এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • স্টেজটা একটু ছাড়বেন ভাই

    ন্যাড়া লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯ | ৪০৮২ বার পঠিত
  • আমার একটি প্রতিপাদ্য, বহুদিন ধরেই, ছিল এবং আছে। সেটি হল, বছর দশেকের জন্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যাপারটা বাঙালির জীবন থেকে তুলে দেওয়া উচিত। কেউ গাইবে না, কেউ শুনবে না, কেউ শেখাবে না, কেউ শিখবে না, টিভিতে দেখাবে না, রেডিওতে শোনাবে না, বিজ্ঞাপনে লাইন দেবে না ইত্যাদি। দশ বছর ডিটক্সিকেশনের পরে বোঝা যাবে রবীন্দ্রনাথ কতটা নিজের জোরে দাঁড়াতে পারেন। নইলে গলায় একটু সুর খেললেই পয়সা দিয়ে রেকর্ড বের করে শিল্পী হয়ে গেলাম - এ অনেক হয়েছে। অনেক শুনেছি দুশোটি গানের চর্বিত-চর্বণ। গেল কুড়ি-তিরিশ বছরে একজন গায়কও কি উঠেছেন যিনি হিন্দি গানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুজতে পারেন। শেষ মহীরুহ সেই হেমন্ত, দেবব্রত, সুচিত্রারা।

    এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমতঃ রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে আজকের জীবনের যোগ ক্ষীণ হয়ে এসেছে। সারাদিন লোককে কাঠি করে চাট্টি উপরি রোজগারের জন্যে হয়রান হয়ে সন্ধ্যেবেলা পাঞ্জাবী পরে স্টেজে "মোরা সত্যের পরে মন আজি করিব সমর্পণ" গাইলে গলা কেঁপে যাবেই। এটার কারণ রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন বাইরে পরার জামা। এমনিতে বাঙালি দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে, বগল-বাজাচ্ছে, সাধারণ জামা-প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে - যেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের নাম শুনল অমনি ঘাড়ে পাউডার, পরণে পাঞ্জাবী। কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীতের নামে কিছু বলল তো দে রদ্দা। কিন্তু এটা ঘটনা যে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া-শোনার ঢং না পাল্টালে শিগগিরই এ জিনিসও সরস্বতীপুজো মন্ত্র হয়ে যাবে। খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।

    গান গাওয়া মানে একটি প্যাঁ-প্যাঁ হারমোনিয়াম আর পাশে ঠ্যাং-ঠ্যাঙে তবলা। আজকাল সঙ্গে একটা স্প্যানিশ গিটার থাকে। পয়সা বেশি থাকলে কীবোর্ড হ্যান্ডস ভাড়া করা হইবে। আগের স্টলওয়ার্টদের ছিল শুধু হারমো আর তবলা। কিন্তু তখন শ্রোতারাও চব্বিশ ট্র্যাকে স্টিরিও রেকর্ডিং শুনে ফ্যালেনি। ডলবিতে ডিজিটাল রেকর্ডিং-এর পরিচ্ছন্ন আওয়াজ আসেনি। পুরো অডিবল স্পেক্ট্রাম জুড়ে অ্যারেঞ্জমেন্ট শোনা হয়নি। তাই এখন মন্দিরার ঝুনুক ঝুনুকের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাট সাগর সেন-স্টাইল গাওয়া শুনে দীক্ষিত শ্রোতা প্যাঁক দেবেই। তার ওপর রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখা-টেখা সবই কেয়ার অফ স্বরবিতান।

    স্বরবিতান স্টাফে লেখা হলে তাও হত, লেখা আকার-মাত্রিকে। ইনফর্মেশন কন্টেন্টের দিক থেকে দিশি আকার-মাত্রিক স্বরলিপি বিলিতি স্টাফ নোটেশানের থেকে কম পরিণত - অর্থাৎ স্টাফে বেশি ইনস্ট্রাকশান ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। আকারমাত্রিক অনেক অর্বাচীন বলেও হতে পারে। আবার এও হতে পারে যে যন্ত্রসঙ্গীতের স্বরলিপি করার জন্যে স্টাফকে অনেক বেশি ইভলভ করতে হয়েছে। দিশি স্বরলিপি যন্ত্রসঙ্গীতের জন্যে তো ট্র্যাডিশানালি ব্যবহার হয়না।

    এর সঙ্গে আছে স্বরবিতানের পলিটিকস। একই গানের স্বরলিপি ধরুন করেছেন সরলা দেবী, দিনু ঠাকুর আর ইন্দিরা দেবী। তিনজনেই রবীন্দ্রনাথের কাছে ছেলেবেলা থেকে গান শুনে, শিখে বড় হয়েছেন। কাজেই রবীন্দ্রনাথের গানের হাল-হকিকৎ যদি কারুর পক্ষে পুঙ্খাণুপুঙ্খভাবে জানা সম্ভব তাহলে এদের তিনজনেরই নাম আসবে। অথচ স্বরলিপি তিনটে আলাদা। তিনটেই রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছে, কাজেই ধরে নিতে পারি রবিবাবু এগুলোর অনুমোদন করেছিলেন। তাহলে এটা ভাবা সম্ভব যে গানের মধ্যে অল্প-বিস্তর এদিক-ওদিক রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতেন। এ কথার সমর্থন পাওয়া যাবে রবীন্দ্রনাথ আর দিলীপ রায়ের চিঠিপত্রেও। কাজেই গান যে স্বরলিপিগাত্রে খোদিত কোন অজরামর জিনিস নয় এটা রবীন্দ্রনাথ বুঝেই কোডিফিকেশানের বন্দোবস্ত করেছিলেন।

    গোলমালটা বাধল রবীন্দ্রনাথ মারা যাবার পরে যখন সব রকম অথরিটি গিয়ে পড়ল বিশ্বভারতী ও বিশ্বভারতী সঙ্গীত বোর্ডের ওপর - একেবারে ক্ল্যাসিকাল "বাবু যত বলে, পারিষদদলে বলে তার শতগুণ' কেস। বোর্ড বলে দিল, ওসব কিছু নয়, তিনটে স্বরলিপির থেকে আমরা এই একটাকে বেছে দিচ্ছি স্বরবিতানের প্রকাশের জন্যে। আজ হইতে ইহা এবং একমাত্র ইহাই প্রামাণ্য বলিয়া গণ্য হইবে। বাকিসকল ভাড় মেঁ যায়। ব্যস্‌, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাফিয়াডম শুরু হয়ে গেল। তারপরে কিছু বছর অন্য স্বরলিপিগুলো খুঁজে পাওয়া যেত বিশ্বভারতী বা অন্যান্য পত্রিকার পুরনো সংখ্যায়। কিন্তু কালের অমোঘ নিয়মে সে সব পত্রিকা লয়প্রাপ্ত হওয়ায় আর রবীন্দ্রসঙ্গীত ইণ্ডাস্ট্রির শাঁসেজলে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বরবিতান নামক স্বরলিপির বই সর্বত্রগামী হওয়ায়, যা হওয়ার তাই হল। মাফিয়াডম গেঁড়ে বসল। একধরণের রেজিমেণ্টেশান কে প্রশ্রয় দিতে দিতে গান ব্যাপারটা হাওয়া হয়ে গিয়ে স্বরবিতান গাওয়া হতে লাগলে, আর তার থেকে একটু এদিক ওদিক হলেই মাফিয়াদের রে রে করে তাড়া। আর এই রেজিমেণ্টেশানেরই ফল গানের প্রয়োগের স্ট্যাণ্ডার্ড ডেভিয়েশান কমে যাওয়া।

    দেবব্রতর কেসটা কমপ্লিকেটেড। দেবব্রত তখন কমার্শিয়ালি সবচেয়ে সাক্সেসফুল রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, প্রচুর রয়ালটি পান। বিশ্বভারতী সঙ্গীত বোর্ডে তখন যাঁরা রয়েছেন, কয়েকজনের সঙ্গে কমার্শিয়াল স্পেসে দেবব্রতর ডিরেক্ট কম্পিটিশান। কাজেই কমার্শিয়াল রাইভ্যালরির দিকটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। এর ওপর দেবব্রতর কোন শান্তিনিকেতন ব্যাকগ্রাউণ্ড নেই, সেরকম খুঁটি নেই শান্তিনিকেতনে, 'গুরুদেব'-এর সঙ্গে বসে কোন ছবি নেই। মাফিয়ারা গুরুদেবের ওপর মনোপলি ছেড়ে দেবে?

    আবার অন্যদিকে দেবব্রত অতি উত্তম গাইয়ে, জনাদরধন্য। কাজেই এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে (এবং হাঁপানিজনিত নিশ্বাসের প্রবলেমকে একোমোডেট করার জন্যে) বেশ অন্যভাবে গানের প্রয়োগ করতে লাগলেন। লেগে গেল খটাখটি।

    গানের টেক্সটের ইশ্যু অন্যত্রও আছে - পঙ্কজ মল্লিক 'আমি কান পেতে রই'-এ গেয়েছেন, "ভ্রমর সেথা হয় বিবাগী/কোন নিভৃত পদ্ম লাগি। ভ্রমর সেথা হয় বিবাগী/নিভৃত নীল পদ্ম লাগি।" বিশ্বভারতীর গীতবিতানে কিন্তু 'কোন নিভৃত পদ্ম' পাবেননা, অন্য কাউকে গাইতেও শুনিনি।

    আমি যে রেজিমেন্টেশানের কথা বলছি, সেটা শুরু হয়েছে সত্তরের থেকে। অবশ্যই রেজিমেণ্টেশান মাফিয়াদের ওপর আরোপ করা হয়নি বা যায়নি। এর একটা অদ্ভুত ফল দেখা যায়। কপিরাইট চলে যাবার আগে, মানে যতদিন পর্যন্ত এলবাম বের করতে গেলে সঙ্গীত বোর্ডের অনুমোদন দরকার হত, তদ্দিন দেখবেন এলবামে লেখা থাকত, "শিল্পী: অমুক, পরিচালনা: তমুক'। পরিচালনায় যাঁর নাম থাকত তিনি কোন বিখ্যাত শিল্পী/শিক্ষক। এটা ছিল আপসকা বাত। জলধরবাবু ধরুন বিখ্যত শিল্পী, এখন বোর্ডের অনুমোদন কমিটিতে আছেন। আর শ্রী হরিদাস পাল ধরুন ন্যাড়াবাবুর ছাত্র। ন্যাড়াবাবুও বিখ্যাত শিল্পী, কিন্তু এ বছর বোর্ডে নেই। পরের বছর খুব সম্ভবত আসবেন। জলধরবাবু যখন হরিদাস পালের রেকর্ডটি পেলেন এবং দেখলেন যে ন্যাড়াবাবুর পরিচালনায় রেকর্ড করা হয়েছে, তিনি পাশ করিয়ে দিলেন। কারণ পরের বছর টেবিল উল্টে যাবে, আর তখন ন্যাড়াবাবুর কাছে জলধরবাবুর ছাত্রীর রেকর্ড অনুমোদনের জন্যে পাঠাতে হবে। এর ফলে বাজারে লোকে জেনে গেল, রেকর্ড করতে হলে জলধরবাবু বা ন্যাড়াবাবুর কাছে গান শিখতে হবে, নইলে রেকর্ড পাশ হবে না। ব্যস অমনি দলে দলে লোক এই দুজনের কাছে গান শিখতে লাগল, তৈরি হল আরেকরকম রেজিমেণ্টেশান।

    এই মাফিয়াডম ও রেজিমেন্টেশন - এরা হল রবীন্দ্রসঙ্গীতের সবচেয়ে বড় শত্রু। এনারা চান উনিশশো রবীন্দ্রসালে গান যেরকম গাওয়া হত, আজও পারলে সেরকম গাওয়া হবে। নেহাত দম নেই। সুযোগ পেলে এনারা অবনীন্দ্রনাথকে মেঝেতে এসরাজ হাতে বসিয়ে ছবি তুলে রাখেন। গানের কোনরকম ইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে, তাই এনারা জানেন না। কিছু হলে সঙ্গীতচিন্তা থেকে রবীন্দ্রনাথের চাট্টি কোট তুলে দেবেন। যেন যীশু আর মোজেসের পরেই রবীন্দ্রনাথ। গুরুবাক্য। ভুল হতেই পারে না। এদিকে শেক্সপিয়ারের নাটকের ইন্টারপ্রিটেশন করে লোকে ফাটিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতে ট্রিপল কঙ্গো! ওরেব্বাবা, বাঙালির দাড়ি-টিকি নিয়ে টানাটানি।

    এমতাবস্থায় আমাদের কপালে নচিকেতা আর উলালা-ই নাচছে। আর নইলে স্টেজভর্তি পিলপিলে বাসন্তী পাঞ্জাবী-শাড়িতে "হে নূতন দেখা দিক"। নূতনকে দেখা দিতে গেলে স্টেজটা যে একটু ছাড়তে হবে ভাই!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯ | ৪০৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • বিপ্লব রহমান | ০৯ মার্চ ২০২০ ২১:২৪91353
  • “এমনিতে বাঙালি দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে, বগল-বাজাচ্ছে, সাধারণ জামা-প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে - যেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের নাম শুনল অমনি ঘাড়ে পাউডার, পরণে পাঞ্জাবী।“

    দারুণ সত্য ভাষ্য।

    রবি সূর্য নিশ্চয়ই বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি জীবনে এক বিশাল অধ্যায়। বাঙালির চণ্ডিদাস, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, ১৯৪৭, একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১, আর রসগোল্লা ছাড়া আছে কী?   

    কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে গুরু থেকে ঠাকুর বানানো, সর্বত্র নিত্য পূজা ইত্যাদি নিছক আহাম্মুকি। এই পয়েন্টে রোদ্দুরকে সমর্থন করি। বাড়া চাঁদ উঠেছিল গগণে...।  

  • বিপ্লব রহমান | ০৯ মার্চ ২০২০ ২১:৪৩91354
  • পুনশ্চ: 

    কল্লোল,

    ইদানিং যারা গাইছেন, তাদের মধ্যে জয়তি চক্রবর্তির গাওয়া ভালো লাগে। একটু আগের রেজওয়ানার গাওয়াও বেশ ভালো। পুরুষ কন্ঠ তেমন শুনতে পাই না। মোহন সিং বা মনোজ মুরলী খুব একটা দাগ কাটে নি।

    মাফ করবেন দাদা, নিজে খুবই সামান্য মানুষ, নিতান্তই নিউজ ক্লার্ক, সংগীতের আর কী বুঝি?

    তবু এইপারে একদা  শিক্ষকেরও শিক্ষক ছিলেন, গুরুদের গুরু, কলিম শরাফি আজন্ম নিভৃতেই থাকতে চেয়েছেন, মহীরুহরা বোধকরি এইরূপ মহৎ হন।

    পারলে অবসরে শুনে দেখবেন, এ এক দারুণ বিস্ময়!

  • বিপ্লব রহমান | ০৯ মার্চ ২০২০ ২১:৪৯91355
  • *সংশোধনী = উপরের মন্তব্যের প্রথম অংশটুকু উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরে হবে, যথা--

    “কল্লোল,

    ইদানিং যারা গাইছেন, তাদের মধ্যে জয়তি চক্রবর্তির গাওয়া ভালো লাগে। একটু আগের রেজওয়ানার গাওয়াও বেশ ভালো। পুরুষ কন্ঠ তেমন শুনতে পাই না। মোহন সিং বা মনোজ মুরলী খুব একটা দাগ কাটে নি।“

  • কল্লোল | 162.158.165.235 | ০৯ মার্চ ২০২০ ২৩:১৫91356
  • ভাই বিপ্লব। কোন এক অত্যাশ্চর্য কারনে এনার নম শুনেছি, কিন্তু গান শুনিনি। এ আমার লজ্জা। তোমার কাছে জীবনের মত কেনা হয়ে থকলাম। এভাবে তুলনা করা অন্যায়, তবু মুগ্ধতা প্রকাশ করার আর কোন উপায় পেলাম না - দেবব্রত শোনার রোমাঞ্চ ফিরে পেলাম। গায়কীতে খুব মিল (হাঁপানী জনিত শ্বাসের ব্যবহারটি ছাড়া)। গলার আওয়াজটি একই রকম মন্দ্র।
    এনার কথা কেউ ততো বলেনা কেন?
  • ন্যাড়া | 172.68.133.179 | ০৯ মার্চ ২০২০ ২৩:৩০91357
  • কলিম শরাফি বাংলা সাংস্কৃতিক জগতে একজন প্রথিতযশা, কিন্তু বিস্মৃতপ্রায়। আ্যন্টি-ফ্যাসিস্ট মুভমেন্ট থেকে ছিলেন। পরে বাংলাদেশে চলে যান। বিখ্যাত গানের স্কুল (নামটা এক্ষুনি মনে অওড়ছে না, বিপ্লব বলতে পারবেন) - যা কৌলীন্যে এ পারের গীতবিতান, দক্ষিণীর প্রতিস্পর্ধী - করে বহু ভাল শিল্পীকে রবীন্দ্রনাথের গানে দীক্ষা দিয়েছেন।
  • রঞ্জন | 162.158.158.116 | ১০ মার্চ ২০২০ ১১:৫৩91368
  • এই আলোচনায় ঋদ্ধ হলাম।  ন্যাড়াবাবুর মূল ধরতাই আমার একদম যাকে বলে 'করেজুয়া মেঁ তির"। পিটির কিছু বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। কিন্তু নিজে কিছু ক্রিয়েটিভ সৃষ্টি না করলে ক্রিটিক্যাল স্টেটমেন্ট দেওয়া যাবে না --এটা মানতে পারছি নে। তাহলে কোন কমেন্টেটরেরই তেন্ডুলকরের শট সিলেকশনের ভুল নিয়ে কথা বলা মানায় না । 

    আমি অধিকারী নই , তাই বেশি বলা উচিত নয় । কিন্তু কল্লোলের এবং আরও একজনের সঙ্গে একমত যে ভালো কীর্তন এবং টপ্পা শুনতে হলে ইউটিউবই  আজকাল ভরসা। সেদিন একজন নতুন গায়িকার কীর্তন শুনে মনে হল ছবি বন্দ্যোর অনুকরণ।

  • বিপ্লব রহমান | 172.69.134.176 | ১০ মার্চ ২০২০ ২১:২৭91376
  • “কল্লোল | 162.158.165.235 | ০৯ মার্চ ২০২০ ২৩:১৫91356

    ভাই বিপ্লব। কোন এক অত্যাশ্চর্য কারনে এনার নম শুনেছি, কিন্তু গান শুনিনি। এ আমার লজ্জা। তোমার কাছে জীবনের মত কেনা হয়ে থকলাম।“

    কল্লোল দা,

    এভাবে বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমি খুবই সামান্য মানুষ।

    এই হাই ব্রিড, আর করপোরেট যুগে কলিম শরাফি ওপারে তো বটেই, এপারেও বিস্মৃত প্রায়। প্রথমত, তিনি কখনো আইকন তো দূরের কথা, ফোকাসডই হতে চাননি, তাঁরকা তো ননই। দ্বিতীয়ত, তাকে চিনতে না পারার দায় বাংলাদেশেরই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বামপন্থার ঘনিষ্টযোগ কোনো সরকারই তাকে ভাল চোখে কখনো দেখেনি (ন্যাড়া দাকে আলাদা করে বলছি)।

    তবে অধমের সৌভাগ্য হয়েছে, সংবাদসূত্রে একাধিকবার তার লাইভ অনুষ্ঠান দেখার। এখনো চোখ বুজলে তাকে দেখতে পাই, ফিনফিনে আদ্দির সাদা ঢোলা পায়জামা আর খাটো পাঞ্জাবি পড়া পৌঢ় কলিম শরাফিকে, গোমুখ আসনে বসেছেন, “গীতাঞ্জলি“ থেকে অর্ডার দিয়ে বানানো দামি ডাবল রিডের কালো রঙা হারমোনিয়ামেটিকে ধরেছেন একপাশে, দুইজন তবলচি সঙ্গত করছেন তার সাথে, সেঁতার, তানপুরা, এস্রাজ, বেহালা, বাঁশি, মন্দিরা, এমনকি গিটার ও খোলও আছে। তবে মঞ্চে আলোক সম্পাত একমাত্র মহানায়কের ওপরেই।

    তিনি জলদগম্ভীর স্বরে গাইছেন, “বড় বেদনার মতো বেজছো তুমি হে“...

    আবছা অন্ধকারে আমার কয়েক সিট পরেই দেখতে পাচ্ছি, দর্শকের আসনে একদম প্রধান সারিতে বসে আছেন আছেন জামদানি পরা তার পৌঢ়া স্ত্রী, তিনি শব্দহীন করতালে তাল ঠুকছেন।    

    ওই জাদুকরী কণ্ঠের সাথে কারোরই কোনো তুলনা চলে না। তার ধাঁচই আলাদা।   

  • বিপ্লব রহমান | 172.69.134.176 | ১০ মার্চ ২০২০ ২১:২৭91375
  • “কল্লোল | 162.158.165.235 | ০৯ মার্চ ২০২০ ২৩:১৫91356

    ভাই বিপ্লব। কোন এক অত্যাশ্চর্য কারনে এনার নম শুনেছি, কিন্তু গান শুনিনি। এ আমার লজ্জা। তোমার কাছে জীবনের মত কেনা হয়ে থকলাম।“

    কল্লোল দা,

    এভাবে বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমি খুবই সামান্য মানুষ।

    এই হাই ব্রিড, আর করপোরেট যুগে কলিম শরাফি ওপারে তো বটেই, এপারেও বিস্মৃত প্রায়। প্রথমত, তিনি কখনো আইকন তো দূরের কথা, ফোকাসডই হতে চাননি, তাঁরকা তো ননই। দ্বিতীয়ত, তাকে চিনতে না পারার দায় বাংলাদেশেরই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বামপন্থার ঘনিষ্টযোগ কোনো সরকারই তাকে ভাল চোখে কখনো দেখেনি (ন্যাড়া দাকে আলাদা করে বলছি)।

    তবে অধমের সৌভাগ্য হয়েছে, সংবাদসূত্রে একাধিকবার তার লাইভ অনুষ্ঠান দেখার। এখনো চোখ বুজলে তাকে দেখতে পাই, ফিনফিনে আদ্দির সাদা ঢোলা পায়জামা আর খাটো পাঞ্জাবি পড়া পৌঢ় কলিম শরাফিকে, গোমুখ আসনে বসেছেন, “গীতাঞ্জলি“ থেকে অর্ডার দিয়ে বানানো দামি ডাবল রিডের কালো রঙা হারমোনিয়ামেটিকে ধরেছেন একপাশে, দুইজন তবলচি সঙ্গত করছেন তার সাথে, সেঁতার, তানপুরা, এস্রাজ, বেহালা, বাঁশি, মন্দিরা, এমনকি গিটার ও খোলও আছে। তবে মঞ্চে আলোক সম্পাত একমাত্র মহানায়কের ওপরেই।

    তিনি জলদগম্ভীর স্বরে গাইছেন, “বড় বেদনার মতো বেজছো তুমি হে“...

    আবছা অন্ধকারে আমার কয়েক সিট পরেই দেখতে পাচ্ছি, দর্শকের আসনে একদম প্রধান সারিতে বসে আছেন আছেন জামদানি পরা তার পৌঢ়া স্ত্রী, তিনি শব্দহীন করতালে তাল ঠুকছেন।    

    ওই জাদুকরী কণ্ঠের সাথে কারোরই কোনো তুলনা চলে না। তার ধাঁচই আলাদা।   

  • বিপ্লব রহমান | ১০ মার্চ ২০২০ ২২:৩৬91377
  • ন্যাড়া দা,

    অনেকটাই সঠিক বলেছেন।

    কলিম শরাফি যৌবনে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মি ছিলেন। ওপারে গান্ধির “ভারত ছাড়ো“ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তার একাধিক লাইভ গানের অনুষ্ঠানে স্মৃতিকথায় শুনেছি, নেতাজির অনুপ্রেরণায় তারা খুব অল্প বয়সে “মুকুল ফৌজ“ নামক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন। যাদের কাজ ছিল দাংগা-হাঙ্গামা রোখা, ১৩৫০ এর মান্তরের সময় লঙ্গরখানা খুলে জীবন বাঁচানো, সমাজ সংস্কার ইত্যাদি। কিন্তু এই বাঙালি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর গুপ্ত লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ বিরোধী সেনা বাহিনী গড়ে তোলা, নেতাজির ডাকে সংঘবদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধ করা, এটি ঠিক বয়েজ স্কাউট নয়।  

    দেশবিভাগ তাকে খুব আহত করেছিল। শিল্পী মন, অনেক ভার সইতে পারেননি, ওপারে তার মুসলিম নাম-পরিচয় খুব শিগগিরই চেনা জগতে অস্বস্তি তৈরি করেছিল, খোদ অল ইন্ডিয়া কমিউনিস্ট পার্টি তিন-চারভাগে ভাঙল যখন, তিনি “বড় বেদনা“ নিয়েই উদ্বাস্তুর মতো চলে আসেন এপারে। কিন্তু “কমিউনিস্ট“ ট্যাগের কারণে কোনো সরকারই এই গুনিজনকে মূল্যায়ন করেনি। আর তিনিও নিভৃতেই থাকতে চেয়েছেন আজীবন, শান্তিনিকেতনের শিক্ষায়।

    তবে একান্তে সংগীত সাধনা, আর অসংখ্য গুণিশিল্পী তৈরি করার ফাঁকে কলিম স্বভাবসিদ্ধ নিভৃতে দুটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন, একটি “ছায়ানট“, নাচগান, অভিনয় ও বাংলা মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা।

    তার আরেকটি নেপথ্য অবদান “বেঙ্গল ফাউন্ডেশন“, চিরায়ত বাংলা গানের রেকর্ড প্রকাশ, চিত্র প্রদর্শনী, বিশাল ক্যাম্পাসে বই বিক্রি+গ্রন্থাগার+দুটি ক্যান্টিন চালানো, এটি ১২ ঘন্টার অপারেশন (সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮টা), “বেঙ্গল গ্যালারি“ ও “বেঙ্গল বুকস“ নামে দুটি নান্দনিক দক্ষযজ্ঞ, সব বয়সী পাঠকের মহামিলন মেলা।

    কলিম শরাফিকে নিয়ে উইকিতে দু-চার কথা :

    https://en.wikipedia.org/wiki/Kalim_Sharafi

  • b | 172.69.135.129 | ১০ মার্চ ২০২০ ২২:৪৮91378
  • বেঙ্গল ফাউন্ডেশনই তো সম্প্রতি ভালো ভালো সিডি খুব কম দামে বার করেছে, অদিতি মহসীনের গাওয়া অতুলপ্রসাদ- রজনীকান্ত- ডি এল রায় যেমন।
  • বিপ্লব রহমান | ১০ মার্চ ২০২০ ২৩:১৪91381
  • ভাই বি, 

    বাপ্রে! অনেক খপর রাখেন দেখতেছি। আপ্নেরে ধইন্যা। উডুক ... (লাবিউ ইমো) 

  • দ্যুতি | 162.158.167.183 | ১২ মার্চ ২০২০ ০২:২৩91412
  • নেশ লাগলো
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন