাখা হয়। উপযুক্ত সংখ্যক ক্রেস, কর্মস্থলে বাচ্চাকে রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা কোনোটাই তৈরি হয়ে ওঠে না। অথচ গৃহিণীদের মাইনের কথা উঠলেই বিতর্ক শুরু হয়। গৃহশ্রমের মূল্যায়ন নিয়ে যাঁরা উপহাস করেন বা যাঁরা ভাবেন গৃহকাজের মূল্যায়ন করলে গৃহিণীদের স্নেহ, ভালোবাসা, ত্যাগ, তিতিক্ষার অবমূল্যায়ন তথা অবমাননা করা হয়, তাঁরা আসলে গৃহিণীদের প্রচন্ড কায়িক শ্রমটি বা সংসারের জন্য ব্যয়িত এবং অপচয়িত সময়টি কে দেখতেই চান না। সারাদিনের হাজারো কাজ সামলে, হাজারো ফাই-ফরমাশ খেটে, হাজারো অনাবশ্যক হয়রানির পরও দিনের শেষে তাঁকে শুনতে হয়, “সারাদিন কী করো?” যে শ্রম ঘরে টাকা আনে না, যে শ্রম দিয়ে ভোগের উপকরণ কেনা যায় না, সেই শ্রমের মূল্য কি? পরিবারের সকলের ভোগ-সুখের জন্য যিনি হাজার দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তার শ্রম নেহাতই আনপ্রোডাক্টিভ। স্বয়ং মার্ক্স যে শ্রম কে পুঁজির মর্যাদা দেন নি, আকণ্ঠ পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার মদ গিলে থাকা পরিবারতন্ত্রের গৃহকর্তারা তার মূল্য দেবেন আশা করাই ভুল। মল্লিকা সেনগুপ্ত কি আর সাধে প্রশ্ন করেন, স্বয়ং মার্ক্সকেই?

    আপনি বলুন , মার্ক্স / মল্লিকা সেনগুপ্ত

    ছড়া যে বানিয়েছিল, কাঁথা বুনেছিলো
    দ্রাবিড় যে মেয়ে এসে গম বোনা শুরু করেছিল
    আর্যপুরুষের ক্ষেতে, যে লালন করেছিল শিশু
    সে যদি শ্রমিক নয়, শ্রম কাকে বলে?

    আপনি বলুন, মার্ক্স, কে শ্রমিক, কে শ্রমিক নয়
    নতুন যন্ত্রের যারা মাস মাইনের কারিগর
    শুধু তারা শ্রম করে!
    শিল্পযুগ যাকে বস্তি উপহার দিলো
    সেই শ্রমিক গৃহিণী
    প্রতিদিন জল তোলে, ঘর মোছে, খাবার বানায়
    হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে রাত হলে
    ছেলে কে পিট্টি দিয়ে বসে বসে কাঁদে
    সেও কি শ্রমিক নয়!
    আপনি বলুন মার্ক্স, শ্রম কাকে বলে!

    গৃহশ্রমে মজুরি হয় না বলে মেয়েগুলি শুধু
    ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে
    আর কমরেড শুধু যার হাতে কাস্তে হাতুড়ি!
    আপনাকে মানায় না এই অবিচার

    কখনো বিপ্লব হলে
    পৃথিবীতে স্বর্গরাজ্য হবে
    শ্রেণীহীন রাষ্ট্রহীন আলোপৃথিবীর সেই দেশে
    আপনি বলুন মার্ক্স, মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে?

    গৃহিণীর শ্রমের বা সময়ের দাম নেই বলেই যে কোনো মুহূর্তে, সেই শ্রমকে পণ্ডশ্রমে পরিণত করা যায়… রাগের মাথায় রান্না করা খাবার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায়, “খাবার সময় নেই” বলে সাজানো থালা ফেলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখা ঘর মুহূর্তে এলোমেলো করে ফেলা যায়। আরো বহুকিছুই করা যায় যাতে গৃহিণীর নিজেকে উজাড় করে দেওয়া শ্রম নেহাতই অপচয় মনে হতে পারে।
    পড়াশুনায় যথেষ্ট মন দিচ্ছি না বলে, গল্প, আড্ডা, ছেলেবন্ধু, প্রেম ইত্যাদি প্রচুর ডাইভার্সন হচ্ছে বলে বাবা একদিন দুম করে গান শেখা বন্ধ করে দিলেন। সিক্সথ ইয়ারের শেষ পরীক্ষার প্রাকটিক্যালটা দিতেই দিলেন না। শত অনুরোধেও না। অথচ আমাকে গান শেখানোর পিছনে বাবার কন্ট্রিবিউশন নামমাত্র। মেয়েকে গান শেখানোর ইচ্ছেটা ছিল মায়েরই। যখন আমার সা রে গা মা তেও সুর মিলতো না, আমার গান না জানা মা ই সুরের ভুল ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করতেন। গানের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, নিয়ে আসা, গানের পরীক্ষার দিন আদা কুচিয়ে দেওয়া, গলা ভাঙলে এরিথ্রোমাইসিন এর জোগান দেওয়া … এ সবই মায়ের দায় ছিলো। গান শেখা বন্ধ করার ফরমান জারি করার সময় আমার প্রগতিশীল বাবার মনেও পড়ে নি, শুধু আমার নয়, আমার মায়েরও দীর্ঘ শ্রম নিষ্ফল করে দিলেন তিনি।
    একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখি যখন মেয়েকে নাচ ছাড়ানো হয়। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার অজস্র রোদে পোড়া সকাল, ঘন্টার পর ঘন্টা নাচের ক্লাসে বসে স্টেপ মুখস্থ করা, প্রতিদিন সন্ধ্যায় মুখে মুখে বোল বলে মেয়েকে প্র্যাক্টিস করানো…. ছাই হলো সব হুতাশে, হুতাশে।
    লেখা-পড়া শিখিয়ে স্বনির্ভর হবার আগেই যে মেয়েকে বাবা-মা বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিলেন, তারা কিন্তু ভাবলেনই না, ২৪ – ২৫ বছরের এই স্কুল কলেজের এই দৌড় আদতে নিষ্ফল হতে চলেছে । শিক্ষাকে রোজগারে পরিণত না করতে পারলে তার কোনো মূল্যই জোটে না। হোম-মেকিং কে গ্লোরিফাই করতে গিয়ে গৃহিণীদের মজুরির দাবীকে অস্বীকার করলে আসলে তাদের বঞ্চিতই করা হয়। মূল্য ধার্য না হলে যে কোনো শ্রমই আসলে ওই সেবা-দাসত্ব… গৃহশ্রম ও তাই।
    এ শ্রম মূল্যহীন, এ শ্রম নিষ্ফলা, এ শ্রম আদতে আনপ্রোডাক্টিভ। এ শ্রমে শক্তিক্ষয় নেই, স্বাস্থ্যক্ষয় নেই। মায়ের কাছ থেকে, গৃহিণীর কাছ থেকে এই শ্রম পরিবারের প্রাপ্তি নয়, প্রাপ্য। বিনা মূল্যে এই সব অজস্র রকমের পরিষেবা দিতে দিতে তাঁর যে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, তিনি যে ক্রমাগত ক্লান্ত হচ্ছেন, কখনো কখনো অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছেন, খিটখিটে হয়ে যাচ্ছেন…. সে সব দেখার সময়, ইচ্ছে কারুর নেই। বাবার দীর্ঘ অসুস্থতা নিয়ে আমরা এতই উদ্ব্যস্ত ছিলাম, যে খেয়ালই করিনি কবে, কখন মা সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন, কবে তাঁর বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকুও শেষ হয়ে গেলো, কবে তিনি নিজের শরীরখারাপের খবর আমাদের দেওয়া বন্ধ করলেন। তিনি হঠাৎ মারা যাবার পর মনে হলো আমরা তাঁর দিকে তাকাতে ভুলেছিলাম।
    মায়েদের উপর এতো দেবিত্ব আরোপিত হয় যে আমরা ভুলেই থাকি যে তাঁরও সাধারণ মানবী-সুলভ চাহিদা আছে। তাঁরও ক্ষিদে পায়, ঘুম পায়, প্রেম পায়, যৌনতৃষ্ণা জাগে… তাঁরও ক্লান্তি আসে, তাঁরও বিশ্রাম প্রয়োজন, কোয়ালিটি টাইম কাটানোর অবসর প্রয়োজন। তাঁরও কখনো কখনো হাল্লার রাজার মত “ছুটি, ছুটি” বলে ছুট দিতে ইচ্ছে করে। তাঁরও স্বপ্ন আছে, ইচ্ছে-পূরণের তাড়না আছে। শুধু মাতৃত্বই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। মল্লিকা সেনগুপ্ত তাঁর স্ত্রীলিঙ্গ-নির্মাণ বইতে লিখছেন, মাতৃত্ব পরম আকাঙ্খারও বটে আবার, বড় পিছু টানও বটে ।
    “ভাইয়ের টুইশন কামাই করিয়ে পুরুলিয়া যাবে?” আমার আধুনিকা কন্যা চোখ গোল গোল করে, “আর তো মাত্র একটা বছর মা, ভাই ক্লাস টেন পাস করে গেলেই তো তুমি ফ্রী হয়ে যাবে, এ টুকু অপেক্ষা করতে পারছো না ?” আমিও অবাক চোখে ওর দিকে তাকাই। পিতৃতন্ত্রের বুলি শিখিয়ে দিতে হয় না, এ সমাজের কাঠামোয় আপনিই শেখা হয়ে যায়। মাত্র এক বছর? এরকম এক এক করে “জীবন কেটে গেছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার”। স্বপ্নের উড়াল দেবার অনুকূল সময়ের অপেক্ষা কি কোনোদিন শেষ হয় মায়েদের? কখনো পরবর্তী প্রজন্মের বড় হয়ে ওঠার অপেক্ষা, কখনো পূর্ববর্তী প্রজন্মের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। এক বছর পর আরো একটা হার্ডল সামনে এসে দাঁড়াবে কি না কে জানে? ইচ্ছের তাড়নায় মরিয়া ছুট লাগাবার সময় তবে কবে আসবে? আশিরনখ জরাগ্রস্ত হয়ে যাবার পর? পঞ্চাশের দোর গোড়ায় দাঁড়িয়েও কি মায়ের মনে হবে না, “আর বিলম্ব না না, আর বিলম্ব নয়... এখনো আছে সময়”?
    আমার তাকিয়ে থাকা ফুরোয় না। ধীরে ধীরে বুদ্ধের দৃষ্টির মত শান্ত দুই চোখে আরো একবার ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার লালিত সংসারের দিকে। গৃহযুদ্ধের সংকেত খুঁজি।
    ঘরে বাইরে এরকম অজস্র যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়েও হিংস্র না হয়ে উঠতে চেষ্টা করি। এখন, এই মুহূর্তে সেটাই দায়, সেটাই কাজ। একটি প্রাণ কে জন্ম দিতে, লালন করতে, মানুষ করে তুলতে এক জীবনের শ্রম থাকে একজন মায়ের। অসংখ্য জেগে থাকা রাত থাকে, অসুখে সেবা থাকে, চব্বিশ ঘন্টার যত্ন থাকে। সন্তানকে বড় করে তুলতে তুলতে মায়ের কালো চুলে রুপোলি রং লাগে। খসে পড়তে থাকে রূপ, যৌবন, সাধ, স্বপ্ন, ইচ্ছে। ফুরিয়ে আসতে থাকে আয়ু। সেই যত্নলালিত প্রাণ যখন অকারণ হিংস্রতার শিকার হয়, তখন সেই এক জীবনের পরিশ্রম পন্ডশ্রমে পরিণত হয়। হ্যাঁ শ্রমই বলছি। যে অনুৎপাদক শ্রমকে মার্ক্স পুঁজি বলে মানতে চান নি, সেই শ্রম। জীবনের মূল্য তাই মেয়েরা জানেন, মায়েরা জানেন। জঙ্গীর মা ও জানেন , জওয়ানের মা ও জানেন, শহীদের মা ও জানেন, মার্ডারারের মা ও জানেন। সমস্ত হাজার চুরাশির মায়েরা জানেন। যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রনায়কেরা কবেই বা মায়েদের এই শ্রমের মূল্যায়ন করেছে?
    এ প্রসঙ্গে আবারও মল্লিকা সেনগুপ্তের একটি কবিতার কথা মনে পড়ছে – “রাষ্ট্রপতিকে একটি মেয়ের চিঠি”... যে চিঠি যে কোনো মেয়ে তার দেশের রাষ্ট্র্নায়ককে লিখতে পারেন। যে কথাই আজ প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের পরিবারের মেয়েদের মুখ থেকে।

    রাষ্ট্রপতিকে একটি মেয়ের চিঠি / মল্লিকা সেনগুপ্ত

    পারমাণবিক রাষ্ট্রনায়ক
    কেমন আছেন আপনি
    পোখরান জুড়ে আগুন জ্বালান
    আমরা বাতাসে তাপ নিই

    যে মাটিতে এত আণবিক ছাই
    সে মাটির মেয়ে সীতা
    অস্ত্র থামাতে বলেছি রাম কে
    আমি হল-কর্ষিতা

    আমি মনজিত , কপাল পুড়েছে
    স্বামী কার্গিলে যখনই
    আমি সুভদ্রা , যুদ্ধে নিহত
    অভিমন্যুর জননী

    চন্ডাশোকের বৌদ্ধ ঘরণী
    আর্তজনের শিবিরে
    ঘুরে কেঁদে মরি সেই কবে থেকে
    একটু শান্তি দিবি রে!

    অস্ত্র থামাও, অস্ত্র থামাও
    সিন্ধু বুড়িবালাম
    ফিরিয়ে নাও না পরমাণু বোমা
    শ্রীমান এ পি জে কালাম

    যে সব মেয়ের স্বামী মারা গেছে
    যুদ্ধে নিহত পুত্র
    যাদের জীবন ছেয়ে আছে শোক
    আকন্দ বিষ-ধুতরো

    তাদের সবার অশ্রুনদীর
    জলে অঞ্জলি তোমাকে
    ধুপগুড়ি থেকে গুজরাট জুড়ে
    থামাও মানব বোমা কে

    গ্রামভারতের পথে পথে আমি
    লক্ষ্মীবারের পাঁচালি
    ওদের কে যদি মারবি তাহলে
    আমাকেই কেন বাঁচালি

    করজোড়ে চাই যুদ্ধ-বিরতি
    আমার কথাটা শোন না
    কুরুক্ষেত থেকে কার্গিল আমি
    হাজার অবুঝ কন্যা।

    প্রাণ আসলে নারীশ্রমেরই ফসল। প্রাণঘাতী যে কোনো যুদ্ধই তাই নারীবাদ-বিরোধী। নারী নাকি অর্ধেক আকাশ। এই অর্ধেক আকাশ থেকে যুদ্ধোন্মাদনার আগুনে যেন ঘৃতাহুতির বদলে বারিবর্ষণ হয় । ঘরে-বাইরে সমস্ত ক্ষমতাতান্ত্রিক হিংস্রতার সামনে দাঁড়িয়েও, শত প্ররোচনাতেও, দেশপ্রেমী পুত্র-কন্যার মাতৃত্ব গৌরবের প্রলোভনেও যেন নারীকণ্ঠ থেকে যুদ্ধবাজের স্বর উঠে না আসে। যেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধই নারীবাদী আন্দোলনের মুখ্য এজেন্ডা হয়। এও এক যুদ্ধ… প্রাণক্ষয়ী যুদ্ধ নয়, প্রাণ-রক্ষার যুদ্ধ।
    এই অর্ধেক আকাশে যেন চেতাবনি ধ্বনিত হতে থাকে অবিরত... “পরস্পরে দ্বন্দ্বে অমঙ্গল” সে কথা জানিয়ে দেবার চেতাবনি । যেন অবিরত প্রশ্ন উঠতে থাকে… “তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল”।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ মার্চ ২০১৯ | ৮২৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ব্যাধিনী -
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | 781212.194.1278.151 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ০২:১৪49565
  • মেয়েদেরও কিন্তু একটু ন্যাতা পাপোশ হয়ে না থেকে নিজের জায়গাটা বুঝে নিতে চেষ্টা করতে হবে। কেউ কাঊকে হাতে করে কিছু তুলে দেয় না। ওই স্বামী ভদ্রলোককেও চাকরীটা মনে হয় বেশ একটু লড়াই করেই মানে ইন্তারভিউ/ টেনশন পেরিয়েই জোগাড় করতে হয়েছে। বৌ ও তাই করুক না - খবরের কাগজ ঘরময় না হয় উড়ল-ই। কি এসে যায় তাতে! ভালো মা, ভালো বৌ না হয় না-ই বলল অন্যেরা।
  • pi | 7845.29.788912.94 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ০২:১৯49566
  • এখানে আমি সকালে এত লিখ্লাম, হ্যাং করে সব গন। কিছু কথা অবশ্য আগের পোস্টদাতারা বলে দিয়েছেন।
  • নিরপেক্ষ | 342323.191.90034.114 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ০২:২৯49567
  • কষ্ট করে আর একবার লিখুন না @পাই, যে কথাগুলো অন্যরা বলেন নি, সেগুলো।
  • | 2345.108.673423.158 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৫:১৫49568
  • বক্তব্য যা ছিল টাইপাতে ল্যাদ লাগছে।
    স্বাতী রায়ের সাথে একমত -আপাতত এইটিকুই
  • pi | 7845.29.788912.94 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৬:২৭49569
  • হ্যাঁ, লিখব ল্যাদ কাটিয়ে। আর এম্নিতেও নানা বক্তব্য পড়ে আমার প্রাচুর প্রশ্ন পাচ্ছে।

    বাকি প্রশ্ন পরে। আপাতত একটা প্রশ্ন, বাবা গান ছাড়িয়ে দিলেন। খুবই বাজে ব্যাপার, নিঃসন্দেহে। কিন্তু মা আটকালেন না? কেন?
  • নিরপেক্ষ | 232312.15.3467.241 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৯:৩২49564
  • লেখাটির অন্তর্নিহিত আবেগটুকু খুব সত্যি কিন্তু বক্তব্য একটু ডি-ফোকাসড লাগলো। মানে লেখিকা সমস্যাটা তুলে ধরেছেন কিন্তু কি সমাধান হতে পারে তাই নিয়ে কোনো দিকনির্দেশ নেই। যেমন,
    (১) বাড়ির বৌটির ঠিক কি দরকার ? কিছুটা নিজস্ব সময় না নিজস্ব উপার্জন ? দুটোর সমাধান কিন্তু দু ভাবে হবে। নিজস্ব সময় পেতে গেলে কিছু কাজের লোক রাখা যেতে পারে, উচ্চপদস্থ চাকরী করা স্বামীর বাড়িতে সেটা অসম্ভব নয়। তাহলে মহিলা সারাদিনের কাগজ গোছাবার ব ঐরকম কাজের পেছনে সময় নষ্ট হবে না।
    (২) নিজস্ব ইনকাম পেতে গেলে অন্য ব্যবস্থা কিন্তু তাতে নিজস্ব সময়, খবরের কাগজের সম্পাদকীয় পড়ার সময় বেরোবে বলে মনে হয় না। লেখিকা একটু নিজের ভাবনার কথা লিখুন।
    (৩) সবটাই মেয়েদের দিক থেকে লেখা, স্বামী বা অন্ততঃ ছেলেমেয়েদের কিছুটা নিজেদের কাজ করে নেওয়ার শিক্ষা কেন দেওয়া হছে না, সেই নিয়ে একটু অভিযোগ থাকল। এ ভদ্রলোক সারাদিন প্ল্যান্টে কাজ করেন তাঁর ওপরও তো চাপ কম নয়, তাঁকে কিছুটা ছাড় দিয়ে কি মহিলার সমস্যা সমাধান করা যায় না ?

    একটু আলোচনা হোক। লেখক-পাঠক মিলে। শুধু পুরুষকে ভিলেন বানিয়ে তো সমাধান হবে না। এই লেখার পেছনে যদি লেখিকার নিজের দেখা চরিত্রও থাকে সেই সব উদাহরনও আসুক।
  • Mandi | 6789.15.456712.55 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৯ ১০:৫৪49570
  • মা আটকাতে পারেন নি কারন গান শেখার খরচ টা মা নিজের সাধ্যে রোজগার করতে পারেন নি।শুনতে খারাপ কিন্তু এই সত্য!
  • স্বাতী রায় | 781212.194.1245.102 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৬:২৭49573
  • @লোপামুদ্রা সরকার, আমিও মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে শিক্ষা, রোজগার থাকলেই যে কেউ নিজেকে দুর্বলতর বলে, সেকেন্ড সেক্স বলে ভাববেন না, ব্যাপারটা এত সরল নয়। লেখিকার সঙ্গে সহমত। কিন্তু এও মানি যে বিরুদ্ধ পরিবেশে যদি কেউ নিজেকে সেকেন্ড সেক্সের থেকে ইক্যুয়াল সেক্স বলে ভাবতে চান, তাহলে যে যুদ্ধটা ঘনিয়ে ওঠে, সেই যুদ্ধে ওই শিক্ষা ও রোজগারটা একটা বড় হাতিয়ার। রোজগার যেমন সব সমস্যার সমাধান নয় তেমনই রোজগার নিজের কথা বলার ও নিজের কথা শোনানর পরিসর তৈরি করে, এটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শিক্ষা ও নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (সে চাকরী/ ব্যবসা / উত্তরাধিকার বা গৃহশ্রমের পারিশ্রমিক যে সূত্রেই হোক না কেন ) আর মেয়েদের নিজস্ব সম্পদকে আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখি।

    আর লোপামুদ্রা বলেছেন যে "অনেক রোজগেরে মহিলাদের মধ্যেই একধরণের ঔদ্ধত্য দেখি" - এটা আর একটু বুঝতে পারলে ভালো হত। ঔদ্ধত্য বলতে আপনি ঠিক কি বুঝিয়েছেন এটা যদি আর একটু খোলসা করে বলতেন।

    লোপামুদ্রার তিন নম্বর পয়েন্ট নিয়ে একটাই কথা, এই কথাগুলো এখনো ওঠে বলেই এখনো এই লেখাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা। তবু আমার মনে হয়, যারা প্রশ্ন করার তারা করবেন-ই। কিন্তু আজকের দিনে আমরা উত্তরটা কি দিচ্ছি সেটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেটা ভবিষ্যতের দিশা তৈরি করবে।

    আসলে আমার মনে হয় এই যে সম-মর্যাদার জন্য লড়াই এতে আসলে কেউ হারে-জেতে না। নিজের আত্ম-সম্মানের গন্ডীটা ঘরে-বাইরে সুরক্ষিত করার লড়াই এটা - না পারলে আমি নিজেই খালি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। কেউ কেউ উপযুক্ত পরিবেশ পান যেখানে তারা সারাজীবন তাদের নিজের ধারণা মত সস্মমানে থাকেন। কেউ কেউ ততটা সৌভাগ্যবতী হন না। তাদের লড়তে হয়। পেরে ওঠা বা না পেরে ওঠাটা ততটা জরুরী না বলে আমার মনে হয়, কারণ এই "পেরে ওঠার" সংজ্ঞাটা তো আর স্টাটিক নয়, ম্যাচুওরিটির সঙ্গে পরিবর্তনশীল - কিন্তু ওই চেষ্টাটা, ওই ' দাঁতে দাঁত চিপে ' লড়াইটা জরুরী। somehow লেখাটার মধ্যে আমি এই স্পিরিটটা পাই নি। আমার বোঝার ভুল হতেই পারে।

    ন্যাতা-পাপোশ কথাটা যদি অসম্মানজনক মনে হয় তাহলে withdraw করছি।

    এই প্রসঙ্গে রেবেকা ওয়েস্টের একটা কথা মনে পড়ল - "I only know that other people call me a feminist whenever I express sentiments that differentiate me from a doormat or prostitute"
  • pi | 7845.29.458912.78 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৭:০৩49574
  • এত প্রশ্ন, এত প্রশ্ন জাগছে যে লিখতে ল্যাদ খেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু দুটো বেসিক প্রশ্ন করি?
    ১। রোজগারটা মেয়েদের না করলেও চলে যায় কেন? করলেও সেকেন্ডারি ইন্কাম?
    ২। ঘরের কাজ একজনের পুরোসময় ঘরে থেকে করাটা যদি অপরিহার্য, তর্কের খাতিরে মেনেও নি ( আমি এমনি এটা মনে করিনা, সেটা বলাবাহুল্য, কিন্তু এও মনে করি যার যার নিজের জীবন সংসার নিজের, নিজেদের মত করে বেছে নেওয়াএ পূর্র্ণ অধিকার আছে), তো সেখেত্রে পূর্ণ সময় ঘরের কাজ ছেলেটি করবে এই অপশনটা আসে না, আসে নাই কেন?

    কেউ নিজে বাইরের কাজ করতে চাইলে, তাকে করতে না দেওয়া হলে তো সেটা যে মেনে নিচ্ছে, কেন নিচ্ছে এই প্রশ্নের সদুত্তর বহু ক্ষেত্রে পাইনি।
  • বকলমে | 340112.102.122312.50 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৮:৫৬49571
  • লেখকের তরফে দু একটা কথা ....

    ১) প্রথমেই মেনে নিই লেখাটায় আবেগের তাড়না বেশি । আমি এবং আমার মত বোকাসোকা অনেক মেয়েই অধিকাংশ সময় পারিবারিক সম্পর্কের আবেগ এবং ব্যক্তিস্বার্থের মধ্যে ঘেঁটে ঘ হয়ে থাকি । সেই কারণে আমাদের মত মেয়েরা ভীষণভাবে emotionally blackmailed ও হয় । মেয়েদের পিছিয়ে থাকার পিছনে এই ঘেঁটে থাকা একটা বড় কারণ অবশ্যই । তবু ব্যক্তিগত ভাবে আমি আবেগ কে মানবিক গুণ হিসেবেই দেখি , দুর্বলতা হিসেবে নয় ।

    ২) অনেক রোজগেরে মহিলাদের মধ্যেই একধরণের ঔদ্ধত্য দেখি । বিশেষত প্রথম প্রজন্মের উপার্জনক্ষম মহিলাদের মধ্যে । আমার শিক্ষিকা মায়ের মধ্যেও এই ঔদ্ধত্য ছিল । তাঁরা ভাবেন নিজস্ব রোজগারটাই সব সমস্যার সমাধান । কিন্তু আমার রোজগেরে মা কে তো বটেই , তাঁর অনেক সহকর্মী বন্ধুদের ক্ষেত্রেও অনেক "না-পারা" দেখেছি । রোজগেরে হওয়া সত্বেও submissive থাকতে দেখেছি । কর্মী মেয়েদেরও বরের পেটানি সংসারে পড়ে থাকতে দেখেছি । পুলিশে চাকরি করা মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন .... এমন ঘটনাও কাগজে এসেছে । সুতরাং "মেয়েকে গান শেখানোর পয়সাটুকু মা উপার্জন করতে পারছেন না, তাই বাবার মত মেনে নিচ্ছেন । " ...... এটা কিন্তু কারণ নয় মোটেই । কারণটা কিন্তু " অন্য কোথা অন্য কোনখানে " আছে .... সেটা হলো নিজেকে সেকেন্ড সেক্স হিসেবে , দুর্বলতর ভাবার অভ্যেস ..... শতাব্দী-প্রাচীন মগজ-ধোলাই ।
    নিজের জীবনে পরনির্ভরশীল এবং স্বনির্ভর দুটো phase ই দেখেছি , দেখছিও । আমার প্রায় পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতা বলে যে , শিক্ষা , রোজগার এগুলো থাকলেই "মার দিয়া কেল্লা" গোছের ভাবনা টা অতি সরলীকৃত । এত সহজ সমাধান থাকলে নারী-দিবস পালনের প্রয়োজনটাই থাকতো না হয়তো । এত লেখা-লেখিরও কি দরকার পড়তো ? @নিরপেক্ষ কি জানেন কোনো ম্যাজিকাল সমাধান ?

    ৩) বিয়ের পর দুটো ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম একটা B. Ed course এ ভর্তির জন্য স্কটিশ চার্চ কলেজে, আরেকটি বর্ধমান উনিভার্সিটির একটা রিসার্চ প্রোজেক্টের জন্য । আমার যাবতীয় সার্টিফিকেট , নেট কোয়ালিফিকেশন ইত্যাদি দেখার পর বোর্ডের প্রথম প্রশ্ন , আমার তিন বছরের মেয়ে আছে , তা সত্বেও আমি কেন apply করেছি ? আমি কিভাবে সব সামলাবো ? কোনো বিবাহিত পুরুষকে ইন্টারভিউ বোর্ডে এ প্রশ্ন করা হয় @স্বাতী রায় ? ধরেই নেওয়া হয় উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুরুষের গৃহিণী তাঁর household সামলে নেবেন ।

    ৪) প্রত্যেক মানুষ তাঁর নিজের নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই লড়াইটুকু করেন । ব্যক্তিগত ভাবে আমি যতটা স্নেহপ্রবণ মানুষ ততটা লড়াকু নই । এটাই আমার gene নির্দেশিত চরিত্র । আমার নিজের মত হওয়াটাও আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে । পরিস্থিতির চাপে যথেষ্ট হিংস্র হয়ে যাঁরা উঠছেন না তাঁরা যে লড়ছেন না এটাও মনে করি না । যাঁরা জিতলেন , পায়ের তলার শক্ত জমি পেলেন তাঁদের কুর্নিশ । কিন্তু দাঁতে দাঁত চিপে যাঁরা লড়ে যাচ্ছেন , কিন্তু পেরে উঠছেন না তাঁদের লড়াই টা ন্যাতা পাপোষের মত পড়ে থাকা .... এটা মনে করলে তাঁদের লড়াইটা কে অসম্মান করা হয় । নিজের জীবনের সামান্য পারা এবং অনেক ন-পারা দিয়ে বুঝি "যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া" ..... সবাই মিলে একটু একটু পারতে পারতেই হয়তো কোথাও পৌঁছনো যেতে পারে ।

    ৫) যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হল , মেয়েরা ঘরে যে শ্রমটা দেন , সেটা কে eulogize করতে গিয়ে অনেক সময়ই শ্রমের মূল্যায়ন হয় না । সব নারীই শ্রমজীবী । মেয়েদের শ্রমটুকুর মূল্য স্বীকৃত হলে তাঁদের শ্রমজাত যে প্রাণ তারও মূল্য স্বীকৃত হবে , এই আশা ।

    নানান ঘটনার অভিঘাতে এই কথাটায় পৌঁছতে চেয়েছিলাম সেটা বোধহয় অধরা থেকে গেল । আমারই খামতি , বোঝাতে পারি নি হয়তো ।
  • Nirapekshha | 232312.15.3467.241 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৯:৩০49572
  • মনে হচ্ছিল আপনি নিজের কথাই লিখছেন। এখন দেখা গেল ঠিকই ভেবেছিলাম। তার মধ্যে আরও অনেকের কথাও হয়ত মিশে আছে। অনেক কিছুই নিশ্চই বোঝাতে পেরেছেন। সমাজের এই রকম আচার আচরণ নিয়ে এখানেও আলোচনা কম হয় না। তাই 'ন্যাতা-পাপোশ' ইত্যাদি শব্দে আহত হবেন না, এটাও হতশারই প্রকাশ। বরং আর একটু লিখুন মেয়েদের মুক্তির বিষয়ে আপনার মতামত। একজন উচ্চ্শিক্ষিতা মেয়ে যার মাও কর্মরতা মহিলা তাঁর কাছে জীবনটা কেন এক তরফা লড়াই হয়ে উঠছে ? আরো আলোচনা হোক, কে কি সমাধান ভাবছেন এই নিয়ে।
  • Nirapekshh | 232312.15.3467.241 (*) | ২০ মার্চ ২০১৯ ০৬:১৮49575
  • আমি আবার লেখিকার কাছেই প্রশ্ন রাখব। কারণ তাঁর অবস্থান ও আবেগ এই সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে।
    ১। চাকরীরতা মহিলাদের ঔদ্ধত্য বলতে কি এই 'আমি রোজগার করি তাই আমি রোজগেরে মেয়েদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ' এই রকম কিছু বোঝাচ্ছেন ? মানে এইরকম কিছু উনি ফিল করেছেন ? না হলে ঠিক কি সেটা উনি পরিস্কার করে লিখলে বুঝতে সুবিধে হয়।
    ২। উনিই লিখেছেন সব নারীই শ্রমজীবি, সেই কথার সমর্থনে প্রথমেই উনি মল্লিকা সেনগুপ্ত-র কবিতা কোট করেছেন। উনি এই শ্রমের মূল্যায়ন চেয়েছেন। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব বলে উনি মনে করেন ? এটা কোনো আক্রমণ নয়, চ্যলেঞ্জ নয়, ওনার মনের কথাটা জানার ইচ্ছে।
    ৩। লেখিকা লোপমূদ্রা উচ্চ্শিক্ষিতা কিন্তু যা মনে হল এখন ঠিক রোজগেরে নন। তাই এই সমস্যা উনি যেভাবে দেখবেন ও ফিল করবেন তা অনেকের থেকে আলাদা হবে। তাই ওঁর অবস্থায় যাঁরা আছেন তাঁরা কি চান তা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
    ৪। লোপার তিন নম্বর পয়েন্টে স্বাতী-র সঙ্গে একমত। এই প্রশ্ন (বাচ্চা নিয়ে কি করে সামলাবে) কে সহজ ভাবে নিয়ে এর উত্তরে উনি কি বললেন বা কি করে সামলালেন, না কি ছেড়ে দিলেন সেটা জানা জরুরী।
    লোপামূদ্রা আলোচনায় থাকুন।
  • Ni | 232312.15.3467.241 (*) | ২০ মার্চ ২০১৯ ০৬:২০49576
  • 'আমি রোজগার করি তাই না-রোজগেরে মেয়েদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ'
  • kaktarua | 237812.110.90067.202 (*) | ২০ মার্চ ২০১৯ ০৭:২২49578
  • আমার বস এর সাথে কথা হচ্ছিলো। বস ব্রিটিশ, কানাডায় সেটলড। বাবা মা extended ফ্যামিলি ব্রিটেনে। দুটি ছানাপোনা। ছেলেটি ৮ বছরের মেয়েটি হাই স্কুলে। থাকেন ডাউনটাউন থেকে একটু দূরে subarb এ. সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার একটা বড়ো কনস্ট্রাকশন সাইট এর. দায়ীত্ব আর যাতায়াত মিলিয়ে প্রায় ১৪ ঘন্টা বাড়ির বাইরে। বৌ বাড়ির কাছে একটা কোনো ছোট খাটো অফিস এ মিনিমাম wage এ admin কাজ করে আর ঘর সামলায়। তা কথা হচ্ছিলো লাইফ ইন্সুরেন্স নিয়ে। কনসালটেন্ট ওকে বলেছে যে ওর এবং ওর বৌ এর কত টাকার ইন্সুরেন্স হবে সেটার হিসেবে হবে এইভাবে- যদি একজন মারা যায় তাহলে বাকিদের একই জীবন যাপনের মান ধরে রাখতে যত টাকার দরকার ততো টাকার ইন্সুরেন্স করাটাই নাকি মোটামুটি থাম্ব রুল. আর সেই হিসেবে ইনকাম অনুযায়ী ওর এক মিলিয়ন ডলার এর ইন্সুরেন্স দরকার আর ওর বৌ এর হাজার কুড়ি ডলার এর হলেই হয়ে যাবে। মানে সোজা কথায় ওর বৌয়ের ঘরের কাজের মূল্য শুন্য। আমি তো শুনে হাঁ. তো বলেই ফেললাম " এ তো খুব না ইনসাফী হলো". তোমার বৌয়ের অবর্তমানে তোমায় লাঞ্চ ডিনার সব কিনে খেতে হবে. ক্লিনিং লেডি রাখতে হবে. বাচাদের স্কুল থেকে ফেরার পর বেবি seater রাখতে হবে, স্কুলে নামানো তোলার লোক রাখতে হবে. হোম ওয়ার্ক করানোর টিউটর রাখতে হবে. সর্বোপরি তোমার এই সাধের ১৪ ঘন্টার ডিউটি আর চলবে না. একটা কম মাইনের কাছাকাছি কাজ খুঁজতে হবে. মনে লস অফ অপর্চুনিটি কস্ট। তুমি কি এই সব কস্ট বিচার করেছো? তারপরেও কি $২০০০০ এর ইন্সুরেন্স এ কাজ চলে যাবে বলে মনে হয়!!!
    বস সেদিন কিছু উত্তর দেয়নি। কিন্তু এই লাইন এ চিন্তা করলে ঘরের শ্রমের মূল্যায়ন কি অসম্ভব?? মানে একজনের অবর্তমানে বাকিদের একই জীবন যাত্রার মান ধরে রাখতে কত টাকা খরচ করতে হবে? সেই শ্রম বাইরে থেকে কিনতে কত খরচ??

    এটা সত্যি যে ভারতের জন্য হিসেবে টা আরো জটিল। কারণ ভারতে multi generation এক সংসারে থাকে এবং কে কোথায় কতটা শ্রম দিচ্ছে তা ভাগ করে দুরহ। তারপরে হিসেবে দাঁড়াতে পারে যে বাকিরা মিলেজুলে সামলে দেবে। তবে এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে যদি সংসারের সিচুয়েশন এমনি হয় যে বাকিরা মিলেজুলে সামলে দিতে পারে তাহলে সত্যি সেই কাজের বিশেষ মূল্য নেই. সেক্ষেত্রে একজন মেয়েকে সেটা জেনেই বাড়িতে বসে থাকতে হবে.
  • স্বাতী রায় | 781212.194.7845.29 (*) | ২০ মার্চ ২০১৯ ১০:০৫49577
  • গৃহশ্রমের মূল্যায়ণ হোক। যদিও কি ভাবে তা হবে সে বিষয়ে আমার ধারণা একেবারেই স্বচ্ছ নয়। সেটা কে করছে তার থেকে নজর সরিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে হোক। আমার ধারণা এই বিষয়টি খুব জটিল। একদিকে যেমন রয়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের একা হাতে সব সামলানো বাড়ির গৃহবধূর শারীরিক ও মানসিক শ্রম, অন্যদিকে রয়েছে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত বাড়ীর পারিচারিকা-দিয়ে সামলান সংসারের বাড়িতে থাকা বৌ টি শারীরিক পরিশ্রম ব্যতীত ম্যানেজারিয়াল এফর্ট, তৃতীয় দিকে থাকবে হালের ডাবল ইনকাম ফ্যামিলির যৌথ সংসারযাপন, যেখানে হাতে হাতে কম-বেশী কাজ দুজনেই করে আবার চতুর্থ দিকে র‍য়ে যাবে মধ্যবিত্ত বাড়ীর চাকুরীরতা অথচ লিঙ্গ- বৈষম্যের শিকার বৌটি যে চাকরী আর সংসার দু-ই ই একা হাতে সামলাতে সামলাতে জেরবার। পঞ্চম দিকে টিমটিম করে জ্বলছে সেই সব বিরল পুরুষেরা যারা সমাজের চোখ-রাঙ্গানি উপেক্ষা করে হাউজ-হাজব্যান্ডের রোল প্লে করছে। জানি না আরও কোন দিক বাদ পড়ল কিনা। এত সব ডাইমেনসন সামলে সুমলে মূল্যায়ণ করা চাটটি খানি কথা না। কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে কারোর কোন পূর্ণ / আংশিক ধারণা থাকলে একটু আলোচনা করলে জানার সুযোগ পাব।
  • স্বাতী রায় | 781212.194.2345.88 (*) | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:২৯49580
  • @pi লেখাগুলো আবার পড়ে আবারো আগের মতই ভালো লাগল! গুরুকে ধন্যবাদ এত সুন্দর আলোচনার জায়গা তৈরি করার জন্য।

    @kaktarua আপনার বলা মডেলটা অন্ততঃ সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে সক্ষম হবে। তাই একে স্বাগত। তবে একটা সমস্যা চোখে পড়ল। বাড়ীতে ছোট সন্তান থাকলে গৃহশ্রমের যা মূল্য ধরা হবে, সন্তান বড় হয়ে গেলে আর সেই দাম থাকবে না, যদি না হোম মেন্টেন্সের সূক্ষ্ম নান্দনিক দিকটাকেও শ্রমের আওতায় আনা হয় - অথচ ততদিনে যিনি এই দশ-পনের বছর বাড়ীতে বসে ছিলেন তিনি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দক্ষতার নিরিখে কাজের বার হয়ে গেছেন - এই ফিঊচার লস অফ অপরচুনিটিটা কেও কোনভাবে এই মডেলের আওতায় আনা দরকার। ... আর আপনি নিজেও যেটা বলেছেন ভারতের অজস্র অসংখ্য বাড়ীতেই এই মডেল কাজে লাগবে না কারণ এই যৌথ পরিবার এবং জন-বিস্ফোরণের দেশে খুব সহজেই একের জায়গা অন্যে পূরণ করে দেবে। কিন্তু সমষ্টিগত ভাবে কোন অসুবিধা না থাকলেও যে মানুষটি শ্রম দিচ্ছেন তাঁর ব্যক্তিস্তরে যে সমস্যা সেটা রয়েই যাবে - তাই তাদের জন্য বিকল্প মডেলের প্রয়োজন।

    ইমপ্লিমেন্টেশনের বাবদে সব থেকে ভালো হত, গৃহশ্রমের ব্যাপারটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে এনে পরিবারপিছু অনুদানের ব্যবস্থা হলে। তবে দেশের বাজেটের যা হাল আর এমনকি বৃদ্ধদের পেনসনের যা হাল, তাই দেখে এতদূর ভরসা করতে সাহস হয় না।
  • Kaktarua | 900900.245.341212.44 (*) | ২৪ মার্চ ২০১৯ ১০:৪৭49581
  • @ Pi আর স্বাতী রায় আগের আলোচনা গুলো সব পড়েছি। তখন লেখার সুযোগ হয়নি।তাই এখানেই লিখলাম।

    গৃহ শ্রমের নান্দনিকতা: এর কি সত্যি কোনো মূল্য আছে যা টাকা পয়সার নিরিখে মাপা যায়?? আমার মনে হয় না। আর ঠিক এই কারণেই জনগণ বিয়ে করবে কাজের লোক দিয়েই কাজ চালিয়ে নেবে না। কোনো জিনিসের ই মূল্য নির্ধারণ সম্ভব নয় যতক্ষণ না খোলা বাজার সেই মূল্য দিতে রাজি হয়। সেই হিসেবে যিনি খুব সুন্দর ছবি আঁকেন বা খুব সুন্দর গান তিনি মৌখিক প্রশংসা পেতে পারেন কিন্তু কোনো মূল্য ধরা যাবে না যতক্ষণ না খোলা বাজারে তিনি নিজের ছবি বিক্রি করছেন বা জলসায় টাকার বিনিময়ে গান করছেন। ধরে নেওয়া হবে এই গুণগুলো ওনাদের hobby বা জাস্ট ভালোবেসে বা ভালো লাগে বলে করছেন। সেই হিসেবে গৃহ শ্রমের নান্দনিকতার value (বাংলাতে কি হবে জানি না) আছে কিন্তু মূল্য নেই। মূল্য একটা ধার্য্য করা যেতে পারে যদি পরিবারের বাকি সবাই ওই নান্দনিকতা টিকেও অপরিহার্য বলে মনে করে এবং ওই মহিলার অবর্তমানে খোলা বাজারে তা কিনতে যায়। ওপরের উদাহরণ অনুযায়ী একজন লোক রাখা হলো যার কাজ হবে সারাদিন ছড়িয়ে থাকা খবরের কাগজ তোলা আর ভাঁজ করা। যদি পরিবারের সবাই সেটা না মনে করে তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে ওই মহিলা ভালোবাসা বা ভালো লাগার জায়গা থেকে কাজটি করছেন বা নিজে অপরিছন্ন জায়গায় থাকতে পারেন না বলে করছেন। মূল্য পাওয়া যাবে না।

    চাকুরী যোগ্যতা (employibility): ঘর কন্যা দের গৃহশ্রমের বেতন নির্ধারণ করার আগে আরেকটি জিনিস বিচার করার দরকার। যিনি ঘরকন্যা হতে যাচ্ছেন তিনি কি জেনে বুঝে যাচ্ছেন তাঁর গৃহ শ্রমের ভ্যালু বা মূল্য কতদূর। আমার মতে এই ব্যাপার তাই মেয়েদের উৎসাহিত করার দিন এসেছে। যদি কোনো পরিবারে সত্যি অনেক কাজের লোক থাকে, বেসিক কাজ সামলানোর মতো অন্য ম্যান পাওয়ার থাকে তাহলে মেয়েটি দিনে ৪ বার পর্দা চেঞ্জ করলে আর আটবার ঘর মুছলেও সেই কাজের কোনো ভ্যালু নেই। তাই সেক্ষেত্রে গৃহ শ্রম কে গ্লোরিফাই করেও কোনো লাভ নেই। এবং আমার মতে কোনো মেয়ে সেটা জেনেও যদি গৃহ শ্রমকে তার সারাদিনের activity হিসেবে বেছে নেয়, তাকে তার unemployibility ও মেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের ভ্যালু বাড়ানোর জন্য সে নিজের যেকোনো স্কিল দিয়েই রোজগারের পথ খুঁজতে পারে। আগের tirjaker লেখার সেই মধ্যবিত্ত মহিলারা যাঁদের সংসার সামলানোর জন্য অন্য ম্যান পাওয়ার নেই তাঁরা easily ওপরের মডেল এ নিজেদের কাজের মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। ওপরের মডেল এর প্রধান বিচার্য তিনি নিজে কতটা কাজ করছেন নয়। বাকিরা তাঁর কতটা কাজ অপরিহার্য বলে মনে করছে এবং তাঁর অবর্তমানেও বাইরে থেকে পয়সা দিয়ে equivalent শ্রম কিনবেন।

    এবার আসি সেই মহিলাদের কোথায় যাঁরা চাকুরিরতা ছিলেন কিন্তু ঘরের চাপ সামলাতে না পেরে চাকরি ছেড়েছেন। এখন বেশ কিছু মহিলাদের এই ক্যাটাগরি তে দেখতে পাই। কথা বলে মনে হয়েছে চাকরি ছাড়ার দুঃখ আছে কিন্তু কোনো হীনমন্যতা নেই। কি পাবেন আর কি হারাবেন সব বিচার করেই , মনিটারি ক্যালকুলেশন এর পর ই চাকরি ছেড়েছেন। তাঁদের কাজের মূল্য নিয়ে নিজেদের বা পরিবারের কোনো সংশয় নেই।

    এই লেখাটা লিখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের শাস্তি গল্পটা মনে পরে গেলো। সেই উক্তি " বৌ গেলে বৌ পাইবো, ভাই গেলে তো আর ভাই পাইবো না।" মোটামুটি আজ ও এই উক্তিটি একই ভাবে relevant । মোটামুটি অনেক পরিবারে আজ ও বৌ মারা গেলে কেউ পয়সা দিয়ে গৃহ শ্রম কিনতে যাবে না। জাস্ট আরেকটা বিয়ে করে নেবে। আরেকটা বিয়ের খরচ আগের বৌটির গৃহ শ্রমের মূল্য হিসেবে ধরা যেতে পারে!!!!!! ব্যক্তিগত ভাবে মেয়েটির সমস্যা কি সমাধান হলো । না হলো না। ঠিক এই কারণেই প্রতিটি মেয়ের এমপ্লয়িবিলিটি বাড়ানোর দিকেই নজর দেওয়া উচিত। আর ঘর কন্যা হতে চাইলে কি পাচ্ছে আর কি হারাচ্ছে তার সম্মক ধারণা নিয়ে তবেই।

    সমাজ, মেয়েদের কুঁড়েমি না matured কর্মক্ষেত্র : এই বিষয় নিয়ে কথা উঠলেই কথাটা সমাজের চোখ রাঙ্গানি, মেয়েদের কুঁড়েমি বা সুপার ওম্যান বিতর্ক আর তার পরেই মেটার্নিটি লিভ আর paternity লিভ তক্কাতক্কি তে ঘুরে যায়। মোটামুটি যাঁরা ঘর বাচ্চা সামলে চাকরি করছেন তাঁদের আমার বেশ সুপার ওম্যান বলেই মনে হয়। সুপার ওম্যান রা কি খুশি এই সুপার ওম্যান হুড এ?? মোটামুটি সমীক্ষা te ( লিংক দিতে পারবো না, ইটা ওটা আর্টিকেল এ পড়া আর জনগণের সাথে কথা বলে যা মনে হয়েছে ) দেখা গেছে তাঁরা জীবনের চাপে বেশ চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়েই দিন কাটাচ্ছেন। ঘর কন্যা দের সমস্যার উল্টো পিঠ ইটা। এই সুপার ওম্যান লাইফ সবার জন্য হতে পারে না। ঘরে বাইরে এই চাপ নেবার মানসিকতা সবাই থাকবে ইটা এক্সপেক্ট করলে সমস্যা থেকে মুখ ঘোরানো হয় বলে মনে হয়। সমস্যা তা ছেলেরা equally কাজ শেয়ার করার ও নয়। আজকাল অনেক ছেলেই হাসিমুখে বৌয়ের সাথে কাজ শেয়ার করে। একজন ছেলে বা মেয়ে যদি ১৪ ঘন্টা কাজ আর যাতায়াত মিলিয়ে বাড়ির বাইরে থাকে তাহলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় সেইদিকে একটু নজর পড়লে ভালো হয়। এর সমাধান একমাত্র সম্ভব matured কর্মক্ষেত্র তৈরী করে বা তৈরির জন্য atleast দাবি জানিয়ে। অফিস ছাড়াও যে মানুষের জীবন আছে যাতে নয় নয় করেও কিছু অবশ্য কার্য প্রত্যেকদিন করতে হয় সেটা প্রায় কোনো দেশে ই প্রাইভেট অর্গানিজশন এ স্বীকৃত নয়। দুঃখের বিষয় আমরাও বিনা প্রতিবাদে সেটাই মেনে নিচ্ছি আর tu tu main main করছি আর ঘর কন্যা দের বেতনের কথা ভাবছি। কর্ম ক্ষেত্র কে স্বীকৃতি দিতে হবে বা সহানুভূতিশীল হতে হবে যে একটা ফ্যামিলি লাইফ সঠিক ভাবে function করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। সেটা ১৪+১৪ ঘন্টা বাড়ির বাইরে থেকে সম্ভব নয়। এই এক্সপেকটেশন থাকলে ঘর কন্যা তৈরী হতেই থাকবে আর নাহলে ফ্যামিলি স্ট্রাকচার ধীরে ধীরে উঠে যাবে। যেটা অলরেডি জাপান এ হচ্ছে, কানাডায় এ বছর সিঙ্গেল household এর সংখ্যা ফ্যামিলি household কে ক্রস করে গেলো। মেয়েরা যেই স্ব নির্ভর হবে- যেটা আমি টরন্টো তে দেখি তাদের আর ফ্যামিলি বানিয়ে চাপ খাবার ইচ্ছে থাকবে না। তো যেটা বলার ছিল either exploitation ( আমাদের দেশের ঘর কন্যা) আর নাহলে ফ্যামিলি কনসেপ্ট tar ই বিলুপ্তি ।
    বা কর্মক্ষেত্র কে জীবনের অপরিহার্য কাজগুলোর জন্য যে সময় দরকার তার স্বীকৃতি দিতে হবে। (scndenavian দেশ গুলো চেষ্টা করছে) । ফর প্রফিট organization কেন এতো উদার হবে সেটা পরের ডিসকাশন। আর যেখানে জীবনধারণের মিনিমাম পয়সা রোজগারের জন্য ১৪ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করাই দস্তুর সেখানে কি ভাবে এর সমাধান সম্ভব জানা নেই।
  • স্বাতী রায় | 2345.110.234512.66 (*) | ২৫ মার্চ ২০১৯ ০২:১৩49582
  • @kaktarua সাধু সাধু. ম্যাচুওরড কর্মক্ষেত্র দরকার - না হলে সমাজের ব্যালান্স রাখা দুষ্কর. আর ইনফর্মাল কর্মক্ষেত্রকেও তার আওতায় আনা দরকার.

    মেয়েদের কাজ করাটা ম্যান্ডেটরি করার দাবিটাও তাহলেই কেবল জোর গলায় তোলা যায়.
  • Tirjak | 232312.15.3467.241 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৬:৪১49583
  • ২০১৫ সালে এইখানেই প্রথম লিখেছিলাম গৃহশ্রমের মূল্যায়ন নিয়ে আমার নিজের কিছু ভাবনার কথা। তাই নিয়ে আলোচনা (আলোড়ন) হয়েছিল প্রবল। তার একবছর পরে আর এক জায়গায় লেখাটা প্রকাশ পাবার পর আবার একপ্রস্থ আলোচনা। সেই সময় যেটা বুঝেছিলাম, যেটা এখানে একজন (সোসেন) উল্লেখও করেছিলেন যে সরাসরি উপার্জন করেন না এমন এক্জনের মতামত খুব দরকার। তেমন তথাকথিত 'ডিপেন্ডেন্ট' গৃহবধূ (!) কি রকম মূল্যায়ন পেলে খুশি হন, আরো সরাসরি বল্লে ঘরের কাজের জন্য মাইনে পেলে (সরাসরি ব্যাঙ্ক জমা পড়া টাকা, স্বামীর হাত থেকে নেওয়া টাকা নয়) কেমন লাগবে তাঁর ? এতদিন পর লোপমূদ্রার লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল উনি যদি মতামত দিতেন ভালো হত। স্বাতী, কাকতাড়ুয়া নিরপেক্ষ-র হাত ধরে যে অলোচনা বেশ এগোচ্ছিল সেখানে যখন তির্যকের লেখার রেফারেন্স অবধারিত ভাবে এসেই পড়ল, তখন লোপমূদ্রাকে খুব অনুরোধ করতে ইচ্ছে করছে যদি পাই এর দেওয়া লিঙ্ক থেকে পুরোনো লেখা ও আলোচনা পড়ে একটু নিজের মতামত খোলাখুলি জানাতেন খুব ভালো হোত।

    ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এই আলোচনায় গৃহবধূদের শ্রমকে অপরিহার্য ভাবা হয়নি। দু একজন বাদে (আকা, ডিসি এই রকম দু-একটা নাম মনে পড়ছে) প্রায় কেউই গৃহবধূদের শ্রমের সঙ্গে 'রিলেট' করেন নি। বরং তাঁদের আড্ডা মেরে, সিনেমা দেখে, সিরিয়াল দেখে, পার্লারে ঘুরে বেড়ানোর ছবিটা উঠে এসেছিল দু/এক বার। আজ যখন স্বাতী রায় পাঁচ দফা গৃহশ্রমের কথা বলেন, যেখানে বাড়ির বৌটির ম্যনেজারিয়াল এফর্টের কথাও আছে, তখন মনে হয় ভাবনার দিক থেকে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এইটুকু স্বীকার করতেও খুব ভালো লাগছে। কাকতাড়ুয়ার (ইস ! এই ভাবে কাউকে ডাকা যায় !) লেখা থেকেও অনেক গুলো দিক কিছু কিছু নতুন ভাবনার রসদ পাওয়া যাচ্ছে। আলোচনাটা আর একটু এগোক। লোপা আপনার মতামত দিন।
  • স্বাতী রায় | 781212.194.8934.71 (*) | ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২০49585
  • "There's a cultural expectation in STEM that if you have responsibilities outside of your full-time work, you aren't as committed a scientist," - এই বক্তব্যটা STEM কেন, পৃথিবীর সব কর্মক্ষেত্রে ( সরকারী ক্ষেত্র বাদে হয়ত ) ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য বলে আমার ধারণা। এবং সেখানেই কাকতাড়ুয়ার আগে বলা ম্যাচিওর্ড কর্মক্ষেত্রের কথাটা আসে। সেটার বড্ড প্রয়োজন। আর তার জন্য দরকার চিন্তাভাবনার বেসিক বদল।
  • kaktarua | 237812.110.90067.202 (*) | ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:২০49586
  • https://www.cnn.com/2019/04/15/business/jack-ma-996-china/index.html

    এ মানসিকতা পাল্টাবার নয় সহজে। তাই ৮০ র দশকের নারীমুক্তি সংগ্রাম এর পরবর্তী cycle হলো ফ্যামিলি স্ট্রাকচার এর অবলুপ্তি।

    দেখা যাক।
  • Swati Ray | 781212.194.90034.100 (*) | ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৫০49587
  • এ লোকটা মুখে বলেছে, অন্যরাও তাই বিশ্বাস করে. চায়নার প্রোডাকশন হাউজের ( অ্যাপেল এর কনট্রাক্টর কোং ) যা গল্প পড়েছি প্রায় হিটলারের কনসেননট্রেসন ক্যাম্প. ... আসলে এই oppressive ধ্যান ধারণা গুলো দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার সব দেশেই কম বেশি. একটা কারণ হয়ত ম্যানেজমেন্ট টীম টা প্রিভিলেজড ক্লাস. একজন তলার লোক বা মজুরের জীবনের আশা আকাঙ্খা তার বোধের বাইরে.তবে জানি না, এও হয়ত সত্যি নয়. একি ক্লাসের লোক অন্যের উপর অত্যাচার করে এরও তো উদাহরণ ভুরি ভুরি. কি জানি!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন