এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • শাসকের হুমকি সন্ত্রাসের মধ্যেই ভোট ত্রিপুরায়

    তমোঘ্ন লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ৭৫৭ বার পঠিত
  • হুমকি অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়েই শেষ হল রাজ্যের পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের ভোট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দাবি ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। এই হিসেব আরেকটু বাড়তে পারে। ২০১৪ সালেও পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে ভোট পড়েছিল প্রায় ৮৩ শতাংশ।

    গতবারের হিসেব এবং এইবারের ভোটের শতকরা হিসেব ধরলে রাজ্য নির্বাচনের ট্র্যাডিশন একই রয়েছে বলা যেতে পারে। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে বা যেভাবে এবারের ভোট হল ত্রিপুরায় তা গত কয়েক দশকে দেখেনি এ রাজ্যের মানুষ। নির্বাচন শেষ হতেই সিপিএম এবং কংগ্রেস সমস্বরে ভোটে সন্ত্রাস এবং রিগিং'এর অভিযোগ তুলেছে। বেশ কিছু বুথে পুনঃ নির্বাচনের দাবি তারা করেছে। কংগ্রেসের বক্তব্য ত্রিপুরার ভোটে এমন রিগিং এর আগে কোনদিন হয় নি। সিপিএম বলেছে তাদের রাজ্যে যা শক্তি আছে তাতে তারা পোলিং এজেন্ট দিতে পারবেন না এটা ভাবা যায় না। কিন্তু বেশিরভাগ বুথেই তাদের পোলিং এজেন্টরা ঢুকতে পারেন নি। ঢুকলেও পরে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

    পশ্চিম ত্রিপুরা আসনটি ১৯৫২ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত গত ষোলটি নির্বাচনে কংগ্রেস জিতেছে মাত্র চারবার। বাকি বারোবার জিতেছে বামপন্থীরা। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে শেষবার এই আসনটি কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। সেবার জয়ী হয়েছিলেন সন্তোষ মোহন দেব। ৯৬ সাল থেকে এটি আবার সিপিএমের দখলে। কিন্তু ২০১৮ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর নিশ্চিতভাবেই বামেরা এই আসনে একটু ব্যাকফুটে ছিলেন। এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত ৩০ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে গতবছর সিপিএম জয়ী হয়েছিল সাতটি আসনে। এবং সরকারের শরীক দল আইপিএফটি জয়ী হয়েছিল ৩টি আসনে। আর বাকি ২০টি আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। এই হিসেব ধরলেও বিজেপি এই আসনে এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু ভোট যে স্বাভাবিক অঙ্কের নিয়ম মেনে হয় না। এখানে অঙ্কের চেয়ে রসায়ন-ই বেশি জরুরী হয়ে পরে। বিজেপি এবং সিপিএমের মধ্যে গত বিধানসভায় ভোট শতাংশের পার্থক্য ছিল মাত্র দেড় থেকে দু শতাংশ। গতবারের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের যে ভোট ব্যাঙ্ক ছিল তা সবটাই চলে গিয়েছিল বিজেপির পকেটে। এইবার সেই অবস্থা আর নেই। কংগ্রেসের ভোট অনেকটাই ফিরতে শুরু করেছে তাদের পুরানো শিবিরে। এটাই সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রেখেছিল বিজেপিকে। সেইসঙ্গে যেসব আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি গত বিধানসভার আগে তার সিংহ ভাগই পূর্ণ হয় নি এই সময়ে। ফলশ্রুতিতে মানুষের মোহ কাটছিল। তার উপর জোট শরীক আইপিএফটি লোকসভা ভোটে আঁতাত করে নি বিজেপির সঙ্গে। এসবের একটা প্রতিফলন এবার লোকসভা ভোটে পড়বেই বলে ধরে নিয়েছিলেন বিরোধীরা।

    কিন্তু বৃহস্পতিবারের জন্য অন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল শাসকদল। তারই প্রতিফলন দেখা গেল গোটা দিন জুড়ে। বেশ কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ভোটারদের রাস্তা থেকেই বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পোলিং বুথে শাসক দলের কর্মীরা পিছন থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন কে কাকে ভোট দিচ্ছে। এরকম বেশকিছু ছবি উঠে এসেছে। যা বলে দিচ্ছে কেমন নির্বাচন হল রাজ্যে।

    বৃহস্পতিবার সকালে ভোট শুরু হতেই জিরানীয়া, মজলিশপুর, মান্দাই, বক্সনগর, রাজনগর, মোহনপুর, বড়জলা এসব স্থান থেকে বাম পোলিং এজেন্টদের আক্রমণের খবর আসতে থাকে। প্রথম দিকে যা ছিল ছোটখাট ঘটনা তা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় আকার ধারন করতে থাকে। বাম পোলিং এজেন্টদের পাশাপাশি চিহ্নিত বাম ভোটারদেরও লাইন থেকে বের করে দেবার খবর আসতে থাকে। অনেক জায়গায় বাম ভোটারদের বাড়ি থেকেই বের হতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ আসে।

    যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে মুখপাত্র অশোক সিনহা বলেছেন অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। উল্টো বেশকিছু জায়গায় তাদের কর্মী সমর্থকদের পেটানো হয়েছে।

    বৃহস্পতিবার ভোট শেষের পর সিপিএম রাজ্য দপ্তরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের সাধারন সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, যেখানে ভোটারদের ভোট দানা বাধা দেয়া হয়েছে এবং যেসমস্ত বুথে বাম পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয় নি সেসব বুথে আবার নির্বাচন করতে হবে। সেইসঙ্গে দলের রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ বলেছেন পশ্চিম ত্রিপুরার অন্তর্গত ৩০ টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে ২৮টি এলাকার তথ্য তাদের কাছে এসেছে এতে দেখা গেছে ৪৬০ টি বুথে ব্যাপক ভাবে রিগিং করা হয়েছে।

    সিপিএমের পক্ষ থেকেএ সমস্ত বুথের তথ্য দিয়ে রাজ্য নির্বাচন দপ্তর এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পুনঃ ভোট চাওয়া হবে। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দলের সাধারন সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন তারা নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে বারবার অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি জানিয়ে আসেছেন। তারা আশ্বস্তও করেছিল। কিন্তু এদিন সেই আশ্বাসের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ে নি। এমনকি কেন্দ্রীয় বাহিনীও চোখে পড়ে নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি পুনঃ ভোটের দাবি জানান অভিযোগ ওঠা বুথগুলি নিয়ে।

    এদিকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ তথ্য দিয়ে বলেন ৪৬০টি বুথে রিগিং করেছে শাসক দল।

    কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিক অভিযোগ করেছেন, ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষকে ভোট দিতে দেয় নি শাসক দল। তার দাবি রিগিং হলেও তিনিই জিতছেন এই কেন্দ্র থেকে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ডিজিপি এবং রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অপসারণের দাবি করেছে। পীযূষ বিশ্বাস বলেছেন, শাসক দলের সঙ্গে যোগ সাজেশ করেই রাজ্য পুলিসের ডিজিপি এবং মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কোন ব্যবস্থা নেয় নি।

    কংগ্রেস অভিযোগ করেছে ১৫১টি বুথে ব্যাপক রিগিং করেছে শাসক দল এবং এই বুথগিলিতে তারা পুনঃ ভোটের দাবি করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের বিজেপি প্রার্থী নিজে সোনামুড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়ে ঘুড়ে তার দলের কর্মীদের দিয়ে রিগিং করিয়েছেন। সোনামুড়া মহকুমার ১১টি বুথে সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে বা ভেঙে রিগিং করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেসের সহসভাপতি পীযূষ বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন তারা এদিন সকাল থেকেই ভোটে বেনিয়মের প্রমানসহ অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন নির্বাচন কমিশনে এবং রাজ্যের নির্বাচন দপ্তরে। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয় নি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ৭৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 7845.15.9003423.24 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২৪78088
  • কালকের ভোট পিছিয়ে দেওয়া হল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন