এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পোড়ামাংস, কুকুর, হাতঘড়ি, অন্যান্য

    উদয়ন ঘোষচৌধুরি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ আগস্ট ২০১৫ | ৯৪৫ বার পঠিত
  • [ অনেক জায়গায়তেই দেখি ‘কবিতা কেন লিখি?’-র ওপর কাঁড়ি কাঁড়ি পাতা খরচ। যদি এটাই কাউন্টার হয়ে যায়? যদি বলা হয় ‘কেন পড়ি?’ সত্যিই তো, আমি কেন পড়ি কবিতা? ]

    এই যে চারপাশে তাপ্পি-মারা জীবন – ওই যে লোকটা, প্রচুর তেল মেরেও প্রোমোশনের গুড়টা পিঁপড়ে চেটে নিল বলে, মুখ গোঁজ করে আছে অফিসে; ওই যে ছেলেটা, টিউশনির টাকায় মাসে একদিন মুরগির মুরোদ হয় না বলে, প্রেমিকা বলেছে ‘ধুত্তোর’; ওই যে বুড়োটা, উদাস ব্যালকনিতে অপেক্ষা করছে ছেলের বউ কখন সিরিয়াল-শেষে এক কাপ চা বানিয়ে দেবে; ওই যে বউটা, লেডিস স্পেশালে ঝুলতে ঝুলতে চার্চগেট যায়, সন্ধে উতরোলে ধুঁকতে ধুঁকতে ফিরে বানায় রাত্তিরের রুটি ও বিছানা; ওই আরেকটা ছেলে, পঞ্চাশ টাকা বেশি পাবে বলে সুপারভাইজারের পেছুপেছু ঘোরে; আর এই যে আমি, সর্বঅক্ষমতা-সমন্বিত চার হাত-পায়ের মানুষ, নানা জায়গা থেকে নিজেকে ছিঁড়ে, সারা দিন (বা রাত) পরে হাঁ-করা একটা বিল্ডিঙে ঢুকি, নির্দিষ্ট একটা নাম্বার মুখস্থ করে বুঝতে পারি, এই চার দেয়াল ও দরজাটি আমার, যার ভেতরে একটা হলুদ বাল্ব দমবন্ধ তাকিয়ে আছে, দিনান্তের খাবার নিয়ে বসছি তার মুখোমুখি, এতটাই বিরক্ত যে চিবোতেও জুত পাচ্ছি না – আর কেউ যেন এসে থালার পাশে লিখে যাচ্ছে,

    যে ছেলেটা দিন আনে
    সে কি করে দিন খেয়ে ফেলে?

    একটা আস্ত দিন তার কাছে
    হেরে গিয়ে অন্ধকার হয়েছে তাহলে?
    (তনুজ নিয়োগী)

    দিন আনি, দিন খাই – এরকম কতজনই তো বলেন। দিন কি সত্যিই খেয়ে ফ্যালা যায়? হ্যাঁ, যায়। দিন তো আমারই বেঁচে থাকার অংশ। আর সেটা বিক্রি করেই তো আমার আজকের ভাত ও তরকারি। আজকের দিনটা আমি কেন বাঁচলাম? কেন নানা জায়গায় লাথি-ঝ্যাঁটা-গালমন্দ মেখে ঘুরলাম? উত্তর খুব সহজ – খাওয়ার জন্যে। ওপরে রেখে যাওয়া লাইনগুলোতে দেখি, দিন হেরে গেছে ছেলেটার কাছে। গোটা একটা দিন মুখ লুকিয়েছে কালো অন্ধকারে। অন্ধকার হয়ে যাওয়া গতদিন ছেলেটাকে দিচ্ছে আহার্য। বিনিময়ে ছেলেটা হয়ে উঠছে আলোময়। প্রস্তুত হচ্ছে আগামী দিনটাকে খেতে। পাচ্ছে পরবর্তী আরেকটা লড়াইয়ের স্পর্ধা। ‘অন্ধকার’ শব্দটির এত পজিটিভ রং এর আগে কেউ তো বলেনি আমায়!

    এই যে অমোঘ খাওয়া – খেতে বসা – কেমন সেই ছবিটা? কেমন দেখতে এক ক্লান্ত ক্ষুধার্ত?

    আমারই মাংস পুড়ে
    লাল লাল ভাত হয়
    পাগল যেভাবে খায়
    আমার মাংস খাই আমি
    আহা ভাত, প্রিয় ভাত
    তোমাকেই খাব বলে, পুড়ি
    (প্রবীর মণ্ডল)

    আমারই মাংস পুড়ে ভাত? হ্যাঁ, তাইই তো। শ্রম তো আমারই মাংস। মেধা তো আমারই অংশ। সেইসব বিক্রি করেই তো জুটেছে এই আহার্য। চরম খিদের মুহূর্তে যেটুকুই জোটে, তাই অমৃতভোগ। সুস্থতার মূল উপকরণ যে খাদ্য, তা না জুটলে আমি তো পাগল হবই। আর যখন জোটে? খুশিতেও কি পাগল হয়ে যাই না? আর পাগল যখন খায়, তখন তার খেয়াল নেই দিগ্বিদিক। সে লাল লাল ভাত খাচ্ছে। ভাত ‘লাল’ কেন? কারণ, ওটাই আমার পোড়া মাংসের রং। সহজ ভাবে, কিছু গ্রাম্য চালের ভাত এমন রঙের হয়। কিন্তু, আমি যদি তা না জানি? অসুবিধে নেই। আমি কি দেখিনি, ফুটপাথের ওপর একটা নোংরা লোক, হোটেলের ফেলে দেওয়া ঝোল আর এঁটো ভাত পেয়েছে একটা প্লাস্টিকে, হামলে পড়েছে সে ওই রগরগে লালের ওপর, সাপটে নিয়ে খাচ্ছে? অথবা, এই ছবিটা,

    যখন ভাতের জন্যে এতো লড়াই
    দুমুঠো ভাত পেলে গপগপ খাই।

    কেউ কেউ সারমেয় ভাবে।
    (প্রবীর মণ্ডল)

    ক্ষুধার্তের খাওয়ার ভঙ্গিতে এসে গ্যালো একটি কুকুরের মুদ্রা। কুকুর যেমন খিদের সময় খাদ্য ছাড়া আর কিছুই দেখতে চায় না, আমিও তেমনই। শেষ লাইনের আগে এখানে যে স্পেসটা বসানো হল, মনে হল, খেতে খেতে কুকুরটা একবার যেন ঘাড় তুলে দেখে নিল আশেপাশে। যেমন আমিও ক্রমশ দেখে নিতে শিখি – পরীক্ষার হলে, ইন্টারভিউ টেবিলে, কফিশপের ডেটিঙে – কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই তো? আচ্ছা, ওই স্পেসটা কি কাউকে চুপ থাকতে বলে? যারা অক্লেশে নিয়মিত খেতে পায়, তাদের কি বলে, চুপ করে দ্যাখো, খাওয়ার ছবিটা ঠিক কিরকম? না কি, কবি নিজেই একটু চুপ থাকলেন, একটা অবজ্ঞার দীর্ঘশ্বাস নিলেন? অথবা, স্পেসটা রেখে বোঝানো হল, মানুষ এভাবেই খায়, এই শূন্যস্থানে – যে জায়গার কোনও ক্যাটালগ হয় না, ঠিক ওখানেই খায় মানুষ – নিজেরই শ্রম পুড়িয়ে। কি কি ভাবে পোড়ায় সে?

    গরম ভাতের স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে পড়ে ছেলে
    মা গেছে তার নুন আনতে পান্তাভাতটি ফেলে।
    ...
    তোরা কে জামাই দেখবি জামাই আয়
    সোমত্ত সব মেয়েগুলো ধর্মতলায় যায়
    (তনুজ নিয়োগী)

    নিজের খাওয়ার পাশাপাশি এসে যায় পরিবারের প্রতিপালন। সন্তানের খিদে। না-চাইতেও চলে আসে যে সন্তান, নিজে অভুক্ত থেকেও খাওয়াতে হয় তাকে। এই লাইনগুলো আমাকে বলছে এক সহজ ও আদি বাস্তব – পেট চালাতে মা যখন নিজেকে বিক্রি করতে যায়। আর অদ্ভুত স্যাটায়ার করে এখানে বসানো হল ‘ধর্মতলা’-র নাম, যা প্রতিফলিত করল আমারই অবস্থানকে। অরুনেশ ঘোষের ‘যাত্রা’ অথবা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অন্নপূর্ণা’ গল্পের মা যেন দাঁড়িয়ে এই ঢাকঢাক গুড়গুড় ধর্মতলার হাটে। অরুনেশ তার ডাইরিতে লিখছেন, “যৌনতার কাছে সব সম্পর্কই বোধহয় ফিকে হয়ে যায়, বিশেষত বোধহীন মানুষের যৌনতা।” মানুষ মূলত কোথায় বোধহীন? কোন কোন খানে? আদি ও অকৃত্রিমতায়, খিদের কাছে – যখনও যৌনচেতনা জাগেনি, তখন থেকেই। এখানেই মা বিক্রি হয়ে যায়। সন্তান বিক্রি হয়ে যায়। শুধুই কি শরীর? প্রতিনিয়ত নিজের চেতনা, বোধ, যাপন, সময়, সম্পর্ক – আরও আরও অনেক কিছু বিক্রি করি না কি? মনে হয়, দারিদ্র্যই জন্ম দ্যায় প্রকৃত নীতিহীনতার, মূল্যায়ন অবক্ষয়ের – দিদির দয়িতকে আত্মসাৎ করে ছোটবোন (‘মেঘে ঢাকা তারা’ / ঋত্বিক ঘটক); তরুণী মেয়েকে টাকা ধার করতে পাঠায় মা আর বেড়াতে-আসা আত্মীয়ের সামনে আপ্রাণ লুকোয় (‘কলকাতা ’৭১’ / মৃণাল সেন); বন্ধ মিলের অসহায় শ্রমিক আফশোস করে, যদি তার বউটা কারও কামনা কাড়তে পারত, হয়ত কটা রুটি জুটে যেত (‘সিটি অফ গোল্ড’ / মহেশ মঞ্জরেকর); অদৃষ্টের টাইর‍্যানি বাবাকে বাধ্য করায় পঙ্গু মেয়ের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে (‘কাঞ্জিভরম’ / প্রিয়দর্শন); বা, সাদামাটা মধ্যবয়স্কা সংসারী বেছে নিতে চায় খুনি মালিকের অবৈধ প্রেম (‘থ্রি মাঙ্কিস’ / নুরি বিলজে চেলান)। অস্কার ওয়াইল্ড যেমন বলেন, “There is no such mystery so great as misery” – খিদের বা অভাবের আসল রূপ কতটা ভয়ঙ্কর ও নির্মম হতে পারে, তা হয়ত আমরা কেউই এখনও জানি না। আমাদের যাবতীয় সমাজ, শিল্প, বিপণন, বুদ্ধি, চাতুর্য, আইন, প্রেম – সব কিছুই উলঙ্গ করে দ্যায় এই সারমেয় ক্ষুৎসত্তা,

    দামোদরের হাঁড়িকুঁড়ি ধর্মে রাখে মতি
    হাটের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সন্তান-সন্ততি।
    (তনুজ নিয়োগী)

    আর এই খেতে খেতে, খাওয়াতে খাওয়াতে, প্রতিপল মরতে মরতে – যখন সত্যিই ছেড়ে যায় প্রিয়জন? তখন কি বলে আমার সুবিধাবাদী মন?

    আমার ভাতের জন্যে পুড়ে গেলে তুমি,
    এখনও ভাতের গন্ধে এত লালা আসে!
    (অঞ্জন চক্রবর্তী)

    এতক্ষন দেখছিলাম, নিজের মাংস পোড়ানোর গল্প। কিন্তু আমার কোষকে পুষ্টি দেওয়ার জন্যে আমার পিতার মাংসও তো পুড়েছে। বাবাকে তো কতভাবে দেখেছি, অভাবকে আনন্দের মোড়কে মুছিয়ে দিতে – নিশ্চিত ধসের সামনে দাঁড়িয়েও ছেলেকে খুশি রাখতে সে ঢুকে পড়ে রইস রেস্তোরাঁয়, পরোয়া করে না পকেটের (‘বাইসাইকেল থিফ’ / ভিত্তোরিও দে সিকা); অথবা, একবাটি জলে পাউরুটি ডুবিয়ে খেতে খেতে ছেলের সঙ্গে দিব্যি চালিয়ে যায় সুস্বাদু মাংসের গপ্প (‘চ্যাপলিন’ / অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়)। এখন আমি এই যে খেতে বসেছি, থালায় ছড়িয়ে আছে যে শস্য – সেখানেও কি লেগে নেই জন্মদাতার অস্থি-মজ্জা-মেদ? আর সেই গ্রাস গলা দিয়ে নামাতে লালা ঝরছে আমার। কি সাংঘাতিক বাস্তব, তাই না? যতই শোকাতুর হই, যত প্রিয়জনই হারিয়ে যাক না কেন – খিদেই আবার আমাকে সব ভুলিয়ে দ্যায়। খিদেই কি তাহলে আসল সান্ত্বনা? আচ্ছা, এখানে ধরা যাক, কবি নয় – শুধুই আমআদমি। কি বলছে সে পিতৃবিয়োগের পর?

    বাপের থেকে টাকা বড় – মানতেই হবে! আগুন নিবতে না
    নিবতেই আমাকে বেরোতে হয় সম্পদ সন্ধান ও নবীকরণে।
    (অঞ্জন চক্রবর্তী)

    সম্পদ সন্ধান থেমে যায় না। যেতে পারে না। কারণ, আমাকে যোগাতে হবে নিজের ও পরিবারের আহার। যেভাবে আমার পিতা পুষ্ট করেছেন আমাকে, সেই একইভাবে খাওয়াতে হবে আমার সন্তানকে। আমার মৃত্যুর পর সেও আর দেরি করবে না নবীকরণে। কারণ, দেরি করলে চলে না। দেরি করলে পিছিয়ে যেতে হয়। পিছিয়ে যাওয়াটা লজ্জা। সামাজিক ও পারিবারিক – দুভাবেই। তাই, যেমন করেই হোক, হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে চলি আমি। বাঁচতে থাকার এই বাস্তবতায় একটা হেঁচকি কি উঠে আসে? হেঁচকি ও কান্না সামলে আবার সেই লোকটারই চলমানতা,

    দেখি বেশ দিন কেটে যায়
    কেটে যায়, রক্ত কই?
    তোমাকে ভুলতে হবে
    একথা স্বীকার্যই।
    (অঞ্জন চক্রবর্তী)

    আচ্ছা, আমি যখন ছোট ছিলাম? মনে হত, কবে বড় হব! বাবার মতো বড়! এই ‘বড়’ কনসেপ্টটা একটি শিশুর কাছে বাবাকে দেখেই জন্মায়। দেয়ালে টাঙানো বাবার জামা, আলমারির নিচে রাখা জুতো, ছাইগর্ভের সিগারেট – এসবই খুব লোভনীয় লাগে। তার কাছে এসবই এক পৃথিবী।

    মৃত্যুর পর আমার হাতঘড়ি খুলে নেওয়া হবে
    কেননা মৃত্যু হলেও আমার হাতঘড়ি থেমে যাবে না
    ...
    ঘোড়া আর কচ্ছপের মতো আচরণ করে ঘড়িটা
    টিটুর মজা হবে
    (অতনু ভট্টাচার্য)

    আন্দাজ করি, ‘টিটু’ এখানে সন্তানের নাম। বাবার ঘড়ির দিকে তার খুব লোভ, যেমন ছিল আমারও। বাবা এখানে বলে যাচ্ছে, তার অনুপস্থিতিতে ‘টিটু’কে হাতঘড়িটা দিতে। বাবা জানে, কেউ না থাকলেও সময় কখনও থামে না। প্রথম দু’লাইনে এখানে সেই অমোঘ উচ্চারণ। তারপরই বলা হচ্ছে, ঘড়ির অদ্ভুত আচরণের কথা। দুই বিপরীতধর্মী প্রাণীর তুলনা রাখা হল একইসঙ্গে। সত্যিই তো, ঘড়ি কি নিজের নিয়মে চলে? সে তো শুধুই যন্ত্র। আমারই পুতুল। তাই সে কখনও ধাবমান, কখনও মন্থর – মালিকের মর্জিমাফিক। এরপর “টিটুর মজা হবে।” পিতার মৃত্যুতে সে কেন আনন্দ পাবে? এখানে কি বাবা নিজেই একটু মুখ টিপে হাসল? কেননা, বাবা জানে, এবারই শুরু হবে সন্তানের আসল ক্যারিশমা। এবার সে আসল পৃথিবীর মুখোমুখি। সময়কে যখনই যন্ত্রে বেঁধে দেওয়া হল, মানুষ শুরু করল যন্ত্রের দাসত্ব, ভুলে গ্যালো স্বাভাবিক রং রস রূপ – তখন থেকেই আরম্ভ ‘বড়’ হওয়ার নামে আসলে ছোট হতে থাকা। বাবা তা জেনে গেছে। আর ‘টিটু’ যতদিনে জানবে – তখন?

    অভিভাবকহীন হওয়ার মজা
    টের পাচ্ছি, স্বাধীন, ধেই ধেই,
    বিস্মরণকারণবারি ঢালি
    তোমার, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তোমার খুলিতেই!
    (অঞ্জন চক্রবর্তী)

    রাগ কি হত না বাবার ওপর? ছোটবেলায়? খুবই হত। নানা আদেশ উপদেশ নির্দেশের ঠ্যালায় ওষ্ঠাগত। কিন্তু এখন আমি স্বাধীন। এই স্বাধীনতার কষ্ট বোঝাতে বসানো হল “মজা টের পাচ্ছি”। বিস্মৃতির মদ ঢেলে নিতে হচ্ছে পিতারই খুলিতে। এই খুলি কোথায় পাবো? নিশ্চিত, শ্মশানে। ওই চিতার পাশ থেকেই শুরু আমার স্বাধীন ধেই ধেই – যে স্বাধীনতার মানে খোলা আকাশ, মানে ছাদ নেই, আবরণ আচ্ছাদন বর্ম নেই – এবার পৃথিবীর মুখোমুখি আমি একা। এই একাকীত্ব মুছতে আসছে আমার সন্তান,

    ... ভালবাসা জমা হলে যে সন্তান হয়।
    হা ঈশ্বর দুটো ভাত চাইব না, শুধু
    আমারই মতো সোজা আয়ুরেখা দিও।
    (প্রবীর মণ্ডল)

    চিরাচরিত দুধভাতের কথা নয়, আমার প্রার্থনা, “আমারই মতো সোজা আয়ুরেখা”। কারণ, বোধ হয়, মূল বিশ্বাসে, আয়ুরেখা সটান থাকলে মানুষ জুটিয়ে নিতে পারে আহার। এর থেকে বেশি আর কি চাই? ওই যে লোকটা, ওই যে বউটা, ছেলেটা, বুড়োটা – ওদের সকলের জ্যালজ্যালে জীবনে ওরা আর কি চায়? আমিও তার বেশি কিছুই চাই না। আমি কবিতা বুঝি না। কবিতার গোষ্ঠী-আন্দোলন-দশক – এসব কিছুই বুঝি না। আমি বুঝি, নিরন্নের গ্রাসে লেগে থাকে যে চিরন্তন তৃপ্তি – ওটাই সত্যি, ওটাই কবিতা। আমার ভাতের গায়ে ওদেরই তৃপ্তির দাগ লেগে থাকে।

    মেনু কার্ড
    • নিরাকৃত ভ্রাম্যমাণ তুমি / অতনু ভট্টাচার্য / অরন্ধন, পুরুলিয়া
    • দগ্ধ পদাবলী / অঞ্জন চক্রবর্তী / অদিতি, উঃ ২৪ পরগণা
    • আহা ভাত প্রিয় ভাত / প্রবীর মণ্ডল / রূপকথা, দঃ ২৪ পরগণা
    • সান্ধ্যশিলালিপি / তনুজ নিয়োগী / কণিকা সাহিত্য, কলকাতা ১৪৬
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৮ আগস্ট ২০১৫ | ৯৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | 125.242.190.6 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৫০67742
  • অনেককাল এমন কবিতা পড়ি না। ধন্যবাদ উদয়ন। বইগুলো জোগাড়ের চেষ্টা করবো।
  • b | 24.139.196.6 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৫ ০৬:২৭67743
  • অসাধারণ। অনেকদিন পরে গুরুতে সাহিত্যবিষয়ক লেখা পড়লাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন