[ অনেক জায়গায়তেই দেখি ‘কবিতা কেন লিখি?’-র ওপর কাঁড়ি কাঁড়ি পাতা খরচ। যদি এটাই কাউন্টার হয়ে যায়? যদি বলা হয় ‘কেন পড়ি?’ সত্যিই তো, আমি কেন পড়ি কবিতা? ]
এই যে চারপাশে তাপ্পি-মারা জীবন – ওই যে লোকটা, প্রচুর তেল মেরেও প্রোমোশনের গুড়টা পিঁপড়ে চেটে নিল বলে, মুখ গোঁজ করে আছে অফিসে; ওই যে ছেলেটা, টিউশনির টাকায় মাসে একদিন মুরগির মুরোদ হয় না বলে, প্রেমিকা বলেছে ‘ধুত্তোর’; ওই যে বুড়োটা, উদাস ব্যালকনিতে অপেক্ষা করছে ছেলের বউ কখন সিরিয়াল-শেষে এক কাপ চা বানিয়ে দেবে; ওই যে বউটা, লেডিস স্পেশালে ঝুলত ... ...
সিন ওয়ান
হিন্দি সিনেমা থেকে আমরা জানতে পারি, বম্বে হল বৃষ্টি আর আচমকা হাওয়ার শহর। নিরালা বাসস্টপে হঠাৎই ভেঙে যায় নায়িকার ছাতা। ধাঁধিয়ে চলে যায় সাঁৎ সাঁৎ হেডলাইটেরা। জুম ইন হতে চায় নির্মোক আনাচকানাচ। এরপর দু রকম প্যাঁচ। ‘জানোয়ার’ এলে বাড়তে থাকে অডিয়েন্সের আঁচ। ‘দুষ্টু’ এলে কাট টু সো-কিউট নাচ। তারপর এন্ট্রি নায়িকার বাপি। খুলতে থাকে নিগ্রহের ঝাঁপি। দু-তিনটে খুন বা খারাপি। বৃষ্টি ও বম্বেকে তাই এ রূপেই মাপি।
সিন টু
আন্ধেরি ইস্টে তেলি গল্লি। পনেরো ইঞ্চির একটা দেয়াল। ওটা একজ ... ...
ভাস্কর বলত, তার মাথায় একটা প্রজাপতি ছিল। কিছু একটা লেখার চেষ্টা করেছিলাম সেটা নিয়ে কয়েক বছর আগে। কি মনে করে উদোমাদা সেই লেখা ছেপেও ছিল 'যত্নঘর' (যেটার নতুন নাম রেখেছি 'প্রত্নঘর')। কথাটা সেটা নয়; কথাটা হল প্রজাপতি হোক বা শুয়োর, প্রত্যেকের মাথায় একটা করে জরায়ু থাকে। আর সেই জরায়ুতে থাকে একটা ভাবনা। সব ভাবনা ফাটে না। কিন্তু ফেটেও আটকে গেলে? কনসটিপেশন জানেন? কিম্বা, সিজারিয়ান ডেলিভারি? অথবা, রাইটার্স’ ডেজার্ট? এগুলোর কোনওটাই টের না থাকলে থেমে যান, আর এগিয়ে লাভ নেই।
অনেকেই নিশ্চই ... ...
॥
সমকামে বিধ্বস্ত এক অসম্পূর্ণ পুরুষ, যাকে আশিরনখ ঘেন্না করছে তার নিজেরই বোন। সর্বাঙ্গ সুতোহীন হয়েও মুখের ব্যান্ডেজ খোলে না এক বার-নারী, দাঙ্গা তাকে চির-দগদগে করে চলে গেছে। তথাকথিত ভদ্রপল্লীর দুই মা-মেয়ে, গোপনে শরীর বেচাই যাদের পেশা; নেশার্ত এক রাতে মা বিপরীতারুঢ় হয় লম্পট বেরোজগার ছেলের বিছানায়। এক গল্পের কথক নেহাৎই বিছানায় হামা-টানা এক শিশু, যার মা প্রতি হাটবারে দাঁড়ায় খদ্দের খুঁজতে; অকেজো বুড়ো বাবা ভাড়া করে তাকে আর মাঝরাতে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায় তার বদরাগী ছেলে; সায়া খুলে মা দ্যাখা ... ...
শিবাংগী বলেছিল, এ শহরে ডিসেম্বরেও ফ্যান চালাতে হয়। হাঁ করেছিল চিন্টু। হাঁ-করা তার পুরনো অভ্যেস। হাভাতে এক শহরতলীর হাঘরে, উঠে এসেছে ধ্যাবড়া এক চাকরি নিয়ে। চাকরিটা তার ‘ধ্যাবড়া’ মনে হয়, প্রায়ই যখন আগাগোড়া বাংলা মিডিয়মকে অনুবাদ আর উচ্চারণ গার্গল করে টিম কনফারেন্সে স্লাইড-শো’র আঁচে ট্যাঁস ভাষায় ডেমো দিতে হয়। এই ‘ট্যাঁস’-টাও এত হুহু বদলে চলেছে, সেটাও সে সাঁতরে ধরার চেষ্টা করে। প্রাথমিক মোলাকাতে লোকজন এমন ভাব দ্যাখায়, যেন ‘হাই বাডি’ বলে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। সঙ্গে ‘হট’, ‘খিউল’ (ইয়ে, কুল), ‘ওয়াও’-এর গুঁ ... ...
বুকের বাঁ দিকে একটা মাছ তড়পায়। মাঝে-মাঝেই। তড়পানি থামাতে বেরিয়ে পড়া এদিক-ওদিক। কখনও কখনও ঠিকও থাকে না। সেটাই হল এবারও। হাওড়া থেকে রাতের ট্রেনে। সাতসকালে আদ্রা। কোথায় যাব, জানি না। ব্যাগ পিঠে হাঁটছি। দূরে জয়চণ্ডী পাহাড়। শেষ মাঘের নরম কুয়াশা। শান্ত রাস্তা। দু পাশের বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠ বড় ঝিল চিরে চলে গেছে সোজা। ডান দিকটা পূব। জয়চণ্ডীগড় স্টেশন। কুসুম রঙের জামায় ঈশ্বর উঠছেন। কাঁধে বাপির আলতো টোকা। ইশারায় দেখি, হাইটেনশন লাইনের ওপর আশ্চর্য নীল পাখিটা। কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। নিজের মনে দেখছে নিজের সকা ... ...
নেহাতই ছাপোষা। বউ-বাচ্চা নিয়ে জেরবার। ঘাউরা-মার্কা চোখমুখ। ভুরুটা প্রায়সময়ই কুঁচকে। তেমন কোনও প্রতিভা নেই, তেমন কোনও দক্ষতা নেই যে, সংসারটা হেসেখেলে চালাবে। কিস্যু কি নেই? একেবারেই? আছে! আখাম্বা একটা পুরুষাঙ্গ। যেটা উচ্ছ্রিত হলে লোকটা পুরো যন্ত্র বনে যায়। শুধু সেটাকেই চালনা ছাড়া অন্য কোনও কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। হ্যাঁ, এরকমটাই তো দরকার ঝাঁঝালো পুরুষালি পর্নো বানাতে। আর হলও তাই। পরিত্যক্ত গ্যারেজে, পুলসাইডে, বাইকে ঠেস দিয়ে, ঝলসানো আলোর নিচে রগরগে সেট বানিয়ে তৈরি হতে থাকল গোছা গোছা থকথকে কামার্ত ... ...
টিমের সঙ্গে গতকাল কথা হয়ে গেছিল। ওরা বলে দিয়েছিল, এখানেই আজ এসে পৌঁছবে। দশটা নাগাদ অনেকটা নিশ্চিন্তে আমরা হাঁটতে বেরোই। ক্ষেত পেরিয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে পাহাড়ি হরিয়ালির ভেতর দিয়ে এলোমেলো চলতে চলতে এসে পড়ি পিণ্ডারের গায়ে একটা তেকোনা দ্বীপ-মতো জায়গায়। বাংলো টাইপের কন্সট্রাকশন উঠছে। জনাদুই মিস্ত্রি পাথর ভাঙছে। জানতে পারি, নতুন একটা সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে। অনেকটা জমি জুড়ে, বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হাসপাতাল তো হচ্ছে, ওষুধ-ডাক্তার? মিস্ত্রিদের, দেখলাম, সে বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। ঢাল বরাবর এগোতে থাকি। প্রচুর ছাগল নিয়ে ত ... ...
এবারে ধরেছি ঢালু। মাঝেমধ্যে অল্প চড়াই। হালকা গাছগাছালি আর প্রচুর পাখি। বেশিরভাগেরই নাম জানি না। দেখলাম আকাশে পাক খাচ্ছে খানদুই হিমালয়ান ঈগল। ক্যাঁক্যাঁ করে মাত করছে ঝাঁক ঝাঁক টিয়া। সবুজ আর কমলা কাঠঠোকরা। উসকোখুসকো ঝুঁটিয়ালা সিপাহি বুলবুল। হলুদ ঠোঁটের ময়না। লম্বা লেজওলা ট্রিপাই, ম্যাগপাই। অসংখ্য খুদে পাখির দল নালিশে আর উস্তমখুস্তমে ভরিয়ে তুলেছে ঝোপঝাড়। কিছুটা দূর থেকে আমাদের মাপছে কালোমুখের হনুমান বাহিনী। একেকটার মোটা আর বাঁকা ল্যাজ দেখেই ‘রামায়ণ’-এর ওপর বিশ্বাস বেড়ে যায়। দুয়েকটা ফটো তোলার পর মনে ... ...
ফরিদা খানুম যতই বলুন ‘আজ যানে কি জিদ না করো...’ – একবার বেরিয়ে পড়লে, অন্তত এইরকম রাস্তায়, যেকোনও দিকে এগোতেই হয়। সকালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, বাকিরা এগিয়ে যাক বলওন্তজির সঙ্গে – চন্দ্রানীর দেখভাল করতে আমি থেকে যাব ধাকুরিতেই। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। বাকিদের ফিরে আসতে এখনও সাত-আটদিন লাগবে। ততদিন বাঘেশ্বর ফিরে আমরা অন্য কিছু জায়গা ট্রাই করতে পারি। টুকরো কথার পরামর্শে, রুটি-তরকারি খেয়ে ও বেঁধে, একে একে সকলে যখন পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নিচের জঙ্গলের রাস্তায় মুছে গ্যালো – ধাকুরির খোলা মাঠ আর অপার আকাশের মাঝে ... ...