আমি আগ্রহ আরও হারিয়ে ফেললাম কারণ তিনি তখন মরিয়া হয়ে প্রথা ভাঙতে চাচ্ছেন। মৌলবাদের প্রতি প্রচণ্ড আক্রোশ তৈরি হয়েছে, ফলে ধর্মকে নানান ভাবে আঘাত করছেন, আঘাতের অস্ত্র সব সময় সুবিধার না। গাছে মাছে আক্রমণ চলছে তখন। এবং তখনই সম্ভবত দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ধর্মকে আক্রমণ করে এর আগেও অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। তাদের প্রতি মানুষ এই রকম বিরক্ত হয়নি। তাদের কথা পছন্দ হয়নি, হয়নি, চুপ করে থেকেছে। কারণ তাদের বলার ধরন অন্য রকম ছিল, তাতে সম্ভবত সাহিত্যের গুণাগুণ বেশি ছিল। তসলিমা নাসরিন কোনমতেই আহমেদ শরীফের চেয়ে বড় নাস্তিক ছিলেন না, হুমায়ুন আজাদের চেয়ে কঠোর কথা তিনি বলেন নাই তাও হয়ত বলা চলে। এরপরেও তাঁকে এঁদের চেয়ে বেশি গালাগালি শুনতে হয়েছে। এর কারণ এক যা বললাম, বলার ধরন অনেকের পছন্দ হয়নি আর দ্বিতীয়ত তিনি নারী! নারীর মুখে এই সব শুনতে আমরা রাজি না। ... ...
নায়িকা দুধে ধোয়া তুলশী পাতা? না, তা নাই হতে পারে। সমস্যা হচ্ছে কেউই দুধে ধোয়া তুলশী পাতা না। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ, শিরায় শিরায় দুর্নীতি। আপনে সব কিছু ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নায়িকার উপরে। সমাজ নষ্ট করে দিচ্ছে, ছেলেপেলে উচ্ছন্নে যাচ্ছে সব। তরুণ সমাজকে উদ্ধার করতে নায়িকাকে বন্দী কর। নায়িকা বন্দী, এখন আর চিন্তা নাই, সমাজ রক্ষা পেল, দেশ উদ্ধার হয়ে গেল। দেশের আর কোন সমস্যা থাকল না, দুই তিনশ করে মানুষ এখন আর করোনায় মারা যাবে না, কালকে থেকে গণহারে সবাই টিকা পেয়ে যাবে, প্রতিটা হাসপাতালে আইসিউ বসে যাবে, অক্সিজেনের নহর বয়ে যাবে এখন থেকে। আমরা মূর্খ সুর্খ মানুষ, আমরা ভেদের খবর কি অত জানি? সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে, প্রতিটা নিউজ পোর্টাল ব্যস্ত নায়িকার বাসার ভিতরের ভিডিও নিয়ে, শোয়ার আর হাগার ঘরের ভিডিও নিয়ে! এমন সুযোগ বারেবারে আসে? এখন এইটাই খবর, বাকি সব ভুলে যাও। এক জিনিস বেশিদিন মনে রাখতে পারবেন না, তাই সামনে আরও নায়িকা, মডেল ধরা হবে। লকডাউন উপভোগ করতে থাকুন, আপনার বিনোদনের দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ... ...
আব্বাকে নিয়ে একলা থাকার সময়টা আব্বা অসুস্থ হয়ে থাকার পুরো তিন বছর দশ মাস সময়ের মধ্যে অন্যতম সেরা সময় ছিল আমার। বারান্দায় বসায় দিতাম। উনি নানান দিক নির্দেশনা দিতেন আমাকে, ওই গাছের গোরায় একটু পানি দেও, এইখানে একটু পানি দেও, পাখিরা খাবে, গোসল করবে! আমি বলতাম, আল্লার দুনিয়ায় পাখির গোসলের জায়গার অভাব? আমি এইখানে পানি না দিলে গোসল হব না পাখির? উনি বলতেন হব, তবে তাতে তোমার কোন অবদান থাকব না, এই যা! আমি পানি দিতাম। আরেকদিন মাটির নিচে কি জানি একটা মাথা উঁচু করে রয়েছে, ওইটা উনার চোখে পড়ছে। ওইটা কী? আমি কী জানি ওইটা কী? বললাম আমি। কিন্তু কাজ হল না, ওইটা তুলে আনো! হুকুম হয়ে গেছে, তুলে না এনে গতি নাই। তুলে আনলাম, কী জানি একটা আবর্জনা জাতীয় কিছু ছিল। উনি হতাশ হয়ে বললেন, ধুর! আমি ভাবছি অন্য কিছু! লেবু গাছটা মরে গেল কেন এই চিন্তা সম্ভবত মারা যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত করে গেছেন। কেউ না বলে চুরি করে লেবু নিছে বুঝছ? এই জন্য লেবু ধরা বন্ধ হয়ে গেছে! আমি এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিলাম। চুরি করলে লেবু গাছ মাইন্ড করে নাকি? উনি হা হা করে হাসি দিয়ে বললেন, তুমি বুঝবা এগুলা, দেও, পিঠটা একটু চুলকায় দেও! ... ...
পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও’র ব্যানারে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু ও সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব, সাঈদুল হক খন্দকার। যতদূর জানা গেছে রেহনা মরিয়ম নূর একজন নারী শিক্ষকের গল্প, তার জীবন সংগ্রামের গল্প। নারী শিক্ষক চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরি হক বাঁধন। ছবিতে বাঁধন ছাড়াও অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ন, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ অনেকে। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল ও সাউন্ড ডিজাইনার শৈব তালুকদার। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রডাকশন। ... ...
স্কুল খোলা নিয়ে নানান তর্ক চলছে। তর্ক না হওয়াটাই অস্বাভাবিক হত। উন্নত বিশ্বে কোথায় কোথায় স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে বা কোথায় একদিনের জন্যও স্কুল বন্ধ হয়নি তা একেকজন প্রচার করছে। এখানেই গোলটা বাঁধে। আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা ভুলে যায়। আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের ধারনা থাকে না এমন মন্তব্য করার আগে। যারা আমেরিকা ইউরোপের উদাহরণ দিচ্ছে তাদের ধারনাও নাই আমাদের একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতজন ছাত্র পড়ে তা অনেক দেশের জনসংখ্যার সমান! কাজেই তাদের উদাহরণ আমাদের দেখিয়ে লাভ নাই। আমাদের সমস্যা আমাদের সমাধান করতে হবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সমাধানের পথে কেউ নাই। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ নিতে পারি। আমি জানি না ওই দেশের স্কুল কলেজ খোলা কিনা। তারা কীভাবে সমাধান করছে এই সমস্যার তা আমাদের দেখা উচিত। জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থা সব মিলিয়ে ভারতকে এই বিষয়ে অনুসরণ করা যেতে পারে। ওরাই যদি লেজেগোবরে অবস্থায় থাকে তাহলে আমাদের ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। আমাদের দেশে কত জ্ঞানী গুণীজন আছে, তাদের নিয়ে একটা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরীক্ষা বা মুখস্থ বিদ্যা দ্বারা মেধা যাচাই ছাড়া আর কোন কোন উপায়ে ছাত্রদের মেধা যাচাই করা যায়, পড়াশোনার ভিতরে রাখা যায় এটা বের করতে হবে আমাদের। মোট কথা যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দেওয়া যায় না। ... ...
শিল্পী সুলতানের কথা আমার বলার অধিকার আছে? আমি জানি না। উনার কিংবদন্তী কাজ গুলো সম্পর্কে তো খুব অল্প জানি। এদিক সেদিকে কিছু কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা আমাকে করে ছিল। ক্ষেতে খামারে কাজ করছে কিন্তু একেকজনের কী পেশিবহুল শরীর একেকজনের। সুলতান লেখককে ব্যাখ্যা করেছে কেন তার চরিত্ররা এমন দারুণ স্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি বলছেন বাঙালিকে দুর্বল ভাবার কোন সুযোগ নাই। যারা প্রতি বছর ঝড় বন্যার সাথে যুদ্ধ করে ক্ষেতে খামারে কাজ করে টিকে আছে তারা কীভাবে দুর্বল হয়? তিনি এই খেটে খাওয়া মানুষদের ভিতরের শক্তির ছবি এঁকেছেন! তখন প্রশ্ন আসছে উনার আগের ছবিতে কেন এমন চরিত্র আঁকেন নাই? তখন কি তিনি তেমন ভাবতেন না? সুলতান জবাব দিয়েছেন তখনো তিনি তেমনই ভাবতেন। কিন্তু আঁকেন নাই। কেন? কারণ হচ্ছে তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি! মুক্তিযুদ্ধের পরে উনি যা এঁকেছেন সব জায়গায়ই এমন পেশিবহুল মানুষের আনাগোনা। উনার কথা হচ্ছে পরাধীন একটা জাতিকে এমন শক্তসমর্থ করে আঁকলে তা বিশ্বাস যোগ্য হত না। কী দারুণ না! ... ...
"উঠোন পেরিয়ে বিষন্ন বদন যে ভবনটির সামনে এসে সাধনার আপিস বাড়ি। ভয়ে ভয়ে দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম। চোখে সবকিছু ধাঁধা ঠেকল। অন্ধকার যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর সেই আধার সাঁতরে যখন চোখটা একটু সয়ে আসল, দেখি, চৌকোনো এক মস্ত ঘর, চারধারে টেবিলের সারি। তাতে কর্মচারীরা নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন। ওই মস্ত ঘরে সাকুল্যে দুটি ৪০ পাওয়ারের বাতি। বাইরের আলো থেকে ঘরে ঢুকলে হঠাৎ কিছু চোখে পড়বে না। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিমে তথা ফতুয়াধারী লোকগুলোকে কেন যেন জ্যান্ত লাশ মনে হচ্ছিল - নড়াচড়া নেই, কথা নেই, ঘাড় খুঁজে কী সব আঁকিবুকি কষছে! আর একেবারে সামনে নড়বড়ে টেবিলে নিমে গায়ে যিনি বসে, বিজ্ঞাপনে তার চেহারা এত সহস্র বার দেখেছি যে তাকে চিনতে কষ্ট হলো না মোটে।" ... ...
এখন কি হেফাজতের নেতারা খুশি। কারণ তারা তীব্র আন্দোলন তৈরি করেছে। মানুষ মরেছে, পুরো দুনিয়া দেখেছে মোদি আমাদের দেশে কত অজনপ্রিয়, মানুষ কত তীব্র ভাবে মোদির সফর ত্যাগ করেছে।পুলিসের ভূমিকায় তাদের এই কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন? এর চেয়ে বড় প্রচার তো আর সম্ভব না, তাই না? পুলিস যদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকত, আপনারাও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে তো এমন দৃশ্য পেত না কেউ, তাই না? হেফাজত বা আন্দোলনকারীরা যা চেয়েছে তা পেয়েছে, এখন কী হবে? যে পরিবার গুলো তাদের প্রিয়জন হারিয়েছে তাদেরকে কি হেফাজতের নেতারা গিয়ে বলবে আপনার সন্তানের, আপনার প্রিয়জনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের আন্দোলন পুরো দুনিয়ার নজরে এসেছে? এবং এতে করে ওই পরিবারের সবার মনে শান্তি নেমে আসবে? সাথে এই নেতারা কি এটাও বলবে যে এই আন্দোলন আসলে কোন উপকারে আসে নাই। যে ঘটনার জন্য এই প্রতিবাদ তার উপরে খুব একটা প্রভাব পড়বে না! বরং এই দেশে কত উগ্র ধর্মালম্বীরা বাস করে এইটা প্রমাণ করে মোদি আরও বেশি করে সাম্প্রদায়িকতার প্রচার ও প্রসার করে যাবে! এমন কী এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ফলাফলেও পার্থক্য তৈরি হতে পারে! এই খবরে নিশ্চয়ই নিহতের আত্মা শান্তি পাবে? ... ...
পাকিস্তানীরা যাওয়ার আগে আক্ষরিক অর্থেই সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছিল। একটা জাতি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করছে, এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কত বড় অর্জন তা আমাদের বুঝা উচিত। কত শঙ্কা, কত বাধাবিপত্তি পারি দিতে হয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে, ভারত নিয়ে নিবে, পাকিস্তানের হাত থেকে ভরতের খপ্পরে পড়ল বাঙালি, এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না, ঋণের তলেই অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাবে, এরা খেলাধুলা পারে না, দুর্বল জাতি, অপুষ্টিতেই বেশি ভুগে এরা, বন্যায় শেষ করে দিবে এদের, এত জনসংখ্যা এদের যে এর চাপেই শেষ হয়ে যাবে এমন হাজারো কথা বলা হয়েছে আমাদের নিয়ে। পঞ্চাশ বছর, কী অপূর্ব একটা মুহূর্ত! আমরা আমাদের পরিচয় দিতে পারি এখন। কত কমতি আছে তার হিসাব না হয় আজকে আর নাই নিলাম। কোথা থেকে কোথায় আসছি তার দিকে কি নজর দিব না আমরা? ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মত উত্থান না আমাদের? যুদ্ধ পরবর্তীতে আমাদের কী ছিল? কিচ্ছু না, একেবারে খাটি বাংলায় বললে বলতে হবে যে আমাদের কিচ্ছু ছিল না, সোজা কিচ্ছু ছিল না। অর্থনীতি বলতে কিছু ছিল না। আজকে আমরা কই? আমাদের অর্জন গুলা আমরা আজকে গর্ব করে বলব না? হানাহানি, দলাদলি তো করছিই প্রতিনিয়ত, আজকেও কেন আমরা তাই করব? আজকে তো গর্বের দিন। বেঁচে থাকলে আবার হীরক জয়ন্তী করবেন, প্লাটিনাম জয়ন্তী করবেন। আজকে সুবর্ণ জয়ন্তী পেয়েছি আমরা আমাদের মাঝে, তা আমরা উদযাপন করব না? ... ...
যে তুমি ফোটাও ও ফুল ঘ্রাণে ভরো ব্যাপক সবুজ জমিতে বিছিয়ে দাও ধান শিম খিরোই তরমুজ কুমড়োর সুস্বাদ, যে তুমি ফলাও শাখে ফজলি আম কামরাঙা পেয়ারা, বাতাসে দোলায় গুচ্ছগুচ্ছ জাম, যে তুমি বহাও নদী, পাললিক নদীর ভেতরে লালনপালন করো ইলিশ বোয়াল স্তরেস্তরে, যে তুমি উঠাও চাঁদ মেঘ ছিঁড়ে নীলাকাশ জুড়ে বাজাও শ্রাবণ রাত্রি নর্তকীর অজস্র নূপুরে , যে তুমি পাখির ডাকে জেগে ওঠো, এবং নিশ্চুপে বলিকার সারা দেহ ভরে দাও তিলেতিলে রূপে আর কণকচাঁপার গন্ধে আর ভাটিয়ালি গানে, যে তুমি বইয়ে দাও মধুদুগ্ধ গাভির ওলানে খড় আর ঘাস থেকে, যে তুমি ফোটাও মাধবী আর অজস্র পুত্রকে দাও ছন্দ- করে তোলো কবি, যে তুমি ফোটাও ফুল বনে বনে গন্ধভরপুর- সে তুমি কেমন করে, বাঙলা, সে তুমি কেমন করে দিকে দিকে জন্ম দিচ্ছ পালেপালে শুয়োর কুকুর? ... ...