কবিগুরুর গল্পগুচ্ছ নয়, এ হল গুরুর গল্পগুচ্ছ। বাংলা সাহিত্যে গুরুর যদি কিছু অবদান থেকে থাকে তো তার এক নম্বরে আসবে গুরুর বৈচিত্র্যময় গদ্যভাষা, যা কখনও ডোবায়, কখনও ভাসায়, কখনও উল্টেপাল্টে দেয়। দুনিয়া যখন কলতলায় পরিণত, চিন্তাহীনতাই যখন প্রকাশভঙ্গী, খেউড়ই যখন ভাষা, তখন একমাত্র নতুন এক পৃথিবীই আপনাকে অন্য আকাশ দেখাতে পারে। তারই এক ঝলক রইল এবার নববর্ষে। এতে গুরুর সমস্ত গল্পকারদের আঁটিয়ে দেওয়া গেছে তা একেবারেই নয়, বরং উল্টোটাই সত্যি, যে হিমশৈলের অপ্রকাশিত অংশ এই গল্পগুচ্ছের চেয়ে বহুগুণ বড়। সেসব সম্ভার নিয়ে আমরা মাঝে মাঝেই প্রকাশ করব আরও কিছু গল্পগুচ্ছের টুকরো। কিন্তু আপাতত এই এলোমেলো বৈশাখে, এইটুকুই। ... ...
আছড়ে পড়ার শব্দে মুখ তুলে তাকায় মনীষা। চিলের ছানা মনে হলো । নাকি পায়রা। রেস্টোরান্টের পুরু কাঁচের ওপাশে উড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে, সড়সড় নেবে গ্যালো। মনীষা কফিতে মন দেয়। কমলেশের দিকে চিনির প্যাকেট এগিয়ে, কফিতে এক চুমুক দিয়ে, শূন্য কাঁচের দিকে তাকায় আরেকবার। কোনো আঁচড়ের দাগ নেই। কফিকাপ নাবিয়ে রেখে স্পষ্ট তাকিয়ে বলে - না , কাকু । এই অনুরোধটা করবেন না । আমি যা সত্যি বলে জানি , তার বাইরে গিয়ে গল্প সাজানো সম্ভব নয় ... ...
পোস্টাল অ্যাড্রেস যাই থাকুক, এ' রাস্তার নাম কিন্তু সদর স্ট্রীট। হা হা। অবাক হচ্ছেন? এই তো' লেখকের কাজ - স্থান কাল পাত্র নিয়ে খেলা করে করে পাঠককে ধন্দে ফেলে দেওয়া। ছোটোবেলা থেকেই কাজটিতে আমি পটু। বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার স্বভাব বরাবরের; তার ওপর মানুষ, পশু, পাখি এমনকি জায়গার নাম বদলে দেওয়ার একটা ফেজও চলেছিল বহুদিন - আমিই এ' গলির নাম দিয়েছিলাম সদর স্ট্রীট।' -এই অবধি ব'লে কমলিকা সামন্ত কফিতে চুমুক ... ...
আমার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো বলে আমি কিচ্ছু ভুলিনা। রবীন্দ্র রচনাবলীর কোন খণ্ডে কথা ও কাহিনী, বাড়ির কোথায় ঝুলঝাড়া, কোন ড্রয়ারে মাংস কাটার ছুরি, আমার সব মনে থাকে। ফ্রিজারের পিছন থেকে এক চান্সে থান ইটের মতো পাঁঠার মাংস বার করে ধপ করে রান্নাঘরের সিমেন্টের স্ল্যাবে ফেলে কাটারির সাইজের ছুরি বাগিয়ে তরীকে বলি, আজকে মাংস করব বলেছিলাম না? কেমন মনে রেখেছি অ্যাঁ? হ্যাঁ, স্ল্যাবের উপর ফেলার আগে পাতলা প্লাস্টিক বিছিয়ে নিতেও আমি একদম ভুলিনি ... ...
বিয়ের রাতেই আমার বর আমাকে বলেছে, তুমি তোমার মতো থাকবা,আমি আমার মতো। আমি মনে মনে বলেছি, আলহামদুলিল্লাহ।আসলে বিয়েতে আমার মত ছিল না। বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। পড়ালেখা, লেখালেখি এসবের প্রতিই আমার আগ্রহ বেশী। প্রিয় লেখকের বই পড়ে আমি এক জীবন কাটিয়ে দিতে পারি। আমি শুধু চাই নিরিবিলি একটা জীবন। যেটা আমার বর আমাকে দিল ... ...
তোমাকে ভুলতে চাওয়া আমার একটা চলমান প্রক্রিয়া। আর তোমাকে ভুলতে না পারা আমার এক অভ্যাস। এই অভ্যাসের ফলেই কখনও কখনও অন্যকে তোমার গল্প করি। আর সে সময় আমি ছোট্ট খুকি হয়ে যাই। কোনোদিন বুঝিনি অন্যসব বাচ্চাদের ছেলেধরা যেমন চকোলেটের লোভ দেখিয়ে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করা রুমাল মুখে চেপে ধরে টুপ করে বস্তার ভেতর ভরে নেয়, ঠিক তেমনি আমার আস্ত একটা জীবনে এই 'নেই তুমি'র আসনকে পূর্ণ করে দেওয়ার ক্রিমে ভরা, রঙিন রাংতায় মোড়া ছোটবেলা দেবে, হারিয়ে যাওয়া বাস্তুভিটে ম্যাজিক করে ফিরিয়ে দেবে বলে এক রাক্ষস ছেলেধরার রূপ ধরে মুখে ক্লোরোফর্মের রুমাল চেপে ধরে বস্তায় ভরে নিয়েছিল ... ...
এই কথাটি বলেছিলেন আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন গুরু। যিনি তার ধ্যানে পেয়েছিলেন কিছু জিনিস, যা তার মতে সত্যের কাছাকাছি। ওঃ ঈশ্বর! এসব কথা বাইরে প্রকাশ করার রীতি নেই। কিন্তু আমাদের ভেতরটাকে টুকরে খাচ্ছে অন্ধকারের বিষপোকা। যদিও বাইরে থেকে হয়ত বুঝা যাচ্ছে না তথাপি আমাদের ভেতর ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, আমাদের অন্তর নিরন্তর অনুভব করছে এক ধরনের ভয়াবহ অস্বস্থি। তাই আমরা বলে ফেলছি যে, আমাদের সেই গুরু হঠাৎ একদিন তার ধ্যানে পেয়েছিলেন মানুষের আত্মার কোটা শেষ হয়ে গেছে। এখন আত্মাহীন মানুষেরা জন্ম নিবে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা তার কথা শুনেছিলেন এবং তারা স্বভাবতই বিশ্বাস করেন নি। এমন উদ্ভট কথা কখনো কী হয় আর? তারা একে হেসে উড়িয়ে দেন, অতঃপর তারা রাগে ফেটে পড়েন এবং সেই মহান গুরুকে সবাই মিলে ধরে নিয়ে ফেলে দেন এক অন্ধকার কুয়ায়। আমাদের ধারনা তিনি সেই অন্ধকারে এখনো বসে আছেন, ধ্যানে আছেন। ... ...
গত তিন দশকে এমন মারাত্মক ভোট আর দেখেনি ত্রিপুরা। এরপরও ত্রিপুরায় বহু ভোট হয়েছে। অনেক ভোট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গীদের বন্দুকের নলের নিচে ভোট হতেও দেখেছে ত্রিপুরার মানুষ। ২০০০ সালে ত্রিপুরা স্বশাসিত জিলা পরিষদের ভোটে কিছু কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীরা নিজেরাই ভোট করেছিল। ভোটের আগে সিপিএম প্রার্থীর পরিবারের লোকজনদের, এমনকি সিপিএম নেতাদের সেবার অপহরণ করেছিল জঙ্গীরা। কিন্তু এ ধরনের আতঙ্ক কায়েম হলেও তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে নি। অন্য অংশে মানুষ প্রতিবাদী হয়ে নিজের মত নিজে প্রকাশ করেছিলেন। কখনো কখনো সিপিএমের দিকে ভোটে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। তাও কিছু কিছু পকেটে। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের এলাকায় জোর করিয়ে ভোট করিয়ে জয়ী হয়েছেন ত্রিপুরায়। কিন্তু রাজ্যের ইতিহাসে তারা কেউ একবারের বেশি স্থায়ী হন নি। পাঁচ বছর পরেই মানুষ তাদের বিদায় দিয়ে দিয়েছেন। ... ...
ভারতবর্ষের জিডিপির ৩.৮৩% শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা হয়। এর মধ্যে গবেষণার বরাদ্দ ০.৩%। অস্থায়ীকরণের ফলে এক সন্ত্রস্ত, সদা আশঙ্কিত শিক্ষক শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষা এবং গবেষণার মানের সরাসরি ক্ষতি করতে বাধ্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও জনসংখ্যার ২৫%, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৩৫%র থেকে ১০% কম। এই এনরোলড ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কতজন শেষ পর্যন্ত ডিগ্রী লাভ করেন, এবং কতজন কলেজ-ছুট হন, তার কোন তথ্য নেই। বিড়লা-আম্বানির পরামর্শ মেনে খোলা বেসরকারি ইঞ্জনিয়ারিং কলেজগুলোতে আস্তে আস্তে তালা ঝুলছে, এআইসিটিইর নির্দেশে ২০২০ সাল থেকে আর কোন নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলবার অনুমতি দেওয়া হবেনা। বাজারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২৫% ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট সঠিক শিক্ষা পেয়ে পাশ করছেন। এরই মধ্যে গত তিন বছরে অনাদায়ী শিক্ষা লোন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২০১৮ অর্থবর্ষে সেটা ৯%তে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্বের হার যেহেতু ৬%, ৪০ বছরে সব থেকে বেশি, অতএব এই অনাদায়ী লোনের পরিমাণ যে আরও বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। এ কথাও বলা বাহুল্য যে এঁদের মধ্যে কেউই 'রাইট অফ' পাবেন না - সেটা কেবল বৃহৎ পুঁজিপতিরা পেয়ে থাকেন। ... ...
অদ্য ফুল খেলবার দিন তা বলা যায়না, তবে তাতে পদ্য পড়ায় কোন বাধা নেই। পড়ুন ভোটের কবিতা! ... ...
বৃহস্পতিবারের জন্য অন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল শাসকদল। তারই প্রতিফলন দেখা গেল গোটা দিন জুড়ে। বেশ কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ভোটারদের রাস্তা থেকেই বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পোলিং বুথে শাসক দলের কর্মীরা পিছন থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন কে কাকে ভোট দিচ্ছে। এরকম বেশকিছু ছবি উঠে এসেছে। যা বলে দিচ্ছে কেমন নির্বাচন হল রাজ্যে। বৃহস্পতিবার সকালে ভোট শুরু হতেই জিরানীয়া, মজলিশপুর, মান্দাই, বক্সনগর, রাজনগর, মোহনপুর, বড়জলা এসব স্থান থেকে বাম পোলিং এজেন্টদের আক্রমণের খবর আসতে থাকে। প্রথম দিকে যা ছিল ছোটখাট ঘটনা তা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় আকার ধারন করতে থাকে। বাম পোলিং এজেন্টদের পাশাপাশি চিহ্নিত বাম ভোটারদেরও লাইন থেকে বের করে দেবার খবর আসতে থাকে। অনেক জায়গায় বাম ভোটারদের বাড়ি থেকেই বের হতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ আসে। ... ...
দেশের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন। প্রত্যেক ভোটেই কিছু নতুন শব্দের জন্ম দেয়। তার কিছু টিকে যায়, বাকিটা হারিয়ে যায়। যেমন ২০১৪-এ ছিল সারদা, নারদা।এবারের ভোটে কতগুলো নতুন শব্দ বা বাক্যবন্ধ কানে আসছে।তার কয়েকটি এরকম। নকুলদানা, ঘুষপেটিয়া, চৌকিদার, এক্সপায়ারিবাবু, স্পিডব্রেকার দিদি, এ-স্যাট, নাকাতল্লাশি, জুমলা। দলবদলেরও একটা নতুন ঘটনা এবারে চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফা ভোট কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। কোচবিহারে এবার তৃণমূল প্রার্থী একসময়ে বামফ্রন্টের মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। উল্টো দিকে বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এই সেদিনও ছিলেন তৃণমূলের নেতা, এবারে বিজেপির প্রার্থী। আলিপুরদুয়ারেও ছবিও প্রায় এক। তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তির্কে একসময়ের বামফ্রন্টের দাপুটে নেতা, এবারে তৃণমূলের প্রার্থী। ... ...
দেশের স্বাস্থ্যের হালহকিকত নিয়ে ভাবতে বসলে আশার আলোটুকু এতোই দুর্লভ, যে একটু গুছিয়ে আগলে না রাখতে পারলে অন্ধকারই অনিবার্য বোধ হওয়ার আশঙ্কা। সেইখানে, নিজের ভাবনা অস্বস্তি, হাজার না-পাওয়ার পাশে ছোটখাটো প্রাপ্তিগুলো, নিদেনপক্ষে প্রাপ্তির আশাটুকু সাজিয়ে লিখে রাখা জরুরী। একদিকে দেশের স্বাস্থ্যের পেছনে সরকারের খরচ ক্রমেই কমতে কমতে আণুবীক্ষণিক হয়ে দাঁড়ানোর বাস্তব, প্রতিবছর স্রেফ চিকিৎসার খরচা মেটাতে গিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষের নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাওয়া, বিশ্বের সুস্থ দেশের সারণীতে আমাদের দেশের ক্রমেই পিছিয়ে পড়া, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ডামাডোলের পেছনে এক এবং একমাত্র ডাক্তারদেরই দায়ী ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে (আর এরাজ্যে তো কথাই নেই, আক্ষরিক অর্থেই “এগিয়ে বাংলা”) ডাক্তারদের উপর আক্রমণের খবর। ... ...
এই পাঁচটা বছর বুঝিয়ে দিল। বদলে দিল। বিজেপি যখন ঘরের দোরগোড়ায় চলে এল, তখন বুঝলাম গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অবজ্ঞা করার ফল কতটা ভয়ানক হতে পারে। এই পাঁচটা বছরের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। এই পাঁচটা বছর আমাকে রাজনীতি চেনাল, আমি জানলাম রাজনীতির বাইরে কিছু হয় না, কিচ্ছু হয় না। আমি জানলাম, আমার চারপাশে কত ক্লোজেট থেকে বেরনো লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, উচ্চশিক্ষিত, সাদা কলারের লোকজন, যাঁরা সব দেখেশুনেও অন্ধভাবে সাপোর্ট করেন যোগীকে, ছাপ্পান্ন ইঞ্চিকে। মনে করেন এঁরাই আচ্ছে দিন আনবেন, এখনও, মনে করেন, এঁরাই বিকাশ আনবেন। এঁরা মনে করেন, মুসলমানরা তো “ওরকমই”। নিচু জাতকে তো “পায়ের তলাতেই” রাখতে হয়, নইলে মাথায় চড়ে বসে। “ওদের” সাথে তো “ওদের” ভাষাতেই কথা বলতে হয়। “ওরা” তো আমাদের থেকে আলাদাই, ওরা শুধু জুতোয় সোজা। ... ...
নীতিশকুমারের, বস্তুত বিজেপি-র, সমর্থকটি দাবি করবেন, “বহোত কাম হো রহা হ্যায়”। ঠিক-ই। পাটনা শহরের চতুর্দিক “কাজে” ঢাকা – ফ্লাইওভারের পর ফ্লাইওভার, নতুন নতুন সরকারি-বেসরকারি ইমারত। “কাজ” মানে এক ঢিলে দুই পাখিঃ চোখে আঙ্গুল দিয়ে আর্থনীতিক উন্নয়ন দেখিয়ে দেওয়া, স্টেট জিডিপি-র বাড়-বাড়ন্ত; পাশাপাশি, অথবা সেটাই মূল উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক আপনজনদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার পথ করে দেওয়া। লোকের জন্য পথ বলতে প্রায় কিছু নেই, যেটুকুবা আছে তা ধনাঢ্যের অশ্লীল বাহনের দখলে। চতুষ্পার্শে ভর্তি নোংরা, দুর্গন্ধে টেকা দায়। ধনিকের কিছু আসে যায়না, তাদের কাচ-তোলা গাড়িতে বাইরের বাতাসের প্রবেশ নিষেধ। আর দরিদ্র মানিয়ে নিতে নিতে একেই জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছে। করে নিয়েও বাঁচার সুরাহা হয়না। দুর্ভাগ্য যেন বিহারবাসীর সহজাত। সেই কবে শুরু হয়েছিল গ্রাম থেকে শহরে আসা – পাটনায় স্থান সংকুলান, অতএব কলকাতা। সে নগরী, ক্রমে, নিজেই হেঁপোরুগী। বঙ্গবাসী জনতাও আজ কাজের খোঁজে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশ বিভুঁয়ে। অতএব, বিহারী কর্মজীবীকে কাজ খুঁজতে যেতে হয়, পঞ্জাব, হরিয়াণা, মহারাষ্ট্র, অথবা অন্যত্র। ... ...
ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সিস হল্যান্ডের আমলে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের এই নয়া রাফাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপরেই তিনি এক-একটি ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার বলপূর্বক তাঁদের বাধ্য করেছে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে পার্টনার হিসেবে এই প্রকল্পের অংশীদার করতে। ব্যাবসার স্বার্থে এই চুক্তিটি হাতছাড়া করতেই এই গা-জোয়ারি মেনে নেন তাঁরা। ফ্রান্সিস হল্যান্ডের এই দাবি দ্যসল্ট সংস্থার মুখপাত্র মেনে নিতে চাননি। কিন্তু ফাঁস-হওয়া তথ্য থেকে পরিষ্কার, সংস্থার বহু কর্মকর্তা চাননি, ভারতীয় অফসেট পার্টনার হিসেবে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বেছে নেওয়া হোক। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই চুক্তির প্রাক্-শর্তই ছিল, রিলায়েন্সকে শরিক হিসেবে নিতে হবে। এদিকে মোদী সরকারের প্রতিনিধিরা, বিজেপি-র নেতারা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ান, রাফালে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে অন্তর্ভুক্তিকরণ একান্তই দ্যসল্টের সিদ্ধান্ত। ভারত সরকারের নাকি এই সিদ্ধান্তে কোনও ভূমিকাই নেই। দ্যসল্ট কেন এমন অনভিজ্ঞ দেউলিয়া সংস্থাকে শরিক হিসেবে অগ্রাধিকার দেবে, যারা অতীতে এমন কোনও কাজ করেনি? দ্যসল্টের তরফে এই অস্বস্তিকর প্রশ্ন সবসময়েই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ... ...
সেনাবাহিনীর জীবনবীমার প্রিমিয়ামের টাকা এদের শেয়ার কিনতেই লগ্নি হয়েছে। এবং এই টাকা কিন্তু সরকারের দেওয়া নয়। কত টাকা? একটা মোটামুটি হিসেব ধরা যাক - ভারতীয় সেনা (শুধু মিলিটারি) তে জেনারেল এর সংখ্যা কমবেশী ৩৫০ জন - এরা জীবনবীমা বাবদ প্রিমিয়াম দেন মাসে ৫০০০/- অর্থাৎ বছরে ৬০০০০/- টাকা - ৩৫০ x ৬০০০০/- = ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। জওয়ান এর সংখ্যা কমবেশী ১৩ লক্ষ - এরা দেন মাসে ২৫০০/- অর্থাৎ বছরে ৩০০০০/- টাকা - মোট ১৩,০০,০০০ x ৩০০০০/- = তিন হাজার ন’শো কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বছরে মোট তিন হাজার এগারোশো কোটি টাকার মত - এই বিপুল অঙ্কের টাকার দায়ীত্ব কার? ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কে করেন? ভক্তবৃন্দ জানতে চান না - আপনি জানতে চাইলেও পাবেন না - কারণ এর কোন সদুত্তর কারো কাছে নেই। একটি ডুবন্ত কোম্পানির শেয়ার কিনতে এই টাকা লগ্নি করা হয়েছে এবং হচ্ছে - অথচ কোম্পানি বা সেনাবাহিনী কোন তরফেই এই টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন সদুত্তর নেই। আমাদের মহান সেনাবাহিনী যখন দেশের সেবা করতে নিজের প্রাণ হাতে করে যুদ্ধ করেন, সিয়াচেনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন, তখন তার পরিবারের ন্যুনতম নিরাপত্তা বিধানে সরকার বাহাদুর উদাসীন থাকেন - তাঁকে দেখিয়ে ভোট কেনাটা বেশী জরুরী। ... ...
ভূতের মতো কান্ড যেমন নির্বোধ অতি ঘোর যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন চৌকিদারই চোর আপনারা ভোটের ভিডিও দেখেছেন, ভাটের ভিডিও দেখেছেন। দুই যোগ করে যা হয়, এই হল সেই বস্তু। এই বাজারে আঁচ না পোয়ালে পিছিয়ে পড়বেন। ... ...
পুলাওয়ামা ঘটনার পর দেশপ্রেম আচমকা বেড়ে গেল সবার। তারিখটা আবার প্রেমের দিবসেরও। যাতে এইবার কেন জানি না ভগৎ সিং এর ফাঁসি ঠিক হয়ে ওঠেনি। তা, এই ঘটনার পর দেশের প্রধাণমন্ত্রী তো ভাষণে ফাটিয়ে দিতে থাকলেন। এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর বাইরে থেকে আওয়াজ পেয়ে বারান্দায় এসে দেখি মিছিল চলছে জনা পঞ্চাশ লোক, মোমবাতির বদলে হাতে মোবাইলের ফ্লাশলাইট। স্লোগান শুনলাম একবার ভারতমাতা কি জ্যায় পিছু পাঁচবার করে পাকিস্তান মুর্দাবাদ। বলা বাহুল্য পড়শী দেশের উল্লেখের সময়ে তাদের জোশ যেন ফেটে ফেটে বেরোচ্ছিল। পরে শুনি এই মিছিল ছোট ছোট করে সারা দেশে বেরিয়েছে, কলকাতাতেও। যেন রাস্তার ধারে পাকিস্তান বসে বিড়ি বাঁধছে বলে খবর, এরা খুঁজে বেড়াচ্ছে। ... ...
২০১৬ এর SLST এর নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ ও শূন্যপদে কারচুপি, প্যানেলে গোলমাল, মেরিট লিস্টে সব তথ্য দেওয়া ও অন্যান্য বেশকিছু দাবিতে কলকাতার মেয়ো রোডে অনশনে বসেছেন চাকুরি প্রার্থীরা। তাদের অনেকগুলি দাবির মধ্যে মূল দাবি হল তাদের সবাইকে চাকরি দিতে হবে। যদিও তারা এমপ্যানেল্ড নন, ওয়েট লিস্টেড কিন্তু তাদের বক্তব্য এস এস সি শূন্যপদ চেপে দিয়েছে এবং ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে কিনা বলতে পারব না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ।কিন্তু শূন্যপদ কমে যাওয়া নিয়ে যে দাবিটা হচ্ছে তা আসলে কতখানি সঠিক তা দেখা যেতেই পারে। আসুন পুরো ব্যাপারটার ওপর আলো ফেলা যাক। বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে খুব সরল। এত দিন এস এস সি হল না তাও সীট কেন ততখানি বাড়ল না। ভিতরে অনেক কথা আছে। এক এক করে আলোচনায় আসা যাক। ... ...