ডাক্তার এবং আমি অনেক কিছু নিয়ে কথা বললাম, বিশেষ করে তার নিজের তখনকার সমস্যাগুলো নিয়ে কথা হল। উজিজি আসার পর যখন তাঁকে বলা হয়েছিল যে তাঁর সব জিনিসপত্র খরচ হয়ে গেছে, আর তিনি এখন গরীব, তাঁর তখনকার হতাশা নিয়েও কথা হল। শেরিফ নামের একটা লোককে রাজদূতমশাই সব জিনিসপত্রের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে ব্যাটা একটা দো-আঁশলা মাতাল দর্জি, এখন তার কাছে মাত্র কুড়িটা কাপড়ের মতন বাকি পরে আছে। ... ...
প্রতি বছরের মতো এবারও বন্যায় ভেসেছে আসাম। দু-সপ্তাহ আগে, রাজ্যের ২৪ টা জেলার ১৪ লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছিল। প্রায় দেড় লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে থাকতে বাধ্য হয়েছে। মৃতের সংখ্যা এখন প্রায় ২০০ তে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সব তো পরিসংখ্যান। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা সবটুকু ভুলে যাব। খুব বড়ো জোর বন্যা ত্রাণে আসামকে দেওয়া অনুদানের কিছু খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। কিছু ছবি মনে থাকে যেখানে শিশুরা বাঁশের তৈরি নৌকা বাইতে বাইতে তাদের বাড়িতে যাচ্ছে। এবং এতো কিছুর পরেও আমরা আগামী বছরের জন্য অপেক্ষা করব। ... ...
ধরা যাক সময়টা একশ বছর আগের। তার চেয়ে বিশ কি ত্রিশ বছর কমিয়েও দেওয়া যেতে পারে। সেই সময় রাঢ় বাংলার প্রান্তিক গ্রাম লাভপুর আকার আয়তনে ছোট হলেও বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। গ্রামের সীমানা বেয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। কাছাকাছি জংশন স্টেশন আমোদপুরের সঙ্গে লাভপুরের যোগাযোগ ছোট লাইনের মাধ্যমে। জংশন থেকে বড় লাইন জুড়েছে বৃহত্তর দুনিয়ায়। ছোট লালরঙের আপিস ঘর শোভিত স্টেশনটাই যেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে লাভপুরের যোগাযোগের সিংহদুয়ার। তারই মাধ্যমে বাইরের আলো-বাতাস অথবা নিত্যনতুন খবরের ঢেউ এসে পৌঁছয় এই পল্লী অঞ্চলে। স্টেশনকে কেন্দ্রে রেখে একদল মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। ... ...
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি দেখেছি। আমি নিজেই বিস্মিত হই, আমাদের গদ্য সাহিত্যের তিন স্তম্ভ, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য দু'জনকে আমি দেখিনি, তারাশঙ্করকে আমি দেখেছি। দেখাটা আশ্চর্য ব্যাপার মনে হয়। ঈশ্বরকে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তাকে? বড় লেখক তাে সৃষ্টিকর্তা। তিনি চারপাশের বাস্তবতা থেকে নানা উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতাে করে একটি জগৎ নির্মাণ করেন। যা দেখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর পৃথিবী নির্মাণ করেন, তার ভিতরে আমাদের না দেখা এক পৃথিবী গড়ে ওঠে। বড় লেখক, বড় শিল্পী তা করেন। বাস্তবতা আর কল্পনা মিলে মিশে যায় সেখানে। সীমাহীন কল্পনাই তাে এই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিসূত্রে নিয়ে গেছে। ... ...
২২ জুলাই কলকাতা প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে এক কলঙ্কের দিন। কলকাতার সাংবাদিকদের এক লজ্জার দিন। যাঁদের তোলা ছবি এক একটি ছবি সহস্র বাক্যের সমান, তাঁরা নাকি ‘সাংবাদিক’ নন। হয়তো আরও কিছু সদস্য বৃষ্টি, ব্যস্ততা ঠেলে ভোট দিতে এলে অন্য রকম হত ফলটা। সে আক্ষেপ বারবার ঠেলা দিচ্ছে চিন্তাকে। কিন্তু কলকাতার শতাধিক সাংবাদিক যে মনে করেন, চিত্রসাংবাদিকরা সাংবাদিক নন, সে কথাটা ছুরির মত বিঁধছে। তবে কি ছোঁয়ান্যাপার ভয়ের মত, ক্রমাগত আমরা অন্যকে ছোট করে নিজেকে শুদ্ধ, ভদ্র, সম্মানযোগ্য রাখার চেষ্টা করতে করতে কাণ্ডজ্ঞানকেও ফিনাইল-জলে ধুয়ে ঝেঁটিয়ে বের করে দিয়েছি? ভুলে যাচ্ছি, যোগ্যকে মর্যাদা দিতে না জানার মত অযোগ্যতা আর কিছুতে নেই? ... ...
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে যুগে যুগে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হল৷আমাদের জন্য রেখে গেল অত্যন্ত স্পষ্ট দুটি শিক্ষা৷ দেখিয়ে দিয়ে গেল, যতবড় ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, জেগে ওঠা জনতার শক্তির কাছে অত্যাচারী শাসক বন্যার জলে খড়কুটো ছাড়া আর কিছু নয়৷ পাশাপাশি এ শিক্ষাও রেখে গেল, অন্যায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা রাষ্ট্রব্যবস্থাটিকে না পাল্টে শুধু শাসকের নাম বদলে জনগণের দুর্দশা ঘোচে না৷ ... ...
কিছু অনুগামী জুটলো। দেওয়াল পত্রিকা করলাম সবাই মিলে। শহরে 'কিশোর জগৎ' পত্রিকায় লিখছি। সাহিত্য সভায় যাচ্ছি। বিশ্বনাথবাবু কবিতা পড়ে খুব উৎসাহ দেন। কবি হতে খুব ইচ্ছে। বাড়ি ফিরি সাড়ে ছয় কিলোমিটার হেঁটে দামোদর উপত্যকা নিগমের ক্যানেল বা খালের বাঁধ ধরে। সাপের ভয় আছে, এবড়োখোবড়ো রাস্তা। ভাদ্র আশ্বিন কার্তিক মাসে আকাশ রাঙিয়ে দিতো, সূর্য ডোবার আগে। আকাশ দেখা নেশা হয়ে গেল। আকাশ দেখার লোভেই সন্ধ্যায় সাপের ভয় উপেক্ষা করে ক্যানেলের বাঁধ দিয়ে একা একা ফিরতাম। দলে মিশলে মেঘ কথা বলে না। ... ...
আলি আকবর বলল, আমি তো কবে থেকেই বলছি খবরের কাগজে চাকরি করে আপনি আপনার প্রতিভার অপচয় করছেন। ছেড়ে দিন ওসব চাকরি, আপনার উচিত সর্বক্ষণের সাহিত্যসেবী হওয়া। নজরুল পেট চাপড়িয়ে বলল, কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কি রাজি হবে? আফজালুল বলল, ঠিক আছে, আমি আপনাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনি যদি সাহিত্যের হোলটাইমার হন, আর আপনার যাবতীয় রচনা আমাকে দেন মোসলেম ভারত-এর জন্যে, আমি তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে একশো টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রমিস! আপনার প্রতিভার তুলনায় এ-টাকাটা কিছুই নয় আমি জানি, কিন্তু আপনার মধ্যপ্রদেশ মনে হয় শান্ত থাকবে এতে। ... ...
“সেইটা বলা খুব মুশকিল, বুঝলি। এটাই হল এই বিষটার মজা। সাঙ্ঘাতিক টক্সিক এই বিষটা কোনও পরীক্ষায় চট করে ধরা পড়ে না। আর কতক্ষণে কাজ করবে সেটা নির্ভর করে কীভাবে আর কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু কয়েক ঘণ্টা আগেও পার্টিতে ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল, তাই অনুমান করা যেতে পারে বেশ খানিকটাই শরীরে ঢুকেছে। তবে বেশ খানিকটা মানে আবার কয়েক গ্রাম ভাবিস না যেন। একটা আলপিনের মাথায় যতটুকু ধরে ততটা রাইসিনই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। ওই পরিমাণ বিষ যদি ইনজেক্ট করা হয়, তবে তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।” ... ...
কুঁদলি/কুঁদরি/তলি, নোনা এইসব ছিল প্রান্তিক মানুষ, কুড়ানিদের খাবার। এখানে ওখানে যারা অস্থায়ী সংসার পেতে থাকত। কয়েকজন বা একা। চট বা মাদুরে জড়ান সংসার পাতত, মাটির ছোট উনুন তুলে কদিন রেঁধে বেড়ে খেত, আবার চলে যেত। হাট থেকে কুড়ানো সবজি ফল, ছাঁট। এখান ওখান থেকে সংগ্রহ করা মেটে আলু, ডুমুর, ওল, নোনা, কচু, হরেক রকম শাক, গুগলি, কাঁকড়া এসব দিয়ে তাদের খাবার তৈরি হতো। ভাতে ভাত সেদ্ধ অথবা সব মিলিয়ে একটা ঝোল। ... ...
বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে সরকারি স্কুলের তুলনামূলক আলোচনা না করে আপাতত পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলের বিভিন্ন স্তরের সমস্যা, তার অন্ধকার ও আলোকিত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করলেই বোঝা যাবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্রটা কেমন। ... ...
২২ জুন, দ্রৌপদী মুর্মুর এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার খবর আসে। তার ঠিক ১০ দিন পরে, মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলা থেকে খবর এলো যে সাহারিয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের ৩৮ বছর বয়সি এক মহিলা, রামপ্যারিকে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ৬ বিঘা জমি দেয়া হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে কাগজপত্রও ছিল। কিন্তু জমি দখল করে বসেছিল আদিবাসী নন এমন সমাজের মানুষেরা। জবরদখল করার পরে তারা আবার সেখানে কৃষিকাজও করছিল। উপরন্তু, রামপ্যারির পরিবারকে হুমকিও দিচ্ছিল ওরা। এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তা আগে, রামপ্যারি ও তাঁর স্বামী অর্জুন, পুলিশকে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানায় এবং তাঁদের কাছে সুরক্ষাও চায়। কিন্তু, কিছুই করা হয়নি। রামপ্যারি যখন মাঠে গিয়ে আপত্তি জানান, তখন তারা সেখানেই ওঁর গায়ে ডিজেল ছিটিয়ে ওঁকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিও-ও পাওয়া যায়। এইবারে আমি ভাবতে বসলাম, যদি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হন তাহলে কি রামপ্যারি ও তাঁর পরিবার ন্যায় বিচার পাবেন? ... ...
সেই কুকিং ইভেন্টের আয়োজন হয়েছিল আমস্টারডাম শহরের একপ্রান্তে, মানে মূল শহর কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে ‘দি কুকফ্যাব্রিক’ (বাই ফার্ম কিচেন) নামে সেই কুকিং ওয়ার্কশপ। আইডিয়া বেশ সিম্পল – সব অংশগ্রহণকারী একসাথে রান্নাবান্না করবে। নিজেদের মধ্যে টিম বানিয়ে কম্পিটিশন করবে, পুরো কোর্স মিল বানিয়ে বা বেশি সময় হাতে না থাকলে এক একটা টিম ডিনার/লাঞ্চ-এর এক একটা পদ বানিয়ে। আমার যেখানে গিয়েছিলাম, কুকফ্যাব্রিক-এর সেই ওয়ার্কশপটা বেশ বড়সড় জায়গা জুড়ে আছে – প্রায় ১২০০ বর্গমিটার। বিখ্যাত ডাচ টিভি শেফ জুলিয়াস জেসপার এই মুহুর্তে জড়িয়ে আছেন এই সংস্থার সঙ্গে। তাঁর তৈরি মেনুই এখানে রান্না করা হয়। মোটমাট ১৮টি কুকিং স্টেশন আছে, আর আছে ৩টি ডেমোনস্ট্রেশন কিচেন। সব মিলিয়ে ২৭০ জন মত পাবলিক এখানে বসে খেতে পারে। আর মর্ডান কিচেনে যা যা থাকে, সবই পর্যাপ্ত সাপ্লাই দেওয়া হয় – তাই ছানা কেটে গেলে বলতে পারবেন না, যে হাতের কাছে নাড়ার কিছু ছিল না বলে এমন হল! ... ...
- যাই বল জেঠিমা, মেয়ের বিয়েতে নিরামিষ হওয়াটা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। মেয়েদের কী দোষ? - দোষ গুণের কথা নয়, এ হল এক একটা পরিবারের রীতি। - তাই বলে, মেয়ের বিয়েতে কোফতা কাটলেট, ফ্রাই, কালিয়া, পাতুরি কিচ্ছু হবে না? সব ছেলেদের হবে? - কেন হবে না? সব হবে। - কী করে হবে? বলছ তো নিরামিষ। - নিরামিষে তুই যা যা বললি – সব হয়। - অসম্ভব। - হয় রে হয়। এঁচোড়ের, মানে গাছ পাঁঠার কালিয়া হয়, ছানার পাতুরি হয়, লাউ পাতায় মশলা পোরা পাতুরি হয়, মুড়িঘণ্টের বদলে মোচার চণকান্ন, চালপটল হয়, কাঁচকলার কোফতা, থোড়ের কোফতা হয়, আর কাটলেট কত নিবি? বিটের কাটলেট, সয়াবিনের কাটলেট, পনির কাটলেট, বাঁধাকপির কাটলেট – সব হয়। মাশরুমের ফ্রাই দারুণ খেতে হয়। তাছাড়া পটলের দোরমা, ওলের ভর্তা – এসবও হয়। আমাদের দেশে নিরামিষ রেসিপি আমিষের থেকে কম কিছু নেই। ... ...
কথোপকথন শুরু হল। কী নিয়ে? সত্যি বলছি, ভুলে গেছি। উঁহু! পরস্পরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছিলাম, যেমন ‘আপনি এখানে কীভাবে এসেছেন?’ ও ‘এতদিন কোথায় ছিলেন? - গোটা পৃথিবীর লোক জানে যে আপনি মৃত।’ হ্যাঁ, এভাবেই কথা শুরু হল: তবে ডাক্তার আমাকে কী বলেছিলেন, আর আমিই বা তাকে কী বলেছিলাম, সেসব সঠিক বলতে পারব না, কারণ আমি তো তার দিকে হাঁ করে তাকিয়েই ছিলাম, যে মানুষটার পাশে এখন মধ্য আফ্রিকায় বসে আছি, তাঁর দারুণ চেহারা ও মুখের প্রতিটা দাগ মুখস্থ করছিলাম। ... ...
নড়াইলে লোহাগড়া সাহাপাড়ায় গত শুক্রবার( ১৫ জুলাই, ২০২২) পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং মন্দিরে হামলা করেছে ধর্মান্ধরা। কারণ? কোন কারণ যদিও লাগে না, এবারও তেমন কোন কারণ নাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ এখন ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে যাচ্ছে। জুম্মার নামাজের পরে হুট করেই তাদের নজরে আসে যে ধর্মের তো প্রচণ্ড অপমান হয়ে গেছে, মান উদ্ধার না করলেই না! তারা মান উদ্ধারে নেমে গেছিল বিকালের মধ্যে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেউ অনুভূতিতে আঘাত করেছে আর সেই আঘাতে কাতর হয়ে এরা গিয়ে নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘরে হামলা করেছে! এবং, তাদের ধারণা এতে ধর্মের যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণ হয়ে গেছে! ... ...
উদয়পুরে কানহাইয়া লাল খুনের ঘটনায় হতবাক গোটা দেশ। হওয়ার কথাই। যে-কোনো হত্যাকাণ্ডই ভয়ংকর, কিন্তু এই ঘটনা শুধু একটা হত্যা নয়। যে পরিকল্পিত ও নৃশংস পদ্ধতিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তা বর্বরতার নমুনা। শুধু তাই নয়, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না। এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিখাদ গোঁড়ামির ফল। কানহাইয়া লালের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নূপুর শর্মাকে (যিনি নবী মোহাম্মদকে অপমান করেছিলেন) সমর্থন করে কথা বলা হয়েছে বলে রিয়াজ আখতারি এবং গৌস মোহাম্মদের রাগ ছিল। ... ...
লেখাটির মাঝে কিছু সত্য আছে। আবার সত্যকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে লেখকের নিজের মর্জিমাফিক বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়নি, দুয়েকটি বিষয় এবং প্রধানত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর (“বরিষ্ঠ সম্পাদক” নন, সত্যের খাতিরে বললে) পিটার দোশীর একটি বা দুটি প্রবন্ধকে হাতিয়ার করা হয়েছে। এর বাইরে অসংখ্য গবেষণাপত্র আছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, ল্যান্সেট, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মান্য জার্নালগুলোতে। এবং এ জার্নালগুলো কর্পোরেটদের টাকায় নিয়ন্ত্রিত হয়না। এসব জার্নালে স্বাধীন গবেষণাপত্র ছাপা কর্পোরেট ফান্ডিংয়ের বদান্যতা ছাড়া। যদি বিজ্ঞানের এই স্বাধীন পরিসর না থাকে তাহলে বলা ভালো – প্রপঞ্চময় এ কর্পোরেট বিশ্বে কেউ স্বাধীন নয়। স্বাধীন হওয়া সম্ভবও নয়, “জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া” ফুটিয়ে না দিলে। এখানে একবার স্মরণ করে নেওয়া ভালো – যখন বিভিন্ন রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত বা সম্ভাবনা থেকে শুধুমাত্র নিজের অনুকূলে বা পক্ষে যায় এরকম উপাত্ত, প্রমাণ বা সম্ভাবনাকেই বাছাই বা নির্বাচন করা হয় তখন যে হেত্বাভাস বা অনুপপত্তি (অর্থাৎ ভ্রান্ত যুক্তি) সংঘটিত হয়, তাকে যুক্তিবিদ্যায় পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই বা ইংরেজি ভাষায় চেরি পিকিং (Cherry picking) বলা হয়। পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজান্তেই হতে পারে। তবে জনবিতর্কে এই ভ্রান্তি একটি বড় সমস্যা। ... ...
যন্ত্রের দরকার কীসের? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার উপলক্ষ্য করেই গৌতমবাবুর বই শুরু হয়েছে। দরকারটা হল মাপজোখের। যা ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান এক পা-ও এগোতে পারে না। প্রাচীনকালে যুক্তি দিয়েই প্রমাণ করার চেষ্টা হত। যার যুক্তি অকাট্য মনে হত তার চিন্তাকেই মেনে নেওয়া হত সত্য বলে। আধুনিক বিজ্ঞান এসে এই ‘মনে হত’-র ব্যাপারটা সরিয়ে হাতেনাতে প্রমাণের ভূমিকা বড় করে তুলে ধরল। কিন্তু তার জন্য চাই সূক্ষ্ম মাপজোখ করার ক্ষমতা। যত গভীর, যত কঠিন প্রশ্ন, তত সূক্ষ্ম সেই প্রশ্নের পরীক্ষার মাপজোখ। তাই দূরবীন এসে যখন আকাশের মাপজোখ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছিল, তখনই আধুনিক বিজ্ঞান তরতর করে এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল। ... ...